#প্রণয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#দ্বাদশ_পর্ব
মধ্য দুপুর তখন ভাপ্সা গরম পরেছে তবে আকাশে সূর্য নেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মেঘ জমেছে তবে বৃষ্টি ও বোধহয় হবে না৷ ক-দিন ধরেই এমন রোদ বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা হচ্ছে আর এ কারনে রাতে শীত তো দিনে ভাপ্সা গরম৷ ভাদ্র মাসের শেষ সপ্তাহ চলছে, সপ্তাহ খানেক যাবৎ আকাশটা এমন করছে৷ সকালে গুরি গুরি বৃষ্টির দেখা মিলছ তো দুপুরে কড়া রোদ বিকেলে আবার মেঘ জমে আধার হয়ে আসে শেষ রাত পর্যন্ত তুমুল বৃষ্টি৷ ঋতু বৈচিত্রময় দেশে শরৎ এসে নিজের রঙে রাঙাচ্ছে সবে প্রকৃতিকে , হুট হাট বিকেলে নাম না জানা পাখির দেখা মিলছে কখনো৷
লাঞ্চ ব্রেক থেকে আধা ঘন্টা বেশি ব্রেক নিয়েছে আজ মেঘলা, আজ কাজ করতে একদম ইচ্ছে করছে না৷ এই ভাপ্সা গরমে বেজায় অবস্থা ওর, শুধু আজ বললে ভুল হবে কিছু দিন যাবৎ কাজ করতে ইচ্ছে করেই না মন মস্তিষ্ক সব কিছু নিয়ন্ত্রণে-র বাইরে চলে যাচ্ছে৷ মস্তিষ্ককে বুঝিয়ে রাখতে গেলে মন ছুটে যাচ্ছে, মনকে সংযম করতে গেলে মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে৷ মন আর মস্তিষ্কের এমন লুকোচুরি খেলায় মেঘলা দূর্বল হয়ে পরছে৷ মনের কথা যতক্ষন কাউকে না বলে মেঘলা কখনোই ঠিক থাকতে পারে না, তা কথাটা যেমন-ই হোক না কেন৷ অন্য ছোট ছোট কথা মুখ ফসকে বলে ফেলে আর এটা তো নিজের অনুভূতির কথা, নিজের ভালোবাসার কথা এটা কিভাবে মন গহিনে লুকিয়ে রাখবে? আর এ কথা কি লুকিয়ে রাখার কথা নাকি? ভালোবাসার কথা যে বেশি দিন ভালোবাসার মানুষের কাছে লুকিয়ে রাখা যায় না৷
হুম ” ভালোবাসে ” শোভনকে, অনেকটা ভালোবেসে ফেলেছে কি করবে? ভালোবাসা কি বলে কয়ে আসে নাকি? এটা তো মনের ব্যাপার মন যে অবুঝ মন না মানলে মস্তিষ্ক আর শরীর মানে? কিন্তু বলবে কি করে শোভনকে?
মানবে শোভন? না মানলে কি করবে মেঘলা? বিয়েটা-ই মানে না যে ছেলে সে কি মেঘলার ভালোবাসা মানবে?
এসব ভাবতে পারছে না মেঘলা এমন খারাপ কিছু বলবে যে ওর কষ্ট হয়, বুকে বড্ড কষ্ট হয়৷
লাঞ্চ ব্রেক শেষ হতেই শোভনের চেম্বারে এলো মেঘলা৷ এসে দেখে শোভন উঠলো সবে৷ কোথায় যাবে কি?
শোভন মেঘলাকে দেখে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
— ” আমি বের হবো৷ তুমি চাইলে বাড়ি যেতে পারো৷ ”
মেঘলা তাকিয়ে রইলো শোভনের দিকে৷ দু-দিন যাবৎ কালো ফ্রেমের চশমা পরে চশমা পরে বেশ সুন্দর-ই দেখায়৷ এই শ্যাম পুরুষ যে ক্ষনে ক্ষনে ওকে দূর্বল করে তুলছে, যতবার এই ছেলের সাথে দেখা হয় মেঘলার নিজের অনুভূতি গুলো যেন বেহায়া হয়ে আরো উপচে পরে৷ আচ্ছা ডাক্তারদের এতো সুন্দর হওয়া সাজে নাকি? তাহলে তো ওই অল্প বয়স্ক মেয়ে রোগী গুলো ডাক্তারদের দেখে আরো অসুখে আক্রান্ত হয়ে যাবে না? তীব্র প্রেমাসুখ৷ যেমনটা মেঘলা আক্রান্ত হয়েছে৷
আচ্ছা শোভন কি সত্যি সুন্দর? নাকি শুধু মেঘলার চোখেই সুন্দর? নিজের চোখে তো নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে৷ তাই হয়তো মেঘলার এমন হচ্ছে?
মেঘলাকে এমন মোহময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে শোভন ব্রু কুচকে বলে,
— ” হোয়াট হ্যাপেন? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন??? ”
মেঘলা মুচকি হেসে আঁখি পল্লব নাড়িয়ে সু মধুর কন্ঠে মিনমিনিয়ে বলে,
— ” তীব্র প্রেমাসুখে আসক্ত আমি, এমন করে আমায় এ প্রেমাসুখে আসক্ত না করলেও পারতেন ডাক্তার সাহেব৷৷ ”
শুনলো না শোভন৷ কর্ণকুহর অব্দি এমন বাক্য পৌছালো না৷ এই ভয়ংকর কথাটা শুনলে ভয়ংকর কোনো শাস্তি দিতো মেঘলাকে?
শোভন আবার বললো,
— ” কি দেখছো এমন করে? এভাবে তাকিয়ে থাকা-র মানে কি মিস মেঘলা? ”
ধ্যান ভাঙলো মেঘলার, কি বলবে এখন? ইসস এই চোখটাও বড্ড বেহায়া এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকে? কি ভাবছে শোভন?
মেঘলা আমতা আমতা করে কিছু বলবে এর আগেই শোভন বলে,
— ” অন্য পুরুষের দিকে এভাবে তাকানো ব্যাড ম্যানার্স জানো না তুমি? আর জানবেই-ই বা কি করে তুমি নিজেই তো একটা ম্যানার্সলেস মেয়ে৷ ”
বলে বের হয়ে যাওয়ার জন্য কয়েক কদম যেতেও থেমে যায় তারপর পিছনে ফিরে বলে,
— ” ইভিনিং সিফট এ অন্য কাউকে দিয়ে চলে যেতে পারো শুনেছি শরীর নাকি ভালো না তোমার৷ আসছি৷ ”
বলেই বড় বড় কদম ফেলে চলে গেলো৷ মেঘলা তাজ্জব বনে গেলো বিস্ময় চোখে শোভনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে৷ আচ্ছা শোভন কি বললো প্রথম? ” অন্য পুরুষের দিকে কোথায় তাকালো? ” শোভন কি অন্য পুরুষ? না ও তো ওর নিজেরই, হুম একান্তই মেঘলার৷ ইসলামিক নিয়মে সাত কালিমা পরে তিন বার ” কবুল” বলে মসজিদে ইমামদের সাক্ষি রেখে ওরা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েচ্ছে৷ হোক তা এক্সিডেন্টলি বিয়ে তো? আল্লাহ না চাইলে কি হতো? নিজেই বকে আবার নিজেই ওর ভালো লাগা খারাপ লাগা খেয়াল রাখে৷
অদ্ভুত একটা ছেলে একেবারেই অদ্ভুত৷ কখনো বকে, কখনো কেয়ার করে৷ এমন কেন? এখনি তো বকলো আবার এখনি ওর কথা ভাবছে? কি চায় লোকটা? এতো রুপ কেন? বহুরুপী মানুষ একটা৷
বাড়িতে সবে এলো মেঘলা, আহানাও বাড়িতে আহানাকে বিকেল বেলা বাড়িতে দেখে অবাক হলো মেঘলা৷ আহানা তো আজ বলেছিলো আসতে লেট হবে, ডুবলিকেট চাবি দিয়ে ফ্লাটে ঢুকেছিলো ও জানতো না আহানা আছে ৷
ড্রইংরুমে সোফায় গা এলিয়ে হাত চোখের উপর দিয়ে বসে আছে সেখানে গিয়ে বলে,
— ” কখন এলে? তুমি না বললে আজ আসতে লেট হবে? ”
আহানা চোখ থেকে হাত সরিয়ে ঠিক করে বসে কৃত্রিম হেসে বলে,
— ” একটু আগেই এসেছি৷৷
তুই? এতো তাড়াতাড়ি এলি যে?”
— ” ভালো লাগছে না তাই এসে পরলাম৷ তুমি অসুস্থ? এভাবে বসে ছিলে যে? ”
— ” না এমনি ভালো লাগছে না, ফ্রেশ হয়ে ছাদে আয় আমি কফি করে নিয়ে যাচ্ছি৷ ”
মেঘলা মুচকি হেসে সম্মতি জানিয়ে নিজের রুমের দিকে গেলো৷ ফ্রেশ হয়ে ছাদে এসে দেখে আহানা রেলিং এ ধরে অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে৷
মেঘলাও গিয়ে পাশে দাঁড়ায় আহানা হয়তো বুঝলো না, কি হলো মেয়েটার? এমন তো চুপ থাকে না? পরক্ষনে মেঘলা ভাবলো অফিস থেকে এসেছে ক্লান্ত হয়তো৷
মেঘলা পাশ থেকে কফি-টা নিয়ে এক ছিপ দিয়ে আবার রেলিং এর উপর রেখে আহানার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,
— ” তুমি কখনো কাউকে ভালোবেসেছো আপু? ”
মেঘলার এহেন কথায় কেঁপে উঠলো আহানা, মেঘলা দেখলো না তা উত্তর দিলো না আহানা৷
মেঘলা আবার বলে,
— ” বললে না যে? ”
আহানা আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে তাচ্ছিল্য কন্ঠে উত্তর দেয়,
— ” ভালোবাসা? সেটা সবার জন্য নাকি? ভালোবাসা জিনিসটা আমার জন্য নয়৷ ”
বলে মেঘলার দিকে তাকিয়ে মিহি হাসলো৷ মেঘলা বুঝলো না কথার অর্থ, কেন বললো আহানা এমনটা? ভালোবাসা তো সবার জন্যই তাহলে আহানা এমন বললো কেন? এতো দিন মেয়েটা-র সাথে থেকে এটা ঠিক বুঝেছে মেঘলা মেয়েটা চাপা স্বভাবের কিছুই বলবে না৷ মেঘলা আর কিছু জিগ্যেস করলো না আকাশ পানে তাকিয়ে লাল গুধূলির শেষ প্রহর উপভোগ করতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো, কি সুন্দর দৃশ্য৷
#প্রনয়স্পর্শী
#Tafsia_Meghla
#ত্রয়োদশ_পর্ব
রোদের সোনালী আলো চোখে পরতেই চোখ খুললো মেঘলা অতি বিরক্ত নিয়ে পর্দার দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার বালিশে মাথা গুজে ঘুমালো৷ পর্দার আড়াল থেকে এক চিলতে সোনালী রোদের কিরণ এসে মুখে পড়ায় বিরক্ত হয়ে উঠে বসল৷ এক চিলতে রোদের কিরণটা ঘোর অন্যায় করে ফেললো মেঘলার মনে হলো৷ পরক্ষনে কিছু মনে পরতেই হুরুমুরিয়ে উঠলো মেঘলা, দশটা বেজে গেছে আজ কপালে দুঃখ আছে ফোন হাতে নিয়ে দেখে ৩০+ মিস কল শোভন দিয়েছে এতো গুলো ফোন৷
কোনো মতো উঠে আলমারি থেকে জামাটা নিয়ে ওয়াশরুম এর দিকে যেতে যেতে মিনমিনিয়ে একা একাই বলে,
— ” আজ তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না মেঘলা৷ ”
কোনো মতো ফ্রেস হয়ে ড্রেস পালটে বের হয় মেঘলা৷ আহানা আজ বাড়িতেই ড্রইং রুমেই বসে ছিল মেঘলাকে এমন ভাবে তাড়াহুড়ো করতে দেখে বলে,
— ” উঠেছিস? আর এমন তাড়াহুড়া করে কোথায় যাচ্ছিস৷ ”
মেঘলা শুকনো ঢোক গিলে মেইন দরজার দিকে যেতে যেতে বলে,
— ” আপু আজ রক্ষে নেই আমার, হসপিটালে যাচ্ছি৷ ”
আহানা বলে,
— ” আমি তো ভাবলাম তুই যাবি না তাই আমিও ডাকিনি, এই রে দেরি হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি যা৷ ”
মেঘলা সম্মতি জানিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়৷
রাস্তায় কোনো রিক্সা না পেয়ে পায়েই হাটা ধরলো মেঘলা এতো তাড়াহুড়ো করে হাটছে কিছু দূর আসতেই কারো সাথে ধাক্কা খায় যার কারনে নিচে পরে যায় আর অনেকটা
ব্যাথা পায়৷ রেগে কিছু বলতে যাবে কিন্তু সামনে থাকা ব্যাক্তিকে দেখে নিজেই চুপসে যায় মেঘলা৷
শোভন দাঁড়িয়ে আছে না জানি এখন কি দুঃখ আছে মেঘলার কপালে, শোভনের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে আগে থেকেই কিছু কারনে রেগে আছে এখন তো ওই রাগ নিশ্চয়ই ওর উপর ঝারবে ভাবলো মেঘলা৷ ইসস কি করবে? মাঝ রাস্তায় কি মারবে ওকে? ঠিক নেই এই বদ রাগী ডাক্তার যা খুশি করতে পারে৷
মেঘলা কোনো মতো উঠে আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে এর আগেই শোভন বলে,
— ” চোখে কি দেখো না? আমাকে দেখলে ইচ্ছে করেই পরে যাও? নাকি ছেলেদের দেখলেই গায়ে পরতে ইচ্ছে করে? ”
মেঘলা তাজ্জব বনে গেলো, সাথে অনেক রাগ ও হলো৷ কি বলছে এই ছেলে? ও তো শোভনকে দেখেইনি ইচ্ছে করে এমন করতে যাবে কোন দুঃখে? আর সব সময় এ কথা বলার মানে কি যে ছেলেদের দেখলে গায়ে পরতে ইচ্ছে করে?
মেঘলা কিঞ্চিত বিরক্ত নিয়ে বলে,
— ” কেউ দেখে এমনটা করে বুঝি? আপনি নিশয়-ই করেন তাই আমাকেও বলছেন? তাহলে হয়তো আপনি আমাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে আমার ঘাড়েই দোষ চাপাচ্ছেন? ”
রেগে গেলো শোভন৷ রেগে গিয়ে মেঘলার গালে সজোরে থাপ্পড় মেরে বলে,
— ” একটা মিডেল ক্লাস মেয়ে হয়ে এতো কথা শুনাচ্ছো আমায়? এই মেয়ে আমাকে এত কথা শুনানোর সাহস কোথায় পাও তুমি? তুমি সত্যি একটা উটকো ঝামেলা এক তো সকালে হসপিটালে সময় মতো না গিয়ে ভুল করলে এখন রাস্তায় সিনক্রিয়েট করছো তোমাকে নিতে আসাই আমার ভুল হয়েছে৷ ”
বলেই রাগে ফুসতে ফুসতে গাড়িতে উঠে চলে যায় এখান থেকে৷
রাস্তায় এমন ভাবে মারায় কয় একজন পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া লোক তাকিয়ে আছে মেঘলার দিকে, মেঘলা সেখানেই গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷
মেঘলার পিছনে গাড়ি নিয়ে আহানাও এসেছিলো ভেবেছে হসপিটালে পৌছে দিয়ে আসবে এতোক্ষন সব টা-ই দেখেছে আহানা৷
গাড়ি থেকে নেমে মেঘলার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় আহানা, মেঘলা গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে আছে চোখ থেকে দু-এক ফোটা অবাধ্য পানি পরছে৷
আহানা গিয়ে মেঘলার বাহু চেপে বলে,
— ” সরি রে ভাই এমনি হয়তো রেগে ছিলো, কিন্তু সত্যি একটু বেশি করে ফেললো তুই,,,৷ ”
আহানা কে থামিয়ে মেঘলা মলিন হেসে চোখ মুছে বলে,
— ” আমাকে একটু হসপিটালে দিয়ে আসতে পারবে আপু? ”
মেঘলার কাঁপা কাঁপা কন্ঠ খারাপ লাগলো আহানার, রাস্তার মধ্যে এমন করে অন্য একটা ছেলের হাতে মার খাওয়া সত্যি লজ্জা-জনক ব্যাপার৷ শোভনকে দেখে আহানার মনে হয়েছে হয়তো রেগে ছিলো সে রাগটা মেঘলার উপর দেখিয়েছে তবুও একটা মেয়েকে এমন ভাবে কড়া কড়া কথা বলে রাস্তায় থাপ্পড় মারাটা দৃষ্টি কটু৷ শোভনের উপর রাগ হলো আহানার সত্যি মেঘলার সাথে একটু বেশি করে ফেলেছে এ নিয়ে কথা বলতেই হবে শোভনের সাথে৷
গাড়িতে উঠে বসলো মেঘলা, শোভন অন্য রাগ ওর উপর ঝারে এটাও জানে কিন্তু রাস্তায় এমন মারবে ভাবতেই পারেনি, ” মিডল ক্লাস ” বললো ওকে? আচ্ছা শোভন এমন কেন? সব সময় এমন করে কেন ওর সাথে?
ওকে দামই দেয় না? যে ওকে মূল্য দেয় না সে আবার ওর ভালোবাসার মূল্য দিবে কি করে? তাচ্ছিল্য হাসলো মেঘলা৷ এতোদিন অনেক কিছুই ভেবে ফেললো শুধু শুধুই নিজেকে এক তুচ্ছ অনুভূতি-র সাথে জড়িয়ে ফেললো যে অনুভূতি-র মূল্য দিবেই না কেউ৷ নিজের উপর এখন নিজের রাগ হচ্ছে মেঘলার কেন নিজেকে এতটা দুর্বল করলো? কেন নিজের অনুভুতি গুলোকে প্রশ্রয় দিলো? প্রথম থেকেই যদি নিজেকে ঠিক রাখতো নিজেকে শক্ত রাখতো আজ হয়তো এতোটা কষ্ট লাগতো না৷ ভালোবাসার মানুষটার কাছে পাওয়া কষ্ট কখনোই ভুলা যায় না৷ ভালোবাসার মানুষের দেওয়া ক্ষুদ্র কষ্টও তীব্র আকাড় ধারন করে৷ সেই প্রথম দিন থেকেই শোভন মেঘলাকে একটুও পছন্দ করে না সেই দেখা হওয়ার প্রথমদিন থেকে-ই কোনো না কোনো ভাবে অপমান করেই যায় আর মেঘলা সে গুলোর তয়াক্কাই করে না৷
এই কয়েকদিনে তো নিজের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভূতিগুলোকে প্রশ্রয় দিয়ে ভালোবাসায় পরিনত করলো৷
কিন্তু মনকে কি আদো আতকে রাখা যায়? ভেবেছিলো শোভনকে নিজের মনের কথা জানাবে ভাগ্যিস কিছু বলে-নি তখন হয়তো আরো বেশি কটু কথা শুনতে হতো? মেঘলা ভুলেই গিয়েছিলো ওর জন্য ভালোবাসা নয়, আর শোভন যা করে ঠিকই করে৷ মেঘলা কি শোভনের যোগ্য? শুধু শুধু মরিচিকার পিছনে ছুটছিলো যা ওর জন্য নয় তা নিয়ে ভাবছিলো আগের থেকেই নিজের ভুলটা বুঝলো মেঘলা৷
আহানা ঠিকই বলে সবার জন্য ভালোবাসা নয়, আর এই বিয়েটা নিয়েও বেশি ভাবছিলো ও সত্যি তো এই বিয়ের মূল্য আছে কোনো?
বড় ভুল করা থেকে বেঁচে গেলো মেঘলা আজ থেকে নিজেকে সামলাতে হবে ভাবলো মেঘলা৷ কিন্তু ভাবলেই কি? মন তো অবাধ্য, সুখ কখনো ওর জীবনে ধরা দিবে না হয়তো? নিজেকে ঠিক রাখতে হবে নিজেকে শক্ত রাখতে হবে৷ শোভনের জন্য অবাধ্য অনুভুতি গুলো মন থেকে সরাতে হবে নয়তো সারা জীবন এমন কষ্টই পেতে হবে, কিন্তু আদৌ কি পারবে? সারাদিন শোভনের সাথে থেকে আরো দূর্বল হয়ে পরবে না তো? না পারতেই হবে অন্তত নিজের জন্য হলেও শোভন এর প্রতি অনুভূতি গুলো ভুলতে হবে৷
নিজের আবেগ আর অনুভূতি-র কথা ভেবে তাচ্ছিল্য হাসলো মেঘলা, এই ক-দিন কি না বলেছে? ভাগ্যিস শোভন শুনেনি৷ আর ও নিজেও বোকা হৃদয়-হীন লোককে ভালোবাসতে গিয়েছিলো ফল স্বরুপ কষ্ট তো পাবেই৷
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিনমিনিয়ে বলে,
– বোকা তুমি?
ভালোবাসা খোঁজ শূন্য হৃদয় ভিড়ে,
তুমি কি জানো না?
ভালোবাসা থাকে শুধু মস্তিষ্কের গভীরে 💔💔
চলবে,
চলবে,