পূর্ণতায় তুমি পর্ব – ৪

গল্পঃ পূর্ণতায় তুমি ( চতুর্থ পর্ব )

অবনীর বুকের ওড়না টেনে নিতেই বখাটেদের সর্দারের গালে কষে এক থাপ্পড় মেরে দিলো অবনী। সর্দারের সাঙ্গপাঙ্গরা তেড়ে আসতেই সর্দার তাদের থামিয়ে দিয়ে বললো,– এতটাও দূর্বল নয় তোদের বস, তোরা কি কস!

সাঙ্গপাঙ্গরা সর্দারের মন রক্ষা করার জন্য সমস্বরে বললো,– ইয়েস বস, আমরাও হেইডাই কই!

সর্বদা বললো,– তাইলে বিষয়টা আমারেই হেস্তনেস্ত করতে দে, তোরা বিশ্রাম নে।

সাঙ্গপাঙ্গরা একটু দূরে সরে গিয়ে বিড়ি টানতে লাগলো।

বখাটেদের সর্দার অবনীর মুখোমুখি দাড়িয়ে, অবনীর গায়ে হাত বুলিয়ে বললো,– এত অহংকার কিসের হ্যাঁ, ও আচ্ছা! বুকটা তো আকর্ষণীয়, কোমরটাও সেই, ঠোঁট দুটো তো রসে টইটম্বুর, এমন অবস্থা করে ছেড়ে দেবো যে গলায় দড়ি দিয়ে মরতে গেলেও দড়িও মুখ ফিরিয়ে নেবে।

অবনী আবারও থাপ্পড় মারার জন্য হাত তুলতেই অবনীর হাতটা ধরে বখাটে সর্দার বললো,– বেশি পাকলে কিন্তু খাবার সময় হয়ে যায়, তোকেও খেয়ে এবার ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলার সময় এসে গেছে।

পেছন থেকে কেউ সর্দারের কাঁধে চাপড় দিয়ে বললো,– এই যে হাউ হাউ ফিলিংস ওয়ালা, কথায় আছে কুকুরের পেটে ঘি সয়না, আর তুই এত সুন্দর মেয়েটাকে খেয়ে ফেলার দিবাস্বপ্ন দেখিস কোন আহ্লাদে!

“তুই আবার কে শালা” বলে সর্দার ঘুরে দাঁড়াতেই আগন্তুকের এক থাপ্পড় খেয়ে সর্দার ফার্স্ট মোশনে কয়েকটা ঘুল্লি খেয়ে অবনীর সামনে স্থির হয়ে নিজের গাল চেপে ধরে বললো,– এডা কি হলো আপু, হঠাৎ আপনার শরীরে এই পুরুষালি শক্তির উদয় ঘটলো কী করে?!

অবনী সর্দারের কান্ডকারখানা দেখে হেসে ফেলে বললো,– বাহ! এক থাপ্পড়ে এতটা ভদ্রতার উদয়! একেবারে আপু!

সেই আগন্তুক পেছন থেকে সর্দারের ঘাড় ধরে তার দিকে ঘুরিয়ে বললো,– পুরুষালি শক্তির প্রয়োগ ওদিক থেকে হয়নি, এদিক থেকে হয়েছে।

সর্দারের সাঙ্গপাঙ্গরা তেড়ে আসতেই সর্দার তাদের থামিয়ে দিয়ে বললো,– যদি দেখিস আমার চক্ষু জুড়িয়া জল, তবুও ভাববি না আমি এতটুকু দূর্বল! তোরা কি কস?

সাঙ্গপাঙ্গরা সমস্বরে বললো,– আপনি অলওয়েস রাইট বস।

“ তাইলে তোরা ফাঁকে গিয়ে ফাও কাজে মন দে, আমি এদিকটা সামলাচ্ছি ” বলে হাত দিয়ে নিজের গাল ডলতে লাগলো সর্দার।

সাঙ্গপাঙ্গরা এক জন আরেকজনকে বললো,– বস শুধু আজীবন ডায়লগই মেরে যাবে, আর বসরে অন্যরা মেরে যাবে!

অন্য একজন বললো,– চুপ কর, বসের শরীরে সইলে আমাগো মনে সইতে সমস্যা কি! চল চিপায় গিয়ে বিড়ি টানি।

আগন্তুক যুবক সর্দারকে বললো,– মেয়ে মানুষ দেখলেই মনের ভেতর হাউ হাউ ফিলিংস জাগে তাইনা? তোদের চোখে মেয়ের শরীরের ভাঁজে ভাঁজে যৌনতা ছাড়া আর কিছু দেখা যায়না তাই তো? দেবো আরেকটা কানের নিচে?

সর্দার তড়িঘড়ি করে বললো,– না দরকার নাই একটাই যথেষ্ট, না দিয়া বুঝাইয়া বলেন স্যার।

আগন্তুক যুবক আবার বললো,– মেয়েদের দিকে কুদৃষ্টিতে তাকানোর আগে একবার নিজের মা বোনের কথা ভাবিস, তাহলে আর মনের ভেতর হাউ হাউ ফিলিংস জাগ্রত হবেনা বুঝলি! আজ যদি অবনীর স্থানে তোর নিজের বোন হতো, তখন কেমন লাগতো তোর?

আগন্তুক যুবকের মুখে অবনী তার নিজের নাম শুনে ভীষণ অবাক হয়ে গেল, কেউ তো অবনীর নাম একবারও উচ্চারণ করেনি, তাহলে সে কিকরে জানলো!

সর্দার আগন্তুক যুবকে বললো,– স্যার এত সুন্দর করে উচিৎ শিক্ষা এর আগে কেউ দেয়নি তো, তাই দিনদিন বদঅভ্যেসগুলো আর খারাপ হয়ে গেছে!

সর্দারের বদ অভ্যাস খারাপ হয়ে যাবার কথা শুনে অবনী আবার হেসে ফেললো। অবনী ভীষণ অবাক, কে এই আগন্তুক যুবক! যার আগমনে এতবার হাসি ফুটলো অবনীর মুখে!

সর্দার কাচুমাচু করে আগন্তুক যুবককে জিজ্ঞেস করলো,– কিন্তু আপনি কে স্যার? বিষয়টা একটা ক্লিয়ার করে বুঝিয়ে বলেন।

যুবক বললো,– আরেকটা দিলেই সবকিছু ক্লিয়ার বুঝতে পারবে, দেবো নাকি?

সর্দার একটু দূরে সরে গিয়ে বললো,– ইয়ে মানে, না থাক, মুরব্বিরা বলে বেশি বোঝা সাস্থের জন্য ক্ষতিকর।

তারপর সর্দার তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে হাওয়া হয়ে গেল।

খাম্বার সাথে বেধে রাখা পিচ্চি চেচিয়ে বললো,– আমারে কি মুক্ত করবা, প্রচুর নিম্নচাপ আইছে কিন্তু, খাম্বার গোড়ায় হিসু করে দিমু কিন্তু!

পিচ্চির কথা শুনে অবনী ও আগন্তুক যুবক দুজনেই হেসে ফেললো।

যুবক পিচ্চিকে বললো,– না না, শেষে তোমার হিসুর জলে স্টেশন ভেসে গিয়ে সরকারের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে।

যুবক এগিয়ে গিয়ে বাঁধন খুলে পিচ্চিকে মুক্ত করে আনলো।

অবনী এগিয়ে এসে আগন্তুক সুদর্শন যুবকের মুখোমুখি দাড়িয়ে প্রশ্ন করলো,– ওদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ, এবং কৃতজ্ঞতা। এবার বলুন তো আপনি কে?

যুবক মিষ্টি হেসে বললো,– আমি মাটি ও কাদার, আমি কালো ও সাদার, আমি মেঘের ও বৃষ্টির।

পিচ্চি বললো,– ঐ মিয়া আপনি একা এতজনের ক্যান, আপনি কি বারোভাতারি!

পিচ্চির কথা শুনে আবারও অবনী হেসে ফেললো।

যুবক আবার বললো,– আমি মাথার উপর বিস্তৃত নীলের ক্যানভাস।

এবার অবনী বুঝতে পেরে বললো,– তার মানে আপনি আকাশ?!

যুবক মিষ্টি হেসে বললো,– হ্যাঁ আমি আকাশ।

পিচ্চি বললো,– বড়ভাই, নামটা সোজাসুজি না বইলা বরিশাল টু নোয়াখালী প্যাচাইয়া বলার কি দরকার!

আকাশ হেসে ফেলে বললো,– মেয়েদের এভাবেই কথার প্যাঁচে ফেলে ইমপ্রেস করতে হয় পিচ্চি, সে তুমি বুঝবে না!

অবনী বললো,– মিস্টার আকাশ, আমি অবনী এবং ভীষণ অবাক হলাম তখন আপনার মুখে আমার নাম শুনে, সত্যি করে বলেন তো আপনি আমার নাম জানেন কীভাবে?

আকাশ আবারও মিষ্টি হেসে বললো,– এটা তেমন মারাত্মক কিছু নয় অবনী, চাইলে কতকিছুই তো সম্ভব! তুমি ট্রেন থেকে নেমে হাতে থাকা ট্রেনের টিকিট দলামোচা করে ফেলেছিলে স্টেশনে, সেটা আমার নজরে পড়েছিল, সেটা তুলে নিয়ে নামটা দেখে নিয়েছিলাম।

অবনী ভীষণ অবাক হয়ে বললো,– তা কাজ-বাজ কিছু করা হয়? নাকি স্টেশনে স্টেশনে মেয়েদের টিকিট কুড়িয়ে নাম জানা হয়?!

আকাশ বললো,– একজন ভবঘুরে ব্যক্তির কাছে পুরো পৃথিবীটাই তার বাড়িঘর, আর পিছুটান থাকে বলে মানুষ কাজ করে, আমার আমি একা, একটা পেট চালিয়ে নিতে অত বেশি কাজবাজের প্রয়োজন হয়না। মেয়েদের টিকিট কুড়াই না, তোমার মুখটা দেখে মনে হয়েছিল পৃথিবীর সমস্ত বিষাদ বেদনা ভর করে আছে ঐ মুখে, তাই জানার খুব আগ্রহ হয়েছিল বলেই তোমার ফেলে দেয়া টিকিট কুড়িয়েছিলাম।

আকাশের কথা শুনে মুগ্ধ অবনী, একটা মানুষ এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে!

পিচ্চি আকাশকে বললো,– ভাই তোমার হাবভাব দেইখা মনে হয়না তুমি ভবঘুরে, যার ইনকাম নাই তার আবার এত সুন্দর পোশাকআশাক! সত্যি বলো তুমি কেডা?

আকাশ হেসে ফেলে বললো,– পিচ্চি, একটু স্মার্ট হয়ে না চললে মানুষ মানুষ মনে করেনা! সুন্দর করে গুছিয়ে কথা না বলতে পারলে, পরনে ভালো পোশাকআশাক না থাকলে তোমার অবনী আপুও এতটা গুরুত্ব দিতনা এই আকাশকে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয় বুঝলে!

আকাশের কথা শুনে অবনী আরও অবাক! আকাশের কথাগুলো হুবহু মিলে যাচ্ছে অবনীর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে। হিমি মর্ডান এবং স্মার্ট মেয়ে বলেই শুভর কাছে প্রাধান্য পেলো, আর অবনী গ্রামের মেয়ে, স্মার্ট এবং মর্ডান হতে পারেনি বলেই শুভ অবনীকে দূরে সরিয়ে দিলো!

আকাশ অবনীর চোখে চোখ রেখে বললো,– সময় যদি ছুড়ে ফেলে দিতে চায়, বুঝে নিতে হবে নিজেকে ভেঙে আবার নতুন করে সাজিয়ে সময়ের উপযোগী করে নেবার সময় হয়েছে অবনী।

অবনী আরও ভীষণ অবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, কিছু তো একটা রহস্য লুকিয়ে আছে এই আকাশের মধ্যে, কে এই আকাশ?…

চলবে…

লেখাঃ আবীর হোসেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here