প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা পর্ব – ৪৫+৪৬

#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৪৫

প্রহর বারবার কল করছে সৌহার্দ্যকে। সৌহার্দ্য নিজের ঘরে ঢুকে প্রহরকে একটা মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়ে দিলো যে, সে তাকে পরে কল করবে। ফোনটা বেডে ছুঁড়ে ফেলে সৌহার্দ্য নিজের শান্ত হয়ে বসলো। ব্যাগটা খুলতে গিয়ে অনুভব করলো, ওর হাত দু’টো কাঁপছে। চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। তার পর ব্যাগটা থেকে একে একে সকল কাগজপত্র বের করতে লাগলো। মোট পাঁচটা ফাইল, একটা ডায়েরি আর একটা পেনড্রাইভ পেল সৌহার্দ্য। জিনিসগুলোর দিকে ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এগুলোতে কী এমন আছে?

ফাইলগুলো চেক করে সৌহার্দ্য বুঝতে পারলো, এগুলো তরীর মা- মালিহার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তির কাগজপত্র। এর মধ্যে একটা ফাইল ঐ ডুপ্লেক্স বাড়ির, তিনটা ফাইল তিনটা ফ্যাক্টরির মালিকানার। কিন্তু পঞ্চম ফাইলটা দেখে সৌহার্দ্য বেশ চমকালো। কেননা সেটা তরীর মায়ের উইল ছিল। সেই উইল অনুযায়ী, ওনার মৃত্যুর পর তিনি নিজের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তির মালিকানা তরীর নামে করে দিয়ে গেছেন। তার মানে বর্তমানে এতো কিছুর মালিকানা একমাত্র তরীর!

অবাকতার রেশ কাটিয়ে সৌহার্দ্য ডায়েরিটা হাতে নিলো। এটা তরীর মায়ের ব্যক্তিগত ডায়েরি। এটাতে কি মালিহা সবকিছু লিখে রেখে গেছেন? সৌহার্দ্য ইতস্তত করে ডায়েরিটা খুললো। প্রথম পৃষ্ঠায় তরী আর মালিহার একটা ছবি, আর তার নিচে লেখা “আমার চাঁদ, আমার জীবনে একমাত্র আলোর উৎস”

সৌহার্দ্য মলিন হেসে ডায়েরির পাতা উল্টালো,

—ডায়েরি অংশ—

(১)
লোকে বলে, কোনো কিছু আনন্দের সাথে শুরু হলে সেটা নাকি আনন্দের সাথেই শেষ হয়! তাই আজকের এই খুশির দিনে আমি এই ডায়েরিটা লিখা শুরু করলাম৷ এই খুশির কারণে হয়তো এই ডায়েরির শেষটাও খুশির সথে হবে। আরে, হ্যাঁ! আমি তো আমার এতো আনন্দের কারণটাই বলতে ভুলে গিয়েছি! আমার অন্ধকার জীবনে আজ একটা সুন্দর চাঁদ উঠেছে। অরুণীর পর আমার ঘরে আরো একটা কন্যাসন্তান দিয়েছেন আল্লাহ। ওকে আমি যখন কোলে নিয়েছিলাম, তখন ওর মুখটা এতো আদুরে লাগছিল! মনে হচ্ছিল চাঁদ তার সব আলো ওর মুখে ঢেলে দিয়েছে। সৌহার্দ্য তো ওর নামই দিয়েছে চাঁদ! কিন্তু ওর বাবাকে কোথাও দেখলাম না। সুজাতা ভাবী বলেছে, উনি নাকি মেয়েকে এসে দেখে গেছেন! কিন্তু আমি জানি উনি আসেনি। ছেলে হয়নি শুনে হয়তো তিনি নিজের মেয়ের মুখটাও দেখতে আসেননি! মানুষ এতোটাও পাষাণ কীভাবে হয়?”

(২)
আজকে আমার মেয়ের নাম রেখেছি ‘অরিত্রী’। মেয়ে দুজনের নাম-ই ওদের বাবার নামের সাথে মিলিয়ে রাখলাম। কিন্তু পুরো বাড়ির সবাই ওকে চাঁদ বলেই ডাকছে শুধু। সবাইকে এতো খুশি দেখে আমার এতো ভালো লাগছে! কিন্তু ওর বাবার এখনো কোনো দেখা পেলাম না। তিনি বোধ হয় আমার আর আমার মেয়ের মুখ দেখতে চান না। মেয়েটা সবার এতো এতো আদর পেয়েও বাবার ভালোবাসা পেলো না। আল্লাহর কাছে আমার একটা-ই দোয়া! আমার মেয়েটা বাবার থেকে অনেক অনেক ভালোবাসা পাক, যেন ওর মায়ের আদরের প্রয়োজন-ই না পড়ে!

(৩)
আমি বুঝতে পারছি না, অরুণী দিন দিন আমার প্রতি এতো উদাসীন হয়ে পড়ছে কেন? আমার সাথে কথা বলতে চায় না, থাকতে চায় না, সবসময় খারাপ আচরণ করে। চাঁদকে আগে কোলে নিতো, কিন্তু এখন ফিরেও তাকায় না। তবে ওর বাবার সাথে খুব ভাব এখনও। ওদের দুজনকে এখনও বুঝে উঠতে পারছি না।

এই পর্যন্ত পড়ে সৌহার্দ্য পরের পৃষ্ঠায় গিয়ে দেখলো, বেশ কয়েকটা পেইজ ফাঁকা। মালিহা খুব সম্ভবত এই পর্যন্ত লিখে ডায়েরি লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ডায়েরির একদম মাঝামাঝি গিয়ে সৌহার্দ্য দেখতে পেল, সেখান থেকে আবার লেখা শুরু হয়েছে। তারিখ দেখে বুঝতে পারলো, প্রায় পাঁচ-ছয় বছর পর তিনি পুনরায় এই ডায়েরি লিখেছিলেন। তবে লেখার কালিগুলো কেমন যেন ছড়িয়ে গেছে। ছড়ানো লেখাগুলো ঘোলাটে হয়ে কেমন যেন নীলচে বর্ণ ধারণ করেছে। সৌহার্দ্য বুঝতে পারলো যে, এগুলো কারো চোখের পানি পড়ার কারণে হয়েছে। হয়তো মালিহা নিজেই কেঁদে কেঁদে লিখছিলো বলে এমনটা হয়েছে। কিন্তু লেখাগুলো পড়া যায়। তাই সৌহার্দ্য পড়া শুরু করলো।

“মানুষ যখন নিতান্তই মন্দ ভাগ্য নিয়ে পৃথিবীতে আসে, তখনই তার জীবনের সকল দরজা একসাথে বন্ধ হয়ে যায়। আমি ভাবতেও পারিনি যে, আমার ভাগ্য এতোটাও খারাপ হবে। নিজের ভেতরে কষ্টগুলো চেপে রাখতে পারছি না আমি। তাই আবার এই ডায়েরিতেই কিছে কথা লিখে রাখতে ইচ্ছে করছে।

অরুণীর বাবা এতো বছরেও আমার চাঁদকে একবারের জন্য ছুঁয়ে দেখলো না। আমি বুঝে উঠতে পারতাম না, একজন বাবা কীভাবে এমন নিষ্ঠুর হতে পারে? কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, তিনি কেন এমন করেন! তার এক বন্ধু বেশ কয়েকদিন যাবৎ আমাকে বলছিলো যে, ড. আরমানের নাকি অন্য একটা মেয়ের সাথে অ্যাফেয়ার চলছে। আমি বিশ্বাস করিনি। তাই আমি ওনাকে টানা তিনদিন ফলো করেছি, ওনার পিছু নিয়েছি। ওনার পেছনে আমার লোক লাগিয়েছি। শুধু সত্যিটা জানার জন্য। কিন্তু এতে আমি নিজের চোখে যা দেখেছি, সেটা দেখার আগে আমার চোখ দুটো অন্ধ হয়ে গেলেও শান্তি পেতাম আমি। উনি একাধিক নারীতে আসক্ত। এটা জানার পর থেকে ওনাকে দেখলে ঘৃণায় মন বিষিয়ে উঠতো আমার।

দিন দিন মানসিক ও শারীরিক দূর্বলতা ঘিরে ধরছে আমায়। সুজাতা ভাবী বিষয়টা খেয়াল করেছেন। তাই উনি বারবার বলছিলেন ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু আমি ওনাকে কী করে বলবো? আমার যে বাঁচার ইচ্ছেটাই মরে গেছে! কিন্তু আমার কিছু হয়ে গেলে আমার চাঁদের কী হবে? অরুণী তো ওর বাবার পুরো আদরটাই পাচ্ছে! আর অরিত্রী সেটা থেকে বঞ্চিত। তাই আমাকে বাঁচতে হবে। আমার মেয়ের জন্য বাঁচতে হবে। ভাবীর কথা অনুযায়ী আজ অরিত্রীকে স্কুলে দিয়ে হসপিটালে গেলাম। সাথে ভাবীও গিয়েছিল। ডাক্তার কয়েকটা টেস্ট করানোর পর জানালেন, আমি আবারও মা হতে চলেছি। এটা কি আমার জন্য আনন্দের নাকি বেদনার, ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না! তবে আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছিল। সুজাতা ভাবী তো অনেক খুশি!

আমরা বাড়ি ফিরলাম দুপুরের পর। সুজাতা ভাবী খুশি মনে সবাইকে জানাতে গিয়ে দেখলেন, রায়হান ভাই থমথমে মুখে ড্রয়িং রুমে বসে আছেন। ওনার মা আর অরুণীর বাবাও সেখানে উপস্থিত। আমরা সেখানে উপস্থিত হতেই রায়হান ভাই যা বললেন, তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমি ভাবতেও পারিনি ওনার নেক্রোফিলিয়া আছে! এতো জঘন্য একটা মানুষের সাথে এতোগুলো বছর সংসার করলাম, ভালোবাসলাম কীভাবে? এই দিন দেখার আগে আমার মরণ হলো না কেন?

বাড়ির কাউকে এখনও আমার প্রেগ্ন্যাসির খবর দিতে পারিনি। দেওয়ার মতো পরিবেশও নেই। আরমানকে তো আমার শাশুড়ী মা নিজের ছেলে মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। অরুণীও ওর বাবার সাথে চলে গেল। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, ওকে আটকাতে। কিন্তু মেয়েটা চলেই গেল! ওকেও কি ওর বাবা নিজের মতো অমানুষ বানিয়ে ফেলবেন? আমার শুধু একটাই প্রার্থনা! অরুণীর মধ্যে একটু হলেও যেন মনুষ্যত্ব অবশিষ্ট থাকে। তাছাড়াও কাল ওদের সাথে দেখা করতে যাবো। শেষ বারের জন্য ওনাকে বলবো, অন্তত আমার অনাগত সন্তানের জন্য হলেও যেন নিজেকে শুধরে নেন। জানি না, উনি আমার কথা মানবেব কিনা! কিন্তু শেষ চেষ্টা তো করতেই পারি! উনি যদি না মানেন, তাহলে আমার তিন সন্তানকে আমি নিজেই মানুষ করবো। আল্লাহ আমার সহায় থাকলে আমি ব্যর্থ হবো না ইনশাআল্লাহ…. ”

ডায়েরিটা এখানেই শেষ। পেছনের পেইজ গুলো ফাঁকা। তারিখটা দেখে সৌহার্দ্য বুঝলো, এটা মালিহা নিজের মৃত্যুর আগের দিন লিখেছিল। তার মানে সেদিন দেখা করতে গিয়ে তিনি আর জীবিত ফিরে আসতে পারেনি। সৌহার্দ্য ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করলো।

সবশেষে পেনড্রাইভটা নিয়ে সৌহার্দ্য নিজের ল্যাপটপে ইনসার্ট করলো। ইউএসবি স্টোরেজে গিয়ে দেখলো, শুধু একটা ফোল্ডার আছে। কিন্তু সেটাতে এক্সেস করা যাচ্ছে না পাসওয়ার্ড ছাড়া। সৌহার্দ্য কী করবে কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। অরুণী হয়তো ফোল্ডারটা ডিলিট করতে চেয়েও পারেনি। কারণ ডিলিট করতে হলেও পাসওয়ার্ড প্রয়োজন। কিন্তু পাসওয়ার্ডটা কী-ই বা হতে পারে!

৪৪.
প্রহর দেশে ফিরে এসেছে দুই দিনের মাথায়ই। এয়ারপোর্ট থেকে ডিরেক্ট সৌহার্দ্যের সাথে দেখা করতে চলে গেল সে। সৌহার্দ্য নিজের চেম্বারে অন্যমনষ্ক হয়ে বসে আছে। মাথায় এতো এতো জটলা ঘুরাঘুরি করছে যে, সে বুঝে উঠতে পারছে না কীভাবে এর সমাধান করবে! এতো দিনে মনের মধ্যে জমে থাকা সব প্রশ্নের উত্তর তো সে পেয়েই গেছে! কিন্তু সেই পেনড্রাইভে কী আছে? পাসওয়ার্ড-ই বা কী হতে পারে? সৌহার্দ্য চিন্তা করেও কিছু বের করতে পারলো না।

“কেন করছিস এসব? কী চলছে তোর মাথায়? আমাকে বলবি?”

হঠাৎ প্রহরের গলা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো সৌহার্দ্য। কিন্তু তেমন কোনো ভাবাবেগ না দেখিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো,

“অনেক কিছু। কিন্তু কীভাবে কী করবো সেটা বুঝতে পারছি না!”

প্রহর উদ্বিগ্ন গলায় বললো,

“কিন্তু কী করতে চাইছিস তুই? সেটা তো বল!”

সৌহার্দ্য সোজা হয়ে বসলো। নিজের পকেট থেকে পেনড্রাইভটা বের করে প্রহরকে দিয়ে বললো,

“এতে একটা ফাইল আছে। কিন্তু এটার পাসওয়ার্ড আমার জানা নেই। আমি জানতে চাই, এতে থাকা ফাইলটায় কী এমন আছে? তুই এটা ওপেন করে দেওয়ার ব্যবস্থা কর এন্ড ট্রাই টু কিপ ইট কনফিডেন্সিয়াল! বিশ্বস্ত কাউকে দিয়ে কাজটা করাস।”

প্রহর পেনড্রাইভটার দিকে তাকিয়ে সৌহার্দ্যকে আশ্বস্ত করলো,

“হয়ে যাবে। ডোন্ট ওয়ারি! কিন্তু একটু সময় লাগবে হয়তো।”

সৌহার্দ্য চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,

“সমস্যা নেই। কিন্তু ড. আরমানের ইলেকশনের আগেই এটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে।”

৪৫.
মোহনা আর অর্ণব বেশ খুশি মনে মিস্টার আফনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু মিস্টার আফনাদ বড্ড চিন্তিত ভঙ্গিতে পায়চারী করছেন। অর্ণব ওনাকে আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করে বললো,

“আঙ্কেল, ট্রাই টু বি নরমাল! এতো চিন্তার কী আছে? ভিসা রেডি হয়ে যাবে। তরীর ডেলিভারির তো আরো দুই মাস বাকি আছে! এর মধ্যে সব ডকুমেন্টেশন কমপ্লিট হয়ে যাবে। তরীর ডেলিভারির আগেই আমরা অস্ট্রেলিয়া চলে যাবো।”

মিস্টার আফনাদ হতাশ কন্ঠে বললেন,

“চিন্তা হচ্ছে, অর্ণব! তুমি বুঝবে না। আমি এখানে আর একটা মুহুর্তও থাকতে চাচ্ছি না। তরীর অবস্থা দেখে ভয় হয় আমার। তাড়াতাড়ি এই দেশ ছেড়ে তরীকে একটা নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে চাই আমি। অরুণী আর ওর বাবার ওপর কোনো ভরসা নেই আমার! আমি তো স্বচক্ষে দেখেছি ড. আরমান কীভাবে নিজের মেয়েকে…… ঐ রাতের কথা ভাবলে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায় আমার!”

মোহনা ক্রোধান্বিত কন্ঠে বললো,

“শুধু ওরা না, আমি তো তরীকে সৌহার্দ্যের নাগাল থেকেও দূরে রাখতে চাই! ওর জন্য আমার মেয়েটার জীবন থেকে সব সুখ হারিয়ে গেছে। তরীর প্রত্যেকটা চোখের পানির জন্য সৌহার্দ্য দায়ী। আমি আর কখনো আমার মেয়ের ওপর সৌহার্দ্যের ছায়া পড়তে দেবো না।”

অর্ণব ম্লান হেসে বললো,

“পাগলামি করো না, ফুপি। তরী আর সৌহার্দ্যকে কীভাবে আলাদা করবো আমরা? তবে তরীর সেইফটির জন্য আপাতত আমাদের দেশ ছাড়তে হবে। তোমরা চিন্তা করো না৷ যদি ভিসা প্রসেসিং-এ লেইটও হয়, তবে আমরা প্রাইভেট ফ্লাইট বুক করে ফেলবো। ডেলিভারির অন্তত একমাস আগেই আমরা অস্ট্রেলিয়া চলে যাবো।”

অর্ণবের কথায় মিস্টার আফনাদ আর মোহনা দুজনেই অনেকটা আশ্বস্ত হলেন। তাদের চাওয়া এখন একটাই! সবকিছু যেন ভালোয় ভালোয় ঠিক হয়ে যায়।

এইদিকে,
তরী জানালার কিনারায় বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের কোণে বেয়ে গড়ানো মোটা অশ্রু রেখা শুকিয়েও গেছে এতোক্ষণে। আর মাস খানেক পরেই সে এখান থেকে চলে যাবে। সৌহার্দ্য কি ওকে আটকাবে না? হয়তো সৌহার্দ্য ওকে ছাড়া থাকবে শিখে গেছে। নয়তো এতোদিনে একটা বারও যোগাযোগের চেষ্টা করেনি কেন? মানুষ কিভাবে এতো দ্রুত মানুষকে ভুলে যায়? কই, তরী তো পারবে না কোনো দিন! নাক টেনে ফোনটা হাতে নিয়ে মধুকে একটা কল দিলো তরী। এই মেয়েটা রোজ ওর সাথে কথা বলবেই! আজ না-হয় তরী নিজেই ওকে কল দিক! একবার রিং হতেই মধু ফোন রিসিভ করলো,

“কেমন আছিস, ইয়ার? তোকে এতো এতো মিস করছিলাম!”

তরী চোখের কোণে জল মুছে মলিন হাসলো। বললো,

“আমিও। তুই এখন বাসায় নাকি ভার্সিটিতে?”

মধু মুখ বাকিয়ে বললো,

“বাসায়ই। ক্লাস করতে ইচ্ছে করে না। তবুও মাঝে মাঝে যাই।”

“সৌহার্দ্য কেমন আছে?”

মধু বিরক্ত হয়ে বললো,

“কথা বলি না আমি ওনার সাথে। শুধু মা ছাড়া এই বাড়ির কেউ-ই ওনার সাথে কথা বলে না। আর ওনার এতে কিছু যায়-আসে বলে মনেও হয় না। নিজের লাইফ নিয়ে ভালোই আছে উনি।”

তরী হতাশার নিঃশ্বাস ফেললো। মধুর অনবরত বকবক শুনে হু-হা উত্তর দিতে লাগলো শুধু।

“ফোল্ডারটা ওপেন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি আমি। কিন্তু কেউ-ই পাসওয়ার্ড ছাড়া ওপেন করতে পারছে না। তবে এটুকু জানতে পেরেছি, ওখানে একটা এমপিফোর মানে ভিডিও ফাইল আছে।”

প্রহরের কথা শুনে সৌহার্দ্য বললো,

“কিন্তু আমার ঐ ফাইলটা ওপেন চাই, এট এনি কস্ট!”

প্রহর হতাশ গলায় বললো,

“আচ্ছা, আ’ম ট্রায়িং। কিন্তু তুই আমায় এটা বল যে, তুই এটা পেয়েছিস কোথায়?”

সৌহার্দ্য ওকে সবটা খুলে বললো অরুণীর ব্যাপারে। প্রহর সবটা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বললো,

“ওহ মাই গড! এগুলো তুই এতো দিনে আমাকে বলছিস! ঐ ডায়েরিটা আমাকে দে। ওখানে নিশ্চয়ই কোনো ক্লু থাকবে।”

সৌহার্দ্য আলমারি থেকে ডায়েরিটা বের করে প্রহরের হাতে দিলো। প্রহর ডায়েরিটা ঘেঁটে কিছু না পেলেও ডায়েরির প্রথম পৃষ্ঠায় লাগানো ছবিটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। বুঝতে পারলো ছবিটার চারপাশে গ্লু লাগিয়ে ওটা ডায়েরির পৃষ্ঠার সাথে এঁটে দেওয়া হয়েছে। মাঝামাঝি কোনো গ্লু লাগানো হয়নি। প্রহর অতি সাবধানে ছবিটা পৃষ্ঠা থেকে ছাড়িয়ে ফেললো। সাথে সাথে ছবির উল্টোদিকে ঠিক মাঝামাঝি একটা ষোলো ডিজিটের নাম্বার দেখতে পেল। প্রহর আর সৌহার্দ্য দুজনই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো নাম্বারটার দিকে। তারমানে এটাই পাসওয়ার্ড! আজাদ চাচা এতো চতুর ছিলেন!
#প্রণয়াসক্ত_পূর্ণিমা
#Writer_Mahfuza_Akter
পর্ব-৪৬

সৌহার্দ্য ড. আরমান আহমেদের মুখোমুখি বসে আছে। আজ বাধ্য হয়ে এই ঘৃণিত মানুষটার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অসহ্যকর একটা অনুভূতি! মাথা নিচু করে হাতে হাত ঘষছে আর আশেপাশে তাকিয়ে হাঁস-ফাঁস করছে সৌহার্দ্য। কেন যেন লোকটার মুখের দিকে তাকাতেই মন চাইছে না ওর!

সৌহার্দ্যকে এভাবে থমথমে মুখ করে বসে থাকতে দেখে কুটিল হাসলেন ড. আরমান। আধপাকা গোঁফের প্রান্তভাগে আঙুল বুলাতে বুলাতে বললেন,

“অনেক দিন যাবৎ তোমার সাথে দেখা করা ও কথা বলার ইচ্ছা মনে পুষে রেখেছি। কিন্তু তুমি তো মনে হয় বেশ ব্যস্ত মানুষ! বেশ বড় মাপের ডাক্তার হয়ে গেছো বলে কথা। আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম তোমার সাথে দেখা করার জন্য একদিন এপয়েন্টমেন্ট নিবো।”

সৌহার্দ্য ভ্রু কুঁচকে তাকালো সামনে বসা মানুষটার দিকে। লোকটা কি অদ্ভুত! এভাবে মুখোমুখি বসে খোঁচা দিয়ে কথা বলে কেউ? সৌহার্দ্য বিব্রতবোধ করলেও সেটা প্রকাশ করলো না। কপট হেসে বললো,

“আপনার মতো গণ্যমান্য ব্যক্তি তো হয়ে উঠতে পারিনি! কিন্তু আপনি নিজেও একজন ডক্টর। আই হোপ আপনি বুঝবেন ডক্টরদের লাইফস্টাইল ঠিক কেমন থাকে। হয়তো আপনার প্রফেশনাল লাইফে ডক্টর হিসেবে আপনি অফুরন্ত সময় উপভোগ করতে পেরেছিলেন! কিন্তু আমি আমার প্রফেশনে একটু মাত্রাতিরিক্ত ডেডিকেটেড।”

ড. আরমান চোয়াল শক্ত করে তাকালেন। সৌহার্দ্য ওনার কথার বিপরীতে এমন ভাবে অপমান করবে, সেটা উনি কল্পনাও করেননি। তাই সরাসরিই প্রশ্ন বললেন,

“তোমার মনে হয় আমি ডাক্তার হিসেবে অফুরন্ত সময় উপভোগ করে সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছি? পরিশ্রম ছাড়া এমনটা কখনো সম্ভব?”

সৌহার্দ্য মিটমিটিয়ে হাসলো খানিকটা। সেটা আড়াল করার জন্য আঙুল দিয়ে নাক ঘষে পকেট থেকে ফোনটা বের করলো। অর্ধেক মনযোগ ফোনে রেখে বললো,

“সেটা তো আপনিই ভালো বলতে পারবেন! যাইহোক, এসব নিয়ে কথা বলতে আসিনি আমি।”

ড. আরমান সোজা হয়ে বসলেন। অরুণী এসে দুজনের সামনে কফি রেখে গেল। কিন্তু পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে রইলো ওদের কথা শোনার জন্য। ড. আরমান কফিতে চুমুক দিতেই বললেন,

“তুমি কি সত্যি সত্যিই অরিত্রীকে ডিভোর্স দিচ্ছো? অরুণী আমায় বললো, তুমি নাকি…..”

“আপাতত কিছুই সম্ভব না। তবে তরীর আর আমার মাঝের দূরত্ব কখনো মিটবে না আর! আপনি আমাকে এটা বলুন যে, আপনি নিজে কী চান? ওরা দুজনেই তো আপনার মেয়ে! অরিত্রীকে তো আপনি নিজের মেয়ে নাবলে অস্বীকৃতি জানাতে পারবেন না!”

ড. আরমান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন,

“হাহ্! মেয়ে? ওকে আমি নিজের মেয়ে মানলে তো! আর সেও আমাকে বাবা বলে মানে না। ও তো আফনাদ শাহরিয়ারের মেয়ে!”

“ওকে মানবেন কেন আপনি? ও তো আপনার কোনো কাজে আসেনি! ওকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারেননি, বরং আপনার বিরোধী ছিল সবসময়। অরুণীকে আপনি নিজে মতো ব্যনহার করেছেন, নিজের স্বার্থসিদ্ধি করেছেন। অরুণী এতো বোকা না। আমার তো মনে হয়, আপনি ওকে নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য সাইকো বানিয়ে ফেলেছেন। যা মন চেয়েছে, ওকে দিয়ে তাই করিয়েছেন!”

ড. আরমান কেমন যেন গা-ছাড়া ভাব করলেন যেন এতে তার কিছু যায়-আসেই না। মুখে অদ্ভুত হাসি রেখে বললেন,

“হ্যাঁ, করিয়েছি। আমার মনে তোমাদের মতো এসব ঠুনকো মায়া-মমতা-ভালোবাসা নেই। আমি সবসময় সবকিছু নিজের জন্য করেছি। বলতে পারো, আমি স্বার্থপর, অথবা এটা আমার নিজের প্রতি ভালোবাসা।”

অরুণী নিজের বাবার মুখে এমন কথা শুনে নির্বাক, স্তব্ধ, বিমূঢ় হয়ে গেল। তার বাবা তাকে কখনো ভালোই বাসেনি? সে জানে তার বাবা স্বার্থপর। তাই বলে এতোটা!! ওড়না খামচে ধরে অরুণী নিজেকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলো।

সৌহার্দ্য তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“সত্যিই মায়া-মমতা নেই? আরে পশুপাখির মনেও তো মায়া নামক অনুভূতিটা থাকে! এতোটা নিম্ন মানসিকতা নিয়ে কীভাবে নিজেকে মানুষ বলে গন্য করেন আপনি?”

“হা! হা!! তাহলে কী বলতে চাইছো? আমি মানুষ না?”

“আপনাকে জাজ করার কোনো ইচ্ছে বা রুচি কোনোটাই আমার নেই। কোনো মানুষ কি তার নিজের স্ত্রীকে নিজের হাতে মে*রে ফেলতে পারে? আপনিই বলুন?”

আরমান আহমেদের মুখের রঙ বদলে গেল মুহুর্তেই। তিনি কাঠিন্য মিশ্রিত কন্ঠে বললেন,

“মানে কী বলতে চাইছো তুমি?”

সৌহার্দ্য এবার হালকা ঝুঁকে হাঁটুতে কনুই ভর দিয়ে বসলো। দুই হাতে আঙুলগুলো একত্রিত করলেও হাত থেকে ফোনটা সরালো না। কপট হেসে বললো,

“বুঝতেই তো পারছেন যে, সত্যটা আমি জানি! আমার থেকে লুকানোর বৃথা চেষ্টা করবেন বলে মনে হয় না। আফটার অল, আপনার ব্রেইন অস্বাভাবিক শার্প।”

আরমান আহমেদ বিরক্ত হয়ে বললেন,

“কোনো জিনিসের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে সেটা ফেলে দিতে হয়। আর সেই জিনিসটা যদি পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সেটাকে পথ থেকে পুরোপুরি সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতে হয়৷ আমিও সেটাই করেছি!”

সৌহার্দ্য হতভম্ব হয়ে বললো,

“মানে কী বললেন? কাকীমনিকে আপনার পথের কাঁটা মনে হয়েছে? সিরিয়াসলি!! আপনার দুই সন্তানের মা উনি। তাছাড়া…..”

“এজন্যই তো বারবার আমার সামনে আসতো! সন্তানের দোহাই দিতো। ওর জন্য কোনোদিক দিয়ে আগাতে পারছিলাম না আমি। আজকে আমার নাম এভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারতাম না আমি ও বেঁচে থাকলে।”

“তাই বলে ওনাকে মে*রেই ফেলবেন? তাও আবার এভাবে পুড়িয়ে মা*রবেন? কীভাবে পারলেন আপনি এমনটা করতে? আর আমাদের চাঁদ? ওকেও পৃথিবীতে থেকে সরিয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন? ও তো আপনার নিজের অংশ-ই ছিল!”

আরমান আহমেদ পুনরায় মুখ দিয়ে বিরক্ত সূচক শব্দ করে বললেন,

“আমার ভুলটা এখানেই ছিল। সেদিন ওর প্রতি একটু মায়া জেগে গিয়েছিল বলে ওকে মাটিচাপা দিয়েছিলাম। সব মায়া ত্যাগ করে যদি ওকেও মালিহার সাথে সেদিন পুড়িয়ে ফেলতাম, তাহলে আজ আমায় এতো ভুগতে হয় না।”

সৌহার্দ্য অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলো। কিছু বলার শক্তি ওর মধ্যে অবশিষ্ট-ই নেই। সৌহার্দ্য হতবিহ্বল হয়ে আছে এমন সময় হঠাৎ অরুণী তার বাবার সামনে এসে দাঁড়ালো। চোখ ভর্তি টলমলে অশ্রু নিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো সে,

“তুমি… তুমি আমার মাকে মেরেছো, বাবা?”

সৌহার্দ্য আর আরমান আহমেদ দুজনেই চমকে তাকালো অরুণীর দিকে। বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই আরমান আহমেদের কলার চেপে ধরলো অরুণী। চিৎকার করে বললো,

“মানে তুমি নিজের হাতে পুড়িয়ে দিয়েছো মাকে? আমার মাকে? আর অরিত্রীকে মাটিচাপা দিয়েছো মানে? তুমি এসব কী করেছো, বাবা?”

আকস্মিক ঘটনায় সৌহার্দ্য হতভম্ব হয়ে গেল। অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,

“তুমি এসব কিছু জানতে না, অরুণী?”

আরমান আহমেদ অরুণীর হাত ধরতে গেলে অরুণী তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। তার দিকে আঙুল তুলে বললো,

“তোমাকে পশু বললে পশুকেও অপমান করা হবে। তুমি একটা নিকৃষ্ট। আমার মাকে মেরে ফেলেছো তুমি! অরিত্রীর প্রতি আমার মনে হিংসে ঢেলেছো, মায়ের বিরুদ্ধে রেখেছো সবসময় আমাকে শুধু মাত্র আমাকে ব্যবহার করার জন্য। ছেলের বাবা হতে পারোনি বলে আমাকে ব্যবহার করে নিজের ডানহাত বানিয়েছো। নিজের স্বার্থে এতোটাই অন্ধ তুমি!”

ড. আরমান কী বলবেন বুঝে উঠতে পারলেন না। মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলেন নিজের ঘরের দিকে। সৌহার্দ্যও বেরিয়ে গেল ওদের বাসা থেকে।

অরুণী কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়লো ফ্লোরে। তার সারাটা জীবনই এভাবে বোকার মতো বাবার স্বার্থে বলিদান করলো সে। বিনিময়ে পেল ধোঁকা! নিজের পাপের বোঝা আজ অনেক ভারী পড়ে গেছে অরুণীর ঘাড়ে। এর প্রায়শ্চিত্ত হয়তো অসম্ভব! নিজের চুল খামচে ধরে শব্দ করে কাঁদতে কাঁদতে অরুণী উপরের দিকে তাকালো। বললো,

“আজ তোমার কথা অনেক মনে পড়ছে, মা। তোমার বুকে হামলে পড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। তোমায় তো আমি অনেক অবহেলা করেছি, কষ্ট দিয়েছি, মা। আজকে সত্যিটা জানার মাধ্যমে এতো বড় শাস্তি দিলে আমায়? সেদিন তোমার সাথে সাথে আমিও মরে গেলাম না কেন? মা, ফিরে এসো! শুধু একটা মুহুর্তের জন্য তোমায় ঝাপটে ধরার সুযোগ দাও আমায়!”

অরুণীর চিৎকারগুলো চার দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো। কিন্তু কোনো উত্তর এলো না।

সৌহার্দ্য গাড়িতে উঠে বসে প্রহরকে কল দিয়ে বললো,

“অল ডান! ভিডিও পেয়েছিস?”

প্রহর ব্যস্ত গলায় বললো,

“ইয়েস! তুই আয় তাড়াতাড়ি। তারপর আমি মিডিয়া চ্যানেলগুলোতে ফাইল দুটো পাঠাচ্ছি।”

“ওকে!”

সৌহার্দ্য প্রহরের অফিসে পৌঁছাতেই প্রহর ওকে দেখে বললো,

“আরেকবার ভেবে নে, সৌহার্দ্য। তরীর অপারেশনের পর না-হয় এসব করা যাবে! আর মাসখানেকের মতো ওয়েট করি আমরা।”

সৌহার্দ্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“কিছু হবে না। তরীর কোনো ক্ষতি করতে হলে এতোদিনে করেই দিতেন উনি। ইলেকশনের আর এক সপ্তাহ বাকি। সো, যা করার এখনই করতে হবে।”

প্রহর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে ল্যাপটপে মনযোগ দিলো।

সন্ধ্যার দিকে তরী হসপিটালে এলো অর্ণবের সাথে। আগামীকাল ওর ফ্লাইট। তাই আজকে ফাইনাল চেকাপের জন্য এসেছে তরী। ড. আরমানের নাগালের বাইরের একটা হসপিটালে চেকাপ করায় সে। আঁধার ঘনিয়ে আসার পূর্বে তরী বাসা থেকে বের হওয়ার সাহস পায় না। নিজের জীবনের পরোয়া না থাকলেও নিজের সন্তানের মায়ায় সে প্রচন্ডভাবে আবদ্ধ হয়ে গেছে। হঠাৎ তরীর ফোন বেজে ওঠায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো সে। দেখলো, মিস্টার আফনাদ কল দিয়েছেন। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ওনার ব্যস্ত কন্ঠ ভেসে এলো,

“তরী! যেখানেই আছিস, বাড়ি ফিরে আয়। সব টিভি চ্যানেলে ড. আরমানের ভিডিও টেলিকাস্ট হচ্ছে। তোর মায়ের গায়ে আগুন দেওয়ার ভিডিও আর ওনার নিজের স্বীকারোক্তির ভিডিও সবাই দেখছে। তুই বাইরে থাকিস না আর। ও তোকে মেরে ফেলবে! তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়।”

তরীর সারা দেহ অবশ হয়ে গেল যেন! ওপাশ থেকে মোহনার কান্নাকাটির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তরীর হাত থেকে ফোন পিছলে পড়ে গেল। অর্ণব অবাক হয়ে গাড়ি থামাতেই তরী বিরবির করে বললো,

“গাড়ি ঘোরাও, অর্ণব ভাই! আমার বাচ্চা দুটোকে বাঁচাও! ”

-চলবে…
-চলবে…..

[আজকে অনেক বড় একটা পর্ব দিয়েছি, প্রায় দুই পর্বের সমান। যেহেতু আমার পরীক্ষা শেষ, পরবর্তী পর্ব কালকেই দিবো ইনশাআল্লাহ।
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here