#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:২২
–কি হলো খাও,আমি স্পেশালি তোমার জন্য অর্ডার করেছি আর তুমি যেটা অর্ডার করেছিলে ওটা আমি খেয়ে নিয়েছি।
উনি ক্লোজ আপের এডের হাসিটা দিলেন।
–আপনি?
–হুম আমি।এখন আর কথা বাড়িও না।খাও
–খাবোনা আমি
–কেন?
–আমার ইচ্ছা তাই,যান এখান থেকে।
–আগে খেয়ে নাও চলে যাচ্ছি।না,,খাবো না…
আমি ব্যাগ নিয়ে ওনার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলাম,উনি খপ করে আমার হাত ধরে ফেলে।আমি তো চোখ বড়বড় করে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি,আশেপাশের সবাই তাকিয়ে আছে আর মেয়েরা তো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।
–হাত ধরেছেন কেন???হাত ছাড়ুন সবাই তাকিয়ে আছি।
উনি আমার হাত ধরে হ্যাচকা টান দিলেন আমি সোজা ওনার কোলে,আমাদের দেখে ক্যান্টিনে যারা যারা ছিলো সবাই বসা থেকে উঠে পড়েছে,এই সিন দেখে সবার চোখ বেরিয়ে আসছে আর আমি তো ফ্রিজড।কাপা কাপা গলাই বললাম,,
–কি কি করছেন?
আমার কথাই পাত্তা না দিয়ে এক হাত দিয়ে আমার কোমর জড়িয়ে ধরলেন,ওনার স্পর্শে আমি আরো ফ্রিজড।এক হাতে আমার কোমর জড়িয়ে আছে অন্য হাতে বার্গার নিয়ে আমার মুখে ধরলেন,
–খাও।
–…………..(আমি এখনো চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছি)
–খাও না
–সবাই তাকিয়ে আছেএএএ(আমি দাতে দাত চেপে বললাম)
উনি এদিক ওদিক তাকালেন,,তারপর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,,
–খাও সোনা(আস্তে করে)
–সোনাআআআআ???
–হুম সোনা
–দেখুন ছাড়ুন কিন্তু সবাই তাকিয়ে আছে।
–সো হোয়াট আই ডোন্ট কেয়ার…
–বাট আই ডু।
উনি আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেন তারপর চারিদিকে তাকিয়ে,
–নিজেরদের কাজ নেই কোন??
ওণার এক কথাই সবাই হুড়মুড় করে নিজেদের জায়গায় বসে পড়ে তারপর আমার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বলেন,,
–নাও এবার খাও।
আমি চারেপাশে তাকিয়ে বোকা বনে গেলাম,ওনার দিকে বোকার মতো চেয়ে রইলাম।
–খাচ্ছো না কেন???দেখ তোমার বান্ধবি ও হা করে ফেলেছে আর তুমি আমাকে দেখায় ব্যাস্ত।আরে আল্লাহ পাশে থাকলে সারাজীবন দেখার সুযোগ পাবে এখন খাও তো।খাও খাও…
ওনার কথা আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গেলো।উনি এবার আরো জোরে আমার কোমর চেপে ধরলেন,আমি আবারো কেপে উঠলাম।
–ছা ছাড়ুন কি করছেন এসব?সবাই
–কেউ দেখছে না(আমি চারেপাশে তাকিয়ে দেখি সত্যিই কেউ তাকাচ্ছে না এবার)
–দেখুক বা না দেখুক ওরা তো খারাপ ভাববে,প্লিজ ছাড়ুন।
–খেয়ে নাও ছেড়ে দেবো
–আমি খাবো না
–না খেলে ছাড়বোও না।
উনি যে কথা শুনার বান্দা না তা আমি জানি।বাধ্য হয়ে এক কামড় নিলাম।
–এই তো গুড গার্ল…
–এবার ছাড়ুন
উনি ছেড়ে দেই।আমি কোল থেকে উঠে ব্যাগ টা নিয়েই ওনার দিকে রাগি লুক দিয়ে চলে যায়।মীরা এখনো হা করে তাকিয়ে আছে ও আজ এমন কিছু দেখার জন্য হয়তো প্রস্তুত ছিলো না।
বাসায় এসে রাগে রাগে ঢুকছি।কোনদিকে খেয়াল না করেই ওপরে চলে যাচ্ছিলাম।
–আরে শালি সাহেবা দাড়াও।
সৌরভ ভাইয়াকে দেখে দাড়ালাম।বাসার সবাই বসে আছে।
–দুলাভাইকে না দেখেই চলে যাচ্ছো যে শালি সাহেবা?
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম কিন্তু মনে মনে তো এখনো রাগ আছে।তাও সবার সামনে রাগটা দেখালাম না।আমি ওনার কাছে গিয়ে বাবার পাশে বসলাম।
–কেমন আছো বলো?
–এই তো ভালোই।আপনি?
–আমিও ভালো আছি তবে তুমি কি কোন কারনে রেগে আছো নাকি?মুখ দেখে মনে হচ্ছে
–কই না তো?রাগবো কেন?(আমি আরেকটু হাসি দেয়ার চেষ্টা করলাম)
–যাক ভালো,শোন আজ সন্ধ্যায় রেডি থেকো,তোমার আপু আর তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবো একটু।
–আপনারাই যান ভাইয়া আমি যাবো না।
(এমনিতেই রেগে আছি আবার বাইরে যেতে বলছে।সব মিলিয়ে আরো রাগ বেড়ে গেলো)
–না না তা হবে না।
–হ্যা বনু প্লিজ চল না।তুই না আমার সোনা বোন,চল প্লিজ তোকে ছাড়া কি আমার ভালো লাগবে??(আপুর মুখে এরকম আদর মাখা কথা শুনে আমি তো হা।যে আমার সাথে ভালো করে কথা তাই বলে না সে কিনা,,,আজব ব্যাপার)
–হ্যা মা যা(বাবা ও বলছে)
সবাই এতো জোরাজুরি করলো যে না বলতে পারলাম না।সন্ধ্যার একটু আগ দিয়েই সৌরভ ভাইয়া এসে গেছে।আপু তো শাড়িটাড়ি পরে সেই সাজ দিছে।কিন্তু আমার কেন জানি না একটুও মুড নাই।ওয়ারড্রব থেকে কফি কালারের একটা লং গাউন আর সেম কালারের হিজাব পরে নিলাম।ঠোটে লিপবাম আর মুখে পাউডার দিয়ে নিচে গেলাম।
–বাহ!আমার শালি সাহেবা যে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।
সৌরভ ভাইয়া হেসে বললো আমি ও উত্তরে মুচকি হাসলাম।ভাইয়া ড্রাইভ করছে আর আপু বসেছে ওনার পাশে।আমি পিছনের সিটে।
–আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি ভাইয়া?
–এখন যাচ্ছি মুভি দেখতে।শাহরুখ খানের নতুন মুভি রিলিজ করেছে।
এমনিতে ভালো লাগছিলো না,আর ওই অসভ্যটার ওপরেও রাগ আছে কিন্তু আমার প্রিয় নায়কের মুভি দেখতে যাচ্ছি বলে কিছুটা হালকা লাগছে।আমি জানালা দিয়ে সন্ধ্যার ব্যস্ত শহর দেখছি।হটাত সৌরভ ভাইয়া খুব জোরে ব্রেক কষেন।আমরা সামনের দিকে হুমড়ি খাই..
–কি করছো সৌরভ মেরে ফেলবা নাকি?(আপু রেগে বলে)
–সরি সরি জান,আর হবে না।নিহীন তোমার লাগেনি তো?
–না ভাইয়া।
–ওকে
আমি আবার জানালার বাইরে চোখ দিলাম।হটাত আমার পাশে হুড়মুড় করে কেউ বসে পড়লো,
–চল ভাইয়া,
–এতোক্ষনে টাইম হলো আপনার??
–সরি রে একটা কাজ পড়ে গিছিলো এবার চল মুভি শুরু হয়ে যাবে তো।
–আপনি এখানে??
–আরেএএএএ তুমি এখানে??(উনি এমন একটা ভাব নিলো যে আমাকে দেখিইনি)
–আপনি এখানে কি করছেন??
–তুমি যা করছো।বসে আছো তো,আমিও বসে আছি।হিহিহহহ…
–ভাইয়া উনি কি আমাদের সাথে যাবে নাকি??
–হ্যা নিহীন।
–কি??উ উনি গেলে আমি যাবো না।আমি নেমে যাচ্ছি।
–কি?কেন??ও গেলে কি প্রব্লেম?
–অনেক প্রব্লেম,আমি যাবো না।হয় উনি যাবে না হয় আমি।
–উহহহহহ,হয় উনি যাবেন না হয় আমি..মেয়ের কথা শোনো।ভাইয়া দে ওরে নামাই দে এই রাস্তার মাঝে না ওই এক্টা অশরীরি ঘোরে ধরুক ওরে।যাও যাও নেমে যাও যাও।
উনি জোর করেই আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেই
আমিও রেগে হাটা শুরু করি।বেশখানিক টা পথ আসার পর দেখি রাস্তা পুরো অন্ধকার কেউ নেই আশেপাশে।ওনার বলা কথাটা মনে পড়ে।এমনিতেই আমার একটু ভয় বেশি।আমি দোয়া ইউনুস পড়ে নিই।আবার দুয়েকপা হাটতেই আমার পাশে একটাটা কুকুর ডেকে ওঠে আমি।আমি তো মা গো বলে যে দিক থেকে এসেছিলাম ওদিকে দৌড় দিই।ভাইয়ার গাড়িটা ওখানেই ছিলো আমি সোজা গিয়ে গাড়িতে।
–আরে রে তুমি ফিরে এলে যে?যাও যাও তুমি তো আমার সাথে যাবা না।এখন আমি তো যাবোই সো তোমাকে তো…..
–আমি যাবো(রেগেই বললাম সবাই হেসে দিলো)
সিনেমা হলে যাওয়ার পর ওই অসভ্যটা টিকিট আনতে গেলো আর আমাকে পাঠালো পপকর্ন নিয়ে আসতে।আমি পপ কর্ন এনে দেখি নিলু আপা আর সৌরভ ভাইয়া নেই।সৌভিক ভাই একা দাড়িয়ে
–ওরা দুজন কই?
–ওরা চলে গেছে ভিতরে,আমাকে রেখে গেছে তুমি আছো কি হারায় গেলে দেখার জন্য।
উনি ৩২ টা দাত বের করে কথাটা বললেন ওনার হাসি দেখে গা টা জলে গেলো।আমি ভিতরে ঢুকলাম।দুর থেকে দেখলাম ওরা দুজন খুব ক্লোজলি বসে আছে।আমি ওদের দিকে যাবো তখনি সৌভিক ভাই আমার হাত টেনে ধরলে,
–আরে আরে কই যাচ্ছো?
–কই যাচ্ছি মানে ওদের কাছে যাচ্ছি।
–তোমার সিট ওখানে না।
–মানে?
–আচ্ছা তুমি কি গান্ডু ওরা জিএফ বিএফ কি তোমাকে নিয়ে বসবে আর তোমারিরি বা ওদের পাশে অকোয়ার্ড লাগবে না??তাই তোমার সিট ওই যে ওখানে।
–কিন্তু আমি একা বসবো নাকি?
–একা কেন বসবে আমি আছি না….
–আমি আপনার সাথে বসবো??
–জি ডেয়ার বড় ভাইয়ের শালি সাহেবা,হিহিহিহহ
–ও নো……..
আমি বিরক্তি নিয়ে সিটে গিয়ে বসলাম।
উনি মুচকি হাসলেন,সৌরভ ভাইয়ার দিকে তাকালেন,সৌরভ ভাইয়া এক চোখ টিপ দিলো আর উনি আমাকে লুকিয়ে ভাইয়ের দিকে ফ্লাইয়িং কিস দিলেন।যদিও কোনটাই আমি দেখিনি।উনি এসে আমার পাশে বসে পড়লো।হাত বাড়িয়ে পপ কর্ন নিতে গেলো কিন্তু আমি সরিয়ে নিলাম ঠোঙাটা।মুভি শুরু হলো
–একি??এটা তো হরহর মুভি।
–হ্যা
–কিন্তু আমাকে যে ভাইয়া বললো শাহরুখ খানের মুভি।
–হাহাহাহহা তোমাকে বোকা বানিয়েছে।আর তাছাড়া তুমি বাইরে পোষ্টার দেখোনি?(সত্যিই তো আমি তো পোষ্টার খেয়ালি করিনি।কিন্তু এখন আমি কি করবো,আমার তো খুব ভুতের ভয়)
–ভুতে ভয় পাও বুঝি?
–হুম(আমি কাদো কাদো ভাবে বললাম)
উনি হাসলেন।আমি উঠে চলে যেতে গেলাম কিন্তু মুভির মাঝে উঠে দাড়াই সবাই অনেক চিল্লাচিল্লি শুরু করলো বাধ্য হয়ে বসে পড়লাম।আমি চোখ বন্ধ করেই হাফ টাইম পার করলাম।হাফ টাইম শেষ হলেই আমি যাক বাবা বলে মুখে হাত দিলাম কিন্তু মুখে কেমন ভেজা ভেজা লাগল।আমি হাতের আঙুল টারর দিকে তাকাতেই শকড।আমার হাতে রক্ত কেন??রক্ত কোথা থেকে আসলো?নখের ভিতরে রক্ত ঢুকে গেছে।আমি ওনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি চোয়াল শক্ত করে বসে আছে।ওনার গলার শিরও টানটান।হটাত করেই ওনার হাতের দিকে নজর গেল।ওনার হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে।কিন্তু উনি চুপচাপ বসে আছেন দাতেদাত চেপে।
–একি আপনার হাতে কি হয়েছে?কিভাবে কাটলো?আর আমার হাতেই বা
–নিহীন একটু বাইরে চল প্লিজ
উনি আর কিছু বললেন না।উঠে হলের বাইরে চলে গেলেন।আমিও ওনার পিছু পিছু গেলাম।উনি চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে গাড়ির কাছে।আমার পায়ের আওয়াজে উনি ন তাকিয়েই বললেন,
–গাড়ি থেকে আগে ফার্স্ট এইড বক্স বের করে আমার হাতের রক্ত মোছো প্লিজ।আমার ফোবিয়া আছে ব্লাড দেখতে পারি না।ফাস্ট নিহীন
আমি ওনার কথা মতো তাড়াতাড়ি রক্ত মুছে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিই।উনি এবার চোখ খোলেন।আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–মেয়েদের নখে এতো ধার জানতাম না।তোমরা তো মানুষ খুন করে ফেলবা।
আমি ওনার দিকে বোকার মতো তাকালাম।উনি আবার বললেন,,
–মানছি ভয় পাচ্ছো তাই বলে নখ চেপে ধরে হাত ধরবে??
এবার আমি ব্যাপারটা বুঝলাম।তার মানে আমি ভয় পেয়ে ওনার হাত ধরেছিলাম আর তখনি এসব হয়েছে।বেশ লজ্জা পেলাম।ছি ছি!!কি করলাম এটা?আমি এখন কোন মুখে তাকাবো।বেশকিছুক্ষন পর ওনার দিকে তাকালাম কিন্তু উনি দেখি আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ওনার চোখের ভাষা আমি পড়তে পারিনি কিন্তু কেন জানি না মনে হলো উনি আমার দিক নজর সরাতে পারছে না।আমিও ওনার চোখে না চাইতেও ডুব দিলাম,ওই মায়া চোখে যে কেউ ই ডুব দিতে চাইবে।
আমাদের ধ্যান ফিরলো সৌরভ ভাইয়ার কথাই,,
–কি রে তোরা এখানে কি করছিস??আর তোর হাত কাটলো কিভাবে??
সৌরভ ভাইয়ার কথাই আমি ওনার থেকে সরে দাড়ালাম।আর ভাবছি উনি যদি এখন বলে আমি খামচি দিয়ে হাত কেটে দিয়েছি ভাইয়া কি ভাববে?কিন্তু আজব ব্যাপার উনি এমন কিছুই বলল না।উনি বললো ধাক্কা লেগে কেটে গেছে।বাসায় চলে আসলাম।বাইরেই ডিনার করেছি তাই এসেই শুয়ে পড়েছি,কিন্তু ঘুম আসছে না।বার বার ওনার কথা মনে হচ্ছে,ওনার হাতের কি অবস্থা খোজ নেয়া দরকার কিন্তু সেটাও পারছি না।এসব ভাবছি তখনি আমার ফোনে কল আসলো।আননোন নাম্বার তাও রিসিভ করলাম।
–আমি ঠিক আছি নিহীন
–কে??
–হাহাহহাহাহাহহহ…আমি সে যাকে আজকে আপনি আপনার নখ দিয়ে ঘায়েল করেছেন
–আপ আপনি?
–হ্যা আমি।ভালো আছি আমি চিন্তা করো না ঘুমাও এবার(ওনার কথা শুনে আমি অবাক হলাম উনি কিভাবে জানলেন যে আমি ওনার কথা ভাবছিলাম)
–আম সব জানি নিহীন তুমি কখন কি ভাবো(আমি তো আবার অবাক।উনি কি মনের কথাও পড়ে ফেলে নাকি)
–আমাকে নিয়ে আর ভাবা লাগবে না।হ্যা তুমি ঠিকি ভাবছো আমি মনের কথা পড়তে পারি।শোন অনেক রাত হয়েছে।এখন লক্ষী মেয়ের মতো ঘুমাও
উনি ফোন কেটে দিলেন।কিন্তু আমি এখনো ফোন কানে দিয়ে আছি।উনি কিভাবে এসব জানলেন?আবার কল আসলো।সেই একি নাম্বার আমি রিসিভ করলাম।
–আরে বোকা মেয়ে নাম্বার ভাবির থেকে নিয়েছি আর আমি মনটন পড়তে পারি না।তোমাকে এতোদিনে এটুকু চিনেছি তাই ভাবলাম তুমি তো শিউর চিন্তা করবা তাই আরকি চিন্তা করতে মানে করলাম।
ওনার কথা শুনে বুকে বল আসলো তাও ভালো।
–হ্যালো নিহীন শুনছো?
–হুম
–ঘুমাও গুড নাইট।
–আচ্ছা।
ফোন রেখে তখনকার কথা ভাবছি।উনি মাঝে মাঝে এমন বিহেভ করে কেন?কোনটা ওনার আসল রুপ,আমার সাথে করা খারাপ ব্যবহার নাকি….ওনার চোখ আজ কি বলতে চাইছিল সে কি আমাকে লাইক করে।ধুর কি ভাবছি এগুলো।ঘুমাই এখন
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নিতেই দেখি ওনার মেসেজ,গুড মর্নিং।সকাল ৬ টাই দিয়েছে।ওনার মেসেজটা দেখে খুব অবাক হলাম।কিন্তু কেন জানি না ভাল লাগল।কাল্কেও ওনার ওপরে আমার অনেক রাগ,অভিমান ছিল কিন্তু এখন তার কিছুই নেই কেন নেই জানি না।রিপ্লাই করবো কি করবো না ভাবছি তখনি মা চিল্লাতে চিল্লাতে ঘরে ঢুকল,,
–নিহীন ওঠ,বোনের এংগেজমেন্ট আর তুই এখনো ঘরে,নিচে যা অনেক কাজ আছে মা।
–এংগেজমেন্ট মানে?
–হ্যা আজ নিলুর এংগেজমেন্ট হবে খুব ভোরে ওই বাড়ি থেকে কল এসেছিলো আমরাও না করিনি।তাড়াতাড়ি আই মা।
মা চলে গেলো আমিও উঠলাম।নিচে এস্ব দেখি বাড়ি ডেকোরেশন শুরু হয়ে গেছে।দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো…..
#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:২৩
নিচে এসে দেখি বাড়ি ডেকোরেশন শুরু হয়ে গেছে।দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।আপুকে পার্লারের লোকেরা সাজিয়ে দিয়ে গেছে।বেগুনি রং এর লেহেঙ্গার ওপর গোল্ডেন স্টোনের কাজ তার সাথে ম্যাচিং করে গোল্ডেন হিজাব আর ভারী অর্নামেন্টস,হালকা সাজে নিলু একদম হিরোইন লাগছে।আমি আর মীরা দুজনি ব্লাক এর ওপর রেড স্টোনের লং ড্রেস পরেছি,কিছুদিন আগেই দুজন সেম বানিয়েছিলাম কিন্তু কোন ওকেশনে পরবো বুঝতে পারছিলাম না।আজ নিলু আপুর এংগেজমেন্ট এই কাজে লেগে গেলো।
আমি আর মীরা স্টেজের কাছে দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছি এমন সময় ভাইয়া এসে বললো ছেলে পক্ষ এসেছে আমরা যেন ওনাদের রিসিভ করতে চাই।ভাইয়ার কথা শুনে মীরা বললো,,
–নিহু চল চল
–কই?
–কই মানে?
–বর এসেছে তো?
–বর টা কি তোর??
–যাব বাবা আমার হবে কেন?
–তাহলে তোর এতো মাথা ব্যাথা ক্যান?ফুচকা খাচ্ছিস চুপচাপ সেটাই খা।
–কিন্তু সবাই যাচ্ছে তো??চল না আমরাও যা।
–না আমরা যাবো না।
–প্লিইইজ
আমি মীরার দিকে চোখ গরম করলাম ও আর কিছু বললো না।
সৌরভ ভাইয়া আর ওনার বাবা মা আগে আসলো ওনাদের দেখে আমরা সাইডে চলে গেলাম।সৌরভ ভাইয়াও নিলু আপার সাথে ম্যাচিং করে গোল্ডেন শেরওয়ানি পরেছে,জোস লাগছে ভাইয়াকে ক্রাশ খাওয়ার মতো।আমি এখনো ফুচকা খেয়েই চলেছি,মীরা গেলো আপুর কাছে আমি যায়নি।আপমনে একা একা দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছি,আহ!!কি শান্তিইইইইইইইইইইইইইইইইইই…চোখ বন্ধ করে একটা ফুচকা গালে দিয়ে চিবানো শুরু করলাম,হটাত আমার হাত থেকে কে যেন ফুচকার প্লেট টা কেড়ে নিলো।কার এতো বড় সাহস দেখার জন্য চোখ খুলতেই বিষম খেলাম,কাশতে লাগলাম,আমি কেশেই চলেছি কিন্তু সামনে দাড়ানো মানুষটার কোন গুরুত্বই নেই,সে আমার ফুচকার প্লেট থেকে ফুচকা নিয়ে নিলো একটা,গরুর মতো হা করে খেতে গেলো,আমি এখনো কাশছি।লোকটা ফুচকা গালে দিতে যাওয়ার সময় আড়চোখে আমার দিকে তাকাই।
–কি হয়েছে কাশছো কেন?
আমি হাত দিয়ে পানি ইশারা করছি কিন্তু ব্যাটা বোঝেই না।
–কি লাগবে?ভালো করে বলো…
আমি হাত দিয়ে পানির গ্লাস ইশারা করলাম উনি আমার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে মুখে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে বলল,,
–মদ খাবা নাকি??ছি ছি ছি এসব খেতে হয় না নিহীন,এগুলো পচা জিনিস,পচা লোকেরা খাই।তুমি কি পচা মেয়ে যে এসব খাবে??
ব্যাটার কথা শুনে আমি তো আরো বিষম খেলাম,কি বলছে এসব?আমি মদ কেন চাইবো??উনি আবার বললেন মদটদ বাজে জিনিস আমি হাত দিয়ে ইশারা করলাম মদ না।উনি কিছুক্ষন পর বুঝলেন।
–ওহ আচ্ছা।তাও ভালো,,যাক ভালো মেয়ে।আচ্ছা তুমি কি চাচ্ছো ভালো করে বলো।
আমার ইচ্ছা হচ্ছে ওনার গলাটা টিপে দিতে।আমি যদি বলতেই পারতাম তাহলে কি আর তোরে বলতাম।আর কাশছি যখন নিশ্চয় পানিই চাইবো।এটা না বোঝার কি আছে??উনি কি লাগবে লাগবে কি করছে এর মধ্যেই মীরা চলে আসে।আমাকে কাশতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
–নিহু কি হয়েছে তোর??সৌভিক ভাই এভাবে কাশছে কেন??
–কি জানি!!!আমিও সেই কখন থেকে জিজ্ঞেস করছি কিছুই বলছে না।
–এই নিহু…
আমি পানি ইশারা করলাম ও বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি পানি এনে দেই।পানি খেয়ে আমি মাথায় হাত দিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়লাম।
–তুমি পানি চাচ্ছিলে এতোক্ষন?
ওনার কথা শুনে রাগি চোখে তাকালাম।
–ভালো করে বোঝালেই তো আমি বুঝে যেতাম।
আমার আরো রাগ আরো বেড়ে গেলো।আমি আর কি করে বোঝালে উনি বুঝতো।আমার তো মনে হয় উনি ইচ্ছা করে এটা করলো অসভ্য ব্যাটা।
–তুমি কি রেগে আছো নিহীন??
ওনার এই কথাটা যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো মনে হলো,তাও রাগ কন্ট্রোল করে বললাম,,
–না রাগবো কেন??
–যাক ভালো।
আমি মীরা আর উনিই ছিলাম এরি মাঝে আমাদের ইনভাইট করা কিছু মেয়ে এসে ওনার গায়ের ওপর ঢলে পড়লো।সবাই ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে পরিচিত হতে,উনি বেশ অস্বস্তিতে পড়ল যেন।
–হাই হ্যান্ডসাম।কেমন আছো?
–জি ভালো।আপনারা?
–আমরাও ভাল আছি..আচ্ছা তোমার নাম কি?তুমি কি পাত্র পক্ষ?
–হ্যা আমি বরের ভাই।
–ওয়াও ওসাম।
–বাই দা ওয়ে তুমি কিন্তু অনেক হ্যান্ডসাম
একটা মেয়ে তো ওনার গায়ে হাত দিলো এবার উনি একটু সরে গেলেন।মেয়েগুলো আরো ক্লোজ যাচ্ছে উনি হটাত,
–আসছি বাবা…আপু আমার বাবা ডাকছে আপনারা থাকেন আমি যাই।
উনি সবাইকে সাইড করে দ্রুত পায়ে চলে গেলেন।ওনার বাবা কিন্তু মোটেও ওনাকে ডাকিনি তাও উনি মিথ্যা বললেন।ওনার এমন নাজেহাল অবস্থা দেখে আমি আর মীরা হেসে দিলাম।আমাদের হাসির আওয়াজে মেয়েগুল আমাদের দিকে তাকালো,
–কি হয়েছে তোমরা হাসছো কেন?
আমরা কোনমতে হাসি থামিয়ে বললাম এমনিই।ওরা চলে গেলো।আমরা আবার হেসে দিলাম।আমরা হাসছি এরি মাঝে শাওন আসলো,,
–তোমরা হাসছো কেন?কি হয়েছে আমাকেও বলো আমিও হাসি।
শাওনকে দেখে আমার হাসি থেমে গেলো,কারন আমাকে বেশি কষ্ট তো ওই দিয়েছে।ওরে দেখে মীরা সৌভিক ভাইয়ের ব্যাপারটা বলে শাওন ও হেসে ফেলে।মীরা আর শাওন দুজনি হাসছে।শাওন আমার দিকে তাকাতেই আমার গম্ভির মুখ দেখে হাসি থামিয়ে বললো,,
–আমাকে কি এখনো ক্ষমা করোনি?
–……….
–কথাও বলবে না বুঝি??
–তোমাকে কি ক্ষমা করা যায়??আমার জায়গায় তুমি থাকলে কি পারতে ক্ষমা করতে??
–আই এম রিয়েলি সরি।আর লুকানোর একটা কারন ছিলো যেটা সময় আসলে তুমিও জানতে পারবে।
–কবে আসবে সে সময় শুনি?
–খুব তাড়াতাড়িই,,প্লিজ আর রাগ করে থেক না।প্লিজ
শাওনের মুখটা দেখে খুব মায়া হলো ইচ্ছা করছে না তাও ক্ষমা করে দিলাম।শাওন আমাকে অনেকগুলো থ্যাঙ্কস দিল।
আমি,মীরা আর কয়েকজন মিলে আপুকে আনলাম।এংগেজমেন্ট শেষ হলো।কিন্তু এই সম্পূর্ন অনুষ্ঠানে এক জোড়া চোখ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।আমি বেশ কয়েকবার দেখেছি কিন্তু বুঝে উঠতে পারলাম না উনি ওভাবে কেন তাকাচ্ছে।উনি এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে।বিদায় বেলাও সৌভিক ভাই আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলো।রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি উনি আজ ওমন করে কেন তাকিয়ে ছিলো।
পরের দিন ভার্সিটিতে গেলাম সবাই দেখি আমার দিকে কেমনভাবে তাকিয়ে আছে।আমি নিজের ড্রেসের দিকে তাকালাম।না সব তো ঠিকি আছে তাহলে এভাবে কেন তাকাচ্ছে।মীরাও বুঝে উঠতে পারলো না।আমি না পেরে একটা জুনিয়র ছেলেকে ডাক দিলাম।
–এই ছেলে এদিক আসো।
ও আমার কথা মতো আসলো….
–আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে আছো এককেন?
–আপনাকে চিনে রাখার জন্য ভাবি..
–আমাকে চিনে রাখা…ওয়েট ওয়েট তুমি আমাকে কি বললে?ভাবিইইইই??কে ভাবিইইইই??কার ভাবি
–আপনি ভাবি
–আমি ভাবি মানে টা কি?কোন ভাইর বউ আমি তোমার?
–নাম বলা যাবে না এখন ভাবি।ভাই মানা করছে।
ছেলেটা আর কথা বলে না আরে দাড়াও কই যাও।দাড়াও…আমার কোন কথাই শোনে না।এভাবেই প্রায় তিন চারদিন চলে।আমি তো বিরক্ত হয়ে উঠি।আমার সাথেই কেন এমন হয়,একজন লুকিয়ে ভালোবাসে,আরে একজন তো কখনো আগুন তো কখনো পানি আবার উৎপত্তি হয়েছে এই নাম না জানা ভাইর।ভার্সিটিতে যেতেই ইচ্ছা করে।লাইফ টা জোক হয়ে দাড়িয়েছে।ভার্সিটিতে যেতে ইচ্ছা করে না তাও গেলাম,আমি আর মীরা টং এর দোকানে বসে চা খাচ্ছি তখনি শাওন আসে,,
–কি অবস্থা ভাবি??
–শাওন তুমিও
–হ্যা আমিও।তুমি তো পাবলিক ভাবি হয়ে গেছো।হাহাহহাহাহহহহহ(ওর কথায় বেশ রাগ লাগছে)
–আচ্ছা আমাকে যে তুমি ভাবি বললে তা আমি তোমার কোন ভাইয়ের বউ শুনি।
ও একটু থেমে বলল,
–আমার তো দুইটাই ভাই।এখন বড় ভাই তো তোমার বনের লগে সেটিং করাই আছে বাকি থাকে মেজ ভাই।তুমি চাইলে ওর সাথে তোমার……হিহিহিহহহহ,,বুঝেছো নিশ্চয়।
শাওনের কথা শুনে গালে থাকা চা কুলি করে বের করে দিলাম,আর কাশতে লাগলাম।
–আরে আরে ঠিক আছো তো তুমি??এই মামা পানি দাও।
দোকানির থেকে পানি নিয়ে ও পানি দিল।আমি ঢোক ঢোক করে খেয়ে নিলাম।
–ঠিক আছো এখন?
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম।ও এবার বললো,,
–তাহলে কি বাসায় বলবো তোমাকে নকল ভাবি থেকে আসল ভাবি করার কথা।
–হ্যা হ্যা শাওন বলে দাও।আমাদের নিহীনের সাথে সৌভিক ভাইয়াকে কিন্তু জোস লাগবে।(মীরা আর শাওন হেসে উঠলো)
–ধ্যাত তোরা কি শুরু করেছিস বল তো??থাম
–আরে আমরা সিরিয়াস
–শাওওন….
–ওকে ওকে থামলাম।
ক্লাস শেষ করে বাসায় যাবো এক জুনিয়র সালাম দিলো।জুনিয়ররা সালাম দিলে বেশ ভালোই লাগে।এটিটিউড নিয়ে সালামের উত্তর দিলাম।নিজেকে রানী রানী ফিল হয় যখন কোন জুনিয়র সম্মান দেই।আজো তাই হলো কিন্তু আনন্দটা বেশিক্ষন থাকলো না।
–ভাবি ভালো আছেন??
ছেলেটার মুখে ভাবি ডাক শুনে মেজাজটাই বিগড়ে গেলো।
–এই আমাকে ভাবি বললে কেন?
–ভাই বলেছে তাই।
–কোন ভাই?নাম কি বল
–ভাবি নাম বললে ভাই আমাকে আস্ত রাখবে না।প্লিজ ভাবি আমি যাই।
আমি ছেলেটার কলার ধরে ফেললাম।
–ভাবি আমাকে যেতে দেন আমি যদি বাই চান্স আপনাকে নাম বলে দিই ভাই আমাকে অনেক মারবে।আমার জীবনটা আপনার হাতে।প্লিজ ভাবি আমাকে জোর করবেন না।
–নাম না বললে আমি তোকে মেরে ফেলবো নাম বল
আমার ধমক শুনে ছেলেটা কেদে দিলো।তারপর,
–বল নাম কি?
–স স সৌভিক।
ছেলেটার মুখে ওই নাম টা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।ছেলেটার কলার থেকে আমার হাত সরে গেলো সেই সুযোগে ছেলেটা পালিয়ে গেলো।আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না।আমি কি ঠিক শুনলাম।এটা সত্যি কি মিথ্যা এখন উনিই বলতে পারবে।ঘড়ি দেখলাম ১:৩০ টা বাজে।তারমানে উনি এখনো আছে ভার্সিটিতে।আমি ওনাকে খুজতে লাগলাম।অনেক খোজার পর ওনাকে পেলাম ওনাদের বিল্ডিং এর সামনে।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।আমি ওনাদের সামনে গিয়ে দাড়ায়।আমাকে দেখে উনি ওনার বন্ধুদের ইশারা করেন সবাই চলে যায়……
চলবে……..