“ফেমাস_বর🙈 পার্ট_৯

#ফেমাস_বর🙈
#পার্ট_৯
#লেখিকা_রামিসা_মালিয়াত_তমা
তমা কফি বানাচ্ছে।আর ঠিক এই সময়ে তমা নিজের কাঁধে কারোর উপস্থিতি টের পেলো।তমা পিছনে ঘুরল আর সাথে সাথে প্রায় চিৎকার করে বলে উঠল,

তমা-এইসব কী,নিশান ভাইয়া?আপনি এভাবে আমার পারমিশন ছাড়া গায়ে হাত দিলেন কেন?হাউ ডেয়ার ইউ টু্ টাচ মি?

নিশান-হাহ,কেন তোকে কী একমাত্র তোর আদনান ভাই-ই টাচ করতে পারবে নাকি?আমরা অন্যরা পারবনা?আর কী বললি?তোকে টাচ করার জন্য এখন আমার পারমিশন নিতে হবে?নো ওয়ে রে!

নিশানের কথা শুনে তমার অনেক রাগ লাগল।নিশানের হাত নিজের শরীর থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল,

তমা-জাস্ট শ্যাট আপ,নিশান ভাইয়া।ছি:ছি:ছি…

তমা কথা শেষ করতে পারলনা তার আগেই নিশান তমাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল।

তমা-ছাড়েন,নিশান ভাইয়া।প্লিজ ছাড়েন!(তমা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল)

তমা চেষ্টা করেই যাচ্ছে তো করেই যাচ্ছে।কিন্তু তমা যতোই নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে নিশান ততোই তমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে।নিশানের শক্তির সাথে কোনোমতেই পেরে উঠছে না তমা।
শেষ পর্যন্ত তমা আর উপায় না পেয়ে রান্নাঘরের স্ট্যান্ডে থাকা ছুঁড়ি দিয়ে নিশানকে একটা আঁচড় দিল।আঁচড় দেওয়ার ফলে নিশান তমাকে ছেড়ে দিল আর ব্যাথায় চিৎকার করে উঠল।

আদনান-কেন যেন চিৎকার দিলো বলে মনে হলোনা?(আদনানসহ নিশার বাকি কাজিনরা তখনও গার্ডেনে ছিল)

বাকিরা-হ্যাঁ,তাই তো।

আদনান কিছুটা ভয় পেয়ে গেল।তার তমুর আবার কিছু হয়ে যায়নি তো?এদিকে নিশানও গার্ডেনে নেই!আদনান আর কিছু না ভেবে দৌড়ে ভিতরে চলে গেল।আদনানের পিছে পিছে বাকিরাও এলো।ঘর থেকে তমার মা,খালা আর চাচিরা চিৎকার শুনে বের হয়ে এলো।সবাই এসে দেখলো নিশানের হাত থেকে গলগল করে রক্ত পরছে।আর তমা রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছে।ছুঁড়িটা নিচে পরা।

নিশানের মা-আল্লাহ গো,আমার ছেলের কী হইসে?নিশান এই নিশান!আব্বু,কী হইসে তোর?এই তমা,নিশানের কী হইসে?নিশান!এই নিশান!(নিশানকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে বলল)

নিশান হাত ব্যাথায় কাতরাতে লাগল আর বলল,

নিশান-আম্মু,তমা আমাকে ছুঁড়ি দিয়ে আঁচড় দিসে হাতে।আমি রান্নাঘরে ওকে বলতে আসছিলাম যে আমাকেও কফি বানাই দিতে।কিন্তু তমা আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাতে ছুঁড়ি বসিয়ে দিলো!(মিথ্যা কথাগুলো সুন্দরমতো গুছিয়ে বলল,যেন সবাই বিশ্বাস করে)

নিশানের মা-কী?ছি:ছি:ছি:।নিশা তোর সাহস কী করে হয় নিশানের গায়ে আঁচড় দেওয়ার?মানিতা,কী শিক্ষা দিয়ে বড় করস নিজের মেয়েকে?নিজের বড়ভাইয়ের গায়ের কিনা ছুঁড়ি মারে?তোমার মেয়ে তো আমার নিশানকে আরেরটু হইলে খুনই কইরা ফেলত।আর এই যে,তোর শরম লাগেনা নিজের বড় ভাইরে আঘাত করতে?কী ক্ষতি করসে নিশান তোর হ্যাঁ?কী ক্ষতি করসে(চিল্লিয়ে বলতে লাগল)

খুনের কথা শুনে তমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে লাগল।আর,নিশানের এতো সুন্দর করে গুছানো মিথ্যা কথাগুলো শুনে তমা হতবাক হয়ে গেল।

তমা-দেখো,আমি নিশান ভাইয়াকে ছুঁড়ি দিয়ে আঘাত করেছি কিন্তু এর কারণ হলো…..(চোখের পানি মুছতে মুছতে বলছিল)

কথা শেষ করার আগেই মানিতা কাবির(তমার মা)এসে তমার গালে সজোর সবার সামনে একটা চড় দিলেন।

তমা-আম্মু..(কাঁদো কাঁদো গলায় বলল)

মানিতা কাবির-চুপ,কোনো কথা বলবিনা তুই।একদম কোনো কথা বলবিনা।লজ্জ্বা করেনা একে তো এক কুকর্ম করেছিস তারউপর আবার সেটা নিয়ে গলাবাজি করছিস।লজ্জ্বা করেনা তোর?

তমা চুপচাপ মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছে আর মানিতা কাবিরের কথাগুলো শুনছে।আজ সে কিছু না করেও দোষী,অথচ যে দোষ করল তাকে নিয়ে সবাই কত মাতামাতি করছে!তমা মাথা নিচু করেই একবার নিশানের দিকে তাকালো।নিশান তমাকে দেখে একটা ডেভিল স্মাইল দিলো।

এদিকে আদনান কিছুই বুঝতে পারছেনা কি থেকে কী হলো।সামান্য কফি চাওয়ার জন্য তমা নিশানের হাতে আঁচড় দিবে এটা বিশ্বাসযাগ্য না।কেননা,তমা খুবই সেন্সিটিভ একটা মেয়ে।

নিশানের মা-অনেক হইসে এই বাড়ির ঢংচং দেখা।এই চলো তো সব,চলো।আর কোনোদিন এই বাড়ির ছায়ায়ও মাড়াবোনা।(মানিতা কাবির কে খোঁচা দিয়ে বলে গেল)

সবাই একে একে চলে গেল।

মানিতা কাবির-ভালো লাগসে এবার তোর?খুশি তুই এইবার?জীবনে তোর দাদার বাড়ির সামনে কোনোদিনও মুখ নিচু করতে হয়নি।সবাই কত স্নেহ করে,সম্মান করে,ভালোবাসে!এখন আর সেটা করবে?বল করবে কিনা?তোকে আগের সেই আদরটা কেউ করবে?(চিৎকার করে বলতে লাগল)

এই বলে মানিতা কাবির ওখান থেকে চলে গেলেন।
একা শুধু তমা দাঁড়িয়ে রইল রান্নাঘরে।ফ্লোরে পরে থাকা ছুঁড়িটার দিকে তাকিয়ে রইল!তারপর সেটা হাতে নিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো।

অন্যদিকে আদনান চেষ্টা করছে মানিতা কবিরকে শান্ত করার।

আদনান-আহ,মানিন!(আদনান ছোটবেলা থেকেই মানিতা কাবিরকে মানিন বলে ডাকে)এতো রাগ করছো কেন তুমি?শোনো মানিন,তমুকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি।তমু জীবনেও কোনোদিন এমন কোনো কাজ করবেনা যেটাতে এই বাড়ির কারো সম্মান নষ্ট হয়।

দিনা বাদে বাকিরা-হ্যাঁ,একদম।

আদনান-আমার যতোদূর মনে হয় তমু বাধ্য হয়ে এই কাজটা করেছে।নাহলে সামান্য কফি চাওয়ার জন্য তমু ওই ছেলেকে ছুঁড়ি দিয়ে আঁচড় দেওয়ার মতো মেয়ে না।

মানিতা কাবির কিছু ভাবতে পারছেন না।খাটে চিত হয়ে শুয়ে আছেন মাথায় হাত দিয়ে।উনার প্রেসার বেড়ে গেছে এসবকিছু দেখে।

আদনান-দিনা,বাইরে ডক্টর দাঁড়িয়ে আছেন।একটু ডেকে নিয়ে আসো তো।

দিনা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেলো।

ডক্টর-কী হয়েছে,মিসেস কাবির?

আদনান-একচুয়ালি,উনার শরীর খারাপ লাগছিল।প্রচন্ড ঘামছেন উনি।ঘরে ফুল স্পিডে এসি-ফ্যান ছাড়া,তবুও অনেক ঘামছেন।মেইবি প্রেসারটা হাই হয়ে গেছে।

ডক্টর-লেট মি চেক।(কিছু জিনিস চেক করার পর)ইয়েস,ইউ আর রাইট।উনার প্রেসার হাই হয়ে গিয়েছে।আমি একটা ঘুমের ঔষুধ দিচ্ছি,কাইন্ডলি সেটা উনাকে খাইয়ে দিন।আর ডু নট ডিস্টার্ব হার,প্লিজ!লিভ হার এলোন।শি নিড টু টেক রেস্ট।

এই বলে ডক্টর ঘর থেকে বের হয়ে গেল।একটুপর আদনান ঔষধটা নিয়ে ঘরে ঢুকল আর মানিতাকে ঔষুধ খাইয়ে সবাইকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

এদিকে তমা নিজের ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে চুপচাপ বেডের মধ্যে বসে এক ধ্যানে ছুড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে!

তমা-আজ কিছু না করেও আমার উপর খুনি+দুশ্চরিত্রার অপবাদ এসেছে।আজ আমার মা-ও আমাকে ভুল বুঝেছে।পরিবারের সবাই ভুল বুঝল আমাকে।কেউ আমার কথা শুনতে চেলোনা!কেউ না!আচ্ছা,আমি কী এতোটাই খারাপ?এতোটাই?(তমা ছুঁড়ির দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল)

তমা এবার ছুঁড়িটা হাতে নিল।হাতে নিয়ে সেটার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইল।

অন্যদিকে,
দিনা-জাস্ট তমার জন্য আজকের এই সিনক্রেট টা হলো।হাতের মধ্যে ছুঁড়ি দিয়ে আঁচড়।সাহস কী করে হলো ওইটুকুনি মেয়ের।

আদনান-শ্যাট আপ,দিনা।না জেনে শুনে কথা বইল না।আমরা কেউই তখন ওখানে ছিলাম না।সো আমরা খালি তমাকেই দোষ দিতে পারিনা।ঐ নিশান না কী যেন নাম?ঐ ছেলে কী একদম ধোয়া তুলসি পাতা নাকি?আর,আমি আগেও বলেছি এন্ড এখনও বলছি যে নিশ্চয় এমন কিছু সেখানে হয়েছিল যার জন্য তমা বাধ্য হয়ে এমনটা করেছে।

আবরার-ভাইয়া,আমার মনে হয় নিশান তমার সাথে খারাপ কিছু করতে চেয়েছিল।নয়তো তমা যেমন ও জীবনেও সামান্য কফির জন্য কারোর গায়ে ছুঁড়ি দিয়ে আঘাত করতেই পারেনা।আ’ম ডেম শিউর!

আদনান-তেমন কিছু যদি হয়ে থাকে তাহলে ঐ শালার অবস্থাও আমি খারাপ করে ছাড়বো!

দিনা-নিশান কী তাহলে মিথ্যা কথা বলেছে নাকি?আর মিথ্যা কথা কেন বলবে সে?তার লাভ কী মিথ্যা কথা বলে?

আদনান-এই দিনা,তুমি দয়া করে একটু চুপ করো তো।তোমার যদি এখানে তমুকেই খালি দোষী মনে হয় তাহলে প্লিজ তুমি চুপ থাক।বাট আর একটা কথা বলবানা তমুর সম্পর্কে!

দিনা আর কিছু না বলে ওখান থেকে চলে গেল।

আদনান-আচ্ছা,তোরা কেউ কফি খাবি?আমি নিজের জন্য বানাতে যাচ্ছি।

তুরিন-সে কী আদনান!তুই কষ্ট করে বানাতে যাবি কেন?আমি বানিয়ে দেই!

(তুরিন হচ্ছে তমার বড় বোন।বিয়ে হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই।কয়েকটাদিন এসেছিলো এই বাড়িতে থাকতে)

আদনান-না,তুরু!তোকে কষ্ট করতে হবেনা।নিজের বাপের বাড়িতে এসেছিস।জাস্ট চিল,হেয়ার!

(আদনান আর তুরিনও পিঠাপিঠি।তবে আদনান তুরিনের চেয়ে ৬ মাসের বড়)

আবরার-আহারে,ভাইয়া।বারবার তোমার কফি বানানোর সময়ই যতো অঘটন ঘটছে!(ইয়ার্কি করে বলল)

আদনান-তা যা বলেছিস।আমার কফির উপর কুফা লেগেছে।

এই বলে আদনান কফি বানানোর জন্য চলে গেল রান্নাঘরে।কফি বানাতে বানাতে আদনান ভাবল কফিতে একটু লেবু কেটে দিবে।তাতে কফির ফ্ল্যাভারটা একটু লেমন লেমন হবে।এই ভেবে আদনান লেবু কাটার জন্য ছুঁড়ি খুঁজতে নিলে দেখলো যে ছুঁড়ি নেই।আদনান পুরো রান্নাঘর তন্নতন্ন করে খুঁজলো।কিন্তু কোথাও ছুঁড়ি পেলোনা।

আদনান-ছুঁড়িটা কোথায় রেখেছে এরা!ওয়েট,ছুঁড়ি দিয়েই তো একটু আগের ঘটনাটা ঘটল।তার মানে তমু?তমু আবার ছুঁড়িটা নিয়ে নিজের ঘরে বসে নেই তো?ওহ শিটম্যান!

এই বলে আদনান দৌড়ে রান্নাঘর থেকে বের হলো।আদনানকে এভাবে বের হতে দেখে তুরিন,আবরার আর অন্যান্য কাজিনরা আদনানের কাছে এসে বলল,

সবাই-কী হয়েছে?(ভয় পেয়ে বলল)

আদনান-রান্নাঘরে ছুঁড়ি নেই!রান্নাঘেরের কোথাও ছুঁড়ি নেই।আমি শিউর তমু ছুঁড়ি নিয়ে নিজের ঘরের ভিতরে আছে।

তুরিন-সেকি?সেরকম কিছু হলে তো এখনই দরজা খোলার ব্যবস্হা করতে হবে!

আয়েশা-ইশ,মেয়েটা আবার ভুল করে কিছু করেনা বসে!

আদনান-আস্তে!সবাই একটু আস্তে কথা বলো!মানিন উঠে পরলে আরো সমস্যা বাড়বে।আমি দেখছি কী করা যায়!

এই বলে আদনান অনেকক্ষন তমার দরজায় কড়া নাড়ল।সবাই অনেকক্ষন তমাকে ডাকল,কিন্তু কোনো সাড়া-শব্দ পেলোনা!

আদনান-নাহ,আর দেরি করা ঠিক হবেনা!এখনই যে করেই হোক ভিতরে ঢুকতে হবে,নাহলে অনেক বড় কিছু হয়ে যাবে!

এই বলে আদনান তমার ঘরের পিছনের দিকে গিয়ে মই দিয়ে উপরে উঠতে লাগল!

(তমাকে কী সুইসাইড করাবো নাকি না?,সবার মতামত জানতে চাই)

চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here