প্রেমরোগ পর্ব -০২

#প্রেমরোগ-২
#তাসনিম_তামান্না

কুয়াশা থ হয়ে তুষারের দিকে তাকিয়ে আছে। কাকতালীয় ভাবে কুয়াশা ও তুষার কালো রঙের ড্রেস পড়েছে। পাশাপাশি দাঁড়ালে যে কেউ-ই কাপল ভেবে বসবে। কুয়াশার এতে নিজেই অস্বস্তি বোধ করছে। ভেবেছিল বিয়ে বাড়িতে সকলে লাল রঙের পড়ে ভেবেই কুয়াশা কালো রঙের গর্জিয়াস থ্রি পিচ টা চুস করছিল। এভাবে যে তুষারের কালো পাঞ্জাবির সাথে মিলে যাবে জানলে কস্মিনকালেও পড়তো না। এদিকে অনু কুয়াশার কানে কানে ফাইজলামি করে বলল
” তুই কি কনের ভাইয়ের সাথে প্রেম শুরু করলি না-কি রে এভাবে মিলিয়ে কাপল ড্রেস পড়েছিস মনে হচ্ছে ব্যপার কি বলতো? ”
ঈশান, রাহুল ও মজা নিতে লাগলো। কুয়াশা অস্বস্তিতে গাঁট হয়ে গেলো। এসব কথা তুষারের কানে গেলে আরো অস্বস্তিতে পড়বে ভেবে রাগী চোখে সকলের দিকে তাকালো। মেঘার দিকে চোখ যেতেই দেখলো মেঘা মিটমিট করে হাসছে। মুহুর্তেই বুঝে গেলো এটা মেঘার কারসাজি। মনে মনে রাগে ফেটে পড়লো। কুয়াশা মনে মনে বলল
” একবার জাস্ট একবার তোকে একা পায় তার পর তোকে মজা বুঝাবো শ-য়-তা-ন মেয়ে ”
মেঘার হাসি দেখে কুয়াশার গা জ্বলে যাচ্ছে। নিজেকে দমাতে না পেরে কুয়াশা বলল
” মেঘা একটু সাইডে আয় তো ”
মেঘা চোখ বড়বড় হয়ে গেলো বলল
” সাইডে যাবো কেনো এখানেই বল ”
কুয়াশা চোখ রাঙালো। সাইডে এসে বলল
” তুই এসব করছিস না আমি ভালো মতো বুঝতে পারছি ”
মেঘা অবাক হওয়ার ভান করে বলল
” ওমা আমি আবার কি করলাম? ”
” তুই তুষার ভাইয়া কে বলছিস কালো ড্রেস পড়ে আসতে ”
” পাগল তুই? আমি বলবো ভাইয়ারও পড়ে আসবে? আর তুষার ভাইয়া কে তুই ভাইয়া ডাকছিস কেনো? আজব! ”
” চুপ। ভাইয়া ডাকবো না তো কি ডাকবো?
” কেনো ওগো, হ্যাগো বলে ডাকবি। বাই দ্যা ওয়ে তুই আর ভাইয়া কি কালো রঙের ড্রেস পড়ে একসাথে শোক দিবস পালন করছিস”
” দেখ মেজাজটা গরম করে দিয়েছিস। আর একদম শাক দিয়ে মাছ ডাকবি না। তুই বাসাই চল তারপর তোকে দেখে নিচ্ছি ”
মেঘা শুকনো ঢোক। কথাটা বলে কুয়াশা তুতুলের পাশে গিয়ে বসলো।
কুয়াশা বাবারা দুই ভাই। কুয়াশার বাবা কৌশল চৌধুরী। কৌশল চৌধুরী দুই ছেলেমেয়ে কুশান চৌধুরী আর কুয়াশা জাহান। কুশানের বিয়ে হয়ে গেছে পাখি সাথে বিয়ের তিন বছর হতে চলল পাখি প্রেগন্যান্ট। প্রেগন্যান্সির ৫ মাস চলছে। চাচা মনির চৌধুরী। মনির চৌধুরীর ও দুই ছেলেমেয়ে মেঘ চৌধুরী আর মেঘা জাহান। মেঘ একজন পুলিস ইস্পেক্টর। কুয়াশার মা কেয়া গৃহীনি মেঘার মা মুন্নি ও গৃহীনি। মেঘের-ই আজ বিয়ে তুতুলের সাথে। তুতুল আর তুষার ভাই বোন। কুয়াশার বাবা আর তুষারের বাবার বন্ধুত্বর জন্য আজ দুই পরিবার আত্মীয় সম্পর্কে আবদ্ধ হলো।
” অনু তুই কি জানিস আজ তোকে পেত্নীর মতে লাগতেছে? ”
অনু রেগে যেতে গিয়েও দাঁতে দাঁত চেপে বলল
” আমার জানার দরকার নাই তুই জানলেই চলবে ”
রাহুল ঈশানকে টেনে বলল
” ঈশান তুই-ই বল আমি কি কোনো ভুল বলছি? ”
” ঠিক কইছিস আমার দুপাশের দুই ভুতনি ”
উমা চুপচাপ বসেছিল। ঈশানের খোঁচা মারা কথায় ভ্রু কুঁচকে বলল
” তোমাদের তো চোখ না চুলা তাই ভালো কিছু তোমাদের সহ্য হয় না ভালো জিনিস ও তোমরা খারাপ দেখ ”
অনু বলল ” ঠিক বলেছ উমা। চলো তো অন্য দিকে যায় এখানে বসে থাকলে শুধু মেজাজ গরম ছাড়া কিছুই হবে না ”
মেঘ আর তুতুলের বিয়ে পড়ানো শেষ হতে। মেঘ, তুতুল, কুশান, মেঘা, কুয়াশা, তুষার এক টেবিলে খেতে বসলো। পাখি প্রেগন্যান্টসির জন্য আগে খেয়ে নিয়েছে। কুয়াশার একপাশে মেঘা আর অন্য পাশে তুষার বসেছে। কুয়াশা তুষারের সামনে কেমন লজ্জা অস্বস্তি বোধ করছে। খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করতে দেখে কুশান বলল
” কি হয়েছে বাবুইপাখি খাচ্ছিস না কেনো? ”
” এই তো ভাইয়া খাচ্ছি ”
তুষার নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। তুষার খেয়ে উঠে গেলো সবার আগে। তুষার চলে যেতেই কুয়াশা যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো এতোক্ষণ যেনো দমটাও ঠিক মতো নিতে পারছিল না। তুষার চলে যেতেই কুয়াশা ভেবেছিল তুষার চলে গেছে এভাব ভালো ভাবে খাবে কিন্তু হলো না কিছু-ই খেতে পারলো না একটু খেতেই কেমন বমি বমি ভাব চলে এলো। আর খেতে না পেরে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ওয়াশরুম থেকে এসে ওয়ারেন্স জুস খেলো। জুস খেতে মেঘার লজ্জা মাখা রক্তিম মুখের হাসি দেখে ভ্রু কুঁচকে গেলো। মেঘার দৃষ্টিটি লক্ষ করে তাকাতেই মেঘের ফ্রেন্ড রিদ ভাইয়া কে দেখতে পেলো। ব্যপারটা বুঝতে পেরে কুয়াশার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। বিরবির করে বলল ” আমাকে না জানিয়ে এসব হচ্ছে? তোর ব্যবস্থা করছি দাড়া ”
মেঘার দিকে এগোতে যাবে তখনই একটা ছেলে কুয়াশার সামনে এসে বলল
” হাই! আমি সোহেল ”
কুয়াশা ছেলেটাকে চিনে না। কমিউনিটি সেন্টারে অনেক আত্নীয় স্বজনকেই চেনে না। তবুও ভদ্রতার জন্য মুখে হাসি এনে বলল
” হ্যালো! ”
” আপনার নাম কি মিস. ”
” কুয়াশা জাহান ”
” নাইস। আপনি আর আপনার নাম ”
কুয়াশার সোহেলের দিকে কোনো মন নেই তার দৃষ্টি মেঘার দিকে
” থ্যাংকিউ ”
” বাই দ্যা ওয়ে আপনি বর – কোণের কি হন? ”
কুয়াশার হাতে টান পড়লো। কুয়াশা চমকে তাকালো। তুষার শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে। কুয়াশা শুকনো ঢোক গিলে বলল
” হাত ধরে টানাটানি করছেন কেনো? ”
” এখানে একা কি করছো? ”
” একা কোথায়? সবাই ই তো আছে ”
” হ্যা তাছাড়া আমিও আছি তুষার ভাই ”
” হ্যাঁ সেটা তো দেখতেই পারছি। চল আমার সাথে ”
” ওনি থাকুক না এখানে। প্রবলেম কোথায়? ”
” সেটা তোমারকে নিশ্চয়ই জবাবদিহি করতে হবে না সোহেল ”
সোহেল চুপসে গেলো। তুষার কুয়াশাকে নিয়ে সেন্টারের বাইরে দিকে হাঁটা দিলো। কুয়াশা চোখ বুলিয়ে দেখলো কারোরই তাদের দিকে খেয়াল নাই।
” হাতে ব্যথা পাচ্ছি ”
” যায় আসে না ”
” যায় আসে না তো হাত ধরেছেন কেনো? ”
” সেটার রাইট নিশ্চয়ই আমার আছে ”
কুয়াশা দমে গেলো।
কুয়াশা তুষারের দিকে কেউ খেয়াল বা করলেও কুশান আর পাখি ঠিকি খেয়াল করেছে। কুশান যেতে নিলেই। পাখি কুশানকে আটকে দিয়ে বলল
” কোথায় যাচ্ছো? ”
” আসছি ”
” কেথাও যেতে হবে না এখানে বসো ওদের ব্যপারটা ওদে বুঝতে দাও ওদের মধ্যে না ঢোকায় শ্রেয় ”

চলবে ইনশাআল্লাহ
[ আসসালামু আলাইকুম। এতো ভালোবাসা দেওয়ার জন্য আপনাদেরকে অনেক ভালোবাসা। ❤️‍🩹]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here