নেশাক্ত প্রণয়োণী পর্ব -১০

#নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১০

‘আই নিড আরভীক। এট এনি কস্ট। ঐ আনজুমা মেয়েটার সাহস দেখে আমি অবাক। মিস শ্রেয়া জাফরের মুখের উপর গা’লি ছুড়লো। ভবিষ্যতে তার জীভ টেনে ছি’ড়ে ফেলবো ব্লা’ডি রা’স’কে’ল।
ফাস্ট আরভীককে পেয়ে নেই,সেকেন্ড ঐ মেয়েটার ব্যবস্থা নেব।’

শ্রেয়া তার রুমের মধ্যে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত পায়চারী করতে থেকে কথাগুলো বলে। হাতে ওয়াইনের গ্লাসটিও চেপে ধরেছে শক্তভাবে। তার সঙ্গে রুমের মধ্যে শায়িত আছে ছেলে গার্ড হিসেবে তার প্রিয় বন্ধু। রাজিব নাম তার। রাগান্বিত রুপে শ্রেয়াকে আবেদনময়ী লাগছে রাজিবের কাছে। লাগবেও না কেনো শ্রেয়ার পরণে রয়েছে হাটু অব্দি শর্ট স্কার্ট ও গায়ে চিকন-পাতলা ছাইবর্ণের শার্ট। যার উপর বুকের ভাঁজ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। রাজিব চোখ বুজে নিয়ন্ত্রণ রেখে শ্রেয়াকে উসকে দিয়ে বলে,

‘ম্যাম ঐ মেয়ে আরভীক স্যারের অফিসের কোনো এমপ্লয় না। স্বয়ং আরভীক স্যারের পার্সনাল সেক্রেটারি। যে পদ আপনার পাওয়ার কথা ছিল সে পদ ঐ মেয়ে পেয়েছে।’

রাজিবের কথা শুনে শ্রেয়া কুটিল রেগে ওয়াইনের গ্লাসটি দেওয়ালে ছু’ড়ে মা’রে। ঠাসস করে ভেঙ্গে গ্লাসের আংশিক টুকরো জোরালো ভাবে লেগে যায় শ্রেয়ার পায়ে। তবে সে শ্বাসরুদ্ধ হলো না। তীব্রভাবে গরম শ্বাস ফেলছে। যেন সে গ্লাসটি দেওয়ালে নয় ঐ আনজুমার মাথা বরাবর ছু’ড়ে মে’রে’ছে। রাজিব রক্ত দেখে ঘাবড়ে গেল। তড়িঘড়ি ফাস্ট এইড বক্স এনে শ্রেয়ার হাত টেনে বসায়। পা তুলে ড্রেসিং করায় মনোবল দেয়। তথাপি শ্রেয়া নিকৃষ্ট বুদ্ধির জাল বুনতে থাকে মনে। ড্রেসিং করাতে রাজিব গভীরভাবে স্পর্শ করতে থাকে শ্রেয়ার হাটুর মধ্যে। ভাব এমন যেন সে ড্রেসিং করার জন্য স্পর্শ করছে। কিন্তু একমাত্র সেই জানে তার অন্তর পুড়ে শ্রেয়াকে তার শয্যাসঙ্গিনী করার তাগিদে। শ্রেয়া ভাবান্তর হওয়ায় স্পর্শের গভীরতা মাপতে পারেনি। ব্যান্ডেজ হয়ে গেলে কুৎসিত নজর আমলে নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। দৃষ্টিনত করে বলে,

‘ম্যাম ড্রেসিং হয়ে গেছে।’

রাজিবের কথায় মস্তিষ্কের স্নায়ু সজাগ হলো শ্রেয়ার। থুতনী নিচু করে পায়ে করা ব্যান্ডেজের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দিল। রাজিবের দিকে না তাকিয়ে বলে,

‘থ্যাংকস রাজিব। তুই না থাকলে মিথ্যা ফন্দি আঁটকানো শিখতাম না। অনেস্টলি ইউ আর নট অনলি মাই এসপিওয়াই বাট অলসো ক্লোজ ফ্রেন্ড ইন মাই লাইফ।’

শ্রেয়ার কথায় রাজিবের মুখশ্রীতে মৃদুহাসি চওড়া হয়। কিন্তু অন্তরালে সে তার বিদ্রুপের হাসি বজায় রেখেছে। শ্রেয়ার টকটকে সাদা চামড়ার কাধে ঘনভাবে ছুয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরে। হাতজোড়ার নিবিড় বিচরণ দেয় তার পিঠের মধ্যে। উত্তেজনা যেন শরীরে রগড়ে দীর্ঘ হচ্ছে রাজিবের। তবুও সময়সূচি আজ নয়, দীর্ঘক্ষণ লাগবে। বিধেয় ঘন স্পর্শের মাঝেই সীমা বজায় রাখে। শ্রেয়া চোখ বুজে শুধু আরভীক এর স্বপ্ন আর আনজুমার ধ্বংস নিয়ে কল্পনাপ্রবণতায় মগ্ন হলো।

‘ওয়াট’স দিজ রাজিব! আমার মেয়ের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সাহস কে দিল তোকে শু’য়ো’রের বাচ্চা।’

বলেই জাফর শেখ ঘুষি দিল রাজিবের গাল বরাবর। আকস্মিক আক্রমণে দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে যায়। শ্রেয়া তার বাবার মে’রে দেওয়া দেখে হতবাক। কিন্তু জাফর সাহেব কোনো কথাবিহীন রাজিব এর বুকের উপর লা’থি দিয়ে যাচ্ছে। শ্রেয়া রাজিবের করুণ দশা দেখে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে থামালো। আতঙ্কে ক্রোধান্বিত গলায় বলে,

‘ড্যাড হি ইজ মাই ফ্রেন্ড। এন্ড দিজ হাগ ইজ কমন ফর আস।’

জাফর সাহেব তিক্ষ্ম চোখে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে রাজিবের দিকে ভস্ম করার মত তাকায়। যা দেখে শ্রেয়া চোখ ঘুরিয়ে তার বাবার চেহারা হাতের আদলে নিয়ে নিজের দিকে ঘুরায়। বাবাকে আশ্বস্ত কণ্ঠে শুধায়।

‘ড্যাড বিলিভ মি হি ইজ জাস্ট মাই ফ্রেন্ড। তুমি জানো আমি শুধু আরভীককে চাই। রাজিব এতে হেল্প করছে। আর তুমি তাকেই মা’রতে লাগলে। শেইম ড্যাড।’

মেয়ের কথায় নিবিড় চাহনী নিয়ে রাজিবের দিকে তাকায়। চোখজোড়ায় লজ্জাবোধ স্পষ্ট হলো। যা রাজিবের মনকে ক্ষুদ্র হলেও প্রশান্ত করল। এতক্ষণ যাবত আক্রমণের কারণে তার বুক জ্বলছিল হিতে বিপরীত আক্রমণ করতে। কিন্তু করেনি শ্রেয়া নিজ মুখে বলে কিনা সে অপেক্ষায়। ঠিক হলো তাই। শ্রেয়া থামিয়ে দিল এবং লজ্জায় ফেলে দিল মিস্টার জাফর শেখকে। রহস্যময়ী হাসি দেয় সে। জাফর সাহেব আমতা আমতা করে রাজিবের কাঁধ ধরে দাঁড় করায়। আলতো করে যন্ত্রণাহীন ছুয়ে দিয়ে বলে,

‘আইম সরি বয়। তোমাকে রেখেছিলাম মেয়ের খেয়ালের বিষয়মতে। আজকে হঠাৎ ঘনিষ্ঠ আইমিন জরিয়ে ধরা অবস্থায় দেখে ভুল ভেবে নিলাম। সরি বয়। করিম এদিক আয়। রাজিবকে মেডিক্যাল নিয়ে যাহ্।’

শ্রেয়াও রাজিবের সঙ্গে যাওয়ার জন্য বায়না ধরে। জাফর সাহেব মৃদুহেসে যেতে বলে। তারা চলে গেলে তার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ আসে।

‘সাহেব মনে পড়ে ব্রিজে খুন করার সেই রাত!’

মেসেজটি দেখে আত্মা কেঁপে উঠল জাফর সাহেবের। এমন মেসেজ হঠাৎ কে দিল। নাম্বারটির মধ্যে কল দেয় তিনি। কিন্তু নাম্বার বন্ধ পেল। মেসেজটির উপর গাড় চাহনী নিয়ে নিজের রুমে ফিরে আসে। কপালে মৃদু ঘাম জমে গেল ক্ষণিকে। এই মেসেজটির অর্থ তার জানা, গভীরভাবে জানা। কিন্তু লিখনের বাক্যধারা কার সেটা আন্দাজ করতে পারছে না! কেমনে সে ফিরবে, কেমনে!
ফোনের মধ্যে কল এলো ‘পরম বন্ধু’ লিখা নাম্বার দিয়ে। অশান্ত মনকে ক্ষণিকের জন্য শান্ত করে ফেলে। বিছানায় বসে ফোন কানে ধরে, ‘হ্যালো’ বলে।

‘কি খবর বন্ধু! তোর মেয়ে কোথায়।’

‘আছে সে। আমিও ভালো আছি। তুই বল ব্যবস্থা হয়েছে।’

‘তোর কি মনে হয় ব্যবস্থা ছাড়া বুঝি কল দিয়েছি।’

‘কবে টাইম ঠিক করবি।’

‘ভাবছি শ্রেয়া মামুনির জম্মদিনে তোর বাসায় পার্টি দেব। সেখানেই আসতে বলব। কি বলিস এতে!’

‘হবে এমনি শ্রেয়ার ইচ্ছে বার্থডে পার্টি করার। ম্যানেজ করে তোকে জানাবো।’

‘হুম জম্মদিন কাছেই হাতে পাঁচদিন এই তেমন কি।’

‘হুম শত্রু কে ইনভাইট করে তার বউমার সঙ্গে পরিচয় করানো লাগবে তো।’

‘হাহাহা ঠিক বলেছিস। আমার মেয়েও কম কিসে! সুন্দরীর সেরা সুন্দরী সে। আরভীককে তো প্রেমের জালে ফাঁসতেই হবে।’

‘দ্যাটস ফাইনাল! ডিল মনে রাখিস।’

‘মনে থাকবে না কেন! চার বছরের বন্ধুত্ব যতবার ডিল হয়েছে ততবার ডিলের চূড়ান্ত পর্যায়ে পর্যন্ত গিয়েছি। এবারও তাই হবে। তোর তো আরো আগ থেকে শত্রুতা ফাওয়াজ পরিবারের সঙ্গে। আমি তো নতুন। কি লিয়াকত ঠিক বললাম তো!’

‘হাহাহা দোস্ত হো তো এসা। তোর ক্ষেত্রে বুঝা মুশকিল না। এ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব পুলিশ (এসি) বলে কথা।
আর আরাজ সে হলো ফকির নামেমাত্র দোস্ত আমার। ভেতর দিয়ে আমার শত্রু ছিল,আছে আর থাকবে। ব্যস একবার শ্রেয়া মামুনি তাদের ফ্যামিলিতে ঢুকতে পারলে হবে। রাতারাতি হাতিয়ে নেওয়া কোনো ব্যাপার না।’

লিয়াকতের কথায় জাফর সাহেবও কুৎসিত হাসি দেয়। তাদের বুনা জালে আরভীক এর জীবন কোনদিক যায় সেটা একমাত্র আল্লাহ জানেন।

১৮.
‘কি গো সখিনাবানু,ক্লেভ সাহেব! টুনাটুনির সংসার দারুণ চলছে তো। কিন্তু এ কি বাচ্চা পয়দা করিসনি তোরা। ওপস কয়েকদিনে কি আর বাচ্চা হয়। তার চেয়ে বড় কথা বাসরই তো করতে পারিসনি। এটা অন্যায়! অঞ্জয় ওয়াট’স দিজ হুম। টুনাটুনির প্রেম কে ক্লোজ হতে দাওনি কেন হে!’

পিটপিটিয়ে লজ্জাময় চাহনী দিল অঞ্জয়। কথাগুলো শুনতেই কান গরম হয়ে গেল তার। অথচ আশপাশে কালা ভূত সেজে থাকা গার্ডগুলোর মধ্যে এমন ভাব অপ্রকাশিত। কেননা তাদের কানে এসব বাংলা কথা প্রবেশ করলেও অপর কান দিয়ে বেরিয়ে যায়। তার বসই রেখেছে ইংরেজি চামড়ার মালবস্তা। অঞ্জয় নিরলসভাবে চেয়ে রইল। তার ঘুমের দফারফা হয়েছে ক্ষণিকের মধ্যেই। যখন গাড়ি পার্ক করে তার বস বেরিয়ে গিয়ে ছিল। তখন সে স্টেয়ারিংয়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে ছিল। কে জানতো সাধের ঘুমে এক মগ জল ঢেলে দিবে। তাও আবার অন্য কেউ নয় তার বস আরভীক স্যারই দিয়েছে। সাধের কাঁচা ঘুম ভাঙ্গায় রাগ পেল অঞ্জয়ের। মুখ ফসকে বলতে নিয়ে ছিল, ‘কে রে কোন কু…’
মুখের কথা শেষ করতে পারল না অঞ্জয়। ‘কু’ এর পরের অংশ বলার পূর্বেই আরভীক এর শান্ত চাহনী দেখে ফেলে। সে ড্রাইভিং সিটের জানালার মধ্যে হাতজোড়া রেখে দৃষ্টিকোণে অঞ্জয়কে দেখছে। মুখ বন্ধ হয়ে যায় তার। ভ্যাবাচেকা খেয়ে হেহেহে করে হেসে বলে,

‘স্যার একটুখানি ঘুম পাচ্ছিল।’

রুগ্ন চাহনী অথচ নিবিড় শরীর আরভীক এর। অঞ্জয় তপ্ত শ্বাস নিয়ে বলে,

‘আসছি স্যার।’

ব্যস কোনো কথাহীন আরভীক সচল পায়ে ভেতরে গেল। অঞ্জয় ধীরস্থীর পায়ে এগিয়ে গেল। ঘুম পরিপূর্ণ হয়নি বিধেয় ঢুলুঢুলু পায়ে হাঁটছে। এক গার্ড অঞ্জয়কে দেখে বলে,

‘স্যার নিড এনি হেল্প!’

বিষন্ন মনে গার্ডের কাঁধে হাত রেখে মনে মনে আওড়ায়।

‘ভাই তুই বুঝবি না আমার কষ্ট। তোর মত সাদা চামড়ার ইংরেজী মাল হলে একরাত ডিউটি মে’রে। দিনের বেলা ঘুম মারতাম। কিন্তু আজ বাঙালি বলে স্যার‍ের আগেপিছে ঘুরা লাগতেছে।’

‘স্যার সেয়ে সামথিংক।’

মনের কথা আকঁড়ে রেখে ঠোঁট চেপে মৃদু হেসে মাথা ডান-বাম নেড়ে না বোঝায়। দ্রুত পায়ে ভেতরে ঢুকে যায়। যদি তার বস তাকে না দেখে , তাহলে এবার ঠান্ডা জলের জায়গায় গরম জল নিশ্চিত ঢেলে দেবে।

‘অঞ্জয় বিছানার ব্যবস্থা কর।’

তার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে দেয় আরভীক কথাটি বলে। থতমত খেল সে। ঠিক শুনছে তো ! তার বস বিছানার ব্যবস্থা করতে বলল। কিন্তু কেন! টুনাটুনির বাসর দেখতে। চোখ বড় বড় হয়ে গেল তার। আহাম্মকের মত চেয়ে রইল তার বসের দিকে। আরভীক অঞ্জয়কে যেতে না দেখে সরু দৃষ্টি নিয়ে বলে,

‘কি কানে শুনিসনি কি বললাম!’

‘শুনেছি স্যার কিন্তু বিছানা দিয়ে কি করবেন!’

‘আরে টুনাটুনি বাসর করতে না পেরে কাতর। ওদিক মিলবন্ধন করাতে হবে না।’

বসের কথার আগামাথা বুঝল না সে। শুধু মাথা দুলিয়ে ‘করছি’ বলে পিছু মোড়ে চলে যেতে নেয়। কিন্তু মাঝপথে থামিয়ে দেয় আরভীক। শয়তানি কল্পনা এঁটে রেখে অঞ্জয়কে বলে,

‘ওয়াটার বেড আনবি।’

কথাটি শুনে দ্বিরুক্তি করতে চেয়েও করেনি অঞ্জয়। দুজন গার্ড নিয়ে বেরিয়ে গেল। আরভীক আড়চোখে সেদিক দেখে বাকাঁ হাসি দিয়ে ক্লেভের দিকে তাকায়। তার চাহনীতে ভয়ভীতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সে বুঝছে আরভীক কি করতে চাইছে! বারংবার ক্ষমা চাইতেছে। তবুও আরভীক এককথায় ঘাড়ত্যাড়া ব্যক্তি। ক্লেভের কাছে গিয়ে তার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,

‘ডু ইউ রিমেম্বার ওয়ান পার্সন! আজীব ফাওয়াজ।’

নামটি শুনে ক্লেভ চকিত দৃষ্টিতে আরভীক এর দিকে তাকায়। কিঞ্চিৎ পূর্বে যে রসিকতা চোখে দেখা দিয়ে ছিল। এখন তার ছিঁটেফুটোও নেই। আছে একরাশ ক্রোধ, হিংস্রতা। আরভীক হিংস্র চোখে ক্লেভের গলায় আলতো ছুতে থেকে বলে,

‘ডু ইউ অলসো রিমেম্বার দিজ ডে!’

ঢোক গিলে ক্লেভ। বন্দি দশায় হাতের কাছে কোনো জিনিস পায়নি। ফলে সময়,তারিখ জানার কোনো পথ নেই তার। মাথা নেড়ে না বুঝায়। যা পছন্দ হলো না আরভীক এর। ক্লেভের গলায় ছু’ড়ি দিয়ে মৃদু আ’ছ’ড় টেনে দেয়। সখির গলায় যেমন কেঁচো দিয়ে ছিল তেমন ক্লেভের গলায় ইঞ্জেকশন পুষ করে দিল। আছড় দেওয়া জায়গায় ইঞ্জেকশন দেওয়ায় পুরু শরীরে ছটপটানি অনুভব করে ক্লেভ। আতঙ্কিত চোখে আরভীক এর দিকে তাকায়। হাতে থাকা ইঞ্জেকশনকে টেবিলে রাখতে গিয়ে বলে,

‘দিজ ইজ নট ড্রাগ। দিজ ইজ কলড ড্রাগ অফ স্পাইডার এগস। মাকড়সার ডিমের ওষুধ দিয়ে বানানো ইঞ্জেকশন তোর শরীরে দিয়েছি।’

মুখের থেকে ফেনা বের হতে আরম্ভ করে ক্লেভের। ‘উম উমম’ করে চিৎকার করতে থাকে। যা কোনো স্বরই তুলছে না চার দেওয়ালের মাঝে। আরভীক এর আবার উচ্চস্বর পছন্দ নয়। এক গার্ডকে আদেশ করে চেয়ার দিতে।
গার্ড চেয়ার এনে দিলে সন্তপর্ণে বসে পড়ে। সখি বেঁচে থেকেও জিন্দা লাশ হয়ে আছে। কেচোঁ তার শরীরে প্রবেশ করার পর শিরা,উপশিরা ছিঁ’ড়ে কবলে চুষে নিয়েছে। তার শরীর পুরু ফ্যাকাশে নীলচটা হয়ে গেছে। তবুও শ্বাসরন্দ্র চলছে মেয়েটার। কেঁচো সখির শরীরটার পুরু রক্ত না খেয়ে ছাড়বে না। মহিলা গার্ড আজ্ঞা করেছে, কেঁচোটি এখনো সখির শরীরেই আছে। আরভীক সখির হাল শুনে ও দেখে কদর করল না। উল্টো পায়ের উপর পা তুলে পাবজি খেলতে থাকে। নয়জন এনিমিকে মে’রে যেই না দশজন পূর্ণ করবে। তার খেলার মাঝে ব্যাঘাত ঘটিয়ে দেয় একটি অডিও এসএমএস। বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে নোটিফিকেশন চেক করে। এসএমএস বাটন প্রেস করে অডিও ক্লিপ স্টার্ট দেয়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
অডিও শুনে যে বিরক্তিটা ছিল নিমিত্তে উবে গেল। ঠোঁটের কোণায় ফুটে উঠে প্রাপ্তিময় হাসি। অডিও ক্লিপ শেষ হতেই উঠে দাঁড়ায়। ব্লুটুথ বাটন প্রেস করে অঞ্জয়ের ফোনে ডায়ল করে।

‘ইয়েস বস।’

‘কতক্ষণ লাগবে।’

‘স্যার ঘণ্টা ছয়েক লাগবে। ছোটখাটো দোকানে ওয়াটার বেড নেই। তাই মলে এসে পেয়েছি। তারা বলছে ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে।’

‘ওকে তুই অর্ডার কমফার্ম করে রিসিট নিয়ে বাসায় গিয়ে ঘুম দেস।’

বসের আদেশ শুনে খুশিতে টগর হয়ে উঠে অঞ্জয়। ‘স্যা….’ বলে সে তার বলদমার্কা বাণী আওড়ানোর পূর্বেই আরভীক কল কাট করে দেয়। গার্ডের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘টেক কেয়ার অফ দেম।’

গার্ডস সায় দিলে সে নিবিঘ্নে বেরিয়ে যায় ফার্মহাউজ থেকে।

১৯.
আজ বিউটিখালা তার ছেলে,নাতী-নাতনীর সঙ্গে আনজুমার বাসায় এসেছে। বিউটিখালার ছেলের স্বভাব ভালো,নম্র,ভদ্র। নাম সৌহাদ্য মুকুল। খুব কম কথা বলে।
আনজুমার সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করে সেই যে নিশ্চুপ ভঙ্গিতে বসেছে। তারপর কোনোরুপ কথা বলতে শুনা যায়নি। শুধু বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে দেখেছে।
যা দেখে আনজুমা মুগ্ধ হলো বটে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
কিচেনে পাতিলের মধ্যে কড়াই নাড়ছে আর কামিজের উড়না দিয়ে ঘাম মুছছে আনজুমা।
বিউটিখালা এতদিন যাবত দেখভাল করেছে আশফির। সচরাচর দাওয়াত দেওয়া হয়নি। ফলে মনের একাকিত্ব দূরীকরণে বিউটিখালাকে দাওয়াতে ডাকে। বাসার মধ্যে নানান বাজার এনে রেখেছে। আরভীক জবের প্রথমদিনই বোনার্স হিসেবে বিশ হাজার টাকা পেমেন্ট দিয়ে ছিল। যা অতি কম সময়ে পাওয়ার কল্পনাও করেনি আনজুমা। তবে পেমেন্ট নিতে ইতস্ততঃবোধ করে। সন্দেহ জেগেছিল কোনো তার উপর দয়া দেখিয়ে পেমেন্ট দিচ্ছে না তো! কিন্তু না তার কল্পনা ভুল ছিল! অঞ্জয়ের ভাষ্যমতে, রুলসে ছিল যে ব্যক্তি প্রথম জয়েন করবে তাকে প্রথমদিন উপলক্ষে বোনাস পেমেন্ট করা হয়।
ফলে সন্দেহকে ঝেড়ে ফেলে খুশিমনে পেমেন্ট গ্রহণ করে ছিল। আজ সেই পেমেন্ট এর আংশিক খরচ করে বাজার আনিয়েছে বাসার দারোয়ানকে দিয়ে।
বিউটিখালা মশলা বাটা করে বাটির মধ্যে রেখে গেল। মুরগী খসতে দিয়ে আনজুমা পেয়াঁজ,রসুন,আলু,আদা ইত্যাদি কাটতে বসে। আশফি কড়া ঘ্রাণের কারণে মাঝমধ্যে হাচি দিচ্ছে। এলার্জি নেই তবে ঘ্রাণ ঝালপূর্ণ হওয়ায় হাচি পাচ্ছে তার। যা কিচেন থেকে শুনতে পাচ্ছে আনজুমা। আশফি ছোট হওয়ায় তার সঙ্গে সৌহাদ্যের ছেলেমেয়ে দুটো মিশে খেলতে থাকে। সৌহাদ্য আড়চোখে কিচেনের দিকে বারদুয়েক স্নিগ্ধ পলক ফেলছে আনজুমার প্রতি। মেয়েটার শ্যামবর্ণী রুপটা মন না চাইতেও সৌহাদ্যকে আকৃষ্ট করছে। মেয়েটি শালীন রুপেই অমায়িক। তার আচরণে সে অতীব মুগ্ধ। বউ চলে যাওয়ার পর কোনো নারীই তার মনে স্থান পায়নি। তবে কেনো যেনো তার আনজুমাকে দেখে ঐ স্থান দেওয়ার উপযুক্ততা মনে হচ্ছে।
ঠোঁট কামড়ে আনমনে হেসে দেয় সৌহাদ্য। তার মনের ছেদ ঘটে বাসায় ডোর বেল বেজে উঠার কারণে। আনজুমা কিচেনে গটগট করে আদা পিষছিল ডোরবেল শুনে আদা পিষা থামিয়ে দেয়। ঠোঁট পাঁকিয়ে ভাবে, ‘কে আসল অসময়ে!’
বিউটিখালাও দরজার দিকে চেয়ে রইল। সৌহাদ সন্তপর্ণে এগিয়ে যায় দরজার নিকট। নিবিড়তা বজায় রেখে দরজা খুলতেই এক ব্যক্তি তড়িৎগতিতে ভেতরে প্রবেশ করে। গানের তালে সুর টেনে উচ্চ আওয়াজে বলে,

‘ও বউ, ও বউউউ তুমি কোথাইই,
আমি তোমাকে চাইই…!’

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here