বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ৯

#বর্ষণের সেই রাতে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব: ৯
.
আমি আর কিছু বললাম না। অনেক্ষণ ধরে দুজনেই চুপচাপ বসে আছি। আমি একহাতে কফি মগ চেপে ধরে আছি আর আরেকহাতের নখ টেবিলের সাথে ঘষছি। অার মাঝে ওনার দিকে তাকিয়ে সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে নিচ্ছি কারণ উনি একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে এক অদ্ভুত ভঙ্গিতে কফি মগে চুমুক দিচ্ছেন। আমার খুব অসস্তি লাগছে, এভাবে তাকিয়ে থাকে কেউ, আর এভাবে মগে চুমুক দেবার মানে কী? অার বাকিরাও কোথায় আছে কে জানে? আরে কেউতো এসে বাঁচাও আমাকে, ভাল্লাগেনা। হঠাৎ করেই আমার টেবিলের ওপর রাখা হাতের ওপর উনি হাত রাখলেন। আমার সারা শরীরে যেনো বিদ্যুৎ খেলে গেলো। হার্ডবিট কয়েকটা মিস হবার পরেই তীব্র গতিতে ছুটতে লাগল। আমি অবাক হয়ে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে। উনি আমার হাতটা আরেকটু ভালোভাবে ধরে বললেন
— জানো তোমার এতো দেরী দেখে আদিব আর আশিস বলছিলো তুমি আসবেনা কিন্তু আমার কেনো জানিনা মনে হচ্ছিলো তুমি আসবে, তাইতো বসে বসে ওয়েট করছিলাম।
উনি হাত ধরে রাখায় কেমন একটা ফিল হচ্ছে কাপুনি শুরু হয়ে গেছে আমার, তারওপর ওনার এসব কথা। আমি হালকা কাপা কাপা গলায় নিচু কন্ঠে বললাম
— য্ যদি না আসতাম।
উনি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন
— দুপুর পর্যন্ত ওয়েট করে তোমাকে কল দিতাম। যদি বলতে আসবেনা তো চলে যেতাম।
আমি কিছু না কফির মগের দিকে তাকিয়ে রইলাম, আদ্রিয়ান এখোনো আমার হাতের ওপর ওনার হাত রেখে দিয়েছেন, আমার কাপুনি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, শরীর ঘামছে হালকা। আমি চেয়েও হাতটা সরিয়ে নিতে পারছিনা। আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি নিজেই বললেন
— বাই দা ওয়ে এতো লেইট করলে কেনো? সাজতে যে সময় নেও নি সেটা তোমার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
— না আসলে…
— আসবে কী আসবে না সেটা নিয়ে দ্বিধাবোধ করছিলে, এম আই রাইট?
আমি এবারেরও নিচু কন্ঠে জবাব দিলাম
— হুম
আমার কাপুনি থামছেই না আজকে। আদ্রিয়ান এবার হাতের ওপর একটু চাপ দিয়ে ধরে বললেন
— আর ইউ ফিলিং নারভাস?
আমি মাথা তুলে ওনার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। উনি হালকা হেসে বললেন
— এভাবে কাপছো আর ঘামছো কেনো? দেখো তোমার হাতের ঘামে আমার হাতও ভিজে যাচ্ছে।
আমি হাতটা সরাতে চেয়েও পারলাম না কারণ উনি শক্ত হয়ে ধরে রাখলেন। আমি সংকোচবোধ খানিকটা কাটিয়ে উঠে নিচের দিকে তাকিয়েই ওনাকে প্রশ্ন করলাম
— কেনো ডেকেছেন আমাকে?
— সেটাই তো জানিনা।
ওনার এইরকম উত্তর শুনে আমি একটু অবাক হয়ে ওনার দিকে একপলক তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলাম। আদ্রিয়ান এখনো পর্যন্ত আমার হাতের ওপর ওনার হাতটা দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে। আমার হাতের ঐ অংশটা ঘেমে গেছে বেশ বুঝতে পারছি, আমার এমন মনে হচ্ছে যেনো আমার হাতের ওপর কেউ বরফ রেখে দিয়েছে।
— এসেছোতো কিন্তু একটু পরে আবার যাই যাই করবে না তো?
আমি ভ্রু কুচকে ওনার দিকে তাকালাম। উনি মুচকি হেসে বললেন
— যেহেতু আজ তোমার আর কোনো কাজ নেই তো আজকে দিনটা তো আমাকে দেয়াই যায় তাই না?
আমি মাথা নিচু করে বললাম
— সারাদিন কী কফিশপে বসে থাকব নাকি?
আদ্রিয়ান হালকা হেসে একহাতে কফির মগে চুমুক দিয়ে বললেন
— তোমাকে সেটা নিয়ে ভাবতে হবেনা তুমি রাজি কী না বলো?
আমি ইতোস্তত করে বললাম
— কিন্তু অরু আর তীব্র?
— ওরাও থাকবে নো প্রবলেম।
— হুম
আদ্রিয়ান কফিতে আরেকটা চুমুক দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললেন
— কফিটা খাচ্ছোনা কেনো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো?
আমি এবার সংকোচ নিয়ে নিচু কন্ঠে বললাম
— আমার হাতটা তো ছাড়ুন ।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন
— তোমার অসস্তি হচ্ছে?
— না মানে..
— না? তাহলে আর সমস্যা কী? তুমি কফি খাও।
কথাটা বলেই আবার কফি খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে গেলেন। আমি পুরো বোকার মতো তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। এতো ভালো শেয়ানা। বাট হাত ধরে রেখে কী লাভ কে জানে? আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই উনি চোখ দিয়ে ইশারা করে আমাকে কফি খেতে বললেন। আমি অসহায়ের মতো একহাত দিয়েই কফি খেতে শুরু করলাম। বেশ কিছুক্ষণ ধরেই দুজনে একেবারেই চুপ ছিলাম। হঠাৎ করেই উনি বললেন
— অনিমা?
ওনার এই হঠাৎ ডাক শুনে চমকে গেলাম। আমি হকচকিয়ে বলে উঠলাম
— জ্ জ্বী?
— আই ওন্না টেইল ইউ সামথিং..
ভ্রু অটোমেটিক্যালি কুচকে গেলো আমার, কী এমন বলতে চান উনি যে এভাবে জিজ্ঞেস করে নিচ্ছেন? জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
— বলুন?
এরমধ্যেই অরু লম্বা লম্বা পা ফেলে এসে আমার পাশে মুখ ফুলিয়ে বসে পরল। আমি অার আদ্রিয়ান অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে একে ওপরের দিকে তাকিয়ে আবারো ওর দিকে তাকালাম। আমরা কিছু বলার আগেই প্রায় ছুটতে ছুটতে আশিস ভাইয়া এসে আদ্রিয়ানের পাশে বসে জোরে জোরে শ্বাস নিলো। আমি আর আদ্রিয়ান কিছুই বুঝতে পারছিনা তাই বোকার মতো ওদের দিকে তাকিয়ে আছি। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে আশিস ভাইয়াকে বলল
— কী ব্যাপার বলতো দুইজন দুই মুডে দুই স্টাইলে একই জায়গা থেকে এলি?
আশিস ভাইয়া হাফাতে হাফাতে বললেন
— বাপরে বাপরে জীবণে এতো মেয়ে সামলেছি কিন্তু এরকম জিনিস প্রথমবার দেখলাম।
আদ্রিয়ান আশিসের মাথায় একটা চাটা মেরে বললেন
— ওই জিনিস কী হ্যা? ডু রেসপেক্ট।
আশিস ভাইয়া মাথায় হাত ঘষতে ঘষতে মুখ ফুলিয়ে বসে রইলেন। আদ্রিয়ান অরুর দিকে তাকিয়ে বললেন
— এই গাধাটা কী করেছে তোমার সাথে?
অরু মাথা নিচু করে বলল
— নাহ ভাইয়া কিছু করেনি।
— ওকে আমি খুব ভালোকরে চিনি। নিশ্চয়ই অনেক জালিয়েছে তোমাকে?
অরু আশিস ভাইয়ার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই তীব্র আর আদিব ভাইয়া এসে পরলেন। আদিব ভাইয়া বসতে বসতে বললেন
— সরি গাইস লেট হয়ে গেলো আস..
টেবিলের দিকে তাকিয়ে ওনার কথা থেমে গেলো। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন টেবিলের দিকে। ওনার এইরকম দৃষ্টির মানে কেউ বুঝতে পারলোনা তাই সবাই ওনার দৃষ্টি অনুসরণ করে টেবিলে তাকালেন। সকলেই তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো অরু তো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আমিও ওদের এইরকম দৃষ্টি দেখে ভ্রু কুচকে টেবিলের দিকে তাকাতেই এদের এইরকম চাহনীর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারলাম। আসলে আদ্রিয়ান এখনো আমার হাতের ওপর ওনার হাত দিয়ে রেখেছেন। আদ্রিয়ান দিকে তাকিয়ে বুঝলাম উনি এতোক্ষণে খেয়াল করলেন ব্যাপারটা। আর খেয়াল করতেই হাত সরিয়ে নিলো। আমিও টেবিল থেকে হাত নামিয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম। আমাদের কান্ড দেখে সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে। আদিব ভাইয়া হাসি থামিয়ে বলল
— আরে আরে হাত সরালি কেনো? আমরা কেউ কিচ্ছু মনে করিনি এম আই রাইট গাইস?
সবগুলোতেই আমাদের পিঞ্চ করে একসাথে বলল
— ইয়াহ।
আমার বেশ লজ্জা লাগছে এই মুহূর্তে। সাথে খানিকটা রাগও লাগছে আদ্রিয়ানের ওপর, তখন বললাম হাতটা ছাড়তে কিন্তু ছাড়লেননা। তখন ছাড়লে এমন পরিস্হিতে পরতে হতো? আদ্রিয়ান এবার বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন
— মজা নেওয়া শেষ? নাকি আরো চলবে?
সকলেই এবার চুপ হয়ে রইলো। আমি এবার সকলের দিকে তাকিয়ে বললাম
— বাট আপনারা কোথায় গিয়েছিলেন বলুনতো আমাদের একা রেখে?
আশিস ভাইয়া কফি মগ ঘোরাতে ঘোরাতে বললেন
— একা না রেখে গেলে একান্তে কথা হতো কীকরে?
এটা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম
— মানে?
আদ্রিয়ান কফির মগটা রেখে রাগী চোখে তাকালো আশিস ভাইয়ার দিকে। আদিব ভাইয়া বলল
— ওকে গাইস অনেক্ষণতো হলো কফিশপে এবার অন্যকোথাও যাই?
আশিস ভাইয়া ভ্রু কুচকে বললেন
— যাবো তো ভালো কথা কিন্তু এই রকস্টারকে নিয়ে পাবলিক প্লেসে বের হবো কীকরে?
এটা শুনে আদিব ভাইয়া একটা বাকা হাসি দিয়ে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকালেন। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে টিশার্ট থেকে সানগ্লাসটা চোখে পড়লেন আর কালো রং এর একটা ক্যাপ মাথায় পরে নিলেন। আমিতো হা করে তাকিয়ে আছি একেতো এখন চেনাই যাচ্ছেনা। এক্কেবারে গভীরভাবে লক্ষ্য না করলে কেউ বুঝতেই পারবেনা যে এটাই আদ্রিয়ান। আদিব ভাইয়া মুচকি হেসে আমাদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচালেন অর্থাৎ ‘কেমন দিলাম’? তীব্র আর অরু ইশারাতেই বললো ‘ওয়াহ ভাই ওয়াহ’। এরপর সবাই মিলে বেরিয়ে একটা লেকপার্কে ঢুকলাম। বিশাল বড় পার্ক এটা। বিশাল লেকের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তা দিয়ে আমরা বিভিন্ন কথা বলতে বলতে হাটছি। হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে আমাকে থামিয়ে দিলেন। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার ইশারা করে চুপ থাকতে বললেন। আর হাত ধরে টেনে অন্যদিকে নিয়ে গেলেন। একটা নিড়িবিলি সাইডে এনে আমাকে দাড় করাতেই আমি বেশ অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে বললাম
— এটা কী হলো?
আদ্রিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ক্যাপ ঠিক করতে করতে বললেন
— কী হলো?
আমি হাত ভাজ করে বললাম
— ওদেরকে ছেড়ে আমরা এখানে কেনো এলাম?
— ওরা ওদের মতো গল্প করে করুকনা আমরা আমাদের মতো করে সময় কাটাই।
— মানে?
— আরেহ চলো তো।
বলে আমার হাত ধরে হাটা দিলো, আমার হাত ধরে লেকের পাশ দিয়ে চুপচাপ হেটে যাচ্ছেন উনি। উনার দৃষ্টি চারপাশের পরিবেশে আর আমার দৃষ্টি ওনার দিকে আর আমার সেই হাতটার দিকে যেটা উনি ধরে রেখেছেন। হালকা ফুরফুরে বাতাস বইছে চারপাশ দিয়ে। বেশ কিছুক্ষণ হাটার পর লেকের একপাশে সুন্দর করে বসার জায়গা বানানো হয়েছে সেদিকে ইশারা করে আদ্রিয়ান বললেন
— চলো ওখানে গিয়ে বসি।
আমি কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়লাম। উনি আমার হাত ধরেই আমাকে নিয়ে লেকের পাশে বসলেন। দুজনের দৃষ্টিই লেকের পানির দিকে। বেশ কিছুক্ষণ সময় চুপচাপ বসে থাকার পর। হঠাৎ পেছন দিয়ে একটা লোক বুটভাজা বিক্রি করতে করতে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান একবার পেছনে ঘুরে তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— বুটভাজা খাবে?
আমি বেশ অবাক হয়ে বললাম
— আপনি খান এসব?
— কেনো? এগুলো কী মানুষ খায়না?
— না মানে…
আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বললেন
— চাচা?
লোকটা আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন
— জ্বে সাহেব?
— কী সাহেব, বাবু বলে ডাকো বলোতো? একটু বাবা, মানিক বলেও তো ডাকতে পারো?
আমি বেশ অবাক হয়ে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে লোকটাও যে বেশ অবাক হয়েছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আদ্রিয়ান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বললেন
— এক প্যাকেট বুড ভাজা দাওতো!
লোকটা বুড ভাজা রেডি করে কাগজে নিয়ে আদ্রিয়ানের হাতে দিতেই আদ্রিয়ান প্যাকেট টা আমার হাতে দিয়ে লোকটাকে জিজ্ঞেস করলেন
— কতো হয়েছে চাচা?
— দশ টেহা।
আদ্রিয়ান মানিব্যাগ বের করে সেটা থেকে পাচশ টাকার একটা নোট বের করে লোকটাকে দিলেন, লোকটা নোটটা দেখে বললেন
— এতো টেহা তো ভাঙতি নাই আমার কাছে।
— ভাঙতি তো আমার কাছেও নেই চাচা। কী আর করার তুমি পুরোটাই রেখে দাও।
— না বাবা এতো টেহা কেমনে নেই?
— দেখো আমি ফ্রিতে কিছু খাইনা। আর আমার কাছেও চেন্জ আই মিন ভাঙতি
নেই তাই ওটাই নিয়ে যাও।
আমি অবাক হয়েই আদ্রিয়ানকে দেখছি। অসাধারণের মধ্যেও যে এমন অনন্য সাধারণ সত্তা লুকিয়ে থাকতে পারে সেটা ওকে না দেখলে বুঝতাম না। আদ্রিয়ান লোকটাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে টাকাটা দিয়ে পাঠিয়ে দিলো। আমি ততোক্ষণে প্যাকেট খুলে খাওয়া শুরু করে দিয়েছি। আদ্রিয়ানও প্যাকেট থেকে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। দুজনেই চুপচাপ বুটভাজা খাচ্ছি, এক অদ্ভুত নিরবতা কাজ করছে দুজনের মধ্যে। বেশ কিছুক্ষণ পর আমি নিজেই বললাম
— আপনি কিন্তু এখোনো বললেননা কেনো ডেকেছেন।
আদ্রিয়ান সামনের দিকে তাকিয়েই বুট চিবোতে চিবোতে বললেন
— বললাম তো নিজেও জানিনা। এক অদ্ভুত মায়া আছে তোমার মধ্যে। একরাতেই সেই মায়ায় জরিয়ে গেছি জানো? ঐরাতের পর থেকে শুধু তোমার কথাই মনে পরে। সেদিন রাত তিনটে বাজে তোমাকে শুধু ধন্যবাদ দিতে ফোন করিনি তোমার গলার আওয়াজ শোনার জন্যে ফোন করেছিলাম।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে উনি এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— জানিনা কেনো তোমার ঐ ভীতু চেহারা, হটাৎ করেই হেসে দেওয়া, অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা সব কিছুই খুব মনে পরছিলো। কিছু তো একটা আছে তোমার মধ্যে যেটা আমি ভূলতে পারছিনা। আই্ আই এম সার্টিং টু মিস ইউ ইয়ার।
আমি পুরো থ হয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে উনি আমাকে মিস করছিলেন? কিন্তু কেনো? কী চলছে ওনার মনে? উনি মুচকি হেসে ভ্রু নাচিয়ে বললেন
— কী ভাবছো?
আমি কোনোরকমে মাথা নাড়লাম অর্থাৎ কিছু না। কিন্তু ওনার বলা কথাগুলো শুনে যে আমার হার্টবিট কতোটা বেড়ে গেছে সেটা আমিই জানি, এখন ওনার পাশে বসতেও আনইজি লাগছে আমার। উনি হয়তো আমার অবস্হাটা বুঝতে পারলেন তাই বললেন
— যাওয়া যাক ওরা খুজছে নিশ্চই?
— হুম।
বলে দুজনেই ওদের কাছে চলে গেলাম। আমাদের দেখে ওরা পিঞ্চ মেরে কিছু কথাও বলল কিন্তু আমার মন নেই সেদিকে আমিতো শুধু আদ্রিয়ানের বলা কথাগুলো ভাবছি। এরপর ওখানেই সবাই মিলে দুপুরের লাঞ্চ সেরে ফিরে এলাম। আসার সময় আদ্রিয়ান শুধু কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললেন
— রাতে ফোন করব ঘুমিয়ে পরো না ঠিকাছে?
সেটা শুনে আমি শুধু একপলক তাকিয়েছিলাম ওনার দিকে কিন্তু কিছু বলিনি। তবে বুকের ধুকপুকানি আরো তীব্র হয়েছিলো।

কলমে লাস্ট মার্ক টেনে ডাইরিটা বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলো অনিমা। তিনদিন ধরে ডাইরী লেখা হয়নি কারণ আগের ডাইরিটা শেষ হয়ে গেছে নতুন ডাইরী আজকে কিনে এনেছে আদ্রিয়ানের সাথে দেখা করে আসার সময়। গত তিনদিনে ঘটা বিশেষ ঘটনাগুলো লিখে রাখল ডাইরীতে। এটা ওর অভ্যাস প্রতিদিনকার বিশেষ ঘটনাগুলো ও ডাইরীর পাতায় আটকে রাখে, এতেই এক অদ্ভুত শান্তি পায়, হালকা লাগে নিজেকে। ডাইরীটা টেবিলে রেখে মুচকি হেসে আদ্রিয়ানের ফোনের ওয়েট করতে লাগল অনিমা। কেনো করছে সেটা ও জানেনা তবে করছে, এক মধুর অপেক্ষা। যেই অপেক্ষায় বিরক্তি নেই, ক্লান্তি আছে শুধু শান্তি আর একরাশ ভালোলাগা।

প্রচুর নেশা করে রুমের সবকিছু ভেঙ্গে তচনছ করে ফেলছে রিক। তার মাথায় আগুন জ্বলছে। তীব্রতর আগুন। কিছুতেই সেই আগুনকে নেভাতে পারছেনা সে। তার ইশারায় এতো এতো বড় বড় মাথা চলে আর সেখানে একটা সামান্য মেয়েকে হাতের মুঠোয় আনতে পারছেনা সে? এটা মানার মতো নয় মানা যায় না এটা। ঐ মেয়েকে হাতে পেলে ও এমন শিক্ষা দেবে যে ওর কাছ থেকে পালানোর চিন্তা করলেও রুহু কেপে উঠবে মেয়েটার। এসব ভেবেই বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে কাচের বোতলটা হাতের মুঠোয় নিয়ে চাপ দিয়ে ধরল রিক। গরগর করে পরতে থাকা রক্তের দিকে তাকিয়ে বলল
— যতো খুশি উড়ে নাও বেইবি। কারণ আবারও খাচায় বন্দি হবার সময় এসে গেছে তোমার। আমি খুব শিঘ্রই তোমাকে বলব ‘ওয়েলকাম ব্যাক টু মাই হেল সুইটহার্ট’। এতো বড় বুকের পাটা এখনো কারো হয়নি যে আমার হাত থেকে তোমাকে বাচাবে। কারো হয়নি ! কারোর না।
#চলবে…
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here