প্রেম সায়রের ছন্দপাত পর্ব ১০

#প্রেম_সায়রের_ছন্দপাত

#সাদিয়া_নওরিন

পর্ব—- ১০

——- কারো প্রেমে পড়লে অবশ্যই আগে তার টাকা পয়সা দেখবি। কারণ এখন ফেইসবুকে চুটিয়ে প্রেম করবি। পরে দেখবি ছেলে ভিখারি, নিউমার্কেটের সামনে বসে ভিক্ষা করে। তখন কি করবি তুই?
আরশী চোখ পিট পিট করে তাকালো প্রিয়ার দিকে। প্রিয়ার কথায় প্রচন্ড অবাক হয়েছে সে! প্রিয়ার কথার বিপরীতে এখন তাকে কি জবাব দিবে, তাও যেন ভেবে পাচ্ছে না আরশী!

আজ ইরশাদের সাথে ছয় মাস ধরে কথা বলছে আরশী। সম্পর্কটা গড়িয়ে এখন প্রেমের সম্পর্কে পৌঁছিয়েছে তাদের! আর এতোদিন পর আরশী আজ প্রথমই প্রিয়া আর মায়াকে খবরটি জানালো! মায়া দীর্ঘসময় ধরে চুপ করে রইলো, যেন সে মৌনব্রত পালন করেছে। আর, তারপর আলতো ব্রু কুঁচকে বলল,
—- এই বয়সটা প্রেমের জন্য ঠিক না। মেয়েরা অনেক ধরণের প্রবলেমে পড়ে এইসময়। আসলে তাদের আবেগ বেশী থাকেতো। তাই।
তুই তিন্নির কেইসটা জানিস না?
—- কোন কেইস?
—– আরে তিন্নি তো ওর সব ইনফরমেশন ওর বয়ফ্রেড ফাইজুন কে দিত। এখন ঐ ছেলে নাকি এতোদিন ধরে ওর সাথে করা প্রেমকে অস্বীকার করছে! সে তো বলল সে সব নাটক করেছে! আর তাছাড়া, সে ওদের পারসোনাল সব কথাগুলো বন্ধুদের বলে বেড়াতো।
এখন নাকি খুব ডিপ্রেশনে ভুগছে তিন্নি। ছেলেটা নাকি খুব খারাপ, এতোদিন শুধুই মজা করে ওর সাথে রিলেশন করেছে।
—- মজা করে! মজা করে আবার রিলেশন কিভাবে হয়!
চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন ছুড়ঁলো আরশী! বিষ্ময়ে থ বনে গিয়েছে যেন সে!

—- রিলেশন বহুভাবে হয়৷কারো কপালে লিখা থাকে না তার ভেতরটা কতোটুকু ভালো, বা সে কতোটা বিশ্বাসযোগ্য। আমি বলছি না সব ছেলে খারাপ। কিন্তু তুই যেই ছেলের সাথে প্রেম করবি বলে ঠিক করেছিস। সে ভালো হবে তার গ্যারান্টি কি?
—– খারাপ হবে তার নিশ্চয়তা কি?
ফুফিয়ে কেঁদে বলে উঠলো আরশী! মায়া অবাক চোখে তাকালো তার দিকে! তার বান্ধবীটা ছিঁচকাদুনী জানা ছিল তার।কিন্তু কোন ছেলের জন্য কাঁদবে এমনটা হয়তো কখনোই কল্পনা করতে পারে নি সে!
তবে অনেক সময় অনেক বিষয় কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়।আর তা যদি হয় কোন কিশোরীর জিবনে প্রথম পুরুষের ক্ষেত্রে , তাহলে তো সেই কিশোরী নিজের সীমাটুকুও ছাড়িয়েই সামনে পা বাড়ায়! আর ঠিক এই সময়ই সবচেয়ে নরম মনের কন্যাগুলোই সবচেয়ে বড় ভূল করে বসে!

প্রিয়া চোখ পিটপিট করে তাকালো আরশীর দিকে কিন্তু কিছুই বলল না সে তাকে। আরশীর এই বদলে যাওয়াটা তার কাছে মোটেও ভালো লাগছে না। কিন্তু এতে কিছুই করার নেই তার এমনটাই মনে করে সে!
অনেক সময় বন্ধুত্বে তৃতীয় ব্যাক্তি চলে এলেও বন্ধুত্বের সৌন্দর্যে ভাটা পড়ে। আর প্রিয়া হয়তো নিজেদের সম্পর্কের সৌন্দর্যতা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা অনুমান করেই নিয়েছে !

___________

পড়ার টেবিলে বসে প্রিয়ার বলা কথাগুলো বারবার মনে পড়ছে আরশীর। না চায়তেও কথার গুলোর প্রভাব তার চোখে মুখে দৃশ্যমান হচ্ছে আজ! আর কিছুসময় পর তা চিন্তায় রুপান্তরিত হয়ে উঠে! আর তারই প্রভাব পড়ে তার ফোনের কিবোর্ডও! সে লিখে,

—— একটা কথা জিঙ্গেস করি?
—- হুম। যা ইচ্ছে।
—— আবার মাইন্ড করবেন না তো।আসলে আমার নিজের কথা চিন্তা করতে গিয়ে আপনার কথা মনে পড়লো।
—– নাহ, বল কি জিঙ্গেস করতে চাও।
—– আচ্ছা আপনি কোথাও টিউশনি করেন?
—– আরে নাহ, এইসব আমার দ্বারা সম্ভব না৷ খুব ঝামেলা লাগে।
—- তো আপনার হাত খরচ?
—– ঐটা তো আব্বু দেয়। আর আমার তেমন হাত খরচ লাগে না৷ লাইক গাড়ি ভাড়া তো লাগেই না৷ আর নরমালি অন্যকিছু লাগলেও একশ টাকা হলেই চলে যায়।
—— তো কলেজের নাস্তা!
—- ঐটা আম্মু জোর করে টিফিন দেয়। আর আপুরা আম্মুকে বলে, আমি ছোট আমাকে এখনো সেরেলেক ই দেওয়া দরকার।

আজ ইরশাদের কথায় একটুও হাঁসে না আরশী! বরং আরো গভীরভাবে চিন্তায় পড়ে সে!
কথায় আছে, মেয়েদের ছেলেদের আগেই ম্যেচিওরিটি চলে আসে।যখন কোন ছেলে বাইক নিয়ে পুরো এলাকা ঘুরে বেড়ানোর চিন্তা করে, বা ভাবে গালফ্রেন্ডের সাথে কোথাও বসে আড্ডা দিবে বলে স্বপ্ন দেখে ।ঠিক সেইসময় তার হাটুৃঁর সমান মেয়েটিও একটি ছেলেকে বিয়ে করে তার জিবনটাকে সাজানোর স্বপ্ন দেখে।নিজের ছোট ছোট সন্তানের পাশাপাশি স্বামীকেও নিজের বশ্যতা স্বীকার করানোর উপায় খুজতে থাকে!

আর তাছাড়া একজন কিশোরীর স্বপ্নে কোন নরমাল ছেলে কখনোই আসে না! বিষয়টি হাস্যকর হলেও শতভাগ সত্য। সময়টা এমনই, ক্লাসের লক্ষ্মীর মতো চুপচাপ ছেলেটির চেয়ে পুরো ক্লাস দাপিয়ে বেড়ানো পড়াশোনায় এভারেজ ছেলেটিকে নিয়ে মেয়েরা বেশী স্বপ্ন দেখে! তার স্টাইলের পেছনে নিজের সাজসজ্জাকে লাগিয়ে দেয় তারা! এই সময়ের মেয়েরা বোকামোতে যেন পিএইচডি হোল্ডার হয়ে বসে থাকে! তারা সামনের জনের শাব্দিক অর্থ বেশী বিশ্বাস করে। কিন্তু ভাবার্থ, সেই বিষয়ে যেন একদমই চিন্তা করে না! তারা ভূল করে! তারা ভূল করে ব্যাক্তি নির্বাচনে! আর তারা ভূল করে কারো প্রেমে পড়ে তার বলা প্রতিটি কথা হাদিস ভেবে!

আরশী ইরশাদের কথার মিনিংটা নিজের মতো করেই সাজিয়ে নেই। সে চায়লেই ইরশাদের বিষয়ে অন্য চিন্তা মাথায় আনতে পারতো। কিন্তু সে ইরশাদকে কেবল গরীব ঘরের অনার্স পড়ুয়া কোন ছেলে হিসেবেই ধরে নেই! আর এতে তার সাথে গড়ে উঠা সম্পর্কের ভবিষ্যৎ, অন্ধকারাচ্ছন্ন হিসেবেই প্রতিয়মান হয় তার কাছে!

বেশ কয়েকদিন ইরশাদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় আরশী! মাথায় হাজার রকমের চিন্তা যেন ঘোর পাঁক খাচ্ছে তার! আর অন্যদিকে প্রথম প্রেমের প্রচন্ডকর অনুভূতিতে দগ্ধ ও হচ্ছে সে! এই অসহ্যর যন্ত্রণায় কাতর হয়ে উঠা কিশোরীর আঁখিগুলোও যেন কষ্টের সাথে বন্ধুত্ব করে বসেছে! মাঝে মাঝে ইরশাদের কাতর হওয়া মেসেজগুলো ক্ষত-বিক্ষত করতে থাকে তাকে! কিন্তু কেবল সিন করেই ফোনটি একপাশে ফেলে রাখে সে! বিবেক আর হৃদয়ের যুদ্ধে কেবল বিবেককেই প্রাধান্য দিতে থাকে সে!

অন্যদিকে ইরশাদ! তার অবস্হাও যেন পাগল প্রায়! পাগলের মতো বারবার মেসেজের শব্দে ছুটে আসে সে ফোনের কাছে! বারবার ফোনে চুমু কাটার পরও আরশীকে খুঁজে পায় না সে!বন্ধুদের মহলেও ইরশাদের এমন প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাওয়ার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে।আর এতে টিটকারির সংখ্যাও যেন বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। আর এর সাথে শুরু হয়েছে কিছু মহানদের মহান উক্তি!

—— ইয়ার প্রেম মানেই বেদনা। মেয়ে মানেই ছলনাময়ী। বুঝলি?
জানিস দোস্ত! আমার দশম জিএফটা! সেও ছেড়ে দিল আমাকে কয়েকদিন আগে! শালি বলেও গেল না ক্যান ছাড়লো সে মোরে!
—– দশম! শালা তোরে তো ঝাড়ু পিটা দিয়ে ছাড়া উচিত ছিল মেয়েটার। তোর সাত আঙ্গুলের কপাল, কিছু না বলেই তোকে ছেড়ে দিলো সে।
নাক ফুলিয়ে বলল ইরশাদ৷ কিন্তু তার কথায় কোন ভাবাবেগ হলো না হৃদয়ের। বরং সে আরো খোঁচা দিয়ে বলল,
—– আমার কথা বাদ দে। নিজের টা দেখ। কেমন না দেখে কাইত হইয়া গেলি। এমনও তো হতে পারে ঐটা মেয়ে না। কোন ছেলের ফেইক আইডি!
—- তোর কল্লা। গাধার বাপ।
ঠাস শব্দে হৃদয়ের পিঠের ওপর শক্তভাবে চাপড় দিয়ে বলল সাগর৷ তারপর ইরশাদের দিকে তাকিয়ে হতাশ সুরে বলে উঠলো সে ,
—- মেয়ের কি কম পড়ছিল তোর? এমন অদেখা মেয়ের প্রেমে রোমিও হতে গেলি কেন তুই?
—- ইচ্ছের ওপর কি মনের জোড় চলে ইয়ার!
ভাবলেস স্বরে বলে উঠলো ইরশাদ!

চোখের নিচে কালি পড়েছে তার! চেহারায় ও ক্লান্তির ভাব।অদ্ভুত যন্ত্রণা বহমান হচ্ছে যেন তার হৃদয় জুড়ে! সাত মাসের শতশত স্মৃতি খুঁচিয়ে চলেছে তার হৃদয়কে! হৃদয় দগ্ধ যন্ত্রণায় অসহনীয় যন্ত্রনা হচ্ছে এখন তার! কান্নাও দলা পাকিয়ে আসছে কন্ঠনালীতে।

পাবেল অনেক সময় ধরে চুপ করে বসে ইরশাদকে পর্যবেক্ষণ করছে! চোখে কৌতূহল তার! সে ইরশাদের সাথে সেইম কলেজে পড়ে। কলেজে “আশিক বয় ” নামে সুপরিচিত সে! কোন এক সময়, একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে, ছেঁকা নামক অখাদ্য খেয়ে ব্যাঁকা হয়ে আছে সে গত তিন বছর ধরে! সেই প্রেমটাও আবার স্কুল লাইফের সমবয়সী ওয়ালা প্রেম! হুট করেই মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায় একদিন! আর সে দিনই সে ডুব দেয় নেশায়! সে সিগারেট টা ইরশাদের দিকে বাড়িয়ে দেয়।তারপর ধরা স্বরে বলে,
—– হৃদয়ের যন্ত্রণা কমাতে কার্যকরী অসুধ এটি। এক টান দিবি, দেখবি হৃদয়ে কেবল প্রশান্তি! মনে হবে আকাশে উড়ছিস তুই!
—– লাথি এখন খাবি নাকি পরে খাবি হারামজাদা। দূর হ চোখের সামনে থেকে এখন। শালা নেশাখোর ।
নাক ফুলিয়ে এক ঝটকায় ইরশাদকে ওদের মাঝখান থেকে টেনে তুলতে তুলতে বলল সাগর। ইরশাদটার জন্য বড্ড ভয় হচ্ছে আজ তার! ছেলেটার মনটা যে মোমের মতোই নরম!

এক দৃষ্টিতে জ্বলন্ত সিগারেটের দিকে তাকিয়ে আছে ইরশাদ!জ্বলে জ্বলে নিঃশেষিত হওয়া সিগারেটের মতোই যেন জ্বলছে এখন তার হৃদয়! হুট করেই পাবেলের হাত থেকে সিগারেটটি হাতে নিয়ে, তাতে এক টান দিয়ে বসে ইরশাদ! আর সাথে সাথেই প্রবল বেগে কাশতে শুরু করে সে! আর তারপরও সবার নিষেধ উপেক্ষা করে,আরো কয়েকটান লাগায় সে সিগারেটে!

তামাকের জ্বলনে সৃষ্ট নিকোটিনের কালো ধোঁয়া ফুসফুসের ভেতরটা জ্বালিয়ে দিচ্ছে ইরশাদের! নাক মুখ জুড়ে প্রচন্ড ভাবে জ্বালা করছে তার! এক অসহ্য যন্ত্রণায় অশ্রুর ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে তার আঁখি ছুঁইয়ে! হাসফাস করছে তার গলা!
সাগর তাড়াতাড়ি দৌড়ে যায় রান্নাঘরে। একটি বাটিতে লেবুর রসে গোলমরিচ গুড়ো মিশিয়ে তাকে একটুকরো আদা চুবিয়ে রাখে সে। আর একটু পরই সে ইরশাদের মুখে ডুকিয়ে দেয় তা!

একটুপরই মাথা ঝিম ধরে যায় ইরশাদের! হৃদয় জ্বালাটা যেন মুখের জ্বালায় পরিবর্তিত হয়েছে এখন, এমনটা অনুভব হয় তার! আর ঠিক আরো কিছুখন পরই নেশাভাবটা কাটতে থাকে তার! এবার বিছানায় গা এলিয়ে দেয় সে! পাবেল আর হৃদয়কে নিজের ফ্ল্যাট থেকে বের করে দিয়ে ইরশাদের পাশেই শুয়ে পড়ে সাগর! প্রবল বেগে কান্না পাচ্ছে এখন তার! আরশী নামক মেয়েটির গুষ্টিরপিণ্ডি চটকাতে ইচ্ছে করছে এখন সাগরের। সে একইভাবেই তাকে বকতে বকতে ঘুমিয়ে পড়ে !

কিছুসময় পর ঘুম ভাঙ্গে ইরশাদের। টপটপ করে গড়িয়ে পড়া অশ্রুর খানিকটা মুছে মেসেজ পাঠায় সে আরশীর কাছে।

—– রাতের অাধারে জ্বলতে থাকা চাদঁটিকে,
জিজ্ঞেস করো আমার খবর,
সে বলবে আমার পুরো সত্তা জুড়ে,
কতোটা আছে তোমার বিচরণ।
তোমাতে হারিয়ে তোমাকে আকড়ে,
ধরার লড়াই আমার এই জিবনে!
তুমি আমার প্রথম ওগো,
তোমাতে নিঃশেষ, তুমিই প্রিয়!

সবার মাঝে একা আমি,
একাকিত্ব সম্মুখে!
আমার হৃদয় সায়রের ছন্দপাত তুমি
তোমাতে প্রেম তুমি সবই তোমার মাঝে!

পারনা একবার কথা বলতে,
তুমি আমার সনে?
আমি যে ভালোবাসি শুধুই তোমায়,
কেন বোঝনা প্রিয়সী মোরে!

___________
ইরশাদের সাথে কথা বলার ইচ্ছায় মনটা বড্ড আকুপাকু করছে আরশীর! ফোনের দিকে তাকালেই যেন ইরশাদের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো চোখের সামনে ভাসছে তার! মাঝে মাঝে নিজেকে ধিক্কার জানায় সে! সে কি লোভী? এমন ভাবনায় ক্ষত-বিক্ষত ও হশ তার হৃদয়! তবে নিজের পরিবারের কথা ভাবলেই তার মনে হয়, সম্পর্কটা এখানেই শেষ করে দেওয়া উচিত হয়েছে তার! সম্পর্ক বাড়লেই কষ্টের তিব্রতাও বাড়বে! আর এর চেয়ে অল্প সময়ের অল্প কষ্টই শ্রেয়!

আজকে বড্ড মন খারাপ আরশীর! তার আম্মুও খালামনির বাসায় গিয়েছে আজ। স্কুলের জন্য যায় নি সে আর তাই পুরো দিন টিভি দেখে দেখে সে ক্লান্ত! হঠাৎ ফেইসবুকে ডুকার মাত্রাতিরিক্ত ইচ্ছে হলো আরশীর! সে আইডিটি ডিএক্টিভেইট করেছিল কিছুূদিন আগে। ভেবেছিল হয়তো আর খুলবে না সে। কিন্তু ইরশাদ নামক বাজে অসুখে যেন আবিষ্ট করে রেখেছে তাকে!

ফুফিয়ে কাঁদছে আজ আরশী! সব পড়ার পর একদম ভালো নেই সে।বুকের ভেতরটাও যেন খাঁ খাঁ করছে তার! আচমকা সে ইরশাদকে কল দিয়ে বসলো!
ইরশাদ নিজের নাম্বারটি আরশীকে দিলেও আরশীর নাম্বার টা নেই তার কাছে! আর রাতের এগারোটাই আননোন নাম্বারের কল দেখে মেজাজ বিগড়ে গেল তার! সে পরপর কয়েকবার কেটে দিল! কিন্তু আরশীর মাঝেও যেন আজ অদ্ভুত জেদ চেপেছে! সে আবার কল লাগালো ইরশাদকে!

এবার রাগ করে ফোনটা রিসিভ করলো ইরশাদ! নাক ফুলিয়ে শক্ত কিছু বলাতে চায়লো সে। কিন্তু বলার আগেই শান্ত হয়ে গেল তার দেহ! চোখ বুঝে সময়টা অনুভব করলো ইরশাদ! ফোনের ওপাশে কান্নার আওয়াজটি বুকের ভেতরের জ্বালাটি যেন কমিয়ে দিচ্ছে তার! কিন্তু হৃদয়ের ভেতরটা তোলপাড় ও সৃষ্টি করছে তা, প্রিয়সীর কান্না বলে।কথা!
স্বপ্নের চেয়ে সুন্দর মুহুর্তটিকে ভালোভাবে অনুভব করলো সে! আর তারপর আলতো স্বরে বলল,

—– ছন্দ! কাঁদছো কেন?
—- আই এম সরি ইরশাদ। অনেক জ্বালিয়েছি তোমাকে আমি । প্লিজ আমাকে ক্ষমা করো।
—– তোমার ওপর কোন রাগ হয় না আমার।
ধরা গলায় বলে উঠলো ইরশাদ! আরশী যেন এতে আরো মরিয়া হয়ে উঠলো! সে ফুফিয়ে উঠে বলল,
—- কালই দেখা করতে চায় তোমার সাথে আমি।
—– কিহ্! কখন? কোথায়?
—- দুপুর বারোটাই। দুনম্বর গেইটের ওখানে।
—- ওকে৷ অবশ্যই আসবে আমি ছন্দ! দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার তুমি হীনা।

হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনলো আরশী। ড্রইংরুমে তার পিতার পায়ের শব্দ শুনছে সে! হয়তো পানি খাচ্ছেন তিনি! বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো আরশীর! সে তাড়াতাড়ি ফিসফিসিয়ে বলল,

“তোমার ওষ্ঠের মাদকতায় ডুবতে দিবে কি আমায়? আমি যে তোমার প্রেম সায়রের ছন্দপাত হতে চাই! তোমারী নেশায় সিক্ত হবো, এমন এক তুমি চাই!”

মাতাল করা একটি হাওয়া ছুঁয়ে দিয়ে গেল ইরশাদকে! পুলকিত হয়ে চোখ বুঝলো সে! শরীর জুড়ে তার অদ্ভুত শিহরণ! এমন অনুভূতি হয়তো এর আগে কখনোই হয় নি তার! চোখ বুঝে সময়টি অনুভব করলো সে! তার মনে হলো,
সময় তুমি থমকে যাও,
আর আমাকে অনুভব করতে দাও,
এই মুহুর্ত যা আমাকে করেছে বিশেষ,
যা দিয়েছে আমায় অদ্ভুত শিহরণমিশ্রিত আবেশ!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here