ফাল্গুনের ঢেউ পর্ব -০২

#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ২‌ #শেষ_সম্বল
লেখিকা – Zaira Insaan

আধো আধো করে চোখ খোলার প্রখর চেষ্টা চালাতে লাগলো মিহি। কিন্তু এক দন্ড রোদের ঝলকানি তে বুজে গেল সে নয়ন যুগল। কিছুটা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে খুলল। খুলেই ভ্রু কুটি হয়ে এলো তার। পরিবেশ অজানা। এটা কার বাড়ি? ভালো ভাবে তাকালো আশপাশ। গতরাতে এক মানবের সাথেই ধাক্কা লেগে সে জ্ঞান হারিয়েছিল তারপর…?
এক লাফে উঠে বসলো। আয়নার দিকে চোখ পড়তেই থমকালো সে, গহনা গুলো কই!? ভারি হয়ে আসলো মাথা। চরম পরিমাণে ঘুরতে লাগলো। উঠে দাঁড়ালো ড্রেসিং টেবিলে চোখ পড়ে তার সব গহনা ওখানেই সংরক্ষিত আছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
আবারো কপাল কুঁচকালো সে। সে কার ঘরে? মাফিয়া’র? ভাবতেই গা শিউরে উঠলো। গতরাতে লোকটি বলে গিয়েছিল,, এ রাস্তা নিরাপদ নয় এখানে রাতে চোর, ডাকাত, গুন্ডা মাফিয়া’রা ঘুরাফেরা করে!” কপালে হাত রাখল। রুম থেকে বের হতেও ভয় করছে। কিন্তু বের তো হতে হবে।
মুখ ধুয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো মিহি। বের হতেই খাবারের সুন্দর সুঘ্রাণ পেল। উপরে আশপাশ তাকালো কেউ নেই! খালি। ধীরে ধীরে নিচে নামলো
অন্যদিকে তাকিয়ে সামনে ফিরে কারোর সাথে ধাক্কা লাগার আগেই কে যেন তার হাত ধরে তাকে থামিয়ে দিল। সামনের মানুষটিকে দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল তার, স্নিগ্ধ স্যার! ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে,,

“স্যার, আপনি এখানে?”

ভ্রু উঁচু হয়ে গেল স্নিগ্ধের প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলল,,

“আমার ঘরে আমি থাকবো না তো আর কে থাকবে।”

পিলক চমকালো মিহি। ভাবতেই অবাক লাগছে সে গতরাত অব্দি এখন পর্যন্ত স্নিগ্ধ স্যারের ঘরে ছিল!
মিহির পোশাকে চোখ পড়তেই দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল স্নিগ্ধ। অন্য দিকে মুখ করে গলা ঝাড়লো। মিহি অন্য কিছু চিন্তা করছে। আর ওইদিকে স্নিগ্ধ দুই বার গলা ঝাড়লেও কোন উন্নতি দেখলো না মিহির মাঝে। বাধ্য হয়ে সে বলে ফেলল,,

“শরীর এভাবে উন্মুক্ত রাখতে নেই.. পোশাক ঠিক করো।”

কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই ভারি চমক প্রদন হলো মিহি। নিজের দিকে তাকাতেই হা হয়ে গেল দ্রুত আঁচল টেনে ঠিক করে নিল। লজ্জায় এক বিব্রত অবস্থায় পড়ে গেল। স্নিগ্ধ তার দিকে ফিরলো কোন প্রশ্ন করার আগেই মিহি নিজের পেটে দুহাত রেখে বাচ্চাদের মত আবদার করে বলল,,

“স্যার, খিদে পেয়েছে।”

প্রশ্ন করতে গেলেও থেমে গেল তার এমন আধো আধো কন্ঠের আবদারে। বলল,,

“ফ্রেশ হয়ে তারপর খেতে আসো।”

বলে উপরে সিঁড়ির দিকে হাঁটা ধরলো। মিহি আগেই জানতো যে সে প্রশ্নের ভান্ডার নিয়ে বসবে যা এখন শুরু হলে শেষ হওয়ার নাম নিবে না। সেও তার পিছু পিছু উপরে চলে গেল।
রুমে এসে আলমারি থেকে এক কলারহিন গেঞ্জি ও প্যান্ট নিয়ে মিহির দিকে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে দিল। মিহি এগুলো দেখে চেহারা বিচিত্র রকমের করে বলল,,

“স্যার এগুলো পড়বো!?”

কুঁচকানো ভ্রু সোজা হয়ে গেল স্নিগ্ধের ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে আফসোসের স্বরে বলল,,

“আমি তো আর থ্রি-পিস পড়ি না, নাহলে আপনাকে পরনের জন্য থ্রি-পিস দিতাম।”

ভালো বাঁশ মারলো সে। নিজের বোকা কথাই নিজেই শরম পেল মিহি। ইতস্তত করে হাত থেকে নিল। তারপর গুটি গুটি পায়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।
কিছুক্ষণ পর নিচে নামলো মিহি। স্নিগ্ধ টেবিলে খাবার রেখে পাশ ফিরতেই মিহির দিকে চোখ পড়লো। গেঞ্জি প্যান্টে অদ্ভুত রকমের লাগছে তাকে।
ওড়না না থাকায় পিঠ অব্দি চুলগুলো সামনে নিয়ে এসেছে। চোখ সরালো স্নিগ্ধ। খেতে বসতেই মিহি বলল,,

“আপনি খাবেন না স্যার?”

“আমি ঘুম থেকে দেরিতে উঠি না।”

এতটুকু কথাতে মিহি বুঝলো সে আবারো বাঁশ মারছে। বেলা এগারোটা চেয়েও বেশি ফুরিয়েছে। আর সে এখন খেতে বসেছে। মিহি খেতে চাইলেও খেতে পারছেনা কেননা স্নিগ্ধ তার দুই চেয়ার ফেলে পাশে দাঁড়িয়ে বুকে দুহাত গুজে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। চরম অস্বস্তিতে পড়লো মিহি। বলল,,

“প্লিজ স্যার অন্য দিকে তাকান।”

সরে আসলো স্নিগ্ধ সেখান থেকে। মিহি খাওয়া শেষ করে দাঁড়ালো। স্নিগ্ধ তাকে সোফায় বসতে বলল। আর কোন উপায় নেই, মিহি বসল। স্নিগ্ধ ঠিক তার বাম পাশে সোফায় বসে বলল,,

“গতরাতে ওভাবে দৌড়াদৌড়ি করছিলা কেন তাও বধূর সাজে?”

“এমনিতেই স্যার।”

রাগে চোয়াল শক্ত হলো তার। সামনে বসে সরাসরি মিথ্যা বলছে মিহি যার জন্য দরুণ মাথা গরম হয়ে গেল স্নিগ্ধের। কঠিন গলায় বলল,,

“আমার শাস্তির ব্যাপারে ভালোই অবগত আছো তুমি, সো মিথ্যা না বলে সত্য বলো।”

কেঁপে উঠলো মিহি। বেশ ধমকেই বলল সে।
ইতিমধ্যে অধর যুগল মরুভূমির মতো দশা হয়ে গেল। জিভ দিয়ে ভিজিয়ে মিইয়ে যাওয়া সুরে বলল,,

“স্যার, ওটা আমার পার্সোনাল ব্যাপার।”

“পার্সোনাল এখন পাবলিক হয়ে গেছে…বলো।”

এখন না বললে এক বিন্দু পরিমাণ নড়তে দিবে না সে। কাঠিন্য তার স্বভাব। যার জন্য প্রচন্ড ভয় পায় মিহি তাকে। শেষ পর্যন্ত পুরো লম্বা ঘটনা বলতে হলো। যা শুনে স্নিগ্ধ কোনতেই বিশ্বাস করতে পারলো। বলতেই মিহির মুখোভাব সূক্ষ্ম হয়ে আসলো। স্নিগ্ধ ধীর কন্ঠে বলল,,

“এটা অন্যায় জোর করে বিয়ে জায়েজ নয় কোন দিকে, কেস ফাইল হতে পারে তাদের উপর।”

এক পলক তাকালো মিহি। আবারো মাথা নুয়ে মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল,,

“যেটাই হোক আমার মা বাবা তো, আমি তাদের উপর কেস কেমনে করবো।”

দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো স্নিগ্ধ। কিছুক্ষণ থেমে তারপর বলল,,

“বাসায় গিয়ে সবকিছু ক্লিয়ার করে নেওয়া উচিত তোমার।”

পিলক চমকালো মিহি। আমতা আমতা করে বলল,,

“না আমি এখন বাসায় যাবো না।”

অবাক হয়ে গেল স্নিগ্ধ। কন্ঠস্বর স্বভাবিক রেখে জিজ্ঞেস করলো,,

“তো তোমার ইনটেনশন কি এখানে থাকার!”

শুধু তাকালো মিহি। এর বিপরীত কোন উত্তর দিল না। স্নিগ্ধ চেয়ে আছে উত্তরের। কিন্তু এ মেয়ে তো কিছুই বলছে না দেখে কোন কিছু বলতে নিলে এ মুহূর্তে মিহি বলে উঠলো,,

“আমি অন্য কোথাও গিয়ে থাকবো।”

“কোথায় থাকবে?”

সেকেন্ডের ব্যবধানে চিন্তা করে বলল,,

“নীলার ঘরে।”

“ইতিমধ্যে তোমার বাবা বোধহয় তোমার সব বান্ধবীর ঘরে তোমাকে খুঁজছে।”

মিহি হা হয়ে গেল এ ব্যাপার তার মাথায় আগে আসলো না। এখন সে কোথায় থাকবে?
অবৈধ ভাবে এক লোকের বাসায় থাকতেও কেমন যেন দেখাচ্ছে তাও স্যারের বাসায়!
ভেবে কূল পাচ্ছে না। কাঁদো কাঁদো অবস্থা হয়ে আসলো তার। নিজেকে এখন এতিম এতিম মনে হচ্ছে যার কোন আশ্রয়স্থল নেই!
স্নিগ্ধ আর কিছু বলছে না শুধু তার মতিগতি দেখছে। মিহিকেও নিজের ঘরে আশ্রয় দেওয়া টা বেমানান। সমাজ কি বলবে ছাত্রী ও শিক্ষক একসাথে থাকছে! মিহি আর না পেরে বলল,,

“স্যার কিছু বুঝতেছি না আমি, একটু সাহায্য করুন।”

দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে স্নিগ্ধ বলল,,

“তুমি আমার কলিগ নিধির বাসায় থাকতে পারো, সে একাই থাকে ঢাকায়।”

মিহি প্রসন্ন হেঁসে হালকা মাথা নাড়ল।
___________

নিধিকে সব বলেই ঘরে ঢুকালো মিহিকে। স্নিগ্ধ চলে গেল। মিহি এক কোণায় চুপচাপ বসে নিধিকে পর্যবেক্ষণ করছে। নিধি কোন কথা বলছে না এমন ভাব ধরে আছে যেন সে ছাড়া ঘরে আর কেউ নেই!
মিহি বিরক্ত হলেও চুপচাপ তাকে হজম করলো।
নিধির ব্যবহার দেখে সে বুঝতে পারলো যে সে বিরক্ত মিহি যে এখানে থাকছে। মিহি সুন্দর করে কথা বলতে চাইলে নিধি গোমরা মুখো হয়ে উত্তর দেয়। কথাই কথাই বিরক্ত হয়ে গাল বেঁকে নেয়। আর না পেরে মিহি বলল,,

“আপু, স্নিগ্ধ স্যারের নাম্বারটা একটু দিতে পারবেন?”

নিধি দিতেই মিহি অন্য রুমে চলে গেল। স্নিগ্ধ কে কল করে হাঁসফাঁস কন্ঠে বলল,,

“স্যার, আমি এখানে থাকব না।”

(চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here