প্রথম প্রেম ৩ পর্ব -০২+৩

#প্রথম_প্রেম_৩
পর্ব-০২ এবং ০৩
লেখিকা-#খেয়া

“প্রহর”

অস্ফূষ্ট স্বরে নামটি উচ্চারণ করতেই মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ল আফরা।নিবির দ্রুত দৌড়ে আফরার কাছে এলো।হঠাত এভাবে আফরার জ্ঞান হারানোর কারণ খুঁজে পেলো না নিবির।
আফরাকে নিয়ে বাসায় চলে এলো নিবির।

আফরাকে এমন অবস্থায় দেখে প্রচন্ড বিচলিত হয়ে উঠল নিবিরের মা।
নিবির অনেক চেষ্টার পর আফরার জ্ঞান ফেরাতে সক্ষম হলো।

কেউ কোনো প্রশ্ন করল না আফরাকে।আফরাকে রেস্ট নিতে বলে বাইরে চলে যায় সবাই।

বাইরে আসতেই নিবিরের মা নিবিরকে বলে

“আজ রাহার ফোন এসেছিল। আমি ধরিনি ফোনটা।তোর বাবার ভয়ে।জানিনা আমার মেয়েটা কোথায় আছে।কেমন আছে। ”

” তোমার মেয়ের ব্যাপারে আর কোনো কথা আমি শুনতে চায়না মা।যে চলে গেছে তাকে ভুলে যাওয়াটাই ভালো।”

কথাগুলো বলেই বেলকনিতে চলে যায় নিবির।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারে সেই পুরোনো স্মৃতিতে ডুব দেয়।

একটা সময় ছিল যখন নিবির আফরাতে মগ্ন ছিল।আর আফরা ডুবে ছিল অন্যকারো মায়ায়।তবে তা যে ছলনার মায়া ছিল তা আন্দাজ করতে পারেনি আফরা।একটা সময় থেকে ধীরে ধীরে আফরাকে ভালোলাগতে শুরু করে নিবিরে।কখন যে নিবির পুরোপুরি আফরাতে মগ্ব হয়ে যায় তা জানা নেই নিবিরের।সে শুধু এটাই জানে যে এই মেয়েটাকে তার দরকার। প্রচন্ড দরকার।

নিবির চায় না আফরার অতীতে যেই মানুষটা ছিলো সেই মানুষটা আবার আফরার লাইফে ফিরে আসুক।
তার জন্য যা করা দরকার সব করতে প্রস্তুত নিবির।আফরাকে তার একান্তই নিজের করে চায়।
আর নিবিরের এই কাজটা যে তার বোনই এত সহজে করে দিবে তা জানা ছিল না তার।তবুও আজ নিবিরের মনে কোথাও একটা রাগ থেকেই গেছে আফরার প্রতি।তাই তো এখনে পিরোপুরি আপন করে নিতে পারেনি সে আফরাকে।

” নিবির”

কারো ডাকে পিছনে ফিরে তাকায় নিবির।পেছনের নিবিরের বাবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হয় সে।নিবিরের বাবা কিছুকাজে দেশের বাইরে গিয়েছিলেন।হঠাত এভাবে সে ফিরে আসায় বেশ অবাক হয় নিবির।
নিবিরকে চুপ থাকতে দেখে নিবিরের বাবা বলে ওঠে

“কোনো প্রবলেম নিবির।তোমাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন।”

“না তেমন কোনো প্রবলেম নেই।তুমি হঠাতই ফিরে এলে যে।”

“হুম।কাজ শেষ হয়ে গেলো। চলে এলাম।”

“ওহ।চলো ভিতরে যায়। ”

___________

দুপুরবেলা একটা জরুরি ফোন পেয়ে নিবির দ্রুত হসপিটালে চলে আসে।

সে দ্রুত তার কেবিনে বসে কিছু রিপোর্ট চেক করতে থাকে।নিবিরের মুখে ক্রমেই বিষন্নতা চেয়ে যায়।
নিবিরের এখন কী করা উচিত তা সে বুঝতে পারছেনা।তবে এটা সে ভালো মতোই বুঝতে পারছে যে তার সাথে আফরার জীবনটা জড়িয়ে গেলে আফরা কখনো খুশি থাকতে পারবেনা।

নিবির দ্রুত হসপিটালের কাজ শেষ করে বাসায় চলে আসে।বাসায় এসে দেখে আফরা বিষন্ন মন নিয়ে চুপচাপ বসে আছে।নিবির ও গিয়ে চুপচাপ তার পাশে বসে। আর বললো

“এখনো তাকে খুব মনে পড়ে তাইনা।”

আফরা একপলক নিবিরের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলল

“যাদেরকে মনে রাখলে নিজে কষ্ট পাওয়ার চান্স থাকে, তাদের মনে না রাখাটাই উত্তম।
তবে জানেন তো কিছু মানুষকে মনে রাখা দরকার।তাদের কষ্টটা তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য হলেও তাদের মনে রাখা দরকার।”

” যদি কখনো তার কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাও। তাহলে কী করবে আফরা।”

এমন শীতলকন্ঠে নিবিরের বলা কথাটা শুনে বেশ অবাক হয় আফরা। কিছুটা বিষন্নতা নিয়ে বলে

” আমি কখনোই তার কাছে ফিরে যাবোনা।যেই মানুষটা সেদিন আমার মূল্য বোঝেনি সে আজও আমার মূল্য বুঝবেনা।”

আফরাকে আর কোনো প্রশ্ন না করে নিবির চুপ করে রইল।আফরা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারলো যে নিবির কোনো কারণে আপসেট।কিছুসময় নিরবতার পর নিবির আবারও আফরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

” সকালে তুমি এমন কাকে দেখেছিলে আফরা।”

মুহূর্তেয়য় চমকে উঠলো আফরা।মনে পড়ে গেলো প্রহরের মুখটা মনে পড়ল।কতটা ভালোবাসতো আফরা প্রহরকে।কিন্তু প্রথর তার ভালোবাসার মূল্য দেয়নি।ঠকিয়েছিল তাকে।

আফরাকে এমন ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে নিবির বলে

” এই যে চিন্তামণি এত না ভেবে ফ্রেশ হয়ে আসেন।আপনাকে নিয়ে আজ একটু বেড়োবো।আপনার মুডও ফ্রেশ হয়ে যাবে।”

বিন্দুমাত্র ও অবাক হয়না আফরা।কারণ ও জানে যে নিবির ক্ষণে ক্ষণে রং বদলাতে পারে।এখানে আর একমিনিট বসে থাকলে যে আফরা একটা রাম ধমক খাবে তা জানা আছে তার।তাই সে চুপচাপ উঠে ফ্রেশ হতে গেলো।

______________

নিবির আফরাকে নিয়ে একটা লেজের ধারে এলো।তবে এখানে এসে আফরার মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো।এই খানে যে প্রহরের সাথে অজস্র স্মৃতি জড়িয়ে আছে আফরার।তবুও সেসব ভুলে থাকার চেষ্টা করে সে।

আফরাকে এখনো চুপ থাকতে দেখে নিবির বলে

” চঞ্চল মেয়েগুলো হঠাত খুব বেশি শান্ত থাকলে ব্যাপারটা খুব ভয়ানক হয়।”

আফরা বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে নিবিরের দিকে তাকাতেই নিবির আবারও বলল

” না মানে বলা তো যায়না মনে মনে আবার কাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করছে।”

নিবিরের এমন কথায় বোকা বনে যায় আফরা।বুঝে উঠতে পারেনা তার এখন কী করা উচিত।কিন্তু মনে মনে আফরা প্রচন্ড রেগে যায়।রাগী দৃষ্টিতে নিবিরের দিকে তাকাতেই নিবির বলে

” আমি কিন্তু কোন পিচ্চির রাগকে ভয় পায়না।”

আফরার রাগ এবার সপ্তম আকাশে পৌঁছে যায়।চিতকার করে বলে ওঠে

” আমাকে আপনার পিচ্চি মনে হয়।”

” অবশ্যই।আমার থেকে পুরো নয় বছরের ছোট তুমি।আমার দুর্ভাগ্য যে আমার কপালে একটা বাচ্চা জুটেছে।”

“দু্র্ভাগ্য আপনার না আমার যে আমার কপালে একটা বুড়ো বর জুটেছে।”

” মানে ইনডিরেক্টলি তুমি আমাকে বুড়ো বললে।”

” না তো,,,আমি ডিরেক্টলি আপনাকে বুড়ো বললাম”

কথাগুলো বলে আনমনেই হেসে ওঠে আফরা।আফরার মুখের এ হাসি দেখে কিছুটা শান্তি পায় নিবির।তবুও সেই রিপোর্ট গুলোর চিন্তা রয়েই গেছে তার।

কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ওরা বাড়ি ফিরে এলো।

___________

অন্যদিকে

একটা দেয়ালের পুরোটা জুড়েই আফরার ছবি লাগানো।তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক সুদর্শন পুরুষ।তার হাত কেটে রক্ত ধরছে সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই।সে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আফরার ছবিগুলোর দিকে।আনমনে সে বলে বলে উঠল

” ডাক্তাররা তো পাষাণ হয়।তারা চোখের সামনে কত মানুষের মৃত্যু দেখে।তার তুমিও তোমার চোখের সামনে নিজের আপনজনদের মৃত্যুর মিছিল দেখবে।”
আমার থেকে আমার প্রয়সীকে কেড়ে নিয়েছে তুমি
তোমাকে তো আমি ভালো থাকতে দিবোনা।
দুরত্ব যখন তুমি তৈরি করেই দিয়েছো।তখন না হয় দূর থেকেই ভালোবাসবো আমার শুভ্রপরীকে।”

____________

ভোরের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় আফরার।আড়মোড়া ভেঙে উঠে নিবিরকে কোথাও দেখতে পায়না সে। ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায় সে।সেখানেও নিবিরকে দেখতে পায়না। কাউকে নিবিরের ব্যাপারে জিঙ্গেস করবে কী না সে নিয়ে সংশয়ে পড়ে যায়।
আফরার অবস্থা বুঝতে পেরে নিবিরের মা আফরাকে বলে

” একটা ইমার্জেন্সি আসায় নিবির সকালেই হসপিটালে চলে গেছে।এত ভয় পাওয়ার মতে কিছু হয়নি।”

আফরা খানিকটা লজ্জা পেয়ে যায়।আফরা রান্নাঘরে গিয়ে নিবিরের মায়ের কিছুকাজে সাহায্য করে নিবিরের বাবার জন্য চা নিয়ে আসে।

আফরা নিবিরের বাবার সামনে চা দিয়ে বলে

” আংকেল তোমার চা।”

আফরার কথায় নিবিরের বাবা ওর দিকে গম্ভীরভাবে তাকিয়ে বলল

” তোমার থেকে আমি এটা আশা করিনি।”

নিবিরের বাবার কথায় আফরার মুখটা একদম শুকিয়ে যায়।বিয়ের পর এবাড়ির সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে।তবুও কী কোথাও খামতি থেকে গেলো।
আফরাকে দেখে নিবিরের বাবা বলল

“এর পর থেকে আমাকে আংকেল না বাবা বলবে।”

ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হাসে আফরা।

দুজনে টুকটাক কথা বলছিল তখনই দরজায় বেল বাজলে আফরা দরজা খুলে দেয়।আফরার নামে একটা পার্সেল এসেছে।আফরা পার্সেলটা নিয়ে রুমে যায়।

আফরা কৌতুহল দমাতে না পেরে দ্রুত পার্সেলটা খুলে ফেললো।পার্সেলের ভেতরের কাগজটা দেখে আফরার পুরো দুনিয়া উল্টে গেলো।আফরার চোখগুলো ঝাপসা হয়ে গেলো।আফরার চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।অনমনেই বলে ওঠে

“ডিভোর্স পেপার।”

চলবে,,,,,,

( যারা পড়বেন তারা রেসপন্স করবেন প্লিজ। এবার রেসপন্সের ওপর গল্পের এন্ডিং নির্ভর করবে।)

#প্রথম_প্রেম_৩
পর্ব-০৩
লেখিকা-#খেয়া

কাঁপা কাঁপা হাতে ডিভোর্স পেপারস গুলো তুলে ধরল আফরা।নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা তার।নিবির যদি ডিভোর্সই চাইত সেটা তো সরাসরি আফরাকে বলে দিতে পারত।এভাবে কাগজটা পাঠানোর কারণ খুজে পেলো না আফরা।তারপর আবার সেখানে নিবিরের সাইনও আছে।

আফরা কাগজগুলো হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে ছিল তখনই রুমে আসে নিবির। রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে

” তৈরি হয়ে নাও,আফরা।তোমাকে কোচিংয়ে নামিয়ে দিয়ে আমি আবার হসপিটাল যাবো।”

আফরার কোনো রেসপন্স না পেয়ে নিবির আফরার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে

“আফরা।”

আফরা এবার মাথা তুলে তাকায়য় নিবিরের দিকে। কোনো কথা না বলে কাগজগুলো নিবিরের হাতে দিলো। নিবির কাগজগুলো দেখতেই চমকে উঠল।বিষ্ফোরিত নয়নে আফরার দিকে তাকালো সে।মেয়েটা কেঁদে কেঁদে একদম চোখমুখ লাল করে ফেলেছে।
নিবির কাগজ গুলো রেখে বলল

” বিলিভ নি আফরা।আমি এগুলো পাঠায়নি। আমি জানিনা এটা কে পাঠিয়েছে আর কেন পাঠিয়েছে।তবে একটা কথা মাথায় রেখো এত সহজে আমার থেকে মুক্তি পাবেনা তুমি”

আফরাকে এখনো নিরব থাকতে দেখে নিবির আবারও বলে

” এসব ফালতু চিন্তা মাথা থেকে বের করো আর জলদি তৈরি হয়ে নাও।লেট হচ্ছে।”

আফরা কোনো কথা না বলে চুপচাপ ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

নিবির আফরাকে কোচিংয়ের সামনে নামিয়ে দিয়ে হসপিটালে চলে গেলো।

____________

অন্যদিকে,

অন্ধকার ঘরে হাতে সিগারের নিয়ে বসে আছে একজন।সিগারেটটা ফেলে ফোন হাতে কাউকে ফোন করল সে

” আজকের মাঝেই কাজটা শেষ করা চাই আমার।”

কথাটা বলেই ফোনটা রেখে দিলো সে। মুখে তার রহস্যময়ী হাসি।সামনের দেয়ালে লাগানো আফরার ছবির দিকে তাকিয়ে বলল
” তুমি আমার না তো কারো না ”

___________

কোচিং শেষে বাইরে এসে দাড়িয়েছে আফরা।নিবিরের নিতে আসার কথা ছিল।কিন্তু অনেকসময় চলে যাওয়ার পরও। নিবির আসেনা।আফরা কয়েকবার ফোন করে নিবিরকে, কিন্তু রিসিভ হয়না । রাস্তাটা আফরার চেনা বলে সে সামনের দিকে এগোতে থাকে।

কিছুটা রাস্তা এগোনের পর আফরা নিবিরের গাড়ি দেখতে পায়।আফরা গাড়িতে উঠে আসার পর দেখে নিবিরের মাথায় ব্যান্ডেজ। উত্তেজিত হয়ে ওঠে সে।নিবিরের দিকে তাকাতেই নিবির বলে

” ছোট একটা এসিডেন্ট হয়েছে।তেমন চিন্তার কিছু নেই। ”

আফরা আরও বিচলিত হয়ে বলে

” আপনার একটু কেয়ারফুল হওয়া উচিতত ছিল।”

আফরার চোখগুলো ছলছল করছে।আফরার অবস্থা বুঝতে পারে নিবির।

” দেখো আফরা লাইফে এমন ছোট নড় অনেক সমস্যা আসবে দুর্ঘটনা ঘটবে।তাই বলে কী এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে।জীবনে যতসমস্যাই আসুক না কেন নিজের লক্ষ্য থেকে সরে যাওয়া যাবেনা।”

কথা ঘোরানোর জন্য নিবির আবারও বলে

“লিসেন আফরা,আজ থেকে তোমার স্নপ্ন পূরনের লড়াই শুরু হলো।প্রখম দিন থেকেই ভালোমতো মনোনিবেশ করবে এটাই।চারিদিকের জিনিসে মন কম দিবে।নিজের লক্ষ্যে অটল থাকবে।”

আফরা খুব মন দিয়ে নিবিরের কথাগুলো শুনলো কিন্তু কোনো প্রতিত্তর করলোনা।

বাসায় এসে থেকে আফরা নিবিরের সাথে একটাও কথা বলেনি।নিবিরও খানিকটা আন্দাজ করল ব্যাপারটা।আজকের এক্সিডেন্টটা যে শুধু একটা এক্সিডেন্ট ছিল না তা বেশ বুঝেছে নিবির। তবে সেই ডিভোর্স পেপারটা কে পাঠিয়েছিল এটাই মাথায় ঢুকছেনা তার।

দুপুরে নিবিরের খাবারটা রুমে নিয়ে আসে আফরা।নিবির খানিকটা বিরক্ত হলেও প্রকাশ করেনা।আফরার এই ছোট ছোট কেয়ারগুলো ভালো লাগে তার।
এই মানুষটাকেই তো সে সারাজীবন নিজের করে চেয়েছিল নিবির।তবুও যখন তারর মনে পড়ে আফরা অন্যকাউকে চেয়েছিল তখন না চাইতেও আফরাকে কষ্ট দিয়ে ফেলে সে।

দুপুরের খাবার খেয়ে রেস্ট নিচ্ছিল নিবির।অনেক্ষণ হলো আফরাকে দেখছে না।কোথায় গেলো মেয়েটা।
নিবির জানে আফরার মুড খারাপ।তাই নিবির আফরার মুড ঠিক করার জন্য কিছু করতে চাইল।নিবির বেশ কয়েকবার আফরাকে ডাকল।কিছুক্ষণ পর আফরা রুমে এলো।
নিবির আফরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

” টেবিলের ওপর একটা বই আছে নিয়ে আসো।”

আফরা খানিকটা অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে

” বই দিয়ে কী হবে।”

” বই দিয়ে ফুটবল খেলবো ইডিয়েট।”

আফরা আর কোনো কথা না বলে বই নিয়ে আসে।নিবির বই থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিক মার্ক করে আফরাকে পড়তে বসিয়ে দেয়।

__________

সন্ধ্যেবেলা নিবিরের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসে আফরা।নিবিরের বাবা মা আজ বাসায় নেই।অনেকক্ষন আগেই ছাঁদে গেছে নিবির।তাই আফরাও কফি নিয়ে ছাঁদে নিয়ে যায়।

নিবিরের হাতে কফি দিয়ে আর পাশে দাঁড়িয়ে যায় আফরা।সন্ধ্যবেলার শীতল বাতাসে আফরার মনটাও ভালো হয়ে যায়।নিবির কফির কাপে চুমুক দিয়ে আফরার দিকে তাকায়।গোধূলির লাল আলো পড়েছে আফরার মুখে।সামনের চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।মন্দ লাগছেনা দেখতে।ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করল নিবির।
আফরার উদ্দেশ্য বলল

” আফরা।দিনশেষে কী কাউকে মিস করো।”

আফরা মুচকি হেসে জবাব দিল

” হুম।দিনশেষে পুরোনো আমি টাকে খুব মিস করি। আবারো অনুভব করতে চাই আমার আমিটাকে।”

” সেই পুরোনো তুমিতে তো অন্যকেউ মিশে আছে, তাইনা।”

মুহূর্তেই আফরার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো।নিবির আবারও প্রশ্ন করল

” এখনো বুঝি খুব ভালোবাসো তাকে।”

আফরা নিবিরের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নিবিরকেই প্রশ্ন করে

” ভালেবাসতেন আমাকে? ”

আফরার প্রশ্নে অবাক হয় নিবির।তবুও বলে

” তোমার মতো একটা থার্ডক্লাস মেয়েকে আমি ভালোবাসবে ভাবলে কী করে।”

কথাগুলো বলেই চলে গেলো নিবি।আফরা আনমনে হেসে উঠল আর বলল ” ভালোবাসবে অথচ প্রকাশ করবেনা।”

_____________

রাতের বেলা একটা ইমার্জেন্সি আসায় হসপিটালে চলে যায় নিবির।আফরা অনেকবার মানা করলেও নিবির শোনে না।আফরা এখন বাসায় একা।পড়াতেও মন বসছে না বলে,আফরা আলমারির কাপড় গোছাতে শুরু করে।হঠাতই আফরার হাত লেগে কিছু কাগজ পড়ে যায়। আফরা কাজগগুলো তুলে দেখে কিছু হসপিটালের কাগজ।আর রিপোর্ট গুলো নিবিরের নামে।বেশ অবাক হয় আফরা।রিপোর্টগুলে দেখে কিছু বোঝেনা আফরা।
সে এগুলো নিয়ে অনলাইনে সার্চ দেয় তারপরেও তেমন কিছু বোঝেনা।আফরা রিপোর্ট গুলোর কিছু ছবি তুলে রাখে।

তারপর রিপোর্ট গুলো আগের মতো রেখে দেয়।আফরা বেশ চিন্তিত রিপোর্ট গুলো নিয়ে।কী হয়েছে নিবিরের।আর রিপোর্টগুলে নিবির লুকিয়েই রেখেছিল কেন।

____________

অন্যদিকে ,

অন্ধকার রুমে চারিদিকে অসংখ্য কাচের টুকরো পরে আছে।ওখানে বসে থাকা লোকটার হাত কেটে রক্ত পড়ছে।প্রচন্ড রেগে আছে সে।সামনে থাকা লোকগুলোর উদ্দেশ্য চিতকার করে বলল

” একটা কাজও হয়না তোমাদের দারা।আজকের মাঝে যেভাবেই তোক ঔ নিবিরের লাশ আমার চাই।যে কোনো ভাবে। আমার থেকে আমার ভালেবাসাকে কেড়ে নিছে সে।তার থেকে তার প্রাণটাই কেড়ে নিবো আমি।”

___________

রাত প্রায় ১২ টা বাজে এখনো নিবিরের আসার নাম নেই।কখনো এত দেরি হলে নিবির বাসায় ফোন করে দেয়।কিন্তু আজ সে ফোন ও করেনি। আফরা বেশ কয়েকবার ফোন করেছিল নিবিরকে।নিবিরের ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।
আফরার কেন জানি খুব টেনশন হচ্ছে।সকালের এমন একটা এক্সিডেন্ট আর এখনো নিবিরের বাড়ি না আসা নিয়ে খুব ভয়ে আছে সে।

আফরা নিবিরের হাসপাতালেও ফোন করে।সেখান থেকে বলে নিবির নাকি অনেকক্ষণ আগেই। হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে গেছে। আফরার ভয় আরো কয়েকগুন বেড়ে যায়।টেনশনে মুখ চোখ শুকিয়ে গেছে মেয়েটার।কী করবে কিছু বুঝতে পারছেনা সে।

আফরা নিবিরের একটা বন্ধুকে ফোন দিয়ে নিবিরের কথা জানতে চায়।কিন্তু সে বলে নিবির নাকি বাসায় যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছিলো।

আফরার টেনশন যেন দ্বিগুন হারে বেশি হয়ে যায়।হঠাতই আফরার ফোন বেজে উঠল।আফরা যা শুনল তাতে তার পুরো পৃথিবী উল্টে গেলো।ফোনের ওপরপাশের লোকের বাকি কথাগুলো আর আফরার কানে ঢুকল না।তার আগেই,,,,,,

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here