প্রথম প্রেম ৩ পর্ব -০৬ ও শেষ

#প্রথম_প্রেম_৩
পর্ব-০৬(অন্তিম)
লেখিকা-#খেয়া

প্রচন্ড উচ্ছাসে অপেক্ষা করছে আফরা।আজ তার মেডিকেলের এডমিশন টেস্টের রেজাল্ট দিবে।কেন জানি আজ নেগেটিভ চিন্তাগুলোই আফরার মাথায় আসছে।নিবির অনেকক্ষণ ধরে রেজাল্ট দেখছে।আফরা টেনশনে নখ কামড়াচ্ছে।

খানিকবাদে নিবির আফরার দিকে তাকিয়ে বলল

” তোমার এডমিশনটা হয়নি আফরা।”

চুপ হয়ে রইল আফরা।ও যেন এমন কিছুই আশা করেছিল।নিজের ব্যর্থতা গুলো আজ উপলব্ধি করতে পারছে সে।নিবিরের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে রইল সে।তার চোখ দিয়ে নিরবে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।যা দৃষ্টির অগোচার হলোনা নিবিরের।

আফরা একটু মুচকি হেসে বলল

” যেই জিনিসটাকে আমি মন প্রাণ দিয়ে পায় তা কখনোই আমার হয় না।”

নিবির আফরার কথাগুলো শুনলো না।শুধু দেখলো আফরার হাসির পেছনে লুকিয়ে থাকা অজস্র রাতজাগার কষ্টের কথা।
মেয়েটা কতটা পরিশ্রম করেছিল তা অজানা নয় নিবিরের।নিবির বলে

” লিসেন আফরা,,সবজায়গায় যে সবাই সফল হবে তা কিন্তু নয়।জীবনে বড় কিছু করার জন্য ব্যর্থতা প্রয়োজন।এতে ভেঙে পড়লে হবেনা।সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।”

আফরা নিবিরের কথা কতটা বুঝলো তা জানা নেই নিবিরের।তবে মেয়েটা যে অল্পতেই ভেঙে পড়ার মেয়ে না তা জানে সে।

______________

দিন কাটছে তার আপন নিয়মে।মেডিকেলে এডমিশন হয়নি বলে ভেঙে পড়েনি আফরা।রিএডমিশনের জন্য চেষ্টা করছে।সামনে বার আবারও পরীক্ষা দিবে ঠিক করেছে।

আফরা আর নিবিরের সম্পর্কটা এখন অনেকট নরমাল।নিজেদের অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে তারা।হয়তো আফরা ভালোবাসতে শুরু করেছে নিবিরকে।তবুও তার মনের মাঝে কোথাও না কোথাও প্রহরের স্মৃতিগুলো রয়েই গেছে।লোকে বলে প্রথম প্রেম নাকি ভোলা যায়না।কথাটা হয়ত সত্যি।
তবে একটা কথাও আজ আফরার কাছে পরিষ্কার।মন থেকে চাইলে প্রথম প্রেম ভুলেও নতুন করে অন্যকাউকে ভালোবাসা যায়।

এতদিন প্রহরের কোনো খবর পায়নি আফরা।নিজেও নিতে চায়নি।গতদিন প্রহর নিজে আফরাকে ফোন করেছিল। সে নাকি শেষ বারের মতো আফরার সাথে দেখা করতে চায়।আফরা চায়নি প্রহরের সাথে দেখা করতে।কিন্তু নিবির বলেছে শেষবারের মতো যেন সে প্রহরের কথাগুলো শুনে নেয়।

প্রহরের দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে যায় আফরা।আজ সে একাই এসেছে।সে জানে আর যাইহোক প্রহর তার কোনো ক্ষতি করবেনা।

অন্ধকার রুমে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে প্রহর আর আফরা।প্রহরের মনপ জমে আছে আফরাকে না বলা হাজারো অনুভূতি আর আফরার মনে আছে প্রহরের জন্য অসম্ভব ঘৃণা।আজ প্রহরের দিকে তাকাতেও ঘৃণা হচ্ছে আফরার।

“আফরা।”

প্রহরের দিকে চোখতুলে তাকালো আফরা।এই প্রহর যেন তার বড্ড অচেনা।আফরার নামটা উচ্চারণ করতে যেন বারবার গলা কেঁপে উঠছিল প্রহরের।প্রহরের ভিতরে লুকিয়ে থাকা হাজারো কষ্ট অনুভব করতে পারছে আফরা।তবুও মুখে কিছু বলেনা সে।প্রহর আবারো বলতে থাকে

” জানোতো আফরা প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছি আমি।নিবিরের থেকে তোমাকে কেঁড়ে নেওয়ার লড়াইয়ে নিজে যে কতটা আসক্ত হয়ে গেছি তোমার প্রতি তা বোঝাতে পারবোনা।তোমার জন্য আমি রাহার সাথে অন্যায় করেছি জানি।তবে কবে যে তোমাকে এতটা ভালেবেসে ফেলেছি তা জানা নেই আমার।
কতটা ভালোবাসলে যে তাকে ভুলে থাকা অসম্ভব তা হয়তো তোমার জানা নেই।কিন্তু এটা জেনে রেখো যে আমি তোমাকে এতটাই ভালোবাসি।তোমাকে ছাড়া এখন একমুহূর্তও থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।অনেক চেষ্টা করেছি তোমাকে ভুলে যাওয়ার আমি পারিনি।তুমি তো আমার হবেনা তাহলে আমি আর এপৃথিবীতে থেকে কী করব।
যদি সম্ভব হয় তো আমাকে ক্ষমা করে দিও।”

কথাগুলো বলেই আফরাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই প্রহর তার হাতে থাকা বন্দুকটা দিয়ে নিজের মাথায় গুলি করে।
চিতকার করে উঠে আফরা।প্রহরের অবস্থা দেখা হয়না আফরার।তার আগেই সেন্সলেস হয়ে যায়।

____________

চোখখুলতেই নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করে আফরা।তার হাতে ক্যানোলা করা।পাশেই নিবিরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উঠে বসে আফরা।নিবির দ্রুত এসে আবার শুয়িয়ে দেয় সে।প্রহরের ব্যাপারে জানতে চাই আফরা।নিবির বলে

” প্রহর মারা গেছে আফরা।”

নিবিরের কথায় চুপ করে রয় আফরা।সে এখানে কী করে আসলো তা জানা নেই আফরার।হয়ত ঘৃণা করত সে প্রহরে তবুও একটা সময় তো ভালোবাসতো তাকে।প্রহরের মৃত্যুটা মানতে পারছেনা আফরা।নিরবে চোখের পানি ফেলল সে।
আজও কোথাও না কোথাও আফরার মনপ প্রহর রয়েই গেছে।আফরার বারবার এটাই মনে হচ্ছে যে হয়ত তার জন্যই প্রহরের এই অকাল মৃত্যু।

__________

সময়ের সাথে সাথে হালকা হয়ে যায় স্মৃতিও। স্মৃতির অকপটে আজ হালকা হয়ে গেছে প্রহরের স্মৃতি গুলো।হয়তো কোথাও রয়ে গেছে।তবুও আজ সেসব মনে করতে চায়না আফরা।আজ সে নিজেকে একজন সুখী মানুষ বলতে পারে।কতটা পুন্য করে সে নিবিরকে পেয়েছিলল তা জানা নেই আফরার।তবুও নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করে সে।হয়ত একটা অভাব থেকে গেছে তার জীবনে তবুও তা অনুভব করতে চায়না আফরা।

নিবির কখনো বাবা হতে পারবেনা সেটা জানে আফরা।তবুও কোনো দ্বিধা নেই আফরার মনে।ভালোবাসার মানুষটা সঠিক হলে যে আর কিছু লাগেনা জীবনে।

সেকেন্ড টাইম এডমিশনে মেডিকেলে চান্স পেয়ে যায় আফরা।মন প্রাণ লাগিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরনের জন্য কাজ করছে আফরা।

দেখতে দেখতে কেটে গেছে তিনটে বছর।নিবির একন যথেষ্ট ভালে পজিশনে আছে।আফরাও যথেষ্ট দায়িত্বশীল হয়ে গেছে।তবুও তার বাচ্চামোগুলো রয়েই গেছে।

সবাই আফরাকে বলেছিল একটা বাচ্চা এডপ্ট করতে।কিন্তু আফরা রাজি হয়নি।সে চায়নি নিবিরের ব্যর্থতাটা প্রতি মুহুর্তে ওকে অনুভব করাতে।

___________

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে টুকটাক কাজ সেরে ফ্রেশ হয়ে মেডিকেল যাওয়ার জন্য তৈরি হয়।নিবির হসপিটালে যাওয়ার সময় আফরাকে নামিয়ে দিয়ে যায়।আজ এতবেলা হলেও নিবির এখনো উঠেনি।আফরা নিবিরকে অনেকবার ডাকলেও সে উঠেনা।একদম ঘুমে বিভোর সে।আফরা এবার নিবিরের গায়ে পানি ছিটিয়ে দিলো কিছুটা।লাফ মেরে উঠল নিবির।আফরার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল

” এই মেয়ে সকাল সকাল কী শুরু করেছো।এভাবে কেউ গায়ে পানি দেয় নাকি।মাইর খাবে নাকি।”

” বললেই হলো না । আপনি যে আমায় মারবেন না সেটা আমি জানি।আমাকে মারলে তো ব্যাথ্যাটা আপনি পাবেন।
আচ্ছা এখন কথা না বলে রেডি হয়ে নেন।নয়তো আমার দেরি হয়ে যাবে।”

” আচ্ছা আমি তৈরি হচ্ছি।তুমি খাবার রেডি করো।”

” হুম”

নিবির ওয়াশরুমে চলে গেলো।আফরা বাইরে যাওয়ার আগে নিবিরের টেবিলের কাছে গিয়ে নিবিরের ডাইরিটা বের করল।ডাইরিতে আফরার একটা ছবি আছে।যেটা নিবির এতগুলো বছর ধরে লুকিয়ে রেখেছিলো।তার পাশে লেখা ছিল “আমার শুভ্রপরী।”

আফরা একবার ডাইরিটায় চোখবুলিয়ে মুচকি হেসে বাইরে চলে গেলো।

___________

আফরার আজ ক্লাস কম থাকায় নিবির আফরাকে নিয়ে একটা পার্কে ঘুরতে এসেছে।আসার পথে আফরাকে কিছু ফুলও কিনে দিয়েছে সে।মেয়েটা ফুল বড্ড পছন্দ করে।আজকাল আফরার ছোট ছোট পছন্দের দিকও খুব খেয়াল রাখে নিবির।
এই মেয়েটা যে কেন এত মায়াবী তা জানা নেই নিবিরের।বিকেল হয়ে এসেছে যে কেনো সময় সন্ধ্যা নামবে।এখনো পার্কে রয়ে গেছে তারা।এত সময় কীভাবে অতিবাহিত হলো জানা নেই তাদের।

গোধুলির আলোয় প্রিয়জনের হাত ধরে রাস্তায় হাঁটাটা হয়ত দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ অনুভূতিগুলোর মধ্যে একটা।হঠাতই যেন নিবিরের ইচ্ছে হলো চুপিসারে তার শুভ্রপরীর কানে কানে বলতে

” তুমি মেয়েটা এতটা মায়াবতী কেন হলে বলোতো।”

তা আর বলা হয়না নিবিরের। তার আগেই আফরা দৌড়ে একটা দোকানের কাছে চলে যায়।তারপর সেখান থেকে অনেকগুলো লাল বেলুন কিনে। নিবির অবাক হয়ে বলে

” এতগুলো বেলুন কী করবে।”

আফরা শুধু মুচকি হাসে আর বলে

” নিজের সুখগুলো পুরো পৃথিবীকে দেখাবো।”

আফরা সবগুলো বেলুন একসাথে আকাশে উড়িয়ে দেয়।
নিবির আলতো হাতে তার প্রয়সীকে জড়িয়ে ধরে বলে

” তুমি ছিলে আমার প্রথম প্রেম।আর আমার প্রথম প্রেমকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আফরা।”

ক্লান্ত হয়ে দিনশেষে ঘরে ফিরে যায় তারা।তাদের ঠাঁই মিলে একে অপরের মনে।দিনশেষে এটাই জীবনের মহত্ব।সব ভালোবাসার মানুষগুলো এক হোক।রঙিন হোক তাদের পথচলা।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here