প্রথম প্রেম ৩ পর্ব -০৪

#প্রথম_প্রেম_৩
পর্ব-০৪
লেখিকা-#খেয়া

আফরার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো।অপর পাশের মানুষটার কথা তার কানে গেলোনা আফরার।তবে লোকটা যে প্রহর ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই।কিন্তু প্রহর কী করে হবে।প্রহর তো চার ছমাস আগেই
মারা গেছে।

তাহলে কী প্রহর মারা যায়নি।তাহলে কী সবাই মিথ্যে বলেছিল। আফরা আবার পুরোনো স্মৃতিতে ডুব দিলো।সেদিন ছিলো আফরা আর প্রহরের বিয়ে। সারাদিন খুব ধুমধামে চলছিল তাদের বিয়ের প্রস্তুতি।সবাই খুব খুশি ছিল।
নিবিরের বাবার খুব শখ ছিল আফরাকে নিবিরের বউ করার।কিন্তু আফরা প্রহরকে ভালোবাসতো বলে সবাই রাজি হয়ে যায়। বিয়েতে সবাই উপস্থিত থাকলেও নিবির কাজের বাহানা দিয়ে বিয়েতে যায়নি।

সন্ধ্যেবেলা বিয়ের সব প্রস্তুতি শেষ হলেও দেখা মেলেনি প্রহরের।অনেক খোঁজ নিয়েও আর প্রহরকে পাওয়া যায়নি। তার কিছুদিন পরে একটা এক্সিডেন্টে প্রহর মারা গিয়েছিল।প্রচন্ড ভেঙে পড়েছিলে আফরা।তবুও তার বিশ্বাস ছিল যে নিবির মারা যায়নি।

তারপর কিছুদিন পর সবার ইচ্ছামতো নিবির আর আফরার বিয়ে দেওয়া হয়।নিবির প্রথমে অমত করলেও পরে রাজি হয়ে যায়।

আজ এতদিন পর আবারও প্রহরের গলা শুনে প্রচন্ড অবাক হয় আফরা।ওটা যে প্রহর ছিল তা নিয়ে তার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।তবে এখন এসব চিন্তা বাদ দিয়ে আফরা আবার নিবিরকে ফোন দেয়।কিন্তু কোনো রেসপন্স নেই।

দরজায় কলিংবেল বেজে ওঠায় আফরা দৌড়ে দরজা খুলতে চলে যায়।আফরার অপেক্ষার অবসান ঘটেছে।নিবির এসেছে।কিন্তু নিবিরকে প্রচন্ড বিদ্ধস্ত লাগছে।ওর মাথায় প্রচন্ড ব্লিডিং হচ্ছে।

আফরা প্রচন্ড ঘাবড়ে যায়। ও খুব সাবধানে নিবিরের মাথায় ব্যান্ডেজ করে দেয়।আর নিবিরকে জিঙ্গেস করে

” কোথায় ছিলেন আপনি।আর আপনার এই হাল কেন।আজ আমার সব প্রশ্নের উত্তর চায়।কার সাথে এত শত্রুতা আপনার।”

নিবির এবার মাথাতুলে আফরার দিকে তাকিয়ে বলে

” আজ তোমাকে কিছু কথা বলারর আছে।আজ তোমার সব সত্যিটা জানা উচিত আফরা।প্রহর মারা যায়নি।”

আফরা প্রচন্ড অবাক হয়।এসব কী বলছে নিবির।
নিবির আবারও বলতে শুরু করে

” তুমি রাহাকে চিনতে।”

” হুম।আপনার বোন ছিলনা।পালিয়ে বিয়ে করেছে বলে যার সাথে আপনাদের কোনো সম্পর্ক নেই।”

ভুল জানো তুমি আফরা।রাহা এই দুনিয়াতে নেই।অনেকদিম আগেই সে এই দুনিয়া ছেড়ে দিয়েছি।কথাটা বাবাও জানে।কিন্তু মাকে বলার সাহস হয়নি আমাদের কারোরই।”

নিবিরের কথাগুলো মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে আফরার।ও অবাক হয়ে বলল

” সে কীভাবে মারা গেলো।”

” তোমার সাথে প্রহরের সম্পর্ক শুরুর অনেক আগে থেকেই প্রহরের সাথে রাহার সম্পর্ক ছিল।কিন্তু একটা সময় প্রহরের তোমাকে ভালোলেগে যায়।আর ও রাহাকে ইগনোর করতে থাকতে।রাহা এগুলো সহ্য করতে পারছিল না।”

কিছুটা সময় থেমে নিবির আবারও বলে

” প্রচন্ড ডিপ্রেশনে পড়ে গিয়েছিল মেয়েটা।রাহা একদিন সামনাসামনি প্রহরের সাথে কথা বলতে গিয়েছিল।কিন্তু প্রহর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল যে ও শুধু তোমাকে ভালেবাসে।সেদিনই প্রহরের সামনেই আত্মহত্যা করেছিল আমার বোনটা।চারমাসের প্র্যাগনেন্ট ছিল রাহা।”

কথাগুলে শেষ করতে নিবিরের গলা কেপে উঠল।চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।আফরা যেন এখনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে তার।
কান্নামিশ্রত গলায় নিবিরকে বলল

” প্রহরেরর এক্সিডেন্ট! ”

নিবির চোখতুলে আফরার দিকে তাকিয়ে বলল

” আমি করিয়েছিলাম।আমি চাইনি ওরকম একটা লোকের সাথে তোমার বিয়ে হোক।
তবে প্রহর মারা যায়নি।বেঁচে আছেও।আর এখনো ও তোমাকে নিজের করে চায়।”

” প্রহর এতদিন কোথায় ছিল।”

” এক্সিডেন্টের পর ও দেশের বাইরে চলে গিয়েছিল।কিছুদিন আগেই দেশে ফিরেছে।”

” আপনার এই এক্সিডেন্ট গুলো কী তবে সেই করাচ্ছে। ”

” হয়তো,,,দেখো আফরা তোমাকে ভালোবাসতাম আমি।তাই চাইনি এরকম একটা লোকের সাথে তোমার বিয়ে হোক।কিন্তু আমি এখন চাচ্ছি যে তুমি প্রহরের কাছে ফিরে যাও।”

রীতিমতো নিবিরের কথায় চমকে ওঠে আফরা।বিচলিত হয়ে বলে

” যেই মানুষটাকে ভুলে যাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করছি গত কয়েকমাস ধরে আর আপনি আবার তার কাছেই ফিরে যেতে বলছেন।ভালোবাসেন না আমাকে তাহলে কেন তা আগে প্রকাশ করেননি।”

” তোমাকে ভালোবাসতাম ঠিকই কিন্তু যখন মনে পড়ত যে তুমি অন্যকাউকে ভালোবাসো তখনই রাগটা মাথায় উঠে যেতে। ”

” এখন কেন চান যে আমি প্রহরের কাছে ফিরে যায়।”

নিশ্চুপ হয়ে থাকে নিবির।কিছুসময় পর শান্তকন্ঠে বলে

” আমি কখনো বাবা হতে পারবোনা আফরা। আমি মা হওয়ার মতো এত সুন্দর একটা অনুভূতি হতে তোমাকে বঞ্চিত করতে চাই না।”

আফরা কোনো প্রতিত্তর না করে চুপচাপ বিছানায় বসে পড়ে।তারপর নিবিরের উদ্দেশ্য বলে

” দুনিয়াতে এমন কোনো মানুষ নেই যার কাছে দুনিয়ার সব সুখ আছে।সব মানুষেরই কিছু না কিছুর অভাব আছে।আমিও নাহয় থাকলাম একটু অভাবে।মাতৃত্বের সুখটা আমার কাছে না থাকুক আমার তো আপনি থাকবেন।”

____________

রাতের শীতল হাওয়ায় স্নিগ্ধ হয়ে যায় আফরার মন।কিছুক্ষন আগে নিবিরকে ঔষধ খায়িয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে আফরা।আফরার মাথায় এখনো নিবিরের কথাগুলোই ঘুরছে।প্রহর যদি রাহার সাথে রিলেশনে ছিল তখন আফরারকে কেন বিয়েয়ে করতে চাইছিল।আর ও দেশ ছেড়েই কেন চলে গিয়েছিল।আর এভাবে রাহার নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে কীকোনো প্রশ্ন করেনি কেউ।

হাজারো প্রশ্ন জট পাকিয়ে যাচ্ছে আফরার মাথায়।ও ঠিক করে নিয়েছে এবার প্রহরের সাথে দেখা করে ওর থেকে সবটা স্পষ্ট জানতে চাইবে।
নিবিরের ব্যাপারটাও আফরার কাছে ক্লিয়ার।কিন্তু আফরার নিজেকে রাহার মৃত্যুর জন্য দায়ী মনে হচ্ছে।সেখানে তো রাহার সাথে আরেকটা প্রাণও জড়িয়ে ছিলো।

_____________

অন্যদিকে সেই অজানা ব্যক্তি গুলি করে তার সামনে দাড়িয়ে থাকা দুটো মানুষকে মেরে ফেললো।চিতকার করে উঠল

” এসব লোক কোনো কাজের না।এদের দিয়ে কিছু হবেনা।যা করার আমাকেই করতে হবে।আমার প্রয়সীকে আমি নিজেই নিজের করে নেবো।
আফরা শুধু আমার। আমি ওকে অন্যকারো হতে দেবোনা।বাঁচতে দেবো না আমি ঐ নিবিরকে।যেভাবে তার বোনকে শেষ করেছি সেভাবে তাকেও শেষ করব।”

______________

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আফরা নিবিরর জন্য নাস্তা বানিয়ে নিয়েছে।রান্না খুব ভালো না জানলেও টুকটাক কাজ চালানোর মতো জানে সে।রান্না শেষ করে দ্রুত রান্নাঘরে সব গুছিয়ে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় আফরা।আজ সে নিবিরকে বাইরে যেতে দেবেনা।আর নিজেও কোচিংয়ে যাবেনা ঠিক করেছে।
নিবিরের মতো রাগী একটা মানুষের ভেতরে যে এত লুকানো কষ্ট তা জানা ছিল না আফরার।
আফরা বুঝতে পারছে যে নিবিরের এখন যথেষ্ঠ মেন্টাল সার্পোট দরকার।

আফরা রুমে এসে নিবিরকে ঘুম থেকে তুলে দেয়।তারপর ফ্রেশ হয়ে নিতে বলে।নিবিরও ফ্রেশ হতে চলে যায়।নিবির ওয়াশরুমপ যাওয়ার পর নিবিরের একটা ফোন আসে।আফরা গিয়ে ফোনটা ধরে।অপরপাশের মানুষটা ফোনটা রিসিভ হতেই বলতে শুরু করে

” কাজ হয়ে গেছে স্যার।এখন সব প্রমাণ আমাদের হাতে।আমরা যে কোনো সময় সবটা ফাঁস করে দওতে পারি।”

আফরা এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বলার আগেই লোকটা ফোন কেটে দেয়।আফরা এসবের কিছুই বুঝতে পারছেনা।
সবকিছু তার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।নিবির আবার কী করতে চাচ্ছে।আবার কোনো বিপদে পড়বেনা তো সে।আফরাকে সবটা জানতেই হবে।

নিবির ফ্রেশ হয়ে আসলে আফরা ওকে নাস্তা দিয়ে নিজেও নাস্তা করে নেয়।সেই ফোনের ব্যাপারে আর কোনো কথা বলেনা আফরা।নিবির আফরাকে কালকের ব্যাপারে কিছু বলতে চাইলেও আফরা এড়িয়ে যায়।
নিবির আফরাকে বলে

” অন্যসব চিন্তা মাথা থেকে বের করে নিজের স্বপ্বপূরণের দিকে মন দাও আফরা।সারাদিন এসব নিয়ে ভাবলে তোমার স্বপ্ন পূরণ হবেনা।”

আফরা নিবিরের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়না। তবে সে মনে মনে ঠিক করে নেয় যে করেই হোক সে নিজেকে নিবিরের যোগ্য করে তুলবে।ভুলে যাবে নিজের জীবনের পুরোনো কালো অধ্যায় আর সেই মানুষটাকে।যদিও সহজ হবেনা তবুও চেষ্টা করবে নতুনভাবে সব শুরু করার।

____________

কেটে গেছে দুটো দিন।সেদিনের পর সেই টপিক নিয়ে আর কোনো কথা হয়নি।নিবির এখন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলে আফরাকে। এই ব্যাপারটা মোটেও ভালোলাগেনা আফরার।নিবিরকে সে ভালোবাসেনা ঠিকই তবে নিবিরের ইগনোরটা একদম সহ্য হয়না আফরার।একমুহূর্ত নিবিরের সাথে কথা না বললে দমবন্ধ হয়ে আসে আফরার। এমনটা কেন হয় জানা নেই।তবে কী নিবিরকে ভালোবেসে ফেলেছে আফরা নাকি,,,

আর কিছু ভাবতে পারেনা আফরা।গিয়ে বই নিয়ে বসে
এই দুদিন নিবির আফরাকে নিয়মিত কোচিংয়ে নিয়ে গেছে।কিন্তু প্রহরের সাথে দেখা করার ইচ্ছেটা আফরার থেকেই গেছে।ও প্রহরের থেকেই জানতে চাই সে আফরার সাথে এমনটা কীভাবে করল।

দুদিন আফরার মন খুব খারাপ থাকায় নিবির ঠিক করেছিল আজ আফরাকে নিয়ে তার বাবা মার কাছে যাবে।সেইমতো নিবির আফরাকে নিয়ে বেড়িয়ে যায়।

আফরাদের বাসায় যাওয়ার আগে নিবির আফরাকে নিয়ে একটা শপিংমলে যায়।টুকটাক কিছু কেনাকাটা করার পর নিবিরের একটা ফোন আসায় সে একটু সরে যায়।আফরা একজায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল তখনই সামনে একজনকে দেখে প্রচন্ড অবাক হয়।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here