প্রিয়দর্শিনী পর্ব ৪+৫

#প্রিয়দর্শনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা

পর্ব-০৪

সারা রাস্তা হেটে হেটে বাড়ির দিকে যাচ্ছি। কিন্তু বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না। আর যে সহ্য হচ্ছে না আমার।যেই দুটো মানুষকে নিজের পরিবারের পর এতো প্রায়োরিটি দিয়েছিলাম, এতো ভালোবেসেছিলাম, বিশ্বাস করেছিলাম তারাই কিনা আজ এতো বড় আঘাত দিল!

কিছুক্ষণ আগে,,,

তরুনিমা মনের সকল সংশয় দূর করা জন্য নিজের বেস্টফ্রেন্ডের বাসার কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলেই সোজা তার বেস্ট ফ্রেন্ড করতে খোঁজ করতে শুরু করে। তরুনিমার এমন অস্থিরতায় সেই বাসার সবাই খানিকটা অবাক হয়। তবুও সে সোজা তার বেস্টফ্রেন্ডের ঘরে গিয়ে দেখে নিজের বেস্টিকে দেখে কারো সাথে হেসে হেসে ফোনে কথা বলছে। সে ওর মুখের সামনে কার্ডটা তুলে ধরতেই সে তরুনিমার দিকে তাকিয়ে ফোনটা কেটে রেখে দিয়ে খুবই শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে-

: তুই এখানে কি করছিস তরু? আর তোর হাতে কি হয়েছে? (তরুনিমার হাতে রক্ত দেখে) আয় বস, আমি ড্রেসিং করে দিচ্ছি।

: যার সাথে তোর বিয়ে হচ্ছে সেই নুহাশই কি আমার নুহাশ? সৃষ্টি আজকে অন্তত চুপ থাকিস না।

সৃষ্টি তরুনিমার বেস্টফ্রেন্ড। বলতে গেলে তরুনিমার জান একপ্রকার এই সৃষ্টি। সৃষ্টি আর তরুনিমার সম্পর্ক সেই স্কুল জীবন থেকে। স্কুল কলেজ ভার্সিটি সব ক্ষেত্রে তারা একসাথে ছিল। সৃষ্টি তরুনিমার ড্রেসিং শেষ করে দিয়ে খুবই স্বাভাবিক কন্ঠে বলল-

: তুই কার্ডে যা দেখেছিস তা সম্পূর্ণ ঠিক। আর একটা কথা তুই যাকে নিজের নুহাশ বলছিস! সে কখনোই তোর নুহাশ ছিল না। সে সবসময় আমারই ছিল। তোকে বলবো করেও বলতে পারি নি। নুহাশ আর আমার সম্পর্ক সেই কলেজে জীবন থেকে। মাঝে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় আমরা আলাদা হতে বাধ্য হই। পরে যখন তুই একসময় আমাকে ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলি তখন তোর সাথে ওকে দেখে আমি সহ্য করতে পারি না। তাই ওকে নিজের লাইফে ফিরিয়ে আনার জন্যও আপ্রাণ চেষ্টা করে। তারপর সেও একসময় ফিরতে বাধ্য হয়। নিজেরা সময় নেই। আর তোর সাথে নুহাশের সম্পর্ক তখনও ঠিকভাবে চলতে দেই। পরে ডিসাইড করে যে এইবার এক হবার দরকার আমাদের, তাই নুহাশকে আমি তোকে জানাতে যে ও তোকে বিয়ে করতে পারবে না।

: কত বছর ধরে এই মিথ্যে অভিনয় চলছিল?

: প্রায় দুইবছর।

তরুনিমা আর কিছুই বলার ভাষা পেল না। সে বেড থেকে উঠে সৃষ্টির ঘর থেকে বরিয়ে চলে আসতেই সৃষ্টি ওকে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বলল-

: যাওয়ার আগে একটা কথাই বলবো, আমার আর নুহাশের মাঝে তুই না আসলে খুশি হবো। প্লিজ কোনো ঝামেলা তৈরি করিস। পারলে দোয়া করিস।

তরুনিমা সৃষ্টির দিকে না ফিরেই বলল-

: চিন্তা করিস না সৃষ্টি, আমি তোদের মাঝে আসবো না। আর দোয়া করি তোরা যেন ভালো থাকিস।

কথাটা শেষ করে হাতে উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের জলগুলো মুছে তরুনিমা হনহনিয়ে সৃষ্টিদের বাসা থেকে বেরিয়ে চলে এলো।

বর্তমানে,,,,

মাথা পুরো জ্যাম হয়ে গেছে। কোনো কিছু কাজ করছে না, সব যেন এলোমেলো হয়ে রয়েছে আমার। কেন এমন হলো আল্লাহ আমার সাথে…! আমি কি বেশি চেয়ে ফেলেছিলাম কিছু..?! তবে এতোটুকু ঠিকই বুঝতে পেরেছি, “নিজের থেকে অতিরিক্ত কাউকে প্রায়োরিটি বা ভালোবাসতে অথবা বিশ্বাস করতে নেই। যদি সেটা করি তাহলে হয়তো নিজের কাছে নিজেরই হাসির পাত্র হয়ে যেতে হবে।”

——————————————-

হসপিটালের বেডে সেন্সলেস অবস্থায় শুয়ে আছে তরুনিমা। একটটু আগে অন্যমনা হয়ে হাটতে হাটতে তার পিছনে যে কখন একটা প্রাইভেট এসে পরেছে সে খেয়ালই করেনি। আর সেই প্রাইভেট কারের সাথে প্রায় মোটামুটি রকমের ধাক্কা খেয়ে এখন হসপিটালের বেডে সেন্সলেস ভাবে পরে আছে। আস্তে আস্তে জ্ঞান ফিরলে তরুনিমা নিজেকে হসপিটালে আবিস্কার করে। চারিদিকে তাকিয়ে একজন নার্সকে তার পাশে পায়। নার্স সম্ভবত তরুনিমার জ্ঞান ফিরার জন্য অপেক্ষা করছিল। সে দৌড়ে ডাক্তারকে ডাকতে গেল। ডাক্তার এসে তরুনিমা চেক আপ করে সুস্থ দেখে অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। কিন্তু সবার মনে এতোটা চিন্তা ওকে নিয়ে সেইটা তরুনিমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। ডাক্তার তরুনিমার সামনেই একজনকে ফোন দিয়ে বলল-

: আসসালামু আলাইকুম স্যার। ইউর পেসেন্ট ইজ অলরাইট। ডোন্ট ওরি স্যার, উই উইল টেক কেয়ার হার ভেরি পারফেক্টরি।

তরুনিমা কিছুই বুঝতে না পেরে হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে যে প্রায় নয়টা বাজতে চলেছে। সে একটু ঘাবড়ে যায়। কারন এতোক্ষণে বাসার সবাই নিশ্চয়ই অনেক টেনশন করছে। আর ওরা যদি জানে যে তরুনিমা হসপিটালে ভর্তি তাহলে কবির হাসনাত অনেক চিন্তায় পরে যাবেন। তরুনিমা পরিস্থিতি দেখে যা বুঝলো ওকে সকালের আগে ডিসচার্জ করবে না। কিন্তু ওকে যে এক্ষুণি বাসায় যেতে হবে। তরুনিমা ডাক্তারদের কোনোমতে ম্যানেজ করে সেখান থেকে ডিসচার্জ নিয়ে বেরিয়ে যায়।

বাসার দরজায় তিন থেকে চারবার বেল বাজানোর পর কবির হাসনাত দরজা খুলে তরুনিমার বডিতে ব্যান্ডেজ দেখে ঘাবড়ে যান। তিনি মেয়েকে ধরে নিয়ে ড্রয়িং রুমে এনে বসিয়ে তরুনিমার পাশে নিজেও বসে অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করেন-

: কি হয়েছে মা তোমার? তোমার এমন অবস্থা কি করে হলো? তুমি ঠিক আছো তো?

তরুনিমা কোনো কিছু না বলে ওর বাবাকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। মেয়ের হঠাৎ অদ্ভুত আচরনে কবির হাসনাত বুঝতে পারেন যে নিশ্চয়ই সাংঘাতিক কিছু একটা হয়েছে। তবে তিনি মেয়েকে আপাতত কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না। বরন তরুনিমাকে সোজা নিজের রুমে রেখে আসেন। অতঃপর রাত প্রায় বারোটা বাজে কবির হাসনাত মেয়ের রুমে একটা প্লেটে করে খাবার নিয়ে গিয়ে দেখেন তরুনিমা চুপচাপ গুটিসুটি দিয়ে শুয়ে আছে। তিনি মেয়ের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতেই তরুনিমা নিজের বাবাকে খাবারের প্লেট হাতে আবিষ্কার করলে কবির হাসনাত বলেন-

: উঠো খেয়ে নাও, তরু। আমি জানি গত চারদিন ধরে তোমার মন বিষন্ন হয়ে আছে। নিজের কষ্টগুলোকে সবার আড়াল করতে চাইলেও বাবা-মায়ের কাছ থেকে কখনোই আড়াল করা যায় না। আমি তোমাকে এসব বিষয়ে কিছুই জিজ্ঞেস করবো না কারন তুমি তো আমার মেয়ে, তুমি বলবে না। সম্ভব হলে কথা ঘুরানো চেষ্টা করবে। কিন্তু এখন তুমি উঠে খাবে। যেহেতু তুমি ইনজুর্ড।

তরুনিমা কোনো কথা না বলে কবির হাসনাতের দিকে বেশ অনেকক্ষণ যাবত তাকিয়ে থেকে আস্তে করে উঠে বসে। কবির হাসনাত মেয়েকে নিজের ভাত মেখে নলা তুলা খাইয়ে দেন। তরুনিমা কয়েক নলা খেয়ে তারপর নিজেও তার বাবাকে খাইয়ে দেয়। কারন সে জানে তার বাবা এখনো খায় নি। খাওয়া শেষ হ
য়ে গেলে তিপি মেয়ে শুইয়ে চলে আসতে নিলে তরুনিমা কবির হাসনাতকে থামিয়ে দিয়ে বলল-

: বাবা, এই পৃথিবীর সবাই এতো স্বার্থপর কেন হয়? যাদেরকে বিশ্বাস করি তারাই ঠকিয়ে চলে যায়। যাদের আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই তারাই এইভাবে হারিয়ে যায় কেন? কেন, বাবা…!? কেন?

তরুনিমা কথাগুলো মনে মনেই বলে। কবির হাসনাত মেয়েকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলে তরুনিমা একটা মলিন হাসি দিলে উনি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যান। তরুনিমা নীরবে চোখের জল ফেলে। নুহাশের করা কাজটার চেয়েও সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিচ্ছে ওর সৃষ্টির করা কাজটার জন্য। যদিও তরুনিমা সবকিছু আজকে ভুলে যেতে তাও কি সে পারবে সব পারবে সব ভুলতে? তরুনিমা থেমে থাকার মেয়ে নয় সে হয়তো সামনে এগিয়ে যাবে। তবুও আগের মতো হয়তো আর থাকতে পারবে না, হয়তো থাকবে। হয়তো বা সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পাল্টে ফেলবে। নিজের সামনে এমন একটা দেয়াল তৈরি করবে যাতে তাকে আর কেউ শত আঘাত করলে সে তার কোনো অনুভূতি থাকবে না।
#প্রিয়দর্শিনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা

পর্ব-০৫

কফির মগে চুমুক দিতে দিতে ভোরের প্রকৃতি দেখছে তরুনিমা।সিলেটের পাহাড়গুলোর মাঝে কিছু একটা আছে যা ওকে সবসময় আকৃষ্ট করে।সময় কতো তাড়াতাড়ি ছোটে তা বলা যায় না। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, “সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।” সময় তার গতিতে সবসময় চলতে থাকে। আর সেই সাথে চলতে হয় আমাদের সবার। আজ এক বছর হয়ে গেছে সেই ঘটনার। সবকিছুকে কবর দিয়ে মাটি চাপা দেয়া হয়ে গেছে। আজ আগের তরুনিমার সাথে আর আজকের তরুনিমার আকাশ পাতাল পার্থক্য। আজকের এই তরুনিমা কাউকে নিজের থেকে বেশি কাউকে প্রধান্য দেয় না, না প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কাউকে বিশ্বাস করে। ছয় মাস আগে সিলেট- এ একটা চাকরি পায় সে। তাই এখানেই শিফট হয়ে যায় সে। যদিও এখানে তরুনিমার খালামনি আর মিনহাজ থাকে দেখে কবির হাসনাত এখানে চাকরি করার পারমিশন দিয়েছেন। সেদিন কিছুটা হলেও শান্তি পেয়েছিল সে, কারন একসময় তরুনিমার জন্য যেই শহরটা সবথেকে বেশি প্রিয় ছিল, সেই শহরেই অক্সিজেনই আজকে ওর জন্য এক বিষাক্ত অক্সিজেনে পরিণত হয়ে উঠেছিল। নিজের জন্য না হলেও নিজের পরিবারের জন্য বেঁচে থাকাটা খুব জরুরি ছিল ওর জন্য। কিন্তু কথায় আছে, “আঘাত যতোটা পুরোনো হবে সেই আঘাতের যন্ত্রণাটাও ততোটাই তীব্র হবে।” দিনশেষে আজও সেগুলো মনে পরলে এক অজানা অস্থিরতা অনুভব করে সে। সে তখন নিঃশ্বাস নিতে পারে না। দম বন্ধ হয়ে আসে। তবুও আজকে আর গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পরে। সেদিনের পর থেকে আর কোনো দিন তরুনিমাকে এতোটা পাথর হতে কেউ দেখেনি।যে মেয়ে অল্প কিছুতেই ফিক করে হেসে দিত সে আজ মজার মজার কথায়ও এক গাম্ভীর্য এনে রেখেছে। যার বন্ধুমহলে কখনো বন্ধুদের অভাব হতো না, সবাই যাকে মিশুক আজ সবকিছু যেন শূন্য হয়ে গেছে। নিজেকে সবকিছু থেকে আড়াল করে রাখে সে। যাকে একসময় বেশি কথা বলার জন্য বাচাল উপাধিতে ভূষিত করা হতো সে আজ প্রয়োজনের বেশি তাকে কথা বলতে দেখা যায় না। আস্তে আস্তে সূয্যি মামা মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দেয়া শুরু করেছে। বাকি কফিটা শেষ করে সে রেডি হয়ে নিজের কর্মক্ষেত্রে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়।

ব্রেকফাস্ট টেবিলে মিনহাজ এবং মেহু (মিনহাজের স্ত্রী) সহ সবাই বসে খাচ্ছে। একটু পর তরুনিমা সেখান থেকে যেতে নিলেই তরুনিমার খালামনি ওকে আটকে দিয়ে বলল-

: তরু…! আজও কি না খেয়ে যাবি?

: কে বলেছে..? আমি খেয়েছি তো। নিশি ভাবি আমার রুমে খাবার দিয়ে এসেছিল।

মেহু আর তরুনিমার মাঝে ননদ ভাবির সম্পর্কটা বেশ খুনসুটির। মেহু একজন নিউট্রিশানিস্ট। মেহু সবসময় পরিবার সহ সবার কিন্তু সবচেয়ে বেশি তরুনিমার অনেক খেয়াল রাখার চেষ্টা করে। বিশেষ করে খাওয়া আর ঘুম এই দুটোর। মেহুর মাঝে মাঝেই মনে হয় এমন কোনো কিছু আছে যেইটার জন্য তরুনিমা রাত্রে ঘুমাতে পারে না। আর সেটা ও অনেকবার লক্ষ্য করেছে। কিন্তু সেটা তরুনিমাকেও বুঝতে দেয় নি।

: জ্বি আম্মু। খাবার তো আমি ঠিকই দিয়ে এসেছিলাম তবে তরু সেই খাবার খেয়েছিল কিনা তা একবার জিজ্ঞেস করে দেখো?

মেহু কড়া গলায় তরুনিমার খালাকে তরুনিমাকে জিজ্ঞেস করতে বলে। তরুনিমা স্নিগ্ধ মাখা হাসি দিয়ে আদুরে কন্ঠে বলল-

: হ্যাঁ গো আমার সুইট ভাবি খেয়েছি। নাহলে তুমি মনে হয় আমাকে অফিসে যেতে দিতে?

তরুনিমা কথাটা শেষ করে চলে যেতে নিলেই মেহু ওকে বলল-

: তরু আজকে একটু তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করো। তোমার জন্য একটা ছোট্ট সারপ্রাইজ আছে।

মিনহাজ মেহুর দিকে তাকাতেই মেহু মিনহাজকে কোনো পাত্তাই দিল না। তরুনিমা চলে যাওয়ার পর মিনহাজ মেহুকে ইশারায় জিজ্ঞেস করে-

: ব্যাপার কি…? কিসের সারপ্রাইজের কথা বলছো তুমি? তোমার মাথায় কি কিছু চলছে?

মেহু বিরক্তিমাখা কন্ঠে বলল-

: তুমি আমার চেয়ে বড় ভুলাক্কার। গতকাল রাত্রে বলছিলাম এখনই ভুলে খেয়ে ফেলছো…! সারপ্রাইজ আসলে দেখে নিও। আম্মু চলো আমরা যাই এখান থেকে।

: আসলেই রে মিনহাজ তুই পারিসও।

মেহু আর খালামনি দুজনই চলে যায়। আর মিনহাজ তো মুখে চামচ দিয়ে বোকার মতো বসে বসে ভাবতে থাকে।

———————————————–

অফিসের কাজ শেষ করে বেরিয়ে আসতেই মাহিম ভাইয়া পিছন থেকে ডাক দেন। মাহিম ভাইয়া আমার সিনিয়র কলিগ। একসাথেই কাজ করি। অফিস ছুটি হলে যেদিন থেকে উনার সাথে পরিচয় হয়েছে সেদিন থেকেই উনি আমাকে রোজ এইভাবে পিছু ডাকেন। কোনো জরুরী কথার জন্য না দুটো প্রশ্ন করবেন, “কেমন আছেন, তরু? বাসায় গিয়ে কি করবেন?” এই দুটো প্রশ্ন ছাড়া উনার মুখে আজ পর্যন্ত আর কিছুই বলেন নি। আর আমিও সেই দুটো প্রশ্নের উত্তর একই দেই, “আলহামদুলিল্লাহ” এবং “খেয়ে ঘুমাবো”। যদিও মাহিম ভাইয়ার স্বভাব অনেকটাই নম্র আর ভদ্র। উনি চোখে মোটামুটি পাওয়ারের একটা চশমা পরেন যেইটা উনার সাথে বড্ড মানায়। আর মাহিম ভাইয়ার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো তিনি অনেক ঠান্ডা এবং মিশুক প্রকৃতির যার কারনে মাহিম ভাইয়াকে আমার কলিগ সারা পছন্দ করে আর সেইটা মাহিম ভাইয়াও জানে তবে উনি সারাকে বেশি একটা গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু আমার কাছে মাহিম ভাইয়া আর সারার ওদের দুইজন যখন একসাথে হয় তখন ভালো লাগে। কিন্তু উনার যে আমার প্রতি ইন্টারেস্ট তা আমি বেশ বুঝতে পারি। যেহেতু উনি কখনো আগ বারিয়ে কিছু বলেন নি তাই আমিও কোনো প্রকার কিছু বলেনি। সারা আর আমার বাসার রাস্তা এক দিকে হওয়াতে আমরা একসাথেই যাতায়াত করি। আজকেও সারা আমার সাথে আছে আর তখনই মাহিম ভাইয়া সেই চেনা পরিচিত প্রশ্ন আর আমার রোজের মতোই একই উত্তর। তবে সারা জন্য খারাপ লাগে কারন সারাকে কখনো তিনি কিছুই জিজ্ঞেস করেন নি। সারা চুপচাপ শান্ত শিষ্ট মেয়ে। আমাকে ও নিজের বড় বোনের মতো দেখে। বড় বোন ভাবে দেখেই আজ পর্যন্ত বলতে পারে নি যে সে মাহিম ভাইয়াকে পছন্দ করে।

আমি আর সারা অটোতে করে বাসায় ফিরছি। পাশাপাশি দুজন বসে আছি। সারা ফোনে কিছু একটা ঘাটাঘাটি করছে। আমি ওর দিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনে তাকিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে জিজ্ঞেস করি-

: মাহিম ভাইয়াকে বলছো না কেন যে তুমি উনাকে পছন্দ করো?

আমার হুট করে করা প্রশ্নটায় সারা কিছু থতমত খেয়ে যায়। সারা একটা মৃদু হেসে দিয়ে বলল-

: কে বলেছে তোমায়, তরু আপু? তুমিও না..! আর মাহিম ভাইয়া তো পছন্দ করে তোমাকে। তোমাদের দুইজন কে বেশ মানায়। পারফেক্ট কাপল হবে তোমরা…! হি…হি..!

সারার বলা কথাগুলো শুনে আর কিছু বললাম না। বিনিময়ে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। সারা আমার এমন ভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে একটা মেকি হাসি হাসল। অটো গিয়ে ওর বাসার সামনে প্রথমে নামলে ও নেমে যেতে নিলেই আমি ওকে কিছুটা গম্ভীরভাবে বললাম-

: ভালোবাসা নামক জিনিসটি সবার ভাগ্যে থাকে না। দিনশেষে যাদের ভালোবাসাগুলো পূর্ণতা পায় তারাই তো ভাগ্যবান হয়।

সারা আমার কথাগুলো শুনে নিস্তব্ধ পানে চেয়ে থাকে। আমি অটো মামাকে আমার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিতে বলি। বাড়ি এসে দরজায় বেল বাজাতেই যা দেখি তাতে আমার চেয়ে বেশি বিপরীতে থাকা মানুষটা বেশি খুশি হয়ে আছেন।

#চলবে_______

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here