প্রেমরোগ পর্ব -১৩+১৪

#প্রেমরোগ-১৩
#তাসনিম_তামান্না

সকালে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই রেডি হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিলো। মুন্নি কেয়া সকলের জন্য কিছু খাবার রান্না করে নিলো। যেহেতু পাখি প্রেগন্যান্ট ওর বাইরের খাবার না খাওয়ায় ভালো। দুইটা মাইক্রো নেওয়া হলো। একটায় বড়রা যাবে আর গুলায় ছোটরা যাবে। গাড়িতে সব জিনিস পত্র তোলার সময় তুষরা এসে পৌঁছালো। তুষার সবুজ রঙের শার্ট, কালো জিন্সের প্যান্ট, হাতে কালো ঘড়ি, চুলগুলো বেশ স্টাইল করেই আঁচড়ানো, । কুয়াশা সাদা কালো চেকের জামা ওড়না গলায় পেচিয়ে নিয়েছে, চুল গুলো পনিটেল করে বাঁধা, মুখে ফেস পাউডার, ঠোঁটে লিপবাম দেওয়া। মেঘাও কুয়াশার একই ড্রেস পড়েছে। তুষার কুয়াশকে স্ক্যান করে মেঘাকে বলল
” তোমাকে সুন্দর লাগছে। পাশের জনকে পে ত্নির মতো লাগতেছে ”
মেঘা মুখ টিপে হেসে তুষারের কথায় সাই দিয়ে বলল ” হ্যাঁ তাই তো পুরাই পে ত্নি ”
কুয়াশা রেগে গিয়ে কিছু বলতে গিয়ে ও নিজেকে দমিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। এক এক করে সকলে উঠে বসলো।
মেঘ গাড়ি চালাচ্ছে। পাশের সিটে তুষার বসে আছে। পিছনে কুয়াশা, তুতুল, মেঘা বসে আছে। তার পিছনে কুশান, পাখি বসে আছে। সকলে চুপচাপ বসে আছে। মেঘা মুখ বেজার করে বলল
” বোরিং কেউ কথা বলো না কেনো? ”
মেঘ গাড়ি চালাতে চালাতে বলল ” তোর মতো সবাই সবসময় গল্প করার মুডে থাকে না ”
” তুই সবসময় আমাকে পিন্স মেরে কথা বলিস কেনো ভাইয়া আমি তোর কোন পাকা ধানে মই দিসি ”
তুতুল বলল ” চুপ করো ঝগ’ড়া করছো কেনো?”
মেঘা বলল ” তোমার বর ই তো আগে শুরু করলো”
তুতুল ‘বর’ কথাটা শুনে লজ্জা পেয়ে মিনমিন করে বলল ” আচ্ছা থামো তোমরা। ”
কুয়াশা তুতুলের অবস্থা দেখে হেসে কানে কানে বলল ” বাবাহ। বাসরের পরের এতো লজ্জা কোথা থেকে আসছে গো ”
তুতুল চোখ পাকিয়ে কুয়াশাকে ধমকালো। মেঘ সেটা লুকিং গ্লাসে দেখে বলল ” কুয়াশা আমার বউ এর কানে কানে কি বললি রে? ”
তুতুল এদের লাগাম ছাড়া কথায় কুশানের সামনে খুব লজ্জা লাগছে। তুতুল বিরবির করে বলল ” নিল’র্জ্জ, বেহা→য়য়া ”
মেঘা, কুয়াশা পাশে বসে থাকায় শুনতে পেয়ে হেসে মেঘা বলল ” আসলেই ভাবিপু তোমার বরটা নিল’র্জ্জ একেবারে। ”
তুতুল ফিসফিস করে বলল ” কি হচ্ছেটা কি ভাইয়া আছে তো পিছনে। তোমাদের ঝগ’ড়া থামানোই আমার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ”
কুয়াশা তুতুলের অস্তিত্বকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে বলল ” বউকে না দেখে গাড়ি চালানোই মন দাও আর একটা সুন্দর গান দাও। তোমাদের কথা শুরু হলে ঝগ’ড়া শেষ হবে ”
তুষার গান দিলো। কুশান, পাখি, তুষার নিরব ভূমিকা পালন করছে। কিছুক্ষণ পর কুয়াশা বলল
” ক্ষুদা লাগছে ”
মেঘ খোঁচা মে’রে বলল ” তোরা এতো পেটুক কেন রে সারাদিন খাইখাই করিস শুধু ”
কুয়াশা রেগে বলল ” কখন খাই? ক্ষুদা লাগলে খাবো না ”
কুশান এতোক্ষণে মুখ খুলে বলল ” বাচ্চাদের মতো ঝগ’ড়া করছিস কেনো তোরা? বড় হবি না কখনো না-কি? তোদের কাছ থেকে আমার ছেলেমেয়ে ও দেখছি ঝগ’ড়ায় ফাস্ট হবে ”
মেঘা হেসে বলল ” আমরা দায়িত্ব নিয়ে তোমাদের বাবুদের ঝগ’ড়া শেখাবো। যাতে পাশের বাসার আন্টির সাথে ঝগ’ড়া করতে পারে ”
” হুম বুঝলাম ”
কুয়াশা বলল ” কি বুঝলে ভাইয়া? ”
কুশান বলল ” এই যে তোরা নিজেও ভালো হবি না আমার ছেলেমেয়ে কেও ভালো হতে দিবি না ”
মেঘ বলল ” তুমি কি আমাদের ইনসাল্ট করলে ভাইয়া? ”
” বলতে পারিস ”
তুতুল মুখ টিপে হাসলো। কুয়াশা বলল
” ভাইয়া তুমি ছেলে বাবু হলে খুশি হবে নাকি মেয়ে বাবু হলে খুশি হবে? ”
কুশান বলল ” আল্লাহ যেটা দিবেন সেটাতেই খুশি ”
মেঘা বলল ” নাহ্ একটা চুজ করো ”
” মেয়ে হলে কিন্তু ছেলে হলে যে অখুশি হবো এমনটাও নয় ”
” তোমার কি মনে হয় ভাবিপু ”
” আমার মনে হয় ছেলে হবে ”
কুয়াশা বলল ” মেয়ে বাবু হলে সবসময়ই সাজুগুজু করিয়ে রাখবো ছেলে বাবু হলে সাজাতে পাবো না তো”
মেঘা বলল ” ছেলে বাবু হলেও সাজাতে ইচ্ছে হলে সাজাবো ”
এসব শুনে মেঘ বলল ” ভাইয়া দেখছো ছেলে হোক বা মেয়ে হোক ওরা তাকে সাজিয়েই ছাড়বে। কি অ-ত্যা+চা’র টাই না করবে ”
” তাই তো দেখতেছি ”
পাখি বলল ” কুয়াশা আম্মু মামনি খাবার দিয়েছিলো খাবি? ”
কুয়াশা বলল ” কি খাবার ”
” রুটি, মাংশ ”
” না ওগুলা রুগি দের খাবার আমি খাবো না ”
” তাহলে কি খাবি? চকলেট ”
মেঘ বলল ” তুই পাগ’ল নাকি মে’ন্টাল ক্ষুধা লাগলে কেউ এসব খাই ”
” আমি খাই ”
কিছুক্ষণ পর দোকান আর হোটেল দেখতে পেয়ে তুষার বলল ” মেঘ গাড়ি থামা ”
মেঘ গাড়িতে ব্রেক কোষে বলল ” কেনো? ”
” খাবার কিনবো। মেঘা, তুতুল, কি খাবে? ”
মেঘা বলল ” চিপস, বার্গার আর জুস ”
তুতুল বলল ” পিৎজা আর কোক ”
তুষার বলল ” কুশান ভাইয়া, ভাবিপু কি খাবেন ”
পাখি একটু ভেবে বলল ” এখানে কি রসমালাই পাওয়া যায়? ”
” সেটা তো জানি না দেখতে হবে ”
” আচ্ছা পেলে নিয়ে আসবে আর কিছু লাগবে না ”
“আচ্ছা। ভাইয়া আপনি? ”
” চলো আমি যাচ্ছি ”
কুশান কথা বলে নেমে গেলো। তুষার বলল ” কুয়াশা তুমি কি শুধু ই চকলেট খাবে না-কি অন্য কিছু ও খাবে ”
কুয়াশার তুষারের সাথে কথা বলাতে মোটেই ইচ্ছে ছিলো। না কিন্তু তুষারের দিকে না তাকিয়েই বলল
” চিপস, চকলেট, আইসক্রিম আর জুস ”
ওদের গাড়ি থামাতে দেখে বড়দের গাড়িটাও থামিয়ে দিলো। দুপুর হয়ে যাওয়ায় সকলের জন্য এক প্যাকেট করে বিরিয়ানির কিনলো। গাড়িতে বসে যেনো যে যার ইচ্ছে মতো খেয়ে পারে। বিরিয়ানি, পানি, আর সকলের পছন্দের খাবার নিয়ে গাড়ি আবারও চলতে শুরু করলো।

তিশা কৌশলকে বলল ” ভাই কুয়াশার অর্নাসের এক্সাম তো এই বছরের শেষের দিকে। আমি বলছিলাম কি ও এক্সাম হয়ে গেলে। তুষার কুয়াশার অনুষ্ঠান করে বিয়েটা হয়ে যাক কি বলেন ”
কৌশল বলল ” আমি ও তাই ভাবছিলাম ভাবি। দূরে দূরে রেখে ওদের দূরত্ব বাড়ছে বৈই কমছে না ”
কেয়া আমতা আমতা করে বলল ” এতো তারাতাড়ি
কৌশল কেয়ার কথার অর্থ বুঝতে পেরে বলল
” তোমরা তো সারাদিন ঝগড়া। কুয়াশা চলে গেলেই তো বাঁচো বল এখন মন খারাপ করছ কেনো? ”
কেয়া রাগলো না বলল ” তোমার কষ্ট হচ্ছে না মেয়ের বিয়ে কথা শুনে ”
” কষ্ট হলেই বা কি ওদের তো বিয়ে হয়ে গেছে। ”
মুন্নি বলল ” এক্সাম শেষ হলে মেঘাও বিয়ের কথা ভাবিছি। ছেলে দেখতে হবে। ”
মনির বলল ” হ্যাঁ সে তো ছেলে মেয়েগুলো কত বড় হয়ে গেছে। বিয়েও দিতে হবে ”
কৌশল বলল ” সেদিন ছোট ছিল আজ কত বড় হয়ে গেছে ”
তিয়াশ বলল ” এতো মন খারাপ করছিস কেনো? বিয়ে তো দিতেই হবে একদিন ”
কেয়া বলল ” মেঘা আর কুয়াশার বিয়ে একসাথে হলে কেমন হয়? ”
তিশা বলল ” ভালোই হয়। মেঘার জন্য তো সুপাত্র খুঁজতে হবে ”
মুন্নি বলল ” ঘটক কের সাথে এসে কথা বলতে হবে মেয়েকে নিয়ে আমি বড্ড চিন্তায় আছি ”
কেয়া বলল ” চিন্তা করিস না ছোটো মেঘার জন্য ভালো ছেলেই খুঁজে আনবো সকলে মিলে। কোনো তারাহুড়া নেই দেরি হলেও সমস্যা নেই তো ”
কৌশল বলল ” কুয়াশাকে কি তুষার সাথে করে সুইজারল্যান্ডে চলে যাবে ”
তিয়াশ বলল ” এসব নিয়ে তো এখনো কিছু কথা হয়নি তুষারের সাথে। ”
তিশা বলল ” তুষারের জব যেহেতু ওখানে কুয়াশা কেউ ওখানেই নিয়ে যাবে ”
কৌশলের মনের মধ্যে মেয়েকে না দেখতে পাওয়ার কষ্ট হলো যেনো। মেয়ে ছাড়া থাকা হয় নি কখনো মেয়ে দুইটাকে ছাড়া বাড়ি ফাকা ফাঁকা নিষ্প্রাণ লাগে। তাদের কে ছাড়া বাড়ি কিভাবে থাকবে এতোগুলো মানুষ তারাই বা কিভাবে থাকবে? থাকতে পারবে কি? না-কি সেই ছোট বেলার মতো কেঁদে কেটে সমুদ্র বানিয়ে ফেলবে? তার রাজ্যের রাজকণ্যাটা কি সুখী হবে? তুষার ছেলে হিসেবে খারাপ না ভালোই তবুও মেয়ে ছেলে মানুষী তো কম না। একটুতেই অভিমান হয় তার। একটুতেই কেঁদে দেয়। এসব নিয়ে তুষারের সাথে তার বসতে হবে।

চলবে ইনশাআল্লাহ#প্রেমরোগ-১৪
#তাসনিম_তামান্না

দীর্ঘ ৭ ঘন্টা জার্নি করে চাঁদপুরে এসে পৌঁছেছে ওরা তখন সন্ধ্যা নেমেছে। চারিদিকে আঁধার গ্রাস করে ফেলছে। গাড়ির এসে থেমেছে পুরোনো রং চটা কালো শেওলা পড়া দু’তালা বাড়িটার সামনে গাড়ির শব্দ পেতেই বাড়ির কেয়ারটেকার জিরো বাল্বের হলদেটে আলো জ্বালিয়ে ছুটে বেরিয়ে আসলো। কুশল বিনিময় করে। ব্যাগ পত্র নিয়ে সবাই ভিতরে চলে গেলো। রান্না করার জন্য রাধুনি ঠিক করে রাখা ছিলো। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো। ক্লান্ত হওয়ায় সকলে ঘুমে ঢলে পড়লো। কুয়াশার চোখ মাত্র লেগে এসেছিল তখনি ফোন বেজে উঠলো ঘুমে ব্যঘাত ঘটায় বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে ফোনে দেখলো তুষার ফোন দিয়েছে। কুচকানো ভ্রু যুগল আরো কুঞ্চিত হলো। কৌতুকলে ফোন ধরে বলল ” কি হয়েছে? ”
তুষারের গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো
” ছাদে আসো ”
কুয়াশার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো অবাক হয়ে বলল
” এতো রাতে? ছাদে যাবো কেনো? ”
” আমি বলছি তাই ”
তুষারের উত্তরে কুয়াশা ফোঁস করে উঠে বলল
” আপনি বললেই যেতে হবে না-কি? পারবো না যেতে ”
তুষার শান্ত গাম্ভীর্যের সঙ্গে হু ম কি দিয়ে বলল
” আমি কিন্তু রুমে চলে আসবো ”
কুয়াশা একটু দমে গেলো। শান্ত কন্ঠে বলল
” আমি ক্লান্ত কাল দেখা করি ”
” তুমি আসবে? না-কি আমি আসবো? ”
কুয়াশা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল ” আসছি ”
ভেবসা গরমে মাথার ওপরের পাখাটায় মৃদু শব্দ করে ঘুরছে। পাশে মেঘা বেঘোরে ম রার মতো ঘুমাচ্ছে। কুয়াশা আস্তে করে দরজা চেপে ফোনের ফ্লাস জ্বালিয়ে সতর্কতার সাথে ছাদে চলে গেলো। চাঁদনী রাত চারিদিকে প্রকৃতির আলোয় ঝলমল করছে স্পষ্ট সব কিছু দেখা যাচ্ছে। ছাদে এসে দেখলো তুষার রেলিং এর ওপর পা ছুলিয়ে বসছে আছে। কুয়াশা আঁতকে ওঠে দ্রুত পায়ে কাছে গিয়ে তুষার হাত ধরে নিচে নামিয়ে বলল
” পা গ ল না-কি আপনি? এতো রাতে কেউ রেলিং এর ওপরে উঠে বসে। যদি পড়ে যেতেন ”
তুষার কুয়াশার কথার প্রতিউত্তর করলো না। তুষার কুয়াশার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো চাঁদে আলো পড়ায় কুয়াশার রূপ যেনো বহুগুণ বেড়ে গেলো। তুষার কুয়াশার সামনে থাকা একগুচ্ছ চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দিয়ে বলল
” ~চন্দ্রকন্যা তোমার রূপে মুগ্ধ আমি
তোমার আলোয় আলোকিত আমি~
তুমি কি জানো চন্দ্রকন্যা?
কেউ তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে!
তার হৃদয় তোমার হৃদয়ের স্পর্শ পেতে বড্ড ব্যাকুল হয়ে থাকে ”
তুষারের ঘোর লাগা কন্ঠে প্রতিটা কথায় কি জেনো ছিল। কুয়াশার বুকের ধুকপুকানি কয়েকগুন বাড়তে লাগলো। কুয়াশা জ্বীব দিয়ে অধর জোড়া ভিজিয়ে শুকনো ঢোক গিলে দৃষ্টি এলোমেলো করে আমতা আমতা করে বলল ” কি বলছেন এগুলা? ”
তুষার চমকে উঠে দুকদম পিছিয়ে গিয়ে ঘাবড়ে গিয়ে বলল ” কই কি বললাম? আজব? ”
কুয়াশার ভ্রু যুগল কুঞ্চিত বিরক্তি হয়ে বুঝে গেলো তুষার পালটি খাচ্ছে। তাই সে প্রশংঙ্গ বাদ দিয়ে কন্ঠে ঝাঁঝ এনে বলল ” কেনো ডেকেছেন? তারাতাড়ি বলে ফেলুন নিচে যাবো ঘুম পাচ্ছে ”
তুষার কোনো ভনিতা ছাড়ায় বলল ” আমাকে ইগনোর করছ কেনো? ”
কুয়াশা ঝাঁজ মেশানো গলায় বলল ” আজব। আমি কেনো আপনাকে ইগনোর করতে যাবো? ”
” ইগনোর করছ না? তাহলে কি করছ? ”
কুয়াশা মুখ ঘুরিয়ে বলল ” কিছু করছি না। আপনার কথা শেষ হলে যাচ্ছি ”
তুষার কুয়াশার হাত ধরে আটকে দিলো রিনরিনে শান্ত স্বরে বলল ” আ’ম সরি। আমি জানি তোমাকে চ ড় মা রা টা ঠিক হয় নি। কিন্তু তখন ঔ সময় আমার মাথার ঠিক ছিল না রাগের মাথায় মে রে দিয়েছি বিশ্বাস করো ”
কুয়াশা তুষারের দিকে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো। তুষারের চোখমুখে তীব্র অ প রা ধ বোধ ফুটে উঠেছে। তুষার কুয়াশার দৃষ্টি দেখে হেসে হাত ধরে কাছে এনে বলল ” চলো দোলনায় বসি ”
কুয়াশা মিনমিন করে বলল ” ঘুম পাচ্ছে ”
” বেশিক্ষণ থাকবো না। জাস্ট ১৫ মিনিট ”
কুয়াশা সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে তুষারের পিছনে পিছনে দোলনায় গিয়ে বসলো। কুয়াশা ছাদের চারিদিকে চোখ বুলালো ছাদটা পরিষ্কার কিন্তু ছাদে দোলনা ছাড়া কিছু নেই। মনে মনে ভাবলো ফুল গাছ হলে ফুলের সুবাসে চারিদিক মুখরিত হতো।
তুষার গান ধরলো কুয়াশার কোমড় চেপে কাছে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। কুয়াশা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে তুষারের মুখে লেগে ক্ষীণ হাসিটায় মুগ্ধ হলো

অবাক চাঁদের আলোয় দেখো
ভেসে যায় আমাদের পৃথিবী
আড়াল হতে দেখেছি তোমার
নিষ্পাপ মুখখানি,

ডুবেছি আমি তোমার চোখের অনন্ত মায়ায়
বুঝিনি কভু সেই মায়াতো আমার তরে নয়,
ডুবেছি আমি তোমার চোখের অনন্ত মায়ায়
বুঝিনি কভু সেই মায়াতো আমার তরে নয়

[বাকিটা ইউটিউবে শুনে নিবেন]

গান শেষ করে তুষার কুয়াশার দিকে ভ্রু নাচিয়ে বলল ” এখন ঘুম পাচ্ছে না? সারারাত এভাবে থাকবে? ”
কুয়াশা হঠাৎ লজ্জা পাখিরা এসে হানা দিলো মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল ” ছাড়ুন ”
তুষার কুয়াশার মুখ দেখে বলল ” তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? ”
কুয়াশার লজ্জা দ্বিগুণ বেড়ে গেলো আমতা আমতা করে বলল ” লজ্জা পাবো কেনো ”
” আই সি ”
কুয়াশা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল ” ছাড়ুন না ”
” আচ্ছা ছাড়ছি না ”
কুয়াশা হতভম্ব হয়ে তুষারের দিকে তাকিয়ে বলল
” ছাড়তে চলছি আমি ”
” কই এখনি যে তুমি ছাড়তে বারণ করলে ”
” এমন বিহেভ করছেন কেনো? জ্বর হয়েছে আমার?”
কুয়াশা হাতের উল্টো পিট দিয়ে তুষারের কপাল ছুঁয়ে দেখে বলল ” না তো ঠিকি আছে ”
” উহুম শরীরের জ্বর না মনের জ্বর ”
” সেটা আবার কেমন জ্বর? ”
” সেটা কারোর বিরহে পুড়তে পুড়তে যখন মন বিষিয়ে উঠে চারিদিকে তিক্ততায় ভরে যায়। তারপর তার সাথে সংস্পর্শ পায় ওখন মনের জ্বর হয় ”
কুয়াশার কন্ঠে অবাক ঢেলে বলে
” এটা আবার কেমন জ্বর? ”
” তুমি ভালোবাসলে এমন জ্বর হবে তোমার ও ”
” তাহলে আপনিও কি কাউকে ভালোবাসেন? ”
” হুম বাসি ”
” বাসি কাউকে ”
কুয়াশার হঠাৎ মন খারাপ হলো ছোট করে বলল
” ওহ ”
তুষার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল ” কুয়াশা জানো তুমি খুব বো’কা ”
কুয়াশা কোনো রিয়াক্ট না করে বলল ” জানি ”
” বাহ তাই না-কি আর কি কি জানো? ”
কুয়াশা ছটফট করে বলল
” আমি ঘুমাবো। ছাড়ুন আমায় ”
” শোনো আমি তোমাকে আমার চন্দ্রকন্যা কল্পনা করে অনেক কিছু বলে ফেলছি তুমি কিছু মনে রেখ না কেমন ”
কুয়াশা শান্ত হয়ে গিয়ে বলল ” আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে? ”
” হুম থাকবে না কেনো? ”
কুয়াশার হঠাৎ রাগ লাগলো রাগে সব কিছু ধ্বং’স করে দিতে ইচ্ছে হলো। কান্নারা কুন্ডলী পাকিয়ে ঠেলে বের হতে চাইলো। অদৃশ্য শক্তি এসে শ্বাসরুদ্ধ করে ফেললো। মনে মনে মেয়েটার জন্য ঈ-ষৎ হলো। কন্ঠ নালি সরু করে বলল
” থাকে বাংলাদেশ আবার সুইজারল্যান্ড ও ”
কুয়াশার মন কেঁদে উঠলো। অসুরের শক্তি ভর করলো যেনো নিজেকে ছাড়িয়ে বলল ” আসছি বড্ড ঘুম পাচ্ছে ”
বলে দ্রুত পায়ে চলে গেলো। তুষারের কুয়াশর ফেস দেখে মুখ টিপে হেসে নিজেও নিচে চলে এলো। কুয়াশার রুমে এসে শুতেই চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি গড়িয়ে পড়লো। কুয়াশা বির বির করে বলল
” ওনাকে তো আমি ভালোবাসি না তাহলে কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে? ”

চলবে ইনশাআল্লাহ
রিচেক করি নাই

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here