বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ১৬

#বর্ষণের সেই রাতে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব: ১৬
.
—- “এবার কোথায় পালাবে বেবি? তোমার হাইড এন্ড সিক খেলার সময় এবার শেষ। এবার এই রিক চৌধুরী তোমাকে বোঝাবে সে কতোটা ভয়ংকর। তোমার এমন হাল করবো যে রিক চৌধুরীর খাচা থেকে পালানোর চিন্তা করলেও তুমি কেপে উঠবে। বি রেডি সুইটহার্ট। আমি আসছি।”
___________

প্রায় দুইঘন্টা যাবত ল্যাপটপে মুখ গুজে বসে আছে অনিমা মাথাটা গরম হয়ে আসছে ওর। আরো কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করে ঠাস করে ল্যাপটপটা বন্ধ করে প্রায় আছাড় মেরে রাখল খাটের ওপর, তারপর মাথাটা চেপে ধরল দুই হাত দিয়ে। মাথা ছিড়ে যাচ্ছে ওর, কিছুতেই কিছু মেলাতে পারছেনা। কিকরে কী করবে ও? প্রায় দেড় বছরের জার্নালিসম্ এ ও কতো মানুষকে ন্যায় দিয়েছে, নিজের প্রাণের ঝুকি নিয়ে সমাজের কতো কিটকে এক্সপোস করেছে অথচ নিজের বাবার খুনিকে এক্সপোস করতে পারছেনা ও? নিজের বাবাকে ন্যায় দিতে পারছেনা? সন্তান হিসেবে এর চেয়ে লজ্জার কী হতে পারে? সোজা হয়ে বসে নিজের নাকের পাশের ঘামটা মুছে কিচেনে চলে গেলো অনিমা। এইমুহূর্তে এক কাপ কফি খুব দরকার ওর। কফি করে নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে রাতের মেঘাচ্ছন্ন স্তব্ধ আকাশের দিকে তাকিয়ে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে ভাবছে ওর এই ব্যার্থতার কারণ কী? ওর ভয়? রিকের প্রতি ওর ভয়ই কী ওর সবচেয়ে বড় জড়তা? কিন্তু কী করবে ও? ও তো চেয়েও এই ভয় কাটিয়ে উঠতে পারছেনা। ওই লোকটার মুখটা মনে পরলেই ভয়ে শিউরে ওঠে ওর শরীর। হাত দিয়ে রেলিং এ একটা বাড়ি দিয়ে বলল
—- ” আব্বুকে খুব ভালো করে চিনি আমি, উনি এতো কাঁচা কাজ করবেন না। কিছুতো রেখে গেছেন উনি? কোনো ক্লু অবশ্যই থাকবে যেটা আমাকে সাহায্য করবে ঐ রঞ্জিত চৌধুরীর মুখস খুলতে, আমার আব্বু সুইসাইভ করেননি ওনাকে খুন করা হয়েছে সেটা প্রমাণ করতে, কিছু তো থাকবেই। কিন্তু সেটা কী? কোথায় পাবো? কোথায়?”
____________

মিস্টার রঞ্জিত গাড়িতে বসে ফোন টিপতে টিপতে ফ্রন্ট সিটে বসা কবির শেখ কে উদ্দেশ্য করে বললেন
—- ” কিছু বলেছে রিক? মেয়েটার খোজ পেয়েছে?”
কবির শেখ পেছনে ঘুরে বললেন
—- “বাড়ি ফেরেনিতো এখোনো বাড়ি ফিরলে জিজ্ঞেস করতে হবে।”
—- ” ওকে তো কালকেই কলকাতা যেতে হবে।”
কবির শেখ ভ্রু কুচকে বললেন
—- ” কেনো? কলকাতা কেনো?”
—- ” কাজ আছে, সামনে ইলেকশন অথচ কোনো হেলদোল নেই ছেলেটার। এমন করলে জিতবে কীকরে?”
কবির শেখ মনে মনে ভাবলেন, জিততে তো হবে জিজা জ্বি, নইলে আমার এতো কষ্টে সাজানো খেলাটা বিগরে যাবে যে। এসব ভাবনা থেকে বেড়িয়ে বললেন
—- ” কিন্তু মেয়েটাকে খোজার এতো তাড়া কীসের আপনার?”
মিস্টার রঞ্জিত ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে বললেন
—- ” তাড়া আছে। আগেও বলেছি ওই মেয়েকে যতোটা ভীতু আর বোকা ভাবো তার এক অংশও ও না। রিক কে ভয় পেলেও আর কিচ্ছুকে ভয় পায়না ও। আর ও ওর বাবার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার প্রাণপণ চেষ্টা করছে তাও সবার আড়ালে।”
কবির শেখ হেসে বললেন
—- ” বাবাই আছেতো ও সামলে নেবে ঐ মেয়েকে।”
মিস্টার রঞ্জিত চিন্তিত কন্ঠে বললেন
—- ” সেটা জানি, তবে মনে রেখো যেদিন রিককে ছাড়াও ওই মেয়ে অন্য কাউকে ভয় পেতে শুরু করবে সেদিন থেকেই আমাদের ধ্বংসের শিঙ্গা বেজে উঠবে।”
এটা শুনে কবির শেখ ও চিন্তায় পরে গেলেন। মেয়েটা রিককে ছাড়া আর কাউকে ভয় পেতে শুরু করলে সত্যিই সমস্যা হয়ে যাবে। কিন্তু সত্যিই কী এমন কেউ আসবে? নাকি এসে গেছে?
____________

কফিশপের সামনে দাড়িয়ে ওয়েট করছে অনিমা, অরুমিতা, তীব্র, আদিব আর আশিস। এইকয়দিনে বেশ ভালো বন্ধু হয়ে গেছে ওরা সকলে, একে ওপরের সাথে বেশ ফ্রি হয়ে গেছে, এখন অরুমিতারও আর আশিসকে আগের মতো বিরক্তিকর লাগেনা, তবে এদের টম এন্ড জেরি শো চলতে থাকে সারাক্ষণ। ওরা সবাই আদ্রিয়ানের জন্যেই ওয়েট করছে প্রায় পনেরো মিনিট যাবত কিন্তু আদ্রিয়ানের আসার কোনো নাম গন্ধও নেই। আদিব ভাইয়া হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো
—- ” আরে ইয়ার এতো লেট কেনো করছে ও? এরকম তো করেনা।”
অরুমিতা রোডের দিকে তাকিয়ে বলল
—- ” আরে জ্যামে আটকে আছে হয়তো। আজকাল রোডের যা অবস্হা।”
আশিস অরুমিতাকে পিঞ্চ করে কিছু বলবে তার আগেই আদিব চোখ রাঙিয়ে চুপ করিয়ে দেয় ওকে। অনিমা দাঁত দিয়ে নখ কাটছিলো, ওদের কথা শুনে হাত নামিয়ে বললো
—- “এই রোডের জ্যামকে ইচ্ছে করে লাথি মেরে উগান্ডা পাঠিয়ে দেই।”
সবাই হেসে দিলো ওর কথা শুনে। আশিস অবাক হয়ে বলল
—- “এক লাথিতে এতোগুলো গাড়ি?”
অনিমা ভ্রু কুচকে আশিসের দিকে তাকিয়ে বলল
—- “আমি কখন বললাম যে গাড়িদের উগান্ডা পাঠাবো? আমিতো বলেছি জ্যামকে পাঠাবো, গাড়ি যতখুশি চলুক, চলতে চলতে ইঞ্জিনে আগুন ধরে যাক, টায়ার বাস্ট হয়ে যাক, তাতে আমার কী? শুধু জ্যাম না থাকলেই হয়।”
বলেই আবার রোডের দিকে উঁকি দিয়ে আদ্রিয়ান আসছে কী না চেক করে নিলো, আশিস বোকার মতো তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। অরুমিতা আর তীব্র মুখ টিপে হাসছে, কারণ ওরা অনিমার এরকম উদ্ভট কথাবার্তার সাথে পরিচিত হয়ে গেছে। আদিব হাসতে হাসতে বলল
—- ” প্রথম যখন দেখেছিলাম তোমায় তো মাটির পুতুল মনে হয়েছিলো, তুমি যে এতো কথা বলো বুঝতেই পারিনি।”
অনিমা আদিবের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল
—- ” এটা তো ট্রেইলার, পিকচার এখোনো বাকি আছে আমার ভাই।”
আদিব ভ্রু উচু করে ঠোঁট বাকিয়ে বলল
—- ” আরিব্বাস! কী দিলে।”
অনিমা ওর লং শার্ট এর কলার ঠিক করে একটু স্টাইল নিলো। আশিস হা করে তাকিয়ে থেকে বলল
—- ” আরে এক অঙ্গে কতো রূপ। সো ট্যালেন্টেট।”
সেটা শুনে অরুমিতা ভ্রু কুচকে বলল
—- ” তো সবাই আপনার মতো গাধা হবে নাকি।”
আশিস চোখ ছোট ছোট করে অরুমিতার কাছে গিয়ে বলল
—- ” আমি গাধা?”
অাশিস কাছে আসাতে অরুমিতা একটু ইতোস্তত করে সরে দাড়িয়ে বলল
—- ” আপনার কোনো সন্দেহ আছে নাকি?”
আশিস কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে অরুমিতার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা ফ্লার্টি হাসি দিয়ে বলল
—- ” সুন্দরীদের মুখে যেকোনো ডাক শুনতেই ভালো লাগে। হোকনা সেটা গাধা।”
আদিব ভাইয়া আশিসের পিঠে একটা চাপড় দিয়ে বলল
—- ” হ্যা তোর মতো গাধাদেরই ভালোলাগে।”
সকলেই হেসে দিলো। তীব্র একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল
—- ” সিরিয়াসলি ভাইয়াতো এতো লেট করেনা। একটা ফোন করে করে দেখা উচিত এখন।”
আদিব ফোন বের করতে করতে বলল
—- ” হ্যা কল দিয়েই দেখি।”
আদিব কয়েকবার ফোন দেবার পরেও ফোন রিসিভ করলো না আদ্রিয়ান। আশিস বলল
—- ” আরে এরকম করার মানে হয়? সবাই টেনশন করতে পারে এটা ভাববে না?”
অনিমা বিরক্ত হয়ে ওখানে রেখে দেওয়া বাতিল একটা উচু টেবিলে উঠে বসে বলল
—- ” আপনারা মাঝে মাঝে একটু বকে ধমকে দিতে পারেননা ওনাকে?”
আদিব শব্দ হেসে দিয়ে বলল
—- ” ওর দেওয়া বকা আর ধমকি হজম করেই শেষ করতে পারিনা আবার আমরা বকবো?”
অনিমা ভ্রু কুচকে বলল
—- ” কেনো? কোথাকার কোন মহারাজ উনি যে ওনাকে এতো ভয় পেয়ে চলতে হবে?”
এটা শুনে অরুমিতা অনিমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
—- “এমনভাবে বলছিস যেনো তুই ভয় পাস না ওনাকে?”
অনিমা লাফ দিয়ে টেবিল থেকে নেমে একটু ভাব নিয়ে বলল
—- ” আমি? এই অনিমা ভয় পাবো ওনাকে? হাহ।”
তীব্র হাত ভাজ করে দেয়ালে হেলান দিয়ে বলল
—- ” সিরিয়ালসি? আমরা সবাই ভয় পাই আর তুই ভয় পাস না ওনাকে?
অনিমা হেসে দিয়ে বলল
—- “দূর। উনি আবার ভয় পাওয়ার মতো মানুষ নাকি?”
এরমধ্যেই আদ্রিয়ান এলো, অনিমা উল্টো ঘুরে আছে তাই দেখতে না পেলেও বাকিরা দেখতে পেলো। ওরা কিছু বলবে তার আগেই আদ্রিয়ান ইশারায় সবাইকে চুপ থাকতে বলল। সবাই চুপ করে রইল, সবাইকে চুপ করে থাকতে দেখে অনিমা ভ্রু কুচকে বলল
—- ” হোয়াট? ঠিকিতো বললাম ওনাকে ভয় পাওয়ার কী আছে? এমন রিয়াকশন দেও সবাই যেনো উনি বাঘ ভাল্লুক। যেই একটা মানুষ তাকে আবার এতো ভয় পায় হুহ।”
আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে পিলারে হেলান দিয়ে শুনছে, অরুমিতা একটু মেকি হেসে বলল
—- ” হয়েছে বোন বুঝেছি তুই অনেক সাহসী এবার অফ যা।”
অনিমা বিরক্তিকর চোখে অরুমিতার দিকে তাকিয়ে বলল
—- ” হুরর। দেখলি? তুইও এমনভাবে ভয় পেয়ে আছিস যেনো উনি ঠিক এখানেই দাড়িয়ে আছে। আপনারা সবাই সত্যিই।”
আদিব একটু কেশে বলল
—- “আচ্ছা এসব কথা তো পরেও বলা যাবে।”
—- “নাহ আমাকে দেখুন, কতো সাহস আমার আমিতো ওনাকে ভয় পাই ই না বরং উনি আমাকে ভয় পান, আমার সব কথা শুনে চলেন। যা বলি ঠিক তাই করেন।”
আদ্রিয়ান এবার মুখটা সিরিয়াস করে পেছন থেকে বলে উঠলো
—- “তাই?”
—- ” সন্দেহ আছে?”
—- ” আপনার কথায় সন্দেহ করবো আমার ঘারে কটা মাথা বলুন?”
—- ” এইতো আপনি একমাত্র চিনেছেন আমা..”
এটুকু বলে পেছনে তাকিয়ে অনিমার আওয়াজ আটকে গেলো। আদ্রিয়ান গম্ভীর মুখে দাড়িয়ে আছে। সেটা দেখে ও একটা শুকনো ঢোক গিলল। তারপর কোনোরকমে হাসার চেষ্টা করে বলল
—- ” হাই। কখন এলেন?”
আদ্রিয়ান পকেটে হাত ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে গম্ভীর মুখেই বলল
—- “যখন আপনি আমার প্রসংশা করছিলেন।”
এটা শুনে অনিমা মুখে হাসি রেখেই পেছন ঘুরে বাকিদের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙানি দিলো অর্থাৎ আগে কেনো বলোনি উনি শুনছেন? তারপর একটা কেবলাকান্ত হাসি দিয়ে সামনে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো। আর আদ্রিয়ান গম্ভীরভাবেই অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
—- “তো মহারাণী ভেতরে যাবো? না মানে আপনার কথা না শুনলে যদি গর্দান নিয়ে নেন? তাই আপনি অনুমতি দিলে ভেতরে যেতে পারি আরকি।”
অাদ্রিয়ানের কথাগুলো অনিমা বেচারির হাসি একটু একটু করে গায়েব করে দিচ্ছে। তবুও নিজেকে সামলে হাসার চেষ্টা করে বলল
—- ” হ্যা হ্যা সিউর চলুন। আপনারি তো অপেক্ষা কর…”
আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান ভেতরে চলে গেলো। বাকিরাও অনিমার দিকে একটা হতাশাজনক দৃষ্টি দিয়ে ভেতরে চলে গেলো। অনিমা মাথা হালকা চুলকে বিরবির করে নিজেই নিজেকে বলল
—- ” ইউ স্টুপিড কথা বলার সময় একটু ডানে বামে তাকিয়ে বলবিনা? এমনিতেও তোর আর কী দোষ বল? তুই কীকরে জানবি যে ঐ সিংহ তোর পেছনে দাড়িয়ে কথা শুনছে। আর উনিও বা কী? এভাবে লুকিয়ে কেউ কথা শোনে? সামান্য ম্যানার্স ও নেই। ”
এটুকু বলেই চমকে চারপাশে তাকিয়ে বুকে থু দিয়ে বলল
—- ” আবারো কী সব বলছিলাম ভাগ্যিস শোনেনি, আগে ওখানে গিয়ে দেখি কী হচ্ছে। আল্লাহ বাচিয়ে দিও প্লিজ।”
বুকে ফু দিয়ে ছুটে ভেতরে চলে গেলো অনিমা।
______________

রিক বাড়িতে ঢুকতেই মিসেস লিমা বললেন
—- ” তোর বাবা রুমে গিয়ে দেখা করতে বলেছেন।”
রিক ভ্রু কুচকে বলল
—- ” কেনো?”
মিসেস লিমা বিরক্ত হয়ে বললেন
—- ” আমি কী জানি? তোরা বাপ বেটা মামা মিলে কী কী করে বেড়াস আমাকে বলিস কিছু?”
রিক কিছু না বলে মিস্টার রঞ্জিত এর রুমে গিয়ে বলল
—- ” ডেকেছিলে?”
সোফায় বসে ফাইল দেখছিলেন মিস্টার রঞ্জিত আর কবির শেখ। ছেলের কন্ঠের আওয়াজ পেয়ে ফাইলের দিকে তাকিয়েই বললেন
—- ” মেয়েটার কোনো খোজ পেলে?”
রিক বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
—- ” সেটা জেনে তুমি কী করবে?”
—- ” যা জিজ্ঞেস করছি সেটার উত্তর দাও।”
—- ” পেয়েছি কালকে গিয়েই নিয়ে আসবো।”
মিস্টার রঞ্জিত চোখ তুলে তাকিয়ে বলল
—- ” কালকে তোমাকে কলকাতা যেতে হবে, আর্জেন্টলি। ”
রিক অবাক হয়ে বলল
—- ” হোয়াট? বাট ড্যাড…”
—- ” এটা জরুরি তাই যেতেই হবে। তুমি এড্রেস দিয়ে দাও মেয়েটার আমি লোক দিয়ে তুলে এনে আটকে রেখে দেবো তুমি আসা অবধি।”
—- ” সরি বাট আই কান্ট ট্রাস্ট ইউ, এসে হয়তো দেখবো তুমি ওকে মেরেই ফেলেছো। আমি যাচ্ছিনা কোথাও, জাহান্নামে যাক সব।”
বলেই রুম চলে গেলো রিক। রাগে গজগজ করছেন মিস্টার রঞ্জিত। কবির শেখ বলল
—- ” জিজু আমি বোঝাচ্ছি ওকে আপনি রাগবেন না।”
বলেই রিকের পিছে পিছে ওর রুমে এলো কবির শেখ। কবির শেখকে দেখে রিক বলল
—- ” মামা প্লিজ তুমি অন্তত যেতে বলোনা কোথাও।”
কবির শেখ হেসে বললেন
—- ” দেখো বাবাই মেয়েটা কী জানে তুমি ওকে পেয়েছো?”
রিক গম্ভীর ভাবে বললো
—- ” না।”
—- ” কতোদিন যাবত আছে ঐ জায়গায়?”
—- ” দেড় বছর।”
—- ” তাহলে তিন চার দিনে তো আর ঠিকানা বদলে নেবে না? তাই না?”
রিক অবাক হয়ে তাকালো, সত্যিই তো এভাবে তো ভাবেনি, কবির শেখ বললেন
—- ” দেখো কাজটাও তো জরুরি তাইনা? কাজটা সেরে তারপর ধীরে সুস্হে নিয়ে এসো মেয়েটাকে, সিম্পল।”
—- “হুম”
কবির শেখ হেসে বলল
—- ” এইতো বুঝেছো, তো সব প্যাকিং করে নাও। আমি গেলাম।”
কবির শেখ যেতেই রিক ভাবল, আরো তিন চার দিনের জন্যে বেচে গেলে তুমি। আরেকটু মুক্ত জীবণ ইনজয় করে নাও এই সময়ে। তারপরতো তোমাকে আসতেই হবে আমার কাছে।
___________

কফি শপে অসহায় মুখ করে বসে আছে অনিমা কারণ আদ্রিয়ান একটু নড়লেও ওর থেকে পারমিশন নিয়ে নিচ্ছে। যেমন চেয়ারে বসবে কী না? কফির মগে চুমুক দেবে কী না? মশা বসেছে মারবে কী না? ওয়াসরুম পেয়েছে যাবে কী না? অনিমা অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত কিছুতেই কিছু করছে না। সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে, তবে জোরে হাসতে পারছেনা আদ্রিয়ানের ভয়ে। আর অনিমা মুখ কাচুমাচু করে বসে আছে, না হয় একটু দুষ্টুমি করেই ফেলেছে তাই বলে এমন করবে? কিন্তু ভয়ে কিছু বলতেই পারছেনা। ওয়েটার বিল নিতে আসতেই আদ্রিয়ান অনিমাকে বলল
—- ” ম্যাম বিল টা কী দেবো?”
ওয়েটার অবাক হয়ে একবার অনিমাকে দেখছে একবার আদ্রিয়ানকে। আদিব অরু ওরা মুখ টিপে হেসেই যাচ্ছে। আর অনিমার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি অবস্হা। মনে মনে শতবার কান ধরে ফেলেছে যে জীবণেও আর এমন উল্টা পাল্টা বকবেনা। বকলেও আশেপাশে দেখে নেবে আদ্রিয়ান আসছে কী না। ওর অভিজ্ঞতা জানে এখন ব্যাপারটা ঠান্ডা ঠান্ডা গেলেও খুব শিঘ্রই সাইক্লোন যাবে ওর ওপর দিয়ে। তাই অনিমা মনে মনে বলছে আল্লাহ শুধু এবারের মতো এই অবোধ বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে দাও প্লিজ।
.
#চলবে…
.
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here