প্রণয়স্পর্শী পর্ব ১০+১১

#প্রনয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#দশম_পর্ব

সময় প্রবহমান সে তার নিজ গতীতে চলে, তার কাউকে নিয়ে পরোয়া নেই কে পিছনে পরে থাকলো কে সামনে এগোলো তাতে তার ব্রুক্ষেপ নেই৷ মানুষ কিভাবে নিজের সময় কাটাবে বা ব্যয় করবে তা মানুষের ভাবনা৷
আজ এক সপ্তাহ কেটে গেছে, মেঘলার মনে হচ্ছে চোখের পলকেই সময়টা কেটে গেছে আজ কাল সময় যেমন তারাতারি চলে যায়৷ কিন্তু ধারনা ভুল সময় তার নিয়মের চলছে যেমন গতীতে চলতো তেমনেই চলছে মেঘলার-ই কাজের চাপে সে-দিকে খেয়াল থাকে কোথায়?
শোভন এর সাথে ঝগড়া উদ্ভব উদ্ভব কথা বলে বকা খাওয়া আর রোগীদের সেবা করা এই নিয়েই তার সময় পার হয়ে যায়৷ আর সত্যি কথা হচ্ছে ভালোলাগার মানুষটা সাথে থাকলে সময় কিভাবে পেরিয়ে যায় সেদিকে খেয়ালই থাকে না৷
এই এক সপ্তাহে এমন অনেক কথা বলেছে যা শোভনের বোধগম্যের বাইরে ছিলো৷ দিনে একশবার হলেও অদ্ভুত মোহময় চাওনিতে তাকিয়ে বলেছে ” ডাক্তার সাহেব আপনি খুব সুন্দর৷ ”
শোভন ব্যাপার গুলোতে বিরক্ত হলেও মাঝে মাঝে কিছু বলে না বুঝে গেছে মেয়েটা এমনি৷ আবার মাঝে মাঝে খুব করে বকে দেয়৷
আজ সকাল সকালই হসপিটালে এসেছে মেঘলা, শোভন প্রতিদিন এগারোটা কি বারোটার সময় এলেও আজ আসতে সন্ধ্যা হবে৷ তখনি এসে চেম্বারে এপোয়েন্টমেন্ট নেওয়া স্পেশাল রোগীদের দেখবে৷
মেডিক্যাল এর স্টুডেন্টদের আজ অরিয়েন্টেশন রয়েছে সেখানেই স্পেশাল গেস্ট হিসেবে গিয়েছে, আজ হসপিটালে বোর হচ্ছে মেঘলা৷
আজ কাজের চাপ ও অনেক ছিল লাঞ্চ করার সময় পায়নি বিকেল চার-টা বাজতেই একটা রোগীকে মেডিসিন দিয়ে শোভনের চেম্বারে এলো৷ স্টাফ মাত্রই পরিষ্কার করে বের হলো৷ শোভন না থাকলে এখানে আসে না আজ আসলো সকাল থেকে একবারও শোভনকে দেখেনি ভালো লাগছে না ওর৷ লোকটাকে যেন চোখে হারাচ্ছে মেঘলা, অথচ সেই লোকটা একটুও পছন্দ করে না ওকে৷
শোভনের আশে পাশে থাকলে ভালো লাগে মেঘলার, আচ্ছা এমন কেন হয়?
আজ কাল শোভনকে না দেখলে ওর কোনো কাজেই মন বসে না কেন? এমন অনুভূতি হয় কেন? মূল্য কি এসবের? কেন এতো দূর্বল হয়ে পরছে শোভনের প্রতি?
শোভন তো ওকে পছন্দই করে না তাও ওর ওই শোভনের প্রতি এমন লাগে কেন? সব কি ওই পবিত্র সম্পর্ক-টার টান?
এতো শক্তি ওই “বিয়ে” নামক সম্পর্ক টার? অথচ ” বিয়ে ” নামক সম্পর্কটা হয়তো শোভন ভুলেই গেছে৷ আর ভুলবেই না বা কেন? এক্সিডেন্টলি জিনিস কেও মনে রাখে? শোভন মানুক আর না মানুক শোভন তো ওর স্বামী এটা তো জানে?
এটার জন্যই হয়তো এমন টান? এমন অনূভুতি? আচ্ছা নাম কি এ অনুভূতি-র? ভালোবাসা? আবেগ? নাকি মোহ? সত্যি কি আবেগ বা মোহ? আর ভালোবাসা-ই যদি হয় তাহলেই বা কি? হুহহ কোনো মূল্য নেই৷ না আছে ওর না আছে ওর অনুভূতি-র তাই আবেগ ভেবেই উড়িয়ে দিলো মেঘলা৷ বুক চিড়ে বেড়িয়ে এলো গভীর দীর্ঘশ্বাস যে দীর্ঘশ্বাস এ লুকিয়ে আছে ব্যাথিত কিছু কথা আর তাচ্ছিল্য নাম না জানা অনুভূতি যার কোনোই মূল্য নেই৷ না আছে এই সমাজের কাছে না আছে শোভনের কাছে, শোভনের যোগ্য না ও৷
ব্যাথিত জীবনটা সব সময় ব্যাথিত-ই রয়ে যাবে কেউ বুঝবেই না কখনো৷ কে বলবে ওর মাঝে হাজার ব্যথা লুকিয়ে থাকে?

যার ভিতর-টা ক্ষত-বিক্ষত থাকে তার উপরটা সবসময় চকমকেই হয়৷৷
হাসির আড়ালে আবডালে লুকায়িত্ব কষ্ট গুলো চকমকে হাসির মাঝে লুকায়িত্বই রয়ে যায় সর্বকাল৷৷

আজ সারা-দিন খুবই ব্যাস্ত ছিলো মেঘলা, দুপুরের পর দু-দন্ড বসতে পারেনি৷ শোভন আসলো ছয়-টায় ইমার্জেন্সি হার্টের রোগী আছে তাই তারাতারি করে এসেছে মেঘলা তখন শোভনের ফোনে বলা কথা অনুযায়ী রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা করে ক্যানেল লাগাচ্ছে৷
তারাতারি শোভন কেবিনে ঢুকলো সবে৷ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কিছু কারনে চটে আছে৷ মেঘলা সেদিকে তাকায় আর বে-খেয়ালে রোগীর হাত থেকে অনেকটা রক্ত বেরিয়ে যায়৷ শোভন তা দেখে চটে যায়৷
তারাহুরা করে রোগীকে চেক করতে করতে বলে,
— ” স্টুপিড কাজ করার সময় খেয়াল থাকে কোথায়? আমার মুখের দিকে তাকাতে বলেছিলাম? কতটা ব্লাড বেরিয়ে গেলো৷ গেট আউট তোমার কিছু করতে হবে না৷ ”
বেশ চেচিয়ে কথা গুলো বলায় সবাই তাকিয়ে আছে শোভনের দিকে৷ আর এটা নতুন নয় ও সব সময় এমন, ওর রাগ সম্পর্কে সবার ধারনা আছে৷
ও রাগে গজগজ করতে করতে মেঘলার দিকে তাকায় তারপর অন্য নার্সকে বলে,
— ” কেয়ারফুলি ব্লাডটা ক্লিন করে ভালো করে ক্যানেল লাগিয়ে বিপিটা চেক করো৷ ”
বলে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে,
— ” দাঁড়িয়ে আছো কেন? গো নাও৷ ”
মেঘলা সত্যি দেখেনি বেখেয়ালিতে এমন হয়েছে৷
শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে,
— ” সরি ডাক্তার সাহেব আমি,,,৷৷ ”
মেঘলা কে থামিয়ে শোভন আবার রেগে বলে,
— ” হোয়াট? আই সেইড গেট আউট৷ ”
কিছু বললো না মেঘলা শোভন রেগে আছে বুঝলো, দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে আসলো৷ এতো রাগ দেখানোর মানে কি? কেউ কি দেখে এমন করে?
সব সময় অন্যকিছুর রাগ ওর ওপর দেখায় কেন এমন করে লোকটা? কেন ওর সাথে এমন করে? আচ্ছা ওর সাথে কি ঠিক করে কথা বলা যায় না?
সারাদিন যার জন্য ছটফট করলো সে উপহার স্বরুপ যা দিলো মন ভরে গেছে মেঘলার, আপাদত কাজ করতে ইচ্ছা করছে না তাও করতে তো হবেই হসপিটালে-ই রইলো মেঘলা৷ শোভন এমন করে প্রতিবার অন্য কিছুর রাগ ওর উপর দেখায়৷
প্রায় ঘন্টা তিন-এক পর শোভন ক্লান্ত শরীরে নিজের চেম্বারে এসে বসলো তখন মাথা গরম ছিলো এখন একটু রিলাক্স লাগছে, এখন মনে হচ্ছে মেয়েটার সাথে হয়তো বেশি করে ফেললো৷ হসপিটালটা ওদের তাই সব কিছুতেই দায়িত্বটা একটু বেশি৷ আশে পাশে চোখ ঘুরিয়ে তাকালো শোভন মেঘলাকে দেখলো না, আর সময় তো ধমক খেয়ে ও আশে পাশে ঘুর ঘুর করে আজ কোথায় গেল তাই ভাবছে৷
আশে পাশে না দেখে ঘড়ি পরখ করলো রাত দশটা বাজতে পনেরো মিনিট বাকি আছে৷ মেঘলাকে না পেয়ে ভাবলো আজ হয়তো না বলেই চলে গেছে ধমক খেয়ে পরক্ষনে বাইরে খেয়াল করলো না যায়নি আছে এদিকেই আসছে৷
এপ্রোন খুলে নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে শোভনের চেম্বারে আসলো মেঘলা৷ শোভনের সামনে দাঁড়িয়ে মৃদু কন্ঠে বলে,
— ” আমি যেতে পারি?”

শোভন একবার তাকালো মেঘলার মুখ পানে, নাক আর চোখটা লাল হয়ে আছে মেয়েটা অত্যন্ত ফর্সা হওয়ায় চেহারা খানা লাল হয়ে আছে৷ মেয়েটা কি কেঁদেছে? হয়তো কেঁদেছে৷ ইসস বেশি করে ফেললো হয়তো? আড়ষ্ট চোখ খানা নামিয়ে নিলো ইসস এমন করে পরখ করছিলো মেয়েটা কে? ঘোর অন্যায় করলো, মেয়েটা দেখলে হয়তো খারাপ ভাবতো? ভাগ্যিস নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো নয়তো ওই কাটা ঠোঁট খানা দিয়ে বলে ফেলতো
” ডাক্তার সাহেব আপনি আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন? ”
হাজার ভাবনার সুতো কাটিয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রেখে
শোভন কাঠ কাঠ গলায় মেঘলাকে বললো,
— ” হুম যেতে পারো আর সরি, তখন মাথা ঠিক ছিলো না আ,,,৷ ”
শোভনকে মাঝ পথে থামিয়ে স্মিত হেসে বলে,
— ” ইতস ওকে ডাক্তার সাহেব অভ্যাস আছে৷ ”
বলে উল্টো পায়ে হাটা দিতেই শোভন বলে,
— ” মেঘলা,,,,৷ ”
থেমে যায় মেঘলা, ভালো লাগলো ডাকটা পিছনে মুরে তাকাতেই শোভন বলে,
— ” একা যেতে হবে না দিয়ে আসি ওয়েট করো আসছি আমি৷৷ ”
কিছুক্ষন থম মেরে চেয়ে রইলো মেঘলা, কি বললো শোভন? ওকে দিয়ে আসবে? এমন অনেক ধমক দিয়েছে এই কয়দিন কিন্তু আজ প্রথম সরি বললো৷ আচ্ছা আজ সূর্য উঠলো কোন দিকে? ধ্যাত রাতে কি সূর্য উঠে নাকি? রাতে চাঁদ উঠে৷ নিশ্চয়ই আজ অমাবস্যায় চাঁদ উঠেছে? নয়তো বদ রাগী ডাক্তারটা নিজে এই কথা বললো?
মেঘলা তর্জনি দিয়ে চশমাটা একটু ঠেলে উচ্ছাসিত কন্ঠে বলে,
— ” অমাবস্যায়ও আজ চাঁদ এর দেখা মিললো ডাক্তার সাহেব, হ্যাঁ আজ উঠেছে মস্ত চাঁদ৷ ”
#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#একাদশ_পর্ব

রাতের আকাশে মেঘের ভেলা, মস্ত এক ভেলা সযত্নে সন্তপর্ণে হেটে হেটে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গিয়ে জমাট হচ্ছে আর সেদিকটা আরো বেশি অন্ধকার করে দিচ্ছে৷ আধার মাখা আকাশ কি মনকাড়া দৃশ্য ৷ অমাবস্যার মতো তীব্র অন্ধকার চারোদিকে এতোক্ষন চাঁদটা আবছা আবছা মেঘের আড়ালে উঁকি বুকি দিলেও এখন আর দেখা যাচ্ছে না৷ লজ্জা পেলো কি চাঁদটা? সব সময় তো জলজল করে নিজের রুপ দেখাতে ব্যাস্ত থাকে হুট হাট আবার লজ্জা পেয়ে মেঘের আড়ালে মুখ ও লুকায়? এবারো কি লজ্জা পেয়ে মুখ লুকোলো মেঘের আড়ালে? নাকি মেঘ পুরোপুরি চাদরের ন্যায় ঢেকে দিয়েছে ওই সুন্দর চাঁদটাকে? মেঘটা-র কি কারো সৌন্দর্য দেখতে ভালো লাগে না নাকি ? ” মেঘে ঢাকা চাঁদ” কি সুন্দর বাক্য কিন্তু বাক্যের ন্যায় দৃশ্যটা একদম সুন্দর নয়, সুন্দর চাঁদটা দৃশ্যমান থাকলেই কি সুন্দর দেখায়৷ একেবারে চোখ ধাধানো সুন্দর দেখায় তখন৷ রাতের আকাশের চাঁদ না থাকলে ভালো লাগে কি? রাতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেই তো ওই সুন্দর চাঁদটা৷
বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আকাশে বিদ্যুৎ এর ন্যায় আকৃতি হচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে আরো বিকট
শব্দে গুড়ুম গুড়ুম করে হাক ছাড়ছে৷ কি বিকট সেই শব্দ৷ হাওয়ার তালে তালে গাছের পাতা হেলে দুলে উঠছে৷
কাউচে বসে প্রকৃতির মনরম দৃশ্য দেখছে মেঘলা৷ তীব্র বাতাস শরীর হিমেল করে তুলছে৷ ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পরছে, প্রেম পূর্ন আবহাওয়া প্রেম বিলাশীদের জন্য যথার্থ সময়৷ প্রেমময় মূহুর্ত৷
ঘুম আজ দেখা দিচ্ছে না চোখে, ঘুম আজ বড্ড অবাধ্য হয়ে উঠেছে৷ এমন অবাধ্যতা-র মানে আছে কোনো? আজ কাল ঘুম কেন ওর কিছু ওর কাছে থাকছে না৷ ধ্যান জ্ঞান সব যেনো অবাধ্য হয়ে গেছে৷
শোভন দিয়ে গেছে বাড়ি অব্দি আহানাও শোভনকে দেখে অবাক হয়েছিলো ও যে মেঘলাকে পৌছে দিতে এসেছিলো তা দেখে আহানা অবাক হয়৷
সারা রাস্তা কিছু না কিছু কথা বলেছিলো মেঘলা অবাক হয়ে সুনেছে সবটা৷ প্রথম ওর সাথে শোভন ভালো করে কথা বলেছে৷ অবুঝ মনটা আরো দূর্বল হয়ে পরলো যে তা কি শোভন বুঝেছে?
অনুভূতি গুলো নাড়া দিয়ে উঠলো যে আবার, কি সুখকর অনূভুতি আহা কি আনন্দ আচ্ছা এতো সুখকর অনূভুতি তো আগে হয় নি তাহলে আজ হলো কেন? শোভন এর জন্য? আজ সে নিজ থেকে কথা বলেছে তাই?
আচ্ছা সত্যি এমন অনূভুতি-র নাম কি? আবেগ হলে কি এতোটা গাঢ় ভালো লাগা কাজ করতো? আবেগ নয় মেঘলা জানে এটা তাহলে কি?
❝ ভালোবাসা ❞ তবে কি সত্যি ভালোবেসে ফেললো শোভনকে?
হাসলো মেঘলা একা বসে হাসলো মিষ্টি হাসি এ হাসিতে মিশে আছে হাজারো ভালোবাসার অনুভুতি হাজারো স্বপ্ন৷ নতুন কিছুর আশা তীব্র আশা আর সব কিছুর মুগ্ধতা৷
মনে যে আজ নতুন করে রঙ লেগেছে হিমেল বাতাসেও প্রেম প্রেম গন্ধ ছরিয়েছে, তাই তো এমন নতুন নতুন অনুভূতি-র সাথে পরিচিত হচ্ছে৷ নতুন নতুন স্বপ্ন মন গহিনে উকি মারছে৷
হঠাৎ কিছু মনে পরতেই গুটি গুটি পায়ে রুমের দিকে গিয়ে আলমারি থেকে একটা ডাইরি বের করলো নীল রঙে-র ডাইরি এতে জুরে আছে হাজার ক্লেশ বাক্য, বন্দি খাচার কষ্টের স্মৃতি আর দু এক ফোটা শুকোনো অমূল্য চোখের পানির ছাপ৷ আজ এই ডাইরিটাতে-ই নিজের নতুন অনূভুতি পূর্ন কথা লিখতে ইচ্ছে করছে মেঘলার তাহলে কোনো এক একাকিত্ব বা সুখের সময় সুখ দুঃখ মিশ্রিত ডাইরিটা পরে নিজের মন জুরাবে৷ কিন্তু সত্যি কি কখনো সুখের সময় আসবে? নাকি দুঃখেই ভরা থাকবে জীবনটা?


সকাল আটটা বাজে সবে, মেঘলা আহানা দু-জনেই বের হলো নিজ নিজ গন্তব্যে-র উদ্দেশ্যে৷ মেঘলাকে হসপিটাল এর সামনে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ঘুড়িয়ে নিজের অফিস এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলো আহানা৷
দু দিন যাবৎ মনটা ভালো নেই এই মন ভালো না থাকার কারন নিজের কাছেই অজানা আহানা-র আজ কাল নিজেকে অচেনা লাগে৷
বেশ কিছু পথ আসতেই জ্যাম থাকায় থেমে যায় গাড়ি এবার পরলো মহাবিপদে এখন আগে যাবে কি করে? আজ তো ইম্পর্টেন্ট কাজ রয়েছে আজই জ্যাম পিছনে দু একটা রিক্সা ছাড়া বড় গাড়ি আসেনি তাই রিক্সা গুলো সরাতে বললো গাড়ি আবার ইউ টার্ন মেরে অন্য পথ দিয়ে ড্রাইভ করতে শুরু করলো৷ কিছুদূর যেতেই আবার গাড়িটা থেমে যায়৷ বিরক্ত হয় আহানা আজকের দিনটাই ভালো না নয়তো এতো বাধা কেন? আজ নির্ঘাত চাকড়িটা যাবে৷ দু-বার স্টার্ট দিলো কিন্তু স্টার্ট হলো না৷ নামলো গাড়ি থেকে নেমে চেক করে দেখে গাড়িটা খারাপ হয়ে গেছে যা ও নিজে ঠিক করতে পারবে না৷
এদিক ওদিক তাকালো কিন্তু কাউকে পেলো না৷ নিজের উপর রাগ হচ্ছে আহানার কি করবে এখন?

— ” এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ”
হঠাৎ চির চেনা পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে পিছনে তাকায় আহানা, রাজ দাঁড়িয়ে আছে অতী ফর্সা চেহারা লাল হয়ে আছে চেহারায় কিছুটা রাগের ছাপ রেগে ছিল কি কোনো কারনে? কিন্তু কার ওপর?
আহানা চোখ ফেরালো অন্য পুরুষকে বুঝি এমন করে দেখতে হয়? অন্যায় ঘোর অন্যায় করে ফেললো৷
ইতস্ত হয়ে বললো,
— ” গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেলো এখানে এসেই, তুই এখানে? ”

রাগ গম্ভীরমুখে বলে,
— ” হুম গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিলো, কিন্তু এখান দিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?”

আহানা কিঞ্চিত বিরক্ত স্বরে বলে,
— ” অফিসে যাচ্ছিলাম কিন্তু এখানে এসে গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেলো৷৷ ”

রাজ বিনিময়ে বলে,
— ” চল ড্রপ করে দিচ্ছি৷ ”

আহানা কিছুতে যাবে না এই ছেলের সাথে আর মুখের উপর নাও করতে পারবে না তাই আমতা আমতা করে বলে,
— ” আমি একাই,,,”
আহানাকে মাঝ কথায় থামিয়ে দেয় রাজ৷
তারপর নিজে শক্ত কন্ঠে বলে,
— ” আমি পার্মিশন নেইনি অর্ডার করেছি চল৷ গাড়িতে উঠ৷ ”

উঠলো গাড়িতে আহানা, ফ্রন্ট সিটেই বসলো রাজ উঠে ড্রাইভিং সিটে গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলে,
— ” এরিয়ে চলছিস কেন আমায়? পালটে গেলি কেন আহান? আগে তো সব ঠিক ছিলো আমি ইউকে যাওয়ার আগে আসতে বললাম, এয়ারপোর্টে আসতে বললাম তোদের আসলি না৷ কেন এমন করছিস? দোষ কি আমার? কিছু করেছি আমি? ”
কিছু বললো না আহানা দীর্শশ্বাস ছাড়লো, দুজনের মাঝেই এখন নিরবতা৷ নিরবতা কাটিয়ে স্মিত কন্ঠে আহানা বলে,
— ” বিয়ে করিস-নি কেন? ”
শক্ত হয়ে উঠলো রাজের চেহারা রাগে কপালের রগ নীলচে হয়ে আসলো রাগের কারন বুঝলো না আহানা তবুও জিগ্যেস করলো,
— ” উত্তর দিলি না যে? ”

মৃদু কন্ঠে রাজ বলে,
— ” পাখি ছন্নহাড়া হয়ে গেছে৷ অনেক দিন মুক্ত থেকেছে তো নতুন পাখনা গজিয়েছে পাখিকে আবার খাচায় বন্দি করবো যে খাচা থেকে বের হওয়াও মুশকিল হয়ে পরবে৷ এবার শুধু হাতের মুঠোয় আনা বাকি তারপর,,,,৷ ”
এইটুকু বলে আহানার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো রাজ৷ আহানা অবাক নয়নে ড্যাবড্যাব করে তাকালো রাজ এর দিকে৷ বোধগম্য হলো না রাজের কথা কিছু কি বললো এই ছেলে? অদ্ভুত রহস্য নিয়ে ঘুরে এই ছেলেটা৷ তো বড়ই অদ্ভুত৷৷

চলবে,
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here