প্রথম প্রেম ৩ পর্ব -০১

আমি কখনোই তোমাকে নিজের ওয়াইফ হিসেবে মানতে পারবোনা আফরা।তোমার মতো থার্ডক্লাস একটা মেয়ে আমার ওয়াইফ ভাবতেই বিরক্ত লাগে আমার।

আপনি এভাবে কথাটা বলতে পারলেন ।হয়ত আপনার মতো সোনার চামচ মুৃখে নিয়ে জন্মায়নি তাই বলে আমাকে এভাবে অপমান করার অধিকারও কিন্তু আপনাকে দেয়নি। সো নেক্সটটাইম থেকে কিছু বললে ভেবেচিন্তে বলবেন।

জাস্ট সাট আপ ডাফার। একে তো উড়ে এসে জুড়ে বসেছে আবার বড় বড় কথা।

কথাগুলো বলেই পাশে থাকা টেবিলে জোরে একটা লাথি মেরে বেরিয়ে যায় নিবির। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে আফরা। রোজ রোজ এত অশান্তি আর তার ভালোলাগেনা।
আফরা ছিল নিবিরের বাবার বন্ধুর মেয়ে।আফরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হলেও নিবিরের বাড়ির লোকেরা কখনো তাকে সে নজরে দেখেনি।পরিবারের চাপে নিবির আফরাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিল।তবে নিবির যে আফরাকে কখনো মেনে নিবে না এটা আফরা ভালোমতোই জানে।কারণ নিবিরের জীবনে যে অন্যকেউ আছে।

আফরা আর কান্নাকাটি না করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

___________

আফরা সরাসরি রান্নাঘরে চলে যায়।ওখানের নিবিরের মা রান্না করছিলেন।আফরাকে দেখে উনি বললেন

” নিবির আবার কিছু বলেছে তাইনা।আমার ছেলের ব্যবহারে আমারই লজ্জা লাগে আজকাল।মন খারাপ করোনা আফরা।একটু সময় দাও সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আফরা চুপচাপ কথা গুলো শোনে।কোনো প্রতিত্তর করে না।নিবিরের মায়ের কিছু কাজে সাহায্য করে রুমে ফিরে আসে সে।দুপুর হয়ে যাওয়ায় গোসলে চলে যায় সে।

কিছুক্ষণ পর নিবির রুমপ আসে।রুমে এসেই সে কিছু একটা খুঁজতে লাগে।হঠাতই তার চোখ পরে তার সামনে দাড়িয়ে থাকা আফরার দিকে।মেয়েটাকে প্রচন্ড মায়াবী লাগছিল।চোখর পাপড়িতে বিন্দু বিন্দু পানি জমে ছিল।চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছিল।একদম স্নিগ্ধ লাগছিল আফরাকে।এই মেয়েটা যে এতটা রুপবতী তা জানা ছিল না নিবিরের।
নিবিরকে পাশ কাটিয়ে আফরা বাইরে চলে গেলেও নিবির এখনো একটা ঘোরের মাঝেই আছে।আফরা বাইরে থেকে এসে নিবিরকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বপশ অবাক হয়।অনেকবার নিবিরকে ডাকলেও নিবির সাড়া দেয় না।আফরা নিবিরের দিকে একটু এগিয়ে গেলেই আফরার চুলের কিছু পানি নিবিরের গাঁয়ে পড়তেই নিবির বলে উঠে

“এই মেয়ে এখানে কী তোমার।যদি ভেবে থাকো যে তোমার এই রুপ দিয়ে আমাকে বশ করবে তাহলে ভুল ভাবছ।”

কথাগুলো বলে আবারও রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো নিবির।সবকিছুই যেন আফরার মাথার ওপর দিয়ে গেলো।আফরা বুঝে উঠতে পারেনা এই লোকটা এত অদ্ভুত কেন।

অজান্তেই হেসে ওঠে উঠে আফরা।এই রহস্যময় মানুষটার সাথে সারাজীবন কাটাতে হবে ভেবেই হেসে উঠে।

___________

বিকেলে চুপচাপ বসে বসে হূমায়ন আহমেদের “নবনী”বইটা পড়ছিল আফরা।নিবির বসে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিল। নিবির একজন ডক্টর।
কাজ করতে করতে আঁড় চোখে তাকাচ্ছিলো নিবির আফরার দিকে।
একটু সিরিয়াস ভাবে নিবির বলল

“বিয়ে হয়ে গেছে বলে কী আপনার পড়াশোনা লাটে উঠেছে মিস আফরা।”

আফরা কিছুক্ষণ নিবিরের দিকে তাকিয়ে বলল

“এক্সকিউস মি মি. ওটা মিস না মিসেস আফরা হবে।আপনি আমায় বউ হিসেবে মানেন আর না মানেন।দুনিয়া কিন্তু মানে।”

নিবির এবার ভ্রু কুঁচকে আফরার দিকে তাকিয়ে বলল

“ফালতু কথা তো খুব বলতে পারো।কাজের কথা বলতে পারোনা।আমার জানা মতে তোমার মেডিকেলে পড়ার শখ ছিল।তো এখন এডমিশনের প্রিপারেশন না নিয়ে সংসার করায় মন দিচ্ছো নাকি।”

এবার আফরা কিছুটা চুপ হয়ে গেলো।মেডিকেলে পড়ার শখটা বরাবরই ছিল আফরার।তবে বিয়ের পর এ বাড়িতে আসার পর কাউকে এ ব্যাপারে বলে উঠার সাহস পায়নি সে।
আফরার মৌনতার কারণ কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারে নিবির।সে বলে

“কাল তোমকে একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দিবো।আর এখন সংসার ছেড়ে পড়াশোনায় মন দিবে।তোমাকে নিজের একটা ভালো পজিশন পেতে হবে।মাথায় রেখো কথাটা।”

“হুম।যেন আপনাকে একটা থার্ড ক্লাস মেয়েকে নিজের ওয়াইফ বলে পরিচয় না দিতে হয়।”

“তোমার কী মনে হয়না আফরা তুমি একটু বেশি বোঝো সবকিছু।”

আফরা আর কোনো কথা না বলে আবারও বই পড়ায় মন দেয়।নিবিরের এই ছোট ছোট কেয়ারগুলো খুব ভালো লাগে আফরার।

_____________

অনেক রাত হয়ে গেলেও আসার নাম নেই নিবিরের।আফরা সেই কখন থেকে নিবিরের জন্য অপেক্ষা করছে।দেরি হলে একবার ফোন করে বলে দিতে তো পারে যে আজ লেট হবে।এই লোকটা যে এত কেয়ারলেস কেন তা জানা নেই আফরার।

আফরার মনে খুব অদ্ভুত একটা খেয়াল এলো।কিছুদিন আগে নিবিরের হাতে একটা ডাইরি দেখেছিল।ভুলবশত নিবিরের হাত থেকে ডাইরির ভিতর থেকে একটা ছবি পরে গিয়েছিল।আফরা ছবিটা দেখতে চাইলে নিবির প্রচন্ড রেগে যায়।

আফরার মনে সেই ছবিটা দেখার কৌতুহল যেন যায় না।আফরা আজ ঠিকই করে নেয় সে ডাইরি খুলে সেই ছবিটা দেখবেই।

কথা মতো কাজের জন্য আফরা নিবিরের টেবিল থেকে ডাইরিটা নিয়ে আসে।খুব সাবধানে ডাইরিটা খোলে আফরা।কিন্তু ডাইরিতে যা দেখে তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না আফরা।ছবিটা দেখা মাত্র আফরার বুকের ধুকপানি কয়েকগুন বেড়ে যায়।আফরা যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।আফরা কাঁপা কা্পা হাতে ছবিটা তুলে ধরল।তখনই নিবিরের গাড়ির আওয়াজ পেয়ে আফরা দ্রুত ডাইরিটা আবার আগের মতো করে রেখে।দরজা খুলে দিতে গেলো।

” এতরাতে আফরাকে জেগে থাকতে দেখে বিন্দুমাত্রও অবাক হলোনা নিবির।মেয়েটা যে কেমন তা এই কয়দিনে বেশ ভালোই বুঝে গেছে।”
নিবির আফরার দিকে তাকিয়ে বলল

“খাবার তো খাওনি অবশ্যই।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তুমি খাবার রেডি কর।”

কথাগুলো বলেই রুমে চলে গেলো নিবির।আফরাও চুপচাপ খাবার গরম করতে গেলো আফরা।

খাবার টেবিলে চুপচাপ খাচ্ছিল দুজন।তখনই নিবির আফরাকে বলে

“এখনো কী মনে পড়ে তাকে।”

খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় আফরার।অবাক নয়নে নিবিরের দিকে তাকিয়ে বলে

” আমাদের জীবনে কিছু মানুষ থাকে।যাদের কখনে ভোলা যায়না।কিন্তু তাদের মনে করাটাও উচিত না।
আর কখনে এ ব্যাপারে প্রশ্ন না করলে খুশি থাকবো।”

কথাগুলো বলে খাওয়া ছেড়ে উঠে যায় আফরা।নিবিরও চুপচাপ বসে থাকে।তার মুখে অসহায়ত্বের চাপ।কিছুটা অপরাধবোধও কাজ করছে নিবিরের মাঝে।

__________

সকাল সকাল আফরাকে তৈরি হতে বলে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায় নিবির।নিবির আজ আফরাকে কোচিং সেন্টারে ভর্তি করাবে বলে ঠিক করেছে।

অনেকক্ষণ করে আফরা তৈরি হয়ে বসে আছে।কিন্তগ নিবিরের আসার নামই নেই।আফরার প্রচন্ড বিরক্ত লাগছিল।আফরা নিবিরের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে

” আচ্ছা মামনি বলো তো তোমাদের মতো এত ভালোমানুষদের পরিবারে এমন একটা রাক্ষস জন্মালো কেমন করে।আচ্ছা তোমার ছেলে হওয়ার আগে তুমি কী রাক্ষসের গল্প খুব পড়তে,,,,

কথাগুলো বলতে গিয়েও থেমে যায় আফরা।নিবিরের মা মিটিমিটি হাসছে দেখে খটকা লাগে আফরার।আফরা পিছনে তাকিয়ে দেখে নিবির দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আফরা নিবিরকে দেখা মাত্রই লাফিয়ে ওঠে।ওকে যে এখন কেউ বাঁচাতে পারবেনা তা ভালোমতোই বুঝেছে।

নিবির রাগী চোখে আফরার দিকেকে তাকিয়ে বলে

“লেট হচ্ছে,বাইরে আসো, কুইক।”

,,,,,

আফরা ভয়ে ভয়ে বাইরে এসে দেখে নিবির গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।আফরা চুপচাপ গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে নখ কামড়াচ্ছিল।

নিবির কথা শেষ করে আফরার দিকে তাকিয়ে বলে

” নখ কামড়াচ্ছো কেন ডাফার।বাচ্চারাও এত নখ কামড়ায় না।
তাকিয়ে না থেকে গাড়িতে ওঠো।”

আফরা ভয়ে ভয়ে গাড়িতে উঠে বসে।নিবির ও গাড়িতে উঠে বসে। তারপর আফরাকে উদ্দেশ্য করে বলে

” তুমি যদি ভেবে থাকো আমি রোমান্টিক ভাবে তোমার সিটবেল্ট বেধে দিবো তাহলে ভুল ভাবছে।জলদি সিটবেল্টটা বেঁধে নেও।”

আফরা রাগী দৃষ্টিতে নিবিরের দিকে তাকিয়ে সিটবেল্ট বেঁধে নিলো।

বেশকিছু সময় পর তারা কোচিং সেন্টারে এসে উপস্থিত হলো।ভর্তির সবকিছু ঠিকঠাক করে বাইরে আসে তারা।

রাস্তার কাছাকাছি আসতেই আফরা জেদ ধরে আইসক্রিম খাবে।আফরার এমন আবদারে সরাসরি না করে দেয় নিবির।
আফরা আবার ও বলে

“দেখুন আপনার কাছ থেকে কিন্তু এই ফাস্ট একটা জিনিস চাইলাম।তাও দিলেন না।”

নিবির প্রচন্ড বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে বলল

“সব সময় এত জেদ ভালোনা আফরা।চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসো।এখন আইসক্রিম খেলে ঠান্ডা লাগবে।”

আফরা চুপচাপ গাড়ির দিকে অগ্রসর হলে সামনে এমন একজনকে দেখে যাতে তার পুরো দুনিয়া থমকে যায়।তবে কী সেই অতীত এখনো তার পিছু ছাড়েনি।

চলবে

#প্রথম_প্রেম_৩
পর্ব-০১
লেখিকা-#খেয়া

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here