প্রেম পর্ব -১১

প্রেম 💙 (Love has no limits)

#পর্ব : ১১

তুমি প্রায়ই আমাকে দেখতে, চোখ পড়তো কিন্তু খেয়াল করতে না। কখনো কখনো ভাবতাম যে তুমি আবার বুঝে ফেল নাকি তোমাকে আমি ফলো করছি। মাঝেমধ্যে রোহানকেও সাথে নিয়ে যেতাম। ও তো খুব রাগ হত, খুব বকাবকি করতো আর বলতো, যেই আমার পেছনে এত মেয়ে ঘুরেছে, সেই আমি তোমার সাথে কথা বলারও সাহস পাচ্ছি না। কিন্তু ও সাপোর্ট করেছে আমাকে খুব। সবসময় পাশে ছিল আমার, শান্ত্বনা দিয়ে গিয়েছে যে তোমাকে আমি পাবই। তোমার মনে আছে তোমরা সবাই প্রায়ই যখন ফুচকা খেয়ে বিল দিতে যেতে তখন বিল আগে থেকেই পে করা থাকতো ?

– হ্যা, সেটাও আপনি দেখেছেন? অনেক খুজেছিলাম কিন্তু বিল কে দিয়েছিল জানতেই পারলাম না।
– সেটা আমিই ছিলাম।
– আপনি!
– হ্যা, আমি। কয়েকদিন যখন খেয়াল করলাম তোমরা সবাই ফুচকা এ্যাডিক্টেড, প্রায়ই ফুচকা খেতে যাও, তখনি ঠিক করলাম আগে থেকে তোমাদের বিল আমি পে করে রাখবো। প্রথম দিন ভয় পেয়েছিলাম, কেও তোমাদের বিল পে করে গিয়েছে এটা শুনে হয়তো তোমরা সেখানে আর যাবেই না। কিন্তু পরে তোমাদের কথা শুনে বেশ মজাই পেয়েছি, তোমরা তো মহা খুশি ছিলে ফ্রি তে খেতে পেরে। আর তখন থেকেই বেশিরভাগ সময়ই তোমাদের বিল আমি পে করে দিতাম। আর বিল পে করতাম বলে তোমরা কি কি বলতে আমাকে নিয়ে তাও শুনতাম।

স্পর্শিয়া বেশ লজ্জা পেল আরাধ্যর কথায়। কি খুশিটাই না হতো ওরা ফ্রি তে খেতে পেয়ে। খাওয়া শেষ করে অজানা সেই বিল পে কারী কে বোকা, গাধা, বলদ কত কিছু বলতো। অথচ ওরা কখনো ভাবেই নি যে সেই ব্যক্তি ওদের আশেপাশে থেকেই এসব শুনতো, আর এই ব্যক্তিই কখনো স্পর্শিয়ার হাজবেন্ড হবে। বেশ লজ্জা হচ্ছে এই মুহূর্তে স্পর্শিয়ার। মাটি ভাগ করে নিচে চলে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। ওর মনে হচ্ছে আরাধ্য ওকে ছেচ্চর ভাবছে।

স্পর্শিয়ার এ অবস্থা দেখে আরাধ্য মুখ টিপে হাসছে। আরাধ্যকে হাসতে দেখে স্পর্শিয়া বললো,
– হাসবেন না। ফুচকা লাভার হলে একটু আধটু এমন হয় ই।
– ফুচকা লাভার, নাকি ফুচকা এ্যাডিক্টেড?
– ফুচকা এ্যাডিক্টেড হলেও ভালো, আপনার মতো অন্যকিছুতে এ্যাডিক্টেড না। হুহ!
আরাধ্য স্পর্শিয়ার কানের কাছে মুখ এনে আস্তে করে বলল,
– হ্যা। আমি তো তোমার প্রতি এ্যাডিক্টেড।
স্পর্শিয়া এক নজর আরাধ্যর দিকে তাকালো। কয়েক সেকেন্ড চোখাচোখি হতেই স্পর্শিয়া চোখ ফিরিয়ে নিল। ওই চোখে এভাবে তাকানো যায় না। নেশা ধরে যায়। মনে হয় সেই চোখ জোড়া যেন শুধু কাছে টানে।

আরাধ্য ইচ্ছে করেই বললো,
– স্পর্শ, তুমি আমার দিকে তাকাতে এত লজ্জা পাও কেন?
– ক….ক… আমি তো…. কই…
– হয়েছে হয়েছে। আর কথা বলতে হবে না তোমার। দাঁত ই ভেঙে যাবে যেভাবে কথা বলছ।
.
.
.
.
.
স্পর্শিয়া কথা ঘুরানোর জন্য বললো,
– আচ্ছা, আপনি কি প্রতিদিন আমার কলেজের সামনে যেতেন?
– না, প্রতিদিন না। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই যেতাম। অফিসে কাজ থাকলে যেতে পারতাম না। স্পর্শ তুমি একবার রোড ক্রস করতে গিয়ে এ্যাক্সিডেন্টে পা ভেঙে ফেলেছিলে মনে আছে?
– হুম। তখনো আপনি ছিলেন?
– হ্যা। হসপিটালে আমিই নিয়ে গিয়েছিলাম তোমাকে। তুমি খুব বেশি ইঞ্জুরড না হয়েও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলে, তা দেখেই আমার কলিজা শুকিয়ে গিয়েছিল, ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম খুব সিরিয়াস কিছু হয়ে গেল নাকি। সারা রাস্তার মানুষ জড়ো হয়ে গিয়েছিল আমার চিৎকারে। কান্না করতে করতে হসপিটাল নিয়ে গিয়েছিলাম তোমাকে। সেটাই ছিল তোমাকে প্রথম কোলে নেওয়া, প্রথম টাচ, অথচ সেন্সলেস অবস্থায়। তাই আমি সেটাকে প্রথম ভালোবাসার পরশ হিসেবে ধরিই না। প্রথমবার তোমাকে এমনভাবে ধরতে হবে তা তো আমি কখনো কল্পনাও করিনি।

– আমি আসলে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, আর ভয়েই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। কিন্তু তার মানে এই না যে ইঞ্জুরড হইনি। পা ভেঙে গিয়েছিল। বেশ কয়েকদিন হাটতে পারিনি।
– হ্যা, সেটা আমি জানি তুমি ব্যথা পেয়েছিলে। কিন্তু সেদিন রাগ উঠেছিল তোমার ফ্রেন্ডদের উপর খুব। এমনিতে তো টইটই করে সারাদিন দল বেধে ঘুরো, অথচ ওইদিন তোমার আশেপাশে কেওই ছিল না, এমনকি স্নিগ্ধাও না। খুব রাগ হচ্ছিল সেদিন ওদের ওপর।

– আসলে সেদিন আমি ছোট আন্টিদের বাসায় ছিলাম। সেখান থেকেই কলেজে গিয়েছিলাম। আমার কলেজে যাওয়ার কোন প্ল্যানই ছিল না। কিন্তু সব ফাজিলগুলি আমাকে বললো কলেজে যেতেই হবে এট এনি কস্ট, কি নাকি ঝামেলা হয়েছে। আমিও ওদের কথা শুনে কলেজে গেলাম। তারপর দেখি কেওই আসেনি কলেজে। ওদের কল দিলাম, ওরা সবাই মিলে সে কি হাসি! আমাকে ডস দিয়েছে ওরা সবাই। সারাদিন বোরিং ক্লাস এ্যাটেন্ড করে আনমনে রোড ক্রস করছিলাম, আর তখনি এ অবস্থা হয়। আচ্ছা, তুমি আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেলে জ্ঞান ফেরার পর সেখানে তোমাকে দেখলাম না কেন?

আরাধ্য বেশ কিছুক্ষণ স্পর্শিয়ার দিকে তাকিয়ে হা করে বসে রইল। স্পর্শিয়া বুঝতে পারলো না যে ও কি এমন করেছে যে আরাধ্য এমন হা করা মূর্তি হয়ে আছে। আরাধ্য বললো,
– স্পর্শ, তুমি কি বললে?
– কি এমন বললাম? শুধু হসপিটালে দেখিনি কেন তা ই তো জিজ্ঞেস করেছি।
– তুমি আমাকে “আপনি” না, বরং “তুমি” করে বলেছ।

স্পর্শিয়া আরাধ্যর কথা শুনে চোখ রসগোল্লার মতো করে ফেললো। ও “তুমি” করে বলে ফেলেছে আরাধ্যকে আর খেয়ালই করলো না ও সেটা। এখন আবার এটা নিয়ে আরাধ্য কি বলবে কে জানে? লজ্জায় ওর মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। ও সবসময় এত বাজে সিচুয়েশনে পরে কেন আরাধ্যর সাথে থাকলে!

আরাধ্য খেয়াল করলো স্পর্শিয়া লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে। লজ্জাভরা চোখ দুটো দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে স্পর্শিয়া। আরাধ্যর দিকে ফিরে তাকানোর সাহস ওর নেই।

– স্পর্শ। লজ্জা পাচ্ছ কেন এভাবে? আমিই তো।
স্পর্শিয়া চুপ করে আছে। আরাধ্য আবারো বললো ,
– স্পর্শ শোন।
– হুম।
– একটা কথা রাখবে?
স্পর্শিয়া ভ্রু কুচকে আরাধ্যর দিকে তাকিয়ে বললো,
– কি কথা?
– আমাকে এখন থেকে “তুমি” করেই বলবে প্লিজ।

স্পর্শিয়া যেন এই ভয়টাই পাচ্ছিল। লজ্জায় গাল আরও লাল হয়ে গেল। কি করবে বুঝতে পারছিল না।

– স্পর্শ, এভাবে লজ্জা পেয়ে গাল লাল, নীল, সবুজ করতে হবে না। তুমি করে বলো এখন থেকে প্লিজ। “আপনি” টা শুনতে কেমন যেন পর পর মনে হয়। “তুমি” ওয়ার্ডটায় ভালোবাসা আছে। আর “তুমি” কথাটা বেশ মানায় তোমার মুখে। ভালো লেগেছিল খুব। প্লিজ আরেকবার বলবে কি?
স্পর্শিয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। চুপ করেই রইলো।

আরাধ্য হঠাৎ স্পর্শিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরলো । আচমকা এ ঘটনায় স্পর্শিয়া ফ্রিজ হয়ে গেল। স্পর্শিয়ার হার্ট কয়েকটা বিট মিস করলো।
আরাধ্য স্পর্শিয়ার সাথে লেগে এসে বসলো। স্পর্শিয়ার চুলে নাক ডুবালো আরাধ্য। স্পর্শিয়ার চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে ও। মাতাল করা ঘ্রাণ। ওর মুখের গরম নিঃশ্বাস স্পর্শিয়ার ঘাড়ে আর, কানে পড়ছে। চোখ শক্ত করে বন্ধ করে আছে স্পর্শিয়া। ওর শরীর ভয়ে কাপতে শুরু করলো। আরাধ্য এক হাত দিয়ে স্পর্শিয়ার দুই হাত শক্ত করে ধরে রইলো, আরেক হাত দিয়ে স্পর্শিয়ার কোমর ধরে রাখলো ।

আরাধ্য স্পর্শিয়াকে ডাক দিল,
– স্পর্শ
স্পর্শিয়া ভয়ে কোন কথাই বলতে পারছে না।
আরাধ্য আবারো ডাক দিল,
– স্পর্শ
এবারো কোন কথা নেই। স্পর্শিয়া চোখ বন্ধ করে আছে ভয়ে।
– স্পর্শ কথা বলবে না আমার সাথে?
এবার স্পর্শিয়া খুব আস্তে করে বললো,
– হুম।
– একবার “তুমি” করে ডাকো না।
স্পর্শিয়া নিশ্চুপ।
– স্পর্শ, আমি কিন্তু নয়তো তোমাকে ছাড়বো না, এভাবেই ধরে বসে থাকবো।
স্পর্শিয়া এবার চোখ খুলে তাকালো। কিন্তু ওর গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না।
– স্পর্শ, বলবে না?
এবার খুব কষ্ট করে স্পর্শিয়া বললো,
– কি বলবো বলো?
আরাধ্যর মুখে বেশ বড় একটা হাসি দেখা দিল। স্পর্শিয়ার কোমর থেকে হাত সরিয়ে দুই হাত দিয়ে স্পর্শিয়ার গালে হাত দিয়ে বললো,
– এ্যাই মেয়ে, এত লজ্জা পাও কেন বলতো? আমি তো তোমারই। আমার কাছে এত লজ্জা কিসের?
বলেই স্পর্শিয়ার নাকের সাথে নাক লাগিয়ে ঘসা দিল। স্পর্শিয়ার এদিকে যায় যায় অবস্থা। আরাধ্য কয়েক মিনিট যাবত যা শুরু করেছে, ওর মনে হচ্ছে ও যে কোন সময় মারা যাবে।

আরাধ্য স্পর্শিয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। স্পর্শিয়ার হার্টবিট আরও কয়েক গুন বেড়ে গেল। আরাধ্য স্পর্শিয়ার একটা হাত নিয়ে নিজের বুকের উপর রেখে বলল,
– স্পর্শ।
স্পর্শিয়া চুপ করে রইলো। ওর সাহস নেই আরাধ্যর দিকে তাকানোর, ও আশেপাশের মানুষকে দেখতে লাগলো। আরাধ্য আবারো ডাকলো,
– স্পর্শ, আমার থেকে কি আশেপাশের ছেলেগুলো বেশি হ্যান্ডসাম নাকি যে তুমি তাদের দেখছ? তাকাও না আমার দিকে প্লিজ।

স্পর্শিয়া আরাধ্যর দিকে তাকালো এবার। এই প্রথম আরাধ্যর চোখগুলোকে এত কাছ থেকে দেখছে ও। মানতেই হবে, বেশ সুন্দর চোখ পেয়েছে ছেলেটা। বেশ বড় বড় চোখ, চোখের লেন্স ব্লু কালার। গায়ের রঙ আর লেন্সের জন্য মনে হয় যেন ও বাংলাদেশী না। এত সুন্দর একটা ছেলে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে ভাবতেই কেমন যেন লাগলো স্পর্শিয়ার। মনে হচ্ছে ওর ই নজর পড়ে যাবে ছেলেটার উপর। ছেলেদের এত সুন্দর হতে নেই। মানুষের কু-নজর পড়ে, সেটা নিজের বউয়ের নজরও হতে পারে।
আরাধ্য বললো,
– স্পর্শ, তুমি কি জানো তোমার কোলে মাথা রাখা আমার কতদিনের স্বপ্ন ?
এখন তুমি রাগ করলেও করতে পার যে কেমন ম্যানারলেস ছেলে আমি, তোমার পারমিশন ছাড়াই কত কিছু করে ফেললাম। সো, লেট মি ক্লিয়ার। রোমান্স কি পারমিশন নিয়ে হয় নাকি? বাঙালি মেয়েরা যে পরিমানে লাজুক হয় পারমিশন চাইলে এখন কেন ১০ বছর পরেও মানা ই করবে। আর তুমি তো আমার বউ, বউকে একটু আদর করতেই পারি এতে রাগের তো কিছুই নেই। আমি যতটুকু জানি আমাদের দেশের মেয়েরা খুব স্বামীভক্ত হয়, খুব সেবা করে স্বামীর। আর তুমি! সেই কখন থেকে তোমার কোলে শুয়ে আছি, কিন্তু তুমি এতক্ষণ যাবত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েই আছ। মাথায় একটু হাতও তো বুলিয়ে দিতে পার।
এ কথা বলেই আরাধ্য স্পর্শিয়ার আরেক হাত নিয়ে ওর মাথায় দিল। স্পর্শিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।
.
.
.
.
.
.
আরাধ্য সবকিছু স্পর্শিয়াকে দিয়ে নিজ থেকে করালেও ওর কাছে বেশ ভালই লাগছে। মনে হচ্ছে কত বছরের অপূর্ণ আশা যেন পূর্ণতা পাচ্ছে। আচ্ছা, সবসময় এভাবে করেই স্পর্শিয়াকে কাছে পায় না কেন ও? কবে কাছে পাবে? কবে স্পর্শিয়া পুরোপুরিভাবে ওর হবে? আর কত ওয়েট করতে হবে ওর নিজের ভালোবাসাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পেতে?
.
.
.
.
.
বেশ অনেকক্ষণ যাবত আরাধ্য স্পর্শিয়ার কোলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। স্পর্শিয়া আরাধ্যর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, আরেক হাত আরাধ্য ওর বুকের ওপর নিয়ে ধরে আছে। খোলা আকাশের নিচে, সবুজ ঘাসের ওপরে, সামনে নদী, এমন শান্ত একটা পরিবেশে নিজের ভালোবাসার মানুষের কোলের উপর শুয়ে থাকতে পারলে আর কি লাগে। আরাধ্যর মনে হচ্ছে এ মুহূর্তে ও পৃথিবীর সবচাইতে সুখী মানুষ। স্পর্শিয়ার কোলটা যেন ওর বেহেশত। স্পর্শিয়া এক মনে আরাধ্যর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, আর একটু পর পর আরাধ্যকে দেখছে। খারাপ লাগছে না ওর এভাবে আরাধ্যর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। হঠাৎ হঠাৎ অন্য রকম একটা অনুভুতি হচ্ছে। সেই অনুভুতিটা আরাধ্য ওর হবু হাজবেন্ড বলেই, নাকি অন্য কোন কারনে সেটা স্পর্শিয়া বুঝতে পারছে না। ছেলেটা কতটা ভালবাসে ওকে। কেমন করে ওর জন্য। এরকম ভালোবাসা পাওয়া নাকি ভাগ্যের ব্যাপার। ওর ভাগ্য এতই ভালো? সত্যিই কি তাই? না কি অন্য কিছু চাচ্ছিল ও? একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো স্পর্শিয়া। ভাগ্যিস সে শব্দ আরাধ্যর কান পর্যন্ত পৌছাল না।

আরাধ্য হঠাৎ চোখ খুলল। স্পর্শিয়া ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল। ও হঠাৎ এভাবে চোখ খোলাতে ইতস্তত বোধ করল স্পর্শিয়া। চোখ ফিরিয়ে নিল অন্যদিকে। আরাধ্য বললো,
– ও আচ্ছা! আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা হচ্ছে তবে?
স্পর্শিয়া নিশ্চুপ।
– স্পর্শ শোন।
– হুম।
– রাগ করনি তো?
– কেন?
– এই যে হঠাৎ এত কিছু।
– নাহ, রাগ করিনি।
– স্পর্শ
– হুম।
আরাধ্য ওর বুকের ওপরে থাকা স্পর্শিয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
– আই লাভ ইউ স্পর্শ।

স্পর্শিয়ার শান্ত হয়ে যাওয়া হার্টবিট এবার দৌড়াতে শুরু করলো। হঠাৎ এমন একটা কথা বলবে আরাধ্য সেটা ও এক্সপেক্ট করেনি। নদীর দিকে তাকিয়ে আছে স্পর্শিয়া। ঘামতে শুরু করেছে ও। বেশ কয়েকবার শুকনো ঢোক গিললো। মনে হচ্ছে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। আরাধ্য স্পর্শিয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। স্পর্শিয়ার ছোট চুল গুলো ওর মুখের সামনে এসে নাচানাচি করছে। আরাধ্যর বেশ ভালো লাগছে স্পর্শিয়াকে এভাবে দেখতে। আরাধ্য স্পর্শিয়ার কোল থেকে মাথা সরিয়ে উঠে বসলো। আরাধ্যকে বসতে দেখে স্পর্শিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। এমনিতে মেয়েটা বেশ চঞ্চল, কিন্তু সেই চঞ্চল মেয়েটাই ওর সামনে এত লজ্জা পায় কি করে আরাধ্য ভেবেই পায় না। স্পর্শিয়ার মুখের সামনে ছুটোছুটি করা চুলগুলোকে সরিয়ে দিল আরাধ্য। স্পর্শিয়ার দুই হাত নিজের হাতে মুঠো করে নিয়ে বলল,
– স্পর্শ, অনেক ভালবাসি তোমাকে। কতটুকু ভালবাসি তা বলে বুঝানো আমার জন্য সম্ভব না। তবে এইটুকু বলতে পারি, তোমাকে ছাড়া আমি অচল। তোমাকে ছাড়া থাকার কথা আমি ভাবতেই পারি না। দীর্ঘ সাত মাস কষ্টের পরে আজ কয়েকদিন যাবত আমার লাইফে সুখ এসেছে, আমি তোমাকে পেয়েছি আমার করে। প্লিজ স্পর্শ, এই সুখটুকু আমার লাইফ থেকে কখনো হারাতে দিও না প্লিজ। জীবনে যত কষ্টই আসুক না কেন, সব হাসি মুখে মেনে নিতে পারবো, কষ্ট হলেও সব পার করে যেতে পারবো, কিন্তু তোমাকে হারানোর কষ্ট সহ্য করতে পারবো না স্পর্শ। প্লিজ, কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না। প্লিজ!
আরাধ্যর চোখ ছলছল করছে। নিজেকে কন্ট্রোল করে হাসিমুখে বললো, জানো স্পর্শ, এখনো বিশ্বাস হয় না যে তুমি আমার হয়ে গিয়েছ, আমি তোমাকে আমার করে পেয়েছি, যদিও এখনো পুরোপুরি পাইনি। তাই মনের মধ্যে এখনো ভয়টা লেগেই থাকে।
– ভয়?
– হ্যা।
– বুঝলাম না।
– তোমাকে হারানোর ভয় পাগলী। ভালবাসি যে খুব, তাই ভয় পাই, যদি হারিয়ে ফেলি!

আরাধ্য উঠে দাঁড়ালো। স্পর্শিয়া আরাধ্যর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
– এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? ডোন্ট ইউ ওয়ান্ট টু গো হোম?

স্পর্শিয়া এতক্ষণে ঘড়ির দিকে তাকালো । সন্ধ্যা হয়ে আসছে আর ও খেয়ালও করেনি। সময় কখন কোনদিক দিয়ে যায়, বুঝতেই পারে না। স্পর্শিয়াও উঠে দাঁড়ালো। দুজনই রাস্তার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আরাধ্য হঠাৎ স্পর্শিয়ার হাত ধরে ওকে থামিয়ে দিল। স্পর্শিয়া আরাধ্যর দিকে তাকাতেই আরাধ্য ওকে জড়িয়ে ধরলো । আচমকা এভাবে জড়িয়ে ধরায় স্পর্শিয়া ভয় পেয়ে গেল। এই ভয়ের মধ্যেও কোন আবেশে ডুব দিল স্পর্শিয়া জানে না, ও নিজেও আরাধ্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আরাধ্যর মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। স্পর্শিয়ার মাথা থেকে শুরু করে পিঠ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার হাত বুলালো আরাধ্য। আলতো করে স্পর্শিয়ার কপালে একটা চুমু একে দিল। স্পর্শিয়া চোখ বন্ধ করে আরাধ্যর আদর সাদরে গ্রহন করলো।

গাড়িতে ওঠার পর থেকেই স্পর্শিয়া চুপ হয়ে আছে। বেশ লজ্জা লাগছে ওর। আরাধ্য কি করলো সেটা বড় কথা না, ও কি করে আরাধ্যর সবকিছুতে সায় দিল সেটাই মাথায় ঘুরঘুর করছে ওর। আরাধ্যর দিকে চাইলেও এখন ও তাকাতে পারবে না। লজ্জায় মরেই যাবে। কতক্ষনে বাসায় যাবে সে চিন্তাই করছে। আরাধ্য বেশ বুঝতে পারছে যে স্পর্শিয়া লজ্জা পাচ্ছে। গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আড়চোখে বারবার স্পর্শিয়ার লজ্জাভরা মুখ দেখছে। পুরাই একটা লজ্জার ড্রাম স্পর্শিয়া। চঞ্চলতা আর লজ্জা এ দুটো জিনিস একই সাথে কারও মধ্যে এত বেশি পরিমানে থাকে এটা স্পর্শিয়াকে না দেখলে আরাধ্য জানতোই না। ওকে দেখে মনে হচ্ছে বাসর রাতে নতুন বউ তার বরের সামনে বসে আছে, আর বর ঘোমটা খুলছে তাই এত লজ্জা পাচ্ছে ও।

স্পর্শিয়াকে নর্মাল করার জন্য আরাধ্য বললো,
– স্পর্শ, ফুচকা তো অনেক খাও তাই না?
– হুম।
– আমার সাথে পারবে? চলো একদিন দুজনে মিলে কম্পিটিশন করি। দেখি কে জিতে।
স্পর্শিয়ার লজ্জা মুহূর্তেই চলে গেল, চোখ চকচক করে উঠলো। খুশি হয়ে বললো,
– হ্যা, হ্যা। চলুন করি । আপনি জিতবেন না আমি শিওর।
বলেই খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো।
– আবারো আপনি করে বলছো!
স্পর্শিয়া মুখ কালো করে বললো,
– মনে থাকে না তো।
– তুমি মনে রাখতেই চাও না বুঝেছি তো আমি।
বলেই মন খারাপ করার ভান করলো আরাধ্য।
– না, এমন কিছু না। নেক্সট টাইম থেকে মনে রাখবো।

আরাধ্য রাস্তার মধ্যে গাড়ি থামিয়ে ২ লিটারের একটা বক্স আইস্ক্রিম নিয়ে এল। আইস্ক্রিম দেখেই স্পর্শিয়ার জিভে জল এসে গেল। আরাধ্য ওর দিকে বক্স এগিয়ে দিতেই সাথে সাথে নিয়ে নিল। খুশি হয়ে বললো,
– আরে স্ট্রবেরি ফ্লেভার! আপনি জানলেন কি করে যে আমার স্ট্রবেরি ফ্লেভার পছন্দ?
– কি বললে?
– না। মানে… তু…তুমি জানলে কি করে?
– আমার বিবিজান কি পছন্দ করে সেটা আমি না জানলে কে জানবে? অন্যকেউ?
স্পর্শিয়া আর কোন জবাব না দিয়ে একমনে আইস্ক্রিম খেতে লাগলো। খাচ্ছে আর ভাবছে এই ছেলে এত কিছু কি করে যে জানে ও বুঝতেই পারে না।

রাস্তাটা খালি। দুইপাশে গাছ। শান্ত পরিবেশ। মাঝেমধ্যে দু একটা গাড়ির দেখা মিলছে। বেশ ভালই লাগছে এ রাস্তা দিয়ে যেতে ওর। গাড়িতে সফট মিউজিক হচ্ছে। সব মিলিয়ে এক অন্যরকম অনুভূতি। শহরের দিকে ঢুকে গেলে এ অনুভুতিটা আর থাকবে না। তখন আশেপাশের গাড়ির হর্ন, আর জ্যামে বসে বসেই সময় কাটবে।

প্রায় অর্ধেক বক্স আইস্ক্রিম শেষ করার পরে স্পর্শিয়ার মনে পড়লো ও তো আরাধ্যকে একবার আইস্ক্রিম সাধলোও না। ছিঃ! ছেলেটা ওকে ছেচ্চড় ভাববে। কিভাবে খেয়েই চলেছে। সাথে সাথে আরাধ্যর দিকে আইস্ক্রিম এগিয়ে দিয়ে বলল,
– আপনি.. আই মিন, তুমি খাবে না?
– হ্যা। খেতে তো খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু ড্রাইভ করা অবস্থায় খাই কি করে বলতো?
বলেই একবার স্পর্শিয়ার দিকে আড়চোখে নজর দিল আরাধ্য। তারপর সাথে সাথেই বললো,
– যদি তুমি খাইয়ে দাও তবে অন্য ব্যাপার।
স্পর্শিয়া একবার আইস্ক্রিমের দিকে তাকালো , একবার আরাধ্যর দিকে তাকালো। তারপর এক চামচ আইস্ক্রিম নিয়ে আরাধ্যর মুখের সামনে ধরলো। আরাধ্য তৃপ্তি নিয়ে আইস্ক্রিম খেল। ওর কাছে মনে হচ্ছে দুনিয়ার যে কোন খাবারের চেয়ে এই আইস্ক্রিমটা খুব মজা। আরাধ্যকে এক চামচ আইস্ক্রিম দিয়েই স্পর্শিয়া আবার মনের সুখে একা একাই খেতে লাগলো। আরাধ্য দেখে হা করে তাকিয়ে রইলো। ও ভেবেছিল স্পর্শিয়া ওকে খাইয়ে দিবে, আর ও কি করলো! বেশ জোরে সোরে কাশি দিল আরাধ্য স্পর্শিয়ার এটেনশনের জন্য। স্পর্শিয়াও ওর দিকে ফিরে তাকালো।
– স্পর্শ, আমার খুব আইস্ক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে। এত বড় আইস্ক্রিম তুমি একা শেষ করতে পারবে বলে মনে হয় না। গলে যাচ্ছে। আর তবুও যদি তোমার কম হয়, আমি তোমাকে আরও একটা কিনে দেব। কিন্তু তবুও আমাকে খাইয়ে দাও প্লিজ।
স্পর্শিয়া এবার বেশ লজ্জা পেয়ে গেল আরাধ্যর কথায়। কি করলো ও এটা! শুধু এক চামচ আইস্ক্রিম দিয়েই আর দিল না কেন। ওর ইজ্জতের ফালুদা বারবার হয়েই চলেছে আরাধ্যর কাছে। কি যে করে ও মাঝেমাঝে, নিজেরই নিজেকে মারতে ইচ্ছা করে। আরাধ্যকে এবার ও পুরোদমে আইস্ক্রিম খাওয়ানো শুরু করলো। আরাধ্য ড্রাইভ করছে, আর স্পর্শিয়ার হাতের আইস্ক্রিম খাওয়ার মজা নিচ্ছে। আইস্ক্রিম যদিও খুব বেশি খায় না আরাধ্য, কিন্তু স্পর্শিয়ার হাতে আইস্ক্রিম খাওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে পুরো বক্সই শেষ করে ফেললো। স্পর্শিয়া বেশ করুণ চোখে খালি বক্সের দিকে তাকিয়ে রইলো। আরাধ্য মনে মনে হাসতে লাগলো ওর বাচ্চা বউয়ের কাহিনি দেখে।

বাসার সামনে এসে স্পর্শিয়ার বাড়ির সামনের দোকান থেকে আরাধ্য আরও তিন বক্স আইস্ক্রিম কিনে দিল স্পর্শিয়াকে। স্পর্শিয়ার খুশি আর কে দেখে। এগুলো সব ঘরে গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে খাবে। কাওকে একটুও দিবে না।
আরাধ্য বললো,
– তিন বক্স মোটেও একা খাওয়ার চিন্তা করো না। এগুলো তোমার একার না, সবার জন্য।
স্পর্শিয়া আরাধ্যর কথা শুনে বেশ কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। এই ছেলে মাইন্ড রিডার, নাকি জ্বীন স্পর্শিয়া বুঝতে পারে না। এত কিছু কি করে একটা মানুষ বুঝে ফেলে?

– স্পর্শ, আজ আমি আর তোমার সাথে বাসায় যাচ্ছি না। তাহলে সবাই ভাববে তুমি ক্লাস, কলেজ সব মিস দিয়ে সারাদিন আমার সাথেই ঘুরো। কিন্তু তারা তো আর জানে না যে তুমি এমনিতেই সারাদিন কলেজ ফাকি দাও।
– না আমি কলেজ ফাকি দেই না ।
– সত্যি দাও না?
– হ্যা। কারন আমি ক্লাস ফাকি দেই, কলেজ না । ক্লাস ফাকি দিয়ে তো কলেজের ভেতরেই থাকি । তাহলে কলেজ ফাকি দেওয়া হলো কি করে?
বলেই স্পর্শিয়া হাসতে লাগলো । হাসতে হাসতে পড়ে যাবে এমন অবস্থা। আরাধ্য হাসি দেখছে। ওর ভালোবাসার মানুষের সেই ভুবন ভুলানো হাসি।

একটু পর স্পর্শিয়া বললো,
– আপনি.. না মানে, তুমি যাবে না বাসায় বুঝলাম। কিন্তু তুমি তো পুরো ঘটনাটা এখনো শেষ করো নি।
– তারপর আর তেমন কিছু নেই। তুমি চাইলে এখনি শুনতে পার।
– হ্যা, শুনবো।
আরাধ্য স্পর্শিয়াকে গাড়ির উপর বসিয়ে দিল। স্পর্শিয়া স্লিপ খেয়ে পড়ে যেতে নিতেই আরাধ্য ধরে ফেললো।
– আমি তোমার হাত ধরে রাখি । তাহলে আর পরবে না তুমি।
স্পর্শিয়া নিশ্চুপ।
– তোমাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পর পরই আমি দাদুকে ফোন করি যে তুমি এ্যাক্সিডেন্ট করেছ।
দাদু তো অসুস্থ ছিল, তিনি তোমার আব্বু আর ছোট কাক্কুকে পাঠায়। দাদু হয়তো তখনো তাদেরকে আমার সম্পর্কে কিছু বলেনি। তারা হসপিটালে এসে অনেক ধন্যবাদ জানায় আমাকে, কারণ তারা মনে করেছে আমি তোমাকে এ্যাক্সিডেন্ট স্পটে পেয়ে নিয়ে এসেছি। এমনকি এত বছর পরে দেখা হওয়ায় তারা আমাকে চিনতেও পারে নি। খুব কষ্ট লেগেছিল তখন। তাই আমিও আর পরিচয় দেইনি নিজের। তখন মনে হচ্ছিল হারিয়ে ফেললাম মনে হয় তোমাকে। দাদু আমাকে পছন্দ করেনি তাই তাদেরও কিছু বলেনি।

যে কয়দিন তুমি অসুস্থ ছিলে, কলেজে যাওনি, সে কয়দিন আমার দিন যে কি করে কেটেছে তা শুধু আমিই জানি। তোমার খবর নেয়ার চেস্টা করেও নিতে পারছিলাম না। তাই ৪ দিন পর থেকেই আমি কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে থাকতাম, তুমি আস কি না দেখতে। এরই মধ্যে আমি কি ভেবে জানিনা তোমার নাম দিয়ে ফেসবুক আইডি সার্চ দেই, আর পেয়েও যাই। বুঝতে পারি হয়তো বাসায় থাকতে থাকতে বোর ফিল করেই আইডি খুলেছ। রিকুয়েস্টও পাঠিয়েছিলাম। এক্সেপ্ট করনি। ১৩ দিন পরে তোমার দেখা পেলাম, তাও কয়েক সেকেন্ডের জন্য। কারন সেদিন গাড়ি নিয়ে এসেছিলে। তুমি কলেজ থেকে বের হয়েই গাড়িতে উঠে চলে যাও। অল্প সময় দেখলেও সেদিন কলিজায় একটা শান্তি অনুভব হচ্ছিল তোমার দেখা পাওয়াতে। অনেকদিন পরে সেদিন কাজে মনোযোগ দিতে পেরেছিলাম।

তার কয়েকদিন পরেই তোমার দাদু আমাকে কল দিয়ে সুখবর জানালেন যে উনি আমার সাথেই তোমার বিয়ে দিতে চায়। আর বাড়ির সবাইও নাকি রাজি। আমার খুশি আর কে দেখে। সেদিন সারা ঘরে নেচেছিলাম আমি সবাইকে নিয়ে। আমি ভেবেছিলাম দাদু হয়তো দুই/ তিন বছরের আগে বিয়ের কথা তুলবেনই না। কিভাবে কি হলো আমি কিছুই বুঝলাম না।
– হয়তো আপনাকে দাদুর ভালো লাগতে শুরু করেছিল।
– আবারো আপনি!
– সরি! তুমি। দাদু যখন বিয়ের কথা বলে, তখন সবাই আপত্তি তুলেছিল। কিন্তু দাদু বলল, ছেলে ভালো, আবার সবার নাকি পরিচিত। তার ওপর, দাদু এই অসুস্থতায় খুব করুনভাবে আবদারটা করায় কেও আর ফেলতে পারেনি তার কথা। বিয়ে আরও পরে হবে, সেটা ভেবেই সবাই রাজি হয়েছে।
– উফ! দাদু! ইউ আর গ্রেট। দাদু না থাকলে যে আমার কি হতো!
– একটা ছেলে একটা মেয়ে হতো।
বলেই স্পর্শিয়া দুই হাতে মুখ চেপে ধরলো। কি বলতে কি বলে ফেললো। ধুর!
– কি বললে?
– কিছুনা।
– একটা ছেলে একটা মেয়ে লাগবে তোমার?
– না, না, না। মোটেও না। কখনওই না। আমি সেটা বুঝাই নি।
– তবে? কি বুঝিয়েছ?
– আসলে..
– বলো
– এই কথাটা আমরা ফ্রেন্ডরা মজা করে বলি। কথা বলতে বলতে ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছি ভেবে ভুলে আপনাকেও বলে ফেলেছি। সরি।
– আবারো আপনি! তুমি যে কবে শিখবে!! আর ফ্রেন্ড ভেবে বলে ফেলেছ মানে? আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি না? এতই খারাপ আমি?
– না, সেটা না।
– তবে?
– কিছু না।
– কেন উই বি ফ্রেন্ডস??
আরাধ্য হাত বাড়িয়ে দিল স্পর্শিয়ার দিকে। স্পর্শিয়ারও খুব মজাই লাগলো, ওর উড বি ওর ফ্রেন্ড হবে। বাহ! দারুন তো ব্যাপারটা। স্পর্শিয়াও হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো।
– ইয়েস। ফ্রেন্ডস!
দুইজনেই হেসে দিল।
– আর কখনো আমার সাথে ফরমালিটি দেখিয়ে কথা বলবে না। যা ইচ্ছে হয় বলতে সেটাই বলবে।
স্পর্শিয়া জিজ্ঞেস করলো,
– তুমি আমাকে যখন হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলে তখন তো আব্বু আর কাক্কু তোমাকে দেখেছিল, তাহলে এ্যাঙ্গেজমেন্টের সময় তারা কি তোমাকে দেখে চিনেনি? কিছুই তো বললো না।
– তোমার ফ্যামিলির সব বড়দের সাথে আগেই আমার দেখা করানো হয়েছিল। আর তখনি তারা চিনতে পেরেছে আমাকে। সবাইকে তখন আমার দাদাই বলে দিয়েছিল যে তোমার পিছনে এতদিন আমি ঘুরঘুর করেছি। সবাই সে কি হাসাহাসি আমার কাহিনি শুনে। তখন তারা আমাদের বিয়ে নিয়ে ডিসকাস করছিল, এটা লাভ মেরেজ নাকি এ্যারেন্জ মেরেজ। অনেক গবেষণার পরে বের হলো আমাদের বিয়েটা “লাভারেঞ্জ মেরেজ”। যেহেতু আমার দিক থেকে লাভ, আর তোমার দিক থেকে এরেঞ্জ।
– বাহ! বেশ সুন্দর নাম দিয়েছে তো।
– হ্যা। নামটা আমার শ্বশুরের দেওয়া।
– কিহ?
– হ্যা।
– বিশ্বাস হয় না।
– তবে নিজেই জিজ্ঞেস করো।
– না বাবা। আমি এই ভয়াবহ কথা জিজ্ঞেস করতে পারবো না। আব্বু তোমার সাথে এত ফ্রি কি করে, তাই ই তো ভেবে পাই না।
– ইউ হেভ টু বুঝতে হবে, আরাধ্য বলে কথা সোনামণি।
– হুহ।
– যাও বিবিজান। এবার বাসায় যাও। কেও এসে গল্প করতে দেখলে সবাই বুঝে যাবে যে আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে ঘুরি।
– ভয় পাও?
– হ্যা। ভয় পাই। তোমাকে ছাড়া যে থাকতে পারি না আমার জান। তারা উল্টাপাল্টা কিছু ভেবে যদি তোমার কলেজ যাওয়া কমিয়ে দেয় তবে তো মহা বিপদ। তোমাকে যত বেশি বেশি দেখতে পারবো ততই আমার লাভ। সো, শুধু শুধু নিজের লস করার তো দরকার নেই।
আরাধ্য স্পর্শিয়ার দুই গাল ধরে কপালে চুমু একে দিল। পাজাকোলা করে গাড়ির উপর থেকে নিচে নামালো ওকে।
– স্পর্শ।
– হুম।
– আবার কবে দেখা হবে আমাদের? গল্প তো শেষ।
স্পর্শিয়া মুচকি হেসে বললো,
– যেদিন তুমি চাও।
– আমি জানাবো তোমাকে কবে আসবো ।
– আচ্ছা।
– তোমার জন্য কিন্তু সারপ্রাইজ আছে।
– কি?
– বাসায় গেলেই বুঝবে।
– বাসায় গেলে!
– হুম।
– বলোনা কি সারপ্রাইজ?
– আহা, যাও না বাসায়। এইটুকু রাস্তা পার করলেই তো বুঝবে।
– হুম। আচ্ছা, যাচ্ছি।
স্পর্শিয়া চলে গেল। আরাধ্য স্পর্শিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। স্পর্শিয়ার কেন যেন ইচ্ছে করছে আরেকটু থাকতে। ছেলেটার প্রতি একটা অন্য রকম টান অনুভব করছে ও। আরাধ্যকে দেখার জন্য পিছনে ফিরে তাকালো। আরাধ্য হাসছে ওকে দেখে। আরাধ্য যেন এটাই চাচ্ছিল মনে মনে যে স্পর্শিয়া একবার ওর দিকে তাকাক। এখন একটু শান্তি লাগছে। ওই চাঁদমুখটা আরও কিছুক্ষণ দেখতে পারলে আরও শান্তি লাগতো।
স্পর্শিয়া বাড়ির দরজার সামনে এসে ভাবতে লাগলো কি সারপ্রাইজ আছে ওর জন্য। কিছুই বুঝতে পারছে না।

(চলবে)

লিখা: Dewan Oishi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here