বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ৭

#বর্ষণের সেই রাতে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব: ৭
.
রাতে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি কখনো নিজের সেই ভয়ংকর অতীত মনে পরছে কখনো আদ্রিয়ানকে। ওর পাশে বসে গল্প করা ওকে জরিয়ে ধরা, ওর হটাৎ করেই কাছে এসে যাওয়া সব। কিন্তু ও হয়তো এতোক্ষণে ভূলেও গেছে আমাকে, ভূলে যাওয়াই স্বাভাবিক। মনে রাখার বিশেষ কোনো কারণ নেই। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম। মাঝরাতে হটাৎ ফোন বাজার আওয়াজে ঘুম ভাঙলো। তাকিয়ে দেখি আননোন নাম্বার। এতো রাতে কার মনে পরলো? চোখ ডলতে রিসিভ করে কিছু বলবো তার আগেই ওপর পাশের ব্যক্তির গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে গেলাম আমি। মনে শুধু একটা কথাই এলো এটাও সম্ভব? কারণ রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে কেউ বলল
— হ্যালো ম্যাডাম? ডিসটার্ব করলাম?
আমিতো পুরো থ হয়ে আছি। ঘুম উড়ে গেছে। শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠলাম। কারণ গলার স্বর শুনেই খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছি যে এটা আদ্রিয়ান। নিজেও জানিনা কীকরে বুঝলাম কিন্তু কথার ধরণ শুনেই বুঝে গেছি। কিন্তু ও আমাকে ফোন করেছে? টেবিল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি তিনটা বেজে গেছে? এতো রাতে ও আমায় কেনো ফোন করল? আবার কোনো বিপদে পরেছে নাকি? এসব ভাবতে ভাবতেই আবারও ওর গলার আওয়াজ পেলাম
— কী হলো ঘুমিয়ে পরলে নাকি?
আমি বিস্মিত গলায় বললাম
— আপনি এখন?
— যাক গলার স্বরটা অন্তত মনে আছে তোমার,আমিতো ভেবেছি আমায় ভূলেই গেছো।
আমি তো ঝটকার ওপর ঝটকা খাচ্ছি কী বলছেন উনি এসব? ওনার কথা শুনেতো মনে হচ্ছেনা উনি কোনো বিপদে পরেছেন তারমানে এমনিই ফোন করেছে আমাকে? কিন্তু কেনো? আমি ইতস্তত গলায় বললাম
— নাহ মানে আপনি…
— ফোন করে একটা খবর তো নিতে পারতেন ম্যাডাম?
ওনার কথায় আবারও অবাক হলাম। আমি খোজ নেবো ফোন করে তাও ওনার? তবুও নিচু কন্ঠে বললাম
— নাম্বার দিয়ে গেছিলেন নাকি যে ফোন করব?
— কেনো? তুমি চেয়ে নিতে পারতে না?
আমি একহাতের নখ দেখতে দেখতে বললাম
— নাম্বার চাইলেতো হ্যাংলা ভাবতেন আমাকে।
— ওহ দ্যাট মিনস তুমিও আমাকে হ্যাংলা ভেবেছিলে?
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
— আমি কেনো আপনাকে হ্যাংলা ভাবতে যাবো?
— কারণ আমিও তো তোমার কার্ডটা চেয়ে নিয়েছিলাম।
কি বলবো বলবো বুঝতে পারছি না তাই চুপ করে আছি। আদ্রিয়ান নিজেই বললেন
— ডিসটার্ব করলাম?
— না তা না কিন্তু…
— আসলে কাজ সেরে একটু আগে বাড়ি ফিরলাম, ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তোমার কথা মনে পড়লো। এটাও মনে পরলো যে তোমাকে ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি, তাই কার্ডটা বের করে ফোন করলাম।
আমি মনে মনে একটু হাসলাম। ও শুধু ধন্যবাদ দিতেই ফোন করেছে আমাকে আমিও বোকার মতো কী সব ভাবছিলাম।
— যদিও অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমিয়ে পরেছিলে নিশ্চই? ডিসটার্বড হওনি তো?
— নাহ তা হইনি কিন্তু আপনিকি শুধু আমাকে ধন্যবাদ দিতেই ফোন করেছেন?
ও কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল
— রাত হয়েছে অনেক ঘুমিয়ে পরো। গুড নাইট।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো। আমি একটু অবাক হলাম যা বাবা এভাবে কেটে দেবার কী হলো? শুধু ধন্যবাদ দিতে ফোন করেছিলো দেওয়া হয়ে গেছে তাই হয়তো কেটে দিয়েছে। গুড নাইট টাও বলতে দিলো না। খবিশ! তোর বউ মরবে। ধ্যাত!! কী সব বলছি। আসলেই পাগল হয়ে গেছি আমি। ও যে আমাকে ধন্যবাদ দিতে ফোন করেছে এটাই অনেক। কিন্তু আরেকটু কথা বললে কী হতো? আবার কী কোনোদিন কল করবে ও আমাকে? যা খুশি করুক আমার কী? এসব চিন্তা করেই গাল ফুলিয়ে শুয়ে পরলাম।

পরের দিন অফিসের ডেস্কে গিয়ে বসতেই তীব্র বলল
— কী ব্যাপার মিস হিরোয়িন কাল আবার কোনো স্টার এসছিলো নাকি?
আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
— মানে?
তীব্র কিছু বলবে তার আগেই অরু বললো
— নাহ মানে পরশু তো এ.ডি এসছিলো কালকে আবার কেউ এসছিলো কিনা সেটাই জিজ্ঞেস করছিলাম আমরা।
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম
— স্টারদের কী খেয়েদেয়ে আর কোনো কাজ নেই যে রোজ রাতে ওয়ান বাই ওয়ান আমার ফ্লাটে আসবে?
তীব্র এবার চেয়ার ঘুরিয়ে আমার দিকে ফিরে বলল
— বাই দা ওয়ে? এ.ডি তো তোর কার্ড নিয়েছিলো তাইনা ফোনটোন করেছিলো?
এটা শুনে অরুও উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো মানে ওও শুনতে চায়। আমি স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বললাম
— হ্যা কল করেছিলো কাল রাতে।
দুজনেই চমকে তাকালো আমার দিকে। কারণ ওরা এতোটাও আশা করেনি। ওদের আর কী বলবো আমি নিজেও তো ভাবতে পারিনি এমন যে আদ্রিয়ান নিজে আমাকে ফোন করবে। অরু এক্সাইটেড হয়ে বলল
— এই কী কী বললো?
আমি অরুর দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বললাম
— বললো যে বিয়ের জন্য মেয়ে খুজে পাচ্ছিনা তোমার কোনো বোন ঠোন বা বান্ধবী থাকলে বলো। আমি তোর কথা বললাম ছবি দেখালাম আর ও রাজী হয়ে গেলো।
অরু বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— মিথ্যুক।
আমি সিরিয়াস ভঙ্গিতেই বললাম
— সত্যিই বলছি এটাই হয়েছে।
অরু হাত ভাজ করে ভ্রু কুচকে বলল
— এ.ডি বিয়ের জন্যে মেয়ে খুজে পাচ্ছেনা, তোকে মেয়ে খুজতে বলেছে, তুই ছবি দেখিয়েছিস ও রাজীও হয়েছে ? আমার মাথায় কী সিল দেওয়া আছে যে আমি গাধা যা বলবি তাই গিলবো?
আমি অবাক হওয়ার ভান করে বললাম
— আরে তোর কোথাও ভূল হচ্ছে।
অরু একটু অবাক হয়ে বলল
— কী ভূল হচ্ছে?
— আদ্রিয়ান মেয়ে খুজছে ঠিকই কিন্তু ওনার জন্যে না।
এবার তীব্রও কৌতুহলী কন্ঠে বলল
— তাহলে?
আমি দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে বললাম
— ওনার ড্রাইভারের জন্যে খুজছে বেচারা নাকি বুড়ো হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বউ জুটছেনা কপালে।
অরু সাথে সাথেই মুখটা ছোট করে ফেলল। আমি আর তীব্র মুখ টিপে হাসছি। অরু কিছুক্ষণ বোকার মতো আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
— তোরা দুজন এতোক্ষণ আমাকে নিয়ে মজা করছিলি?
এটা শোনার সাথেসাথেই তীব্র আর আমি শব্দ করে হেসে দিলাম। তীব্র হাসতে হাসতেই বলল
— সেটা তুই এতোক্ষণে বুঝলি?
তীব্র কথাটা শেষ করতেই। আমি আর তীব্র হাসতে হাসতে হাইফাইভ করলাম। আর অরু মুখটা ফুলিয়ে বলল
— থাক তোরা দুজন একসাথে আমি কথাই বলবোনা তোদের সাথে।
বলেই ডেস্কের দিকে ঘুরে কাজ করতে লাগল। আমি অার তীব্রও মুচকি হেসে কাজে মন দিলাম। কিন্তু অনেকটা সময় পার হয়ে যাবার পরেও যখন অরু কোনো কথা বলছে না। তাই আমি চেয়ার ঘুরিয়ে বললাম
— এই পেত্নি মৌন ব্রত পালন করছিস নাকি?
কিন্তু ও চুপ করে আছে কোনো কথা বলছেনা। সেটা দেখে তীব্রও ওর দিকে ঘুরে বলল
— এইযে ড্রামাকুইন মুখে গ্লু লাগিয়ে রেখেছিস?
কিন্তু মহারাণী এবারেও এক্কেবারে চুপ করে অাছে। এবার আমি আর তীব্র দুজনেই দুজনের মুখের দিকে তাকালাম। তীব্র চোখ দিয়ে ইশারা করল আর আমিও ওর ইশারা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে চোখ টিপ মারলাম। এরপর দুজনে একসাথেই ওকে সুরসুরি দিতে লাগলাম। এটা ওর রাগ ভাঙানোর নিঞ্জা টেকনিক, ওর যত রাগই থাক সুরসুরি দিলেই ও খিলখিলিয়ে হেসে দেয় আর ওর রাগও জল হয়ে যায়। আর এবারেও এর ব্যতিক্রম হলো না। কিছুক্ষণ হাসাহাসির পর অরুর অসহায় কন্ঠে বলল
— প্লিজ বলনা কী বলেছে।
আমি ছোট একটা নিশ্বাস নিয়ে ওদের দুজনের দিকে তাকালাম, দুজনেই শুনতে ইচ্ছুক। এরপর ওদেরকে সবটা বলার পর তীব্র আমার মাথায় একটা চাটা মারল। আমি মাথায় হাত দিয়ে মুখ ফুলিয়ে বললাম
— মারলি কেনো?
তীব্র ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
— মারবো না তো কী করব? এতো মাথামোটা কেনোরে তুই?
অরুও বিরক্তিকর কন্ঠে বলল
— সেই ইয়ার। তোর কী মনে হয় শুধুমাত্র ধন্যবাদ দিতে কেউ রাত তিনটে বাজে ফোন করে?
— করতেই পারে কাজ ছিলো তাই সারাদিন সময় পায়নি তাই রাতে করেছে? ওর মতো একজন তো আর আমার সাথে প্রেমালাপ করতে ফোন করবেনা।
ওরা দুজনেই আমার দিকে এক হতাশ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ছোট নিশ্বাস ফেলে কাজে মন দিলো আমি কিছুই বুঝলাম না। তাই কিছুক্ষণ ওদের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে মন দিলাম।

লাঞ্চ টাইমের পর স্যার মিটিং ডাকলেন। মিটিং এর মধ্যে কেউ বারবার কল দিচ্ছে ফোন ভাইবারেট হচ্ছে বারবার। বেশ বিরক্ত লাখছে আমার। মিটিং শেষ হতেই অরু অার তীব্রকে বললাম
— তোরা ডেস্কে যা কেউ কল করছে বারবার অামি কথা বলে আসছি।
ওরা মাথা নেড়ে চলে গেলো, আমি অফিসের বিরাট ব্যালকনিতে গিয়ে ফোনের স্ক্রিনে চোখ দিতেই ভ্রু জোরা কুচকে গেলো। কারণ নাম্বারটা আননোন, একটা আননোন নাম্বার থেকে এতোবার কল এলো? আমি নাম্বারটায় ডায়াল করলাম রিং হওয়ার প্রায় সাথে সাথেই ফোন রিসিভ করল। আমি জিজ্ঞাসু কন্ঠে বললাম
— হ্যালো?
— কী ম্যাডাম ব্যস্ত ছিলেন মনে হয়?
আমি চমকে কান থেকে ফোন সরিয়ে নাম্বারটা দেখলাম, তখন ঘুমের মধ্যে রিসিভ করেছিলাম তাই নাম্বারটা খেয়াল ছিলোনা, কিন্তু ধন্যবাদ দেওয়া তো হয়ে গেছে তাহলে আবার কল কেনো করলো? এসব ভেবে আবারো ফোনটা কানে নিয়ে বললাম
— আপনি?
— নাম্বারটাও সেভ করোনি? হাউ রুড?
— নাহ মানে…
— আচ্ছা ছাড়ো কতোক্ষণ যাবত কল করছি ফোন ধরছিলেনা কেনো?
— আসলে মিটিং চলছিলো।
— কীসের মিটিং? নতুন করে আবার কাকে বাস দেবে সেই ব্যাপারে?
— আপনিও না..
ওপাশ থেকে ওনার হাসির শব্দ পেলাম সেই হাসির শব্দ শুনে আমিও হেসে দিলাম। উনি হাসি থামিয়ে বললেন
— আচ্ছা যে কারণে কল করলাম। কালকেতো ফ্রাইডে ফ্রি আছো নাকি কোনো কাজ আছে?
আমি একটু অবাক হলাম। হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো? তাই অবাক কন্ঠেই বললাম
— কেনো বলুনতো?
— ফ্রি আছো?
— হ্যা ফ্রি আছি বাট হোয়াই?
— দেন কালকে মিট করি?
এটা শোনার সাথে সাথেই আমি যেনো ফ্রিজ হয়ে গেলাম। উনি দেখা করতে চাইছেন আমার সাথে? কিন্তু কেনো? আমার সাথে ওনার কী দরকার? আমি নিচু কন্ঠে বললাম
— কিন্তু কেনো?
— দেখা করতে যে বিশেষ কোনো কারণ থাকতেই হবে এটা কোথায় লেখা আছে? ওনার কথায় আমি অবাকের ওপর অবাক হচ্ছি উত্তেজনায় ঘাম বেরোচ্ছে আমার। নাকের নিচের ঘামটা মুছে বললাম
— নাহ কিন্তু…
— তোমাকে ফোর্স করছিনা। আমি স্টারপ্লেজ কফিশপে তোমার জন্যে অপেক্ষা করবো কাল সকাল দশটায়। তুমি চাইলে তোমার ফ্রেন্ডদেরকেও নিয়ে আসতে পারো আমার সমস্যা নেই। আসবে কী না ইটস আপ টু ইউ।
— আমি আসলে..
কিন্তু আমাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে উনি ধীরকন্ঠে বললেন
— বাই। এন্ড আই উইল ওয়েট পর ইউ।
বলেই আমায় কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলেন। ছেলেটা এমন কেনো? নিজের কথা শেষ হলেই ফোন রেখে দেয়? ওপর পাশের মানুষটার কথাও তো শুনতে হয় নাকি? আমি কান থেকে ফোন নামিয়ে ঠোট কামড়ে ধরে দাড়িয়ে রইলাম। কী করব এখন? ওকেতো না ও করতে পারলাম না আর না আমি যেতে পারব। আমিতো অফিস আর ফ্লাট ছাড়া কোথাও বেড়োই নাহ। কিন্তু ও যদি সত্যিই ওয়েট করে? এসব ভাবতে ভাবতেই চিন্তিত মুখ নিয়ে ডেস্কে গিয়ে বসলাম। আমার এমন চেহারা দেখে অরু বলল
— কী রে আবার কী হলো?
সেটা শুনে তীব্রও কম্পিউটার থেকে চোখ সরিয়ে বলল
— কে ফোন করেছিলো যে তোর চেহারার রং বদলে গেলো?
আমি অসহায় ভাবে ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম
— আদ্রিয়ান ফোন করেছিলো।
সেটা শুনে দুজনেই চমকে গেলো, যেনো বড়সর ঝটকা খেয়েছে, কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর অরু প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে তীব্রকে বলল
— দেখলি আই টোল্ড ইউ না এ.ডি এর মনে কিছু চলছে?
আমি ভ্রু কুচকে বললাম
— মানে?
তীব্র আমার চেয়ারটা ওর দিকে ঘুরিয়ে বলল
— তোকে মানে বুঝতে হবেনা এবার বলতো কী বলল?
— কালকে মিট করতে চায় আমার সাথে।
অরু খুশি হয়ে বলল
— ওয়াও ফার্স্ট ডেট…হাউ কিউট।
আমি অরুকে ধমক দিয়ে বললাম
— তুই থামবি? ফার্স্ট ডেট! আকাশ কুসুম সপ্ন দেখা বন্ধ কর। আমি আছি আমার জ্বালায় আর তোরা…
তীব্র জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— সমস্যা কী?
— আমি যেতে পারবোনা।
সেটা শুনে দুজনেই একসাথে বলল
— কেনো?
— তোরা জানিস না কেনো? মামুর আর ভাইয়ার ক্ষমতা থাকলেও এতোটাও নেই যে আমাকে খুজে বের করবে। কিন্তু ও? ও ওর ক্ষমতা দিয়ে পাতাল থেকে হলেও আমাকে খুজে নেবে। তাই আমাকে সাবধান থাকতেই হবে।
অরু এবার আমার কাধে হাত রেখে বলল
— দেখ অনি এভাবে আর কতোদিন পালাবি তুই? আর তাছাড়া তুই তো জার্নালিস্ট, এমনিতেও তোকে খুজে পেয়ে যাবে। তাহলে এটাকে প্রফেশন কেনো করলি ছেড়ে দে এটা?
আমি ডেস্কে বারি মেরে বললাম
— সেটাইতো পারবোনা। আমার আব্বুর স্বপ্ন, ত্যাগ সবকিছু মিশে আছে এই প্রফেশনে কীকরে ছাড়বো আমি?
তীব্র আমার মাথায় হাত রেখে বলল
— এইজন্যেই বলছি এসব ভাবিস না। ঘরে মধ্যে লুকিয়ে কদিন থাকতে পারবি তুই?
অরুও তীব্রর কথায় সায় দিয়ে বলল
— আর দেখ ছেলেটা ওয়েট করবে তো, না গেলে খারাপ লাগবে ওর।
তীব্র এবার আমার কাধে হাত রেখে বলল
— আচ্ছা ভয় পাস না। আমরাও যাবো তোর সাথে ওকেহ?
আমি চোখ মুছে একটা শ্বাস নিয়ে বললাম
— আমি ভেবে দেখছি। বাট আমাকে ফোর্স করিসনা প্লিজ।
অরু আমাকে একহাতে জরিয়ে নিয়ে বলল
— যদি যাস তো আমাদের জানাস আমরা রেডি হয়ে থাকব ওকে?
তীব্রওু মুচকি হেসে বলল
— হ্যা এক ঘন্টা আগে জানালেই হবে।
— হুম।
ওরা দুজনেই একে ওপরের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ডেস্কে চলে গেলো।

বাইরে ভীষণ জোরে বৃষ্টি আর বজ্রপাত হচ্ছে। আমাকে টেনে হিচড়ে অন্ধকার একটা রুমে এনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। আমি উঠে দাড়িয়ে দরজার কাছে যাওয়ার আগেই দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলো। আমি দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে চিৎকার করে বললাম
— মামু প্লিজ দরজাটা খোলো এমন করোনা আমার সাথে, প্লিজ খোলো দরজাটা আমার ভয় লাগছে এখানে। মামি প্লিজ তুমি অন্তত খুলে দাও, প্লিজ। যেতে দাও আমাকে।
কিন্তু কেউ আসছেনা, অন্ধকার রুমে বাইরের বজ্রপাতের প্রতিটা আওয়াজে কেপে উঠছি আমি।
— প্লিজ খোলো দরজাটা প্লিজ।
ক্লান্ত অস্ফুট স্বরে কথাটা বলে কাদতে কাদতে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে পরলাম আমি। অনেক্ষণ পর হঠাৎ কেউ এসে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো তাকে দেখেই ভয়ে গুটিয়ে বসলাম আমি, লোকটা যতো এগিয়ে আসছে আমি ততোই গুটিয়ে যাচ্ছি, সে আমার সামনে এক হাটু ভেঙ্গে বসে বলল
— আজ আবার পালাতে চাইছিলে?
আমি মাথা নিচু করে কাদছি। লোকটা আমার চুলের মুঠি ধরে মাথাটা উচু করে ধরল। ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম আমি, চোখ দিয়ে পানি পরছে অনবরত কিন্তু লোকটার সেদিকে পাত্তা নেই। সে আমার গাল চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলল
— খুব সখ না পালানোর? সেদিনের চড়গুলোর কথা ভূলে গেছো বেবি? কোনো ব্যাপার না আজকের ডোজটা সিউর মনে থাকবে।
বলেই ঝাড়া দিয়ে আমার গাল ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে নিজের বেল্ট খুলতে শুরু করলো। আমি হালকা পিছিয়ে গিয়ে বললাম
— প্লিজ। আমার ভূল হয়ে গেছে আমি আর পালানোর চেস্টা করবোনা।
— পারবেও না। তোমার ঐ ইউসলেস মামা মামির ভরসায় তোমাকে আর ছেড়ে রাখব না আমি, আগে যেটা করেছো তার শাস্তি দিয়ে নি।
— না প্লিজ আজকে মারবেন না।
লোকটা বেল্ট হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল
— সেটা তোমার এসব করার আগে ভাবা উচিত ছিলো। আজকের পর পালানোর আগে দশবার ভাববে।
বলেই লোকটা নির্মমভাবে বেল্ট দিয়ে মারতে শুরু করলো আমাকে। আমার চিৎকার বন্ধ রুমের দেয়ালে বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। কিন্তু সেই চিৎকারে মন একটুও গলছেনা লোকটার। সে নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করে চলেছে আমাকে।

চিৎকার করে লাফ দিয়ে উঠে বসলাম আমি। সারাশরীর ঘামে ভিজে গেছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। টি- টেবিলে রাখা গ্লাস থেকে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলাম। আজকে সন্ধ্যায় সিলিপিং পিল খেতে ভুলে গেছি তাই এই অবস্হা। কারণ এটা নতুন না প্রায় আমাকে তাড়া করে এই ভয়ংকর দুঃসপ্ন, যেটা আমার অতীত, নিষ্ঠুর অতীত। যেটা থেকে আমি পালিয়ে বাচতে চাইছি কিন্তু সেই অতীত আমার পেছন ছাড়ছেনা। ঘড়ি বলছে ৪ টা ২০ বাজে একটা নিশ্বাস নিয়ে উঠে সাওয়ার নিতে চলে গেলাম। কারণ এখন হাজার চাইলেও আর ঘুমোতে পারবোনা। একঘন্টার লম্বা সাওয়ার নিয়ে কফি বানিয়ে বেলকনিতে দাড়িয়ে আবছা অন্ধকার আকাশটা দেখতে দেখতে খোয়া ওঠা কফির মগে চুমুক দিলাম। আদ্রিয়ানের সাথে মিট করতে যাবো কি না ঠিক করিনি এখোনো। আপাদত ভোর হওয়া দেখছি। সূর্য কী সুন্দরভাবে পৃথিবীর বুক থেকে রাতের আধার দূর করে নতুন আলো নিয়ে আসে। আমার জীবনেও কী এমন কোনো সূর্য আসবে নতুন আলো নিয়ে নাকি এই অন্ধকারেই চিরস্থায়ীভাবে থেকে যাবে আমার জীবন।
#চলবে..

( অনিমার অতীত কী ছিলো সেটা জানাবো তবে ধীরে ধীরে ততোদিন ধৈর্য ধরে পরুন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here