প্রেম পর্ব -১৩

প্রেম 💙 (Love has no limits)

#পর্বঃ ১৩

অনেকক্ষণ যাবত ফোন বেজেই চলেছে। স্পর্শিয়া ঘুমাচ্ছে। ঘুমালে আর কিছুই খেয়াল থাকে না ওর। কানের সামনে মাইক দিয়ে গান বাজালেও সহজে ঘুম ভাঙে না। আরাধ্য কল দিয়েই চলেছে। টানা ৭ বার কল দেওয়ার পর স্পর্শিয়া বেশ বিরক্তি নিয়ে চোখ বন্ধ করে কল রিসিভ করলো। কে কল দিয়েছে দেখলোও না। ঘুমুঘুমু কন্ঠে “হ্যালো” বলল।

আরাধ্য স্পর্শিয়ার ভয়েস শুনে জমে গেল। “হ্যালো” শুনে আরাধ্যর যেন নেশা ধরে গেল। ভাবতে লাগলো এমন শুনাচ্ছে কেন? যেন অন্য রকম এক অনুভূতি হচ্ছে। ওর ঘুম জড়ানো কন্ঠের জন্যই কি এমন মনে হচ্ছে তবে?

– হ্যালো স্পর্শ
স্পর্শিয়া ঘুমের ঘোরে আরাধ্যর ভয়েস চিনতেই পারলো না। ওকে যে কেও স্পর্শ বলে ডেকেছে তাও খেয়াল করলো না। উল্টো আরও বলতে লাগলো,
– আপনি এই মুহূর্তে যাকে কল করেছেন সে আশেপাশে নেই৷ পরে কল করুন। এটা বলে কল না কেটেই ফোন পাশে রেখে দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো।

এদিকে আরাধ্য হ্যালো হ্যালো করেই চলেছে। কয়েকবার বলার পরেও যখন কোন সাড়াশব্দ পেল না, ও বুঝে ফেললো যে স্পর্শিয়া কল না কেটেই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে।

আরাধ্য আবারও কল দিল। পিক করলো না। আবার কল দিল। এবার স্পর্শিয়া ফোন সুইচড অফ করে মাথার উপর বালিশ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

আরাধ্য বারবার ফোন দিয়ে সুইচড অফ পাচ্ছে। এখন কি করবে? কথা বলা তো ওর খুব জরুরি। অনেকক্ষণ চিন্তা ভাবনা করার পরে একটু ভয়ে ভয়েই কল দিল স্পর্শিয়ার আম্মুকে। শ্বাশুড়িকে কল দিয়ে বউ এর সাথে কথা বলতে চাচ্ছে, এতে উনি কি না কি ভাবে। সেজন্যই ভয় পাচ্ছিল আরাধ্য। কিন্তু ওর ধারণা ভুল প্রমান করে আরাধ্যর শ্বাশুড়ি ওর সাথে বেশ সুন্দরভাবেই কথা বলল। উল্টো আরও বলল,
– বাবা তুমি কিছু মনে করো না। আমার মেয়েটা একটু এমনই। ঘুমানোর সময় কিচ্ছু খেয়াল থাকে না। বুঝতেই পারে না কে কল করেছে না করেছে। তুমি লাইনে থাকো, আমি ওর কাছে ফোন নিয়ে দিচ্ছি।

বেশ অনেকক্ষণ যাবত স্পর্শিয়াকে ওর আম্মু ডেকেই চলেছে। আরাধ্য সব শুনছে ফোনে। স্পর্শিয়া ওর আম্মুকে তাড়ানোর জন্য ঘুমের মধ্যেই বলল,
– আম্মু আমার পেট ব্যথা। না ঘুমালে মারা যাব। ঘুমাতে দাও।
– তোকে শুধুমাত্র ঘুম থেকে ডেকে তুললেই পেট ব্যথা করে আমি জানি। ওঠ। আরাধ্য কতক্ষন যাবত লাইনে আছে।

আরাধ্য কথা শুনছে আর হাসছে। তারপরেও বেশ অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর স্পর্শিয়া ঘুম থেকে উঠলো। ফোন ওর কাছে দিয়েই ওর আম্মু চলে গেল। ফোন কানে নিয়ে হাই দিতে দিতে আরাধ্যকে বললো,
– কলেজে তো যাব না। আজ শুক্রবার।
– আজ শুক্রবার না, শনিবার। গতকাল শুক্রবার ছিল।
– ও হ্যা, মনে পড়েছে।
– আজকে এমনিতেও কলেজে যাবে না । কারণ আম্মু আর ভাবির সাথে তোমার আজ শপিং এ যাওয়ার কথা।
– তাই তো! আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।
বলেই আবার হাই দিল স্পর্শিয়া। আরাধ্যর কাছে বেশ লাগছে ওর এই ঘুম জড়ানো কন্ঠ শুনতে।
– স্পর্শ, আম্মু তোমাকে সকালে তিন বার কল করেছিল। তুমি ঘুমিয়েছিলে, তাই হয়তো ফোন ধরনি।
স্পর্শিয়ার চোখ থেকে ঘুম চলে গেল মুহূর্তেই।
– আন্টি কল করেছিল!! আমার তো মনেই পড়ছে না। সরি! আসলে আমার মনেই নেই। ঘুমিয়ে থাকলে কেও কল দিলে সহজে ঘুম ভাঙে না।
– আরে, সরি বলার কিছু নেই৷ আম্মু বুঝতে পেরেছে যে তুমি হয়তো ঘুমিয়ে ছিলে। সেজন্যই আমি তোমাকে কল দিলাম। অথচ তুমি উল্টো আমাকেই থ্রেট দিয়ে দিলে।
– থ্রেড দিয়েছি মানে?
– তুমি আমাকে বলেছ, তোমাকে যদি কল দেই তবে তুমি আমার কল্লা কেটে কালাচানের সেতুতে দিয়ে দিবে।
– কিহ? এই কথা বলেছি!! বাই দা ওয়ে, পদ্মা সেতুতে কল্লা দেয় শুনেছি, কিন্তু কালাচানের সেতু আবার কোনটা?
– আমি কি করে জানবো? হয়তো তোমার স্বপ্নে বানানো কোন সেতু এটা।
– আমি কাওকে কল্লা কাটার থ্রেট দেই, তাও ঘুমের মধ্যে! ওহ মাই গড!!!
– শুধু এইটুকুই না। কি যে জোড়ে জোড়ে নাক ডাক তুমি! আরেকটু হলে আমার কানের পর্দাই ছিড়ে যেত।
– কিহ! এটা ইম্পসিবল! আমি নাক ডাকি না।
– ডাক তো।
– না, না, না!! কখনো কেও বলেনি।
– কিন্তু আমি তো শুনলাম।
– তুমি খুব খারাপ মানুষ তো। মিথ্যে বলছো। যাও কথা বলবা না আমার সাথে।
– ওরে ওরে! আমার বিবিজান রাগও করে দেখি! আচ্ছা বাবা, মজা করেছিলাম৷ তুমি নাকও ডাক নি, আর কল্লা কাটার কথাও বল নি।
– আমি জানি। হুহ।
– আচ্ছা যাও, ফ্রেশ হয়ে এসো। তারপর আম্মুকে কল দিও কখন বের হবে তারা সেটা জানার জন্য।

.
.
.
.
.
.
অনেকক্ষণ শপিং মলে ঘুরে ঘুরে অনেক কিছুই কিনলো সবাই। হঠাৎ পায়েলকে কে যেন কল দিল। কথা শেষে পায়েল স্পর্শিয়াকে বললো,
– দেবরাণী, তোমার উনি আসছে। দেখ কি ভালবাসা। তোমাকে দেখার এতটুকু সুযোগ মিস করতে চায় না। আমাকে ঢং করে বলছে ওর নাকি পাঞ্জাবি, টি-শার্ট আর শার্ট লাগবে, আমি যাতে নিয়ে আসি। তারপর আবার সাথে সাথেই বলছে, ভাবি তোমার কস্ট করতে হবে না আমিই আসছি। দেখ কি পাজি ছেলেটা।
বলেই হাসছে পায়েল৷ শাশুড়ীর দিকে স্পর্শিয়া তাকিয়ে দেখে সেও মুচকি মুচকি হাসছে।

কিছুক্ষনের মধ্যেই আরাধ্য চলে আসলো। স্পর্শিয়াকে দেখে তাকিয়েই আছে ও। বেশ সুন্দর লাগছে ওকে। ডার্ক ব্লু আর মেজেন্ডা কালারের ড্রেস। বেশ মানিয়েছে ওকে ড্রেসটাতে। আরাধ্যকে দেখেও স্পর্শিয়ার চোখ সরছে না। ফরমাল লুকে এসেছে ও। বুঝাই যাচ্ছে অফিস থেকে এখানে এসেছে। ফরমাল লুকে এত সুন্দর লাগে আরাধ্যকে স্পর্শিয়ার ধারণা ছিল না। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়েই আছে। পায়েল দুজনকেই উদ্দেশ্য করে বললো,
– তোমরা কি দুজন দুজনকেই দেখবে, নাকি শপিংও করবে?
দুজনেই লজ্জা পেয়ে দুদিকে ফিরে তাকাল।

মিসেস চৌধুরী আর পায়েল ওদের টাইম দেওয়ার জন্য কাজের বাহানা করে চলে গেল। স্পর্শিয়া অবাক হয়ে গেল, আর আরাধ্য মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।

– তারাতো চলে গেল। এবার তোমাকে কে বাচাবে বেবি?
– কে বাচাবে মানে? তুমি কি রাক্ষস নাকি ভ্যাম্পায়ার?
– ভ্যাম্পায়ার।
– ভালই হয়েছে। আমার আবার খুব শখ ছিল ভ্যাম্পায়ারের সাথে প্রেম করার।
– তো তুমি বলতে চাচ্ছ আমরা প্রেম করি?
– না, মোটেও না। কিন্তু তুমি ভ্যাম্পায়ার হলে সত্যি প্রেম করতাম।
– এত সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলে সামনে রেখে ভ্যাম্পায়ারের শখ জাগলো? ঘাড় মটকে দেবে যখন তখন বুঝবে।
– দেখা যাবে। আর ভ্যাম্পায়ার কখনো ঘাড় মটকায় না। রক্ত খায়।
– ওহ। ওদের সবার রক্তশূণ্যতা আছে বুঝি?
– কিহ! কি বললে আমার ভ্যাম্পায়ারদের নিয়ে!
– না, মানে। চলো এখন। কিছু কেনাকাটা করি। আচ্ছা স্পর্শ, তুমি কি আমাকে আজ একটু টাইম বেশি দিতে পারবে?
– কেন?
– তোমাকে নিয়ে এক জায়গায় যেতাম। কিন্তু টাইম একটু বেশি লাগবে৷ দুদিন যাবত ভাবছি, কিন্তু টাইমে মিলছে না। তুমি কনফার্ম করলে আমি কল দিব।
– কাকে কল দিবে? কোথায় যাব?
– আমার উপর কি বিশ্বাস নেই তোমার? ভয় করছে নাকি?
– না। ভয় করবে কেন?
– তবে বলো যাবে নাকি?
– হ্যা, যাব। কিন্তু টাইম কি অনেক বেশি লাগবে?
– না৷ জাস্ট দুই ঘন্টা টাইম দাও।
– আচ্ছা।

আরাধ্য স্পর্শিয়ার থেকে একটু দূরে গিয়ে কারও সাথে ফোনে কথা বলতে লাগলো। স্পর্শিয়া ভাবতে লাগলো কি এমন করবে ও যে ওকে জানাচ্ছে না।
আরাধ্য ফিরে এসে বলল,
– ডান। দেড় ঘন্টার মতো টাইম লাগবে। চলো ততক্ষনে আমার শপিং টা শেষ করি।

আরাধ্য যা কিছু কিনলো সবই স্পর্শিয়ার পছন্দে কিনলো। ওর খুব ইচ্ছে হচ্ছিল স্পর্শিয়াকে একটা লাল টকটকে শাড়ি কিনে দিবে। কিন্তু না, এখন না। কোন এক বিশেষ দিনের অপেক্ষায় আছে আরাধ্য। আপাতত স্পর্শিয়াকে একটা ড্রেস কিনে দিয়েই মনকে ঠান্ডা করলো।

আরাধ্যর সাথে হাটছিল এমন সময় একটা শপে বিশাল বড় এক টেডি বিয়ার দেখেই স্পর্শিয়ার মাথা ঘুরে গেল। কয়েক সেকেন্ড সেদিকেই তাকিয়ে রইলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো আম্মুর সাথে আসলে কিনতে পারতো। এখন তো সম্ভব না। আরাধ্য পাশে তাকিয়ে দেখলো স্পর্শিয়া নেই। আরাধ্যকে পেছনে ঘুরতে দেখেই স্পর্শিয়া এগিয়ে গেল।

.
.
.
.
.
.
গাড়িতে উঠে আরাধ্য আবার বের হয়ে গেল। স্পর্শিয়ার জন্য আইস্ক্রিম কিনে আনলো।

– স্পর্শ, তুমি আইস্ক্রিম খেতে থাক , আমি এখনি আসছি। একটু কাজ আছে।

স্পর্শিয়া আইস্ক্রিম খেতে লাগলো। আইস্ক্রিম শেষ তবুও আরাধ্য ফিরছে না। কোথায় গেল ও হঠাৎ করে!

স্পর্শিয়ার খারাপ লাগছে গাড়িতে বসে থাকতে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। গাড়ি থেকে বের হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো স্পর্শিয়া।

কিছুক্ষনের মধ্যেই আরাধ্য ফিরে এল। আরাধ্য দু হাত পিছনে নিয়ে রেখেছে। সামনে আনতেই স্পর্শিয়া অবাক হয়ে গেল। ওর পছন্দ করা টেডি বিয়ার টা আরাধ্যর হাতে। আরাধ্য টেডি বিয়ার টা স্পর্শিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
– দিস ইজ ফর ইউ সুন্দরী।

স্পর্শিয়া কোন কিছু না ভেবে সাথে সাথেই টেডি বিয়ারটা হাতে নিয়ে খুশিতে বাচ্চাদের মতো লাফাতে লাগলো। খুশিতে হাগ করলো টেডিটাকে, বেশ কয়েকটা কিসও করলো। আরাধ্য এক মনে স্পর্শিয়ার লাফানো দেখে হাসতে লাগলো। এমন কোন রুপ নেই যে রুপে ওকে দেখতে ভালো লাগে না, আরাধ্য ওকে যত দেখে ততই ওর প্রেমে পড়ে। ইস! কবে যে এই মেয়েটা একেবারে ওর হবে। অনেকক্ষন লাফালাফির পর স্পর্শিয়ার যেন হুশ এল। আড়চোখে আরাধ্যর দিকে তাকালো। আরাধ্য ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। স্পর্শিয়া লজ্জা পেয়ে গেল।

আরাধ্য বললো,
– ইস! এমন কিস আর হাগ যদি আমি পেতাম!
– করেছি না।
স্পর্শিয়া জিবে কামড় দিল সাথে সাথে।
– কবে করেছ?
স্পর্শিয়া চুপ করে আছে। আরাধ্য আবার বলল,
– ওই যে তোমাদের বাসায় ভয় পেয়ে হাগ করেছিলে সেটার কথা বলছ? ওইটা কোন হাগ হলো নাকি! পারলে কিস করে দেখাও তখন বুঝবো।
– বেহায়া বেটা।
– তোমার প্রেমে বেহায়া আমি,
ও সুন্দরী কেন বুঝ না?
– হয়েছে! ঢং!
– আচ্ছা স্পর্শ, তোমার খুব পছন্দ হয়েছে টেডি টা, তাই না?
– হুম.. খুউউউউউব!
– তাহলে তখন বলনি কেন?
– কখন?
– যখন তাকিয়ে তাকিয়ে টেডিটা দেখছিলে তখন।
– তারমানে তুমি দেখেছ তখন?
– হুম। শোন পাগলি মেয়ে, আমি না তোমার উড বি? তোমার কিছু পছন্দ হলে আমাকে না বললে আর কাকে বলবে? এখন থেকে যাই পছন্দ হয় আমাকে সাথে সাথে বলবে। নয়তো কিন্তু..
– নয়তো কি করবে? মারবে?
– না। আদর দেওয়া শুরু করবো, আর ছাড়বো না৷ তখন বুঝবে।
– তুমি তো খুব খারাপ মানুষ।
– ইস! কিভাবে লজ্জায় লাল হয়ে গেল আমার বিবিজান।
স্পর্শিয়ার দুইগাল ধরে টেনে দিল আরাধ্য।
.
.
.
.
.
স্পর্শিয়ার খুব ক্ষুদা পেয়েছে। ক্ষুদা পেলে ওর মাথা ভনভন করে। অনেকক্ষন যাবত গাড়ি চালাচ্ছে আরাধ্য। আর কতক্ষন লাগবে কে জানে। আরাধ্যই বা কেমন, সারাদিন শপিং করলো, অথচ ওকে লাঞ্চ করালো না৷ এগুলো ভাবতে ভাবতেই গাড়ি থেমে গেল। আশেপাশে তাকিয়ে একটু ভয় ই পেয়ে গেল স্পর্শিয়া। জায়গাটা বেশ নিরিবিলি। একটা মানুষও তো নেই এখানে৷ কোথায় নিয়ে এসেছে আরাধ্য ওকে? ভয় ভয় চোখে তাকালো আরাধ্যর দিকে।

আরাধ্য মুচকি হাসছে স্পর্শিয়াকে দেখে।
– ভয় পাচ্ছ স্পর্শ?
যদিও স্পর্শিয়া ভয় পাচ্ছে তবুও বলল,
– নাহ ভয় পাব কেন? তুমি ভুত নাকি পেত্নী?
– ভুত পেত্নী না বলেই তো তোমার বেশি ভয় হওয়ার কথা।
– না আসলে, জায়গাটা কেমন যেন।
– এই জায়গাটাই একটু পরে তোমার বেশ পছন্দ হবে।
স্পর্শিয়া আরাধ্যর কথার মানে বুঝলই না। উল্টো আরও ভাবতে লাগলো এ জায়গায় এমন কি আছে যে পছন্দ হবে।

গাড়ি থেকে নামলো ওরা। আশেপাশে কোন মানুষ নেই। দুইপাশে গাছের সাড়ি, বাম পাশে অনেক গাছ। মনে হচ্ছে জঙ্গল। আর মাঝে পিচঢালা রাস্তা, যেই রাস্তা দিয়ে ওরা এইমাত্র এসেছে।

আরাধ্য স্পর্শিয়ার হাত ধরে জঙ্গলের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে। স্পর্শিয়া এবার সত্যিই ভয় পেয়ে গেল। আরাধ্য ওকে জঙ্গলে নিচ্ছে কেন? ওর কোন কু মতলব নেই তো? যতই হোক না কেন হবু হাজবেন্ড, ছেলেদের এভাবে বিশ্বাস করতে নেই। কি করবে ও? আরাধ্যর হাত থেকে হাত ছুটিয়ে কি একটা দৌড় দিবে? এসব ভাবতে ভাবতে সামনে তাকাতেই একটা বাড়ি নজড়ে পড়লো যেটার চারপাশ দেয়াল দিয়ে ঘেরা। এ দিকটায় গাছ কম। রাস্তা থেকে এই জায়গাটা জঙ্গল মনে হয়েছিল, কিন্তু এটা জঙ্গল না। আরাধ্য তো এই বাড়ির দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু ওইখানে নিচ্ছে কেন?

বাড়ির সামনে যেতেই গেটের দাড়োয়ান আরাধ্যকে বেশ কিছু প্রশ্ন করলো। ওর নাম কি? কি করে? কোথা থেকে এসেছে এই টাইপ প্রশ্ন। কথা শুনে স্পর্শিয়া বুঝতে পারলো আরাধ্য নিজেও আগে কখনো এখানে আসেনি।

বাড়ির ভেতরে ঢুকে স্পর্শিয়ার ভয় কেটে গেল। মিডিয়াম সাইজের একটা চৌচালা টিনশেড বাড়ি, কিন্তু আশেপাশে বিশাল বড় খোলা জায়গা, আর একপাশে অনেকগুলো বাচ্চারা হৈ চৈ করছে আর খেলছে।

– স্পর্শ, দেখেছ। তোমার মতো কতগুলো বাচ্চা এখানে খেলছে?
– কি! আমি বাচ্চা!
– ওহ নো। তুমি তো বুড়ি। ভুলে গিয়েছিলাম।
– আমি বুড়ি!!
– বাচ্চা বললে দোষ, বুড়ি বললে দোষ, তবে বলব কি?
– যা ইচ্ছা বলো, জাস্ট আমার সাথেই কথা বলো না। রাগ করেছি আমি।
– তুমি যে বাচ্চা এটাই তো তার নমুনা। এই যে দেখ, রাগ করেছ আবার আমাকে বলেও দিচ্ছ। রাগ করলে কেও আবার নিজ থেকে বলে নাকি?
– এই জন্যই তো বললাম কথা বলতে হবে না আমার সাথে। হুহ।
এটা বলে স্পর্শিয়া অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে রইলো।

– এটা দেখার পরেও কি রাগ করেই থাকবে?
আরাধ্যর কথা শুনে ওর দিকে ফিরে তাকাতেই দেখল ও দুটো চকলেট এগিয়ে দিয়েছে। আর যাই হোক, এ জিনিস দেখার পর স্পর্শিয়া মুখ ফুলিয়ে থাকতে পারে না। হাসিমুখে চকলেট নিয়ে বলল,
-আচ্ছা আমরা এখানে কেন এসেছি?
– এটা একটা অরফানেজ। যখন তুমি আমার কাছে ছিলে না, খুব ভয় ঢুকে গিয়েছিল মনে তোমাকে পাব নাকি পাব না। খুব খারাপ লাগতো। তারপর যখন তোমার বাসা থেকে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেল, তখন ডিসিশন নিয়েছিলাম এ্যাঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেলে তোমাকে সাথে নিয়ে কোন এক অরফানেজের বাচ্চাদের খাওয়াব। আল্লাহ আমার লাইফের সবচেয়ে বড় গিফট দিয়েছে, তার শুকরিয়া তো করতেই হবে। অনাথ বাচ্চারা আল্লাহর সবচেয়ে পছন্দের জিনিস, তাই ভাবলাম ওদের মাধ্যমেই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। সময় মিলছিল না এই কয়েকদিন, তাই আসতে পারিনি। আজ তুমি বললে সময় দিতে পারবে, তাই এক ফ্রেন্ডকে কল দিয়ে বাচ্চাদের জন্য খাবারের এরেঞ্জ করলাম। ও কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে খাবার নিয়ে। আচ্ছা তোমার কোন সমস্যা নেই তো ওদের সাথে লাঞ্চ করতে?
– না, আমার কোন সমস্যা নেই। আমার তো আরও ভালো লাগে বাচ্চাদের সাথে থাকতে।
– হ্যা, আমি জানতাম এটা। তোমার সাথে থেকেই বুঝেছি যে তুমি বাচ্চাদের খুব ভালোবাস, আর কেও গরীব বলে তার সাথে মিশবে না, এমন তুমি নও।

আরাধ্য আর স্পর্শিয়া বাচ্চাদের সাথে গিয়ে কথা বললো, অনেক গল্প করলো। বাচ্চাগুলো ওদের সাথে খুব সহজেই মিশে গেল। স্পর্শিয়া বাচ্চাদেরগুলোর সাথে ঠিক বাচ্চাদের মতোই খেলছে, দৌড়াচ্ছে, আর বাচ্চাগুলোও এমন ব্যবহার করছে যেন স্পর্শিয়া ওদের সমবয়সী কেও ই। আরাধ্য তাকিয়ে তাকিয়ে স্পর্শিয়ার কীর্তি দেখছে। যেই বউ পেয়েছে ও, অন্য মানুষ দেখলে বউ না বরং মেয়ে ভাববে। এত পিচ্চি বউ থাকলে আবার বাচ্চার দরকার হয় নাকি! এই বউ বড় করতে করতেই কয়েক বছর পার হয়ে যাবে।

একটু পরেই সিয়াম এসে খাবার, চকলেট, আর খেলনা দিয়ে গেল। বাচ্চারা তো এসব দেখে বেজায় খুশি। খাওয়ার জন্য বাচ্চারা সবাই একসাথে গোল হয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো। স্পর্শিয়াও ওদের সাথে বসলো খেতে। স্পর্শিয়াকে দেখে আরাধ্যও ওর পাশে এসে বসলো। স্পর্শিয়া প্রতিটা বাচ্চার মুখে ফার্স্ট লোকমাটা তুলে দিল। আরাধ্য বলল,
– আমাকে তো কারও নজড়েই পড়ে না।
স্পর্শিয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো।
আরাধ্য বাচ্চাদের বলল,
– দেখলে তোমাদের আপু সবাইকে খাইয়ে দিল, অথচ আমাকে দিল না। আমি খুব কস্ট পেয়েছি।
কয়েকটা বাচ্চা বেশ বড় ছিল। ওরা স্পর্শিয়াকে বলতে লাগলো আরাধ্যকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য। ওদের দেখাদেখি সব বাচ্চারাই ওদের সাথে তাল মিলালো। ওদের কথায় বাধ্য হয়েই আরাধ্যর মুখে খাবার তুলে দিল ও। আরাধ্য সুযোগের সৎ ব্যবহার করেই ছাড়লো। সুযোগ পেয়ে স্পর্শিয়ার হাতে আরও বেশ কয়েক লোকমা খেয়ে নিল।
.
.
.
যাওয়ার সময় স্পর্শিয়া কান্নাই করে দিল৷ বাচ্চাগুলোও ওর সাথে এত মিশে গিয়েছে যে যেতেই দিতে চাচ্ছিল না। স্পর্শিয়ার কান্না আরও বেড়ে গেল।
– আরে আমার পিচ্চি বউটা কান্না করে কেন?
– আমার খুব ইচ্ছে করছে ওদের সাথে সবসময় থাকতে।
– আমরা যা চাই সবসময় তো সেটা পাইনা সোনা। কিন্তু হ্যা, তোমার যদি ওদের এতই ভালো লাগে তবে যখনি তুমি ওদের মিস করবে আমাকে বলো, আমি তোমাকে নিয়ে আসবো এখানে।
স্পর্শিয়ার চোখ চকচক করে উঠলো।
– সত্যি নিয়ে আসবে?
– হ্যা। আই প্রমিস।
স্পর্শিয়া খুশিতে আরাধ্যর হাত জড়িয়ে ধরলো নিজের অজান্তেই। আরাধ্য একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। কি মিস্টি মেয়েটা! এরকম অনাথ কিছু শিশুর জন্য ওর কত মায়া!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বাসায় এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে সারাদিনের কথা ভাবতে লাগলো স্পর্শিয়া। সত্যিই অন্যরকম একটা দিন ছিল আজকে। বাচ্চাগুলো কত কিউট ছিল, কিভাবে ওদের আপন করে নিয়েছিল বাচ্চাগুলো, এসব ভাবছে স্পর্শিয়া। মায়াও হচ্ছে বাচ্চাগুলোর জন্য খুব। আরাধ্য এত সুন্দর কিছু মুহূর্ত ওকে উপহার দিবে এটা ওর ধারণা ছিল না। এই মূহুর্তগুলো সত্যিই সারাজীবনের স্মৃতি। ছেলেটা সত্যিই অন্য রকম। কতটা পাগল ও, ওকে পেয়েছে বলে অনাথ শিশুদের খাওয়ালো আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করার জন্য। আরাধ্যর প্রতিটা জিনিস ওর মনে গিয়ে লাগছে৷ এমনও ছেলে হয় তবে! মানুষের নাকি পাঁচ দিক সমান হয় না। কিন্তু স্পর্শিয়ার কাছে মনে হচ্ছে আরাধ্যর পাঁচ দিক না, বরং ছয় দিকই সমান। আবার নিজে নিজেই হাসছে এটা ভেবে যে কালকে সকালে আরাধ্য যখন জানতে পারবে যে স্পর্শিয়াও ওদের সাথে যাচ্ছে, তখন না জানি কি হবে। খুশিতে আরাধ্য মনে হয় নাচই শুরু করে দিবে।

পরদিন…

পায়েল এসে পেটে চিমটি দিতেই আরাধ্যর ঘুম ভেঙে গেল।
– দেবরজি, এভাবে ঘুমালে হবে? সবাই তো রেডি হয়ে যাচ্ছে।
– যাও ভাবি। আমি আসছি ফ্রেশ হয়ে।

পায়েল চলে গেল। আরাধ্য শোয়া থেকে উঠে বিছানায় বসে রইলো। ওর ইচ্ছেই করছে না যেতে। এখানে থাকলে কোন না কোন বাহানায় স্পর্শিয়ার সাথে দেখা হয়েই যায়৷ কিন্তু ময়মনসিংহ চলে গেলে কতদিন স্পর্শিয়ার সাথে দেখা হবে না তাই ভেবেই দম বন্ধ হচ্ছে ওর।

স্পর্শিয়াকে কল দিল আরাধ্য। স্পর্শিয়া বাসা থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, গন্তব্য আরাধ্যর বাসার সামনের বাসস্ট্যান্ড। আরাধ্যর কল দেখেও পিক করলো না ও। একটু মজা করতে ইচ্ছে হচ্ছে ওর সাথে। কল পিক করবে না ও। একেবারে সরাসরি দেখা দিবে।
আরাধ্য তিন/চার বার কল দিল। ভাবলো, স্পর্শিয়া হয়তো ঘুমাচ্ছে তাই কল পিক করছে না। রেডি হয়ে আবারও কল দিল। নাহ, এখনো পিক করছে না। যাওয়ার আগে একবার ওর সাথে কথা বলে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু হচ্ছে না।

ঢাকা থেকে ১৫০ জনের মতো মানুষ যাবে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে। ছোটরা বায়না ধরেছে বাসে একসাথে যাবে সবাই। তাই ৩ টা বাস ভাড়া করা হয়েছে৷ ২ টা বাসে সব বড়রা যাবে, আরেকটায় ওরা সব কাজিনরা যাবে। আরাধ্য বাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কমবেশি সবাই ওর দিকে তাকাচ্ছে, কেও কেও মুচকি মুচকি হাসছে। আরাধ্য কারণ খুজে পেল না ওকে দেখে সবাই হাসছে কেন। এই মূহুর্তে কারণ জানতে ইচ্ছেও করছে না ওর। এমনিতেই স্পর্শিয়ার সাথে কথা বলতে পারছে না বলে মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে৷

বড়রা সবাই সামনের দুটো বাসে উঠে গেল৷ এই বাসেও সবাই উঠছে। আরাধ্য বাসে উঠার আগে আরও একবার কল দিল স্পর্শিয়াকে। নাহ, এখনো কল পিক করছে না। কি ঘুম পাগলি মেয়েরে বাবা! ওর এই ঘুম ই একদিন আরাধ্যকে মেরেই ফেলবে।
পেছন থেকে রোহান ডাকছে।
– কিরে, তোর কি হলো? চল। সবাই বাসে উঠে গেল তো। তোর জন্য বাস ছাড়তে পারছে না৷
আরাধ্য মন খারাপ করে রোহানের পিছু পিছু বাসে উঠলো। রোহান প্রথম রো তে বসে পড়লো। আরাধ্য ওর পাশের সিটে বসতে নিতেই রোহান বলল,
– এই সিট তোমার জন্য নয় বাছা৷
– কি বলছিস যা তা।
পাশ থেকে সিমি বলল,
– তোর জন্য পেছনে স্পেশাল সিট রেখেছি আমরা।
– আমি পেছনে যাব কেন?
– তোর জন্য এখানে যায়গা নেই তাই। নতুন বিবাহিত ছেলেদের সামনে বসতে দেই না আমরা।
– তুই যা পেত্নী।
– তুই পেত্নী। পিছনে যা।

কি জ্বালা! পেছনে পাঠানোর কি আছে! আরাধ্য বিরক্তি নিয়ে কি ভেবে যেন পেছনে তাকালো। তাকিয়েই যেন আকাশ থেকে পড়লো। একটা সাদা রঙের জামা পড়ে স্পর্শিয়া বসে আছে। ওর দিকে তাকিয়েই হাসছে। নিজের চোখকে নিজে বিশ্বাস করতে পারছে না আরাধ্য। এটা কি সত্যি স্পর্শিয়া? নাকি ও ভুল দেখছে। শিওর হওয়ার জন্য একনজর সবার দিকে তাকালো। সবাই বলছে
– যাও, যাও তোমার স্পেশাল সিটে গিয়ে বসো।
– স্পর্শিয়া এখানে এল কি করে?
সবাই একসাথে বললো,
– কোথায় স্পর্শিয়া?
– ওই যে, কয়েক সিট পড়েই তো বসে আছে।
– কই? দেখছি না তো।
– সত্যি আমি দেখছি৷ ও তো বাসেই।
– কি বলিস যা তা।
– সত্যি আমি দেখতে পাচ্ছি।
আরাধ্য এবার নিজেই স্পর্শিয়ার দিকে এগিয়ে গেল।
– স্পর্শ এটা তুমি না?
– হুম, আমি ই তো। কেন তুমি চিনতে পারছো না?
আরাধ্য নিজেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে না পেরে স্পর্শিয়ার গালে হাত ছোয়াল৷
– আরে এটা আমার স্পর্শিয়াই তো। তোরা সবাই মিথ্যা বলিস কেন?
সবাই একসাথে হা হা করে হেসে উঠলো। ওদের হাসিতে পুরো বাস কেপে গেল।
রোহান বললো,
– আরাধ্য, ব্যাটা তুই গাধাও একটা। চোখের সামনে বউ রেখে সবাইকে জিজ্ঞেস করলে মজা তো নিবেই সবাই৷
– তাই বলে তোরা এমন করবি? আমি এমনিতেই শকের মধ্যে আছি।
আবার সবাই সেই হাসি।
আরাধ্য ভাবতে লাগলো, তারমানে এই জন্যই সবাই তখন মুচকি মুচকি হাসছিল! আর ও কত বোকা যে কিছু বুঝলই না।

আরাধ্য আর কথা না বাড়িয়ে সিটে বসে পড়লো। স্পর্শিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে ও। ওর এখনো বিলিভ হচ্ছে না যে স্পর্শিয়া ওর পাশে বসে আছে, আর ও স্পর্শিয়ার সাথে এত দূরে বেড়াতে যাচ্ছে। সবাই একটু পর পর ওদের দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে। আরাধ্য বলল,
– জীবনে আমাদের একসাথে দেখনি তোমরা? এভাবে বারবার আমাদের প্রাইভেট টাইমে ডিস্টার্ব করছো কেন?
– ওওওও!!! প্রাইভেট টাইম!!!
পেছন থেকে পিউ আর জেরিন বলল,
– ভাইয়া, আমরা বাচ্চারা কিন্তু তোমাদের পেছনের সিটেই আছি। বুঝে শুনে প্রাইভেট টাইম স্পেন্ট করো৷
– বেশি কথা বলিস না। বাচ্চারা বাচ্চাদের মতো থাক। বড়দের সিটে নজর দিবি না।
– তুমিই তো আমাদের শিখিয়েছ কিভাবে কাপলদের ডিস্টার্ব করতে হয়। আগে বড় ভাইয়া ভাবি আমাদের সাথে কোথাও গেলে তুমি কি তাদের শান্তিতে থাকতে দিতে? আমরা এখন তাই করবো ।
– ও! তাই করবি? তাই না? দাড়া! তোরা দুইজন যে একই ছেলের উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছিস, আর দুইজন মিলে সেই একটা ছেলেকেই বিয়ে করার প্ল্যান করছিস তা জানাচ্ছি সবাইকে এখনি৷ জাস্ট ওয়েট।
স্পর্শিয়া আরাধ্যর কথা শুনে ফিক করে হেসে দিল।

পিউ আর জেরিন দুজনই ভয় পেয়ে গেল।
– ভাইয়া! ভাইয়া! আমাদের লক্ষী ভাইয়া। এমন করো কেন? আমরা তো শুধু মজা করছিলাম।
– মজা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাক। যদি ডিস্টার্ব করিস তবে খবর আছে তোদের।
পিউ আর জেরিন চুপসে গেল আরাধ্যর কথা শুনে।

বাস এতক্ষনে চলা শুরু করে দিয়েছে।
আরাধ্য এবার স্পর্শিয়ার দিকে ফিরে বলল,
– আচ্ছা, কিভাবে কি বলতো? আমি তো খুব অবাক। এখনো ঘোরের মধ্যে আছি, বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি আমার পাশে বসে আছ, আমার সাথে নানুবাড়ির গ্রামে যাচ্ছ।
স্পর্শিয়া কথা শুনে হেসে দিল।
– আসলে এটা আন্টি আর ভাবির প্ল্যান ছিল। সেদিন যখন তারা আমাদের বাসায় গেল, তখন আমাকে বিয়ের জন্য গ্রামে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেই কথা বলতে এসেছিল। আমি ভেবেছি তুমি খুশি হবে, অথচ তুমি তো আমাকে ভুত ভাবলে।
আরাধ্য মাথার পিছনে হাত দিয়ে মাথা চুলকিয়ে হাসতে লাগলো।
– আসলে ভুত ভাবিনি। অবাক হচ্ছিলাম। বিশ্বাস হচ্ছিল না যে তুমি এখানে বসে আছ। তাই শিওর হওয়ার জন্য সবাইকে জিজ্ঞেস করছিলাম এটা তুমি নাকি। আর তুমি আমার ফোন পিক করছিলে না কেন? জানো কত রাগ হচ্ছিল?
– এখনো?
– নাহ। তোমার ওই মিস্টি মুখটা দেখলে আবার রাগ থাকে কি করে?
– আমি তো মজা নিতে চাচ্ছিলাম তোমার সাথে। তাই পিক করিনি কল।

ওদের এই মিস্টি আলাপে ব্যাঘাত ঘটিয়ে রিদ্য সাউন্ড সিস্টেমে জোড়ে গান চালিয়ে দিল। আরাধ্য বলল,
– হয়েছে এবার কাজ!
স্পর্শিয়া ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,
– কেন? কি হয়েছে?
– কয়েক মিনিট ওয়েট কর, নিজেই বুঝে যাবে।

ঢাকা থেকে বের হতেই খালি রাস্তা পেয়ে গাড়ি ফুল স্পিডে চলতে লাগলো। আর বাসের সবাই একে একে উঠে গানের সাথে নাচ শুরু করে দিল। আরাধ্যকেও টান দিয়ে নিয়ে গেল সোহানা আর রোহান। স্পর্শিয়া হাত তালি দিচ্ছে, আর সবার নাচ দেখছে। বেশ মজাই লাগছে ওর। খুব ইচ্ছে করছে ওদের সাথে নাচতে। কিন্তু তা কি আর সম্ভব? শ্বশুর বাড়ির লোকজন বলে কথা। বাসার সবাই এখানে থাকলে সবার আগে ও ই নাচ শুরু করে দিত। স্পর্শিয়া প্রাণপনে চাচ্ছে কেও আসুক ওকে ডাকতে। প্রথম প্রথম ও কয়েকবার মানা করবে, তারপর ওকে ধরে টান দিলেই চলে যাবে নাচতে। হলোও ঠিক তাই। একটুপরেই স্পর্শিয়াকে পায়েল এসে টেনে নিয়ে গেল। প্রথম প্রথম দাঁড়িয়ে থাকলেও এখন বেশ নাচছে ও। সাথে আরাধ্য তো আছেই। আরাধ্যও বেজায় খুশি। স্পর্শিয়ার সাথে নাচছে ও, খুশি তো হবেই।

পুরোদমে নাচানাচি চলছে। কতক্ষন এ ওর সাথে নাচছে, ও অন্যকারও সাথে, একের পর এক পাল্টাপাল্টি করে নাচানাচি চলছেই। কিন্তু আরাধ্য একবারও স্পর্শিয়াকে অন্য কারও কাছে যেতে দিচ্ছে না। সবাই হাসছে ওর কান্ড দেখে। রোহান তো বলেই ফেলল,
– এখনি বউ পাগল হয়ে গেলি শালা? বউকে কারও কাছে যেতে দিচ্ছিস না।
– আর যেতে দিবও না। আমি আগে নেচে মন ভরে নেই, তারপর তোদের পালা।

যখনি বাস একটু স্লো করছে, একজন আরেকজনের উপর পড়ে যাচ্ছে। উঠেই আবার নাচ শুরু করছে। আরাধ্য তো পুরো সময় জুড়ে স্পর্শিয়ার চঞ্চলতা ভরা চেহেরাটাই দেখছে। নাচতে ও তেমন পারে না, কিন্তু স্পর্শিয়াকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও ভাল নাচ জানে।

স্পর্শিয়ার কাছে বেশ মজাই লাগছে। লং জার্নি ওর কখনোই পছন্দ ছিল না। কিন্তু লং জার্নিও যে এত মজার হতে পারে এটা ওর ধারণার বাইরে ছিল। ও হয়তো বাংলাদেশের প্রথম বউ যে শ্বশুর বাড়ির মানুষদের সাথে বিয়ের আগেই এভাবে নাচানাচি করছে।

গাড়ি স্লো করতেই স্পর্শিয়া পড়ে যেতে নেয়, আর আরাধ্য ধরে ফেলে। প্রতিবারই গাড়ির ঝাক্কুনিতে স্পর্শিয়া গুজো হয়ে যায়, আরাধ্য ওকে ধরে ফেলে, আর ওর খোলা চুলের অর্ধেক অংশ মুখের সামনে চলে আসে। ও সোজা হয়ে আবার চুল ঠিক করে, তারপর আরাধ্যর দিকে তাকিয়ে বেশ সুন্দর একটা হাসি দেয়। ওকে পড়ে যাওয়া থেকে আরাধ্য সেভ করছে, এটা হচ্ছে সেই কৃতজ্ঞতার হাসি। হাসি দেওয়ার সময় ওর চোখগুলো ছোট হয়ে যায়। আরাধ্যর চোখ সেই হাসিতে আটকে যায়। ভুবন ভুলানো সেই হাসি।

আরাধ্য সিটে বসে গল্প করছিল স্পর্শিয়ার সাথে। স্পর্শিয়াকে ওর নানুবাড়ির গ্রামের বিবরণ দিচ্ছিল। হঠাৎ স্পর্শিয়ার মাথা ওর কাধে পড়তেই ওর দিকে তাকালো। স্পর্শিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে। হয়তো এতক্ষন নেচে টায়ার্ড হয়ে গেছে মেয়েটা তাই মূহুর্তেই ঘুমিয়ে পড়েছে। গাড়ির কম বেশি সবাই ঘুম। টানা দুই ঘন্টা নেচে সবাই টায়ার্ড। আরাধ্য একটু নিচু হয়ে বসলো যাতে স্পর্শিয়ার মাথা রাখতে অসুবিধা না হয়। স্পর্শিয়ার ছোট চুলগুলো চেহারার সামনে উড়ছে। আরাধ্য আলতো করে ছুয়ে চুলগুলো সরিয়ে দিল। সেদিনের কথা মনে পড়ে গেল যেদিন প্রথমবার ওকে ঘুমন্ত মনে করে চুল সরাতে গিয়ে ধরা পড়ে গিয়েছিল। ইস! কি সুন্দর লাগছিল সেদিন ওকে। আজও ঠিক তেমনি লাগছে। ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে স্বর্গের অপ্সরী মনে হয়। বাচ্চা একটা মেয়ে। বয়স যত কম, ওকে দেখতে তার চেয়েও বেশি ছোট লাগে। মনে হয় বড় জোর ক্লাস সেভেনে পড়ে। আরাধ্য লজ্জা পেয়ে হেসে দিল নিজে নিজেই। এই বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পড়ে গেল কি করে ও! এসব ভাবছে আর স্পর্শিয়ার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আরাধ্য। ওর চুল থেকে মিস্টি একটা ঘ্রাণ আসছে। ঘ্রাণটা আরাধ্যর বেশ পছন্দ। নাক ডুবিয়ে দিল স্পর্শিয়ার চুলে। একটুপরেই আবার সরিয়ে ফেললো। যদি কেও দেখে ফেলে তবে মজা নিবে। বেশ লাগছে ওর কাছে ৷ ভালবাসার মানুষ এভাবে কাধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। এই অনুভূতি কখনো ভোলার নয়। পৃথিবীর সব সুখ যেন এখানেই নিহিত। এভাবে যেন আজীবন কাটিয়ে দিতে পারবে নিমিষেই।

একটুপর খাওয়ার জন্য একটা হোটেলের সামনে নিয়ে বাস থামালো। আরাধ্য স্পর্শিয়াকে ডেকে তুললো। ওকে ঘুম থেকে ডেকে তোলা আর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয় করা এক সমান মনে হলো আরাধ্যর কাছে। স্পর্শিয়া ঢুলুঢুলু চোখে তাকিয়ে বলল,
– এত জলদি চলে এসেছি? মাত্র তিন মিনিট ঘুমালাম।
স্পর্শিয়ার ভয়েস শুনে নেশা ধরে গেল আরাধ্যর। ইচ্ছে করছে ওর পাশে বসে গল্প করতে। আচ্ছা ওকে ঘুমন্ত ভয়েসে এত ভাল লাগে কেন? শুনতেই ইচ্ছে করে বারবার। নিজেকে কন্ট্রোল করে আরাধ্য বলল,
– তুমি এক ঘন্টা যাবত ঘুমাচ্ছ৷ আর আমরা এখনো আসিনি৷ ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার জন্য গাড়ি থামানো হয়েছে।
– আমি ঘুমাবো। প্লিজ তুমি যাও। খিদে নেই।
– খাওয়ার পরে ঘুমাবে৷ চলো এখন।
– না, প্লিজ খাব না।
– খেতেই হবে।
আরাধ্যর সাথে পায়েল এসে ওকে জোর করে নিয়ে গেল।

খাবার টেবিলে বসেও স্পর্শিয়া ঝুমছে। একবার ঝুমে পড়ে যেতে নিতেই আরাধ্য ধরে ফেললো। এই ব্যাপারটা কারও ই নজর এড়ালো না। সবাই একসাথে হেসে দিল৷ মূহুর্তেই স্পর্শিয়ার ঘুম চলে গেল। লজ্জাও পেল বেশ। নাহ! আর ঘুমানো যাবে না এভাবে যেখানে সেখানে। শশুরবাড়ির মানুষদের থেকে কি লজ্জাটাই না পেতে হচ্ছে একের পর এক। আল্লাহ ই জানে কপালে আর কত লজ্জা পাওয়া বাকী আছে।
.
.
.
ঘুমাবেনা? তাও আবার স্পর্শিয়া! এটা কি কখনো সম্ভব! বাসে উঠেই দুই মিনিটের মাথায় আবার ঘুম। আরাধ্য অবাক হচ্ছে, এত ঘুম কারও কোথা থেকে আসতে পারে! আরাধ্য এবার নিজেই স্পর্শিয়ার মাথা নিয়ে ওর কাধের ওপর দিল। নিচে তাকিয়ে স্পর্শিয়ার চাদমুখটা দেখছে ও। যদিও এভাবে তাকাতে কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু না তাকিয়েও থাকতে পারছে না। কি নিস্পাপ একটা চেহারা! ও যতটা চঞ্চল, ঘুমন্ত অবস্থায় ঠিক ততটাই শান্ত মনে হয় ওকে৷

গন্তব্যে পৌছানোর কিছু আগেই স্পর্শিয়ার ঘুম ভেঙে গেল৷
– তোমার নিজ থেকে ঘুমও ভাঙে!
স্পর্শিয়া ঘুম ঘুম চোখে আরাধ্যর দিকে তাকিয়ে বলল,
– মানে কি!
– না মানে, আমি ভেবেছিলাম তুমি সারাদিন ঘুমাতেই জানো, নিজ থেকে জাগতে জানো না।
স্পর্শিয়া কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলো।
– আমাকে ক্ষেপালে কিন্তু আবারও ঘুমিয়ে পড়বো।
– নো, প্লিজ নো। মাফ চাই। আর যাই করো, কিন্তু ঘুমাবে না প্লিজ। জান বের হয়ে যায় তোমাকে জাগাতে গিয়ে। কিন্তু একটা কথা…
– কি?
– ঘুমানোর সময় তোমাকে কোন পরীর চেয়ে কম মনে হয় না।
– তাই নাকি! তো পরী টা কে? তোমার এক্স গার্লফ্রেন্ড নিশ্চয়ই ?

আরাধ্য স্পর্শিয়ার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বললো,
– হ্যা, আমার এক্স গার্লফ্রেন্ডের নাম ছিল পরী। উফফফফ! কি যে সুন্দর ছিল, তোমাকে কি আর বলব। মাঝেমধ্যে তোমাকেও ওর মতো সুন্দর লাগে।
স্পর্শিয়া রাগে নাক ফুলাতে ফুলাতে বললো,
– তো, আর কয়টা গার্লফ্রেন্ড ছিল তোমার?
– দাড়াও, একটু গুনে নেই।
এই বলে আরাধ্য হাতের কর গুনতে লাগলো।

রাগে স্পর্শিয়ার নাক আর কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। ভাবতে লাগলো, কি লুইচ্চার লুইচ্চা পড়েছে আমার কপালে! মানুষ একটা প্রেম করে, না হয় দুইটাই করে, সেটা না হয় মানা যায়৷ তাই বলে এতগুলো! যেইভাবে হাতের কর গুনছে মনে হচ্ছে একশো ক্রস হয়ে যাবে।

বেশ কিছুক্ষন হিসেব করে আরাধ্য হাসিমুখে স্পর্শিয়ার দিকে নজর দিল। স্পর্শিয়া চোখমুখ শক্ত করে আরাধ্যর দিকে তাকিয়ে আছে। অপেক্ষা করছে ওর উত্তরের জন্য। আরাধ্য গলা ঝাড়া দিয়ে নিজের কলার নিজেই টানতে টানতে বলে,
– ২৭ টা জিএফ ছিল আমার।
কথা শুনে স্পর্শিয়া আৎকে উঠলো।
– কিহ! ২৭ টা? এত লুইচ্চা তুমি!
– কি! কি বললে?
– লুইচ্চা বলছি লুইচ্চা।
– এমন ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করতে পারলে তুমি আমার সাথে?
– হ্যা, পারলাম। যারা ২৭ টা প্রেম করতে পারে তারা লুইচ্চা ছাড়া আর কিছুই না।
– শোন, স্পর্শ। আমি ছিলাম অষ্ট্রেলিয়া। সেখানে ২৭ টা কেন, ৫৪ টা প্রেম করাও কিছু না। এখানে সেটাও এক প্রকারের স্মার্টনেস। এগুলো সেখানে কোন ব্যাপারই না।
– যেখানে রিলেশনই করেছ ২৭ টা, সেই ২৭ জনের সাথে আবার কি কি করেছ আল্লাহ ই জানে!
– তেমন কিছুই না সোনামণি। জাস্ট লিপকিস আর হাগ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল, এর বেশি আর কিছুই না। আর যাই হোক এতটা খারাপও আমাকে ভেবনা যে তোমার অধিকার অন্য কাওকে দিয়ে দিব।
– ছিঃ! ভালো ভেবেছিলাম তোমাকে আমি৷ আর তুমি..

স্পর্শিয়া অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। ভাবতে লাগলো, সব ছেলেরা একই। মেয়ে দেখলেই মুখের লালা টপটপ করে পড়তে থাকে। কোন ছেলেই ভাল না। সব একই রকম। কারও কারও চেহেরা আরাধ্যর মতো ভদ্র হলেও ভেতরে ভেতরে সব ছেলেই একই রকম শয়তান।

– স্পর্শ, রাগ করছ কেন বেবি? ওগুলি তো অষ্ট্রেলিয়া থাকাকালীন সময়ের কথা, এখন তো দেশে শুধু তুমি আর তুমি।
– ওহ! দেশে আমি? আর আবার কখনো বাইরে গেলে তোমার সেই ২৭ টা জিএফ?

স্পর্শিয়া এবার কেদেই দিল। চোখের পানি আড়াল করার জন্য অন্যদিকে ঘুড়ে চোখ মুখ চেপে ধরলো হাত দিয়ে।
আরাধ্য হতভম্ব হয়ে গেল। হলো টা কি! স্পর্শিয়া এভাবে কান্না করে দিবে ও চিন্তাও করেনি।
-স্পর্শ, কাদছ কেন? ওরা দেখলে কি বলবে?
আরাধ্য স্পর্শয়াকে ওর দিকে ফেরানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না।
– স্পর্শ, আম সরি। এইদিকে ঘুরো প্লিজ।
স্পর্শিয়া এখনো অন্যদিকেই মুখ ফিরিয়ে বসে আছে।
– স্পর্শ, সব মিথ্যে বলেছিলাম। ট্রাস্ট মি, সব মিথ্যে ছিল।
এবার স্পর্শিয়া মুখ ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আরাধ্যর দিকে তাকালো।
– হ্যা, সব মিথ্যে ছিল। আই লাভ অনলি ইউ। আমার কোন এক্স, প্রেজেন্ট কিচ্ছু ছিল না। আমার প্রেজেন্ট আর ফিউচার দুটোই শুধু তুমি।

ভাঙা ভাঙা গলায় স্পর্শিয়া বললো,
– তোমার ২৭ টা জিএফ ছিল না?
– না।
– এতক্ষণ মিথ্যে বললে কেন তবে?
– আমি তো মজা করছিলাম। বাট, তুমি এতটা সিরিয়াস হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি।
স্পর্শিয়ার নাক আর গাল লাল হয়ে আছে। চোখের পানি আর নাকের পানি মিশে একাকার। আরাধ্য স্পর্শিয়ার চোখের পানি আর নাক মুছে দিল। স্পর্শিয়া এতক্ষনে যেন একটু শান্তি পেল।
– সত্যি তোমার গার্লফ্রেন্ড ছিল না তো কোন?
– না বাবা। সত্যি কোন গার্লফ্রেন্ড ছিল না। আর কারও সাথে লিপ কিস ও করিনি। করলে তোমার সাথেই করবো। আমার বউ এর যেই সুন্দর সুন্দর লিপ..
– চুপ কর৷ লজ্জা নাই তোমার।
– বউয়ের কাছে লজ্জা থাকতে নেই। অবশ্য একটা মেয়েকে পছন্দ করতাম..
স্পর্শিয়া এমনভাবে আরাধ্যর দিকে তাকাল যেন খেয়ে ফেলবে।
– ভয় দেখাচ্ছ কেন এভাবে তাকিয়ে? পছন্দ করতাম, তাও খুব পিচ্চি থাকতে। আমি ক্লাস এইটে যখন পড়ি তখন স্কুলের একটা ম্যামকে খুব পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। এক কথায় বলতে গেলে পাগল ছিলাম উনার জন্য। সারাদিন উনাকে দেখতাম লুকিয়ে লুকিয়ে। কিন্তু উনি কিছুদিন পরেই বিয়ে করে আমাকে ছ্যাকা দিয়ে বেকা বানিয়ে চলে যায়। সেই দুখেই আর কখনো রিলেশন করিনি কারও সাথে।
স্পর্শিয়া সব দাত বের করে হাহাহা করে হাসতে লাগলো।
– স্কুলের ম্যামকে ভালোবাসতে, সে আবার তোমাকে ছ্যাকা দিয়েছে।
এই বলে স্পর্শিয়া আবারও হাসি। হাসি থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।
আরাধ্য তাকিয়ে তাকিয়ে স্পর্শিয়ার সেই মুক্ত ঝড়া হাসি দেখতে লাগলো।

হঠাৎ স্পর্শিয়ার বাম হাতটা আরাধ্য নিজের হাতে নিল। স্পর্শিয়া হাসি থামিয়ে আরাধ্যর দিকে তাকাল। আরাধ্য বলল,
– কিন্তু একটা জিনিস খুব ভালো মতো বুঝতে পারলাম।
– কি?
– তুমি মুখে স্বীকার না করলেও আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছ। নয়তো এভাবে কান্না করে দিতে না৷

স্পর্শিয়া আরাধ্যর কথা শুনে চুপসে গেল৷ সত্যিই তো, ও এভাবে কান্না করে দিল কেন আরাধ্যর এতগুলো রিলেশনের কথা শুনে? কেন এমন মনে হচ্ছিল ওর যেন কেও বুকটা ছুড়ির তীক্ষ্ণ ফলা দিয়ে কুচি কুচি করে কেটে দিচ্ছে? তবে কি আরাধ্য যা বলছে তাই সত্যি? ও কি আরাধ্যকে… নাহ! এটা কি করে সম্ভব? যে ছেলেকে ১ মাস আগে ও চিনতোও না, সেই ছেলেকে ও কি করে ভালবাসতে পারে? সায়ানকেই যেখানে মন থেকে সরাতে পারলো না, সেখানে আরাধ্য কি করে.. নাহ! এটা অসম্ভব। জোরজবরদস্তি নিজের মনকে স্পর্শিয়া বুঝিয়ে মানালো যে আরাধ্য প্রতি ওর কোন ফিলিংস নেই৷ নিজের উড বি এতগুলো রিলেশন করেছে সেটা শুনেই খারাপ লাগছে জাস্ট, আর কিছুই না।

(চলবে)

লিখাঃ Dewan Oishi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here