প্রেমরোগ পর্ব -০৫

#প্রেমরোগ-৫
#তাসনিম_তামান্না

সকলে খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই। রিদ বলল
” গাইস তোমাদের জন্য একটা ফ্যান্টাস্টিক সারপ্রাইজ আছে তোমরা কি সেই সারপ্রাইজটা পেতে রাজি আছো? ”
মেঘা ভ্রু কুঁচকে বলল ” হ্যাঁ কিন্তু কি সারপ্রাইজ? ”
” সারপ্রাইজ বলে দিলে সারপ্রাইজের কোনো মানে হয়? তাহলে চলো বের হওয়া যাক ”
” কোথায় যাবো আমরা? ”
” গেলেই দেখতে পাবে ”
মাইক্রোতে একে একে সকলে উঠে বসলো। কুয়াশা উঠে বসতে গেলে দেখলো জায়গা হচ্ছে না। কুয়াশার ভ্রুকুঁচকে গেলো আসার সময়ই তো সকলে একসাথে এলো এখনো জায়গা হচ্ছে না কেনো? খেয়াল করে দেখলো ঈশান পরে আসছে। কুয়াশা কি করবে ভেবে পেলো না। রিদ বলল
” কুয়াশা জায়গা নাই তো তুমি তাহলে তুষারের সাথে বাইকে আসো তুষার বাইক নিয়ে এসেছে তো ”
কুয়াশা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো না ও বলতে পারছে না তুষার কুয়াশার দিকে তাকিয়ে আছে। মাইক্রো কুয়াশা তুষারকে ফেলে চলতে। কুয়াশা ধীর পায়ে তুষারের পিছনে গিয়ে বসলো। তুষার চালালো না চুপ করে বসে রইলো। কুয়াশা উসখুস করতে করতে তুষারের গাড়ে হাত রাখলো। তুষার ও স্টার্ট দিয়ে চালানো শুরু করলো। বেশ স্প্রিডে চালাচ্ছে। কুয়াশা অন্য হাত দিয়ে তুষারের শার্ট খামছি ধরলো।
মাইক্রো আগে তুষার কুয়াশাকে নিয়ে ফ্যান্টাসি কিংডমে এসে পৌঁছালো। এখানে আসতে দেখে কুয়াশা ভয়ার্ত চোখে তাকালো তুষারের দিকে এতোক্ষণ একটাও কথা না বলেও এখন বলতেই হলো
” আমাকে এখানে কেনো আনলেন? ”
তুষার নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল
” ওরাও এখানেই আসছে ”
” আমি বাসায় যাবো ”
তুষার প্রতিউত্তর করলো না। কুয়াশার দিকে একপলক তাকিয়ে টিকিট কাউন্টারের দিকে গেলো। কুয়াশা পারলে এখনি কেঁদে দেয়। তার মধ্যে সকলে চলে এলো কুয়াশা রেগে রিদের সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়ে বলল
” এই আপনার সারপ্রাইজের নমুনা ভাইয়া? আমি যাবো না ”
রিদ হেসে যাচ্ছে। বলল
” সারপ্রাইজ টা জোস না? কুয়াশা রেগ না তুষারের ই প্লান কিন্তু এটা তাই আমার ওপরে রাগ দেখিয়ে লাভ নাই ”
মেঘা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল
” আমি বাসায় যাবো ”
” সেটা বললে তো হবে না মেঘা। টিকিট কাটা হয়ে গেছে লেটস গো ”
মেঘ কুয়াশা, মেঘা আর তুতুল কে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে গেলো। এক এক জন যে রাইডে ওঠার আগেই ভয়ে জমে যাচ্ছে তা তাদের মুখশ্রী দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
সানটা মারিয়া রাইডে উঠেই সব মেয়েরা চিৎকার চেচামেচি করতে লাগলো। মেঘ, রিদ, তুষার এটাতে বেশ মজা পাচ্ছে। ফাস্ট রাইড শেষ করে মেঘার বমি করতে লাগলো। মেঘাকে সামলে রিদ আর মেঘ গেলো। কুয়াশার বসা থেকে উঠলেই মাথা ঘুরছে তাই সিটে মথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। তুষার ঠান্ডা পানি এনে কুয়াশা কে সহ সকলকে দিলো। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে রিদ বলল
” মেঘা অসুস্থ হয়ে গেছে একটু রেস্ট নিক ও চলো আমরা ম্যাজিক কার্পেটে চলো ”
কুয়াশা চমকে লাফিয়ে উঠে বলল
” আমি আর কোথাও যাবো না কোনো রাইড করবো না ”
তুতুল ও কাঁদো কাঁদো গলায় বলল
” তোমরা রীতি মতো আমাদের ওপর অত্যাচার করছ। আমরা আর কথাও যাবো না একটাতেই উঠে ভয় লেগে গেছে ”
রিদ হেসে বলল
” তাহলে বোঝো তোমরা কত ভীতু ”
কুয়াশা রেগে বলল
” রিদ ভাইয়া আপনাকে ভালো ভাবছিলাম কিন্তু আপনি খুব খারাপ কষ্ট পাইলাম ”
” আচ্ছা এখন কষ্ট পেয়ে নাও পড়ে চকলেট দিয়ে কষ্ট কমিয়ে দিবো চল এবার কথা না বাড়িয়ে এনজয় করে আছি ”
মেঘা পানিটা খেয়ে বিরবির করে বলল
” এনজয় না ছাই শ’য়’তা’ন গুলো আগে জানলো কখনো আসতাম না ”
ম্যাজিক কার্পেটে দু’জন দু’জন করে বসলো। কুয়াশার পাশে তুষার বসেছে আগের টায় মেঘা আর কুয়াশা বসেছিল এবার মেঘা না থাকায় তুষার বসলো। রাইড চলতে শুরু করতেই আবারও চিৎকার চেচামেচি করতে লাগলো। কুয়াশা ভয়ের চোটে একহাতে তুষারকে জড়িয়ে ধরলো আরেক হাতে তুষারের হাত চেপে ধরলো। এতোই জোরে চেপে ধরেছে যে হাতে নক বসে গেলো। তুষার দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করে নিলো।
রাইড থামতেই কুয়াশার খেয়াল হলো তুষারের অনেক কাছে ঝটপট দূরে সরে বসলো। তুষারের হাতের দিকে খেয়াল হতেই অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল ” সরি আসলে আমি বুঝতে পারি নি আপনি কি খুব ব্যথা পাইছেন? ”
তুষার তাচ্ছিল্যে হেসে বলল ” আমার ব্যথায় তুমি ব্যথিত হও? কষ্ট পা-ও নাকি? কি আমি তো দেখি না ”
কুয়াশা থমকানো চোখে তাকিয়ে রইলো তুষারের দিকে তুষার নেমে গেলো। কুয়াশাও আর কিছু না ভেবে নেমে গেলো।
পরের রাইড গুলো একপ্রকার জেদ ধরে গেলো না কুয়াশা বসে রইলো মেঘার পাশে। কুয়াশা যায় নি দেখে তুষার ও যায় নি বসে রইলো। তুষারকে বসে থাকতে দেখে মেঘা চোখ টিপ দিয়ে বলল
” হুম হুম কি ব্যাপার ভাইয়া আজকাল দেখি তাকে ছাড়া চলেই না আপনার। প্রেমে বুঝি ডুব দিয়েছেন? ”
তুষার হেসে বলল ” কি দুঃখের কথা আর কি বলবো? যার বোঝার কথা সে-ই বোঝে না অন্য রা ঠিক-ই বোঝে ”
কুয়াশা ওদের কথায় কান না দিয়ে ব্যাগ থেকে স্যাভলন ক্রিম আর ব্যান্ডেজ বের করে। তুষারের পাশে বসে তুষারের দিকে একপলক তাকিয়ে তুষারের হাতটা নিজের কাছে নিয়ে হাতে স্যাভলন লাগিয়ে দিলো তুষার কুয়াশার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ব্যান্ডেজ দিলে গেলে তুষার বলল
” এতো টুকু ক্ষ’ত ব্যান্ডেজ লাগবে না। আমার মনের ক্ষ’ত ব্যান্ডেজ লাগাতে পারবে কি? ”
কুয়াশা প্রতি উত্তর করলো না। রাইড শেষ করে সকলে ফিরতেই রিদ বলল
” তুষার, কুয়াশা, মেঘা তোমাদের আর কোনো না শুনবো না ওয়াটার কিংডমে যেতেই হবে ”
কুয়াশা মেঘা আঁতকে ওঠে বলল
” পাগল তোমরা এক্সাটা ড্রেস আনি না-ই ভেজা কাপড়ে বাসায় গেলে আম্মু বকবে ”
” ডোন্ট ওয়ারি আমি আগে থেকেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছি ড্রেস আছে সকলে দুই জন দুইজন করে যাবে ”
মেঘা মুক গোমড়া করে বলল
” এসব ঝামেলার কি দরকার ”
রিদ শান্ত কন্ঠে বলল
” দরকার আছে ”
রিদের এমন দৃষ্টিতে মেঘা ভড়কে গেলো। কুয়াশা বলল
” আমি আর মেঘা যাবো ”
” নো ওয়ে ”
” মানে কি? ”
” মানে তোমরা ফাঁকি বাজ দেখা গেলো ভয়ে রাইড না করে এক জায়গায় বসে আছো দুজন মিলে। তাই আমি ভেবে রাখছি প্রতিটা মেয়ের সাথে একটা করে ছেলে থাকবে যেমনঃ কুয়াশা+তুষার, মেঘ+তুতুল, আমি+মেঘা….. ”
মেঘা নিজের কান কে-ই যেনো বিশ্বাস করতে পারলো না। রিদ তার সাথে যাবে? মনে মনে নাচানাচি করতে লাগলো। তাহলে কি তার স্বপ্ন সত্যি হতে যাবে? রিদের মনেও কি তার জন্য অনুভূতি কাজ করে? খুব শীগ্রই তাকে তার মনের কথা রিদ কে জানানো উচিত।
চলবে ইনশাআল্লাহ
আসসালামু আলাইকুম। আপনাদের নেক্সট, নাইস দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত। একটু বড় বড় কমেন্ট করুন🥹

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here