নেশাটাই তুমিময় পর্ব -০৪

#নেশাটাই_তুমিময়
#লেখনিতে:- আবরার আহমেদ শুভ্র

•|পর্ব – ০৪|•

[কার্টেসি ছাড়া কপি একদম নিষেধ]

ভয়ার্ত চোখে সামনের মানুষটির দিকে তাকালো অনিমা। ভয়ে বারবার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে তার। কারণ, সামনে তার বড়মামি কলি বেগম রক্তচক্ষু নিয়ে রাগান্বিত হয়ে দাড়িয়ে রয়েছেন। যেকোনো মুহুর্তে যেন ঝড় বেয়ে দিতে পারেন অনিমার উপর। এবাড়ীতে সবচেয়ে বেশিই ভয়ানক ব্যক্তি আর কেউ থাকলে সে একমাত্র এই কলি বেগম। যেকোনো কিছুকে তিল থেকে তাল বানিয়ে ছাড়তে একবিন্দু পরিমাণ ছাড় দেয় না কিছুতেই। তারই ভাবনার মাঝে ছেদ পড়ল যখন তার বড়মামি ফোনটা চেয়ারে টাস করে রেখে কর্কশ কণ্ঠে বলে উঠলেন,,

– ‘কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে মোবাইল চালানো হচ্ছে তাই না নবাবজাদী? ঘরের কাজগুলো কে করবে শুনি? তোর মরা মা! সে তো গত হয়েছে তাও আমাদের ঘাড়ে তোরে চেপে দিয়ে।’

মায়ের সম্পর্কে কটুক্তি শোনে ঘৃণায় দুফোটা অবাধ্য জল দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ার আগেই হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে মুছে ফেলল অনিমা। তাকে গালি দিক তাতে কিছু যায় আসে না তার কিন্তু কথায় কথায় তার মাকে কেন টেনে আনে এই মহিলা সেটা বুঝে না অনিমা। তাদের কোন ধানে যে তার মা মই দিয়েছিল সেটা জানে না! অনিমাকে ভাবান্তর হতে দেখে কলি বেগম আবারও ত্যাড়া কন্ঠে বলে উঠলেন,

– ‘দুপুরের আগেই কাজ সবটুকুই যেন শেষ হয়। নাহলে আজ তোর দুপুরের খাওয়া বন্ধ বলে দিলাম।’ তাদের কথার মাঝেই এসে উপস্থিত হলো তুরনের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী ফারিহা। সে এসে দেখলো তুরনের মা অনিমাকে যা নয় তা বলে গালি দিচ্ছে। তাতে তাসফির ভিষণ খারাপ লাগলো। এই বাড়ীতে আসার পর থেকে সে দেখেই চলল কিভাবে অনিমাকে তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি আর দেবর ও তুরনের চাচাতো বোন তম্বী মিলে হেনস্থা করে। তাতে তার বেশ মায়া লাগে অনিমার প্রতি। সে এও যে জেনেছিল তার স্বামীর সাথে অনিমার সম্পর্ক ছিলো। তাতে তার কিছুই যায় আসে না। কারণ, এমন সম্পর্ক থাকতে পারে সেটা স্বাভাবিক। যায়হোক সে বুঝতে পারছে এখন তার শ্বাশুড়িকে কিছু একটা বলে না থামালে তিনি অনিমার গায়ে হাত পর্যন্ত তুলতে পারেন। তাই ফারিহা বলে উঠল,

– ‘মা আপনায় বাবা ডাকছেন। আপনি বরং ওদিকটায় যান আমি আছি এখানে।’ কলি বেগম তাকিয়ে দেখলো তার ছেলের বউ সামনে দাড়িয়ে তাই সে চুপ হয়ে গেলো।

– ‘গেলাম আমি।’ বলে মুখ বেকিয়ে রান্নাঘর থেকে প্রস্থান করলো সে।

– ‘আচ্ছা’। ছোট্টস্বরে জবাব দিলো অনিমা। এ আর নতুন কি? প্রতিদিনই তো এমন কটু কথা শোনতে হয় তার। তাই সয়ে গেছে। কিন্তু মনকে শান্ত্বনা দিলো যে অল্পের জন্য ড
সে বেঁচে গেলো। নাহলে বাড়ীতে এতক্ষণে কালবৈশাখীর তুফান বয়ে যেত। ফারিহা অনিমার কাছে গিয়ে তার থুতনি ধরে মাথাটা উপরে তুলে বলল,

– ‘অনুপাখির কি মন খারাপ?’

-‘না ফারুপু!, আ’ম ওকে!’ নিন্মস্বরে উত্তর দিলো অনিমা।

বিয়ের পর থেকেই অনিমার প্রতি যত্নশীল ফারিহা। সে আদর করে অনুপাখি বলে ডাকে অনিমাকে। কারণ অনিমা তার চেয়ে বছরখানিক ছোট হবে বলে। ‘তাহলে মাথা নিচু করে আছো যে? ফারুপু বলা যাবে না কি?’

– ‘আসলে মাম্মামকে নিয়ে কিছু বললে…. ‘ অনিমার কথা কেড়ে নিয়ে ফারিহা বলে উঠল, ‘শোনো বনুজ, এই নিয়ে মন খারাপ করবে না একদম। তোমাকে যে বড় হতে হবে! তোমাকে এমন কথা বলে অনেকে তোমার মনোবল ভেঙ্গে দিতে চাইবে আর তোমার কিন্তু এসব কথাকেই আপন সঙ্গী হিসেবে নিতে হবে তবেই না তুমি সাকসেস হবে। কি মানবে তোমার আপুর কথা? আর শোনো তুমি যেহেতু আমার ছোট তাই বলি তোমাকে আমি তুই বলেই ডাকবো, রাগ করবা তুমি?’

– ‘না ফারুপু, তুমিই আমার একমাত্র আপুই, তাই তুমি আমাকে তুই বলেই ডাকবে। তাতে আমি রাগ করবো! প্রশ্নই আসে না।’ বলে মনভোলানো মুচকি হাসিটা দিলো। ফারিহা এক ধ্যানেই অনিমার হাসিটার দিকে তাকিয়ে রইল। অনিমা ফারিহাকে ধাক্কা দিয়ে ধ্যান ভাঙ্গালো, ‘আপুই কি দেখছো ওমন করে?

– ‘তোর মিস্টি হাসিটা! সত্যিই আমি মেয়ে হয়ে কিন্তু এখনই হাসির প্রেমে পড়ে গেলাম যে!’ ভ্রু নাচিয়ে কথাটা বলতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো অনিমার মুখ। সে, ‘ধ্যাত, আপুই, তুমিও না!’

– ‘লজ্জা পেতে হবে না তো। চল কাজটা সেরে নিই দুজন একসাথে।’ বলেই অনিমাকে সাহায্যের জন্য কাজে হাত লাগিয়ে দিলো।

– ‘আপুই, আমি পারবো। তুমি বরং রে….’ ফারিহা অনিমার কথায় রেগে গেলো। খানিক রেগে উত্তর দিলো, ‘অনু, নো এক্সকিউজ, আমি আজ থেকেই তোর সাথে কাজ করবো। আর বোন হয়ে বোন কাজে হেল্প করলে দোষের কিছু না। নেক্সট টাইম এমন কথা কখনও বলবি না ওকে?’

অনিমা ফারিহার কথার প্রতিত্তোরে মাথাটা উপর নিচ করলো যার মানে সে আর কিছু বলবে না। ফারিহা মুচকি হেসে কাজে মন দিলো।
____________

– ‘বল কি কারণে, আমার ফুলপরীকে এতোটা অপমান করেছিলি সেদিন তোর ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে? আন্সার মি ড্যাম ইট!

– ‘আ্ আ্ আসলে আ্ আমি ক কর্ তে চাইনি পরিস্থিতি এমন ছিলো বলে করেছি। আর ওকে আমি আমার ভাইয়ার সাথে দেখতে পারতাম না আমি।’

– ‘ওয়াই? কি ক্ষতি করেছিল সে তোর?’ বলেই মুখ বরাবর একটা পান্চ মারলো রুদ্ধ।

– ‘আহহ্, বলছি বলছি। আসলে আমি অনিমাকে পছন্দ করতাম তাই।’ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো রুদ্ধ, ‘পছন্দ করতি? তাহলে অপমান করলি কেন?’ বলেই ননস্টপ মারা শুরু করেদিলো। এমন ভাবে মারছে যে সে প্রতিত্তোরে গগনবিদারী চিৎকার করে চলছে। আবারও বলে উঠল, ‘তোকে আজ জানে মারলাম না, কজ তোকে আরও একটা সুযোগ দিলাম। ফুলপরীর দিকে তাকাতে একশবার ভাববি। সি ইজ অনলি মাইন, গট ইট!’

অবশেষে বেশকিছুক্ষণ পর থামলো রুদ্ধ। তুর্যনের শরীর অসাড় হয়ে এলো। শরীরের প্রতিটা কোনা থেকেই রক্ত ঝড়ে পড়ছে। এমন রক্তাক্ত অবস্থা করেছে যে তাকে চেনাই যাচ্ছে না সহজে। রুদ্ধ তার গার্ডসদের অর্ডার দিলো, ‘মধ্যরাতে এই জানোয়ারটাকে ইনকিয়াত প্যালেসের সামনে ফেলে আসবে। এই অবস্থাতেই।’ উত্তর দেয়ার আগেই গটগট করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো সে।
___________

‘ফুলপরী এমন একটা সময় আসবপ যখন তোমাকে কেউ কিছু বলার আগে দশবার ভাববে। সেটা খুব শীঘ্রই হবে। কজ তুমি এখন থেকে রুদ্ধ শাহরিয়ারের পার্সোনাল প্রপার্টি হয়ে গেছো!’ আপন মনে বলে উঠল রুদ্ধ। সে দ্রুত তার বাবার রুমে চলে গেলো। তার বাবা ফারদিন শাহরিয়ার এখন বেশ সুস্থ আছেন। তার শরীর বিষের প্রভাব কাটিয়ে হালকা রেসপন্স করা শুরু করেছে। তার বাবার রুমে এসে দেখলো তার বাবা বিছানায় হেলান দিয়ে বসেছেন। সে তার বাবার রুমে নক করল, ‘বাবাই, আসবো?’

অনেকদিন পর ছেলের মুখ থেকে বাবাই ডাকটা শুনে খুশিতে কেঁদে দিলেন ফারদিন শাহরিয়ার। সেই ১৩ বছর পর আবারও বাবা বলে ডাকলো রুদ্ধ। তিনি দ্রুত রুদ্ধকে মাথা ভিতরে আসার অনুমতি দিলেন। রুদ্ধ এসে তার বাবার পাশে বসল। তারপর হাতে থাকা খাবারের প্লেটটা তার বাবার সামনে রেখে একলোকমা এগিয়ে দিলো।
খাবার শেষ করে সার্ভেন্টদের না ডেকেই রুদ্ধ সবটা পরিষ্কার করে এসে বসল তার বাবার পাশে। তার বাবার হাতে হাত রেখে বলল, ‘বাবাই, আ’ম রিয়েলি স্যরি। আসলে এতোদিন ভুলটা জেনে তোমায় দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম। আজ থেকে কখনই এমন হবে না বাবা। আই প্রমিজ বাবাই।’

ফারদিন শাহরিয়ার নিজের ছেলের হাতটাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলে উঠলেন, ‘আই নো মাই সান। আমি জান তুমি ঠিকই একদিন তোমার ভুলটা বুঝতে পারবে। আমি জানি না কে তোমার মনে আমার সম্পর্কে এতোটা মিথ্যে বিষ দিয়েছিলো। তবে যায়হোক, সে কখনও শান্তিতে থাকতে পারবে না। বাই দ্যা ওয়ে, আজ আমি অনেক খুশি।’

– ‘আমিও বাবাই। তবে আমার কানে মিথ্যে বিষ ঢালা অপরাধীটা কে তুমি জানো কি? জানলে হয়তো নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারবা না। তার আগেই নিজেকে শক্ত করে নাও।’

ঘাবড়ে গেলেন ফারদিন শাহরিয়ার। কে সেই ব্যক্তি যে তার সম্পর্কে তার ছেলেকে ভুল বুঝিয়েছিল? তাকে জানতেই হবে। তাই সে নিজেকে সামলিয়ে শক্ত করলো। যেন সেই পরিস্থিতিতে নিজেকে শক্ত রাখা যায়। বলে উঠল, ‘বল রুদ্ধ, আমি জানতে চাই কে সেই কালপ্রিট!’

রুদ্ধ যার নাম উচ্চারণ করলো তাতেই যেন সেই মানুষটির উপর থাকা বিশ্বাসের কাঁচটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো ফারদিন শাহরিয়ারের। তিনি ভাবতেই পারেন নি এমন কাজটা কেউ করবে।

#চলবে কি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here