বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ৩

#বর্ষণের সেই রাতে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৩
.
এসব বলেই এলোপাথাড়ি নাচতে শুরু করলাম। পাগলের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে নাচছি। যেনো হাতে চাদ পেয়েছি। আশেপাশে কোনোকিছুর খেয়াল নেই আমার, নাচতে নাচতে পেছন ঘুরে আমি পুরো চমকে গেলাম, নাচ অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গেলো আমার। কারণ আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। শুনে ফেলল না তো কিছু? যদি শুনে থাকে যে উনি আমার ক্রাশ, আর ওনাকে আমি এতো পছন্দ করি, তাহলেতো ভাব একশগুন বেড়ে যাবে। বহুত কষ্টে নিজের ইমোশনকে চেপে রেখে একটা ইমেজ ক্রিয়েট করেছি সেটা নষ্ট হয়ে যাবে?
— বাহ। ডান্সটাতো খুব ভালো করো তুমি।
ওনার কন্ঠস্বর শুনে আমার ধ্যান ভাঙলো। তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান ডানহাত থুতনিতে রেখে মুচকি মুচকি হাসছে। ও কতোটা শুনেছেন বা কতোটা দেখেছেন সেটাইতো জানিনা। তাই ইতোস্তত করে বললাম
— না মানে আমি আসলে..
আদ্রিয়ান ওনার জিন্সের পকেটে হাত ঢুকিয়ে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বললেন
— নাচছিলে ভালো কথা। কিন্তু কিচেনে ঢুকে এমন কী হলো যে ঘর কাপিয়ে নাচতে শুরু করলে?
আমি মনে মনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম যাক কিছু শুনতে পায় নি। নিজেকে সামলে কপালের সামনের চুলগুলো কানে গুজতে গুজতে বললাম
— না মানে…
— না, মানে, আসলে এইগুলো শুনে নিয়েছি। এরপরতো কিছু বলো?
আমি কিছু একটা ভেবে, নিজেকে সামলে ওনার দিকে বিরক্তিকর চাহনী দিয়ে বললাম
— আমার ফ্লাট, আমার কিচেন আমি যা খুশি তাই করবো। নাচবো,লাফাবো,গাইবো, আপনাকে তার কৈফিয়ত কেনো দেবো?
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে মাথা দুলিয়ে বলল
— কারেক্ট আছে। তুমি নাচতে নাচতে ফ্লোর ভেঙ্গে ফেলো ইস মে মেরা কুছ নেহি যাতা। যেটা বলতে এসছিলাম। নুডুলসে ঝালটা একটু বেশি করে দিও।
এটুকু বলে যেতে নিয়েও আবার পেছনে ফিরে মুচকি হেসে বললেন
— আর হ্যা নাচার জন্যে সারারাত পরে আছে। আপাদত আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে তাই খাবারটা আগে আনলে ধন্য হতাম আরকি।
এটা বলে উনি সিটি বাজাতে বাজাতে চলে গেলেন। আর আমি অাহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছি ওনার যাওয়ার দিকে। এমন বিহেভ করছে যেনো আমি ওনার খুব পরিচিত কেউ। একটা অপরিচিত মেয়ের ফ্লাটে এসেছে, তাও এভাবে হুট করে সঙ্কোচ তো অনেক দূরের কথা এ তো এমন বিহেভ করছে যাতে ও আমার ফ্যামেলি মেমবার হুহ। বাট যাই হোক আজ রাতটা ও এখানে থাকবে এটাই আমার কাছে অনেক। এসব ভেবে গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে নুডুলস রান্না শুরু করলাম। রান্নার ফাকে ফাকে উকি দিয়ে ওনাকে দেখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। নুডুলস রান্না কম্প্লিট করে দুটো প্লেটে সার্ভ করে নিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি সাহেব খাটের এক কোণে আসাম করে বসে চারপাশ দেখছে। আমাকে দেখেই উনি একটা হাসি দিলেন, উত্তরে আমিও একটা হাসি দিলাম। আমি প্লেটটা ওনার দিকে বাড়িয়ে দিতেই উনি প্লেটটা হতে নিয়ে বললেন?
— ওয়াও? স্মেলটাই এতো ভালো আসছে। খেতে না জানি কতো ভালো হবে।
আমি হেসে দিয়ে বললাম
— টেষ্ট করে দেখুন।
উনি হেসে খানিকটা খেয়ে বললেন
— হুমমম। টু গুড।
— খারাপ হলেও কী বলবেন নাকি?
— নাহ সত্যি ভালো হয়েছে, তুমি টেস্ট করে দেখো।
ওনায় কথায় হেসে দিয়ে নিজের প্লেট থেকে খেতে শুরু করলাম। আমার কাছে বিশেষ কোনো টেষ্ট লাগেনি কারণ রোজকার স্বাদ এটা। উনি খেতে খেতেই বললেন
— তুমি এই ফ্লাটে একাই থাকো?
— হুমম। আমি শুনেছি আপনিও নাকি আলাদা থাকেন?
— হ্যা।
— কারণ?
উনি একটু অন্যরকমভাবে তাকালেন আমার দিকে। তারপর প্লেটটা নামিয়ে রেখে বলল
— বাহবাহ এতো ইন্টারেস্ট?
আমি হকচকিয়ে গিয়ে বললাম
— নাহ মানে আমি এমনিই জিজ্ঞেস করলাম পারসোনাল ইসু হলে বলতে হবে না।
উনি হেসে দিয়ে বললেন
— ওতোটাও পার্সোনাল না যে তোমাকে বলা যাবেনা।
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম উনি মুখে হাসি রেখেই বললেন
— আই মিন একটা রাত তোমার হেল্প নিয়েছি। সো এটুকু বলতেই পারি তোমাকে।
— ওহ।
— তবে আগে খেয়ে নি? তারপর কফি খেতে খেতে বলবো ওকে?
— হুমম।
উনি একমনে খাচ্ছেন আর আমি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে আর খাচ্ছি। সত্যিই আমরা মনে করি মিডিয়া জগতের এসব লোকেদের লাইফস্টাইল কতোইনা ভিন্ন। তবে তাদের ওই চাকচিক্যপূর্ণ জীবণযাপনের মধ্যেও কিছু ছোট ছোট সাধারণ বৈশিষ্ঠ্য থাকে যেটা ক্যামেরায় ধরা পরেনা। ওনাদের এই অসাধরণ সত্তার মধ্যেই কোথাও না কোথাও একটা অতি সাধারণ সত্তাও লুকিয়ে থাকে যেটা শুধুমাত্র ওনার সংস্পর্শে আসা মানুষগুলোই বুঝতে পারে। সেটা আজ ওনাকে দেখে বেশ বুঝতে পারছি। হঠাৎ উনি খাওয়া ছেড়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— হ্যালো মিস? ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আগে ওটা খাও। তারপর আমায় নিয়ে গবেষণা করো।
ওনার কথায় ধ্যান ভাঙলো আমার। আমি তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে খাওয়ায় মন দিলাম ভেতরে ভেতরে লজ্জা পেলেও সেটা বাইরে প্রকাশ করিনি। উনিও হালকা হেসে খাওয়ায় মন দিলেন। নুডুলস খাওয়ার পর বললেন
— ক্যান্ডেলটা শেষ হয়ে যাচ্ছে আরেকটা জ্বালাবো?
আমি ভ্রু কুচকে মুচকি হেসে বললাম
— যে ফ্লাটে ঢোকার আগে পারমিশন নেয়নি সে মোম জ্বালাতে পারমিশন চাইছে?
— পিঞ্চ মারছো?
— যেটা মনে করেন।
আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বললেন
— বাহ আমার ডায়লগ আমাকেই শোনাচ্ছো?
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
— ডায়লগের ওপর কী নাম লেখা ছিলো?
— নাহ তা ছিলোনা।
— দেন?
— ওকে ফাইন.. ইউ ওউন আই লুজ। এবার কী ক্যান্ডেল জ্বালাতে পারি ম্যাডাম ?
— আমিই জ্বালাচ্ছি আপনি বসুন।
— না তুমি বরং কফিটা করে আনো আমি ক্যান্ডেল জ্বালাচ্ছি।
আমি মুচকি হেসে টেবিল লাইট নিয়ে চলে গেলাম কিচেনে কফি করতে। কফি করে নিয়ে গিয়ে দেখি উনি রুমে নেই। বুঝলাম ব্যালকনিতে আছে। বৃষ্টি এখন আর তেমন নেই, হালকা ছিটে ছিটে ফোটা পরছে। তবে আকাশটা পরিষ্কার না। খানিক পরে আবারো ঝরঝর করে বৃষ্টি পরবে বোঝাই যাচ্ছে। চারপাশে একরকম নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। তবে তার মধ্যে তাই ব্যালকনিতে গিয়ে দেখি উনি নিচে বসে আছেন। আমি অবাক হয়ে বললাম
— নিচে বসে আছেন কেনো?
উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন
— নিচেই ভালোলাগছে। এই ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশ হালকা বৃষ্টির ছিটে।
আমি কিছু না বলে কফি মগটা ওনার দিকে এগিয়ে দিলাম। উনি মুখে সেই কিউট হাসিটা রেখেই মগটা হাতে নিয়ে আরেক হাতে ওনার পাশে ইশারা করে বললেন
— বসো।
আমি বেশ অবাক হলাম ওনার কথায় ইতোস্তত করে বললাম
— আমি বসবো? আপনার পাশে?
উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— সমস্যা হবে তোমার ?
— নাহ তা না কিন্তু…
উনি আমার হাত ধরে বসিয়ে দিলেন ওনার ঠিক পাশে। আমি বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি মুচকি হেসে বললেন
— তুমি বাস জার্নি করেছো?
আমি হেসে দিয়ে বললাম
— আমাদের মতো মানুষদের কাছে একটু দূরের জার্নি মানেই বাস জার্নি।
— তার মানে অনেকের পাশে বসে জার্নি করেছো?
— হ্যা তাতো করেছি।
আদ্রিয়ান এবার আমার দিকে হালকা ঘুরে বলল
— তাহলে আমি কী দোষ করলাম ম্যাডাম?
— ওটা আলাদা ব্যাপার। বাসে যাদের পাশে বসি তাড়াতো আমাদেরই ক্লাসের মানুষ। আর আপনিতো…
আদ্রিয়ান এবার শব্দ করেই হেসে দিলো। ওর হাসি দেখে আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলাম। এমন মনে হচ্ছে যেনো মিরাক্কেলে অপূর্ব রয় জোক বলছে। আজব? আমি কিছু বলবো তার আগেই আদ্রিয়ান হাসি থামিয়ে বললেন
— মানুষের আবার ক্লাস? আচ্ছা সেটা কোথায় লেখা আছে?
আমি বুঝতে পারলাম উনি কী মিন করতে চাইছেন তাই মুচকি হেসে বললাম
— ব্যাংক ব্যালেন্সে, বড় বড় গাড়িতে, বিশাল বাংলোতে, ফেমে আরো অনেক কিছুতে।
আদ্রিয়ান মুচকি হসে কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন
— হুমমম। কিন্তু সেই ক্লাস সেট কে করেছে?
— আমরা মানে মানুষেরা।
— এক্সাক্টলি। সব তো আমাদের মধ্যেই তাইনা? যদি তুমি নিজেই পারফরমার হও আর নিজেই জজ হও তাহলে জাজমেন্ট কী কেউ মেনে নেবে?
— উমহুম।
—- তাহলে তোমরা কেনো মানো? দেখো ব্যাংক ব্যালেন্স, গাড়ি, বাড়ি, ফেম এগুলো দিয়ে একটা মানুষ কতোটা ধনী বা কতোটা সাকসেসফুল সেটা বলা যায় কিন্তু কোনো মানুষের ক্লাস শুধুমাত্র তার পারসোনালিটি আর ক্যারেক্টার এর ওপর ডিপেন্ট করে। আমি গান করে টাকা ইনকাম করি, আমার গান সকলের ভালোলাগে তাই সবাই আমাকে ভালোবাসে, আর তাই গানের ওফার বেশি আসে আর টাকাও। কিন্তু এতে শুধুমাত্র আমার সফলতা প্রকাশ পাচ্ছে আমি কোন লেভেলের মানুষ সেটা না। মানুষের ক্লাস শুধুমাত্র মানবিকতা দিয়েই বিচার করা যায় টাকা দিয়ে নয়।
আমি এতোক্ষণ ওর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলাম তারপর কফিতে চুমুক দিয়ে বললাম
— কিন্তু সেটা মানে কজন?
— রাজা যদি নিজেই নিজেকে রাজা না মানে তাহলে অন্যকেউ কেনো মানবে?
ওর কথার মানে বুঝতে পারলাম। সত্যিই ঠিকিতো বলেছে। আমরা নিজেরাই যদি নিজেদের মিডেলক্লাস ভাবি তাহলে বাকিদের কী দোষ? তবে আদ্রিয়ানের চিন্তাধারা খুব ভালো লাগলো। পুরো মন ছুয়ে গেছে ওর কথাগুলো। সত্যিই সেলিব্রিটি মানেই যে খারাপ, মুডি, অহংকারী হবে তা নয়। তার প্রমাণ আজ আদ্রিয়ানকে দেখেই পেলাম। যদিও বিভিন্ন ইন্টারভিউ তে দেখেছি ওর পজিটিভিটি কিন্তু সেগুলো শো অফ মনে হয়েছিলো আমার। এসব ভেবেই ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। একটুপর কিছু একটা ভেবে ওকে বললাম
— বললেন না তো ফুল ফ্যামিলি থাকতেও আপনি কেনো একা থাকেন?
উনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে সামনের দিকে তাকিয়ে কফি মগে চুমুক দিয়ে বললেন
— প্রবলেমটা হলো ড্যাড। উনি কোনোদিনি এসব গান মিডিয়া জগৎ পছন্দ করতেন না। তার ইচ্ছে আমি তার কম্পানির দায়িত্ব নেই। কিন্তু আমি কোনোকালেই এইসব পছন্দ করতাম না। এসব বিজনেস ক্লাইন্ট এগুলো আমার মাথায় ঢুকতোই না। ছোট বেলা থেকেই গানের প্রতি একটা আসক্তি ছিলো আর সময়ের সাথে সেই আসক্তি আরো তীব্রতর হয়েছে। স্কুল কলেজের বিভিন্ন ফাংশনে গান গাইতাম। তবে আমার এই খাপছাড়া ভাবটাই ড্যাডের সহ্য হচ্ছিলো না। কলেজের এক ফাংশনেই এক মিউসিক ডিরেক্টরের আমার গলা ভালো লাগে আর সেখান থেকেই এই জগতে জার্নি শুরু। ড্যাডের যদিও পছন্দ ছিলোনা কিন্তু কিছু বলেনি। কিন্তু পড়াশোনা শেষ হবার পরেও যখন ওনার কম্পানির দায়িত্ব নিতে চাইনি তখন আমার ওপর প্রেশার ক্রিয়েট করা শুরু করলেন। কিন্তু আমি কিছুতেই রাজি হচ্ছিলাম না তখন একপ্রকার জোর করা শুরু করল। মমও ড্যাডের মুখের ওপর কিছু বলতে পারছিলোনা। একদিন এই নিয়ে ড্যাডের সাথে তর্ক হয় আর সেই তর্কাতর্কির মধ্যেই ড্যাড আমার গায়ে হাত তোলে। যেটা আমি মানতে পারছিলাম না তাই সেইদিন সেইমুহূর্তেই চলে এসছিলাম ঐ বাড়ি থেকে।
এতোক্ষণ চুপচাপ শুনছিলাম ওর কথা। ওর কথা শেষ হতেই আমি বললাম
— হ্যা কিন্তু আপনি আপনার বাবার একমাত্র ছেলে। উনিতো এটাই চাইবে যে ওনার কম্পানির দায়িত্ব আপনি নিন?
আদ্রিয়ান সামনের দিকে তাকিয়েই বলল
— আই নো বাট বাবা হিসেবে ওনার আমার স্বপ্নটাকেও গুরত্ব দেওয়া উচিত ছিলো তাইনা? যদি উনি বলতেন যে আমি গান করে সময় পেলে অফিসে বসতে পারি তাহলে আমি রাজি হয়ে যেতাম। কিন্তু উনিতো আমাকে আমার গানটাই ছাড়তে বলছিলেন।
আমি কিছু না বলে কফির মগে চুমুক দিলাম। বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় হঠাৎ করে আলোকিত হওয়া আকাশটা দেখছি আর মেঘের হালকা শব্দে গুরুম গরুম আওয়াজ শুনছি। ভেতরটা ভার ভার লাগছে খুব। বুকের ভেতরে এক অদ্ভুত বিষাদ গ্রাস করছে। খুব মনে পরছে আব্বুর কথা। কী অবাক করা ব্যাপার তাইনা। কারো স্বপ্ন পূরণের জন্যে তার বাবাই বাধা হয়ে দাড়ায়। আর কেউ নিজের বাবার দেখা সপ্নকেই আকড়ে ধরে এখোনো শ্বাস নিচ্ছে। সত্যিই জীবণটা খুব অদ্ভুত। এখানে যেমন আলাদা আলাদা মানুষ আছে, সেই সাথে তাদের আলাদা আলাদা সমস্যা, কষ্ট, যন্ত্রণা আছে। কারো কিছু থাকার যন্ত্রণা কারো কিছু না থাকার যন্ত্রণা। কিছু আছে বলে কেউ কষ্ট পাচ্ছে, আবার কিছু হারিয়ে ফেলেছে বলে অন্যকেউ কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু ব্যাস্ততম এই শহরে আমরা সবাই শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যাস্ত। কারো দুঃখে একটু আক্ষেপ আর দীর্ঘশ্বাস দেওয়ার সময় থাকলেও পাশে থেকে সান্তনা দেবার মতো সময়ের বড্ড অভাব আমাদের। হঠাৎ করে অাদ্রিয়ান আমার সামনে তুরি বাজিয়ে বললেন
— কী ভাবছো?
ওনার ডাকে ধ্যান ভাঙলো। নিজেকে সামলে বললাম
— অবব্ কিছু না।
— অামার সম্পর্কেতো অনেক কিছু জানো। আর অনেকটা এখন জানলে বাট তোমার সম্পর্কে কিছু জানা হলো না। এতক্ষণ হয়ে গেলো নামটা পর্যন্ত জানা হয়নি।
— অনিমা। অনিমা কোতয়াল।
— ওয়াও কিউট নেইম। বাই দা ওয়ে এতো লেইট করে ফিরলে? দেখে মনে হলো অফিস থেকে এসছো? কী করো তুমি? আই মিন প্রফেশন কী?
এ যদি এখন আমার প্রফেশন জানে, না জানি হার্টএট্যাক করে বসে। বলবো? কিন্তু মিথ্যে বলাটাও তো ঠিক হবেনা। তবে আমার জব জানলে এ সিউর কয়েকশ ভোল্টের ঝটকা খাবে। ভূল ভাববে না তো আমায়? এটা মনে করবেনা তো আমি নিজের স্বার্থে ওকে এখানে থাকতে দিয়েছি? এতো ভালো ব্যবহার করছি শুধুমাত্র নিজেরই ফায়দার জন্যে? চলে যাবেনা তো এখান থেকে? বাট যা খুশিই হোক আমি মিথ্যে বলতে পারবোনা। এসব ভাবতে ভাবতেই উনি আবার আমার সামনে তুরি বাজিয়ে বললেন
— এই যে ম্যাডাম? কোথায় হারিয়ে যান বলুনতো?
— নাহ মানেহ।
উনি মুচকি হেসে বললেন
— কীসে জব করো তুমি?
আমি চুপ করে আছি। সেটা দেখে উনি ভ্রু কুচকে ফেললেন তারপর বললেন
— হোয়াট হ্যাপেন? বলো?
আমি এবার সাহস জুগিয়ে বলেই ফেললাম
— আমি একজন জার্নালিস্ট।
বেচারা সবে কফিতে চুমুক দিয়েছিলো। এটা শুনে সাথে সাথে বিষম খেয়ে গেলো। কাশতে কাশতেই খারাপ অবস্হা আমি ধরতে গিয়েও থেমে গেলাম। উনি নিজেকে সামলে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— সিরিয়াসলি?
আমি হ্যা বোধক মাথা নাড়তেই, উনি ফ্লোরে একটা পাঞ্চ করে হতাশ দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে বললেন
— একেই বলে আকাশ থেকে পরে খেজুর গাছে আটকে যাওয়া।
#চলবে…
.
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here