প্রেম পর্ব -১০

প্রেম 💙❣️ (Love has no limits)

#পর্ব: ১০

সবাই একসাথে ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। ডিনার করছে আর গল্প করছে। স্পর্শিয়ার বাড়ির রুলস এটা যে সবাইকে একসাথে বসেই খাবার খেতে হবে, কেও আলাদা খেতে পারবে না। আরাধ্যর এ জিনিসটা খুবই পছন্দ হয়েছে। স্পর্শিয়ার ফ্যামিলির বন্ডিংটা খুব সুন্দর। এ যুগে সবাই আলাদা আলাদা থাকে, ভাই ভাই আলাদা হয়ে যায়, অথচ ওরা এত বড় একটা ফ্যামিলি এখনো একসাথে, একই বাড়িতে থাকে, একই টেবিলে খাবার খায়, নিজের বৃদ্ধ বাবা মা কে তারা কতটা মানে আর সম্মান করে যা এখনকার দিনে দুর্লভ। আরাধ্য চলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু সবাই জোড়াজুড়ি করাতে ডিনার করতে হচ্ছে।

আরাধ্য বাসার ছোট বড় সবার সাথে খুব ফ্রি হয়ে গিয়েছে এত অল্প সময়ে এ ব্যাপারটা স্পর্শিয়ার খুব ভালো লাগছে। দাদা এত মজা করে, আর এত রিল্যাক্স মুডে থাকে আরাধ্যর সাথে যে মনেই হয় না উনি অসুস্থ। আর নিজের বাবাকে স্পর্শিয়া সবসময়ই রাগী একজন মানুষ হিসেবে চিনতো, যে সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকতো। কিন্তু স্পর্শিয়া খুব অবাক হয় যখন ওর আব্বুও আরাধ্যর সাথে এত হাসি ঠাট্টা করে যে দেখলে মনে হয় তারা ছোট বেলার বন্ধু।

স্পর্শিয়া আরাধ্যর ঠিক অপজিটে স্নিগ্ধার সাথে বসে আছে। আরাধ্যর প্লেটে যুদ্ধ চলছে। একটার পর একটা আইটেম দেওয়া হচ্ছে। একটা শেষ না হতেই আরেকটা আইটেম দেওয়া হচ্ছে। আরাধ্যর পেট ফেঁপে গিয়েছে। আরাধ্য একবার চোখ ছোটছোট করছে, আরেকবার বড় বড় করে তাকাচ্ছে খাবারের দিকে। একবার স্পর্শিয়াকে দেখছে, আরেকবার সবাইকে দেখছে। স্পর্শিয়ার আরাধ্যর অবস্থা দেখে হাসি পাচ্ছে । কিন্তু খুব কস্টে হাসি থামিয়ে রেখেছে। আরাধ্য বেচারা খুব কষ্ট করে খাচ্ছে এটা ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

খাওয়া শেষে আবার আরাধ্যর সাথে আড্ডা জমালো বাচ্চা পার্টিরা। স্পর্শিয়া বুঝে গিয়েছে আজ আর ওর কপালে কিছু নেই। আর ছাড়া পাচ্ছে না আরাধ্য ।

আরাধ্য যাওয়ার সময় স্পর্শিয়াকে বলল,
– তোমার বাকী ঘটনাটুকু শুনতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে তাই না?
– হ্যা।
– আমি বাসায় গিয়ে তোমাকে কল করে বলবো বাকীটুকু।
স্পর্শিয়া কিছু বলল না।
আরাধ্য আবারো বলল,
– আচ্ছা একটা কথা বলতো
– কি?
– আমাকে যেভাবে খাওয়ালো সবাই, এভাবে খেলে তো আমি ৫ দিনে ভুটকুর খাতায় নাম লিখাবো। কিন্তু তোমার এই অবস্থা কেন? চামচিকা লাগে!
স্পর্শিয়া রাগ হয়ে বলল,
– কিহ? আমাকে চামচিকা লাগে? যান, কথা নেই আপনার সাথে।
আরাধ্য স্পর্শিয়ার দুই গাল টেনে বললো,
– ওরে আমার অপ্সরী রাগ করেছে তাহলে?
আরাধ্য স্পর্শিয়াকে এভাবে গাল টেনে ধরাতে চমকে তাকালো স্পর্শিয়া আরাধ্যর দিকে। আরাধ্য সাথে সাথে গাল ছেড়ে দিল। আস্তে করে সরি বলল। স্পর্শিয়া খুব অবাক হচ্ছে আরাধ্য এই সামান্য বিষয়গুলোতেও সরি বলে।

আরাধ্যকে স্পর্শিয়া গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিল। আরাধ্য বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় স্পর্শিয়া বললো,
– আপনি কি কালকে আসবেন?
আরাধ্য চমকে গেল স্পর্শিয়ার কথায়।
– কোথায় আসবো আমি?
– না, মানে… কলেজের সামনে।
আরাধ্য মুচকি হাসলো। কিন্তু সাথে সাথেই আগামীকালের মিটিং এর কথা মনে করে মন খারাপ হয়ে গেল।
আরাধ্য বেশ কয়েকবার ঢোক গিলে বলল,
– স্পর্শ, আসলে… কাল আমার ১২ টার দিকে একটা বিজনেস মিটিং আছে। কখন শেষ হবে বলতে পারছি না।
– মিটিং? আচ্ছা, কোন সমস্যা নেই তো, আমরা না হয় পড়েই দেখা করবো অন্য কোন সময়।
– প্লিজ রাগ করো না। আসলে কালকে…
– আরে, নাহ। রাগ করিনি তো।
আরাধ্য ছোট্ট একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল।

রাস্তায় আরাধ্য ভাবতে লাগলো স্পর্শিয়া একটু হলেও ওকে পছন্দ করতে শুরু করেছে সেটা ওর বিহেভেই বুঝা যাচ্ছে। এই ভাবনাটা ওর মনটাকে খুশির জোয়ারে ভাসিয়ে দিল। স্পর্শিয়ারও মনে হচ্ছে আরাধ্য ছেলেটা খারাপ না। কতটা বুঝে ছেলেটা ওকে! আর শুধু শুধু নিজের অতীতের জন্য বর্তমানকে অবহেলা করারও মানে হয় না।

পরেরদিন কলেজ থেকে বের হয়েই স্পর্শিয়া বেশ বড়সড় একটা ধাক্কা খায়। আরাধ্য কলেজ গেটে দাঁড়িয়ে আছে। আরাধ্য একা নয়, সাথে আজকে রোহানও আছে। গতকালের মতো আজকেও স্পর্শিয়া খেয়াল করলো ওর ফিওন্সের দিকে অন্য মেয়েরা “খাই খাই” দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কালকের চেয়ে আজকে যেন বেশিই রাগ হচ্ছে ওর। কিন্তু কিছু করার নেই।

আরাধ্যকে দেখে স্পর্শিয়ার সব বান্ধবীরা এগিয়ে এল। বেশ কিছুক্ষণ গল্প করার পরে ওরা চলে গেল। আরাধ্য স্নিগ্ধাকে বলল,
– আমি স্পর্শিয়াকে নিয়ে আজ একটু ঘুরতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু প্রতিদিন এভাবে ওকে নিয়ে ঘুরলে কেমন দেখায়। বাসার মানুষও তো কি ভাববে।
স্নিগ্ধা চেঁচিয়ে বলল,
– আরে জিজু, শালি থাকতে ফিকার নট। স্পর্শিয়া তো প্রায়ই রিমির বাসায় যায় নোটস করার জন্য, কিন্তু আমি তো আর সবসময় ওর সাথে যাই না। আমি বাসায় গিয়ে বলবো ও রিমির বাসায় আছে।
আরাধ্য খুশি হয়ে গেল। স্নিগ্ধার কাছ থেকে এরকম একটা কথাই আশা করছিল ও।
স্পর্শিয়া মাঝখান দিয়ে চেহারা করুন করে বললো,
– মিথ্যে বলবো কেন স্নিগ্ধা?
স্পর্শিয়ার কথা শুনে আরাধ্যর চেহারা আরও বেশি করুন হয়ে গেল।
আরাধ্য তবুও বললো,
– আচ্ছা, তোমার মন সায় না দিলে প্রয়োজন নেই। মনের বিরুদ্ধে কিছু করা ঠিক না।
কথাটা বলতে আরাধ্যর ভেতরটা ফেটে যাচ্ছিল, তবুও বললো।
স্নিগ্ধা বলল,
– ও বেশি কথা বলে। তুমি মন খারাপ করো না ভাইয়া ও যাবে। সারাদিন তো ক্লাস মিস দিয়ে টইটই করে ঘুরে, তখন ওর সত্য মিথ্যা কই থাকে?
স্নিগ্ধার কথা শুনে আরাধ্য চোখ বড়বড় করে ফেললো। স্পর্শিয়া বেশ লজ্জা পেল। স্নিগ্ধা এমন একটা কথা না বললেও পারতো।

লজ্জায় স্পর্শিয়া নিজেই বললো,
– না, তেমন কিছু না। আমি তো এমনিই বলছিলাম। আমার আপনার সাথে যেতে সমস্যা নেই।
এতক্ষণে আরাধ্যর চেহারায় খুশি দেখা দিল।

স্নিগ্ধা রোহানের সাথে চলে গেল। আরাধ্যর কথাতেই স্নিগ্ধা রোহানের সাথে গেল। স্পর্শিয়া ভেবেছিল রোহানও হয়তো ওদের সাথে যাবে, কিন্তু পরে বুঝতে পারলো ও কোন কাজে এসেছিল আশেপাশে, কিন্তু আরাধ্য ওকে আসতে বলায় এসে দেখা করে গেল।

গাড়িতে উঠেই স্পর্শিয়া আরাধ্যকে বলল,
– আপনার না মিটিং ছিল?
– হ্যা।
– তাহলে কি করে এলেন?
– কেন? গাড়িতে করে এসেছি ।
– উফফ! মজা করছি না। বলুন না।
– বলার জন্য তো কখন থেকেই বসে আছি।
– আবারো মজা!
– আরে বউ রাগ করছো কেন?

স্পর্শিয়া যেন আরাধ্যর কথায় লজ্জায় পেয়ে গেল ও এভাবে বউ বলে ডাকাতে। শান্ত দৃষ্টিতে আরাধ্যর দিকে তাকালো স্পর্শিয়া। আরাধ্য খেয়াল করেছে যে স্পর্শিয়া ওর দিকে লজ্জাদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে, কিন্তু ও আর স্পর্শিয়ার দিকে নজর ফেরায় নি। কারণ, ও নজর ফেরালেই স্পর্শিয়া আরও লজ্জা পেয়ে যাবে। আরাধ্য ওর নিজের মতো করে কথা বলেই চলেছে।

– তুমি এই প্রথম আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছ সেই খুশিতেই তো সারারাত ঘুম হয় নি আমার। আর জিজ্ঞেস করছ মিটিং এর কি হলো? আমি ড্যাডকে বলে ম্যানেজ করিয়ে নিয়েছি। ড্যাড ই হ্যান্ডেল করবে আজকের মিটিং টা। জানো মজার ব্যাপার হচ্ছে ড্যাড বুঝতে পেরেছে যে আমি তোমার সাথে দেখা করবো। আমাকে অল দ্যা বেস্ট উইশ করেছে।

স্পর্শিয়া আরাধ্যর কথা শুনে ভ্রু কপালে তুলে চোখ গোলগোল করে ফেললো।
– আপনি আংকেল কে কেন বলেছেন যে আমার সাথে দেখা করতে আসবেন?
– বলি নি তো।
– তবে?
– আমি বিজনেস নিয়ে খুব ই সিরিয়াস। ভাইয়া আর আমিই এখন বিজনেস দেখাশোনা করি। ভাইয়া তো বেশিরভাগ সময়ই থাইল্যান্ডের বিজনেস টা নিয়ে বিজি থাকে। আজ যেহেতু এই প্রথমবারের মতো কোন ইম্পরট্যান্ট মিটিং এ আমি এ্যাটেন্ড নেই, তাই ড্যাড বুঝে ফেলেছে যে হয়তো তোমার সাথেই দেখা করতে আসব। বিকজ নো বিজনেস মিটিং ইজ মোর সিরিয়াস দ্যান ইউ।
– তবুও, আপনার কিন্তু এভাবে মিটিং না করে আসা উচিৎ হয়নি।
– তুমি খুশি হওনি আমি আসাতে?
স্পর্শিয়া চুপ করে রইলো। স্পর্শিয়াকে চুপ থাকতে দেখে আরাধ্য নিজেই বলল,
– আমি জানি তুমি এর উত্তর দিবে না। কারন তুমি নিজেই দোটানায় আছ। যাইহোক, কোন রেস্টুরেন্টে যাবে বল?
– প্রতিদিন কি রেস্টুরেন্টে যেতে হয় নাকি?
– তাই বলে খাবে না? আমি তো পারলে রেস্টুরেন্টের যত খাবার আছে সব তোমাকে একসাথে খাওয়াই। যেই সিরিয়াস লেভেলের চামচিকা তুমি, মনে হয়…
স্পর্শিয়া চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আরাধ্য কথা ঘুরিয়ে ফেললো।
– না, আসলে বলছিলাম যে তুমি তো চামচিকা না, একদম পারফেক্ট ফিগার। সো বলুন মিস পারফেক্ট কোথায় যাবেন?
– কোন রেস্টুরেন্টে যাব না।
– তবে?
– ফুচকা খাব।
– ফুচকা! এই দুপুরে! বলে কি এই পিচ্চি! প্রবলেম হবে।
– কোন প্রবলেম হবে না। চলুন।
– না বুঝছো না ব্যাপারটা। এই দুপুরে ফুচকা খেলে…
স্পর্শিয়া অভিমানী সুরে বলল,
– আপনি আমার কথা শুনবেন না?
– হ্যা, শুনবো তো। বিবিজান বললে আমি না শুনি কি করে? লেকসাইডে ফুচকা হাউজে যাবে নিশ্চয়ই?
স্পর্শিয়া অবাক হয়ে বলল,
– আপনি কি করে জানলেন?
– কাওকে ভালবাসলে তার শখ, আর ইচ্ছেগুলোও জানতে হয়।
স্পর্শিয়া আর কোন কথা বললো না সারা রাস্তা। ছেলেটা সব জানে ওর ব্যাপারে। কি করে এত কিছু জানে তাই ও খুজে পায় না।
.
.
.
.

স্পর্শিয়া ফুচকা খাচ্ছে আর আরাধ্য তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। দুই একটা ও নিজেও মুখে দিচ্ছে। কিন্তু নিজের খাওয়ার চেয়ে স্পর্শিয়ার ফুচকা খাওয়াটা দেখতেই ওর বেশ লাগছে। বাচ্চা মেয়েটা ওর ছোট ছোট হাত দিয়ে ফুচকা ধরছে, এত্ত বড় একটা হা করে পুরোটা মুখে পুরে দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে ফুচকার টক ওর মুখ বেয়ে পড়ছে, ও আবার টিস্যু দিয়ে সেগুলো মুচ্ছে, আর একটা করে টিস্যু সাইডে ফেলছে। আরাধ্য যে মনোযোগ দিয়ে ফুচকা খাওয়া দেখছে, এত মনোযোগ কখনো ফিন্যান্সও করেনি ও। ঝালে স্পর্শিয়ার নাক আর গাল টকটকে লাল হয়ে আছে, পানি পড়ছে নাক দিয়ে, আর ও বারবার নাক টানছে। আরাধ্য ওর হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে স্পর্শিয়ার নাক মুছে দিল। সাথে সাথে স্পর্শিয়া খাওয়া থামিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আরাধ্যর দিকে তাকিয়ে রইলো।

আরাধ্য ইতস্ততভাবে বললো,
– আসলে তোমার নাক দিয়ে পানি পড়ছিল ঝালে, তাই ভাবলাম…
স্পর্শিয়া চুপ করে রইলো।

স্পর্শিয়ার আরও ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু আরাধ্যর এই কাজ করার পর থেকে ওর গলা দিয়ে খাবার ই যেন নামছিল না। আরাধ্য নিজেও নিজেকে মনে মনে বেশ কয়েকবার বকলো। কি করতে গিয়ে যে কি করে ফেলে হুটহাট নিজেও বুঝে না। স্পর্শিয়ার সামনে যেন একটা ঘোরের মধ্যে থাকে ও। কি করছে কোন খেয়ালই থাকেনা।

খাওয়া শেষ করে একটা নদীর পাড়ে এসে বসলো ওরা। জায়গাটা নিরিবিলি। শহরের কোলাহলমুক্ত। আশেপাশে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ আছে শুধু। বেশিরভাগই কাপল। তারাও এই সুন্দর বিকেলটা উপভোগ করতে এসেছে। চারিদিকে শুধু থৈ থৈ পানি। আর এইদিকটাতে নরম ঘাস। আরাধ্য স্পর্শিয়া ঘাসের উপর বসে পড়লো। উপরে একরাশ পাখি উড়ছে। স্পর্শিয়া বেশ উপভোগ করছে জায়গাটা। এমন একটা জায়গা ঢাকা শহরে আছে এটা ওর অজানা ছিল। আরাধ্যর সান্নিধ্য স্পর্শিয়ার কাছে ভালোই লাগছে। একটু একটু করে প্রেমে পড়ছে নিজের অজান্তেই। ছলছল ঢেউ দেখছে আর ভাবছে ছেলেটার সাথে সারাজীবন কাটালে মন্দ হয় না। প্রায়ই এই জায়গাটায় আসবে ওরা দুজন, প্রকৃতি দেখবে, পাখি দেখবে, প্রতিদিনের ব্যস্ত শহুরে জীবন থেকে কিছুটা হলেও শান্তির নি:শ্বাস এখানে এসে ফেলতে পারবে। আরাধ্যর ডাকে স্পর্শিয়ার ঘোর কাটলো।
– স্পর্শ
– হুম।
– আগে কখনো এসেছ এখানে?
– না।
– ভালো লাগছে না?
– অনেক।
– স্পর্শ জানো আমার খুব ইচ্ছে শহর থেকে দূরে, এরকম টাইপ কোন একটা জায়গায় আমি একটা বাড়ি করবো। যখন ব্যস্ত জীবন থেকে আমরা একটু সময় পাবো, সেই বাড়িতে গিয়ে থাকবো । একটা চৌচালা টিনের বাড়ি। বিশাল বড় খোলা জায়গা থাকবে বাড়ির আশেপাশে জুড়ে। বাড়ির সামনে অনেক ফুলের আর ফলের গাছ থাকবে। বাড়ির পাশে একটা বড় পুকুর থাকবে। তুমি গ্রামের মেয়েদের মতো শাড়ি পড়ে আলতা রাঙা পায়ে পুকুরে পা ডুবিয়ে বসে থাকবে, আর আমি পাশে বসে তোমাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো। তুমি পা নাড়ালেই পানিতে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ হবে। হঠাৎ দুষ্টুমি করে একটু পানি নিয়ে ছিটিয়ে আমাকে ভিজিয়ে দেবে। আমিও দুষ্টুমিতে তোমাকে জড়িয়ে ধরবো।

স্পর্শিয়া খুব মনোযোগ দিয়ে আরাধ্যর কথা শুনছিল। কিন্তু শেষের লাইন দুটো শুনে লজ্জা পেয়ে গেল।
স্পর্শিয়ার দিকে তাকিয়ে আরাধ্য ভাবতে লাগলো, এই লজ্জাভরা চোখ দুটোকে ও পৃথিবীর যে কোন কিছুর বিনিময়ে হলেও চায়। এই চাহনিতে ওর প্রাণ লুকানো আছে। ওর কাছে মনে হচ্ছে এই সুখের মুহূর্তগুলো আগে এল না কেন জীবনে? জীবনটা এখান থেকেই শুরু হলো না কেন?

আরাধ্যকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে স্পর্শিয়া এবার লজ্জায় চোখ ই নামিয়ে ফেললো। আরাধ্য বললো ,
– আমাকে মেরে ফেলবা?
স্পর্শিয়া ভ্রু কুচকে তাকালো আরাধ্যর দিকে।
আরাধ্য বললো,
– এভাবে বারবার লজ্জাভরা দৃষ্টি দিয়ে আঘাত করলে তো আমি মরেই যাব। তোমার ওই শান্ত চোখ দুটো দেখেই ঠিক থাকতে পারিনি, আর এই লজ্জাদৃষ্টিতো নির্ঘাত আমাকে মেরেই ফেলবে। তুমি কি জানো তোমার ওই হরিণীর চোখ জোড়া দেখেই পাগল হয়েছিলাম তোমার জন্য?

স্পর্শিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আরাধ্যর দিকে। আরাধ্য বলল,
– তোমার এস.এস.সি পরীক্ষা ছিল তখন। নেভি ব্লু রঙ এর স্কুল ড্রেস, কাধে দুই বেণী, আর হাতে ছিল পরীক্ষার ফাইল। তুমি পরীক্ষা শেষে বান্ধবীদের সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলে আর হাত নাড়িয়ে গল্প করছিলে। তোমাকে দেখে আমি বিষম খাই। কারণ, আমার ধারনা ছিল তুমি গ্রামের মেয়ে। এখানে তোমাকে দেখে বেশ অবাক হই। প্রথম যেদিন তোমাকে দেখলাম পেয়ারা বাগানে, তারপর তোমাকে খুজতে আরও দুদিন গিয়েছিলাম সেখানে কিন্তু তোমার দেখা পাইনি। জানিনা কেন, কিন্তু কেমন যেন একটা মায়া, আর টান কাজ করছিল তোমার প্রতি। পরবর্তীতে সেদিন স্কুলের সামনে দেখার পর থেকে টান, আর মায়াটা যেন আরও বেড়ে যায়। সেদিন খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম তোমাকে। তোমার চোখের প্রেমে পড়ে যাই সেদিন। এত সুন্দর নেয়ামত আল্লাহর হতে পারে তা তোমার চোখ না দেখলে হয়তো বুঝতামই না। কিন্তু আমাকে এক আকাশ পরিমান কষ্ট দিয়ে তুমি কয়েক মিনিটের মধ্যেই চলে গিয়েছিলে। আমি একদৃষ্টিতে শুধু তোমাকেই দেখছিলাম। আমার ঘোর কাটে যখন তুমি গাড়িতে উঠে চলে যাও। আমি যেন আসল দুনিয়াতে ফিরেছিলাম ততক্ষনে।

স্পর্শিয়া ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
– কিন্তু আপনি সেখানে কেন গিয়েছিলেন?
আরাধ্য হেসে বললো,
– সন্দেহ করছ?
– না, না। তা বলছি নাকি। জাস্ট জানতে চাচ্ছি।
– আমি গিয়েছিলাম আমার কাজিন কুহুর সাথে দেখা করতে। তুমি হয়তো ভুলে গেছ যে কুহু আর তুমি একই ক্লাসে পড়। ওর কাছ থেকে ডিটেইলস জানার চেষ্টা করেছিলাম তোমার ব্যাপারে। কিন্তু ও কোন কিছুই বলতে পারলো না কারন তোমরা দুজনেই আলাদা আলাদা স্কুলে পড়তে। কুহুকে বললাম অন্য কারও কাছ থেকে তোমার ইনফরমেশন ম্যানেজ করে দিতে, কিন্তু গাধীটায় তাও পারলো না।

সেদিন থেকেই খুব ছটফট লাগছিলো। চোখ বন্ধ করলেই যেন তোমার চোখ দুটো দেখতে পেতাম। মরিয়া হয়ে গেলাম তোমাকে আবারো দেখার জন্য। বারবার চিন্তা করতাম তুমিই কি সেই মেয়ে যাকে পেয়ারা বাগানে দেখেছিলাম, নাকি অন্য কেও। কারণ তোমার ড্রেসাপ, গাছে উঠে বসে থাকা দেখে আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম যে তুমি গ্রামে থাক, তাই তোমাকে ঢাকায় দেখে খুব অবাক হই। বুঝতে পারছিলাম না কিছুই। একমন বলছিল পেয়েরা বাগানের মেয়েটাই তুমি, আরেকমন বলছিল তুমি সেই মেয়ে না।

তিন দিন পর কুহুর এক্সাম ছিল। আমি থাকতে না পেরেই সেদিন স্কুলের সামনে গিয়েছিলাম। কুহু আমাকে দেখেই শয়তানি একটা হাসি দিয়ে বলেছিল,
” ভাইয়া আমি জানতাম তুমি আসবে। প্রেমে যে পড়েছ তা ভাল করেই বুঝেছি। ”

কুহুর কথা শুনেই কেমন যেন ফিল হয়েছিল। সত্যিই কি আমি প্রেমে পড়েছি? জানি না প্রেমে পড়েছিলাম কি না , কিন্তু তোমাকে খুব খুজেছিলাম সেদিন, কিন্তু পাই নি। আমি জানতাম না তুমি কোন গ্রুপে পড়, তাই এটাও জানতাম না তোমার এক্সাম ছিল কি না।

কুহু তোমার সম্পর্কে ইনফরমেশন পেয়েছে এটা বলে ও আমার কাছ থেকে সাত হাজার টাকা আদায় করেছিল। আমিও কোন কিছু না ভেবে টাকা দিয়ে দিয়েছিলাম। আমার টাকা পানিতে যায় নি। তোমার নাম, স্কুলের নাম, আর তোমার গ্রুপ টা জানতে পেরেছিলাম। কিন্তু ঠিকানা জানতে পারেনি কুহু কোনভাবেই। এতেই আমি বোকার মতো বেশ খুশি হয়েছিলাম। পরে মনে হলো, এ কি হলো! এস.এস.সি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে আমি স্কুলের নাম আর গ্রুপ দিয়েই বা কি করবো। কাজের কাজ শুধুই নাম টা জানা হয়েছিল। পরেরদিন তোমার শেষ পরীক্ষা ছিল। সেদিনও তুমি ফুচকা খাচ্ছিলে বান্ধবীদের সাথে। কুহুকে আমিই পাঠিয়েছিলাম ফুচকা খেতে, যাতে এই বাহানায় তোমার সম্পর্কে কিছু জানতে পারে। তোমার সাথে ওর কথা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু তুমি ওকে বাড়ির ঠিকানা দিতে রাজি হওনি, আর তখন তোমার পার্সোনাল ফোনও ছিল না যে ওকে নাম্বার দিবে।

.
.
.
.
.
.

স্পর্শিয়ার এতক্ষনে মনে পড়ে যে সেদিন ওর বাড়ির ঠিকানা চাওয়া, ফোন নাম্বার চাওয়া মেয়েটা কুহু ছিল!
.
.
.
.
– জানো স্পর্শ, তোমাকে আমার সবসময় মনে পড়ত। শুধুই তোমার নিকনেমটা জানতাম। তবুও এই নামটা দিয়ে ফেসবুক আইডি খুজেছি । কিন্তু পাইনি। মনে হয় বাংলাদেশে এমন কোন স্পর্শিয়া নেই যার আইডিতে আমি ঢুকিনি ।
– আমার তো তখন কোন ফেসবুক আইডি ছিল না।
– হ্যা, কুহু বলেছিল যে তোমার কোন পার্সোনাল ফোন নেই। কিন্তু ভেবেছিলাম হয়তো লেপটপ দিয়ে ফেসবুক চালালেও চালাতে পার। সেই আশাতেই আইডি খুজতাম। সবসময় তোমার কথাই মনে পড়তো শুধু। তুমি যেন আমার নেশা হয়ে গিয়েছিলে। খুব খারাপ লাগতো যে তোমাকে এত কাছ থেকে পেয়েও সব হারিয়ে ফেললাম। ভাবতাম কোথায় পাব তোমাকে। কিন্তু দেখ কি ভাগ্য আমার, আমি তোমাকে সত্যিই পেয়েছিলাম। ফারহানের বিয়েতে তোমাকে আমি আবারো খুজে পাই।
.
.
.
.
.
– ফারহান ভাইয়ার কথা বলছেন?
– হ্যা। ও তো আমার ফ্রেন্ড। পরে জানতে পারলাম তোমার দূর সম্পর্কের কাজিন প্রিয়ার সাথেই ওর বিয়ে। বিশ্বাস করবে না কি যে খুশি হয়েছিলাম তোমাকে বিয়েতে দেখে। বিয়ে আমি নাম মাত্র এ্যাটেন্ড করেছিলাম। পুরোটা সময় জুড়ে তো শুধু তোমাকেই দেখেছি। যেহেতু প্রিয়া ফারহানের ওয়াইফ তাই আমার টেনশন কমে গিয়েছিল। কারণ, আজ না হয় কাল ফারহানের কাছ থেকেই তোমার ডিটেইলসটা পাব আমি। তোমার এত কাছে থেকেও আমার সাহস হয়নি তোমার সাথে কথা বলার। ভয় লাগছিল খুব। যদি আবার আমাকে ভুল বুঝো, খারাপ ছেলে ভাবো তাই। বিয়ের পুরোটা সময় আমি তোমার হাসাহাসি আর লাফালাফিই দেখেছিলাম। অবশ্য খুব অবাকও লাগছিল যে একটা বাচ্চা মেয়ের প্রতি কিভাবে উইক হয়ে গেলাম আমি। তাকে না দেখলে কেমন ছটফট লাগে। তারপরের দিনই ফারহানের কাছ থেকে খবর নিয়েছিলাম তোমার সম্পর্কে। আর ফারহানের কাছেই জানতে পেরেছিলাম যে তুমি আবিদুর দাদুর নাতনী। এটা শুনার পর আমার খুশি আর কে দেখে! তোমাকে অনেক আগে দেখেছিলাম। খুব ছোট ছিলে তখন তুমি। হয়তো সাত/আট বছর বয়স ছিল। সেই বাচ্চার জন্য পাগল হয়েছি আমি, বিশ্বাস ই হচ্ছিল না।আমি তোমার সাথে কোন ধরনের রিলেশনে যেতে চাই নি, সরাসরি বিয়ে করতে চেয়েছিলাম, বৈধ একটা সম্পর্কে থাকতে চেয়েছিলাম। তাই তোমাকে কখনো প্রপোজও করিনি, তোমাকে যদি হারিয়ে ফেলি তাই কথা বলতে ভয় পেতাম। তাই কথা বলারও চেস্টা করিনি। আমি সরাসরি আমার দাদাকে গিয়ে তোমার কথা বলি। দাদা খুবই খুশি হয় শুনে। তখনি দাদা আমার বাড়ির সবাইকে ব্যাপারটা বলে। সবাই কোন কথা ছাড়াই খুশি মনেই রাজি হয়ে যায়। কারন দেশে আসার পর থেকেই বাসা থেকে বিয়ে করার কথা বলছিল, আমিই শুধু টাইম চাচ্ছিলাম বারবার। কিন্তু তোমার সম্পর্কে সব জানার পর থেকে বিয়ের ইচ্ছাটা চলে আসলো মনে। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো তখনি যখন আবিদুর দাদুর কাছে প্রস্তাব পাঠানোর পরে তিনি বললেন এত জলদি তোমাকে বিয়ে দেবেন না তারা। দাদা অনেক বুঝিয়েছিল কিন্তু আবিদুর দাদু বলেছিলেন আরও ২/৩ বছর ওয়েট করতে, যা আমার জন্য অসম্ভব ছিল। আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমার বারবার মনে হত তোমাকে ছাড়া পাগল হয়ে যাবো। প্রায়ই ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তো । তখন প্রথম আমি রিয়েলাইজ করি তুমি আমার ভালো লাগা নও, তুমি আমার ভালোবাসা।
.
.
স্পর্শিয়া খেয়াল করলো আরাধ্যর চোখ ভিজে আছে। আচ্ছা, ও কি এখনো কাদছে? ছেলেরাও কাদে তাহলে? হয়তো আগের কস্টের কথা মনে করে কান্না পাচ্ছে ওর। স্পর্শিয়ার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। ছেলেটা ওকে এত ভালোবাসে, আর ও! নিজে নিজেই ভাবতে লাগলো, এ জীবনে মানুষ যাকে ভালোবাসে তাকে পায় না।
.
.
আরাধ্যর গলা ভারী হয়ে এসেছে। আরাধ্য চোখের কোণায় জমে থাকা পানিটুকু মুছে স্পর্শিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
– দেখ! কত লাকি আমি! সত্যিই তোমাকে পেয়েছি। তখন আমি যে মন মরা হয়ে গিয়েছিলাম সেটা পরিবারের সবাই খেয়াল করে। সবাই খুব বুঝাতো আমাকে। সবাই বলতো দুই এক বছর ওয়েট করতে। বিয়েটা তোমার সাথেই দিবে তারা। কিন্তু আমি মানতে পারতাম না। কোন এক অজানা ভয় আমাকে সবসময় গ্রাস করে রাখতো। মনে হত যদি আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলি এই সময়টাতে। দাদা কিন্তু হাল ছাড়েনি। সবসময় চেষ্টা করেই গেছে আবিদুর দাদুকে মানানোর। এক সময় আবিদুর দাদু আমার সাথে দেখা করতে চায়। খুব ভয় পাচ্ছিলাম সেদিন দেখা করতে গিয়ে। মনে হচ্ছিল যে আজ হয়তো বাচব না হয় মরবো। বুকের মধ্যে দুরুদুরু ভয় নিয়ে আবিদুর দাদুর সামনে গিয়েছিলাম সেদিন।

একটা সময় ছিল যখন দাদু রাস্তায় আমাকে দেখলে খুব মজা করতো, সেই দাদুর সামনেই এত বছর পরে এত ভয় নিয়ে সামনে দাড়িয়েছিলাম। বলতে গেলে এক প্রকার ইন্টার্ভিউ ই দিতে হয়েছিল দাদুর কাছে আমার।
.
.
.
তারপর বেশ অনেকদিন হয়ে গিয়েছিল কিন্তু আবিদুর দাদু কিছুই জানাচ্ছিল না। আমার রাত দিন কাটছিল চিন্তায়। মনে হচ্ছিল হারিয়ে ফেলবো তোমাকে। দাদু হয়তো আমাকে পছন্দ করেন নি। তুমি জানো, আমি এতটাই পাগল আর সেলফিস হয়ে গিয়েছিলাম যে দোয়া করতাম তুমি যাতে এস.এস.সি তে ফেইল কর।

স্পর্শিয়া চোখ উলটে বলল,
– কিহ! ফেইল? আপনি এত খারাপ!!
– আরে না। খারাপ না। আমি মন থেকে চাইতাম না, কিন্তু চলে আসতো এ ভাবনাটা। আমি ভাবতাম তুমি ফেইল করলে তোমার ফ্যামিলি তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে, আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমি তোমাকে বিয়ে করব। চিন্তা কর, কতটা ভালবাসি তোমাকে আমি, যেখানে রেজাল্ট খারাপ করা ছেলে মেয়ে আমি দেখতেই পারতাম না সেখানে তোমাকে পাওয়ার জন্য কত আজব আজব দোয়া করতাম আমি ।

আবিদুর দাদু এরকম ইন্টার্ভিউ আরও বেশ কয়েকবার নিয়েছিলেন আমার। এত ইন্টার্ভিউ কেন নিচ্ছিলেন বুঝতে পারছিলাম না। আমার মনের মধ্যে ভয় সবসময় লেগেই থাকতো । তোমার এস.এস.সি রেজাল্টের মিস্টি যখন আবিদুর দাদু আমার বাসায় পাঠালেন , খুশি হওয়ার জায়গায় খুব খারাপ লাগছিল এটা ভেবে যে আমার দোয়া কবুল হলো না।

কিছুদিন পর আবিদুর দাদুর ক্যান্সার ধরা পড়ায় দাদু হঠাৎ যখন খুব অসুস্থ হয়ে গেল, আমি চারিদিকে যেন অন্ধকার দেখতে লাগলাম। দাদুর জন্যও কষ্ট লাগছিল, আবার তোমাকে হারিয়ে ফেলি নাকি সে ভয়ও পাচ্ছিলাম। তারপর ফারহানের কাছ থেকেই খবর পেলাম তুমি কোন কলেজে ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন তোমার কলেজ ছুটির সময় সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তুমি প্রতিদিনই খুব হৈ চৈ করতে করতে বের হতে। কখনো লেকসাইডে বসে আড্ডা দিতে, কখনো ফুচকার দোকানে যেতে। আমিও তোমাদের পিছুপিছু যেতাম। কিন্তু কখনো কথা বলার সাহস করিনি । যেদিন কলেজে না যেতে আমার যেন দম বন্ধ হয়ে আসতো। লুকিয়ে তোমার বেশ কিছু ছবি তুলেছিলাম সেগুলো দেখেই রাত পার করতাম। আর সবসময় ভাবতাম কবে আমার এই দুখের অবসান হবে। নাকি, তুমি আমার জন্য শুধুই ধরা ছোয়ার বাইরের একটা স্বপ্ন। শুধুই স্বপ্ন!

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here