প্রেম পর্ব -১৪+১৫

প্রেম (Love has no limits)

#পর্বঃ ১৪

গ্রামটা বেশ লাগছে স্পর্শিয়ার কাছে। খুব সুন্দর জায়গাটা। পাকা রাস্তা থেকে নেমে মাটির কাচা রাস্তা দিয়ে আরাধ্যর নানু বাড়ির গ্রামে ঢুকতে হয়। কাচা রাস্তায় নামার আগে স্পর্শিয়া মাথায় ঘোমটা টেনে নিল। যেহেতু গ্রামে এসেছে, তার উপর আবার বউ, সুতরাং এইটুকু করতেই হয়। আরাধ্য স্পর্শিয়ার দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো। একদম বউ বউ লাগছে ওকে। ঠিক বউ না, অপ্রাপ্তবয়স্ক পিচ্চি বউ! মনে হচ্ছে রিসেন্টলি বাল্যবিবাহ হয়েছে। আরাধ্য মুচকি হাসলো স্পর্শিয়াকে দেখে।

সবাই যার যার লাগেজ নিয়ে হেটে চলেছে কাচা রাস্তা দিয়ে। রাস্তার মাঝখানে একপর্যায়ে একটা ছোটখাট বাশের সাঁকো পড়লো। স্পর্শিয়া সাঁকো দেখেই ঘাবড়ে গেল। ওর সাথে সাথে অন্য মেয়েরাও ঘাবড়ে গেল। মেয়েদের জন্য এটা একটা বিভিষীকাই বটে। প্রতিটা মেয়ের সাথে একটা করে ছেলেকে দেওয়া হলে সাঁকো পার হওয়ার জন্য। রোহান এসে স্পর্শিয়ার হাত ধরে বলল,
– চলো, তোমাকে আমি সাঁকো পার করে দেই।
আরাধ্য রোহানের হাত টেনে সরিয়ে দিল।
– যা ব্যাটা। তুই সারাদিন শুধু আমার ভাত মারার তালে থাকিস। আমার বউ, আমি সাঁকো পার করাব, একটু রোমান্টিক টাইম স্পেন্ট করবো, আর তুই নষ্ট করে দিচ্ছিস। তুই দূরে যা।
সবাই হেসে দিল। স্পর্শিয়া লজ্জা পেয়ে গেল। আরাধ্য না কেমন যে! গাধা একটা! কিছু বলার সময় বুঝে শুনে বলে না। যার তার সামনে সবকিছু বলে ফেলে।

সাঁকো পার হওয়ার সময় স্পর্শিয়া আরাধ্যর হাত শক্ত করে ধরে রেখে ছিল। এমন ভাবে ধরেছিল, যেন বিশ্বস্ত হাত সেটা, যেই হাতে কোন ভয় নেই, যেই হাত ধরে নির্দ্বিধায় ভরসা করে পার হওয়া যায় সারাটা জীবন।

গ্রামে আরাধ্যর যে কয়জন আত্মীয় ছিল, সবাই স্পর্শিয়াকে দেখে খুবই প্রশংসা করলো। আর কাজিনগুলোতো সব ভাবি ভাবি করেই জান বের করে দিচ্ছে।

বাড়িটা বেশ ভালো লাগলো স্পর্শিয়ার। বিরাট বড় একটা উঠান। আশেপাশে মাটির ঘর, টিনশেড ঘর, আর চৌচালা ঘর রয়েছে ১৫/২০ টার মতো। আর তিনটা একতলা বিল্ডিংও রয়েছে। সবসময় শহরে থাকে বলে, গ্রাম বরাবরই স্পর্শিয়ার খুব পছন্দের৷ সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে গ্রামের মানুষগুলোকে। মনে হয়, তাদের মধ্যে কোন প্যাচ নেই, অনেক সরল সোজা তারা।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.

রাতে আরাধ্যর কাজিনরা মিলে উঠানে বসলো গল্প করার জন্য। এই জিনিসটা সবসময়ই হয়। ওরা গ্রামে গেলেই আসর বসায়। অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করে, আড্ডা দেয়, তারপর ঘুমাতে যায়। যেহেতু ফ্যামিলির নতুন মেম্বার স্পর্শিয়া, তাই ও ই হচ্ছে আসরের মধ্যমনি। সবাই যার যার লাইফের মজার ঘটনা শেয়ার করছে। একপর্যায়ে নুহা বললো গানের কলি খেলবে। সবাই তাল মিলালো।
ছেলেরা আলাদা গ্রুপ, আর মেয়েরা আলাদা গ্রুপ। আরাধ্য জোরজবরদস্তি করে স্পর্শিয়াকে ওদের গ্রুপে নিতে চাইছে, আর সবাই সে কি হাসি!

রোহান বললো,
– কিরে তুই বউ ছাড়া এক সেকেন্ডও থাকতে পারিস না?
আরাধ্য নাক মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।
সবাই ওর কাহিনি দেখে ইচ্ছে মতো হাসছে। ছেলেটা সব দিকে ম্যাচিউর হলেও স্পর্শিয়ার ব্যাপারে বাচ্চামি করে মাঝেমধ্যে।
মেয়েরা স্পর্শিয়াকে ছেলেদের দলে দিল না তো দিলই না। ওদিকে স্পর্শিয়া মনে মনে ভাবছে,
-আমাকে কোন দলে নিয়েই লাভ নেই। গান ই তো পারি না আমি। টুকটাক যাই পারি, তাও আবার গানের কলি খেলার সময় মনে পড়ে না। আর যদি মনে পড়েও যায় তবে লিরিক্সে ভুল অবশ্যই থাকে।

গানের কলি শুরু হয়ে গেল। এরই মধ্যে রুবি কোথা থেকে যেন একটা গিটার এনে আরাধ্যর হাতে দিয়ে গেল।
স্পর্শিয়া চিন্তা করতে লাগলো, আরাধ্যর হাতে এনে গিটার দিল কেন? তবে কি আরাধ্য গান গাইতে জানে? কেমন মেয়ে ও! আরাধ্য ওর ব্যাপারে সবকিছু জানে, আর ও আরাধ্যর ব্যাপারে কিছুই জানে না। এই ভেবে নিজে নিজেই আফসোস করলো।

খেলা শুরু হলই আরাধ্যর গান দিয়ে, “যদি সত্যি জানতে চাও তোমাকে চাই, যদি মিথ্যে মানতে চাও তোমাকেই চাই।” গান শুরুর আগে আরাধ্য স্পর্শিয়াকে ডেডিকেট করলো। ডেডিকেট করার সাথে সাথে সবাই একসাথে জোড়ে চিৎকার করে উঠলো। স্পর্শিয়া তো লজ্জায় শেষ। ও চিন্তাও করেনি আরাধ্য এমন কিছু একটা করবে।
একের পর এক গান গাইতে লাগলো সবাই, আর আরাধ্য গিটার বাজাচ্ছে।

খেলা বেশ জমে উঠেছে। যদিও স্পর্শিয়া কোন গানই গাইছে না, তবুও ওর কাছে মজাই লাগছে। “এ” দিয়ে গান গাইতে হবে মেয়েদের। কিন্তু কারও ই কোন গান মনে পড়ছে না “এ” দিয়ে। স্পর্শিয়ার ঠিক এই মূহুর্তেই কোথা থেকে গান মনে পড়ে গেল। ও চিৎকার করে বলে উঠলো,
– গান পেয়েছি! গান পেয়েছি! আমার মনে পড়েছে।
সবাই হতভম্ব হয়ে গেল ওর চিৎকারে। সবার চেহারা দেখে ও বুঝতে পারলো একটু জোড়েই কথা বলে ফেলেছে। তারপর আস্তে করে বললো,
– ইয়ে.. মানে.. গান মনে পড়েছিল তো, তাই একটু বেশি এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম।
মেয়েরা খুশি হয়ে বলল,
– ভাবি, বল, বল, গান বল।
– আমি তো পুরোটা পারিনা, কিন্তু নাম বলে দেই, তোমরা গাও।
– আচ্ছা। বল জলদি। টাইম শেষ হয়ে যাবে। কি গান?
– এ ছা, কুত্তার ছা।
সবাই গানের নাম শুনে চোখ কপালে তুলল। সবাই সবার দিকে চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো।
– ভাবি, কুত্তার ছাও আবার কোন গান?
– আরে.. বাহুবালি টু মুভির সং। ওই যে লাইনটা শুরু হয় এ ছা, কুত্তার ছা বলে?
সবাই একসাথে জোড়ে হেসে দিল। স্পর্শিয়া চুপসে গেল। কেও ই হাসি থামাতে পারছে না। স্পর্শিয়া এতক্ষনে বুঝলো ও নিশ্চিত লিরিক্স ভুল করেছে।
– ভাবি, গানের নাম ই তো ভুল। আর তাছাড়া এটা গানের নামও না। প্রথম কলিও এটা না। গানের নাম জিও রে বাহুবালি।
সবাই আবারও হাসি। এখন ওর মনে হলো, আসলেই কত বোকা ও। কুত্তার ছা আবার কোন গান হয় নাকি। গান পেয়েছে বলে কত এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিল, আর এখন ইজ্জতের লটর পটর হয়ে গেল। একবার আড়চোখে আরাধ্যর দিকে তাকালো। নাহ! আরাধ্যও হাসছে। দুঃখের সময়ে জামাই-ও আর নিজের থাকে না। আর কখনো কারেক্ট লিরিক্স না জেনে গানের নাম মুখেও আনবে না পণ করলো মনে মনে স্পর্শিয়া।

গল্প, গান সব শেষ হতে হতে রাত ৪ টা বাজলো। স্পর্শিয়ার ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল বিল্ডিং এ। কিন্তু ও নিজেই একটা টিনের ঘরে ঘুমাতে চাইলো। ওর সাথে যোগ দিল স্নেহা, রিতিকা, পায়েল, আর পিউ। সবাই ফ্লোরে বিছানা করে একসাথে শুয়েছে। সবাই গল্প করছে, কিন্তু স্পর্শিয়া তো শুয়েই ঘুম৷ বাকিরা বেশ অবাক হলো, এত জলদি ঘুমালো কি করে ও!

ওদের ঘরের ঠিক অপর পাশের ঘরটাতেই আরাধ্য আর রোহান শুয়েছে। আরাধ্য বুদ্ধি করেই এই ঘরটা চুজ করেছে ঘুমানোর জন্য। বাই চান্স, যদি দেখা হয়ে যায় স্পর্শিয়ার সাথে। আরাধ্য আজ সারাদিনের কথা ভাবছে আর হাসছে। এত বড় সারপ্রাইজ পাবে ওর তো কোন ধারনাই ছিল না। আগামী ৫ দিন ও স্পর্শিয়ার সাথে সারাদিন থাকতে পারবে ব্যাপারটা ওর কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে৷ তার উপর স্পর্শিয়া তখন কিভাবে কান্না করে দিল ও গার্লফ্রেন্ডদের কথা বলাতে। সব মিলিয়ে আরাধ্য যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে এখনো। এটা অবশ্য খুব ভাল লাগছে ওর যে, স্পর্শিয়ার কিছুটা হলেও মায়া কাজ করছে ওর প্রতি, কিছুটা হলেও টান অনুভব করছে। আগে ওর প্রতি স্পর্শিয়ার যে ছন্নছাড়া ভাব টা ছিল, এখন আর সেটা নেই।
.
.
.
.
.
পরদিন গায়ে হলুদে…

এমনিতেই শাড়ি পড়েনি কখনো স্পর্শিয়া, এখন পড়ে মনে হচ্ছে কিছু একটা সাপের মতো পেচিয়ে ধরে রেখেছে ওকে। যে কোন সময় খুলে যাবে এমন লাগছে ওর৷ ধুর! কেন যে শাড়ি পড়তে হয়! এই শাড়ি যে কে বানিয়েছে, তাকে ওর ইচ্ছেমতো কামড় দিতে মন চাচ্ছে। সবাই জোড়াজুড়ি না করলে পড়তই না। সবাই শাড়ি পড়েছে, ও না পড়লে কেমন দেখায়৷ তাই বাধ্য হয়েই পড়লো।

বাইরে থেকে ডাক পড়ছে ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য। হলুদের অনুষ্ঠান নাকি একটু পরেই শুরু হয়ে যাবে৷ সবাই রেডি হয়ে গেছে , শুধুমাত্র স্পর্শিয়া ছাড়া। স্পর্শিয়া একাই যেতে পারবে, এটা বলে ও সবাইকে চলে যেতে বলল। আজ ও বুঝতে পারছে যে মা কে ছাড়া ও সত্যিই অচল। এটা খুজে পাচ্ছে না, ওটা খুজে পাচ্ছে না। অবশেষে বের হলো ঘর থেকে। শাড়ি পড়ে হাটতেও পারছে না। একটু দূরেই আরাধ্য দাঁড়িয়ে আছে ওর জন্য। ফাংশানে চলে গিয়েছিল। কিন্তু নিশাত চৌধুরী ই ছেলেকে পাঠালেন স্পর্শিয়াকে নিয়ে আসার জন্য।

স্পর্শিয়াকে ঘর থেকে বের হতে দেখে থমকে গেল আরাধ্য। হার্ট কয়েকটা বিট মিস করলো। গ্রামের মেয়েদের মতো একপ্যাচ দিয়ে হলুদ রঙের শাড়ি পড়েছে ও, চুলে খোপা করা। গায়ের রঙের সাথে শাড়ির রঙ যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। শাড়ি পা থেকে প্রায় আধা হাত উপরে উঠিয়ে টুকটুক করে হাটছে ও । স্পর্শিয়ার লোমহীন সাদা ধবধবে ফর্সা পা দেখে আরাধ্যর চোখ আটকে গেল। স্পর্শিয়া খেয়ালই করেনি যে আরাধ্য সামনেই দাঁড়িয়ে আছে৷ ও নিজের মতো করে নিচের দিকে তাকিয়ে হেটে চলেছে। আরাধ্যর কাছাকাছি যেতেই চোখ উপরে তুলে দেখে আরাধ্য দাঁড়িয়ে আছে। স্পর্শিয়া সাথে সাথে শাড়ি হাত থেকে ছেড়ে দিল, আর কদম ফালাতে গিয়ে শাড়ির উপর পারা লেগে পড়ে যেতে নিল, কিন্তু আরাধ্য সাথে সাথেই ধরে ফেললো।

স্পর্শিয়ার বুক ধুকধুক করছে। ছিঃ! কিভাবে শাড়ি উচিয়ে হাটছিল ও। আরাধ্য নিশ্চয়ই দেখেছে। কি মনে করবে ছেলেটা। নিস্তব্ধতা ভেঙে আরাধ্যই বলল,
– তুমি শাড়ি পড়ে হাটতে পার না, তবে পড়েছ কেন?
– আমি তো ঠিক মতোই হাটছিলাম। তুমি সামনে এসেই তো প্যাচ লাগালে।
– আমি তো তোমার হাটা দেখছিলাম।
– আমি কি কোন ছোট বাচ্চা যে নতুন নতুন হাটা শিখেছি, আর তা তুমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলে?
– তেমনই মনে হচ্ছিল আমার কাছে। যেভাবে শাড়ি ধরে হাটছিলে..
একথা বলেই আরাধ্য দম ফাটানো হাসি শুরু করলো । স্পর্শিয়া লজ্জা পেয়ে গেল।
– স্পর্শ, একটা কথা কি জানো?
– কি?
– তোমার পা গুলো এত সুন্দর!
স্পর্শিয়া নিশ্চুপ। কেন যে এভাবে হাটতে গেল!
– আমার ধরে দেখতে ইচ্ছে করছে তোমার পা গুলো।
স্পর্শিয়া চোখ কপালে তুলে বলল,
– কিহহহহ?
– হুম। প্লিজজজজ?
– অসম্ভব।
– না, প্লিজ, প্লিজ । একটু ধরে দেখবো জাস্ট।
– কখনোই না।
– বিয়ের পরেও না?
– ছিঃ! বেশরমা তুমি।
– তবে তাই-ই। তোমার কাছে লজ্জা রেখেই লাভ কি? আমি এমনিতেও ধরতাম না, মজা করছিলাম। কিন্তু বিয়ের পরে কিন্তু ঠিকই ধরবো। তখন দেখবো কি কর।
– ছিঃ! সরো তুমি।
– এত ছিঃ ছিঃ, আর সরো সরো করছ কেন? বিয়ের পরে আমিও দেখব এই ছিঃ কোথায় থাকে তোমার। তখন কি শুধু পা নাকি, আরও কত কিছু দেখবো, ধরবো। তখন দেখবো পালাও কোথায়।
এই কথাটা স্পর্শিয়া হজম করতে পারলো না। দৌড় দিয়ে দূরে যাওয়ার বৃথা চেষ্টা করতেই পায়ে শাড়ি পেচিয়ে আবারও পড়ে যেতে নিল। আরাধ্য সাথে সাথেই ধরে ফেললো।
– আমার কাছ থেকে পালাতে চাচ্ছ সুন্দরী? সেটা কি আর সম্ভব?
এক মূহুর্ত সময় না দিয়ে আরাধ্য স্পর্শিয়াকে কোলে তুলে নিল।
– এই ছাড়। প্লিজ। কি করছ? নামাও আমাকে। কেও দেখে ফেলবে তো। ছাড় না প্লিজ। কেও চলে আসবে।
– চুপ। একদম চুপ। ও মাই গড! এক দমে কতগুলো কথা বলে ফেললে তুমি!
স্পর্শিয়া ধীর গলায় বললো,
– ছাড় না প্লিজ।
– ছেড়ে দিলে কিন্তু পড়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
– না, আই মিন, আমাকে কোল থেকে নামাও।
– নো। আম্মুর আদেশ তোমাকে ঠিকঠাক মতো দেখেশুনে স্টেজ পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। আর তোমার হাটার যেই অবস্থা, দেখে মনে হচ্ছে ২ঘন্টা পার করবে ৪ মিনিটের রাস্তা শেষ করতে। তাই কোলে নিয়েছি৷ আর শুধু শুধু হেটে এনার্জি ওয়েস্ট করবে কেন বলতো? এনার্জি জমিয়ে রাখ, পরে সেই এনার্জি দিয়ে আমাকে আদর করো।
– লুইচ্চা।
– কিহ? আমি লুইচ্চা?
– হ্যা, হ্যা, হ্যা।
– দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।
এই বলে আরাধ্য স্পর্শিয়াকে কোলের মধ্যে রেখেই ওকে নিজের বুকের সাথে জাপটে ধরলো।
স্পর্শিয়া সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেললো, ওর হার্ট জোরে জোরে বিট করা শুরু করেছে।
– কি করছ? প্লিজ ছাড়। প্লিজ। সরি আর বলব না। ছাড় না।
– আমার বুকেই তো আছ। তবে এমন ছটফট কেন করছ?
– প্লিজ ছাড়ো, সত্যি বলছি আর বলব না এই কথা।
আরাধ্য স্পর্শিয়াকে ওর বাহুডোর থেকে আলগা করে দিল ঠিকই, কিন্তু কোল থেকে নামালো না।
– কেও দেখে ফেলবে আরাধ্য।
– সবাই ফাংশানে। কেও নেই এদিকে৷ এই রাস্তাটুকু তো কোলে করে নিয়ে যেতে দাও।
স্পর্শিয়া নীরব সম্মতি প্রকাশ করলো আরাধ্যর কথায়। আরাধ্য স্পর্শিয়াকে কোলে নিয়ে হাটতে লাগলো।
– স্পর্শ।
– হুম।
– তোমার মুখে কিন্তু আমার নাম খুব সুন্দর মানায়।
– আমি তোমার নাম ধরে কখন ডাকলাম?
– এইমাত্রই ডেকেছ৷ ভুলে গেলে।

স্পর্শিয়া আরাধ্যকে দেখছে। আরাধ্যর ঠিক মাথার উপর চাঁদ হওয়াতে ওর চেহারা ভালো মতো দেখা যাচ্ছে না। চেহারার অবয়বটা বুঝা যাচ্ছে শুধু। আর আরাধ্যর ঠোট নড়ছে কথা বলার কারনে সেটা বুঝা যাচ্ছে। চাদের আলো স্পর্শিয়ার মুখে সরাসরি পড়েছে। ও আরাধ্যকে ভালো করে দেখতে না পেলেও আরাধ্য ওকে ঠিকই দেখছে। স্পর্শিয়া আরাধ্যর গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছিল। ওর দুই হাত দিয়ে আরও শক্ত করে ধরে আরাধ্যকে নিজের আরও কাছে টেনে নিল স্পর্শিয়া। এবার ও নিজেই আরাধ্যর বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিল নিজেকে। নিজের মুখ আরাধ্যর ঘাড়ে গুজে দিল। নাক ঘষতে লাগলো আরাধ্যর ঘাড়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় আরাধ্য কয়েক মুহূর্তের জন্য হাটা থামিয়ে দিল। কি হচ্ছে ও বুঝতে পারছিল না। মনে হচ্ছিল স্বপ্ন দেখছে।
.
.
.
.
.

গ্রাম হলেও বেশ সুন্দর করে হলুদের স্টেজ সাজানো হয়েছে। বুঝাই যাচ্ছে হয়তো শহর থেকে কোন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এনে সাজানো হয়েছে। সব ছেলেরা মজা করে গলায় একটা করে ঢোল ঝুলিয়ে বাজাচ্ছে। আরাধ্যও তার ব্যতিক্রম নয়। ঢোল বাজাচ্ছে, আর একটু পরপর স্পর্শিয়ার দিকে একটা দুষ্টু দুষ্টু লুক দিয়ে তাকাচ্ছে। স্পর্শিয়া একটু আগে যে কাজ করেছে আরাধ্যর সাথে, সেই ফলশ্রুতিতেই আরাধ্য এমন লুক দিচ্ছে স্পর্শিয়া তা ভালই বুঝতে পারছে। ও তখন কেন এমন করলো, কি হয়েছিল ওর, স্পর্শিয়া তা নিজেও জানে না। নিশ্চয়ই কোন শয়তান ভর করেছিল ওর উপর। এখন নিজেরই লজ্জা লাগছে আরাধ্যর সাথে নজর মেলাতে। স্পর্শিয়া যতটুকু পারছে চেষ্টা করছে আরাধ্যর দিকে নজর না দিতে, কিন্তু চোখ যেন বার বার ওর দিকেই চলে যাচ্ছে। ওর দুষ্টুমি ভরা চাহনিতেও একটা মাধুর্য আছে।

পেছন থেকে পায়েল এসে বলল,
– ওওওও! চোরি চোরি চুপকে চুপকে হচ্ছে!
– না ভাবি। কই এমন কিছু না তো।
– হুম, আমার কাছে মিথ্যা, তাই না!
– না, না। এমন কিছু না। আসলে…
হঠাৎ ফোনের স্ক্রিনে আরাধ্যর নাম ভেসে উঠলো। স্পর্শিয়া সাথে সাথে পিছনে তাকালো৷ আরে, এই মাত্রই তো আরাধ্য এখানে ছিল, কোথায় চলে গেল? আর এইখান থেকে এইখানে ফোনই বা দিচ্ছে কেন?
পায়েল জিজ্ঞেস করলো,
– কে ফোন দিয়েছে?
– না ভাবি৷ কেও না।
– আবার মিথ্যা! যাও, হয়তো মিস করছে তোমাকে আমার দেবরটায়, তাই কল দিয়েছে।
– কিন্তু ও কই, দেখছি না তো।
– কল টা পিক করে জিজ্ঞেস কর ও কই।
স্পর্শিয়া কল পিক করতে করতে পায়েলের সামনে থেকে দূরে চলে আসলো।
– স্পর্শ, স্টেজের পেছনে আসো তো।
– স্টেজের পেছনে! কিন্তু কেন?
– আরে ভয় পাচ্ছ কেন? ভুত নাকি পেত্নী আমি? আসো।

স্পর্শিয়া ভয়ে ভয়ে স্টেজের পেছনে গেল যেন আরাধ্য আসলেই ভুত বা পেত্নী ৷ এমনিতেই একটু আগে যেই কাজ করেছে ও! আল্লাহ ই জানে কেন ডেকেছে আরাধ্য!

– কি হয়েছে আরাধ্য? এখানে আসতে বললে যে৷
– চোখ বন্ধ কর।
স্পর্শিয়া চোখ বন্ধ না করে আরও বড়বড় করে ফেললো।
– কি করবে তুমি?
– আরে.. চোখ বন্ধ করতে বলেছি, বড়বড় করতে না। একটু পরে তো এমনিতেই বুঝবে কি করবো আমি।

স্পর্শিয়া মনের মধ্যে একরাশ আজগুবি চিন্তা নিয়ে চোখ বন্ধ করলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ওর উন্মুক্ত পিঠে আরাধ্যর হাতের স্পর্শ পেতেই চমকে গিয়ে চোখ খুলে ফেললো স্পর্শিয়া।
– কি করছ আরাধ্য?
– চুপ। কোন কথা বলো না, প্লিজ।
কেন যেন আরাধ্যর কথা স্পর্শিয়ার মানতে ইচ্ছে করলো। চুপ করে রইলো ও। আরাধ্য স্পর্শিয়ার গলায় বেলি ফুলের মালা পড়িয়ে দিল৷ খোপায় আর হাতেও বেলি ফুলের মালা জড়িয়ে দিল। স্পর্শিয়ার উন্মুক্ত পিঠ দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করার সব শক্তি হারিয়ে ফেললো আরাধ্য। এক অন্যরকম শিহরণ ছড়িয়ে গেল সারা শরীরে। আলতো করে চুমু দিল স্পর্শিয়ার পিঠে। স্পর্শিয়া নিজের পিঠে আরাধ্যর ঠোটের পরশ পেতেই চোখ বন্ধ করে ফেললো, সাড়া শরীর যেন কাটা দিয়ে উঠলো, হার্টবিট বেড়ে গেল, শিরায় শিরায় গরম রক্ত চলাচল বেড়ে গেল, আর তা যেন ও স্পষ্ট অনুভব করতে পারছিল৷ আরাধ্য স্পর্শিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল৷ স্পর্শিয়া লজ্জায় চোখ শক্ত করে বন্ধ করে রেখেছে। স্পর্শিয়ার থুতনি ধরে আরাধ্য ওর মুখ উপরে তুললো। খুব ধীর গলায় বললো,
– এ্যাই বউ। তাকাও না আমার দিকে।
এমনিতেই রক্ত হিম করা একটা মুহূর্ত, আবার তার সাথে আরাধ্যর এভাবে বউ বলে ডাক দেওয়া। দুটোই যেন স্পর্শিয়াকে মাতাল করে দিল।
আরাধ্য আবারও ডাক দিল,
– এ্যাই বউ।
স্পর্শিয়া এবার নিজের চোখ খুলে চোখ রাখলো আরাধ্যর চোখে। এক মূহুর্ত পরেই আবার চোখ সরিয়ে নিল । কি করে তাকাবে? ওই চোখে যে নেশা লাগানো।
স্পর্শিয়ার কোমড়ে হাত দিল আরাধ্য। আলতো করে ওর ঠোটের পরশ বুলিয়ে দিল স্পর্শিয়ার কপালে, গালে। ওর নাকে নাক ঘষলো। দুজনের মুখের ঘন নিঃশ্বাস বারবার বাড়ি খেয়ে ফিরে যাচ্ছে।

পিছন থেকে কারও গলার আওয়াজ পেতেই আরাধ্য স্পর্শিয়াকে সাথে সাথে ছেড়ে দিল। সিমি পুরো গার্লস গ্রুপ নিয়ে এসে হাজির হয়েছে।
– কি চলছে এখানে হুম?
– কই কি চলছে? বেশি কথা বলিস।
– হয়েছে, হয়েছে। আমরা সব বুঝি, আর বুঝাতে হবে না। চল সবাই, আমরা চলে যাই। নয়তো আবার কেও বলবে আমরা নাকি প্রাইভেসি দেই না কাওকে।
একথা বলেই ওরা চলে গেল। স্পর্শিয়া ওদের পেছনে যেতে নিতেই আরাধ্য ধরে ফেললো।
– তুমি কোথায় চললে সুন্দরী?
– স্টেজের ওইদিকে।
– না। পরে যাও।
– অসম্ভব।
– প্লিজ। একটু থাক। আমার আদর করা এখনো শেষ হয়নি, আর তুমিও তো আদর দিলে না।
আরাধ্যর কথা শুনেই লজ্জায় নিজের হাত ছাড়িয়ে দৌড় দিল স্পর্শিয়া। আরাধ্য বোকার মতো ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। কি হলো এটা!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
স্পর্শিয়াকে অনেকক্ষণ যাবত ডাকছে সবাই ছবি তোলার জন্য। ওর যেতেই ইচ্ছে করছে না। আল্লাহ ই জানে সবার সামনে আরাধ্য আবার কি না কি করে ফেলে। একটুপর পিউ এসে টানাটানি করে নিয়ে গেল স্পর্শিয়াকে। আরাধ্যর সাথে নজরও মেলাতে পারছে না ওর এতই লজ্জা লাগছে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে আরাধ্যর থেকে দূরে থাকার। নিশাত চৌধুরী স্পর্শিয়ার সাথে বেশ কয়েকটা ছবি তুলে ফটোগ্রাফারকে বললেন আরাধ্য আর স্পর্শিয়ার কয়েকটা সুন্দর করে ছবি তুলে দিতে।

স্পর্শিয়া গেল চিন্তায় পরে। এতক্ষণ চেষ্টা করছিল কিভাবে একটু দূরে দূরে থাকা যায় আরাধ্যর থেকে, আর এখন শ্বাশুড়ি যেই কথা বলল, আরও চিপকায় চিপকায় থাকতে হবে আরাধ্যর সাথে।
আরাধ্য সাথে এসে দাড়াতেই স্পর্শিয়া চমকে গেল।
– কি স্পর্শ? দূরে ভাগছিলে আমার থেকে হুম?
– কই না তো, দূরে ভাগবো কেন?
– ওই যে.. তখন যা করলাম, সেই জন্য।
– সরো তো, অনেক নির্লজ্জ তুমি।
এরই মধ্যে ফটোগ্রাফার এসে কয়েকটা ক্যান্ডিড ছবি তুলে ফেললো ওদের।
আরাধ্য হাসতে হাসতে বললো,
– দেখলে, তুমি আমাকে দূরে সরাতে চাইলেও ফটোগ্রাফার আমাদের আলাদা হতে দিবে না।

একটা ছবিতে ওরা দুজন নরমালি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে, আরেকটা ছবিতে আরাধ্য স্পর্শিয়ার কোমড়ে হাত রেখেছে, আর স্পর্শিয়া আরাধ্যর গলা জড়িয়ে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মূহুর্তে স্পর্শিয়ার নিজেকে খুব আনাড়ি বলে মনে হচ্ছে! নিজের হাইট নিয়ে কখনো আফসোস করেনি, কিন্তু এই মূহুর্তে ওর খুব আফসোস হচ্ছে যে আল্লাহ ওকে এত শর্ট কেন বানালো। আরাধ্য এতই লম্বা যে ঠিক মতো আরাধ্যর গলা জড়িয়েও ধরতে পারছে না। আরাধ্যর সামনে এখন নিজেকে লিলিপুট ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না। আরাধ্য স্পর্শিয়াকে দুই হাত দিয়ে উপরে উঠিয়ে নিল। স্পর্শিয়া চমকে গেল।
– ফটোগ্রাফার সাহেব, এবার ছবি তুলুন। আমার বাচ্চা বউ এখন আমার চেয়েও বড় হয়ে গেছে।
স্পর্শিয়া হেসে দিল আরাধ্যর কথা শুনে। আচ্ছা, আরাধ্য ওকে কি দেখে এত ভালবাসলো? এই বাচ্চা, পিচ্চি মেয়েকে। আরাধ্যর সাথে আদৌ কি ও মানানসই? নিজে নিজেই ভাবতে লাগলো ও।

আরাধ্য স্পর্শিয়াকে নিচে নামিয়ে বলল,
– স্পর্শ, আমার দিকে তাকাও। দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে একটা ছবি তুলি৷ খুব শখ তোমার সাথে এভাবে ছবি তোলার। এ্যাঙ্গেজম্যান্টের দিন তোমার মন মেজাজ ভাল ছিল না, আবার আমাকে ঠিকমতো চিনতেও না, তাই বলিনি।

স্পর্শিয়া আরাধ্যর চোখের দিকে তাকাল ঠিক ই, কিন্তু পরমূহুর্তেই হেসে দিল। আরাধ্য বলাতে আবারও চেষ্টা করলো। নাহ, এবারও হলো না৷ আরাধ্য বেশ রোমান্টিক লুক দিয়ে ওর দিকে তাকাচ্ছে, কিন্তু স্পর্শিয়া সাথে সাথেই ওর রোমান্সকে পন্ড করে হেসে দিচ্ছে। আরাধ্যর চোখের দিকে তাকাতেই ওর হাসি পাচ্ছে। যেখানে এক সেকেন্ডের বেশি ওর চোখের দিকে তাকাতে পারেনা স্পর্শিয়া, সেখানে এতক্ষন চোখে চোখ রেখে পোজ দিয়ে ছবি তুলবে! নাহ, আরাধ্যর এই স্বপ্ন হয়তো স্বপ্নই রয়ে যাবে।
প্রেম 💙 (Love has no limits)

#পর্বঃ ১৫

সবাই নাচছে আর স্পর্শিয়া তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। কেও ওকে ডাকছে না কেন? নাহ, গ্রাম বলে কথা। গ্রামের মধ্যে বউরা কি এভাবে নাচতে পারে নাকি? কিন্তু গান শুনলে যে ওর পা আর থামে না। কি করবে এখন ও? ধুর এর চেয়ে ভালো বাসায় চলে যাবে, গানও শুনবে না, কারও নাচও দেখবে না, তাহলে নিজেরও নাচতে ইচ্ছে করবে না। পরে কেও খুজলে বলে দিবে শরীর খারাপ লাগছিল, আর সবাই ব্যস্ত থাকায় না বলেই চলে এসেছে।

চেয়ার থেকে উঠে পা বাড়ালো যাওয়ার জন্য। হঠাৎ কেও হাত টেনে ধরতেই পেছনে তাকালো৷ আরাধ্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে ওর হাত ধরে। আশেপাশে তাকিয়ে স্পর্শিয়া আরাধ্যর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল। কে আবার দেখে কি মনে করে ফেলে বলা যায় না। কিছু একটা বলছে আরাধ্য, ওর ঠোট নড়ছে, কিন্তু এত হাই সাউন্ডের জন্য কথা শুনা যাচ্ছে না। স্পর্শিয়া ইশারা করলো যে ও আরাধ্যর কথা বুঝতে পারছে না৷ হঠাৎ সব লাইট অফ হয়ে, ডিজে লাইট অন করা হলো। আবছা আলোতে কেও কাওকে দেখতে পাচ্ছেনা। আরাধ্য স্পর্শিয়ার হাত ছেড়ে ওর কানের সামনে গিয়ে বলল,
– নাচতে না পেরে চলে যাচ্ছিলে কেন সুন্দরী?
স্পর্শিয়া চমকে গেল। আরাধ্য ছেলেও একটা বটে! সবই বুঝে ফেলে!
আরাধ্য স্পর্শিয়ার হাত ধরে ভিড়ের মধ্যে নিয়ে আসলো। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
– এবার ইচ্ছেমতো নাচ। তোমার জন্যই ডিজে লাইট অন করিয়েছি। যাতে আমার পরী বউটাকে কেও দেখতে না পারে।
স্পর্শিয়া খুশি হয়ে গেল। যাক, নাচতে পারেনি সেই আফসোস টা তো আর থাকবে না।.
.
.
.
.
.
.
.
.
স্পর্শিয়া নাচছে, আরাধ্য সামনেই দাড়িয়ে আছে৷ নিজে নাচার চেয়ে ওর নাচ দেখতেই বেশি ভালো লাগছে আরাধ্যর। মাঝেমধ্যে সিমি, পিউ, রোহান, ওরা সবাই এসে স্পর্শিয়ার সাথে যোগ দিচ্ছে, আবার চলে যাচ্ছে। স্পর্শিয়া খুশিতে বেশ কয়েকবার আরাধ্যর হাত টেনে ধরে ওর সাথেই নেচে ফেলেছে। আরাধ্যর খুব ভালো লাগছে। ছোট্ট ছোট্ট জিনিসগুলোতে মেয়েটা কত খুশি হয়ে যায়। স্পর্শিয়াকে এই মূহুর্তে দেখে মনে হচ্ছে ওর চেয়ে বেশি সুখী মানুষ দুনিয়াতে আর নেই৷ স্পর্শিয়ার হাতে আরাধ্যর দুই হাত। আরাধ্য ওর নাচ নামের লাফালাফি দেখছে আর হাসছে। হঠাৎ স্পর্শিয়া আরাধ্যর হাত ছেড়ে স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে রইলো।
– কি হয়েছে স্পর্শ? থেমে গেলে যে।
স্পর্শিয়া চুপ। কোন কথা বলছে না। একবার আরাধ্যর দিকে এক পলক নজড় দিয়ে আবার আশেপাশে তাকাচ্ছে।
আরাধ্য স্পর্শিয়ার ফ্যাকাশে চেহারা দেখে বুঝতে পারলো সিরিয়াস কিছু।
– স্পর্শ, বল। কি হয়েছে?
কাপা কাপা গলায় স্পর্শিয়া বলল,
– কিছু হয়নি।
– কিছু তো একটা নিশ্চয়ই হয়েছে আমি বুঝতে পারছি । তুমি কি ওয়াশরুমে যাবে?
– না।
– তবে?
এবার স্পর্শিয়া কেদেই দিল। আরাধ্য ভয় পেয়ে গেল ওর কান্না দেখে। কি হলো ওর আবার! কাদছে কেন! কেও দেখলে কি না কি ভাববে, তাই আরাধ্য স্পর্শিয়াকে টেনে স্টেজের পেছনে নিয়ে আসলো।

– স্পর্শ, বলো না প্লিজ কি হয়েছে? না বললে কি করে বুঝব?
স্পর্শিয়া কেদেই চলেছে। স্পর্শিয়াকে ভালো মতো পর্যবেক্ষন করতেই আরাধ্য দেখলো, স্পর্শিয়া ওর এক হাত পেটের মাঝে দিয়ে শাড়ি ধরে আছে শক্ত করে । এতক্ষনে আরাধ্য বুঝতে পারলো ওর শাড়ি খুলে যাওয়াতে এভাবে কাদছে। অন্ধকারে এতক্ষন বুঝা যায়নি, এইদিক টায় একটু আলো থাকায় তাই এখন বুঝা যাচ্ছে।
– স্পর্শ, তোমার শাড়ি খুলে গেছে, আর তুমি আমাকে না বলে এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলে?
এখনো কেদেই চলেছে স্পর্শিয়া। আরাধ্য নিজের দুই হাত দিয়ে স্পর্শিয়ার চোখের পানি মুছে দিল।
– বোকা মেয়ে। এতে কান্নার কি আছে?
স্পর্শিয়া আরাধ্যকে অবাক করে দিয়ে আবারও কেদে দিল। এবার রাগ উঠে গেল আরাধ্যর। নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে স্পর্শিয়াকে জোরে ধমক দিয়ে বলল,
– চুপ করতে বলেছিনা তোমাকে? এত কান্নার কি আছে?
মুহূর্তেই স্পর্শিয়া কান্না থামিয়ে আরাধ্যর দিকে তাকাল। আরাধ্য কঠিন দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।আরাধ্যর এইরুপ কখনো দেখেনি ও, এতদিন ওকে নরম একটা ছেলে হিসেবেই দেখেছে ও। হঠাৎ এভাবে ধমক দেওয়াতেই আতঙ্কে কান্না থেমে যায় ওর।

আরাধ্য নিজেও বুঝতে পেরেছে যে এভাবে ধমক দেওয়াটা ঠিক হয়নি। ছোট একটা মেয়ে, কখনো শাড়ি পড়েনি, তাই হয়তো খুলে যাওয়াতে ভয় পেয়ে গেছে। আরাধ্য হাটু গেড়ে স্পর্শিয়ার সামনে বসলো। শাড়ির উপর থেকে স্পর্শিয়ার হাত সরিয়ে দিল। স্পর্শিয়া খেয়ালই করলো না আরাধ্য কি করছে। এইমাত্র যেই ধমক খেয়েছে তাতেই আত্মা এখনো শুকিয়ে আছে। আরাধ্য স্পর্শিয়ার হাত সরাতেই ওর শাড়ির প্রায় অর্ধেকই খুলে গেল। স্পর্শিয়ার উন্মুক্ত ধবধবে সাদা পেট এখন আরাধ্যর চোখের সামনে। আরাধ্যর কাছে মনে হচ্ছে কোন মোহে আটকে গেছে ও। এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে স্পর্শিয়ার ছুটে যাওয়া শাড়ির অংশ হাতে নিল ও। আগে নিজের দায়িত্ব পালন করতে হবে। স্পর্শিয়ার পেটে আরাধ্যর হাতের ছোয়া লাগতেই ওর মনে পড়লো, ওর পেট উন্মুক্ত। এতক্ষনে ভয় থেকে বের হয়ে জ্ঞান ফিরলো ওর। কিন্তু আরাধ্যকে কিছু বলবে সেই সাহসও পাচ্ছে না। আরাধ্য স্পর্শিয়ার শাড়িতে কুচি দেওয়া শুরু করতেই স্পর্শিয়া বলল,
– আমাকে তো কুচি দিয়ে শাড়ি পড়ায়নি। এক পেচ দিয়ে পড়িয়েছে। কিভাবে যেন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে।
– আচ্ছা, আমি তাহলে পড়াই। তুমি দেখ ওইভাবে হয় নাকি। না হলে আমাকে বলো।
– আচ্ছা।

আরাধ্য স্পর্শিয়াকে শাড়ি পড়াতে লাগলো। এর মাঝেই বলল,
– সরি সোনা৷ অনেক বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছি। তোমাকে এভাবে ধমক দেওয়া ঠিক হয়নি। কিন্তু কি করতাম বলো, তুমি কিচ্ছু বলছিলেও না, আবার কাদছিলে তাই রাগ উঠে গিয়েছিল। সরি, স্পর্শ।
এগুলো বলতে বলতেই শাড়ি পড়ানো শেষ হয়ে গেল। আরাধ্য স্পর্শিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– এভাবে শাড়ি পড়িয়েছিল তোমাকে?
– হুম।
আরাধ্য আবার নজর দিল স্পর্শিয়ার পেটের দিকে। নাহ! এখন আর সম্ভন না। স্পর্শিয়ার পেটের উপর থেকে শাড়ি সরিয়ে গভীর চুমু খেল আরাধ্য। স্পর্শিয়া সরে যেতে নিলে আরাধ্য ধরে ফেললো। মুখ গুজে দিল ওর পেটে। স্পর্শিয়ার শরীর যেন অবশ হয়ে আসছে। দুই হাত পেটের উপর দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো স্পর্শিয়া। আরাধ্য স্পর্শিয়ার হাত দুটো সরিয়ে আবারো গভীর চুমু খেল ওর পেটে। জিহ্বার পরশ দিয়ে দিল স্পর্শিয়ার নাভীতে। স্পর্শিয়া চোখ বন্ধ করে খামচে দু হাতে শাড়ি ধরে আছে। আরাধ্যর মুখের গরম নিঃশ্বাস ওর পেটের উপর পড়ছে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সায়ান একটা মেয়ের সাথে অনেকক্ষন যাবত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে কথা বলছে। ওর এভাবে হাত নেড়ে কথা বলাটা স্পর্শিয়ার সবসময়ই খুব পছন্দের একটা জিনিস৷ কিন্তু সামনের মেয়েটা কে তা দেখা যাচ্ছে না। মেয়েটার পেছন সাইড দেখা যাচ্ছে৷ চুলগুলো বেশ লম্বা। ঘন কালো চুল৷ সায়ান সবসময়ই বলতো, লম্বা চুলের মেয়েরা নাকি খুব মায়াবী হয়। যারা সামান্য নিজের চুল কাটতে কষ্ট পায়, সে কখনো কোন মানুষকে ধোকা দিতে পারে না, তারা খুব কোমল হৃদয়ের হয়। সায়ানের এ কথাটা খুব ভালো লাগতো স্পর্শিয়ার। গর্ব হতো এত লম্বা চুল ওর নিজের আছে বলে। স্পর্শিয়া দেখেই চলেছে সায়ান আর মেয়েটার কথা বলা। অপেক্ষা করছে কখন ওর কথা বলা শেষ হবে, আর ও সায়ানের সাথে গিয়ে কথা বলবে। অবশ্য এভাবে ওকে দেখতেও ভালো লাগছে। কতদিন পরে আজ সায়ানকে দেখলো ও। হঠাৎ সায়ান মেয়েটার গালে ওর একটা হাত রাখলো। স্পর্শিয়ার বুক ধুকধুক করা শুরু করেছে। সায়ান মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরেছে। স্পর্শিয়ার কলিজাটা চিপ দিয়ে উঠলো। নাহ! এ দৃশ্য দেখা ওর জন্য সম্ভব না। চোখ বন্ধ করে ফেললো। সাথে সাথেই চোখ খুলে ফেললো আবার। দেখতে যে ওকে হবেই মেয়েটা কে? কাকে সায়ান এভাবে আদর করছে? একি! চোখ খুলে দেখে যে সব অন্ধকার। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। কয়েক সেকেন্ড যেতেই বুঝতে পারলো ও এতক্ষন স্বপ্ন দেখছিল৷ বিছানায় উঠে বসলো। টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দিল। বুকটা এখনো খুব জোড়ে জোড়ে ধুকধুক করছে, ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে, পুরো শরীর ঘেমে গেছে। নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে পানি পড়ছে৷ তৃষ্ণায় যেন গলা কাঠ হয়ে ফেটে যাচ্ছে। পাশের টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে সবটুকু খেয়ে ফেললো। চোখের পানি মুছলো, নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। কি ছিল এটা? এমন স্বপ্ন কেন দেখল? ভালো লাগছে না ওর। আজ এতদিন পর হঠাৎ সায়ানকে স্বপ্নে দেখলো কেন? আর ওই মেয়েটা? ওই মেয়েটা কে ছিল? নাহ! এটা তো শুধুই একটা স্বপ্ন ছিল। সায়ানকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে৷ ফোনটা হাতে নিল সায়ানের প্রোফাইলে ঢুকার জন্য। তখনি মনে পড়লো সায়ান তো নিজেই ওকে ব্লক করে দিয়েছিল। মাথা কাজ করছে না ওর। সব গুলিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা, একটা কল দিবে কি সায়ানকে? সায়ান জিজ্ঞেস করলে বলবে খুব মিস করছিল তাই কল করেছে৷ শুধু দুইটা মিনিট কথা বলবে৷

সায়ানকে কল দিতে যাবে তখনি আরাধ্যর মেসেজ নজড়ে পড়লো স্পর্শিয়ার। মেসেজটা ওপেন করলো। “I miss u sona. Good night” লিখা। মেসেজ টা ২:৪৫ এ সেন্ট করেছে, এখন ৩:২৮ বাজে। আচ্ছা, সায়ানকে কল দিলে তো আরাধ্যকে ঠকানো হবে। এতক্ষণে যেন ওর মাথা ঠিকঠাক মতো কাজ করা শুরু করেছে। নাহ, কল দিবে না সায়ানকে। আরাধ্যকে শুধু শুধু কেন ঠকাবে? আচ্ছা, এখন কি আরাধ্যকে ঠকানো হচ্ছে না? কারন, আরাধ্য তো সায়ানের ব্যাপারে কিছুই জানে না। ও যখন জানবে তখন কি হবে? আরাধ্য তো ওর ব্যাপারে কোন কিছু না জেনেই ওকে এত ভালোবাসছে। আর, যখন সব জানবে তখন?

অনেকক্ষন ভেবে চিন্তে স্পর্শিয়া সিদ্ধান্ত নিল আরাধ্যকে সব বলে দিবে সায়ানের ব্যাপারে। তারপর যা হওয়ার হবে৷ লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ভালো লাগছে না। মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে। কান্না আসছে। কি ছিল ওর লাইফ, কোন পর্যায়ে ছিল, আর এখন ও কোন মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। যাকে ভালবেসেছে তাকে পেল না, আর যে ওকে ভালোবাসে তাকে পুরোটা দিয়ে ভালবাসতে পারছে না। এপাশ ওপাশ করছে। ঘুম আসছে না। আবার খাটে উঠে বসলো। নিঃশব্দে খাট থেকে নামলো, নয়তো পায়েল জেগে যেতে পারে। দরজা খুলে বাইরে বের হলো। একটু উঠানে বসতে ইচ্ছে করছে, খোলা হাওয়াতে থাকলে হয়তো ভাল লাগবে।

আরাধ্য জেগেই ছিল। ওই ঘর থেকে দরজা খোলার আওয়াজ পেতেই জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে স্পর্শিয়া ঘর থেকে বের হচ্ছে। আরে, ও এত রাতে বাইরে বের হচ্ছে কেন? কিছু হলো নাকি? আরাধ্য তাড়াহুড়ো করে ঘড় থেকে বের হলো।

স্পর্শিয়া উঠানে বসে আছে। আরাধ্য এসে ওর পাশে বসতেই ভুত দেখার মতো চমকে যায়। হয়তো আরেকটু হলে চিৎকার ই দিত।
– আরে বাবা, রিলাক্স। ইটস মি৷ আরাধ্য। তুমি বের হলে ঘর থেকে, তা দেখেই চলে আসলাম। ভাবলাম কিছু হলো নাকি।
– নাহ৷ ঘুম আসছিল না।
– সিরিয়াসলি? ঘুমকুমারীর আবার ঘুম না আসে কি করে?
– না, ঘুমিয়েছিলাম। কিন্তু ঘুম ভেঙে গেছে। তুমি ঘুমাওনি?
– না। ঘুম আসছিল না আমারও।
– ওও!
– স্পর্শ, তোমার কি কোন কারনে মন খারাপ?
স্পর্শিয়া এক নজর আরাধ্যর দিকে তাকালো। আরাধ্যর চোখে জিজ্ঞাসা। ভাবতে লাগলো, আরাধ্যকে কি এখনি সায়ানের কথাটা বলার জন্য উপযুক্ত সময় ? নাকি পরে বলবে?

.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
স্পর্শিয়া আর আরাধ্য পাশাপাশি হাটছে। কাচা রাস্তা, দুপাশে গাছ, শান্ত নির্জন পরিবেশে ভালই লাগছে ওদের হাটতে। যদিও স্পর্শিয়া কিছু বলেনি, কিন্তু আরাধ্য ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে যে কোন না কোন কারনে স্পর্শিয়ার মন খারাপ। সেজন্যই এখানে হাটতে নিয়ে এল ওকে। যদি মন ভালো হয়ে যায়! কি হয়েছে মেয়েটার কে জানে!
– স্পর্শ।
– হুম।
– খারাপ লাগছে তোমার? খারাপ লাগলে চলো ফিরে যাই।
– না। ভালই লাগছে। পরিবেশটা শান্ত খুব। আমার ভালো লাগে এরকম পরিবেশে।
– আগেও কখনো এরকম গভীর রাতে হেটেছ?
– নাহ। সেই সুযোগ কখনো হয়নি। নানুবাড়িতে খুব কমই যাওয়া হয়েছে। যখন যেতাম তখনও চেষ্টা করতাম বের হওয়ার। কিন্তু কখনো সম্ভব হয়নি। মা আর খালামনিরা করা নজর রাখত আমাদের উপর, আমরা বের হওয়ার সুযোগ খুজতাম বলে।
– হুম। তাহলে বুঝা গেল তুমিও আমার মতোই ।
স্পর্শিয়া ভ্রু কুচকে বলল,
– কেন? আন্টি কি তোমাকেও রাতে বের হতে দিত না?
আরাধ্য হেসে দিল।
– আরে না। সেটা বলছি না। আমিও গ্রামে রাতের পরিবেশে হাটতে পছন্দ করি, তুমিও পছন্দ কর। সেটাই বললাম।

আকাশে মিটিমিটি তারা জ্বলছে। মাঝে বিশাল বড় এক চাঁদ। চাদের আলোতে সব খুব পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। আরাধ্য স্পর্শিয়ার হাত ধরলো। দুজন দুজনের দিকে এক নজর তাকালো। আরাধ্য গান শুরু করলো,
“ভালো লাগে হাটতে তোর হাত ধরে,
……………. পারবো না, আমি ছাড়তে তোকে, পারবো না আমি ভুলতে তোকে, পারবো না ছেড়ে বাচতে তোকে, হয়ে যা রাজি একবার। ”

স্পর্শিয়া বেশ মনোযোগ দিয়ে গান শুনছে। মনটা ভালো লাগছে এখন। আরাধ্যর গলা বেশ সুন্দর। চেষ্টা করলে হয়তো ভাল সিংগার হতে পারতো। গান শেষ করে আরাধ্য হাটা থামিয়ে দিল। স্পর্শিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আরাধ্যর দিকে তাকাল।
আরাধ্য কিছু না বলেই হাটু গেড়ে নিচে বসে পড়লো। স্পর্শিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
– কি হয়েছে?
– প্লিজ, স্পর্শ। কোন কথা না। আমি যা করছি আমাকে করতে দাও।
আরাধ্য স্পর্শিয়ার দু পায়ের জুতো খুলে দিল। স্পর্শিয়ার ডান পা নিজের কাধে তুলে নিল আরাধ্য। পা এত উপরে উঠাতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিল স্পর্শিয়া, আরাধ্য ধরে ফেললো। স্পর্শিয়া অবাক হচ্ছে। কি করছে ও? পা কাধে কেন তুলল? কেমন বেমানান লাগছে। পা কেও কাধে তুলে নাকি?
এবার আরাধ্য পকেট থেকে একটা পায়েল বের করে স্পর্শিয়ার পায়ে পড়িয়ে দিল। হাত দিয়ে স্পর্শিয়ার পায়ের পাতা আর আঙুল ছুয়ে দিচ্ছে।
– স্পর্শ, জানো তোমার পা আমার পায়ের উপরে না নিয়ে কাধের উপরে নিলাম কেন?
স্পর্শিয়া একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরাধ্যর দিকে।
– পায়ের উপরে তো সবাই পা তুলে নেয়, আমি না হয় কাধেই নিলাম। তোমার জায়গাটা তো আমার জীবনে অনেক উপরে, তবে তোমার পা টা আমার পায়ের উপরে রেখে অসম্মান করবো কেন?
আরাধ্য স্পর্শিয়ার পা কাধের থেকে নামিয়ে উঠে দাড়ালো। দুইহাতে স্পর্শিয়ার গাল ধরে বলল,
– আমি সবকিছুতে তোমার সাথে আছি। সবসময় আমাকে তোমার পাশে পাবে। ভালবাসি যে তোমাকে অনেক। হারাতে চাই না তোমাকে। তোমার মন খারাপ থাকলে যে আমারও খারাপ লাগে। প্লিজ কখনো এভাবে মন খারাপ কর না। কষ্ট হয় আমার।

স্পর্শিয়া কেদে দিল। জড়িয়ে ধরলো আরাধ্যকে। আরাধ্য অবাক হয়ে গেল। স্পর্শিয়া তো এভাবে ওকে জড়িয়ে ধরে না। ওর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
– স্পর্শ, প্লিজ কেঁদো না। আই ডোন্ট নো, তোমার কি হয়েছে, কেনই বা মন খারাপ। কিন্তু এতটুকু বলতে পারি, খারাপ সময় বেশিক্ষন থাকে না।
আরাধ্য স্পর্শিয়ার দু চোখ মুছে দিল। কপালে আদরের পরশ দিয়ে দিল। স্পর্শিয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
– এই মেয়ে। কান্না থামাবে? নাকি সুড়সুড়ি দিব?
স্পর্শিয়া এবার হেসে দিল।
– না, সুড়সুড়ি দিও না। আমি হাসতে হাসতে পেট ফেটে মরে যাব।
– ওহ! আচ্ছা! এটাই তবে বেগম সাহেবার উইক পয়েন্ট! এই তো পেয়ে গেছি।
– কিহ!
– না, কই? কিছু না তো। সুড়সুড়ি তো দিচ্ছি না।
– চলো, বাসায় ফিরে যাই। একটু পর ফজরের আজান দিয়ে দিবে। তখন কেও একসাথে দেখে ফেললে সমস্যা হবে।
– হুম চলো।

আরাধ্য ভাবতে লাগলো, কি হয়েছে হাসিখুশি মেয়েটার? হঠাৎ এভাবে মনমরা হয়ে গেল কেন? আবার কান্নাও করে দিল। কোন সিরিয়াস কিছু না তো যা ও জানে না!

.
.
.
.
.
.
স্পর্শিয়ার ঘুম ভাঙলো সকাল ৯ টায়। সময় দেখেই চোখ ছানাবড়া, জিহ্বায় কামড় দিল। শ্বশুরবাড়ি এসে এত দেড়ি করে ঘুমালে মানুষ বলবে কি? ধুর! কেন যে এলার্ম দিয়ে রাখল না। রাগ উঠছে নিজের উপর।
চুল বাধতে বাধতে ঘড় থেকে বের হয়ে উঠানে যেতেই নিশাত চৌধুরীর সাথে দেখা।
– আমার মেয়ে উঠেছে তবে এতক্ষনে!
– আন্টি, সরি৷ আসলে বাসায় সবসময় আম্মু ডেকে তুলে। আজ কেও ডাকেনি তাই দেড়ি হয়ে গেল৷ নেক্সট টাইম থেকে খেয়াল রাখবো।
– আরে ধুর বোকা মেয়ে। তোমাকে কিছু বলেছি নাকি? উঠেই বা কি করতে? কোন কাজ তো নেই।
এরই মধ্যে আরাধ্য আর ছেলেদের ফুল গ্রুপ স্পর্শিয়ার দিকে তাকিয়ে জোড়ে জোড়ে হাসছে। ওদের দিকে তাকিয়ে স্পর্শিয়া বুঝার চেষ্টা করলো হচ্ছে টা কি। ওরা হেসেই চলছে ওর দিকে তাকিয়ে। কোন কারন খুজে পেল না স্পর্শিয়া৷
নিশাত চৌধুরী ধমক দিয়ে বললেন,
– এ্যাই তোরা হাসছিস কেন? কি হয়েছে?
আরাধ্য বলল,
– তোমার পিচ্চি বউ মার দিকে একটু নজর তো দাও। উলটা পায়জামা পরে দাঁড়িয়ে আছে।
সবাই আবারো হাহা করে হাসছে।
এবার স্পর্শিয়া নিচে তাকাল। সত্যিই পায়জামা উলটা পড়ে আছে ও। দিল এক দৌড়। ছি! ছি! মান সম্মানের কিছু আর রইলো না ওর কারও সামনে। আরাধ্যও কত খারাপ, কিভাবে সবার সাথে তাল মিলিয়ে মজা নিচ্ছিল!
.
.
.
.
.
.
.
.
আরাধ্য স্পর্শিয়াকে খুজছে অনেকক্ষন যাবত৷ পিচ্চিটা নিশ্চয়ই রাগ করে বসে আছে৷ কিন্তু ও কোথায়? দেখা যাচ্ছে না আশেপাশে। খুজতে খুজতে স্পর্শিয়ার দেখা মিললো পুকুরের সামনে। পুকুরের ঘাটলায় পা ভিজিয়ে বসে আছে ও। বাসার সামনে একটা পুকুর থাকাতে এই ঘাটলায় সাধারণত কেও আসে না। নিরিবিলি ই থাকে জায়গাটা। আরাধ্য পেছন থেকে গিয়ে স্পর্শিয়ার চোখ ধরলো। স্পর্শিয়ার ধারনা ছিল সিমি বা পিউ ওরা কেও হয়তো ওর চোখ ধরেছে। কিন্তু আরাধ্যর হাত ধরেই বুঝতে পারলো এটা ও ছাড়া আর কেও না। বললো,
– এমন বুইড়া কটকটা হাতের হাড্ডি তোমার ছাড়া আর কারও হতেই পারে না আরাধ্য।
আরাধ্য সাথে সাথে চোখ ছেড়ে দিয়ে বলল,
– কিহ! আমি বুইড়া?
– ইয়াং তো কোন দিক থেকে লাগে না।
– কত অষ্ট্রেলিয়ান মেয়ে আমার উপর ফিদা তুমি জান?
– সেগুলা অষ্ট্রেলিয়ান মেয়ে না, অষ্ট্রেলিয়ান গরু। তোমার উপর গরুরাই ক্রাশ খাবে হিহিহি। পারলে বাঙালী মেয়েদের ঘায়েল করে দেখাও।
– তুমি ঘায়েল হওনি?
– মোটেও না।
আরাধ্য স্পর্শিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
– তাহলে কালকে রাতে এত আদর করলে কেন?
স্পর্শিয়া আরাধ্যকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। বললো,
– কথা বলব না তোমার সাথে। অনেক খারাপ মানুষ তুমি। এক তো তখন সবার সামনে কিভাবে হাসলে, আর এখন কি সব বলছ। আর কিছু করবোও না। যাও সরো।
– আরে! আমার বিবিজান। রাগ করো কেন? আমি তো তখন জাস্ট সবার দেখাদেখি হাসছিলাম।
– হুহ।
-খাবে?
– কি?
আরাধ্য পকেট থেকে চকলেট বের করে স্পর্শিয়ার হাতে দিল। স্পর্শিয়া সাথে সাথে খুশি হয়ে চকলেট নিয়ে নিল।
– চকলেট নিয়েছি, কিন্তু আমার রাগ কিন্তু কমেনি৷ তুমি খুব পচা।
– তো, কি করলে রাগ কমবে আমার বিবিজানের?
– পুকুরে গিয়ে ডুব দিয়ে আসো, তাহলেই রাগ কমবে৷
আরাধ্য সাথে সাথে সিড়ি বেয়ে নিচে নামা শুরু করলো।
– আরে, আরে! করছ কি? মজা করেছি৷ উপরে আস।
– সত্যি মজা করেছ?
– হ্যা, সত্যি।
– তাহলে বল, উপরে আসলে আদর দিবে?
– ছিঃ!
– তাহলে নামলাম পুকুরে ডুব দিতে৷
– যাও। নামো। গেলাম আমি।
– আরে, দাড়াও। যেও না। তুমি একবার বললেই তো আমি শুনি৷ পুকুরে নামবো না তো আমি৷ তোমার কথা অমান্য করার ছেলে কি আমি নাকি?
আরাধ্য উপরে এসে স্পর্শিয়ার পাশে বসলো৷
– এত পচা কেন তুমি? সারাদিন মাথায় এসব জিনিসই ঘুরঘুর করে তাই না?
আরাধ্য আস্তে করে বলল,
– কি বউ পেলাম আমি, একটু আদর ই তো চাইলাম, তাতে কেমন করে৷
স্পর্শিয়া চোখ বড় বড় করে বলল,
– কি বললে?
– কই না, কিছু বলিনি তো৷ তুমি না, একটু বেশি বেশিই শুনে ফেল৷
– যা শোনা দরকার তাই শুনি।
– স্পর্শ, তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি।
– কি?
– চোখ বন্ধ কর।
স্পর্শিয়া চোখ বড় বড় করে বলল,
– কেন? কি করবে?
– আচ্ছা আমি তোমাকে চোখ বন্ধ করতে বললে সবসময় এত বড়বড় করে ফেল কেন ?
– তুমি যে খুব ভালো, চোখ বন্ধ করলে যে কত উলটা পালটা আকাম কুকাম করে ফেল তাই।
– এখন আকাম কুকাম করবো না৷ চোখ বন্ধ কর না প্লিজ।
স্পর্শিয়া চোখ বন্ধ করে ফেলল।

নিজের হাতে কিছু একটা খোচা লাগার অনুভব হতেই স্পর্শিয়া চোখ খুলল। খুব অবাক হলো। আরাধ্য মেহেদীর কোণ নিয়ে খোঁচাখোঁচি করছে ওর হাতে।

– এ্যাই তুমি কি করছ?
– চোখ বন্ধ কর৷ খুললে কেন?
– আগে বল করছ টা কি?
আরাধ্য হাসি হাসি মুখ করে বলল,
– এটাই তো সারপ্রাইজ। আজকে নাকি মেয়েদের বাড়িতে মেহেদীর অনুষ্ঠান। ভাবি, পিউ, ঝিনু, বাকি সব মেয়েদের দেখলাম উঠানে বসে মেহেদী দিচ্ছে। তুমিও তো দিবে। তাই চিন্তা করলাম আমিই মেহেদী নিয়ে এসে তোমাকে দিয়ে দেই। ওদের থেকে চুরি করে মেহেদী নিয়ে এসেছি তোমার জন্য।
স্পর্শিয়া দুই চোখ কপালে তুলে বলল,
– তুমি মেহেদী দিয়ে দিতে জান? আর কয়টা মেয়েকে মেহেদী দিয়ে দিয়েছ?
– আর কাওকে দিয়ে দেইনি। তুমিই প্রথম। সব মেয়েদের তো মেহেদী দিতে দেখি, কত সহজেই দেয়৷ এটা আবার জানার লাগে নাকি? এবার চোখ বন্ধ কর।
এ কথা বলেই স্পর্শিয়ার উত্তরের অপেক্ষা না করে আবারও মেহেদী কোন থেকে মেহেদী বের করায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো আরাধ্য।

বেশ কিছুক্ষন কোনের সাথে গুতাগুতি করে আরাধ্য বলল,
– স্পর্শ, মেহেদী টা মনে হচ্ছে ভাল না। বের হচ্ছে না। তুমি একটু ওয়েট কর আমি আরেকটা নিয়ে আসি৷
স্পর্শিয়া চোখ খুলে মেহেদী দেখে হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। আরাধ্য বোকা বোকা চেহারা করে স্পর্শিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
– তুমি এভাবে হাসছ কেন স্পর্শ?
– তুমি এটা কি করেছ?
– আমি তো মেহেদী দেওয়া শুরুই করিনি এখনো। কি করলাম আবার?
– আরে গাধা। মেহেদীতে সমস্যা না। মেহেদীর কোনের মুখে চিকন একটা পিন লাগিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখা আছে দেখ। ওইটা খুলতে হবে, নয়তো মেহেদী তো বের হবে না কোন থেকে।
আরাধ্য মাথা চুলকিয়ে বলল,
– ও! আচ্ছা। জানতাম না। এই না হলো আমার ইন্টেলিজেন্ট বউ। আল্লাহ মনে হয় আমার বুদ্ধি একটু একটু করে তোমার মধ্যে দিয়ে দিচ্ছে।
– হুম! আসছে আমার বুদ্ধিওয়ালা গাধা।

আরাধ্য স্পর্শিয়ার হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে, আর স্পর্শিয়া চোখ বন্ধ করে আছে। বেশ কয়েকবার চোখ খোলার চেষ্টাও করেছে, কিন্তু আরাধ্য ওকে চোখ খুলতে দিচ্ছে না। এরই মধ্যে সবাই এসে একবার ওদের মজাও নিয়েছে। তখনও আরাধ্য ওকে চোখ খুলতে দেয়নি। যখন স্পর্শিয়া চোখ খুলার সুযোগ পেল তখন নিজের হাত দেখে ওর চোখ ছানাবড়া। আরাধ্য খুব খুশি খুশি ভাব নিয়ে স্পর্শিয়াকে জিজ্ঞেস করল,
– কেমন হয়েছে বল না।
স্পর্শিয়া হাসবে না কাদবে তা ই তো বুঝতে পারছে না, আবার বলবে কি!

আরাধ্য ওর দুই হাতে দু রকমের চিত্র একে রেখেছে। মনে হচ্ছে সদ্য ড্রইং শিখতে যাওয়া কোন বাচ্চা ওর হাত কে নিজের ড্রইং খাতা বানিয়েছে। স্পর্শিয়ার একহাতে গ্রামের দৃশ্য একেছে আরাধ্য। গ্রামের দৃশ্য না ঠিক, একটা আঁকাবাঁকা ঘর, মনে হচ্ছে ঝড়ের কবলে পড়েছিল ঘড় টা, আর তারসাথে দুটো গাছ যেগুলোর অবস্থা আরও করুন। আরেক হাতে চারটা মানুষ। একটা চশমা পরা লোক, একটা ভুটকু মহিলা, আর দুটো মেয়ে বাচ্চা। বাচ্চাগুলোকে আকতে গিয়ে হয়তো আরাধ্য হাত খুব নাড়িয়েছিল। তাই, বাচ্চাগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে ওড়া খেলতে গিয়ে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি করেছে।

স্পর্শিয়ার কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে আরাধ্য এবার আরও হাসি হাসি মুখ করে বলল,
– তুমি হয়তো কিছু বুঝতে পারছ না স্পর্শ। আমি একটু এক্সপ্লেইন করি?
স্পর্শিয়া শুধু একবার করুন দৃষ্টিতে আরাধ্যর দিকে তাকালো। আর আরাধ্য খুশি হয়ে এক্সপ্লেইন করা শুরু করলো।
– স্পর্শ, দেখ। এই যে এই ঘরটা, এটা আমাদের ঘর। তোমার হাত তো খুব ছোট, তাই বিল্ডিং আকা সম্ভব নয় বলে এই ছোট্ট ঘরটা একেছি৷
– এই ঘরে কি গত রাতে তুফান হয়েছিল আরাধ্য?
– না, কি বলো স্পর্শ। তুফান হবে কেন? তুমি হাত খুব নাড়াচ্ছিলে, তাই এমন নষ্ট হয়ে গেছে৷
– আমি হাত নাড়ালাম কখন? তুমি নাড়াচ্ছিলে মিথ্যুক।
– তুমিই তো নাড়ালে। আমি তো খুব সুন্দর করে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছিলাম। বাদ দাও, দেখ এই যে এই হাতে দেখ। এই ছেলেটা আমি, আর এটা তুমি।
– এটা আমি? এই ভুটকু মহিলাটা আমি? তোমার চোখে সমস্যা কবে থেকে শুরু হয়েছে আরাধ্য?
– আরে, ধুর বোকা মেয়ে৷ চোখে সমস্যা না। আমাদের বেবি হওয়ার পরে তো তুমি এমনই মোটা হয়ে যাবে।
– কিহ!
– হ্যা। কেন তুমি জানো না যে বেবি হওয়ার পরে সব মেয়েরা মোটা হয়ে যায়?
স্পর্শিয়া কিছু বলতে নিচ্ছিল ওকে থামিয়ে দিয়ে আরাধ্যই বলল,
– থাক, তুমি তো বাচ্চা মানুষ। এত কিছু জানবে কি করে? আস্তে আস্তে সব শিখে যাবে।
আরাধ্য আবার স্পর্শিয়ার হাতে আঙুল দিয়ে দেখাল,
– এই যে বাচ্চা দুটো দেখছ, এগুলো আমাদের বেবি, সুবহানা আর কায়নাত।
– সুবহানা আর কায়নাত?
– হ্যা, আমাদের মেয়ে।
– তুমি মেয়েদের নামও ঠিক করে ফেললে?
– তোমার নাম পছন্দ হয়নি?
– হ্যা, নামগুলো তো খুব সুন্দর কিন্তু বিয়েই হলো না সেখানে মেয়েদের নাম!
– বিয়ে হয়নি, কিন্তু হবে তো!
– আচ্ছা, দুটো মেয়ে, কিন্তু ছেলে কই?
– আই লাভ বেবি গার্লস৷ দুটো কেন, দশটা মেয়ে বেবি হলে আমি তো তাতেও খুশি।
– ওহ! তাই? আর আমি? আমার কথা কে চিন্তা করবে? তুমি তো তোমার মেয়েদের পেয়ে আমাকে ভুলেই যাবে। আর আমার কন্ডিশন কি হবে তা একবারও ভেবেছে? খুব খারাপ তুমি, খুব। যদিও আমার মেয়ে বাবু পছন্দ, তবুও আমার তার সাথে একটা ছেলে বাবু চাই চাই চাই। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে থাকবো, তুমি তোমার মেয়েদের নিয়ে থেকো।
এতকিছু বলে স্পর্শিয়া আরাধ্যর দিকে তাকাতেই লজ্জা পেয়ে গেল। আরাধ্য দুষ্ট একটা চাহনি দিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে৷ স্পর্শিয়া অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল৷ ছিঃ, ছিঃ কি বলে ফেললো এসব৷ কি লজ্জাটাই না লাগছে ওর।
আরাধ্য স্পর্শিয়ার কানের কাছে মুখ এনে বলল,
– যত বেশি বাবু নিবে তাতে লাভ তো আমারই। একটা কেন, আরও পাচটা ছেলে বাবু নিও।
স্পর্শিয়া আরাধ্যকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল।
– ছিঃ! তুমি অনেক পচা।
আরাধ্য স্পর্শিয়াকে দু হাতে কাছে টেনে নিয়ে বলল,
– পঁচা কোন কাজ তো এখনো শুরুই করলাম না। একটু করি?
স্পর্শিয়া আরাধ্যকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে উঠে চলে গেল। আরাধ্য ওর চলে যাওয়ার পথে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো।
.
.
.
.

স্পর্শিয়া রেডি হচ্ছে। সবাই মেয়ের বাড়ির মেহেদীর অনুষ্ঠানে যাবে। স্পর্শিয়ার হাতের মেহেদী দেখে সবাই সে কি হাসাহাসি। আর ওদিকে আরাধ্য একটু পরপর এই ঘড়ের সামনে এসে ঘুরঘুর করছে স্পর্শিয়াকে দেখার জন্য। ওর মন খারাপ স্পর্শিয়ার সাথে যেতে পারবে না বলে। কি এক নিয়ম বানিয়েছে, মেহেদীর অনুষ্ঠানে শুধু মেয়েরাই যেতে পারবে, এটা কোন কথা হলো নাকি!
স্পর্শিয়া ঘড় থেকে বের হতেই আরাধ্য হা করে তাকিয়ে আছে। লাল টকটকে একটা জামা পড়েছে ও। যেন লাল পরি। আরাধ্যর চোখ যেন আটকে গেছে। সবাই ওকে উদ্দেশ্য করে হাসতেই আরাধ্যর ধ্যান ভাঙল।
– তোরা সবসময় আমাকে ডিস্টার্ব করিস কেন এভাবে?
– বউকে দেখলেই হবে? বোনদেরও দেখ। কি সুন্দর করে সেজেছে বোনেরা৷
– হুম, পেত্নী সেজেছে ।
– তুই পেত্নী।
– তোরা পেত্নী। বেস্ট তো অলওয়েজ ই আমার বউ।
– বেশি কথা বললে তোর বউকে ভুতের কাছে দিয়ে আসবো।
– তোদের মতো ভুতের সাথে আমার সুন্দরী বউকে পাঠাচ্ছি কত রিস্ক নিয়ে, আবার আরেক ভুতের কথা বলিস।

ওরা আর কথা না বাড়িয়ে হাসতে হাসতে বের হয়ে গেল যাওয়ার জন্য। স্পর্শিয়া ভালই বুঝতে পারলো আরাধ্যর খুব খারাপ লাগছে। ওর নিজেরও কেমন যেন লাগছে আরাধ্যকে ছাড়া যেতে। একবার সাহস করে পেছনে তাকালো। আরাধ্য করুন চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

(চলবে)

লিখাঃ Dewan Oishi

{ Oishi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here