বর্ষার_এক_রাতে পর্ব ৭

#বর্ষার_এক_রাতে
#সাদিয়া


আহফিন গাড়ি থেকে নেমে সোজা ভেতরে ঢুকে গেল। তূবা নেমে যেন একটু স্বস্তি পাচ্ছে। এতক্ষণ শরীরের হাঁড় নেচেছে। তূবা আস্তেআস্তে ভেতরে ঢুকল। এদিক ওদিক তাকিয়ে আহফিন কে দেখতে পেল না। হয়তো ঘরে আছে। তূবা সিঁড়িতে পা দিল। মনে মনে বলছে “লোকটা কি রেগে আছে? হঠাৎ এমন ব্যবহার। কি অদ্ভুত!”

তূবা রুমে ঢুকতেই আহফিন বাঘের থাবার মতো তার বাহু দুটি আঁকড়ে দেওয়ালের সাথে চেঁপে ধরল। ভয়ে তূবার তরাস অবস্থা। সে খেয়াল করল লোকটা ভয়ংকর রেগে আছে। চোখ গুলি লাল হয়ে আছে। সাপের মতো ফুঁসছে। তূবা বলল
“ছাড়ুন আমায়।”
আহফিন রেগেমেগে তূবা কে দেওয়ালের সাথে ঝাঁকি দিল। পিটে খানিক লেগেছে তূবার সেদিনের মতো।

আহফিন একহাতে তূবার গাল চেঁপে ধরল। দাঁত কেটে বলতে লাগল “ফোনে কি বলেছিলে তুমি?”
“…
“এখন বলো কি বলেছিলে ফোনে?”
“ছাড়ুন আমায়।”
আহফিন চিৎকার করে বলল “বল কি বলেছিস?”
ভয়ে এবার তূবার নাজেহাল অবস্থা। গুটিয়ে গেছে একদম, চোখ টলমল করে উঠছে।

আহফিন বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে তূবার ঠোঁট স্লাইড করতে করতে বলল “এই ঠোঁট দিয়েই তো বলেছো তুমি অন্য ছেলের সংস্পর্শে যাবে। কি বলেছিলে যেন? ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয় না। এটাই বলেছিলে তো তুমি?”
“….
আহফিন তূবার ঠোঁট ছেড়ে তার গলায় ধরল। জোরালো ভাবেই ধরল। তূবার কপালের চামড়া কুঁচকে এলো এতে। গলায় লাগছে খুব।
“কি করে বলতে পারলে তুমি?”
“…
“এত বড় সাহস তোর হলো কি করে বল?”

আপনাআপনি আহফিনের হাত রাগের বশে আরো শক্ত হয়ে এলো। দম আটকে আসছে তূবার। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু লোকটার রাগ কমার কিংবা হাত ঢিলে করার নাম নেই। লোকটা কি তাকে মেরেই ফেলবে নাকু আজ। এবার বুঝি দমটাই বের হয়ে যাবে। তূবার চোখ উল্টে আসছে দেখে আহফিন ছেড়ে দিল। রাগে ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে তার। একটু দূরে গিয়ে সে দেওয়ালে হাত রেখে জোরে জোরে নিশ্বাস নিলো। ওদিকে তূবা কাশছে অনবরত। গলাটা খুশখুশ করছে। ব্যথা হচ্ছে।
আহফিন এসে তূবা কে আচমকা একটা চর মেরে দিল। তাল সামলাতে না পেরে সে নিচে পড়ে যায়। তূবার কানের পোকা নড়ে গিয়ে পুপু একটা শব্দ হচ্ছে। জোরটা বেশিই ছিল। তার গালে যেন কেউ লবণ মরিচ লাগিয়ে দিয়েছে।
আহফিন এসে তূবা কে নিচ থেকে উপরে তুলল। তূবার চোখ পানি তে টুইটুম্ভুর। আহফিন দেখেও না দেখার ভান করে তূবার বাহু চেঁপে ধরল।
“তোকে কয়েকবার বলেছিলাম না আমার মুখের উপর কথা বলবে না। আর সেখানে তুই কি করে বলতে পারলি ভাত ছড়ালে..! তোকে মেরে ফেলতে ইচ্ছা করছে আমার। এতটুক বাজে..!”

কথাটা শেষ করতে ইচ্ছা হলো না তার আগেই আরেকটা চর পড়ল তূবার গালে। এবার তূবা কেঁদে দিল। আহফিন দেখছে তূবার চোখ দিয়ে পানির পর পানি পড়ছে। তার কি করা উচিৎ সে জানে না। ভেতরের রাগও কমছে না। তূবার উপর তার ভীষণ রাগ হচ্ছে। সে জানে তার সামনে থাকলে রাগ আরো বাড়বে তাই দরজা বন্ধ করে সে চলে গেল।

কয়েক গ্লাস ড্রিংক আর সিগারেট খেয়ে আহফিন রুমে ফিরে এলো। তূবা তখনো সেখানে বসে কাঁদছে। আহফিন দৌড়ে গেল সেখানে। “তূবা তূবা” বলে ডাকতে লাগল তাকে। তূবা কেঁদেই চলছে। আহফিন চেষ্টা করছে তূবার মুখ নিজের দিকে ফিরাতে কিন্তু তূবা তাকে ছুঁতেও দিতে চাইছে না। জোরাজোরির পর আহফিন সফল হলো। তূবা দুই গালে হাত রেখে তার দিকে মুখ করাল। কিন্তু তূবা তাকাল না।
“তূবা, তূবা তাকাও আমার দিকে।”
“….
“তূবা তাকাও। তূবা আমার ভীষণ রাগ উঠে গিয়েছিল। তূবা আমি বুঝতে পারি নি। তূবা এমন করব না। তোমার লেগেছে খুব তাই না?”
তূবা ছিটকে হাত সরিয়ে দিল তার। লাল লাল পানি ভর্তি চোখ নিয়ে সে আহফিনের দিকে তাকাল। চোখ আর নাল একদম রক্তের মতো লাল টুকটুকে হয়ে আছে। যেন রক্তজবা।

কান্না জড়িত কন্ঠে তূবা বলল “আপনি আমাকে ছুঁবেন না। আপনি কেন আমার গায়ে হাত তুলবেন? সেই সম্পর্ক আপনার সাথে আমার নেই। আপনার সাথে আমার শুধু টাকার সম্পর্ক। আর আপনার কোনো অধিকারও নেই আমাকে মারার। সেখানে আপনি..” শব্দ করে কেঁদে উঠল তূবা।

আহফিন শান্ত হয়ে বলল
“অধিকার তো থাকতেও পারে।”
“কিসের অধিকার? কোনো অধিকার নেই আপনার।”
“সব অধিকারের কি নাম হয় তূবা?”
“….
তূবা আরো কাঁদতে লাগল। আহফিন খেয়াল করল তূবার গালে তার আঙ্গুলের ছাপ পড়ে গেছে। চাঁদের গায়ে এক টুকরো দাগ। গলাতেও দাগ পড়ে গেছে। আহফিন ফ্যালফ্যাল করে দেখছে সেগুলি। হঠাৎ তূবার পাশ দিকের দেওয়ালে আহফিন ঘুষি মারল। চমকে গেল তূবা। কান্না বন্ধ করে পাশ ফিরে তাকাল। ততক্ষণে দুই তিন টা দেওয়া হয়ে গিয়েছে আহফিনের। অনবরত দিতেই লাগল ঘুষি। তূবার এবার ভয় হয়। ভীত নয়নে সে লোকটার দিকে তাকাল। কি ভয়ংকর দেখতে লাগছে। তূবা না করল এমন করতে। শুনল না আহফিন। তূবা আহফিনের হাত ধরলে সে থেমে যায়। তূবা ঢোক গিলে আহফিন কে দেখল। হাতের দিকে তাকালে দেখতে পেল আঙ্গুলের হাঁড়ের সাথে লেগে থাকা চমড়ায় লাল বর্ণ ধারন করেছে। লাল বর্ণ বের হয় বলে। তূবা কান্না বন্ধ করে দিল।

আহফিন তূবা কে শান্ত স্বরে বলল
“তূবা আজ আমি আমার দরকারে তোমাকে এখানে ডাকি নি। বিশ্বাস করো। আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে ডেকে ছিলাম। তোমাকে আমি আজ এতিমখানায় দেখে ছিলাম। তাই ডেকেছি।”
“….

ভ্রুকুঞ্চন করল তূবা। এই লোক বদ্ধ উন্মাদ।

আহফিন তূবার দাগ পড়া গালে হাত দিতে গেলে সরিয়ে নিল সে।
“বলেছি না আপনি আমাকে ছুঁবেন না। আমি আপনার কাছে আর আসতে চাই না।”
“….
“দূরে সরুন যেতে দিন আমাকে।”
“…
“সরুন বলছি।”
কাঁদতে কাঁদতে বলল তূবা। আহফিন সরে গেল। গিয়ে দরজা লক করে তূবা কে দেখিয়ে চাবি তার প্যাকেটে ভরে নিল।

“সরেও এসেছি, বাঁধাও দিচ্ছি না যেতে পারো।”

রাগে তূবার শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
“আপনি এসব করতে পারেন না। দরজা খুলে দিল।”
“….
“কি হলো দরজা খুলে দিন।”
তূবার চিৎকারও শুনে না আহফিন। সে শান্ত। তূবা এগিয়ে গেল আহফিনের কাছে।
“কেন এমন করছেন আপনি? চাবিটা দিন।”
“চাবি আমি দিতে পারব না। এ ছাড়া কিছু বলার থাকলে বলো।”
“…
রাগে তূবা কিটমিট করছে। মেজাজ চড়া হয়ে যাচ্ছে তার।
তূবা আরো কয়েক বার বললেও আহফিন সারা দেয় নি। চাবি বালিশের নিচে রেখে সেখানে শুয়ে পরল সে। তূবা বিছানায় উঠে চাবি নিতে গেলেও আহফিন হাত দিয়ে সরিয়ে দেয় তাকে। তূবা ফের গেল এবার আহফিন তার হাত ধরে তূবা কে শুয়িয়ে দিল। নিজে তার উপরে উঠে হাত বাড়িয়ে ড্রয়ার থেকে স্যাভনল মলম টা নিল। তূবা নিজেকে ছাড়ানোর জন্যে ছটফট করছিল। আহফিন মলম বের করে তূবার গালে দিতে চাইলে সে আহফিনের পিট খামছে ধরে মাথা নাড়াতে থাকল। আহফিন ধমক দিয়ে তাকে চুপ থাকতে বলল “শুহহ। শান্ত হয়ে থাকো তো।” আহফিন তূবার গালে ও গলায় মলম লাগিয়ে দিল। তূবা ঠান্ডা অনুভব করল। জ্বালাটা কমছে বোধহয়। সেও শান্ত হলো। আহফিনের পিট থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিল।

আহফিন তূবার ভিজে চোখের দিকে অলপক দেখছিল। তূবা কঠিন গলাা বলল সরুন। সে উঠে পিটে হাত দিয়ে বলতে লাগল “উফফ আমার পিট থেকে তো তুমি রাক্ষসীর মতো রক্ত বের করে ফেলেছো।”
“…
তূবা সুযোগ পেয়ে যেই হাত বাড়াল বালিশে ওমনি খপ করে ধরল আহফিন।
“আজ বলবে তারপর এখান থেকে যাবে। কাল সারাদিন যদি না বলো তো আটকে থাকবে।”
“….
“কেন আপনি এমন করছেন বলুন না। আর আমার কথা শুনলে আপনার কি এমন হবে?”
“কিছু হবে না। তবুও আমি শুনতে চাই।”
“….
“বলো।”
“হবে না যেহেতু শুনার কি দরকার?”
“তা জানি না। আমি শুনতে চাই।”

তূবা এই টুক বুঝেছে এই লোক বড্ড ঘাড় ত্যাড়া তেমনি উন্মাদ, অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ। না বললে হয়তো যেতেও দিবে না। কিন্তু তার বলতে ইচ্ছা করছে না। আবার ভাবছে মনের চাঁপা কথা গুলি তো গাছের সামনে বললেও হাল্কা লাগে আর এ তো নিজ থেকে শুনতে চাইছে জলজ্যান্ত মানুষটা। তূবা স্থির হলো। ধীর পায়ে গিয়ে সোফায় বসল। আহফিন বিছানায় পা হেলিয়ে তূবার দিকে ঝুঁকে বসল। তূবা বলতে শুরু করছে..!

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here