প্রিয়দর্শিনী পর্ব ৬+৭

#প্রিয়দর্শিনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা

পর্ব-০৬

বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে যেন কান্আ করে দিয়েছেন। এটাই স্বাভাবিক কারন নিজের মেয়ের সাথে গত ছয় মাস পর আজ দেখা হয়েছে। আমি বাবার চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে দিতেই অন্তু পিছন থেকে আমার কাধে হাত রেখে বলে-

: বাবা….! এইটা কি হলো আজকে এতো মাস আমার সাথে দেখা করলে আর এমনভাবে কান্না করছো। দিস ইজ নট ফেয়ার…!

বাবা অশ্রু ভেজা কন্ঠে অন্তুকে বলল-

: তুই বুঝবি না। যেদিন বাবা হবি সেদিন বুঝবি সন্তান দূরে চলে গেলে যখন মা বাবার কতোটা কষ্ট হয় তাদের ছাড়া থাকতে। কিন্তু তারা তাদের কথা ভাবে নিজের মা বাবার কথা ভাবে না।

বাবার অভিযোগ গুলো ফেলার মতো না। কারন আসলেই মা বাবার সন্তানের জন্য সবচেয়ে বেশি ত্যাগস্বীকার করে। তাদের মতো কেউ ভালোবাসতে জানে। তাই তো বলা হয়, “পৃথিবীতে মা আর বাবা ছাড়া কেউ আপন হয় না। কেউ তোমাকে প্রায়োরিটি না দিলেও মা বাবা সবসময় তোমাকে প্রায়োরিটি দিবে। মা বাবা কখনোই সন্তানদের ঠকায় না।” মেহু ভাবি আমার দিকে চোখে ইশারার মাধ্যমে বলেন-

: সারপ্রাইজ কেমন হয়েছে ননদিনী?

: অনেক ভালো হয়েছে। তোমাকে ধন্যবাদ ভাবি।

মেহু ভাবি কোমরে হাত রেখে ভাবলেশহীন ভাবে বললেন-

: শুধু ধন্যবাদ এ কাজ হবে না। আমাকে গিফট দিতে হবে। যদিও তোমার তো মনেই নেই কালকে যে কিছু আছে।

আমি ভাবির কাছে গিয়ে মৃদু হাসি দিয়ে তার দুটো গাল টেনে বললাম-

: কালকে যে আমার মিনহাজ আর মেহু ভাবির প্রথম বিবাহবার্ষিকী তা আমার ঠিকই মনে আছে। তবে গিফট কিন্তু তোলো রাখতে কারন গিফটটা তুমি কালকে পাবে। হুমমম…

মেহু ভাবি আমার ডান হাতের তালু নিজের দুই হাতের তালুর মাঝে রেখে বলেন-

: আল্লাহর কাছে শুকরিয়া অনেক যে আমাকে এমন একটা সুইট ননদিনী এবং বোন দিয়েছেন। কোনো গিফট দিতে হবে না। তবে হ্যাঁ গিফট না নিয়েও ছাড়বো না। কিন্তু সেইটা কালকে বলব যে গিফট লাগবে আমার। হি… হি… কিন্তু এখন তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও সবাই মিলে ডিনার করবো। ওকে?

: ওকে। আর যেই গিফট চাও না কেন… যদি আমার সাধ্যের ভিতর থাকে তাহলে অবশ্যই দেয়ার চেষ্টা করবো।

মেহু আমাকে আর হল রুমে এক মিনিটও থাকতে না দিয়ে সোজা ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু মাথা একটা ভাবনা এখন জেকে বসেছে। কারন ভাবি নিজ থেকে গিফট চাইবেন আমার কাছে। তবে এতোটুকু বিশ্বাস আছে এমন কিছুই চাইবে না যেইটা দিতে আমি পারবো না।

রাতে সবাই একসাথে ডিনার শেষ করে হল রুমে গল্প করতে বসে। আমি হল রুমে না বসে নিজের রুমে এসে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। একটু পর সেখানে অন্তু এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে একটু শুকনো কাশি দিয়ে বলল-

: কেমন আছো আপু তুমি?

অন্তুর হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন করাতে কিছুটা থতমত খেয়ে যাই আমি। নিজেকে সামলে নিয়ে বলি-

: ভালো আছি।

: সত্যিই তুমি ভালো আছো নাকি ভালো থাকার অভিনয় করছো?

অন্তুর আবার এমন ভাবে প্রশ্ন করায় আমি যেন চমকে যাই। কারন কেউ কিছুই জানতো না। শুধু জানতো আমি একজনকে পছন্দ করতাম। তবে এক বছর আগে যে আমার সাথে কি একটা হয়েছিল সেইটা ওদেরকে না বললেও বুঝতে তবে কেউ কখনো সেই বিষয়ে অথবা আমি যেই মানুষটাকে তার ব্যাপারেও আগ বারিয়ে কখনোই কিছু আর কেউ জিজ্ঞেস করেনি। অন্তু কথার জবাবটা দিতে ইচ্ছে করছিল না। তবুও অন্তুর এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিয়ে একটা কৃত্রিম হাসি দিয়ে বললাম-

: সত্যি ভালো আছি রে ভাই। তুই ভালো আছিস?

অন্তু আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ ঘুরিয়ে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে বলল-

: ভালো আছি আপু। কিন্তু তোমাকে ছাড়া ভালো নেই। না আমি না বাবা। তোমাকে প্রতিনিয়ত আমাদের মনে পড়ে। বাবার চোখদুটো প্রায় সময়ই ভিজে হয়ে থাকে। তুমি চলো না আমাদের সাথে এইবার।

: অন্তু আমি জানি তোদের কষ্ট হচ্ছে আমাকে ছাড়া থাকতে। কিন্তু আমিও যে নিরুপায়। আমি যদি আবার ওই শহরে ফিরে যাই তাহলে যে দমবন্ধ হয়ে মারা যাবো। তখন তো তোরা কেউ সেইটা সহ্য করতে পারি না। এমন আবদার করিস না যেইটা আমি রাখতে পারবো না।

কথা গুলো মনে মনেই বললাম। অন্তু আমাকে “আপু” বলে ডাক দিতেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতেই অন্তু আবার বললো-

: আপু তুমি আমাকে কিছু না বললেও আমি সবই জানি। সেদিন যে কতোটা কষ্ট পেয়েছিলে সেইটা আমি জানি।

অন্তুর কথা শুনে আবারো চমকে উঠি। অন্তু সব জানে সেইটা আমি মানতে পারছি না। এক বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আজও কাউকে কখনো বলি নি। কিন্তু অন্তু এতোকিছু জানার কথা তো না। অন্তুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই অন্তু বলল-

: এইটা ঠিক যে তুমি ওই দিন কি ঘটেছিল তা তুমি কখনোই জানাও নি। কিন্তু আপু তুমি মনে হয় তোমার সেই ডায়েরিটা ফেলে এসেছো যেইখানে তুমি নিজের কথাগুলো ভলে রেখে চলে গিয়েছিলে। যাওয়ার সময় নাও নি। তোমার ডায়েরিটা অবশ্য লক ডায়েরি ছিল ছোটবেলা থেকে দেখতাম তুমি লিখতে অনেক কিছুই। তাই কৌতূহল বশতই চাবি খুঁজে সেইটা খুলেছিলাম। তবে বিশ্বাস করো জানতাম না যে এতো কিছু পাবো। নুহাশ নামের ওই ছেলেটা তোমাকে….

আমি অন্তুকে আর কথা এগুতে দিলাম না। নিজের সামলে শক্ত কন্ঠে বললাম-

: তুই এখন ঘুমাতে যা অন্তু। জেনেছিস ভালো হয়েছে। এখন নিশ্চয়ই তুই আমাকে সেই শহরে ফিরতে বলবি না। কারন জানতে চাইবি না। আর কিছু বলতে চাই না আমি। আমার কালকে অফিস আছে। ঘুমাতে হবে আমার। গুড নাইট।

অন্তু মাথা নিচু করে চলে গেলে দরজাটা ঠাস করে বন্ধ করে দিয়ে ঠেস দিয়ে দরজার সাথে দাঁড়িয়ে রইলাম। আবার দম বন্ধ হয়ে আসছে। এক অজানা ব্যাথায় বার বার ভেতরটা দুমরে মুচরে যাচ্ছে।

————————————————–

সকাল বেলা উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেরিয়ে যেতে নিলেই মিনহাজ আর মেহু পথ আটকে দাড়ালো তরুনিমার। দুই জনের দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই মিনহাজ বলল-

: আজকে বাসা থেকে কোথাও বের হওয়া যাবে না। আজকে অফিসও যাওয়া লাগবে না। বিকালে সব গেস্ট আসবে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান আজকে। আমি তোর অফিসে ফোন করে বলে দিয়েছি তুই আজকে যাবি না। একটু পর মামা আর মামীমনিরাও এসে পরবে। সো আজকে কোথাও যতেতে হবে না।

তরুনিমা কিছু বলতে নিলে মেহু এবার কড়া একটা ধমক দিয়ে বলল-

: যতো কিছুই বলো না কেন তুমি…. আজকে তোমার অফিসে যাওয়া যাবে না মানেই যাবে না। এখন রুমে গিয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করে তাড়াতাড়ি আমার রুমে চলে আসবে।

তরুনিমা চুপচাপ রমে গিয়ে ড্রেস চেইন্জ করে মেহুর ঘরে গিয়ে দরজা নক করতেই মেহু ওকে হাত ধরে ঘরে ঢুকিয়ে বেডে বসিয়ে আলমারি থেকে একটা শপিং ব্যাগ বের করে তরুনিমার হাতে দিয়ে ওকে সেইটা খুলতে বলে। তরুনিমা প্যাকেট খোলা মাত্রই।একটা সুন্দর বেগুনি রঙের শাড়ি দেখেই অবাক হয়ে মেহুর দিকে তাকিয়ে থাকে। মেহু বিপরীতে একটা মৃদু হাসি দিয়ে বলল-

: আজকে সন্ধ্যায় তুমি এই শাড়িটা পরবে। আমি চাই তুমি এইটা পরো আজকে। অনেক খুঁজে খুঁজে এই শাড়িটা তোমার জন্য এনেছি। পরলে আমি আর মিনহাজ অনেক খুশি হবো।
#প্রিয়দর্শিনী🍂
#সুমাইয়া_যোহা

পর্ব-০৭

সন্ধ্যায় পুরো বাড়ি যেন মেহমানদের সমাগমে ভরপুর হয়ে রয়েছে। আস্তে আস্তে মিনহাজ আর মেহুর সব আত্মীয় পরিবারের মানুষ সবাই আসছেন। সবাই উপস্থিত থাকলেও একজন শুধু সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেই। আর সে হলো তরুনিমা। তরুনিমা নিজের ঘরে বসে বসে বই পড়ছে। মেহু তরুনিমাকে হলে না দেখে সোজা তরুনিমার ঘরে এসে দরজায় নক করে। তরুনিমা দরজা খুলে দিতেই মেহু হা করে তরুনিমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তরুনিমা মেহুর এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেকে একবার পর্যবেক্ষণ করার পর একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল-

: আমি আসলে ভাবি….

মেহু তরুনিমা জোরে একটা ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল-

: একদম চুপ..! কোনো কথা বলবে না তুমি আমার সাথে…! নিচে সব গেস্টরা এসে পরেছে একটু পর অনুষ্ঠানও শুরু হয়ে আর তুমি তরু আমাকে এইভাবে নিরাশ করলে। ঠিকাছে তরু… তুমি বই পড়ো, কেউ বিরক্ত করবে না।

তরুনিমা মেহুর দিকে মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। কিন্তু মেহু সেটা দেখেও না দেখার ভান করে এক প্রকার সেখান থেকে রাগান্বিত ভাবে চলে যায়। তরুনিমা দরজায় লাগিয়ে আবার বেডে গিয়ে বই পড়া শুরু করে।

মেহু একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কারো সাথে কোনো কথা বলছে না। মিনহাজ একটা কোকের গ্লাস নিয়ে মেহুর সামনে ধরতেই মেহু মিনহাজের দিকে তাকাতেই মিনহাজ দেখে মেহুর চোখ ছলছল করছে। মিনহাজ মেহুকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই হঠাৎ কারো মধুর সুর যেন ওদের কানে ভেসে আসে-

“Bhabhi meri bhabhi tum jeeo hazaaron saal
Bhabhi meri bhabhi tum jeeo hazaaron saal”

মেহু আর মিনহাজ গানের শব্দগুলো শুনেই যেখানে গানের সুর সেখানে উপস্থিত হতেই দেখে তরুনিমা এক হাতে হ্যান্ড মাইক নিয়ে মুখে একটা ছোট হাসি রেখে গাইছে। তরুনিমাকে দেখে যেন অন্যরকম লাগছে। কারন তরুনিমার পরনে মেহুর দেয়া সেই বেগুনী শাড়িটা। সাথে কানে এনটিকের ঝুমকো এবং কপালে ছোট একটা সাদা পাথরের টিপ। সাজটাও মোটামুটি শাড়ির সাথে মিলিয়েই আছে। মেহু মনে মনে খুশি হলেও সবার সামনে মুখ ফুলিয়ে আছে। তরুনিমা মিনহাজ বাহুতে নিজের এক হাত দিয়ে মিনহাজ ধরে আবার গাইতে থাকে-

“Bhaiyya humara yun hi tumhara
Rakhe sadaa khayaal haaye
Bhabhi meri bhabhi tum jeeo hazaaron saal”

মেহু তখনও মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। তরুনিমা এবার মিনহাজের হাত ছেড়ে মেহুর কাছে গিয়ে মেহুকে জড়িয়ে ধরে গাইতে থাকে-

“Bhaiyya ke dil par raani bankar
Bhabhi raaz chalaye”

“Bhabhi ka pyara raaj dulaara
Dewar mauj udaaya
Yehi duaan hai yehi tamanna”

মেহুও এবার আর তরুনিমার সাথে কোনো রকমের অভিমান না রেখে হাসি মুখে ওকে আদর করে দেয়-

“Sadaa raho khush haal haaye haay
Bhabhi meri bhabhi tum jeeo hazaaron saal..”

পুরো গানটা শেষ হতেই সবার করতালিতে যেন পুরো অনুষ্ঠানের পরিবেশটা আর জমজমাট হতে শুরু করে। তরুনিমা হ্যান্ড মাইকটা রেখে দিয়ে পেছন ঘুরতেই মেহু ওকে জাড়িয়ে ধরে বলল-

: থ্যাংকিউ সো মাচ। আই এম ভেরি হ্যাপি, তরু। লাভ ইউ আর লট মাই সুইট সিসটার। এন্ড স্যরি তখন ওইভাবে রিয়াক্ট করার জন্য।

: ইটস ওকে ভাবি। তুমি যাওয়ার পর আমার নিজেরই খারাপ লেগেছে। আর আমি জানি আমাকে বকার পর তুমি নিজেই কষ্ট পেয়েছো। তাই স্যরি বলে আমার কষ্ট বারিয়ে দিও না। এন্ড ইয়েস… আই লাভ ইউ মোর….!

মেহুর খুশি আজকে কে দেখে। তরুনিমাও মেহুকে এইভাবে খুশি দেখে খানিকটা নিজের ভেতর স্বস্তি ফিরে পায়। তবে তরুনিমা প্রত্যেকটি খুটিনাটি জিনিসে একজনের চোখ জোড়া আটকে আছে। সে তরুনিমা বিশেষ ভাবে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে। আশেপাশে কি চলছে সেটার প্রতি তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।

সবাই পরস্পরের সাথে কুশলাদি বিনিময় করছে। গল্প করছে। অন্তু আজকে তরুনিমার সামনে আসেনি। তরুনিমা অন্তু দেখতে পেয়ে ডাক দিয়ে ওর কাছে আসতে বলে। অন্তু তরুনিমার নিকট গেলে তরুনিমা একটু গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে-

: ব্যাপার কি অন্তু তোর? আজকে সারাদিন আমার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিস।

: তে তেমন ক কিছু ন না তো.. আ আপু।

অন্তু মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে কথাগুলো বলে তরুনিমা অন্তুর কাধে হাত রেখে ছোট করে হাসি মুখে বলল-

: তুই হয়তো গতকালকের কথা ভেবে মন খারাপ কর আছিস। কিন্তু আমি তোর প্রতি রেগে নেই। শুধু একটা রিকুয়েস্ট করবো যে প্লিজ ভাই কাউকে কিছু বলিস না। আর আমি আমার মতো করে ভালো আছি রে।

অন্তু তরুনিমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে জড়িয়ে ধরল। নিজের বোনের এভাবে কষ্টে জড়িয়ে থাকতে দেখে কোনো ভাইয়েরই ভালো লাগবে না। তবুও ভাই হিসেবে অন্তু সর্বাধিক চেষ্টা করবে যাতে তার বোনটি ভালো থাকে। তরুনিমা অন্তুর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতেই হুট করে মেহু এসে সেখান থেকে তরুনিমাকে নিয়ে যায়। ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটে যে তরুনিমার বুঝতে একটু সময় লাগে। মেহু তরুনিমাকে নিয়ে একজনের সামনে দাড় করিয়ে বলল-

: এই যে তরুনিমা, আমার ননদ।

তরুনিমা যেন পুরোই আহাম্মক হয়ে গেছে। তরুনিমা মেহুর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। মেহু তরুনিমাকে একটা চিমটি দিয়ে ওকে সালাম দিতে বলে-

: আসসালামু আলাইকুম।

তরুনিমার বিপরীতে দাড়িয়ে আছে সুঠাম দেহের এক সুদর্শন যুবক।গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের, চোখ গুলো খুবই শান্ত এবং স্নিগ্ধ প্রকৃতির। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি রয়েছে। চোখে চিকন চশমা পড়া। ঠোঁটে কোণে একটা ছোট হাসি ঝুলে আছে। মেহু নিজের মাথায় নিজেই চাটা মেরে বলল-

: দেখেছো আমি তো পরিচয় করিয়েই দিলাম না। তরুনিমা, ও হলো পান্থ শাহরিয়ার। একজন পাগলের ডাক্তার। আই মিন হি ইজ এ সাইকিয়াট্রিক। আমি যতোটুকু ও কিছুদিন আগে মেন্টাল ওয়ার্ডের পুরো ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বরত ছিল।

তরুনিমা কিছুই বুঝে উঠার আগে মেহু সবটা খোলাসা করে বলল-

: আসলে তরু তুমি যে একটু আগে এতো সুন্দর করে গান গাইলে সেটার জন্যই তোমাকে নিয়ে আসা। আসলে আমরা বলতে গেলে এক সময় অনেক ভালো বন্ধু ছিলাম, ছিলাম না এখনো আছি। ও কয়েক মাস হলে বাহিরে থেকে ফিরেছে। তাই বিয়ের সময় তোমার সাথে পরিচয় করাতে পারি নি।

তরুনিমা শুধুই মাথা নাড়ালো। মেহুকে কেউ ডাক দিলে মেহু ওদের দুজনকে একসাথে গল্প করতে দিয়ে রেখে যায়। অনেকক্ষণ দুজনের ভিতর পিনপতন নীরবতা থাকা পর পান্থ সেই নীরবতা ভেঙে নিজের ফোনটা পকেটে রেখে বলল-

: আপনি কি বোবা?

: জ্বি?

: এইতো কথা বলতে পারেন। আমি ভাবলাম আপনি কথা বলতে পারেন না।

তরুনিমা পান্থর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল-

: তাহলে শুরুতে সালাম টা দিল কে? আমার তো মনে হয়েছিল আপনি বোবা।

: কেন বলুন তো?

পান্থ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে উৎসুক ভাবে বলেল তরুনিমা ভাবলেশহীন হয়ে বলল-

: কারন সালাম দেয়ার পরও যে আপনি সালামের জবাব টা দেন নি। তাই ভাবলাম যে আপনি হয়তো বোবা।

পান্থ তরুনিমার কথা শুনে একগাল হাসে। পান্থ হঠাৎ এমন ভাবে হাসাতে তরুনিমা চমকে যায়।

#চলবে____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here