নীল চোখ পর্ব -০৫ ও শেষ পর্ব

#গল্পঃনীল_চোখ।
#পর্বঃপাঁচ।(শেষ পর্ব)
#লেখাঃMd_Tarajul_Islam(Shihab)

রাতের বেলা তিশা আছমার বাড়িতে আসলো।আছমা রাতের বেলা তিশাকে দেখে বলল
->তিশা এই রাতের বেলা তুমি এখানে?
->কেন আমি কি আসতে পারি না?
->হ্যাঁ হ্যাঁ আসবে না কেন?নিশ্চয় আসবে।
তিশা তখন ওর ওড়নার নিচে লুকানো একটা কেঁচি বের করলো।আছমা বেগম কেঁচি দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল
->কেঁচি কেন এনেছো এটা কি করবে?
তিশা হেসে উঠে বলল
->ভাবছি এটা দিয়ে আপনার চুল কেটে দিবো।
->এই মেয়ে এসব কি বলছো।
আছমা চিৎকার করে ওর মেয়েকে ডাকতে লাগলো।ওর মেয়ে দৌড়ে এসে বলল
->কি হয়েছে মা?দেখনা এই মেয়ে কি বলছে?
->কি হয়েছে ভাবি?
তিশা বলল
->এবার আমি তোমার মায়ের চুল কেটে দিবো?
->এসব কি ধরনের ফাজলামি?
->চুপ আর একটা কথাও বলবে না।ওখানে দাড়িয়ে থাকো নয়তো এই কেঁচি তোমার পেটে ঢুকিয়ে দিবো।
তিশা ওর চোখে মুখে রাগ নিয়ে আছমার সামনে গিয়ে ওর চুল ধরে বলল
->সত্যি করে বল আছমা আন্টি কই না হলে এই চুল আমি কেটে দিবো।তখন কিন্তু তুই মরে যাবি।
তখন আছমা রুপী সে নিজের রুপে ফিরে আসলো।এটা দেখে আছমার মেয়ে ভয়ে সরে গেলো।তিশা রাগে বলল
->এখন বল আছমা আন্টি কোথায় আছে?
->উনি পুরোনো বাংলো বাড়িতে আছে।আর তিনি একদম ঠিক আছেন।
তিশা তাড়াতাড়ি ওর মেয়েকে সেখানে যেতে বললো।এমন সময় আয়ান সেখানে আসলো।আছমার মেয়ে আয়ানকে নিয়ে আসল আছমা বেগমকে ফিরে আনলো আর তখন তিশা কেঁচি দিয়ে ওর চুল কেটে দিলো আর তখন সেই ডাইনি একটা চিৎকার দিয়ে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো।

তিশা বাসায় ফিরে আসলো।বাসায় আসার পর অধরার রুমে গিয়ে দেখলো সে ফোনে কি যেন করছে।তিশা রুমে ঢুকতেই অধরা ফোন রেখে ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো।তিশা আবার সেই কেঁচি বের করে ওর পাশে গিয়ে বসলো।অধরা কেঁচি দেখে কেমন যেন আমতা আমতা করছে।তিশা বলল
->তোমার চুল কেমন যেন লম্বা হয়েছে।বাবু হওয়ার আগেই কেটে দিবো।
অধরা পিছন দিকে সরে যেতে যেতে বললো
->আমি চুল কাটবো না।
আর তখন তিশা দৌড়ে অধরার কাছে গিয়ে ওর চুল নিজের হাতের মধ্যে পেচিয়ে নিলো।তারপর বলল
->অনেক নিজের পরিচয় গোপন করে রেখেছিস।এখন সত্যি সত্যি বল তুই কে আর কেন আমাদের পরিবারের দিকে চোখ দিয়েছিস?
->আমি অধরা সত্যি বলছি।
->চুপ আর একটা মিথ্যা বললে তোকে এখানেই শেষ করে দিবো সত্যি বল সব।
এমন সময় রত্না বেগম বলল
->তিশা কি করছো কি ছাড়ো ওকে।
->না মা এ একটা ডাইনি একে তো আজ আমি,,,
->কি ভুলভাল বকছো
তখন আছমা বেগম এসে রত্না বেগমকে সবকিছু বললো।তখন তিশা অধরার চুল জোরে টেনে ধরলো।অধরা ওর আসল রুপে ফিরে আসলো।তিশা বলল
->এবার বল কেন এসেছিস আমার পরিবারের?
->আমি আর আমার বর মিলে আমাদের রাজ্যের দুটো বাচ্চাকে হত্যা করি।তখন আমাদের মৃত্যু দন্ডের আদেশ দেওয়া হয় কিন্তু আমরা আমাদের রাজার কাছে অনেক কাকুতিমিনতি করি তখন তারা আমাদের বাচার জন্য একটা শর্ত দেয় সেটা হলো আমার গর্ভে যদি আমি মানুষের সন্তান জন্ম দিতে পারি আর সে সন্তান ওদের হাতে তুলে দিতে পারি তাহলে আমরা মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে পারবো।এই বলে আমাদের তিনজনকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়।আর আমাদের সব ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়।শুধু কিছু ক্ষমতা আমরা ব্যবহার করতে পারবো।আর আমাদের প্রাণ আমাদের চুলের মধ্যে বেধে দেওয়া হয়।কিন্তু এখানে আসার পর আমাদের তিনজনকে কিছু জ্বীন তাড়া করতে থাকে।আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম আর তখন আমরা সাধারন মানুষের রুপ নিই কিন্তু এটা দেখে ফেলে তোমার বোন খুশি।সে তখন আমাদের হুমকি দেয় সে নাকি আমাদের কথা এক কবিরাজকে বলে দিবে যার সাথে জ্বীন আছে।আমরা ভয় পেয়ে যায় তখন সে আমাদের শর্ত দেয় যদি ওকে সাহায্য করি তাহলে বলবে না,তখস সে বলে এমন কিছু যেন করি যাতে তুমি মা হতে না পারো,আর তখন আমরা আমাদের সমস্যার কথা বলি তখন সে নিজেও আমায় সাহায্য করতে চায়,এখানে একটা সাধুকে জানতাম যে কুফুরি ভালো করতে পারে তখন সে সাধুর সাহায্যে তোমার ওপরে কুফুরি করে আর ওই সাধুকে সাহায্য করি আমরা।যার কারনে তোমার পেটে এক ধরনের বাধকের সৃষ্টি হয় আর এজন্য ডাক্তারে রিপোর্টে বলা হয়েছে তুমি কখনো মা হতে পারবে না।আর তখন কি করে এখানে আসতে হবে এসব কিছুতে তোমার বোন সাহায্য করে।তার প্লান অনুযায়ী আমরা কাজ করি আর এখানে আসতে সফল হই।
তিশা সব শুনে অবাক।সে ভাবতে পারছে না যে ওর বোন খুশি ওর সাথে এসব কাজ করতে পারে।তিশা বলল
->কিন্তু খুশি আমার সাথে এমন কেন করবে?
->তুমি তো জানো যে ওই তোমায় ছোট বেলা থেকে হিংসে করতো।সে তোমার সুখ দেখতে পারে না।
সব শুনে তিশার খুশির ওপর খু্ব ঘৃনা হচ্ছে।তিশার চোখ থেকে পানি টপটপ করে পড়ছে।তিশা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
->তাহলে আয়ানের গলায় ওইটা কিসের দাগ ছিলো?
->আমি কামড় দিয়েছিলাম।রক্তের নেশা উঠেছিলো।
তিশার রাগ আরো বেড়ে গেলো।আর তখন রত্না বেগম দেখলো তিশার পিছনে একটা লাঠি শূন্যে ভাসতে ভাসতে ওর দিকে এগিয়ে আসছে।রত্না বেগম চিৎকার করে বলল
->তিশা সরে এসো।
তিশা কিছু বুঝে উঠার আগেই সেই লাঠি তিশার মাথায় আঘাত করলো।তিশা চিৎকার দিয়ে মাথা।ধরে পড়ে গেলো।আর সেখানে অধরার বর উপস্থিত হলো।আয়ান এসে তিশাকে পড়ে থাকতে দেখে সে একটা রড নিয়ে অধরার বরের দিকে ছুড়ে মারলো কিন্তু ওইটা ওর শরীর ভেদ করে চলে গেলো।অধরা আর ওর বর দুরে দাড়িয়ে থেকে হাসছে আর বলতে লাগলো
->আমাদের কাজ সফল হয়েছে।কিন্তু আমার বউকে স্পর্শ করার শাস্তি তোরা সবাই পাবি।
আয়ান তিশাকে ধরে ওর কাছে নিয়ে আসলো।অধরা আর ওর বর কিছু করতে যাবে আর তখনি সেখানে আলো জ্বলে উঠলো।আর ওদের দুইজনের সামনে পথ আটকে দাড়ালো এক কালো পোশাক পরিহিত লোক যার চেহারা দেখা যাচ্ছে না।তাকে দেখে অধরা ভয় পেয়ে গেলো।দুইজনে ওর সামনে বসে পড়লো।সে লোক বলল
->তোদের যে শর্তে আমরা ছেড়ে দিয়েছি সেটা তোরা পুরন করতে পারিসনি।
অধরা তখন বলল
->আমার গর্ভে মানুষের সন্তান আছে।
->না।তোর গর্ভে মানুষের নয় তোর বরের সন্তান আছে।তোরা দুইজন প্রতি রাতে মিলিত হতি যার কারনে তোর গর্ভে তোর বরের সন্তান এসেছে।এবার আর কেউ তোদের বাঁচাতে পারবে না।
তখন সে লোক তিশাদের দিকে তাকিয়ে বলল
->তোমরা মুক্ত।
এই বলে তিনি ওদের দুইজনকে নিয়ে চলে যান।তিশা ওর বাসায় এসে খুশিকে কষে একটা চড় মারে।সব শুনে সবাই খুশিকে ঘৃনা করতে শুরু করে।কি করে পারলো সে এমন নিকৃষ্ট কাজ করতে।তিশা কবিরাজের কাছে থেকে নিজের বাধক কাটিয়ে নেয়।আর কিছুদিন বাদেই ওদের কাছে সেই সুসংবাদ আসে,খুব শীঘ্রই তিশা মা হতে চলেছে।আয়ান ওর মাকে বুঝিয়ে দেয় যে,কোন কিছু তে তাড়াহুড়ো না করে ধৈর্য ধরে থাকা উচিত।আর সকল ক্ষেত্রে আগে পিছে সবকিছু দেখে তবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত,নয়তো এমন অঘটন ঘটতে পারে।
এরপরেই তিশার কোল আলো করে দুটো সন্তান আসে একসাথে।একজন ছেলে আর একজন মেয়ে।সকলেই খুব আনন্দিত।সারাদিন বাচ্চাদের সাথে সময় কেটে যায় তিশার।আর এদিকে খুশি আর কখনো মা হতে পারবে না বলে ওর স্বামী ডিভোর্স দিয়ে দেয়।এখন সবসময় ওর আপসোস করতে দিন যায়।খুশির এই অবস্থার জন্য সে নিজে দায়ী।সে যেটা তিশার সাথে করতে চেয়েছিলো সেটা এবার ওর নিজের সাথে হয়েছে।আর এটাই ওর কর্মফল।যে যেমন কর্ম করবে সে তেমন ফল পাবে।

(সমাপ্ত)

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here