প্রণয়স্পর্শী পর্ব ৮+৯

#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#অষ্টম_পর্ব

আমরা যখন কিছু ভয় পাই তখন তার সে বা সে জিনিসটা দূরে থাকলেও তার কথা মনে পরে ভয় পায়৷ মেঘলার ক্ষেত্রেও তেমন কিছু নিয়ে ভয়ে আছে মেয়েটা সে দিন ট্রেনেও কিছুর জন্য ভয় পেয়েছিলো আর বিরবির করে বলেছি ” আমি যাবো না ” আজও একি কথা বলছে কিন্তু কোথায় না যাওয়ার কথা বলছে?
যেখান থেকে পালিয়ে এসেছিলো সেখানে এমন কে ছিল যাকে এতোটা ভয় পায় মেয়েটা? নিজের ভাবনা দেখে নিজেই বিরক্ত হচ্ছে শোভন৷
কেন এই মেয়েটাকে নিয়ে ও এতো কিছু ভাবছে? কেন এই মেয়েটাকে এতো ইম্পর্টেন্স দিচ্ছে? ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে জ্বর দেখলো মেঘলার শরীরের জ্বর আগের তুলনায় অনেকটা বেশি৷
সময় পেরোচ্ছে আর জ্বর বারছে মেঘলার, হঠাৎ এতো জ্বর হওয়ার কারন খুজে পেলো না শোভন পরক্ষনে চুল ভেজা দেখে বোধ গম্য করলো মেয়েটা অনেকক্ষন সাওয়ারের পানিতে ভিজেছে৷
মেয়েটা সত্যি আপদ৷ সব সময়ই কিছু না কিছু ঝামেলা বাধিয়েই থাকে৷
হাতের কফিটা শেষ করে আহানাকে বলে বেরিয়ে গেলো ওর তো আর এখানে বসে থাকলে চলবে না?
সন্ধ্যা হতেই কিছুটা জ্বর নেমে আসে মেঘলার৷ শরীরে ঘাম ছেরে দেয়, কিন্তু এখনো ঘুমাচ্ছে শোভন যাওয়ার সময় ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে গিয়েছিলো তাই এখনো ঘুমাচ্ছে৷ শান্তির ঘুম৷

রাত দশ-টায় চোখ খুলেই কিছুটা চমকে যায় মেঘলা৷ শোভন ওর দিকে ঝুঁকে আছে শুকনো ঢোক গিললো মেঘলা৷ হঠাৎ-ই মাথায় উদ্ভব চিন্তা ভর করলো, আচ্ছা শোভন কি ওকে গলা টিপে মেরে ফেলতে এমন ঝুকেছে? কেন মারবে? কিছু কি বলেছে ঘুমের ধ্যানে?
চিন্তা মাথায় আসতে দেরি মুখ দিয়ে বের হতে দেরি হলো না মেঘলার৷ কথা বলতে পারছে না তাও টেনে টেনে বললো,
— ” আপনি কি আমায় গলা টিপে মারবেন ডাক্তার সাহেব??”
বলেই ড্যাবড্যাব করে তাকায় শোভনের দিকে৷
শোভন তো হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে৷ বলে কি এই মেয়ে? কাজ ফেলে সকালে চিকিৎসা করে গেলো এখন আবার আসলো দেখতে ঠিক আছে নাকি আর এই মেয়ে বলছে ওকে গলা টিপে মেরে দিবো? শোভনের ইচ্ছে করছে এই মেয়ের মুখে টেপ লাগিয়ে কানের নিচে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতে তারপর যদি শিক্ষা হয়৷
তাও নিজেকে শান্ত রাখলো শোভন পিছন থেকে আহানা সব শুনছিলো, মেঘলার এমন কথা শুনে কিছু-টা ভরকে যায় আহানা৷
না জানি শোভন কি করবে, হয়তো থাপ্পড় দিবে? ব্যাপারটা সামলে নেওয়ার জন্য এগিয়ে গিয়ে মেঘলার বাহু চেপে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
— ” আরে কি বলছিস মেঘু? তোর জ্বর এসেছিলো তাই শোভন চেক করতে এসেছে৷ জানিস সেই দুপুরেও একবার এসেছিলো৷ ”
মেঘলা একবার আহানার দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বড় বড় চোখে শোভনের দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে ধরে৷
ইসস আবারো মুখ ফসকে ফালতু একটা কথা বলে ফেললো৷ এখন না জানি শোভন কি করে, শোভন না জানি ওর মুখের কথাই সত্যি করে গলা চেপে ধরে৷
মুখ থেকে হাত সরিয়ে অসহায় ভাবে আহানার দিকে তাকিয়ে দূর্বল কন্ঠে শোভনকে কিছু বলবে এর আগেই শোভন মেঘলাকে অবাক করে দিয়ে বলে,
— ” কেমন লাগছে এখন? ঠিক লাগছে সব?”
মেঘলা অবাক হয়৷ বিস্ময় চোখে তাকিয়ে উত্তর দেয়,
— ” ভালো লাগছে কিন্তু,,,,৷ ”
মেঘলাকে থামিয়ে শোভন বিছানা থেকে উঠে আহানাকে বলে,
— ” ওকে কিছু খাইয়ে মেডিসন খাইয়ে দিস৷ ”
বলে চলে যাওয়ার জন্য দু-কদম এগোতেও আবার পিছিয়ে যায়৷
পিছে ঘুরে ব্রু কুচকে মেঘলা কে বলে,
— ” তা জ্বরটা বাধালে কি করে? সাওয়ারের পানিতে বসেছিলে নাকি?”
শোভনের কথা শুনেই মেঘলা মাথা নিচু করে ফেলে, কি উত্তর দিবে এখন? কি বলবে? কিছু বললো না৷ মেঘলার মৌনতা দেখে কিছু বললো না শোভন বেড়িয়ে গেলো৷

সময় প্রবহ-মান, চোখের পলকেই যেন পেরিয়ে যায়৷ সে দিনের পর আরো দু-দিন কেটে যায় মেঘলা এখন পুরোপুরি সুস্থ৷ দু’দিন এ এক বার ও শোভন আসেনি, মেঘলার পিপাসু চোখ দু’দিন যাবতই শোভনকে খুজছে কিন্তু শোভন না আসলে কি করার? কাল তো মেঘলা আহানাকে বলেও ফেলেছিলো, ” আপু ডাক্তার সাহেব আসবে না আজ৷ ”
আহানা প্রথমত অবাক হলেও ব্যাপারটা নিয়ে বেশ হেসেছিলো৷
কাল থেকে মেঘলা হসপিটালে জয়েন করবে৷
মেঘলা বেশ অবাক হচ্ছে নিজের চাওয়া দেখে কেনো ওর শোভনকে দেখতে ইচ্ছে করছে? কেনো শোভনের কড়া কড়া ধমক শুনতে ইচ্ছা করছে? অদ্ভুত তো আজকাল মেঘলার মন বড্ড বেহায়া হয়ে গেছে৷ আচ্ছা এমন বেহায়া হওয়া কি সাজে? মনের এমন অদ্ভুত চাওয়া দেখে নিজেরই হাসি পায় মেঘলার৷
আহানা বাড়িতে নেই আজ ওর অফিসে অনেক কাজ ফিরতেও দেরি হবে রাতে বলে গেছে৷ গুধুলি হয়ে এসেছে ছাদে বসে বই পরছে মেঘলা কিন্তু বই পড়তে পারছে কই? বই পড়ছে কম ওই বদ রাগী লোকটার কথা ভাবছে বেশি৷ আজকাল মনটা বড্ড অমনোযোগী আর বেহায়া হয়ে গেছে নিজের কাছে থাকছেই না, এমন কেন হচ্ছে? মূল্য আছে এমন বেহায়া মন এর?
আজ আট দিন হলো ঢাকা এসেছে, গ্রাম থেকে আসা থেকে এখন পর্যন্ত সব কাজ-কর্মের সাথেই শোভন জড়িত রয়েছেই কেন এমন হচ্ছে? নিয়তি বড়ই অদ্ভুত৷ মেঘলার অবুঝ মনে হঠাৎ এক প্রশ্ন জাগলো, ” আচ্ছা ওদের এমন এক্সিডেন্টালি বিয়ের ভবিষ্যত কি? ” বদ রাগী ডাক্তারটা কি ভুলে গেছে সব? কিন্তু মেঘলা কেন ভুলতে পারছে না? ভুলবে তো দূরে থাক রাগী ডাক্তারটা যেন আস্তে আস্তে জুরে বসছে মেঘলার অবুঝ মনে৷

মিষ্টি সকালের সুচনা হলো মিষ্টি আজানের ধ্বনি শুনে৷ আজ থেকে হসপিটালে জয়েন করবে৷ কাল শোভন আহানাকে ফোন করে ভালো ভাবে জানিয়ে দিয়েছে আটটায় হসপিটালে থাকা চাই চাই৷ প্রথম দিন তাই তারাতারি যেতে হবে সব বুঝিয়ে দিবে, আর হার্ট সার্জন এর সহকারী নার্স সব কিছুতো ভালোভাবে বুঝতেই হবে৷
নামাজ সেরে কিছুক্ষন হাটাহাটি করলো মেঘলা, খুব এক্সাইটেড সাথে নার্ভাস ও যা রাগ কিছু এদিক থেকে ওদিক হলেই ধমক খেতে হবে৷
ব্রেকফাস্ট করে আহানার সাথে বেড়িয়ে পরলো মেঘলা৷ মেঘলাকে নামিয়ে দিয়ে আহানা অফিসে চলে যায়, হসপিটাল বেশ ফাকা ফাকা সকাল বলে তাই রিসিপশনে রিসিপশনিস্ট আর কয়েকজন স্টাফ কাজ করছে৷
একদিন আগে এসে আহানার সাথে সব দেখে গিয়েছিলো আর সবার সাথে কথাও বলেছে৷ নির্দিষ্ট যায়গা থেকে এপ্রোনটা নিয়ে শোভনের চেম্বার এর দিকে হাটা দেয় মূলত শোভন এতো সকালে কখনোই আসে না আজ মেঘলার জন্যই এসেছে৷
চেম্বারের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেঘলা নক করতে ভয় করছে৷

হাত ঘড়িতে টাইম দেখে দরজায় নক করে মেঘলা তখনি ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠ ভেসে আসে,
— ” টু মিনিট লেট, ফোর মিনিট বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকো, দিছ ইজ ইউ পানিশমেন্ট৷ ”
শোভনের এহেন কথায় ভরকে গেলো মেঘলা আজব তো ও কি স্কুলে সঠিক সময়ে আসতে দেরি করেছে নাকি যে পানিশমেন্ট দিলো? আজব তো লোকটা৷
মেঘলা কিছু বলবে এর আগেই আবার শোভনের গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে আসে,
— ” কথা বললে টাইম টু মিনিট করে বারবে আই থিংক তুমি এটা চাও না??”
কিছু বললো না মেঘলা, এই ছেলেটা সত্যি অদ্ভুত৷ একে বোঝা ওর সাধ্যে নেই৷৷

প্রায় চার মিনিট পর শোভন বললো,
— ” নাও কামিং৷ ”
বিনা শব্দে চেম্বারে প্রবেশ করলো মেঘলা৷।
মেঘলা গিয়ে বসতেই শোভন এক এক করে সব বুঝিয়ে দিচ্ছে, মেঘলার কাজ মূলত শোভন এর সাথে থাকা ও রাউন্ডে বের হলে ওর সাথে মেঘলাও থাকবে ওর আন্ডারে যে রোগী গুলো আছে তাদের ইনজেকশন থেকে শুরু করে সব মেঘলারই দেখা এবং সার্জারীর সময় ও থাকতে হবে মেঘলার৷
এই হসপিটাল বাদেও বাইরে তিনটে হসপিটালে চেম্বারে উইকলি দুইবার করে বসে শোভন সেখানেও থাকতে হবে৷
সব কিছু বোঝানো শেষ হলে একটা ফর্ম নিয়ে কিছু বুঝিয়ে যাচ্ছে আর মেঘলা শোভনকে দেখছে৷ শোভন হাত নাড়িয়ে ব্রু কুচকে কুচকে কথা বলছে বেশ ভালো লাগছে মেঘলার৷
মেঘলা ফ্যালফ্যাল করে শোভনের দিকে তাকি ঠোঁট সরু করে স্মিত কন্ঠে বলে,
— ” নিজে একজন হার্টের ডক্টর হয়ে আমাকে কেন হার্টের রোগী বানিয়ে দিচ্ছেন ডাক্তার সাহেব? আমি যে কঠিন অসুখে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছি যে অসুখের আরোগ্য আপনি ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না ডাক্তার সাহেব৷ ৷ ”
#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#নবম_পর্ব

মেঘলা ফ্যালফ্যাল করে শোভনের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট সরু করে স্মিত কন্ঠে বলে,
— ” নিজে একজন হার্টের ডক্টর হয়ে আমাকে কেন হার্টের রোগী বানিয়ে দিচ্ছেন ডাক্তার সাহেব? আমি যে কঠিন অসুখে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছি যে অসুখের আরোগ্য আপনি ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না ডাক্তার সাহেব৷ ৷ ”
শোভন এর কর্ণকুহর অব্দি মেঘলার এমন অদ্ভুত বাক্য পৌছালো না, শোভন শুনলে হয়তো এখনি কেলেংকারী ঘটে যেতো? মেঘলার গালে দু-একটা থাপ্পর ও হয়তো পরতো৷
মেঘলার এমন মিনমিনিয়ে বলা কথা শুনলেও শোভন ঠিক বুঝেছে এ মেয়ে এতোক্ষন মন দিয়ে শুনলেও এখন অমনোযোগী হয়ে আছে৷ ব্যাপারটায় ওর রাগ লাগলেও মেঘলার সাথে রাগটা দেখালো না৷
বোঝানো শেষ হতেই শোভন উঠে একটা মোটা বই ড্রয়ের থেকে নিয়ে মেঘলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
— ” টেক ইট৷ ”
মেঘলা গোল গোল তাকিয়ে ঠোঁট সরু করে বলে,
— ” আমি এটা দিয়ে কি করবো ডাক্তার সাহেব?”
শোভন আরেকটা বই বের করে পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বলে,
— ” বই কেউ কাউকে দেয় কেন? খাওয়ার জন্য তো আর দেয় না? অফকোর্স পড়ার জন্য৷ হুম পড়তেই দিয়েছি কিছু কিছু মার্ক করা আছে সে-গুলো পড়ো৷ ”

মেঘলা নির্বোধ এর মতো তাকিয়ে বলে,
— ” আমি কি ডাক্তার নাকি যে এই বই পড়বো? না না এটা বরং আপনার কাছেই রাখুন আমি পড়বো না৷ কাজ থাকলে দিন৷ কাউকে চেকআপ করতে হবে বলুন তাহলে? রাউন্ডে বের হবেন না চলুন তাহলে?”

শোভন বিরক্ত নিয়ে বলে,
— ” আমার সহকারী নার্স তুমি কিছু কিছু বিষয় জানা অবশ্যক, আর তোমার মতামত চাইনি পড়তে বলেছি পড়ো৷ আজ প্রথম-দিন তাই কাল থেকে যাবে৷ আর তোমার লাক ভালো তোমাকে আমার চেম্বারে বসতে দিয়েছি আগে যে ছিল তাকে প্রয়োজন ছাড়া সামনেই আসতে দেই নি৷ ”

কিছু বললো না মেঘলা বইটা নিয়ে ঘাটা শুরু করলো৷ দুজনের মাঝেই পিনপতন নীরবতা৷ আজ প্রথমদিন বলে মেঘলাকে কোনো কাজ দেয় নি শোভন, প্রায় অনেকক্ষন বই ঘাটা ঘাটি করে বিরক্ত হয়ে ধপ করে বইটা টেবিলের উপর রাখে৷ ওর কি এমন বসে থাকতে ভালো লাগে? ও তো সব সময় ছোটাছুটি করতে পছন্দ করে৷ হঠাৎ শোভনের দিকে চোখ পরতে দেখে মন দিয়ে বই পরছে৷ অন্য দিকে যেন ওর খেয়ালই নেই৷ কি সুন্দর লাগছে কেমন একটা গম্ভীর্য থাকেই মুখে৷ আচ্ছা একটু হাসি হাসি থাকলে কি হয়? শ্যাম বর্ন চেহারাটা মিষ্টি মিষ্টি ভাব আচ্ছা শোভন সত্যি সুন্দর নাকি মেঘলার চোখেই সুন্দর?
হয়তো ওর চোখেই শুধু সুন্দর?
হাসলো মেঘলা মিষ্টি হাসি, হাসিতে মিশে আছে অজশ্র ভালো লাগা অজশ্র মুগ্ধতা আর মুগ্ধতা-র কারন ওই শ্যাম পুরুষ যে দিন দিন ওকে পাগল করে দিচ্ছে৷
আচ্ছা এটা অপরাধ নয় কি? কাউকে না জানিয়ে এই যে কারো হৃদয় চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে এটা কি অপরাধ নয়? হুম দন্ডনীয় অপরাধ৷
নিজের ভাবনা দেখে হাসলো মেঘলা, ও দিন দিন যে পাগল হয়ে যাচ্ছে এটা নিয়ে ওর কোনো সন্দেহ নাই৷ আচ্ছা ওই শ্যাম পুরুষটা কি চায়? ও পাগল হয়ে যাক? মানুষ পাগল বলে ডাকবে তাতে ওই শ্যাম পুরুষের ভালো লাগবে? আচ্ছা ওই শ্যাম পুরুষটা যে ওকে পাগল করে দিচ্ছে উনি কি মেঘলার মনের সূক্ষ আরোগ্য হবে? নাকি তাতে নাকোচ করবে?
মেঘলাকে এমন ভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরে শোভন৷
— ” এমন তাকিয়ে আছো কেন?”
হঠাৎ কঠিন কন্ঠ শুনে ধ্যান ভাঙে মেঘলার কিন্তু চোখ সরায় না একই ভাবে তাকিয়ে থেকে আনমনে বলে,
— ” আপনি অনুভূতি মানে বুঝেন ডাক্তার সাহেব? বুঝেন না আপনার হার্ট নেই ৷ হার্টের ডাক্তার হয়ে কৃত্রিম হার্ট নিয়ে ঘুরছেন আপনি৷ ”
বিস্ময় চোখে তাকালো শোভন, কি বলছে এই মেয়ে? কথার মানে টা বুঝলো না শোভন৷ হয়তো বুঝলে এখনি দু একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিতো? কঠিন ভাবে তাকিয়ে কাঠ কাঠ কন্ঠে বলে,
— ” হোয়াট ননসেন্স মেঘলা? কি বলছো এসব?”
মেঘলা এবার ঠিক হয়ে বসলো এমন কাঠ কাঠ কন্ঠ শুনে৷ কিছু বললো না, শোভনও আবার নিজের পড়ায় মন দিলো৷
শোভন এখনো এক ধ্যানে বই পড়েই যাচ্ছে৷ মেঘলা আবার হাত টেবিলের উপর রেখে সেই হাত দিয়ে গালে হাত দিয়ে এক ধ্যানে শোভনকে দেখছে ওর অন্য কোথাও মনোযোগ কোথায়? সব ধ্যান তো শোভনের কাছেই সীমাবদ্ধ৷ বেশ কিছুক্ষন পর এলার্ম বাজতেই মেঘলা চমকে উঠে হুরমুরিয়ে ঠিক করে বসে৷
শোভনের ফোনের এলার্ম বেজেছে, এখন ওর আন্ডারে থাকা রোগীদের চেক-আপ এ বের হবে৷ ও সব কিছুতে-ই টাইম মেন্টেইন করে৷ ওর কাছে সময়ের অনেক মূল্য৷ টাইম ওয়েস্ট একদমই পছন্দ করে না৷

বই-টা ড্রায়ারে রাখতে রাখতে বলে,
— ” আজ তোমার কাজ নেই চলে যেতে চাইলে যেতে পারো৷ আমি বের হবো৷ যদিও চার-টা বাজে ইম্পর্টেন্ট সার্জারী আছে, কিন্তু আজ তোমাকে প্রয়োজন নেই৷ ”
বলে এপ্রোনটা পরে স্টেথোস্কোপটা গলায় ঝুলিয়ে বেরিয়ে যায়৷
মেঘলারও ভালো লাগছে না তাই উঠে এপ্রোনটা খুলে হাতে নিয়ে ব্যাগ নিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে যথা জায়গায় এপ্রোনটা রেখে হসপিটাল থেকে বের হয়৷
আজ কড়া রোদ পরেছে, সব যেমন রোদে খা খা করছে তাকাতেই পারছে না৷


অনাকাঙ্ক্ষিত যায়গায় অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষকে দেখে মানুষ যেমন চমকে যায়, আহানা বেলায়ও একি অবস্থা হলো বছর খানেক পর সেই আকাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখতে পেলো পুরোনো ক্ষত-টা যেমন নতুন ভাবে জাগ্রত হলো৷
ক্ষত বললে ভুল হবে পুরোনো অনুভূতি, ক্ষত কেন হবে? মানুষটা তো ওকে কষ্ট দেয় নি? নিজ থেকেই যদি কেউ অকারনে কষ্ট পায় তাহলে কি তাকে ক্ষত বলে? সে তো ওকে কষ্ট দেয়নি বরং নিজেই অকারনে কষ্ট পেয়েছে নিজের ভুলের কারনেই৷ আচ্ছা ও এখানে কি করছে? আবার ওকে দেখে ফেলবে না তো? নিজেকে লুকানোর ব্যার্থ চেষ্টা করলো আহানা৷৷
বিকেল হতেই কিছু বন্ধু সুলভ অফিস কলিগদের সাথে হাতির-ঝিল এসেছিলো আহানা এখানে এসেই তাকে দেখলো৷
বেখেয়ালি ভাবে হাটছিলো এদিক ওদিক যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই হঠাৎ-ই তার সাথে ধাক্কা খায়৷ ব্যাক্তিটি আহানাকে দেখে মুখে কিছুটা কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে কেমন গম্ভীর্য কন্ঠে বলে,
— ” আরে আহান তুই? কেমন আছিস? ”
আহানা হাসার চেষ্টা করে আমতা আমতা করে বলে,
— ” রাজ?? ভালোই আছি তুই কেমন আছিস? আর কবে আসলি?”

রাজ বিনিময়ে বলে,
— ” এসেছি মাস খানেক হলো৷ ”
বলেই চুপ করে রইলো, দুজনের মাঝেই পিনপতন নিরবতা৷ এতোদিন পর দেখা হয়েও দুজনের মাঝে নীরবতা আর জড়তা না দু-জন বললেও ভুল হবে আহানাই চুপ করে আছে৷ নীরবতা কাটিয়ে রাজ বলে,
— ” বিয়ে করেছিস? ”
আহানা মলিন হেসে বলে,
— ” না৷ করিনি তুই করেছিস?”

রাজ কৃত্রিম হেসে বলে,
— ” না৷ করিনি যাকে করতে চাই সে তো আমায় ভালোইবাসে না, ভয়ংকর প্রনয়ে জড়িয়ে আছি আমি যা থেকে মুক্ত পাওয়া কঠিন৷ যার পিছনে ছুটছি সে আমার থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায় কেমন একটা অদ্ভুত ব্যাপার বলতো? ”

আহানা কিছু বললো না ” আসছি ” বলে অন্য দিকে চলে যায়৷ রাজ অবাক চোখে আহানার দিকে তাকিয়ে থাকে৷

চলবে,

[ এসাইনমেন্ট তাই কিছু দিন ছোট হবে৷ আর অনেকেই শোভনকে নিয়ে মন্তব্য করছেন ধৈর্য ধরুন আশা করি পরে ভালো লাগবে ভালো কিছু দেখতে হলে প্রথম দিকটা একটু অসহ্য লাগেই🥰🥰]
চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here