প্রেম পর্ব -১২

প্রেম💜 (Love has no limits)

#পর্ব : ১২

স্পর্শিয়া বাড়ির দরজা খুলে দেখল হলরুমে ওর হবু শাশুড়ি বসে আছেন। ও খুব অবাক হলো হঠাৎ তিনি এখানে! পরমুহুর্তেই ভাবতে লাগলো এটাই কি তবে সারপ্রাইজ? এই সারপ্রাইজ এর কথাই কি আরাধ্য বলেছিল? অবশ্য এটা কোন খারাপ সারপ্রাইজ না। কারণ নিশাত চৌধুরীকে স্পর্শিয়ার খুবই পছন্দ। স্পর্শিয়ার ধারনা শ্বাশুড়ি হিসেবে সে অসাধারণ একজন মহিলা হবেন। নিশাত চৌধুরী সবার সাথে বসে বসে গল্প করছিলেন। সবাই হাসাহাসি তে ব্যস্ত। স্পর্শিয়া যে এসেছে তা কেউ খেয়ালই করল না। মা আর ছেলে দুইজন একই রকম, সবাইকে মাতিয়ে রাখতে পারদর্শী আর দুজনেই কথা প্রিয়।
.
.
.
.
.
.
.
.
দরজার দিকে চোখ যেতেই নিশাত চৌধুরী দেখলেন স্পর্শিয়া দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। উনি সোফা ছেড়ে উঠে হাসিমুখে এগিয়ে গেলেন স্পর্শিয়ার দিকে। জড়িয়ে ধরলেন স্পর্শিয়া কে। আলতো করে স্পর্শিয়ার কপালে চুমু এঁকে দিলেন আর বললেন,
– সেই কখন থেকে তোমার ই তো অপেক্ষায় ছিলাম মা। তোমার জন্য খুব মন আনচান করছিল, তাই চলে এলাম দেখতে আমার মেয়েকে। এসো ভেতরে এসো।
.
.
…..
নিশাত চৌধুরী স্পর্শিয়াকে টেনে হলরুমে নিয়ে গেলেন। বলতে লাগলেন,
– সারাদিন খুব খাটনি হয়েছে নিশ্চয়ই? টায়ার্ড লাগছে দেখতে।
বলে মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন।

সোফায় বসে স্পর্শিয়ার মনে পরল ওতো ওর হবু শাশুড়ি কে সালামও দেয়নি, এমনকি কেমন আছে তাও জিজ্ঞেস করেনি। তাড়াহুড়াতে কিছু জিজ্ঞেস করার কথা মনেও ছিল না৷ লজ্জা লাগছে নিজেরই। এত বোকামি কি করে যে করে ও নিজেও বুঝে না। বিয়ে ঠিক হওয়ার পরে যেন এটা ওর লাইফের পার্ট হয়ে গেছে শ্বশুর বাড়ির মানুষের সামনে।
.
.
.
.
.
.
.
পাশে তাকাতেই দেখলো আরাধ্যর বড় ভাবি পায়েল পাশের রুম থেকে স্নিগ্ধার সাথে কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছে। বুঝতে পারলো ওর শাশুড়ী একা আসেনি, ছেলের বউকেও নিয়ে এসেছে।
এবার স্পর্শিয়া মিস করলো না। ভাবিকে কুশলাদি জিজ্ঞেস করতে ভুললো না।
পায়েল এসে বললো,
– তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। ভালো লাগবে।
.
.
.
.
.
স্পর্শিয়া ওর রুমে চলে গেল। সারাদিন পরে ঘরে ফিরেছে। খাট দেখেই খাটের উপর লাফ দিয়ে শুয়ে পড়লো সোজা টান হয়ে। তাকিয়ে তাকিয়ে ফ্যান দেখতে লাগলো। মাথাটা ঝিমঝিম করছে সারাদিনের ধকলে।
দরজায় নক পড়তেই ফিরে তাকালো। পায়েলকে দেখে ধড়ফড় করে নেমে দাড়ালো বিছানা থেকে স্পর্শিয়া। ইস! কি যে করেনা ও! কেন যে এভাবে চিত পটেং হয়ে শুয়ে ছিল! ইজ্জত খেতে খেতে জীবন যাচ্ছে।

পায়েল বললো,
– এত তাড়াহুড়ো করতে হবে না। আমিই তো। আর তাছাড়া আমিও বুঝি তুমি টায়ার্ড।
পেছন থেকে শাশুড়ী বলে উঠলো,
– হ্যা, টায়ার্ড তো হবেই। সারাদিন এত টাইম দিয়েছে আমার ছেলেটাকে।
বলে মিটিমিটি হাসতে লাগলেন নিশাত চৌধুরী। স্পর্শিয়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো কথা শুনে৷
– আহা। এভাবে অবাক হতে হবে না। আমার ছেলে আমাকে বলেই গিয়েছে যে তোমাকে নিয়ে ডেটে যাচ্ছে।

এ কথা শুনে স্পর্শিয়ার চোখের সাইজ আরও বড়বড় হয়ে গেল।
পায়েল তো হেসেই খুন স্পর্শিয়ার অবস্থা দেখে। বলতে লাগলো,
– মা, আপনার ছোট বউয়ের চোখগুলো দেখেছেন? কি বড়বড় আর সুন্দর! আপনার ছেলে কি আর এমনি এমনি চোখের প্রেমে পড়েছে!
– ওই কথা বাদ দাও। আমি তো ভাবছি আমার ছেলের চোখ এত সুন্দর, আর ছেলের বউয়ের চোখ আরও বেশি সুন্দর, আমার নাতি নাতনিগুলির চোখ না যেন কি হয়। সে স্বপ্নেই ডুবে আছি আমি।
দুইজনেই ইচ্ছেমতো হাসতে লাগলো।

স্পর্শিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলো। ওর ইচ্ছে হচ্ছে মাটি ফাক হোক, আর ও ভেতরে ঢুকে যাক। এভাবে থাকলে হয়তো মরেই যাবে।
হঠাৎ স্পর্শিয়ার ফোন ভাইব্রেট করছে। আরাধ্য ফোন করেছে।

আরাধ্যর কল কেটে দিল স্পর্শিয়া। পায়েল সাথে সাথে বলল,
– কাটলে কেন? তোমার উনি কল করেছে। আমরা না হয় বাইরে যাই।
– না, না। এমন কিছু না। উনি হয়তো এমনিই কল করেছিল।
– ওরে বাবা! কি ভালোবাসা। বাসায় ফিরতে না ফিরতেই শুরু হয়ে গেছে মিস করা করি।

স্পর্শিয়া কি বলবে বুঝতে পারছিল না। লজ্জা পাচ্ছিল দেখে নিশাত চৌধুরী স্পর্শিয়া কে বললেন ফ্রেশ হয়ে আসতে। স্পর্শিয়া ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমে চলে গেল। যেন হাফ ছেড়ে বাচলো ও। এসে দেখে বউ শ্বাশুড়ি দুজন মিলে হাসাহাসি করছে। স্পর্শিয়াকে দেখেই পায়েল বললো,
– তোমার উনি তো পাগল হয়ে আছে তোমার জন্য। আবারো কল দিয়েছিল। আমি পিক করেছিলাম বলার জন্য যে তুমি ওয়াশরুমে আছ। ওমা! কল ধরতে না ধরতেই বলা শুরু করেছে, “আমার বিবিজান ঘরে যেতে না যেতে আজকের এত রোমান্টিক মুহূর্ত গুলোকে ভুলে গেল যে এখন ফোনই ধরছে না আমার।” আরাধ্য তো বুঝতেই পারেনি যে কল আমি পিক করেছি। তা কি রোমান্টিক মুহূর্ত কাটালেন দেবর বউ, এবার আপনিই বলুন আমরাও একটু শুনি।

স্পর্শিয়া মনে মনে কয়েক ডজন বকা দিয়ে ফেললো আরাধ্যকে। এটা কিছু হলো! বুঝে শুনে কথা বলবে না। গাধা একটা। ভাবি তো যেমন তেমন, শাশুড়ীও কথা শুনে হিহিহি করে হাসছে। এত লজ্জা পেতে হয় শশুর বাড়ির লোকদের সামনে যে ওর নিজের ইচ্ছে করে নিজের নাম লজ্জাবতী রেখে দিতে।

নিশাত চৌধুরী পায়েলকে বললেন,
– হয়েছে ওকে আর লজ্জা দিওনা। বেচারী লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। স্পর্শিয়া তোমাকে খুব মিস করছিলাম বলেই চলে এলাম আমরা দুইজন দেখা করতে। সকাল থেকে আমাদের প্ল্যান ছিল বিকালে তোমার সাথে দেখা করতে আসবো, তখনই আরাধ্য জানালো যে ও তোমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবে। তারপর যখন শুনলো আমরা তোমার সাথে দেখা করতে আসবো ও তোমার জন্য গিফট কিনেছিল সেটা আমাদের কাছে দিয়ে দিল।

স্পর্শিয়া খুব অবাক হল আরাধ্য সারা দিন ওর সাথে ছিল, অথচ ওকে তখন গিফট না দিয়ে ওর আম্মুকে দিয়ে কেন গিফট দেওয়াচ্ছে।

-আমি গিফট নিয়ে আসছি।
এটা বলেই পায়েল বাইরে চলে গেল।

একটু পরে পায়েল বিশাল বড় বড় সাইজের দুইটা লাগেজ নিয়ে রুমে ঢুকলো। স্পর্শিয়া অবাক হয়ে গেল লাগেজ দুটো দেখে। ওর চোখ বড় বড় হয়ে গেল। এটা কি গিফট? এটার ভিতরে কি আছে? লাগেজ দেখে ওর মনে হচ্ছে আরাধ্য আর ওকে তারা ভাগিয়ে দিবে পালিয়ে বিয়ে করার জন্য।

পায়েল হাসতে হাসতে বলল ,
-আরে এত চিন্তার কিছু নেই। এগুলো তোমার জন্যই এনেছি। এবার চোখ বড় বড় করে না রেখে ছোট ছোট করো, তারপর লাগেজ গুলো খুলে দেখো কি পাঠিয়েছে তোমার জন্য তোমার আরাধ্য।

স্পর্শিয়া খুব এক্সাইটমেন্ট নিয়ে লাগেজ খুললো। লাগেজ খুলে স্পর্শিয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। সম্পূর্ণ লাগেজ বিভিন্ন ধরনের চকলেটে বোঝাই করা। দেখে মনে হচ্ছে একটা চকলেট এর দোকানের সব চকলেট এই লাগেজে ভরে দেওয়া হয়েছে।

ঘোর কাটতেই স্পর্শিয়া বলেই ফেলল,
– ও এম জি এতগুলো চকলেট।
পাশে শাশুড়ি আর ভাবি আছে মনে পড়তেই চুপ করে গেল। স্পর্শিয়ার ইচ্ছে করছে খাটের উপর উঠে খুশিতে ৪/৫ বার লাফ দিতে। কিন্তু যেহেতু শাশুড়ি আর ভাবি সামনে, এই মুহূর্তে নিজেকে কন্ট্রোল করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

পায়েল বললো,
– আরো একটা লাগেজ আছে। ওইটাতে দেখো অন্য কোন খনি পাওয়া যায় কিনা।
পায়েলের কথায় স্পর্শিয়ার মনে পরল আরো একটা লাগেজ এর কথা। ওই লাগেজটা ও স্পর্শিয়া খুলল। পরের লাগেজটা মেকআপ এ ভর্তি ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, যেন কেউ মেকাপের দোকান দেবে তাই এত কিছু কিনে এনেছে। এটা দেখেও স্পর্শিয়ার চোখ কপালে উঠলো। ও খুব অবাক হচ্ছে। যতদূর মনে পড়ে গতকাল শুধু একবার বলেছিল যে ওর মেকআপ পছন্দ তাতেই এত কিছু! ও সত্যিই খুব অবাক হচ্ছে। আর চকলেট যে ওর পছন্দ এটা আরাধ্য জানলো কি করে? চকলেটের কথা তো কখনো বলেনি।
কি ভাবছে যা তা। এই ছেলে তো এমনিতেই মাইন্ড রিডার। সবকিছু এমনি এমনি বুঝে ফেলে কিছু বলারও লাগে না।

স্পর্শিয়া ভাবতে লাগলো ভাবি আর শাশুড়ি না জানি কি ভাববেন। হয়তো মনে করবেন বিয়ের আগেই তাদের ছেলে বউ পাগল হয়ে গেছে।
স্পর্শিয়ার হবু শাশুড়ি আর ভাবি দুজনেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই চলে গেলেন। স্পর্শিয়া বুঝতে পারলো ওকে আরাধ্যর সাথে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই তারা চলে গেছে। স্পর্শিয়া ও সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাথে সাথে কল দিল আরাধ্যকে।

আরাধ্য ফোন ধরেই বলল,
– হ্যালো সুইটহার্ট। গিফট কেমন লেগেছে আমার বিবি জানের?
– একটু আগে না এভাবে কথা বলতে গিয়ে ভাবির কাছে ধরা খেলেন, আবারো এভাবেই কথা বলছেন? আপনি কি জানতেন লাইনে আমি আছি নাকি অন্য কেউ?
– তুমি আর শোধরাবে না, তাইনা? আবারো আপনি করে বলছ।
স্পর্শিয়া সাথে সাথে জিভে কামড় দিল। বললো,
– আসলে আমি বারবার তোমাকে “তুমি” করে বলতে ভুলে যাই। আপনি করে বলতে বলতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে, তাই তুমি কথাটা মুখ দিয়ে আসে না।
– হুম, বুঝেছি। নেক্সট টাইম যেন এই ভুল আর না হয়।
– ও! নিজের দোষ ঢাকার জন্য এখন এসব বলা হচ্ছে?
– আমি আবার কি দোষ করলাম?
– আমার ভয়েস না শুনেই কত কিছু বলে দিলে সেটাই তোমার দোষ।
– শোনো প্রথমবার বুঝতে পারিনি যে কলটা ভাবি রিসিভ করেছিল, তাই এত কিছু বলে ফেলেছিলাম। কিন্তু এখন কল টা যেহেতু তোমার ফোন থেকে এসেছে, তবে নিশ্চয়ই কলটা তুমি দিয়েছো। সো ডিয়ার, এটা কোনো দোষ নয়, বরং ইন্টেলিজেন্স। বুঝলে সোনামণি?
– আসছে আমার ইন্টেলিজেন্সওয়ালা।
– গিফট কেমন লেগেছে বললে না কিছু।
– খুবই পছন্দ হয়েছে। আচ্ছা আমার মেকআপ পছন্দ, আমি সাজতে পছন্দ করি, সেটা না হয় কালকে আপনি বুঝতে পেরেছিলেন, আই মিন তুমি বুঝতে পেরেছিলে। কিন্তু আমার যে চকলেট অপছন্দ সেটা কি করে জানলে?
– ওরে বোকা মেয়ে রে সবকিছু কি বলে দিতে হয় নাকি? কলেজ শেষে তোমাকে আমি প্রায়ই দেখতাম অনেকগুলো করে চকলেট কিনে নিয়ে যেতে। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম তোমার চকলেট পছন্দ। এগুলো তো তেমন কিছুই না। আমার যদি সাধ্য থাকে, তবে দুনিয়াতে তোমার যত পছন্দের জিনিস আছে সব আমি তোমার পায়ের কাছে এনে হাজির করবো। তোমার যা ইচ্ছা, যা শখ, যা পছন্দ, শুধু একটা বার আমাকে বলবে, আমি সব পূরণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
– প্রতিদিনই আমার এত কিছু ফলো করতে? চোর ব্যাটা!
– চোর তো তুমি। আমার মন চুরি করে আবার বড় বড় কথা বলো।

স্পর্শিয়া চুপ করে ছিল। আরাধ্য বলল,
-যাও সবাই হয়তো তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি তোমাকে পরে কল দিব। বাই। টেক কেয়ার।

স্পর্শিয়া নিচে এসে বুঝতে পারল কোথাও যাওয়া নিয়ে কোন কথা চলছে। কিছুক্ষণ সবার কথা বার্তা শুনে বুঝল, আরাধ্যর নানু বাড়ির গ্রামে হয়তো কারো বিয়ে। আর সেখানেই স্পর্শিয়াকে কয়েকদিনের জন্য নিয়ে যাবে বলে স্পর্শিয়ার শাশুড়ি ওর আব্বু আর বাড়ির বাকি সবার কাছে পারমিশন চাইছে। স্পর্শিয়া ভাবতে লাগলো, এই কথা শুনে তো আরাধ্যর বেশ খুশি হওয়ার কথা৷ তবে ও সারাদিনে কিছু বললো না কেন?
.
.
.
.
.
.
.

স্পর্শিয়া স্নিগ্ধার সাথে গল্প করছিল এমন সময় রুমে ঢুকলো পায়েল। স্পর্শিয়া কে বলল,
-শুনলে তো বেড়াতে যাচ্ছ তুমি আমাদের সাথে। তোমার কোন সমস্যা নেই তো?
– না আমার কোন সমস্যা নেই।
– ওকে। আমরা তিন দিন পরে রওনা করছি। টেনশন নিও না। তোমার হবু জামাইও সাথে চলছে, রোমান্স ভালই করতে পারবে তোমরা।

বলেই হি হি করে হাসতে লাগলো পায়েল। স্নিগ্ধাও সেই হাসিতে তাল মিলালো। স্পর্শিয়ার ইচ্ছে করছে স্নিগ্ধাকে ঘুষি দিয়ে হাসি বন্ধ করে দিতে। কিন্তু তা করতে না পেরে স্পর্শিয়া চুপ করে রইল।

এমন সময় রুমে ঢুকলো স্পর্শিয়ার শাশুড়ি। তিনি ঢুকেই পায়েল কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-আসল কথা বলতে তো তুমি ভুলেই গেছো।
পায়েল সাথে সাথে জিভে কামড় দিল।
স্পর্শিয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো। আসল কথা আবার কি!

নিশাত চৌধুরী এবার স্পর্শিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– আরাধ্য জানে না যে তুমি আমাদের সাথে যাচ্ছ। আরাধ্য জানে যে, তোমার ফ্যামিলি শুধুমাত্র রিসেপশন অ্যাটেন্ড করবে। রিসেপশন তো ঢাকায় হবে। তোমাকে যে আমরা সাথে করে নিচ্ছি এটা ওকে জানাচ্ছি না। এক কথায় বলতে গেলে আরাধ্যকে আমরা সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছি। তুমিও এ ব্যাপারে ওর সাথে কোন কথা বলোনা। ও যেদিন তোমাকে যাওয়ার সময় আমাদের সাথে দেখবে তখন খুব শকড হবে।

স্নিগ্ধা বলল,
– দেখ স্পর্শিয়া। এমন শ্বাশুড়ি কখনো পাবি নাকি আর কোথাও তুই?
স্পর্শিয়া ভাবতে লাগলো সত্যিই এমন শ্বাশুড়ি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

পায়েল বলল,
-মা আমরা তো পরশু শপিং-এ যাচ্ছি বিয়ে উপলক্ষে। তাহলে স্পর্শিয়াকেও আমাদের সাথে নিয়ে নেই?
– হ্যাঁ অবশ্যই। ভালো কথা বলেছ তুমি। স্পর্শিয়া তুমি তবে পরশু আমাদের সাথে শপিংয়ে চলো।
স্পর্শিয়া মাথা নাড়ালো।

স্পর্শিয়ার শাশুড়ি ওকে জড়িয়ে ধরলেন। ওর গালে দুই হাত রেখে বললেন,
-মা আমার ছেলেটা তোমাকে খুব ভালবাসে। ওকে কখনো কষ্ট দিওনা মা। মাঝেমধ্যে একটু রাগ করে, খুব অল্প সময়ের জন্য। আবার নিজ থেকেই এসে সরি বলে। কিন্তু মন থেকে ভালবাসতে জানে। যাকে একবার ও ভালোবেসে ফেলে তার জন্য নিজের জান দিতেও প্রস্তুত থাকে, আর সে জায়গায় তো তুমি ওর সবচেয়ে কাছের মানুষ। আমার ছেলেটা কত যে কেঁদেছে তোমার জন্য, কত যে কষ্ট পেয়েছে তোমার জন্য , তা শুধুমাত্র আমরাই জানি। শুধু একটাই রিকুয়েস্ট তোমার কাছে, আমার ছেলেটাকে ভালোবেসে আগলে রেখো।
স্পর্শিয়ার মাথায় বেশ কয়েকবার হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন নিশাত চৌধুরী।

তারা যেতে না যেতেই স্নিগ্ধা স্পর্শিয়া কে খামচে ধরলো। -এই, এই, বল আজকে কি হলো? কি কি করলি?

-কি বলবো? তেমন কিছুই হয়নি। ঘুরেছি, খেয়েছি। এই..

-মিথ্যা বলিস না আমার কাছে। ভাবি তখন বলছিল তোরা নাকি খুব রোমান্টিক সময় কাটিয়েছিস আজকে।

স্পর্শিয়ার চুপসে গেল। ভাবি এই কথা ইতোমধ্যে সাপ্লাই করে ফেলেছে তবে! আরো কার কার কাছে না জানি এ কথা সাপ্লাই করে!

স্পর্শিয়া বলল,
-কি যা তা বলছিস!
-আমি যা তা বলছি না। তুই মিথ্যে বলছিস আমার কাছে। শুধু শুধু লুকাচ্ছিস কেন? বলনা কি হয়েছে? ডোন্ট ইউ সি দেট আম সো এক্সাইটেড?

স্পর্শিয়া ভাবতে লাগলো, বলতে তো ওকে হবেই। নয়তো স্নিগ্ধা ওর মাথা খেয়ে ফেলবে। আর তাছাড়া আজকের ঘটনা ওর নিজের পেটে রাখলেই পেট সারাক্ষণ গুড়্গুড় করবে। স্নিগ্ধাকে কিছু না বলে ও থাকতে পারে না। তাই ও স্নিগ্ধাকে সব বলে দিল।

সব কথা শুনে স্নিগ্ধা হাঁ হয়ে রইল। ওর হা করা দেখে স্পর্শিয়ার ইচ্ছে করছে ওর মুখের ভেতর কয়েকটা মশা ঢুকিয়ে দিতে। বেশ কিছুক্ষণ হা করে থাকার পরে স্নিগ্ধা বলল,
-এটা তো বেশ খুশির খবর। এবার মিষ্টি খাওয়া আমাকে।
– আমি তোকে মিষ্টি খাওয়াবো কেন? আর এটা কেমন ই বা খুশির খবর? তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে আমার বাবু হবে তাইতো মিষ্টি চাচ্ছিস।

স্নিগ্ধা খুশি হয়ে বলল,
– ও আচ্ছা! তবে এই খবর! এত প্ল্যানিং ও হয়ে গেছে তবে?
– ধুর যা তো জ্বালাস না আমাকে। কিসের প্ল্যানিং হয়েছে? তোকে এত কিছু বলাই ভুল হয়েছে। যা আর কিছু বলবই না।
.
.
.
.
.
.
.

রাতে আরাধ্য স্পর্শিয়াকে কল দিয়ে বেশ অনেকক্ষণ কথা বলল। এই প্রথমই এত কথা হচ্ছে ফোনে স্পর্শিয়ার সাথে ওর। স্পর্শিয়াও বেশ খুশি মনেই আরাধ্যর সাথে কথা বলতে লাগলো ।

হঠাৎ আরাধ্য মন খারাপ করে বললো,
– স্পর্শ, তোমার সাথে আমার ৭/৮ দিনের মতো দেখা হবে না।
– কেন?
– আমার বড় মামার ছেলের বিয়ে। বিয়ে গ্রামে হবে। মময়মনসিংহ। রিসিপশন ঢাকায় হবে। বিয়ের জন্য তিন দিন পরেই সবাই রওনা করব ঢাকা থেকে। আমি আম্মুকে অনেক বলেছিলাম যে আমি যাব না, শুধু বিয়ের আগের দিন গিয়ে বিয়ে এটেন্ড করব। কিন্তু আম্মু আমার কথা শুনলই না। সবাই আমাকে জোড়াজুড়ি করে নিয়ে যাচ্ছে। তাই তোমার সাথে বেশ কয়েক দিন দেখা হবে না। আমার খুব খারাপ লাগছে। এই দিনগুলো কিভাবে কাটবে জানিনা।

স্পর্শিয়া আরাধ্যর কথা শুনে মুখ চেপে হাসতে লাগলো। আরাধ্য তো জানেই না যে ও কত বড় ঝটকা খেতে চলেছে।

– স্পর্শ, কিছু বলছ না যে?
– কি বলবো?
– স্পর্শ, যদি তোমার কোন সমস্যা না থাকে, আমরা কি পরশু দেখা করতে পারি? যাওয়ার আগে আমি তোমার সাথে দেখা করে যেতে চাই৷
স্পর্শিয়া মুখ ফসকে বলে ফেললো,
– আমি তো পরশু আন্টি আর পায়েল ভাবির সাথে শপিং এ যাচ্ছি।
বলেই সাথে সাথে দুই হাতে মুখ চেপে ধরলো। ফোন বিছানায় পড়ে গেল হাত থেকে। ও যে কি করতে কি করে ফেলে নিজেই বুঝে না।

ওদিকে আরাধ্য হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে। স্পর্শিয়া ফোন কানে দিল।
– কি ব্যাপার স্পর্শ? কথা বলছ না যে।
– ফোন পড়ে গিয়েছিল।
– ওহ। আচ্ছা কি যেন বললে, তুমি আম্মু আর ভাবির সাথে শপিং এ যাচ্ছ।
স্পর্শিয়া কাপাকাপা কন্ঠে “হ্যা” বললো।
– আরে বোকা মেয়ে! ভয় পাচ্ছ কেন? তুমি যাও তাদের সাথে শপিং এ, সমস্যা নেই। আমি যতদূর জানি পরশু তারা বিয়ে উপলক্ষে শপিং এ যাবে। তাই হয়তো তোমাকেও সাথে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। কাল যেহেতু ফ্রাইডে, সো তুমি কলেজে যাবে না। নয়তো কালকেই দেখা করতাম৷ আমি দেখি কিছু করা যায় নাকি।
– মানে!
– না। কিছু না। ইটস টু লেইট হানি৷ যাও ঘুমাও। গুড নাইট।
– গুড নাইট।

.
.
.
.

ঘুম পাচ্ছে না স্পর্শিয়ার। ও আজকে সারাদিনের কথা ভাবছে। দিনটা সত্যিই অন্য রকম ছিল। আজকের কথা ভেবে নিজে নিজেই লজ্জা পাচ্ছে। আরাধ্যর মধ্যে কিছু তো আছে যা ওকে বারবার ওর দিকেই অাকৃষ্ট করছে৷ ওর সেই মায়াভরা চাহনির কথা বার বার মনে পড়ছে। ওর ছোয়া যেন এখনো অনুভব করতে পারছে স্পর্শিয়া। যতই টাইম যাচ্ছে ততই যেন আরও নতুন করে আরাধ্যকে চিনছে ও। যতই মিশছে ততই অন্যরকম এক ভালো লাগা তৈরি হচ্ছে আরাধ্যর প্রতি ওর।

এদিকে আরাধ্যও স্পর্শিয়ার মোহে ডুবে আছে। আজকের মূহুর্ত গুলো চিন্তা করে হাসছে ও। এতটুকু অন্তত শিওর ও যে, স্পর্শিয়াও ওকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে পানি পড়লো আরাধ্যর। খুশির পানি। আল্লাহর কাছে দোয়া করলো, এই ভালবাসা যেন আল্লাহ সবসময় হেফাজতে রাখে।

(চলবে)

লিখাঃ Dewan Oishi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here