প্রেমের মরা জলে ডুবে পর্ব -১৪

#প্রেমের_মরা_জলে_ডুবে

#তানিয়া

পর্ব:১৪

শুভা ছটফট ছটফট করছে।ইচ্ছে করছে এক দৌড় দিয়ে তিমিরের কাছে গিয়ে নীলের আসার কথাটা বলতে।কিন্তু আরো একটা পিরিয়ড আছে। তাছাড়া এখনের ক্লাসটাও শেষ হচ্ছে না। দশ মিনিট সময়টা দশ ঘন্টা লাগছে।অবশেষে ক্লাসটা শেষ হতে শুভা দৌড়ে গেলো তিমিরের ক্লাসে।শুভার মুখ দেখে তিমির ভয় পেলো।

কিরে তুই এমন হাঁপাচ্ছিস কেনো কি হয়েছে?

তিমির ও এসেছে। আমাকে দেখা করতে বললো,?

তিমির কিছুটা ভেবে বললো,

তুই কি আমার কথা বলেছিস ওকে?

তুই না কথা বলতে মানা করলি বলবো কোত্থেকে?

নাটক কম করিস।আহা আমার কথা শুনে একদম রাজ্য জয় করেছে।তুই যে লুকিয়ে কথা বলিস সেটা জানি।বাদ দে ওসব এখন যা জিজ্ঞেস করছি তা বল?

না তোর কথা বলি নি।তবে ঝাপসা ঝাপসা ইঙ্গিত দিয়েছি।

তিমির কোণা চোখে তাকালো যার মানে তোর ঝাপসা মানেই একটা অনুচ্ছেদ।

শোন আমিও তোর সাথে যাব আর হ্যাঁ ভুলেও ওকে বলবি না আমার কথা।আমি আড়ালে থাকবো দেখবো ওর আচার আচরণ তারপর নিজেই সামনে যাব।তাছাড়া আগে থেকে ও জানলে হয়তো সাধু সাজার চেষ্টা করবে।তাই কোনো কথা বলবি না।

কিন্তু ও তো এখনি আমাকে যেতে বললো কারণ মাত্র ঢাকায় এসে পৌঁছালো একেবারে আমার সাথে দেখা করে যাবে বাড়িতে।তিমির আমার খুব ভয় লাগছে।

ধূর বেটি ভয় কীসের আমি আছি তো।আর হ্যাঁ তোর ফোনটা দে।

কেনো আমার ফোনে কি কাজ?

তোকে আমি বিশ্বাস করি না আবার হয়তো আশিকের পিরিতে লুকিয়ে আমার খবর
জানায় দিবি?

শুভা থমথমে মুখ নিয়ে ফোনটা এগিয়ে দিলো।বের হতে শুভা বললো

এ পিরিয়ড কার ক্লাস?

তোর ভাইয়ের?

কি বলিস বকা দিবে না, কারণ ভাইয়া তো জানে আমরা দুজনে কলেজে এসেছি।

চোখ বড় করে জানতে চাইলো শুভা।

দূর ওসব পরে দেখা যাবে।আগে তোর জীবনের জীবনটা বাঁচায়।

তিমির দশ মিনিট আগে এসে শুভা আর নীলের সাথে বসলো।একঘন্টা আগে সে আলাদা করে বসেছিল। শুভা বসেছিল অন্য জায়গায়। তিমির এমনভাবে বসেছে যাতে নীল না দেখে।দরজা ঠেলে একটা ছেলে ঢুকতেই হঠাৎ শুভা তিমিরকে ইশারা দিয়ে বুঝিয়ে দিলো এই নীল।তিমির ভালো করে লক্ষ্য করলো নীলকে।লম্বা, সুস্বাস্থ্য আর গেট আপ মাশাল্লাহ ধরনের।তবে দেখার পালা আচরণ কেমন?

নীল ইতস্তত করে বসলো আর কথা বলার মধ্যে বেশিরভাগ দৃষ্টি নিচে রেখেছিল।সে নিজেকে গুটিয়ে রেখে বসলো।তার কথা মাধ্য একটা শালীনতা ছিল যা তিমিরের ভালো লাগলো।তিমির আস্তে করে ওদের টেবিলে এসে বসতে নীল তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো।তিমির গলাকে গম্ভীর করে বললো,

বসুন, দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?

আআপনি কে?

আমি তিমির আর শুভার বান্ধবী ওরফে ভাইয়ের বউ।আশা করি আরকিছু বলতে হবে না।

নীল তিমিরের পরিচয় পেয়ে ভয় পেয়ে গেলো।সে একেবারে সড়ে দাড়ালো।তিমির আবারও বসতে বলে তার দিকে চেয়ে রইলো।নীল আস্তে করে নিজের সিটে বসে পড়লো।

শুনুন আপনার সম্পর্কে আমাকে সব বলা হয়েছে। আপনিও অবশ্যই শুভা সম্পর্কে সব জানেন।আমি বেশি কিছু বলবো না শুধু এটা বলবো আপনি ওর পথ থেকে সরে দাঁড়ান। আমার শ্বাশুড়ি আর বর কেউ এটা মানবে না।অযথা শুভার পেছনে টাইম পাস করছেন।তাছাড়া যা হওয়ার নয় তা নিয়ে কাদা ছোড়া ঠিক না।

দেখুন আপনি আমার সম্পর্কে কি শুনেছেন জানি না তবে শুভাকে আমি যথেষ্ট ভালেবাসি।ছোট থেকেই ভালোবাসি।কিন্তু ও ছোট ছিল বলে কখনো জানায় নি।অনেক বছর পর দেখা হলে ভাবলাম এখন চুপ থাকলে ওকে হারাবো তাই আমার মনের কথা ওকে বলে দিয়েছি।আমি ভালো জায়গায় পড়াশোনা করছি ইনশাআল্লাহ পড়াশোনা শেষ করলে অবশ্যই ভালো একটা জব পাবো।ইচ্ছে আছে বাইরে সেটেল হওয়ার। ততদিন যদি শুভা আমার জন্য অপেক্ষা করে তবে আমি সব করবো।

নীলের কথার দৃঢ়তা আর সারল্যতা তিমিরের ভালো লাগলো।সে হেসে শুভাকে ভরসা দিলো। তিমিরের সম্মতি পেয়ে শুভার চোখে জল এলো।

বাসায় আসতেই দেরী হয়ে যায় দু’জনের।শুভা দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে গেলে তিমির গজগজ করে কাপড় নিয়ে শুভ্রর রুমে যায়।শুভ্র আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুচ্ছিল পেছনে তিমিরকে দেখে ঘুরে দাঁড়ায়
তিমির বাকা হয়ে হেলান দিয়ে শুভ্রকে দেখছে

কি দেখছো?

আপনাকে?

কেনো আগে দেখো নি?

স্বাদ মিটে না।

কেনো এসেছো

গোসল করতে, শুভা ওয়াশরুমে ঢুকেছে তাই ভাবলাম আপনারটা ব্যবহার করবো অনুমতি দিবেন কি?

এমনভাবে বলছো যেন আমার অনুমতি ছাড়া তুমি কিছু করো না

সেটা অবশ্য ঠিক বলেছেন।

কথাটা বলে চোখ টিপ্পনী দিয়ে তিমির ওয়াশরুমের দিকে যায়। পেছন থেকে শুভ্র প্রশ্ন করে,

ক্লাস না করে দুজনে কোথায় গিয়েছিলে?

তিমির শুভ্রর প্রশ্ন শুনে দাড়ালো কারণ সে জানে এ প্রশ্ন তাকে শুনতে হবে।জবাব সে রেডি রাখলো।

হঠাৎ খারাপ লাগছিল তাই বের হয়ে গেছিলাম।তারপর দুজনে মিলে একটু ঘুরলাম, ফুসকা খেলাম এরপর চলে এলাম।

শুভ্রর দিকে না তাকিয়ে উত্তর দিয়ে চলে গেলো। চলে গেলো না পালিয়ে গেলো এক প্রকার।

শুভা প্রেম করে তিমির তাদের প্রেম দেখে।তিমিরের খুব ইচ্ছে করে শুভ্রর সাথে প্রেম করতে।শুভা আর নীল যেভাবে ফোনালাপ করে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে তিমিরের মন চায় শুভ্র তাকে কল দিয়ে খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলুক।আর শুভ্র বলতে না পারলে তিমির বলবে তবুও শুভ্র শুনুক।কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয়,এমন নিরামিষ মার্কা বেটা যে মিষ্টি কথা তো দূরে থাক স্বাভাবিক কথাও যেন পেট থেকে বের হতে চায় না।আসলে তুরফা আপু একদিকে ঠিক করেছে বিয়ে না করে নাহলে হাঁপিয়ে পড়তো।তিমির বকবক করে বলে শুভ্রর এ নিরবতা তেমন গায়ে মাখে না।আর গায়ে পড়া স্বভাবের হওয়াতে শুভ্রর চুপচাপ পরোয়া করে না।তবুও খুব ইচ্ছে করে শুভ্রর সাথে একটু একান্ত সময় কাটাতে।

নীল চলে যাব বিকেলে কিন্তু শুভা দেখা করতে পারবে না আর পারবে কি করে বিকেলে তো সে বের হয় না।এদিকে নীল দেখা না করে যেতে চাইছে না।তিমিরকে বলতে সে প্ল্যান করলো,শপিং এ যাওয়ার নাম করে দুজনে বের হবে,তিমির যাবে টিউশনিতে আর শুভা যাবে দেখা করতে।

শুভা নীলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিল কিন্তু নীলের চোখ স্থির হতেই শুভা সে দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে চোখ ঘুরালো আর শুভার চোখের সাথে সাথে পুরো শরীর যেন অনড় হয়ে গেলো। কারণ শুভ্র সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

সেদিন শুভা আর তিমিরের ক্লাস বাদ দেওয়া আর আজ আবার দুজনের একসাথে বের হওয়া বিষয়টা শুভ্র হজম করতে পারলো না।শুভ্র শান্ত থাকে তার মানে এই নয় যে শুভ্র বোকা।এর আগেও তিমির শুভা বের হয়েছে কিন্তু কিছুদিন শুভার ব্যবহার শুভ্রর কাছে সন্দেহের লাগলো।তাই সে পরীক্ষা করতে ফলো করে যদিও অন্যায় তবুও নিজের আপনজনের ভালোমন্দ বিবেচনা করে শুভ্র এ সিদ্ধান্ত নিলো।

শুভা এ তোর শপিং? তিমির কোথায়?

শুভা ভাইয়ের কন্ঠের স্বরে বুঝে গেলো শুভ্র মারাত্মক রেগে গেছে। শুভা ভয়ে ভেতরে আধমরা হয়ে গেলো। শুভ্র কিছু বললে না শুধু বললো যেন তার সাথে চলে আসে।

তিমিরকে শুভা ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে শুভ্রর কথাটা।শুভা থেকে কথাটা জেনে তিমিরের বুকটা ধুকধুক করছে।সে টিউশন থেকে বাসায় ফিরে শুভ্রর রুমে গেলো।শুভা শুভ্র দুজনে বসে আছে। তিমির যেতে শুভ্র সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিলো।তিমিরের চড় দেখে শুভা কান্না শুরু করলো তবে নিঃশব্দে যেন বাইরে কান্না না যায়। তিমির পাথর হয়ে গেলো শুভ্রর ব্যবহারে।

তুমি আমার সাথে অন্যায় করেছো তবুও তোমাকে কোনে শাস্তি দিই নিই,কোনো কড়া কথা বলিনি কিন্তু তাই বলে যে তোমার সাতখুন মাফ হয়ে যাবে এটা কে বললো?তুমি কে হও এ বাড়ির, কে তোমাকে সাহস দিয়েছে শুভার ব্যাপারে নাক গলানোর?শুভার পরিবারের লোকজন হিসেবে আমরা বেঁচে আছি তোমাকে কে বলেছিল আগ বাড়িয়ে ওকালতি করতে?ছোট থেকে বেপরোয়া ছন্নছাড়া হয়ে মানুষ হয়েছে বলে যে মন যা চায় তাই করবে ভাবলে কি করে?তুমি আমার সাথে একটা অন্যায় করেছো তাই বলে আমার বোনের ক্ষেত্রেও সেটা হবে তা ভাবলে কি করে?এরজন্য বিয়ে করার ক্ষেত্রে একটা মেয়ে বা ছেলের পরিবার খোঁজা হয় যাতে পরিবার থেকে শিক্ষা পেয়ে মেয়েটা পরেরঘরে গিয়ে যেন সবাইকে আপন করে নিতে পারে তুমি সেটা পারো নি তিমির।আসলে তোমার মাথার ওপর তো ছাদ ছিলো না তাই উগ্র হয়ে গেছো।না শিখেছো ম্যানার আর না জানো শিক্ষা?তুমি আমার ক্ষতি করার পর এখন শুভার পেছনে লেগেছো।মনে রেখো তোমার এ আশা পূরণ হবে না।তুমি তোমাকে নিয়ে চিন্তা করো আমার বোন বা আমার পরিবার নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে।গট ইট? নাউ গেই আউট মাই রুম!

শুভ্র এক নাগাড়ে কথা গুলো শেষ করে তিমিরকে টেনে রুম থেকে বের করে দিলো।শুভাও কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলো।

শুভা তিমিরের কোলের কাছে বসে কান্না করছে।তিমির হাতগুলো কোলে ভাজ করে একদৃষ্টিতে মেঝের দিকে চেয়ে আছে। তার জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাতটা সে আজ শুভ্রর কাছ থেকে পেয়েছে।এতবছর একা একা বড় হওয়ার পরও কেউ তাকে এভাবে কড়া কথা বলার সুযোগ পায় নি,কেউ তাকে পরিবার নিয়ে প্রশ্ন তুলে নি।আপন তো দূরে থাক পর হওয়া মানুষগুলো পর্যন্ত তিমিরকে এত কঠিন অপমান করে নি।আর শুভ্র কিনা তাকে এভাবে অপমান করলো,এতগুলো কঠিন কথা শোনালো। তিমির কি কেউ নয় এ বাড়ির, সত্যিই কি তিমিরের সাথে কারো সম্পর্ক নেই,তিমির ক্ষতি করেছে শুভ্রর,ক্ষতিও করছে শুভার?শুভ্র এত নিষ্ঠুর হয়ে তাকে কথা শোনালো?তিমির শত আঘাতে কষ্ট পায় না কারণ কষ্ট নিয়ে যার জন্ম কষ্টের সাথে তার কিসের দূরত্ব। কিন্তু আজ প্রিয় মানুষের কথাগুলো তার কলিজাকে ক্ষত বিক্ষত করেছে।কষ্টে দুঃখে তিমির পারলে এক্ষুনি নিজেকে শেষ করে দিত কিন্তু ঐ যে মৃত্যুটা তার হাতে নয়!

তিমির, তিমির প্লিজ কথা বল,আমি ভাই য়ার হয়ে ক্ষমা চাইছি।ভাই য়া রেগে গিয়ে হয়তো এত কথা বলেছে কিন্তু ভাইয়া ওমন নয়। তিমির প্লিজ কথা বল?

শুভা আমি তোর ক্ষতি চেয়েছি,তুই বিশ্বাস করিস এটা?শুভা আমি তোর ভাই ্য়ের ক্ষতি তোর ক্ষতি কখনো চাই নি রে কখনো চাই নি।আমি এতিম হলেও কারো ক্ষতি চাই নি,পরিবার না থাকলেও কখনো তোদের পর ভাবি নি।শুভা তুই বিশ্বাস কর আমি উগ্র হতে পারি,উশৃংখল নয়,আনন্দ দিতে পারি কারো ক্ষতি নয়?শুভা তোর ভাইকে কীভাবে বললে বিশ্বাস করবে যে আমি তোদের ক্ষতি চাই না বল না শুভা কীভাবে বললে তিনি বিশ্বাস করবে?

তিমির কথা বলার প্রতিটি বাক্যে চোখের জল ফেলছিল।শেষ মুহুর্তে সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না মুখে কাপড় গুঁজে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো।তিমিরকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো।দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। একজন কাদছে প্রিয় মানুষের করা অপমানে অন্যজন কাদছে প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ফেলা আর বোন সমতুল্য সখীর কষ্টে!

সেই ঘটনার পর শুভ্র আর তিমির একে অপরকে এড়িয়ে চলে।কেউ কারো সাথে টু শব্দ ্ও করে না।শুভ্র খাওয়ার টেবিলে আসলে তিমির থাকে ন।ক্লাসে গেলেও তিমির এমনভাবে বসে যে দেখা যায় না।তাতে অবশ্য শুভ্রর তেমন পরিবর্তন দেখা যায় না।সে মনে করে যা করেছে শুভার ভালোর জন্য ্ই করেছে কারণ নীলের পরিবারকে কখনো নিপা মানবে না।সেই সাথে শুভাকে শুভ্র চিনে।এখনো এসব প্রেম ভালোবাসাজনিত বিষয় গুলো শুভা ভালো করে বুঝে উঠতে পারে নি।পারলেও শুভ্র চায় না শুভা আবেগে পড়ে কোনো ভুল করুক?হ্যাঁ তিমিরকে সেদিন চড় দেওয়া বা কথাগুলো একটু বেশি সিরিয়াস হয়ে গেছে তাতে কি?এ মেয়ের অতিরিক্ত উগ্রতার জন্য এতটুকু শাসন সে করতেই পারে?তবে মানবিক দিক দিয়ে ভাবলে শুভ্র কষ্ট পায়,আসলেই কি এটা শাসন ছিলো?

শুভ্র কলেজ যাওয়ার আগে এখন ঠিক মতো তার জিনিসগুলো পায় না।এতদিন তিমির গুছিয়ে রাখতো বলে, কোনটা কোন জায়গায় সেটা ভুলে গেছে। তাছাড়া আগের মতো বিছানায় কাপড় থাকে না।নিজে থেকে কাপড় সিলেক্ট করতে হয়।এসব করতে গিয়ে বিরক্তই হয় শুভ্র তবুও তিমিরকে ডাকে না বা সেটা প্রকাশ করে না।সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে শুভ্র জানে তাই তিমির বা কারো অনুপস্থিতি সে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

হাসপাতালের করিডোরে সবাই অপেক্ষা করছে,শান্তা বেগমের জ্ঞান এখনো ফিরে নি।ডাক্তার জানিয়েছেন তিনি স্ট্রোক করেছেন তবে সেটা গুরুতর নয়।এমুহূর্তে তার ভালো ঘুম আর রেস্ট দরকার।হঠাৎ শান্তা বেগম কেনো স্ট্রোক করলেন কেউ জানে না শুধু নিপাকে কল করে জানানো হয় শান্তা ্কে হাসপাতালে এডমিট করা হয়েছে যেন তারা আসে।

ভাই সাহেব কি হয়েছে খুলে বলুন তো,শান্তার হঠাৎ স্ট্রোক হলো কেনো?

কবির সাহেব কথা বলতে পারছেন না কান্নার জন্য। তবুও যা বললেন তাতে বোঝা গেলো, তুরফা হঠাৎ কোত্থেকে একটা ছেলে এনে জানায় যে সে তাকে বিয়ে করেছে।শান্তা আকস্মিক ঘটনায় শকড হয়।এ নিয়ে মা মেয়ের মধ্যে যথেষ্ট তর্ক শুরু হয়।একসময় শান্তা ছেলেটাকে চড় দিলে তুরফা তার মাকে ইচ্ছে মতো কথা শুনিয়ে চলে যায়। মেয়ের ব্যবহার আর অপমান নিতে না পেরে হঠাৎ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।এরপর হাসপাতালে আনা হলে জানতে পারে সে স্ট্রোক করেছে।নিপা তো অবাক হয়ে যায় সব শুনে।সে মনে মনে শুকরিয়া করে, ভাগ্যিস শুভ্রর সাথে তুরফার বিয়ে হয় নি নাহলে কি যে করতো এ মেয়ে কে জানে?

তিমির এখন বাপের বাড়ি থাকে কারণ শান্তাকে দেখাশোনা করার জন্য কাউকে দরকার তাই তিমির নিজেই থেকে গেলো।একদিকে ভালো হলো কারণ তিমির চাইছে না শুভ্রর আশেপাশে থাকতে কিন্তু কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিলো না বলে ওখানে পড়ে ছিল।এখন বাপের বাড়ি এসে তার ভালোই লাগছে।

নিপা তুরফার বিষয়টা নিয়ে অনেক কথা বললো।নিজে আগ বাড়িয়ে কেনো যে সম্পর্ক করতে গিয়েছিল সেই ভয় নিয়ে এখনো ভাবছে।যদি এ মেয়ে তার ঘরের বউ হতো তাহলে কি যে হতো ভাবলেই ভয়ে কাটা দেয়।তবে তিমিরের দোষ তিনি বাদ দিলেন না কারণ যতই হোক এমন হীরের মতো ছেলের সাথে ও মেয়ে বড্ড বেমানান তবুও একটা প্রশান্তি পেলো যে তিমিরের জন্যই বিয়েটা বানচাল হলো।

শুভার রুমে এসেছিল শুভ্র নীলের বিষয়ে কথা বলতে কিন্তু শুভা রুমে না থাকাতে শুভ্র চলে যাচ্ছিল।এমন সময় কল বেজে ওঠে শুভার।শুভ্র ফোনটা হাতে নিতে দেখে শাঁকচুন্নি নাম দিয়ে সেভ করা। বুঝতে পারলো এটা তিমির।কল ধরে হ্যালো বলার আগেই তিমির গড়গড় করে কথা বলতে থাকে,

কিরে ডাকিনি কল ধরতে এতক্ষণ লাগে?শোন আমি তো প্ল্যান ছাড়াই বাসায় এসেছি এখন আমার কিছু জিনিস লাগবে।তুই কষ্ট করে আমার কয়েকটা বই আর কিছু ভালো জামা কাপড় দিয়ে যাস তো।কারণ টিউশনে যাওয়ার মতো ভালো কাপড় এ বাড়িতে নেই। শুনছিস কি বললাম?এ শুভা কথা বলছিস না কেনো, শুভা?

শুভ্র এতক্ষণ তিমিরের কথাগুলো শুনছিলো।তার ভালো লাগছিল তিমিরের গলা শুনতে।অনেকদিন হলো তিমিরের গলা শুনে না।শুভ্র কথা বলার আগেই তিমির আবারও বলে উঠলো,

ডাকিনি,দজ্জাল কি সামনে দাঁড়িয়ে আছে? যদি হু বলিস তাহলে হ্যাঁ যদি গলা খাঁকড়ি দিস তবে না,বল এখন দজ্জাল সামনে আছে কি?

শুভ্রর মুখটা কালো হয়ে গেলো।কারণ দজ্জাল বলতে এখানে যে তিমির তাকেই বুঝিয়েছে সেটা আর সন্দেহ নেই। এবার সে নিজেই মুখ খুললো,

ডাকিনি নেই আমি দজ্জাল কথা বলছি?কি যেন বলছিলে আবারও বলো?

শুভ্রর গলা শুনে ফোনের ওপাশে নিশ্চুেপ হয়ে গেলো তিমির।তারপর কাট করে ফোনটা রেখে দিলো।কান থেকে ফোন নামিয়ে মুচকি হাসলো শুভ্র
,
,
,
চলবে…….#প্রেমের_মরা_জলে_ডুবে

#তানিয়া

পর্ব:১৪

শুভা ছটফট ছটফট করছে।ইচ্ছে করছে এক দৌড় দিয়ে তিমিরের কাছে গিয়ে নীলের আসার কথাটা বলতে।কিন্তু আরো একটা পিরিয়ড আছে। তাছাড়া এখনের ক্লাসটাও শেষ হচ্ছে না। দশ মিনিট সময়টা দশ ঘন্টা লাগছে।অবশেষে ক্লাসটা শেষ হতে শুভা দৌড়ে গেলো তিমিরের ক্লাসে।শুভার মুখ দেখে তিমির ভয় পেলো।

কিরে তুই এমন হাঁপাচ্ছিস কেনো কি হয়েছে?

তিমির ও এসেছে। আমাকে দেখা করতে বললো,?

তিমির কিছুটা ভেবে বললো,

তুই কি আমার কথা বলেছিস ওকে?

তুই না কথা বলতে মানা করলি বলবো কোত্থেকে?

নাটক কম করিস।আহা আমার কথা শুনে একদম রাজ্য জয় করেছে।তুই যে লুকিয়ে কথা বলিস সেটা জানি।বাদ দে ওসব এখন যা জিজ্ঞেস করছি তা বল?

না তোর কথা বলি নি।তবে ঝাপসা ঝাপসা ইঙ্গিত দিয়েছি।

তিমির কোণা চোখে তাকালো যার মানে তোর ঝাপসা মানেই একটা অনুচ্ছেদ।

শোন আমিও তোর সাথে যাব আর হ্যাঁ ভুলেও ওকে বলবি না আমার কথা।আমি আড়ালে থাকবো দেখবো ওর আচার আচরণ তারপর নিজেই সামনে যাব।তাছাড়া আগে থেকে ও জানলে হয়তো সাধু সাজার চেষ্টা করবে।তাই কোনো কথা বলবি না।

কিন্তু ও তো এখনি আমাকে যেতে বললো কারণ মাত্র ঢাকায় এসে পৌঁছালো একেবারে আমার সাথে দেখা করে যাবে বাড়িতে।তিমির আমার খুব ভয় লাগছে।

ধূর বেটি ভয় কীসের আমি আছি তো।আর হ্যাঁ তোর ফোনটা দে।

কেনো আমার ফোনে কি কাজ?

তোকে আমি বিশ্বাস করি না আবার হয়তো আশিকের পিরিতে লুকিয়ে আমার খবর
জানায় দিবি?

শুভা থমথমে মুখ নিয়ে ফোনটা এগিয়ে দিলো।বের হতে শুভা বললো

এ পিরিয়ড কার ক্লাস?

তোর ভাইয়ের?

কি বলিস বকা দিবে না, কারণ ভাইয়া তো জানে আমরা দুজনে কলেজে এসেছি।

চোখ বড় করে জানতে চাইলো শুভা।

দূর ওসব পরে দেখা যাবে।আগে তোর জীবনের জীবনটা বাঁচায়।

তিমির দশ মিনিট আগে এসে শুভা আর নীলের সাথে বসলো।একঘন্টা আগে সে আলাদা করে বসেছিল। শুভা বসেছিল অন্য জায়গায়। তিমির এমনভাবে বসেছে যাতে নীল না দেখে।দরজা ঠেলে একটা ছেলে ঢুকতেই হঠাৎ শুভা তিমিরকে ইশারা দিয়ে বুঝিয়ে দিলো এই নীল।তিমির ভালো করে লক্ষ্য করলো নীলকে।লম্বা, সুস্বাস্থ্য আর গেট আপ মাশাল্লাহ ধরনের।তবে দেখার পালা আচরণ কেমন?

নীল ইতস্তত করে বসলো আর কথা বলার মধ্যে বেশিরভাগ দৃষ্টি নিচে রেখেছিল।সে নিজেকে গুটিয়ে রেখে বসলো।তার কথা মাধ্য একটা শালীনতা ছিল যা তিমিরের ভালো লাগলো।তিমির আস্তে করে ওদের টেবিলে এসে বসতে নীল তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো।তিমির গলাকে গম্ভীর করে বললো,

বসুন, দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?

আআপনি কে?

আমি তিমির আর শুভার বান্ধবী ওরফে ভাইয়ের বউ।আশা করি আরকিছু বলতে হবে না।

নীল তিমিরের পরিচয় পেয়ে ভয় পেয়ে গেলো।সে একেবারে সড়ে দাড়ালো।তিমির আবারও বসতে বলে তার দিকে চেয়ে রইলো।নীল আস্তে করে নিজের সিটে বসে পড়লো।

শুনুন আপনার সম্পর্কে আমাকে সব বলা হয়েছে। আপনিও অবশ্যই শুভা সম্পর্কে সব জানেন।আমি বেশি কিছু বলবো না শুধু এটা বলবো আপনি ওর পথ থেকে সরে দাঁড়ান। আমার শ্বাশুড়ি আর বর কেউ এটা মানবে না।অযথা শুভার পেছনে টাইম পাস করছেন।তাছাড়া যা হওয়ার নয় তা নিয়ে কাদা ছোড়া ঠিক না।

দেখুন আপনি আমার সম্পর্কে কি শুনেছেন জানি না তবে শুভাকে আমি যথেষ্ট ভালেবাসি।ছোট থেকেই ভালোবাসি।কিন্তু ও ছোট ছিল বলে কখনো জানায় নি।অনেক বছর পর দেখা হলে ভাবলাম এখন চুপ থাকলে ওকে হারাবো তাই আমার মনের কথা ওকে বলে দিয়েছি।আমি ভালো জায়গায় পড়াশোনা করছি ইনশাআল্লাহ পড়াশোনা শেষ করলে অবশ্যই ভালো একটা জব পাবো।ইচ্ছে আছে বাইরে সেটেল হওয়ার। ততদিন যদি শুভা আমার জন্য অপেক্ষা করে তবে আমি সব করবো।

নীলের কথার দৃঢ়তা আর সারল্যতা তিমিরের ভালো লাগলো।সে হেসে শুভাকে ভরসা দিলো। তিমিরের সম্মতি পেয়ে শুভার চোখে জল এলো।

বাসায় আসতেই দেরী হয়ে যায় দু’জনের।শুভা দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে গেলে তিমির গজগজ করে কাপড় নিয়ে শুভ্রর রুমে যায়।শুভ্র আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুচ্ছিল পেছনে তিমিরকে দেখে ঘুরে দাঁড়ায়
তিমির বাকা হয়ে হেলান দিয়ে শুভ্রকে দেখছে

কি দেখছো?

আপনাকে?

কেনো আগে দেখো নি?

স্বাদ মিটে না।

কেনো এসেছো

গোসল করতে, শুভা ওয়াশরুমে ঢুকেছে তাই ভাবলাম আপনারটা ব্যবহার করবো অনুমতি দিবেন কি?

এমনভাবে বলছো যেন আমার অনুমতি ছাড়া তুমি কিছু করো না

সেটা অবশ্য ঠিক বলেছেন।

কথাটা বলে চোখ টিপ্পনী দিয়ে তিমির ওয়াশরুমের দিকে যায়। পেছন থেকে শুভ্র প্রশ্ন করে,

ক্লাস না করে দুজনে কোথায় গিয়েছিলে?

তিমির শুভ্রর প্রশ্ন শুনে দাড়ালো কারণ সে জানে এ প্রশ্ন তাকে শুনতে হবে।জবাব সে রেডি রাখলো।

হঠাৎ খারাপ লাগছিল তাই বের হয়ে গেছিলাম।তারপর দুজনে মিলে একটু ঘুরলাম, ফুসকা খেলাম এরপর চলে এলাম।

শুভ্রর দিকে না তাকিয়ে উত্তর দিয়ে চলে গেলো। চলে গেলো না পালিয়ে গেলো এক প্রকার।

শুভা প্রেম করে তিমির তাদের প্রেম দেখে।তিমিরের খুব ইচ্ছে করে শুভ্রর সাথে প্রেম করতে।শুভা আর নীল যেভাবে ফোনালাপ করে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে তিমিরের মন চায় শুভ্র তাকে কল দিয়ে খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলুক।আর শুভ্র বলতে না পারলে তিমির বলবে তবুও শুভ্র শুনুক।কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয়,এমন নিরামিষ মার্কা বেটা যে মিষ্টি কথা তো দূরে থাক স্বাভাবিক কথাও যেন পেট থেকে বের হতে চায় না।আসলে তুরফা আপু একদিকে ঠিক করেছে বিয়ে না করে নাহলে হাঁপিয়ে পড়তো।তিমির বকবক করে বলে শুভ্রর এ নিরবতা তেমন গায়ে মাখে না।আর গায়ে পড়া স্বভাবের হওয়াতে শুভ্রর চুপচাপ পরোয়া করে না।তবুও খুব ইচ্ছে করে শুভ্রর সাথে একটু একান্ত সময় কাটাতে।

নীল চলে যাব বিকেলে কিন্তু শুভা দেখা করতে পারবে না আর পারবে কি করে বিকেলে তো সে বের হয় না।এদিকে নীল দেখা না করে যেতে চাইছে না।তিমিরকে বলতে সে প্ল্যান করলো,শপিং এ যাওয়ার নাম করে দুজনে বের হবে,তিমির যাবে টিউশনিতে আর শুভা যাবে দেখা করতে।

শুভা নীলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিল কিন্তু নীলের চোখ স্থির হতেই শুভা সে দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে চোখ ঘুরালো আর শুভার চোখের সাথে সাথে পুরো শরীর যেন অনড় হয়ে গেলো। কারণ শুভ্র সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

সেদিন শুভা আর তিমিরের ক্লাস বাদ দেওয়া আর আজ আবার দুজনের একসাথে বের হওয়া বিষয়টা শুভ্র হজম করতে পারলো না।শুভ্র শান্ত থাকে তার মানে এই নয় যে শুভ্র বোকা।এর আগেও তিমির শুভা বের হয়েছে কিন্তু কিছুদিন শুভার ব্যবহার শুভ্রর কাছে সন্দেহের লাগলো।তাই সে পরীক্ষা করতে ফলো করে যদিও অন্যায় তবুও নিজের আপনজনের ভালোমন্দ বিবেচনা করে শুভ্র এ সিদ্ধান্ত নিলো।

শুভা এ তোর শপিং? তিমির কোথায়?

শুভা ভাইয়ের কন্ঠের স্বরে বুঝে গেলো শুভ্র মারাত্মক রেগে গেছে। শুভা ভয়ে ভেতরে আধমরা হয়ে গেলো। শুভ্র কিছু বললে না শুধু বললো যেন তার সাথে চলে আসে।

তিমিরকে শুভা ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে শুভ্রর কথাটা।শুভা থেকে কথাটা জেনে তিমিরের বুকটা ধুকধুক করছে।সে টিউশন থেকে বাসায় ফিরে শুভ্রর রুমে গেলো।শুভা শুভ্র দুজনে বসে আছে। তিমির যেতে শুভ্র সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিলো।তিমিরের চড় দেখে শুভা কান্না শুরু করলো তবে নিঃশব্দে যেন বাইরে কান্না না যায়। তিমির পাথর হয়ে গেলো শুভ্রর ব্যবহারে।

তুমি আমার সাথে অন্যায় করেছো তবুও তোমাকে কোনে শাস্তি দিই নিই,কোনো কড়া কথা বলিনি কিন্তু তাই বলে যে তোমার সাতখুন মাফ হয়ে যাবে এটা কে বললো?তুমি কে হও এ বাড়ির, কে তোমাকে সাহস দিয়েছে শুভার ব্যাপারে নাক গলানোর?শুভার পরিবারের লোকজন হিসেবে আমরা বেঁচে আছি তোমাকে কে বলেছিল আগ বাড়িয়ে ওকালতি করতে?ছোট থেকে বেপরোয়া ছন্নছাড়া হয়ে মানুষ হয়েছে বলে যে মন যা চায় তাই করবে ভাবলে কি করে?তুমি আমার সাথে একটা অন্যায় করেছো তাই বলে আমার বোনের ক্ষেত্রেও সেটা হবে তা ভাবলে কি করে?এরজন্য বিয়ে করার ক্ষেত্রে একটা মেয়ে বা ছেলের পরিবার খোঁজা হয় যাতে পরিবার থেকে শিক্ষা পেয়ে মেয়েটা পরেরঘরে গিয়ে যেন সবাইকে আপন করে নিতে পারে তুমি সেটা পারো নি তিমির।আসলে তোমার মাথার ওপর তো ছাদ ছিলো না তাই উগ্র হয়ে গেছো।না শিখেছো ম্যানার আর না জানো শিক্ষা?তুমি আমার ক্ষতি করার পর এখন শুভার পেছনে লেগেছো।মনে রেখো তোমার এ আশা পূরণ হবে না।তুমি তোমাকে নিয়ে চিন্তা করো আমার বোন বা আমার পরিবার নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে।গট ইট? নাউ গেই আউট মাই রুম!

শুভ্র এক নাগাড়ে কথা গুলো শেষ করে তিমিরকে টেনে রুম থেকে বের করে দিলো।শুভাও কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলো।

শুভা তিমিরের কোলের কাছে বসে কান্না করছে।তিমির হাতগুলো কোলে ভাজ করে একদৃষ্টিতে মেঝের দিকে চেয়ে আছে। তার জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাতটা সে আজ শুভ্রর কাছ থেকে পেয়েছে।এতবছর একা একা বড় হওয়ার পরও কেউ তাকে এভাবে কড়া কথা বলার সুযোগ পায় নি,কেউ তাকে পরিবার নিয়ে প্রশ্ন তুলে নি।আপন তো দূরে থাক পর হওয়া মানুষগুলো পর্যন্ত তিমিরকে এত কঠিন অপমান করে নি।আর শুভ্র কিনা তাকে এভাবে অপমান করলো,এতগুলো কঠিন কথা শোনালো। তিমির কি কেউ নয় এ বাড়ির, সত্যিই কি তিমিরের সাথে কারো সম্পর্ক নেই,তিমির ক্ষতি করেছে শুভ্রর,ক্ষতিও করছে শুভার?শুভ্র এত নিষ্ঠুর হয়ে তাকে কথা শোনালো?তিমির শত আঘাতে কষ্ট পায় না কারণ কষ্ট নিয়ে যার জন্ম কষ্টের সাথে তার কিসের দূরত্ব। কিন্তু আজ প্রিয় মানুষের কথাগুলো তার কলিজাকে ক্ষত বিক্ষত করেছে।কষ্টে দুঃখে তিমির পারলে এক্ষুনি নিজেকে শেষ করে দিত কিন্তু ঐ যে মৃত্যুটা তার হাতে নয়!

তিমির, তিমির প্লিজ কথা বল,আমি ভাই য়ার হয়ে ক্ষমা চাইছি।ভাই য়া রেগে গিয়ে হয়তো এত কথা বলেছে কিন্তু ভাইয়া ওমন নয়। তিমির প্লিজ কথা বল?

শুভা আমি তোর ক্ষতি চেয়েছি,তুই বিশ্বাস করিস এটা?শুভা আমি তোর ভাই ্য়ের ক্ষতি তোর ক্ষতি কখনো চাই নি রে কখনো চাই নি।আমি এতিম হলেও কারো ক্ষতি চাই নি,পরিবার না থাকলেও কখনো তোদের পর ভাবি নি।শুভা তুই বিশ্বাস কর আমি উগ্র হতে পারি,উশৃংখল নয়,আনন্দ দিতে পারি কারো ক্ষতি নয়?শুভা তোর ভাইকে কীভাবে বললে বিশ্বাস করবে যে আমি তোদের ক্ষতি চাই না বল না শুভা কীভাবে বললে তিনি বিশ্বাস করবে?

তিমির কথা বলার প্রতিটি বাক্যে চোখের জল ফেলছিল।শেষ মুহুর্তে সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না মুখে কাপড় গুঁজে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো।তিমিরকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো।দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। একজন কাদছে প্রিয় মানুষের করা অপমানে অন্যজন কাদছে প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ফেলা আর বোন সমতুল্য সখীর কষ্টে!

সেই ঘটনার পর শুভ্র আর তিমির একে অপরকে এড়িয়ে চলে।কেউ কারো সাথে টু শব্দ ্ও করে না।শুভ্র খাওয়ার টেবিলে আসলে তিমির থাকে ন।ক্লাসে গেলেও তিমির এমনভাবে বসে যে দেখা যায় না।তাতে অবশ্য শুভ্রর তেমন পরিবর্তন দেখা যায় না।সে মনে করে যা করেছে শুভার ভালোর জন্য ্ই করেছে কারণ নীলের পরিবারকে কখনো নিপা মানবে না।সেই সাথে শুভাকে শুভ্র চিনে।এখনো এসব প্রেম ভালোবাসাজনিত বিষয় গুলো শুভা ভালো করে বুঝে উঠতে পারে নি।পারলেও শুভ্র চায় না শুভা আবেগে পড়ে কোনো ভুল করুক?হ্যাঁ তিমিরকে সেদিন চড় দেওয়া বা কথাগুলো একটু বেশি সিরিয়াস হয়ে গেছে তাতে কি?এ মেয়ের অতিরিক্ত উগ্রতার জন্য এতটুকু শাসন সে করতেই পারে?তবে মানবিক দিক দিয়ে ভাবলে শুভ্র কষ্ট পায়,আসলেই কি এটা শাসন ছিলো?

শুভ্র কলেজ যাওয়ার আগে এখন ঠিক মতো তার জিনিসগুলো পায় না।এতদিন তিমির গুছিয়ে রাখতো বলে, কোনটা কোন জায়গায় সেটা ভুলে গেছে। তাছাড়া আগের মতো বিছানায় কাপড় থাকে না।নিজে থেকে কাপড় সিলেক্ট করতে হয়।এসব করতে গিয়ে বিরক্তই হয় শুভ্র তবুও তিমিরকে ডাকে না বা সেটা প্রকাশ করে না।সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে শুভ্র জানে তাই তিমির বা কারো অনুপস্থিতি সে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

হাসপাতালের করিডোরে সবাই অপেক্ষা করছে,শান্তা বেগমের জ্ঞান এখনো ফিরে নি।ডাক্তার জানিয়েছেন তিনি স্ট্রোক করেছেন তবে সেটা গুরুতর নয়।এমুহূর্তে তার ভালো ঘুম আর রেস্ট দরকার।হঠাৎ শান্তা বেগম কেনো স্ট্রোক করলেন কেউ জানে না শুধু নিপাকে কল করে জানানো হয় শান্তা ্কে হাসপাতালে এডমিট করা হয়েছে যেন তারা আসে।

ভাই সাহেব কি হয়েছে খুলে বলুন তো,শান্তার হঠাৎ স্ট্রোক হলো কেনো?

কবির সাহেব কথা বলতে পারছেন না কান্নার জন্য। তবুও যা বললেন তাতে বোঝা গেলো, তুরফা হঠাৎ কোত্থেকে একটা ছেলে এনে জানায় যে সে তাকে বিয়ে করেছে।শান্তা আকস্মিক ঘটনায় শকড হয়।এ নিয়ে মা মেয়ের মধ্যে যথেষ্ট তর্ক শুরু হয়।একসময় শান্তা ছেলেটাকে চড় দিলে তুরফা তার মাকে ইচ্ছে মতো কথা শুনিয়ে চলে যায়। মেয়ের ব্যবহার আর অপমান নিতে না পেরে হঠাৎ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।এরপর হাসপাতালে আনা হলে জানতে পারে সে স্ট্রোক করেছে।নিপা তো অবাক হয়ে যায় সব শুনে।সে মনে মনে শুকরিয়া করে, ভাগ্যিস শুভ্রর সাথে তুরফার বিয়ে হয় নি নাহলে কি যে করতো এ মেয়ে কে জানে?

তিমির এখন বাপের বাড়ি থাকে কারণ শান্তাকে দেখাশোনা করার জন্য কাউকে দরকার তাই তিমির নিজেই থেকে গেলো।একদিকে ভালো হলো কারণ তিমির চাইছে না শুভ্রর আশেপাশে থাকতে কিন্তু কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিলো না বলে ওখানে পড়ে ছিল।এখন বাপের বাড়ি এসে তার ভালোই লাগছে।

নিপা তুরফার বিষয়টা নিয়ে অনেক কথা বললো।নিজে আগ বাড়িয়ে কেনো যে সম্পর্ক করতে গিয়েছিল সেই ভয় নিয়ে এখনো ভাবছে।যদি এ মেয়ে তার ঘরের বউ হতো তাহলে কি যে হতো ভাবলেই ভয়ে কাটা দেয়।তবে তিমিরের দোষ তিনি বাদ দিলেন না কারণ যতই হোক এমন হীরের মতো ছেলের সাথে ও মেয়ে বড্ড বেমানান তবুও একটা প্রশান্তি পেলো যে তিমিরের জন্যই বিয়েটা বানচাল হলো।

শুভার রুমে এসেছিল শুভ্র নীলের বিষয়ে কথা বলতে কিন্তু শুভা রুমে না থাকাতে শুভ্র চলে যাচ্ছিল।এমন সময় কল বেজে ওঠে শুভার।শুভ্র ফোনটা হাতে নিতে দেখে শাঁকচুন্নি নাম দিয়ে সেভ করা। বুঝতে পারলো এটা তিমির।কল ধরে হ্যালো বলার আগেই তিমির গড়গড় করে কথা বলতে থাকে,

কিরে ডাকিনি কল ধরতে এতক্ষণ লাগে?শোন আমি তো প্ল্যান ছাড়াই বাসায় এসেছি এখন আমার কিছু জিনিস লাগবে।তুই কষ্ট করে আমার কয়েকটা বই আর কিছু ভালো জামা কাপড় দিয়ে যাস তো।কারণ টিউশনে যাওয়ার মতো ভালো কাপড় এ বাড়িতে নেই। শুনছিস কি বললাম?এ শুভা কথা বলছিস না কেনো, শুভা?

শুভ্র এতক্ষণ তিমিরের কথাগুলো শুনছিলো।তার ভালো লাগছিল তিমিরের গলা শুনতে।অনেকদিন হলো তিমিরের গলা শুনে না।শুভ্র কথা বলার আগেই তিমির আবারও বলে উঠলো,

ডাকিনি,দজ্জাল কি সামনে দাঁড়িয়ে আছে? যদি হু বলিস তাহলে হ্যাঁ যদি গলা খাঁকড়ি দিস তবে না,বল এখন দজ্জাল সামনে আছে কি?

শুভ্রর মুখটা কালো হয়ে গেলো।কারণ দজ্জাল বলতে এখানে যে তিমির তাকেই বুঝিয়েছে সেটা আর সন্দেহ নেই। এবার সে নিজেই মুখ খুললো,

ডাকিনি নেই আমি দজ্জাল কথা বলছি?কি যেন বলছিলে আবারও বলো?

শুভ্রর গলা শুনে ফোনের ওপাশে নিশ্চুেপ হয়ে গেলো তিমির।তারপর কাট করে ফোনটা রেখে দিলো।কান থেকে ফোন নামিয়ে মুচকি হাসলো শুভ্র
,
,
,
চলবে…….

১৩.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here