প্রথম প্রেম ৩ পর্ব -০৫

#প্রথম_প্রেম_৩
পর্ব-০৫
লেখিকা-#খেয়া

আফরার যেন মনে হলো ওর সামনে প্রহর ছিল।আফরা একটু এগিয়ে দেখতে গেলে সামনে আর কাউকে খুঁজে পায়না।আফরা নিজের মনের ভুল ভেবে ফিরে যায়।

আরও কিছু টুকটাক কেনাকাটা করে নিবির আর আফরা আফরাদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিল।এতদিন পর বাড়ি যেতে পারবে ভেবে আফরার মনটা সত্যিই ভালো হয়ে যায়।

বেশখানিকক্ষণ পর আফরাদের বাসায় পৌছায় ওরা।আফরাদের বাসাটা শহর থেকে কিছুটা দূরেই।বাসায় ঢুকেই আফরা তার বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে শুরু করে।আফরার আনন্দ যেন আজকে ধরছেনা।ব্যাপারটা নিবিরের ও বেশ ভালো লাগলো।এতদিন পর সে আফরাকে প্রাণ খুলে হাসতে দেখেছে।

আফরার না খাবার রেডি করছিলেন।আফরা সেখানে গেলে আফরার মা আফরাকে বলেন

” দেখ মা।জানি তোর আর নিবিরের বিয়েটা এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে। তাই বলে কী নিজের অতীত নিয়ে বসে থাকলে হবে।পুরোনো সবকিছু ভুলে নতুন করে শুরু কর নিজের জীবনটা।নিবির তোকে খুব ভালোবাসে।ও তোকে ভালো রাখবে।”

আফরা ওর মায়ের পরিপ্রেক্ষিতে শুধু বলে

” আমি চেষ্টা করব।”

কিছুক্ষণ আফরা দের বাড়িতে থেকে রাতের খাবার খেয়ে নিবির আরর আফরা সেখান থেকে চলে আসে।গাড়িতে উঠার পর নিবির বলে

” তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে আফরা।তোমাকে আজ সবকিছুর প্রমাণ দেবো।”

নিবিরের কোনো কথার মানেই বুঝলো না আফরা। তবে নিবিরের মাথায় যে বেশ বড়কিছু চলছে তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে সে।
নিবির আফরাকে বেশ জনশুন্য একটা জায়গায় নিয়ে আসে।আফরার এবার বেশ ভয় লাগল।সে ভয়ে ভয়ে নিবিরকে জিঙ্গেস করল

” আমরা এখানে কেন আসলাম।”

” তোমাকে মেরে এখানে গুম করে দিয়ে যাবো তাই।”

নিবিরের কথায় আফরা একদম হকচকিয়ে গেলো।আফরা কিছু বলার আগেই নিবির আবারও বলল

” এত ভয় পাও কেন ডাফার। একটা কাজে এসেছি।একটু ওয়েট করো। সব বুঝতে পারবে।এত ভয়ের কিছু নেই।”

আফরা আর কোনো কথা বলেনা।কারণ ও জানে এখন বেশি কথা বললে নিবির খুব রেগে যাবে।তারপর ওকে মেরে গুম করেও দিতে পারে।

কিছুসময় পর একজন মাস্ক পড়া লোক এসে নিবিরকে কিছু একটা দেয়।নিবির সেটা চুপচাপ নিয়ে নেয়।আফরা এসবের কিছুই বোঝেনা।কিন্তু ও এট বোঝে যে নিবির খুব সিরিয়াস একটা কিছু করছে।

____________

সকালের মিষ্টি রোদে ঘুম ভেঙে যায় আফরার।চোখ খুলে চারিদিকে একটু পর্যবেক্ষণ করে নেই।আজকের সকালটা যেন একটু বেশি সুন্দর।কিন্তু কেন তা জানা নেই আফরার।নিবির এখনো ঘুমোচ্ছে।আফরা আলতো হাতে নিবিরের মাথায় হাতবুলিয়ে দেয়।এই শখটা আফরার অনেকদিনের।আজ সাহস করে করেই নিলো।নিবিরের চুলে আলতো ভাবে হাত বুলিয়ে দিতেই মুচকি হেসে উঠে আফরা।নিবির একটু নড়ে উঠতেই আফরা দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ।

আফরা ফ্রেশ হয়ে বাইরে রান্নাঘরে চলে যায়।টুকটাক কাজ শেষে আফরা রুমে এসে নিবিরকে ডেকে দেয়।নিবির ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে হসপিটালে চলে যায়।

আফরার আজ কোচিং নেই।আফরা বই নিয়ে বসে ছিল।তখনই আফরার ফোন বেজে ওঠে।নিবিরের ফোন ছিল।আফরা বেশ অবাক হয়।নিবির মাত্রই বাড়ি থেকে বেরোলো আবার এখন ফোন করছে।আফরা বেশি কিছু না ভেবে ফোনটা তোলে

” আফরা,জলদি তৈরি হয়ে নাও।তোমাকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো”

আফরাক কিছু বলার সময় না দিয়েই নিবির ফেন কেটে দেয়। আফরাও দ্রুত তৈরি হয়ে নেয়।

____________

আফরা বিস্ফোরিত নয়নে তার সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে তাকিয়ে ছিলো।নিবিরযে তাকে এতবড় সারপ্রাইজ দিবে বোঝা ছিল না আফরার।

এতদিন পর চোখের সামনে প্রহরকে পেয়ে নিজের মনের রাগগুলো দমাতে পারলোনা আফরা।ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলো প্রহরের গালে।
প্রচন্ড রাগে অভিমানে বলল

” আমার সাথে এমনটা কেন করলে তুমি।কেন নষ্ট করলে রাহা ও তার বাচ্চার জীবন।”
আফরার দুচোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি পড়ছে।
নিবির আফরার উদ্দেশ্যে বলল

” ওকে এসব বলে লাভ নেই আফরা।ও কখনোই তোমাকে ভালোবাসেনি।ও জানতো আমি তোমাকে ভালোবাসতাম।শুধু মাত্র আমার থেকে সবটা কেড়ে নেওয়ার জেদে ও তোমার সাথে এসব করছিল।”

আফরা যেন কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।প্রথর কী তবে সত্যি কখনো ভালোবাসেনি ওকে।নিবির আবারও বলতে শুরু করে

” প্রহর আর আমি কলেজ লাইফে একসাথে পরতাম।কোনোকারণ বশত প্রহর প্রচন্ড হিংসা করত আমায়।আমার থেকে সবকিছু কেড়ে নেওয়াটাই তার উদ্দেশ্য ছিল।একারণেই আমার থেকে রাহাকে কেড়ে নিয়েছিল তারপর তোমাকে কেড়ে নিতে চাইল।”

আফরা প্রচন্ড ভেঙে পড়ল।প্রহর এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার বলে

” বিশ্বাস করো আফরা আমি নিবিরের থেকে তোমাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলাম ঠিকই।তবে কখন যে আমি তোমাকপ সত্যি ভালোবাসে ফেলেছিলাম আমি বুঝতেই পারিনি।”

আফরা কিছু বলার আগেই নিবির বলে

” রাহাকে কেন মারলি প্রহর।”

আফরা অবাক হয়ে রইল।প্রহর ছলছল নয়নে তাকিয়ে বলল

” আমি বুঝতে পারিনি রাহা এমন একটা কাজ করে ফেলবে।আমি ওকে বাচ্চাটা নষ্ট করতে বলেছিলাম তাই বলে যে ও আত্মহত্যা করে নিবে আমি বুঝতে পারিনি,,,”

আর কিছু বলার আগেই নিবির প্রহরের গালে দুটো চড় লাগিয়ে দেয়।আফরা নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে রয়।তার মাথা কাজ করছেনা।এসব কীভাবে হলো।প্রহর কীভাবে এমনটা করতে পারল ওর সাথে।

__________

কেটে গেছে কিছুদিন।আফরা এখন নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে।যতটা সম্ভব ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছে সে প্রহরকে।পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেছে আফরা।যে করেই হোক মেডিকেলে চান্স পেতেই হবে আফরাকে।

আজকে নিবির সকাল সকাল হসপিটালে চলে গেছে।আফরা কখন থেকে কোচিংয়ের জন্য রেডি হয়ে বসে আছে অথচ প্রহরের আসার নামই নেই।
আফরার এবার বেশ রাগ হচ্ছে।একদিনে নিবির আর আফরার সম্পর্কটা বেশ ভালো হয়েছে।

বেশ খানিকক্ষণ পর নিবির আসে।আফরা এবার রাগে রাগে চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসে।পুরো রাস্তা একটাও কথা বলেনা নিবিরের সাথে।নিবিরও কিছু বলেনা।আফরাকে কোচিং এ নামিয়ে দিয়েই নিবির চলে যায়।

কোচিং শেষে আফরা বাইরে এসে দেখে নিবির দাড়িয়ে আছে।আজ সময়ের আগেই চলে এসেছে।ব্যাপারটা আফরার ভালোলাগলেও কিছু বলেনা আফরা।চুপচাপ গিয়েয়ে গাড়িতে বসে।

কিছুসময় পর নিবির আফরাকে উদ্দেশ্য করে বলে

” আমার খুব খিদে পেয়েছে আফরা।”

আফরা একটু তেজ দেখিয়ে বলে

” তো খাবার খান না। আমাকে বলেন কেন!”

” আসলে,,,আমার সামনে একটা চেরি ফল আছে।ভাবসিলাম সেটাই খাবে।”

আফরা কিছু না বলে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই নিবির বলে

” রাগলে যে তোমার নাকের গডাটা লাল হয়ে যায় তা কী জানো তুমি। ”

আফরা ফিক করে হেসে দেয়।যদিও ঠিক করেছিল আজ নিবিরের ওপর রাগ দেখাবে তা আর হলোনা।

____________

কেটে গেছে অনেক দিন।সময় তার আপন গতিতে চলছে।নিবিরের মাকেও রাহার ব্যাপারে সবটা বলে দেওয়া হয়েছে।উনি একটু ভেঙে পড়লেও নিজেকে সামলে নিয়েছেন।

কাল আফরার এডমিশন টেস্ট। মেয়েটা মন প্রাণ লাগিয়ে পড়ছে।
নিবিরও এখন যথেষ্ট কেয়ার নেয় আফরার।ওদের সম্পর্কটা অনেকটাই নরমাল হয়ে গেছে।

সকালবেলা আফরার পরীক্ষা। নিবির আফরাকে রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে যেতে বললেও আফরা ঘুমোয় না।সে এখনো বই নিয়ে বসে আছে। মেয়েটা অসম্ভব রকম টেনশন করছে।রীতিমতো ঘামছে।আফরার এমন অবস্থা দেখে নিবির বলে

” এই মেয়ে।কথা বললে শুনতে মন চায়না।বই রেখে ঘুমাতে আসো,কুইক।তাহলে কাল হলে বেশ ফ্রেশ লাগবে।আর আজ রাতের পড়া দিয়ে বিশ্বজয় করে ফেলবেনা তুমি।সো বই রেখে গুমিয়ে যাও।”

নিবিরের কথাশুনে আফরার মন বেশ খারাপ হয়।ও চুপচাপ বই রেখ ঘুমাতে যায়।

____________

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে নেয় আফরা।দশটা পরীক্ষা শুরু।এখন সাড়ে আটটা বাজে।
প্রচন্ড টেনশন হচ্ছে আফরার।যদি চান্স না হয়।নিবিরের বাড়ির সবাই অনেক বুঝিয়েও আফরার টেনশন কমাতে পারেনা।

আফরা তার বাবা মাকে ফোন করে দোয়া চেয়ে নেয়।নটার দিকে ওরা হলে পৌঁছে যায়।

প্রচন্ড টেনশন নিয়ে পরীক্ষা শেষ করে আফরা।খুব একটা ভালো হয়নি তবে খারাপও হয়নি।কিন্তু চান্স হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে আফরার।
মেয়েটার। বাইরে এসে এত হাজার হাজার মানুষের মাঝে নিবিরকে খুঁজে পেতে বেশ কষ্ট হয় আফরার।তবুও পেয়েয়ে যায়।এখানে বেশি সময় না থেকে নিবির আফরাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে যায়।

আফরা এখনো অনেক টেনশনে আছে।নিবির অনেক বলেও আফরার টেনশন কমাতে পারছেনা।অবশেষে দুটো কোল্ডকফি অর্ডার দেয় নিবির।আফরা বেশ অবাক হয়।আজকে আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা আর নিবির নরমালি কোল্ড কফি খায়না।আফরা কিছু বলার আগেই নিবির বলে

” কোল্ডকফি তোমার জন্যই অর্ডার করেছি।এমন আবহাওয়ায় ও এত ঘামছ কেন তুমি।”

আফরা চুপচাপ রইল।আশানুরূপ হয়নি পরীক্ষাটা।যদি চান্স না হয় তবে নিবিরকে কী জবাব দেবে সে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here