ফাল্গুনের ঢেউ পর্ব -০৩

#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ৩ #নিখোজের_তালাশে
লেখিকা – Zaira Insaan

সোফায় সঁটান হয়ে বসে আছে স্নিগ্ধ। তার ডান পাশের সোফায় ভালোভাবে গা এলিয়ে শক্ত হয়ে বিমূঢ় দৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে মিহি। একটু আগেই স্নিগ্ধ তাকে নিধির ঘর থেকে নিয়ে এসেছে। স্নিগ্ধ যেন বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে তাকে নিয়ে। একটা জ্বালা! মিহির নিজেরও অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত স্যারের কাছ থেকে সাহায্য নিতে হচ্ছে। যা মিহির দু’চোখের বিষ স্নিগ্ধ। ক্লাসে কম শাস্তি পাইনি সে। হঠাৎ-ই স্নিগ্ধ বলে উঠলো,,

“নিজ বাবা মা’র সাথে কথা বলতে এতো ভয় তোমার?”

“এখন গেলে এলাহী কান্ড রটে যাবে।”

“তাহলে তুমি কি এখানেই থাকবা?”

প্রশ্ন করতেই চমকে উঠে মিহি। স্নিগ্ধ তাকে বিপাকে ফেলছে এক প্রশ্ন এতবার করতে করতে। মিইয়ে যাওয়া সুরে বলল,,

“জানিনা।”

ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল স্নিগ্ধ। এসবে দুইদিন ভার্সিটি যেতে পারিনি সে। ছুটির সময় ফুরিয়ে গেছে। কপালে তর্জনী ঘষলো বিরক্ত হয়ে। কিন্তু এমন অবস্থা যে সে বিরক্ত ও মুখ ফুটে প্রকাশ করতে পারছে না শুধু কথার ধরনের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে মিহিকে। দাঁড়ালো স্নিগ্ধ বলল,,

“রুমে গিয়ে রেস্ট নাও, যাও।”

আড়চোখে এক পলক তাকালো মিহি। তারপর নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে সেও দাঁড়ালো।
_____________

এলার্মের ধ্বনি কানে বেজে উঠতেই নিদ্রা কেটে গেল মিহির। আশপাশ তাকালো মোবাইল তো নেই তাহলে এলার্ম বাজলো কোথ থেকে? বেডের পাশে চোখ গেল ছোট ঘড়ি তে সেখান থেকেই শব্দ আসছে। অতঃপর মনে পড়লো স্নিগ্ধই তাকে রাতে দিয়ে গিয়েছিল আর কঠিন গলায় সর্তক বার্তা দিয়ে বলছিল,,

“তাড়াতাড়ি উঠবা, দেরি করে উঠা পছন্দ না আমার।”

বিরক্ত সূচক শব্দ বের করলো ও। সাড়ে ছয়টা বেজে গেছে। ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই দেখে স্নিগ্ধ কফির গ্লাস এক হাতে নিয়ে আরেক হাতে মনোযোগ দিয়ে মোবাইল কিছু একটা স্ক্রোল করছে। কপালে ভাঁজ ফেলল মিহি বিড়বিড় করে বলল,,

“এই লোকটা এতো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে কেমনে?”

অতঃপর নিচে নেমে আসে মিহি। তার চেয়ে কিছু দূর পিছনে দাঁড়াল সে। পেছনে কারোর অস্তিত্ব অনুভব করে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো স্নিগ্ধ। সামনে বসার জন্য সিট দেখালো। মিহি এক চেয়ার খালি রেখে অনেক দূরত্ব নিয়ে সামনে বসল। কফি খেতে খেতে স্নিগ্ধ বলল,,

“এতদিনে বোধহয় ঘরের পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়েছে।”

মিহি বুঝলো কিছু একটা তারপর বলল,,

“আপনি বিরক্ত হচ্ছেন?”

“অবৈধ ভাবে থাকছো বৈধভাবে থাকলে একটা কথা ছিল।”

মুখের উপর সট করে বলে দিতেই চোখ বড়বড় হয়ে গেল মিহির। আড়চোখে একবার তাকিয়ে নিজেকে আরো ভালোভাবে গুটিয়ে নিল। এ কথাই হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে গেল তার। স্নিগ্ধ মিহি কে দেখে মনে মনে ভাবলো,,

“আজকেও মনে হয় ভার্সিটি যাওয়া হবে না আমার।”
____________

সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। দিন মধ্যগতিতে এসে থামলো ঠিক সেই মুহূর্তে কল আসলো স্নিগ্ধের। ফোন স্ক্রিনে চোখ পড়তেই ভ্রু কুঁচকালো তারপর রিসিভ করল,, “হ্যালো” বলতেই অপর প্রান্তের কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না সে। ফোন কেটে দিল। মিহি আসতেই স্নিগ্ধ ভারি রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ওর উপর থতমত খেয়ে গেল ও। দু তিনবার পলক ফেলে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,,

“কি হলো স্যার?”

“কি আর হবে! তোমার বাবা ভার্সিটিতে পুলিশ নিয়ে আসছে আর ইনভেস্টিগেট করছে সবাইকে।”

“তো?”

ভাবলেশহীন ভাবে বলে মিহি। এতে যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে স্নিগ্ধ। চোয়াল শক্ত করে বলে,,

“কি মেয়ে তুমি! সবার সন্দেহ আমার উপরই আসছে কারণ তোমার বিয়ে যখন হচ্ছিল সেদিন-ই
ছুটি নিয়েছিলাম আমি, এখনও…….।

রেগে গিয়ে অর্ধেকেই থেমে গেল স্নিগ্ধ। হাঁসফাঁস অবস্থা তার। মিহি কি করবে বুঝতে পারছে না। স্নিগ্ধ আবারো বলল,,

“সবকিছুর মূল তুমি, এখন আমার যেতে হবে।”

‘সবকিছুর মূল তুমি’ এ কথা মিহির কানে নিতর ভাবে বাজতে লাগল। কপাল কুঁচকালো বাজে ভাবে। বলল,,

“তাহলে আপনি কি সবাই কে বলে দিবেন?”

যেতে লাগল কিন্তু মিহির এই বাক্যে দাঁড়িয়ে পড়লো সে। উত্তর দেওয়ার মত কিছু খুঁজে পেল না। একটু থেমে মিহি আবারো বলল,,

“আমি আপনাকে বিশ্বাস করছিলাম স্যার।”

কপাল কুঁচকালো স্নিগ্ধ। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে ও। বাঁকা হাসলো পিছনে ফিরে তাকায় বলল,,

“আমি মোটেও ইমোশনাল না।”

“আমি আপনাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছি না, শুধু এতটুকু বলছি যে আমি আপনাকে বিশ্বাস করছিলাম এখন বোধহয় সেই বিশ্বাস টা আপনি ভেঙে ফেলবেন সবাই কে জানিয়ে।”

চোখের আঁকার ছোট করল সে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু একটা উপলব্ধি করতে পারলো। মিহিও দৃষ্টি সরালো না। সে ন্যায় একই দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। স্নিগ্ধ মনে মনে বলল,, ডেঞ্জারাস’।
সে আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেল। তীব্র ভয় করছে মিহির না জানে কি বলে তার স্নিগ্ধ স্যার!
______________

ভার্সিটি পৌঁছে অফিস রুমে ঢুকলো স্নিগ্ধ। সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো সে। রুগল সাহেব আড়চোখে গম্ভীর ভাবে তাকালেন। ভেতরে ভেতরে গোপন নিঃশ্বাস ফেলল স্নিগ্ধ। শেম সাহেব বসতে বললেন।
স্নিগ্ধ বসতেই শেম সাহেব কে কিছু বলতে সুযোগ না দিয়ে রুগল সাহেব নিজেই প্রশ্ন করে বসলেন,,

“তিনদিন আগে কোথায় ছিলেন?”

“ঘরে”

স্বাভাবিক হয়ে উত্তর দিল স্নিগ্ধ।

“আমার মেয়ে মিহি কে তো চিনেন…ও নিখোঁজ তিন দিন ধরে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”

গম্ভীর ভাব রেখে হালকা মাথা নাড়ল স্নিগ্ধ। সুবর্ণসুযোগ পেয়ে স্নিগ্ধও প্রশ্ন করল,,‌

“ও নিখোঁজ কেমনে হলো?”

কিছুসময়ে সময় নিল রুগল সাহেব। উত্তর ও নিজেকে ভালোভাবে গুছিয়ে নিয়ে বলল,,

“জানিনা, সেই দিন রুমে গিয়ে দেখি সে নেই!”

কুঁচকানো ভ্রু সোজা হলো স্নিগ্ধের। ধাচ ঘুরিয়ে বলল,,

“বিয়ের মত ছিল না?”

চমকে তাকালেন রুগল সাহেব। সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে গরম হয়ে গেলেন শক্ত চোখে তাকিয়ে বলেন,,

“প্রশ্ন করার দরকার আমার আপনি দেখি আমাকেই প্রশ্ন করছেন!”

শেম সাহেব মাঝখানে বলে উঠলেন,, “থামেন।”

নিরব করে গেলেন রুগল। শেম সাহেব স্নিগ্ধ কে প্রশ্ন করল,,

“তিনদিনের ছুটি নিয়ে করছিলেন কি?”

“মাইগ্ৰেনের ব্যাথার জন্য রেস্ট নিয়েছিলাম।”

“মিহিও যেদিন নিখোঁজ সেদিন দেখি আপনিও নিখোঁজ, বাহ কি সুন্দর কাকতালীয় ভাব!”

মেজাজ গরম হলেও হজম করার চেষ্টা করলো স্নিগ্ধ। উল্টো জবাব দিলে সন্দেহ আরো বাড়বে এদের। তাই চুপ-ই করে রইল।
শেম সাহেব আরো কিছু প্রশ্ন করতে যাবে সেই মুহূর্তে কল আসলো স্নিগ্ধের। স্ক্রিনে ‘রোহিনী’ লেখা
কপাল ভারি কুঁচকালো এ মুহূর্তে সে কেন কল করলো? শেম ও রুগল সাহেবের এক পলক তাকিয়ে রিসিভ করল। রোহিনী কান্নার আভা নিয়ে তড়িগড়ি করে বলল,,

“ভাই তাড়াতাড়ি আয়, আম্মু স্ট্রোক করছে!”

বলে ফট করে রেখে দিল রোহিনী। বিমর্ষ হয়ে গেল মুখখানি থম মেরে গেল স্নিগ্ধ। দ্রুত বেরিয়ে যেতে নিলে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ালো শেম ও রুগল সাহেব। প্রশ্ন করতেই স্নিগ্ধ এদের পাত্তা না দিয়ে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে গেল।

(চলবে…)

[ গল্প দেখি একদমও রেসপন্স নেই! রেসপন্স করবেন কেমন হয়েছে একটু জানাবেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here