নেশাটাই তুমিময় পর্ব -০৫

#নেশাটাই_তুমিময়
#পর্বঃ ০৫
#Writer:- আবরার আহমেদ শুভ্র

[কার্টেসি ছাড়া কপি একদম নিষেধ]

৯. 🌼

নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের এমন অপবাদ কোনো মতেই মেনে নিতে পারছেন না ফারদিন শাহরিয়ার। জাহিদ আলি এতো বড় অপবাদ রটিয়ে রুদ্ধকে এতোটা ইনিয়েবিনিয়ে মিথ্যে কথা বলেছিল! তাও রুদ্ধের ছোটবেলায়। যা এতোদিনে রুদ্ধের মনে রাগ আর ঘৃণার রূপ নিয়েছে। তাও অন্যের দোষটাও ফারদিন শাহরিয়ারের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলো জাহিদ? এতটা স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলো সে? যাকে এতোটা বিশ্বাস করতো সেই আজ তার বিশ্বাসটাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিলো? এইছিল তার নাটকীয় বন্ধুত্ব! চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে কয়েকবার শ্বাস নিল ফারদিন শাহরিয়ার। রাগে ফলে তার শরীরের প্রতিটা কোষ খাড়া হয়ে দাড়িয়ে গেছে। যেন এই মুহুর্তে জাহিদকে পেলে মাথায় তুলে আছাড় মারবেন।

রুদ্ধ টের পেল তার বাবা রেগে গেছে। তার রাগ যখন অতিমাত্রাই বেড়ে যায় তখন তিনি চোখ বন্ধ করে নিজেকে ঠাণ্ডা করতে জোড়ে জোড়ে কয়েকবার শ্বাস নেন। তাই রুদ্ধ তার বাবাকে সেই সুযোগটা দিলো। তার বাবা চোখ খুলতেই,

‘বাবাই, রেগে গেলে তো হবে না। আমাদের এখন কি করা উচিত সেটা ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করা উচিত। তাও স্ট্রং এন্ড সেইফ্টলি।’

রুদ্ধের বাবা চোখ বন্ধ করে হাতজোড়া মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো। তারপরে থমথমে স্বরে জবাব দিলো, ‘কি করতে চাও তুমি? আমার তো ইচ্ছে করছে এই বাস্টার্ডটাকে এখুনি মাটির তলায় পিষে ফেলতে।’

‘কুল ডাউন বাবাই, এতো উত্তেজিত হলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। সর্বপ্রথম তাকে তোমার দেয়া আমাদের বিজনেস প্রপার্টির একচতুর্থাংশগুলো নিয়ে নেয়া। তাই বুঝতেই পারছো কি চাই আমি?’

‘হুম। তবে কি চাও তুমি?’ রুদ্ধের দিকে প্রশ্নাত্মক চোখে তাকালো ফারদিন শাহরিয়ার।

‘সেটা নাহয় সেদিনই দেখবে? আমার উপর বিশ্বাস আছে তো?

রুদ্ধের হাত শক্ত করে ধরে বলে উঠলেন, ‘পূর্ণ বিশ্বাস আছে আমার। তবে ভয় হয় সে যদি তোমার সাথে খারাপ কিছু করে ফেলে?’

‘ডোন্ট ওরি বাবাই, কিচ্ছু হবে না। ট্রাস্ট মি! এই জাহিদ আলি এখনও ঘুঘু দেখেছে কিন্তু ফাঁদ দেখেনি তাই একটু বেশি করছে। আর, তোমাকে যাস্ট একটা ড্রামা করতে হবে এতে। তাহলে সবটা কেল্লাফতে!

‘ওকে, মাই সান। সবটাই হবে।’

‘বাবাই একটা কথা ছিলো। জানি না তুমি কথাটা কেমনে নিবা, তবুও বলতে চাই।’

ফারদিন শাহরিয়ার ছেলের লাজুকা টের পেয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘অনিমাকে ভালোবাসো এটা তো? আমার ছেলের বউ হিসেবে আমি অনিমাকেই আনবোই, চিন্তা করো না।’ রুদ্ধ হা হয়ে গেলো। ভাবতে লাগলো তার বাবাই জানলো কি করে? তার রুমে তো কেউই যেতে পারে না! তাহলে?

‘এতো ভাবাভাবির কিছু নেই। যাও ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে নাও। অনেক রাত হয়েছে।’ রুদ্ধকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পাশ ফিরে শোয়ে পড়ল তার বাবা। তাই আর কোনো উপায় না পেয়ে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো রুদ্ধ।

তবে রুদ্ধ খুশি হলো যে তার বাবা অনিমাকে মেনে নেবে। সে যেতে যেতে ভাবতে লাগল, ‘বাবা আর কখনও লিসাকে নিয়ে বলবে না। কারণ, একদিকে সে জাহিদ আলির মেয়ে, অন্যদিকে এই মেয়েটা দারুন অসহ্যকর!’

১০. 🌼

বন্দুকটা হাতে নিয়ে সামনের রাখা ফুলদানী বরাবর গুলি চালালো ২৩বছর বয়সি এক যুবক। এই দিনে সে না চাইতেও তার রাগ প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়। কারণ, আজ তার বাবা মায়ের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনই তার বাবা মাকে হত্যা করা হয়েছিলো। তাও পরিকল্পিতভাবে! সে এই দিনটাকে স্বরণ করে হত্যাকারীদের মৃত্যুর পরিকল্পনায়। আজ পাঁচ পাঁচটি বছর ধরে সে খুঁজে চলছে এই কালপ্রিটদের। তবে পেয়েও গেছে। এখন শুধুই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলেই হলো। তার ভাবনার মাঝে ছেদ পড়ল যখন ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠল। সেদিকে চোখ বুলাতেই ঠোঁটেট কোণে বাঁকা হাসিটা ফুটে উঠল। ফোন রিসিভ করে ছেলেটা বলে উঠল, ‘সবটা ঠিক তো?’

‘হা, তবে তুই ঠিক আছিস তো?’

‘আ’ম ফাইন। তুই কখন আসবি বললি না যে?’

‘সন্ধ্যেবেলা আসছি। বাবার ব্যাপারেও কথা আছে। সাথে এই জাহিদ আলির ব্যাপারেও। তাকেও তো সরাতে হবে তাই না?’

‘ওকে, তাহলে সন্ধ্যেবেলা দেখা হচ্ছে।’

‘হুম।’ বলে মোবাইলটা রেখে দিলো ছেলেটা। অবশেষে আস্তে আস্তে তার ফাঁদে সকলে ধরা দিচ্ছে! বলেই বিকট কন্ঠ হাসি দিলো সে।
_________

আলস্যের চাদর অবমুক্ত করে কুয়াশার ধূম্রজাল চিরে পুব আকাশে সূর্য নিজেকে জানান দেওয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। কোমল সূর্যরশ্মিতে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশিরবিন্দুগুলো মুক্তোদানার মতো ঝলমল করে। গাছের পাতা থেকে শিশির ঝরে পড়ার টুপটাপ শব্দ আর পাখিদের কলরব আন্দোলিত করে জীবনযাত্রাকে। শীতের সকালের মিষ্টি রৌদ্রের আলো এসে পড়ল ঘুমন্ত রমণীর মুখে। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো চারিপাশটা এখনো কুয়াশায় আবৃত। গতরাতে ঘুমাতে বড্ড দেরি হয়েছিল অনিমার। তাই উঠতেও দেরী হয়ে গেলো। তবে অবাক হলো আজ ৮টা বাজতে চলল অথচ কেউ তাকে ডাকেও নি! ব্যাপারটা বেশ ভাবালো অনিমাকে। অন্যদিন হলে হয়তো এতক্ষণ তার বড়মামির ঝাড়ি খেতে হতো। কিন্তু আজ! না দেখতে হয় ব্যাপারটা।

ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে যাওয়ার জন্য এগিয়ে যেতেই কারো ক্রন্দনরত শব্দ এসে কানে বাজলো অনিমার। কে কাঁদছে এতো সকালে? আওয়াজটা ঠিক নিচ থেকেই আসছে। দ্রুত পা চালিয়ে নিচে চলে এলো অনিমা। ড্রয়িংরুমে এসে দেখলো সকলে গোল বেঁধে কিছু একটা দেখছে। আর ভিতর থেকে কলি বেগমের কান্নার শব্দটাই ভেসে আসছে। কি হলো দেখতে গিয়েই আঁতকে উঠল অনিমা। তুর্যনের বডি পরে আছে নিচে! তাও রক্তাক্ত অবস্থায়! মুখটা ঠিকমতো চেনাও যাচ্ছে না। ভয়ে কেউ তার পাশেই ঘেঁষছে না।

অনিমার মনে হলো তুর্যনের বাহাত কিছুটা নড়ছে। সে দ্রুত কলি বেগমকে সরিয়ে তার পার্লস চেক করতেই চমকে উঠলো। কেননা তুর্যন এখনও জীবিত। চিৎকার করে বলে উঠল,

‘মামু, মেজদা জীবিত! তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে চলুন।’

সকলে এতক্ষণ পাথর হয়ে দাড়িয়ে থাকলেও অনিমার কথায় যেন প্রত্যেকের টনক নড়ল। তুরন দ্রুত ড্রাইভারকে গাড়ী বের করতে বলে, তুর্যনকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো। দ্রুত গাড়ীতে বসিয়ে হাসপাতালের উদ্দ্যেশে রওনা হয়ে গেলো।

তুর্যনকে নিয়ে সকলে গেলেও তুরনের স্ত্রী ফারিহা, অনিমা আর আসমা বেগম থেকে যায়। রান্নাকরার সময় হঠাৎ অনিমা বলে উঠল,

‘ফারুপু, আমার না খুব ভয় হচ্ছে মেজদার জন্য। আল্লাহ যেন সবটাই ঠিক করে দেন। মেজদাকে যেন সুস্থ করে দেন।’

ফারিহা অবাক চোখে তাকালো অনিমার দিকে। এই মেয়েকে এত অপমান করা সত্ত্বেও সে কিনা তুর্যনের সুস্থতা কামনা করছে!

‘কিচ্ছু হবে না, তুই নিজের কাজ কর। বাকিটা ডক্টরে সামলাবে। আমার না মাঝে মাঝে মনে হয় তুই কিসে তৈরি, বুঝলি?’

‘কেন? হঠাৎ এইকথা বলছো যে?’

‘এমনি, চল রান্না তো শেষ। ফ্রেশ হয়ে নি। তুরন আসবে আবার খাবার নিতে। ছোট মা দিবে খাবার ওকে।’

অনিমা ফারিহাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল,’হুম, দেখবে সবটা ঠিক হয়ে যাবে।’

‘হুম।’

১১.🌼

যে যার রুমে ফ্রেশ হতে চলে আসলো। অনিমা রুমে আসতেই তার মোবাইলে ঠিক একই নম্বর থেকে আবারও মেসেজ আসলো। চমকে উঠলো সে। এবার সে মেসেজ না পড়ে সাথে সাথেই সেই নম্বরটাতে কল করলো। কিন্তু বরাবরের মতোন এবারেও ফলাফল শূন্য! কারণ, সেই নম্বরটা বন্ধ! কি কে সে সেটার কোনো সন্ধানই পাচ্ছে না অনিমা। হঠাৎ পিছনে কারো গরম নিঃশ্বাস পড়তেই ভয়ে জমে গেলো সে। কিন্তু এই ভরদুপুরে আবার কে এলো তার রুমে? তাও বলা নেই কওয়া নেই! ভয়ে নিজের জামা খামছে ধরলো সে! ধুকপুকিয়ে কাঁপছে সে। শীতের মাঝেও কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে ভয়ে। সাহস নিয়ে সেদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই অন্তরাত্মা যায় যায় অবস্থা তার। কারণ পিছনে দাড়িয়ে আছে স্বয়ং…..

#চলবে কি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here