ফাল্গুনের ঢেউ পর্ব -০৪

#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ৪
লেখিকা – Zaira Insaan

পুরো রুম জুড়ে হাঁটতে লাগলো মিহি। বুক ভারি হয়ে আসছে। অতিরিক্ত চিন্তায় এমনি হয় তার। অস্বস্তিতা মনে বিচরণ করতে লাগল। বিছানায় বসলো বেডের পাশে টেবিলে চোখ পড়লো ছোট একটা টেলিফোন। প্রসন্ন হেঁসে ওখানে গিয়ে ফোন নিয়ে কল করলো কাউকে। রিসিভ না হতেই দুইবারের বেশি কল করলো। সময় নিয়ে রিসিভ হলো ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে মিহি বলল,,

“বাসায় কেউ আছে?”

অপাশের উত্তর শুনে মিহি বলল,,

“আচ্ছা তাহলে আমি আসছি।”
_____________

মায়ের পাশে বিমর্ষ মুখ নিয়ে বসে আছে স্নিগ্ধ। মায়ের এক হাত নিজের দু’হাত মুঠোতে চেপে ধরে আছে। ডাক্তার বলে গিয়েছিল,,

“মিনি স্ট্রোক করেছেন। কোন টেনশন ও প্রেশারে না রাখতে নাহলে পড়ে বিপদজনক ঘটনা ঘটে যাবে।”

মাথায় বিভিন্ন চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কিসের চিন্তা করে এতো!‌ কথা বলতে পারছেন না সাবা বেগম। শুধু স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছেন। স্নিগ্ধ রোহিনীকে বলল,,

“সারাদিন তো তুমি মায়ের সাথে থাকো, তাহলে মা এতো কিসের টেনশন করে?”

“তোর।”

কপাল কুঁচকালো স্নিগ্ধ। কিছু বলার পূর্বেই রোহিনী বলল,,

“তোর চিন্তায় মায়ের এই হাল!”

“আমার কারণে?”

“বিয়ে করছিস না কেন?”

কুঁচকানো কপাল সোজা হয়ে গেল। কিছু বলার নেই
সবসময় এই কথাটাই বলে এরা।

“কোনো পাত্রী দেখলে তুই না না করতে থাকিস। তোর এই বিয়ে না করা কথা মাকে টেনশন দিচ্ছে।”

“এসবে কোন মন মানসিকতা নেই আমার।”

“মা’র ইচ্ছা তোর বাচ্চা কাচ্চা দেখে দাদি হয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন। কিন্তু তুই তো তা হতে দিচ্ছিস না।”

চরম পর্যায়ে অবাক হলো স্নিগ্ধ। এক পলক তাকিয়ে দৃষ্টি সরালো। রোহিনী বলল,,

“কোনো মেয়ে পছন্দ থাকলে বল।”

“না।”

হঠাৎ-ই তার মিহির কথা মনে পড়লো। মিহি ঘরে একা আছে! কিছু বলতেও পারলো না। রোহিনী আবার বলল,,

“মা’কে তোর ঘরে রাখব। আমাদের ঘর টা বেশ গরম হওয়ার কারণে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যেতে পারে মা, ঠিক আছে?”

“হু”

বেখেয়ালি হয়ে উত্তর দিল স্নিগ্ধ।
_____________

সোফায় আরাম করে বসে টিভি দেখছে মিহি। টিভি দেখলেও টিভি দেখছে না সে, মনোযোগ অন্য জায়গায়। তনু পাশে বসলো তাকে এমন নিরলস হয়ে থাকতে দেখে বলল,,

“কি হয়েছে তোর?”

“কি আর হবে টিভি দেখছি আরকি।”

টিভির দিকে নজর দিল তনু। খবর চ্যানেল দেখছে চেহারা উদ্ভট হয়ে গেল তনুর জীবনেও খবরের চ্যানেল দেখে না মিহি আজ দেখছে! মিহির চোখের দিকে তাকালো তার দৃষ্টি স্থির অর্থাৎ সে কিছু একটা ভাবছে। রিমোট নিয়ে টিভি অফ করলো তনু। বলল,,

“টিভি দেখার জন্য এখানে এসেছিস?”

“তো?”

নির্লিপ্ত ভাবে তাকালো তনু। ঘাড় ফিরিয়ে আড়চোখে একবার দেখে নিল মিহি। বলল,,

“বাংলার পাঁচের মত চেহারা করে আছিস কেন?”

“এটা আমার তোকে বলার দরকার।”

ফিরলো মিহি। পা গুটিয়ে বসলো। বলল,,

“ভার্সিটিতে কোন ইমপোর্টেন্ট ক্লাস হয়েছে?”

“আরে না, স্নিগ্ধ স্যারের বদলে তিন দিন ক্লাস নিয়েছিল ময়ন স্যার।”

নাম শুনে বাজে ভাবে মুখ কুঁচকে ফেলল মিহি। আধমরা স্যার। তনু বলল,,

“ঘুম আসছিল স্যারের ক্লাসে। সহজ অংকগুলো করানোর দরকার আছে উনার? এসব তো আমি নিজেও পারবো, জটিল একটা অংকও করায়নি। উনাকে স্নিগ্ধ স্যারের ক্লাস নিতে বলে কে? একটা রাগ দেখাতে দেখাতে মারে আরেকটা ঘুম দিতে দিতে, কি বুঝায় কে জানে!”

বিরক্তিতে বকবক করতে লাগল তনু। এই দু’জন স্যারকে মোটেও পছন্দ করে না সে। মিহিও তার বকবক শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে বলল,,

“এবার থাম তো, শুনতে ইচ্ছা করছে না আমার।”

থামলো তনু। বকবক করতে করতে হাঁপিয়ে উঠলো। গিয়ে পানি খেয়ে আসলো সে। গম্ভীর হয়ে বসে রইল মিহি। তনু পাশে বসে ঠান্ডা গলায় বলল,,

“এভাবেই কি এদিক ওদিক ঘুরতে থাকবি! বাসায় যাবি না।”

পিলক চমকালো মিহি। ঠোঁট ভিজিয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে বলল,,

“দুনিয়াতে কতো রকম মানুষ হয়! টাকার জন্য নিজেদের জীবন বিভীষিকা করে তোলে, এ রকম জীবন আমাকেও দিতে চাইছে এরা।”

কিছুটা রাগ জমলো মুখে। নিয়ন্ত্রণ করে রাখলো সে।
তনু বোঝানোর স্বরে বলল,,

“তোকে ভালো রাখতে চাইছিল আঙ্কেল আন্টি।”

“কি রকম ভালো?‌ টাকার ভালো! এ জন্য কি আমি ওই বুড়ো লোকটার সাথে বিয়ে করে নিবো? বিয়ের পর তার সেবা করতে করতে আমার জীবন যাবে, এরপর এরপর কি? লোকটা মরবে আর আমি কম বয়সেই বিধবার ট্যাগ নিয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াবো…। আচ্ছা এটাও না বাদ দিলাম মরার কথা, তার সাথে কি আমার মেন্টালিটি মিলতো? হ্যা? আমার নানা হচ্ছে ওই লোকটার বয়সী, যতবার আমাকে দেখে বলে এরকম করো ওরকম করো এটা করিও না ওটা করিও না আর সাথে আছে দশ গাইডের লেকচার। আমি কি আঁতুড়? আমি কি জানি না আমার কি করতে হবে, যদি ওইটার সাথে আমার বিয়ে হয়ত…..যাক আর বললাম না কিছু।”

একটানা কথাগুলো বলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল মিহি। ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে। তনু বলল,,

“কথা কিন্তু ঠিক।”

“তো।”

“ভার্সিটির সবার সন্দেহ কিন্তু স্নিগ্ধ স্যারের উপর আসছে মিহি।”

অবাক হয়ে তাকালো মিহি। এসবের মধ্যে বেচারা স্নিগ্ধ অনর্থক বেঁধে যাচ্ছে। আফসোস করে মিহি বলল,,

“আমার কারণে উনার উপর সব ঝামেলা যেতে পারে।”

“তো তুই কি করবি?”

“ঠিক করতে হবে আরকি।”

“ঘরে কবে যাবি?”

কিছুটা একটা ভেবে মিহি হাঁসফাঁস কন্ঠে বলল,, “কালকে যাবো।”

(চলবে…)

[পর্ব ছোট হয়েছে জানি কিন্তু আমি ব্যস্ত ব্যস্ততার মাঝে লিখছি কেমন হয়েছে জানাবেন। ]

{ রিচেক দেওয়া হয়নি ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here