ফাল্গুনের ঢেউ পর্ব -০৫

#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ৫ #ভুল (প্রথম অংশ)
লেখিকা – Zaira Insaan

পরেরদিন সকালে ভার্সিটির ক্লাস নিতে আসলো স্নিগ্ধ। সব স্টুডেন্ট অদ্ভুত চোখে তাকাচ্ছে বারবার। যেন ছুটি নিয়ে বিরাট অপরাধ করে ফেলল। সেদিকে এতো তোয়াক্কা করল না স্নিগ্ধ। স্যারের মত গম্ভীর এটিটিউড রেখে ক্লাস শুরু করল। এবারের ক্লাস অত্যন্ত কাঠিন্য ভাবে শেষ করলো। যার জন্য ভড়কে গেল সব স্টুডেন্ট, চুপসে গেল সবাই।
এমন ভাব সে আগেও রেখে ক্লাস করাতো কিন্তু এতোটাও না। আজকে যেন নতুন ভাবে নতুন রকমের নিজের কাঠিন্য ভাব প্রকাশ করলো।‌ ক্লাস শেষে বেরিয়ে গেল সে। টিচার্স রুমে বসতেই মিহির কথা একটু মনে পড়লো। পড়ে সব মাথার থেকে ঝেড়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিল।
_____________

সময় গড়িয়ে রোদের তীব্রতা বাড়লো। সাথে বাড়লো অনেক টেনশন। নিজেকে ভেতরে ভেতরে অনেকটা গুছিয়ে নিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল মিহি। বিড়বিড় করলো কিছু বাক্যচয়ন। কপালে বিন্দু বিন্দু জমানো ঘাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঘষে মুছে নিল। আজ প্রচুর ভয় করছে নিজ মাতা পিতার সাথে দেখা করতে। সে জানে না তাকে দেখে কেমন রিয়েক্ট করবে এরা। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া স্কার্ফ ঠিক করে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। বাইরে এসে ডাইনিং রুমে তনু কে দেখলো মিহি। সে হাসিমাখা মুখ করে আছে। তনু সামনে এসে দাঁড়ালো মিহি বলল,,

“কি আমাকে জোকার লাগে? এতো হাসোছ ক্যান?”

“হাসা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।”

“অহ, সর এবার।”

মিহি সরতে নিলে তনু তার হাত ধরে হাতের মুঠোয় হাজার টাকার এক নোট গুজে দিল। মিহি অবাক হয়ে প্রশ্নাত্তুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,

“ওমা একি! সূর্য কোন দিকে উঠলো আজকে?”

হাসলো তনু বলল,,

“আঙ্কেল আন্টির জন্য মিষ্টি নিয়ে যা, যদি কড়া কথা বলে তাহলে মিষ্টি খাবিয়ে মুখ মিঠা করে দিস।”

“মিষ্টি খাওয়ালেও মুখ মিঠা হবে না।”

ভ্রু কুঁচকালো তনু বলল,,

“হু বুঝছি তিতা করোলা কেও হার মানাবে ওদের মুখ তাই না?”

চোখ কিঞ্চিৎ কুঁচকালো মিহি বলল,,

“ঠাট্টা মশকরা করবি না আব্বু আম্মু কে নিয়ে।”

হা হয়ে গেল তনু। কিছুক্ষণ তার দিকে হা করে তাকিয়ে থেকে বলল,,

“বড়ই অদ্ভুত রকমের তুই!”

তনুকে একবার জড়িয়ে ধরে প্রসন্ন হেঁসে বেরিয়ে গেল মিহি। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে অনেক কিছুই চিন্তা করতে লাগল। কি বলতে হবে না হবে। কিছুদূর যেতেই দেখা মিলল স্নিগ্ধের। গাড়ি করে কোথাও যাচ্ছিল কিন্তু মিহিকে দেখে গাড়ি থামালো। সিট বেল্ট খুলে গাড়ি থেকে বের হলো স্নিগ্ধ মিহির সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,

“কোথায় ছিলে কাল?”

মাটির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে মিহি মিইয়ে যাওয়া সুরে বলল,,

“তনুর ঘরে ছিলাম।”

কপালে ভাঁজ ফেলল স্নিগ্ধ কিছুক্ষণ অব্দি চুপ থেকে বলল,,

“কোথায় যাচ্ছো?”

“বাসায়।”

“কার?”

ফট করে প্রশ্ন করল সে। চেহারা বিচিত্র রকমের করে ফেলল মিহি মাথা নত রেখে, মাথা উঠিয়ে একপলক তাকালো বলল,,

“আমার ঘরে।”

“তুমি আজকে তোমার ঘরে যাচ্ছো?”

ভারি রকমের অবাক হয়ে বলল স্নিগ্ধ। হালকা মাথা নাড়ল মিহি। স্নিগ্ধ ‘ওহ’ বলে হালকা সুর তুলল। অনেক সময় হয়ে গেল কিন্তু স্নিগ্ধ তার মুখের সামনের থেকে সরছে না দেখে মিহি আড়চোখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো, স্নিগ্ধ অন্য দিকে তাকিয়ে কিছু একটা হিসাব মিলাচ্ছে মিহি আলতো স্বরে বলল,,

“স্যার যায় আমি?

“না।”

ভ্রু উচিয়ে চোখ বড়ো করে ফেলল মিহি। চমকালো বেশ। না যেয়ে এভাবে সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি? মিহি বলল,,

“জ্বী স্যার!?”

“গাড়িতে উঠে বসো।”

“এ্যাহ?”

এবার ওর দিকে সম্পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো স্নিগ্ধ কঠিন গলায় বলল,,

“কানে শুনতে পাও না? গাড়িতে গিয়ে বসতে বলছি।”

“কে..কেন স্যার?”

দরুণ ভয় পেয়ে গেল মিহি। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। স্নিগ্ধ শান্ত হয়ে আশ্বস্ত কন্ঠে বলল,,

“ভয় নেই, তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবো আমি।”

স্বাভাবিক হলো মিহির মুখোভাব শুকনো ঢোক গিললো। আমতা আমতা করে বলল,,

“লাগবে না স্যার আমি যেতে পারব।”

“আমি থাকতে একা যেতে হবে না তোমার, সো এতো কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে গিয়ে বসো।”

কথার ধরন বুঝলো না মিহি বলল,,

“মানে?”

মানে শুনে চোয়াল শক্ত হলো স্নিগ্ধ। দুই তিন বার পলক ফেলে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মনে মনে ভাবলো,, “গাড়িতে না বসলে এটা বোধহয় আমাকে যেতে দিবে না।” মনে মনে বিরক্ত হলেও গুটি গুটি পায়ে হেঁটে ইতস্তত বোধ করে বসলো গাড়িতে। স্নিগ্ধও বসে গাড়ি স্ট্রার্ট দিল। মিহি কাঁচের জানলা হতে বাহিরে দৃষ্টি পেতে আছে। স্নিগ্ধ তাকে ফাঁকে ফাঁকে দেখে চলছে। নিরব দুজনেই, এই নিরবতা ঠেলে স্নিগ্ধ বলল,,

“ভয় করছে?”

স্নিগ্ধের কন্ঠ শ্রবণ হতেই এক গভীর ধ্যান ভাঙলো তার। তার দিকে না তাকিয়ে নিজ কোলে দৃষ্টি রেখে বলল,,

“ভয় করে না আমার।”

“সত্যি?”

ভ্রু উঁচু করে কিছুটা জেনে নেওয়া চেষ্টা করলো স্নিগ্ধ। মিহি ‘হু’ বলে চুপ করে রইল। স্নিগ্ধ গাড়ি থামিয়ে সামনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই বলল,,

“তাহলে আমাকেও ভয় করে না বুঝি।”

গাড়ি থামিয়ে এহেন কথাই পুরোপুরি ভড়কে গেল মিহি। হাঁসফাঁস অবস্থা। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বলল,,

“আমি ওটা বোঝাতে চাইনি।”

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আড়চোখে তাকালো স্নিগ্ধ। আবারো গাড়ি স্ট্রার্ট দিল। পুরো রাস্তায় আর কোন কথা বলল না স্নিগ্ধ‌। মিহির বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো স্নিগ্ধ। মিহি স্মিত হাসলো।
বারান্দায় চেয়ারে বসে চা খাচ্ছিলেন রুগল সাহেব। নিজ বাড়ির সামনে কালো গাড়ি দেখে চশমা নিয়ে চোখে পড়লেন তিনি। গাড়িতে নিজ মেয়েকে হাসতে দেখে কপালে জোরতোর ভাঁজ ফেললেন। দাঁড়িয়ে ঘাড় বেঁকিয়ে পাশের জনকে দেখার চেষ্টা করলেন।
পরনে মেরুন রঙের শার্ট ও এক সাইডের চাপ দাঁড়ি দেখে পায়ের রগ মাথায় উঠে গেল রুগল সাহেবের। চায়ের কাপ সেখানে রেখে রেগে হুড়মুড় করে রুমে ঢুকলেন তিনি।
#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ৫ #ভুল‌ (বাকি অংশ)
লেখিকা – Zaira Insaan

মিহি একবার বাড়ির দিকে তাকালো তারপর ফিরে স্নিগ্ধের দিকে তাকিয়ে মুখে হালকা হাসি রেখে বলল,,

“ধন্যবাদ স্যার, আমাকে এখানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।”

স্নিগ্ধ হালকা মাথা নাড়ল। মিহি নিজ কোলের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,,

“আসি আমি।”

বলে একপলক তাকালো তারপর গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। বেরিয়ে গাড়ির ভেতর স্নিগ্ধের তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করল মিহি। স্নিগ্ধ প্রসন্ন চোখে বাড়ির ভেতর যেতে ইশারা করে। মিহি হালকা মাথা দুলিয়ে হাঁটা ধরল। দুই এক সেকেন্ডের মাথায় স্নিগ্ধ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে গাড়ি স্ট্রার্ট দিল।
দরজার সামনে হাত কঁচলাতে লাগল মিহি। বুক দ্রিমদ্রিম শব্দ করে লাফাচ্ছে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কোনমতে হাত বাড়িয়ে বেল চাপলো। মাথা নুয়ে রাখলো সে। কিছুক্ষণ পর এসে দরজা খুলল কেউ। ফোনে কথা বলছিল সামনের ব্যাক্তি কিন্তু মিহি কে দেখে থ মেরে গেল সে। মিহি চোখ উঠিয়ে তাকালো সামনের থেকে অস্পষ্ট স্বর কানে ভেসে আসলো,, “মিহি দিদি!” চোখ ছলছল হয়ে আসলো তার। মিলি এসে ঝাঁপটে গলা জড়িয়ে ধরলো। মিহিও ধরলো।
মিলি কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,,

“কোথায় ছিলে তুমি এতো দিন?”

মিহি প্রতিউত্তর দিল না। কারণ দেওয়ার মতো কিছুই নেই তার। মিলি হালকা দূরত্ব নিয়ে ‌দাঁড়িয়ে বলল,,

“হুম?”

মিহি তা বাদ দিয়ে অনঢ় কন্ঠে বলল,,

“মা কোথায়?”

কথাটি বলতে না বলতেই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসেন প্রণিমা। মিহি কে থম মেরে দাঁড়ান কিছুক্ষণ তারপর দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরেন তাকে। মিহিও জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। এ যেন বহু বছরের স্বাদ মিটাচ্ছেন তারা। মেয়েকে দেখে আবেগী হয়ে নোনাজল চলে আসলো চোখে। বললেন,,

“মাফ করিস আমাকে। তোকে না জানিয়ে বৃহৎ কান্ড করে ফেললাম।”

বিপরীত অর্থে কিছু বলল না মিহি। চুপচাপ সঁটান হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। প্রণিমা চোখ মুছে বললেন,,

“এতো দিন কোথায় আর কার সাথে ছিলে?”

মিহি নির্মল চাহনিতে বলে,,

“যেখানে ছিলাম ভালোই ছিলাম, অত চিন্তা করতে হবে না মা।”

প্রণিমা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিলি পাশ থেকে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বললো,,

“সব কথা কি বাহির থেকে বলবা? মিহি দিদি কে ঘরে আসতে তো দাও।”

বলে মিহির হাতের কব্জি ধরলো মিলি। মিহি প্রণিমা কে মিনমিন স্বরে জিজ্ঞাসা করল,,

“বাবা কি ঘরে আছে?”

প্রণিমা হ্যা বলার সাথে সাথেই সিঁড়ির ওখান থেকে বাজখাঁই গলায় রুগল সাহেব বললেন,,

“একে কোন সাহসে আমার ঘরে ঢুকিয়েছো?”

অদ্ভুত ভাবেই কেঁপে উঠে সবাই। মিলি হা হয়ে তার ধরা কব্জি আলগা হয়ে যায়। মিহির চোখ দুটো কিছুটা বৃহৎ আকারে হতেই রুগল সাহেব তীব্র গর্জে উঠেন বললেন,,

“একে এখনি বের করো।”

তার আওয়াজ অন্তঃপুর হতে বাইরে যেতেই দ্রুত ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলেন প্রণিমা। এতে আরো বেশি তেতে উঠলেন রুগল সাহেব। প্রণিমা সাঁটসাঁট কন্ঠে বলেন,,

“কি হয়েছে আপনার? মিহি কে বের করতে চাচ্ছেন কেন কতদিন পর সে এসেছে।”

“ওকে আমি আমার ঘরে দেখতে চাই না, ব্যাস!”

চেঁচিয়ে উঠে বলতেই প্রণিমা বলেন,,

“আস্তে বলুন বাইরে আওয়াজ যাবে, তারপর আরেক কান্ড রটে যাবে।”

রুগল সাহেব তাচ্ছিল্য ভাবে গমগমে কন্ঠে বললেন,,

“সব মান সম্মান তো ডুবিয়েছে, আর যা আছে সব ছেলের সাথে ঘুরে ঘুরে সেগুলোও মেরে খাচ্ছে তোমার মেয়ে।”

সবার চোখ বড় হয়ে যায়। মিহির চোখ যেন অবাকে কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। প্রণিমা লাজ্জ্বিত হয়ে বলেন,,

“কি সব আজে বাজে বলছেন আপনি?”

“তো জিজ্ঞেস করো তোমার মেয়ের থেকে এখানে কার সাথে আসছে!”

“কি কখন থেকে তোমার মেয়ে তোমার মেয়ে করছেন! ও আপনার ও তো মেয়ে।”

রুগল সাহেব ধমক মেরে বললেন,,

“আমার একটাই মেয়ে, সে হচ্ছে মিলি।”

অবাকের সীমা পার করলো সবাই। হঠাৎ কি হলো তার। ঠোঁট জোড়া শুকিয়ে কাঁটা কাঁটা হয়ে গেল মিহির। হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে বাড়তে লাগলো। তার পিতার প্রতিটি কথায় গলা বারবার ধরে আসলো তার। মুহূর্তেই বিমর্ষ হয়ে মুখমন্ডল। প্রণিমা আস্তে করে তার কাঁধে হাত রেখে অতি শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করেন,,‌

“কার সাথে এসেছিস?”

পিলে চমকে উঠে মিহি। এটার উত্তর কি দিবে? সে কি বলতে পারবে স্নিগ্ধ স্যারের সাথে এসেছে সে যেকিনা সবাই সন্দেহ করে বসে আছে তার উপর। নাম বললেই মস্তবড় বিপদে পড়বে স্নিগ্ধ যা একদমও চাচ্ছে না মিহি। তার উপর তার পিতা রুগল সাহেব ও দেখেছেন তাকে কোন এক পুরুষের সাথে। কাঁটায় বিঁধে থাকা পিড়া গলা শুকনো ঢোক গিলে কোনমতে দম নিয়ে বলল,,

“তনুর ভাইয়ের সাথে এসেছি।”

ভ্রু কুটি করলেন রুগল সাহেব। তিনি তনুর ভাইকে আগে একবার দেখেছিলেন, চিকন ক্যাবলা বাঁশের মতো শরীর দেখলে মনে হবে গায়ে আয়রন করে চামড়া হাড় একত্র করে দিছে।
মিহি এক পলক তাকালো তার বাবার দিকে তিনি সন্দেহ চোখ করে আছেন। বারবার ঢোক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক করতে লাগল। মিলি বললো,,

“এবার তো আসতে দেন সবই তো বলেছে মিহি দিদি।”

“না!”

প্রণিমা চোখ কুঁচকালেন। রুগল সাহেব নিচে নেমে বলেন,,

“এ এখনি আমার ঘর থেকে বের হবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি সব সত্য জানতে পারি। বের হোও!”

মিহির দিকে তর্জনী উঠিয়ে বাহিরের দিকে ইশারা করে শাসিয়ে বলেন তিনি। মিহি অস্পষ্ট স্বরে মিইয়ে গিয়ে বলল,,

“বাবা।”

“বের হোও।”

রক্তু চোখে তাকিয়ে ধমকে উঠেন। লাফিয়ে উঠে মিহি। যাওয়ার জন্য উদ্দ্যেগ হতেই মিলি এসে রুগলের হাত ধরে মিনতি করে বলল,,‌

“প্লিজ এমন করিয়েন না দিদির সাথে।”

এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে ‌রাগী স্বরে বলেন,,‌

“বেশি মিহি দিদি, মিহি দিদি করলে তোমাকেও ওর মত বের করে দিব।”

থমথমে মুখ করে ফেলল মিলি। প্রণিমার একটা কথাও শুনছেন না তিনি। অতঃপর কান্নার ভাব নিয়ে বেরিয়ে গেল মিহি।
_______________

সাবা কে ডাক্তার দেখালো স্নিগ্ধ। কিছু ঔষধের নাম লিখে দিল ডাক্তার সাহেব। তা আনার জন্য এই রাতের বষর্ণে বেরিয়ে গেল স্নিগ্ধ। গাড়ি নিয়ে গিয়ে ফার্মেসির দোকান থেকে কিছু ঔষধ নিয়ে বের হলো স্নিগ্ধ। এক ঘন্টার মতো লেগে গেছে সেখানে। গাড়ি তে বসতেই কল ঢুকলো তার ফোনে। দীর্ঘক্ষণের কথা বলা শেষ হতেই ড্রাইভ করা শুরু করলো।
বৃষ্টির কারণে কাঁচের গ্লাস ঝাঁপসা হয়ে গেল। ড্রাইভ করার অবস্থায় পাশের ক্যাফের দিকে তাকাতেই দৃষ্টি সজাগ হয়ে আঁটকে গেল। মিহি এই বন্ধ ক্যাফের সামনের সিটে বসে কান্না করতে করতে মিষ্টি বন খাচ্ছে । কপাল কুঁচকালো স্নিগ্ধ। পরনে সাদা থ্রি-পিস বৃষ্টির কারণে ভিজে জবজবে হয়ে গেছে কিন্তু গায়ে কালো ওড়নার কারণে তার নিষিদ্ধ জায়গা ভালোভাবে ঢেকে আছে। এই বৃষ্টিতে সে বসে কাঁদতে কাঁদতে মিষ্টি বন খাচ্ছে। দেখতেও তাকে কতটা হাস্যকর দেখাচ্ছে। ভেজাবিড়ালের মত হয়ে আছে। গাড়ি ঠিক ছালের নিচে পার্ক করলো যাতে সে বেরিয়ে গেলে ভিজে না যায়। মিহির সামনে এসে দাঁড়ায় বলে,,

“বন খেয়ে খেয়ে এখানে কান্না করার মানে কি?”

আচমকা পরিচিত আওয়াজ কানে ভেসে আসতেই চোখ তুলে তাকালো। স্নিগ্ধ বুকে দুহাত গুজে অতি গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে। মিহি দাঁড়াতেই কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়ে দূরত্ব টানলো নিজেদের মধ্যে স্নিগ্ধ। মিহি থমথমে গলায় বলল,,

“স্যার!”

তার কন্ঠস্বর ভিন্ন হয়ে আসতেই ভ্রু কুটি করল স্নিগ্ধ। মিহি কিছু একটা বুঝে বলল,,

“কিছু না সরি স্যার, আপনি আসতে পারেন।”

বলে আবারো বসে পড়লো মিহি। চোখ কুঁচকে সম্পূর্ণ দৃষ্টিতে এক দেখে নিল তারপর ওর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে বলল,,

“উলটপালট কিছু করলে তোমার জন্য নাহয় আমি ফেসে যাব, বলো।”

বলে হাত ছেড়ে দিল। মিহি হাঁসফাঁস করতে করতে বলে দিল সব। স্নিগ্ধ বাকরুদ্ধ হয়ে সব শুনলো অতঃপর বলল,,

“তোমার বাবা তাহলে আমাকে দেখেছে?”

“হয়ত, হয়ত না!”

তর্জনী দিয়ে কপাল ঘেষলো সে তারপর বিরক্ত হয়ে বলল,,

“আসো আমার সাথে।”

(চলবে…)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here