বর্ষার_এক_রাতে পর্ব ৯

#বর্ষার_এক_রাতে
#সাদিয়া

পর্ব : ৯
সকালে উঠে তূবা দেখতে পেল আহফিন তার পাশেই চেয়ারে বসে আছে। মাথা বিছানায় হেলান দেওয়া। তার হাতটা ঘুমের ঘোরেও খুব শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আছে। তূবা উঠতে চাইল। কিন্তু মাথাটা ভার লাগছে ভেতরে যন্ত্রণা হচ্ছে। তূবার নাড়াচাড়া দেখে আহফিনের লেগে আসা চোখ খুলে গেল। সে তূবার কপালে হাত দিয়ে দেখল জ্বর কেমন।

শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি। আহফিন চোখ ডলতে ডলতে গিয়ে থার্মোমিটার আনল। তূবা কে বলল
“হা করো।”
“..
“কি হলো হা করল।”
আহফিনের চোখের দিকে তাকিয়ে সে মুখ খুলল। আহফিন থার্মোমিটার তার মুখে দিয়ে সময় দেখতে লাগল।

তাপমাত্রা আছে একটু বেশি। আহফিন ড্রয়ার খুলে ঔষধ নিল। খুলতে গিয়ে মনে হলো
“ও শিট। ব্রেকফাস্ট তো করা হয় নি। ঔষধ দেই কি করে.”
“….
“উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও। দেখি কি করা যায়।”

তূবা এখন পর্যন্ত একটা কথাও বলছে না। আহফিন ঔষধের পাতা রেখে দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলে গেল।

একটু পর ফিরে এলো একটা ডিম পোচ নিয়ে।
“নাও এটা খেয়ে ঔষধটা খেয়ে নাও। তারপর আন্টি এলে বলব কিছু করে দিতে। নাও খেয়ে নাও।”
“…
“কি হলো তূবা?”
“আমার খিদে নেই।”
“টেনে দিবো একটা।”
আহফিনের মুখে এমন কথা শুনে তূবা কপালের চামড়া এক করে আনল। মনে মনে বলল “আমার মন চায় আপনাকে দিতে এক ঘুষি।”
“কি হলো? কি ভাবছো আমার দিকে তাকিয়ে? নাকি সুদর্শন পুরুষ কে দেখছো?”
আহফিন কে দেখিয়ে তূবা মুখ ভেংচি কেটে অন্য দিকে ফিরল বিরক্ত মুখে। আহফিন ঠোঁট টিপে হেসে টেবিলের কাছে গিয়ে প্লেট টা রাখে বলল।

“উঠবে নাকি বসেই থাকবে?”
“….
“তূবা তুমি বড্ড জেদি। এর ঔষধ কিন্তু আছে আমার কাছে।”
“কেন? কেন করছেন আমার জন্যে এগুলি? আপনার সাথে তো আমার কোনো সম্পর্ক নেই। অন্য একটা মেয়ের জন্যে কেন এসব করছেন?”

আহফিন তূবার দিকে একটু ঝুঁকে ফিসফিসানি কন্ঠে বলল
“কিছু কিছু সম্পর্ক আত্মার হয়। তূবার সাথে আমার ওমনি সম্পর্ক। অদৃশ্য এক সম্পর্ক।”
তূবা কি বলবে ভেবে পায় না। আহফিন তূবার গালে চুমু খেয়ে আবার চলে গেল। আর তূবা তখনো যন্ত্রের মতো বসে ছিল শুধু।

তূবা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখল আহফিন শার্ট চেঞ্জ করছে। খালি গায়ে দেখতে তাকে অনেক আকর্ষণীয় লাগছিল। তূবা তাড়াতাড়ি মাথা নিচু করে নিল। কি করবে বুঝে উঠতে সময় নিচ্ছে। আহফিন ঘাড় ঘুরিয়ে তূবা কে বিব্রত অবস্থায় দেখে বাঁকে হেসে উঠল। তার মস্তিষ্ক তাকে কিছু করতে বলছে। আহফিন এগিয়ে গেল খালি গায়ে। তাকে এভাবে আসতে দেখে তূবা হা করে তাকিয়ে আছে। এই লোকের মতিগতি বুঝা ভার। আহফিন কে এগিয়ে আসতে দেখে তূবা পিছনে গেল। আরেক পা পিছনে যেতেই আহফিন তাকে ধরে নিল।
“আরেকটু হলে তো বাথরুমে চলে যেতে। আমার সাথে যাওয়ার ইচ্ছা নাকি?”

আহফিন কে বাঁকা ঠোঁটে হাসতে দেখে তূবার শরীর জ্বলে গেল। দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলল
“আমার এখন বাসায় যাওয়ার সময় হয়ছে।”

আহফিন তূবা কে দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড় করাল। এক হাত দেওয়ালের উপর রেখে গভীর দৃষ্টিতে তূবার চোখ মুখ দেখল।

“রাগলে তোমাকে লাল টমেটোর মতো দেখায় নাকি লাল টুকটুকে স্টবেরির মতো। কোনটা?”
“সেটা আমার বিষয় আপনার না।”
“আমি যেহেতু তোমাকে দেখছি সেহেতু এটা আমারও বিষয়।”
“সরুন।”
“উঁহু।”
তূবা আহফিনের দিকে তাকিয়ে বলল “কাল রাতে আমি কিন্তু আপনার কথা শুনেছি। এখন আমাকে আমার মতো যেতে দিন।”

আহফিন তূবার কথায় কান না দিয়ে নিজের মতো বলল,
“আচ্ছা তূবা আমার সংস্পর্শে এলেও কি তোমার কোনো ফিলিংস হয় না? কিছুই কি অনুভব করতে পারো না?”
এবার কি বলবে সে? রাগে লজ্জায় তূবা আহফিনের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।

“আউচ, বুকে ব্যথা কেন দিলে? তোমরা সব মেয়েরা কি শুধু ব্যথা দিতেই জানো?”
গাম্ভীর্য মুখে আহফিনের বলা কথাটাতেও তূবার রাগ হলো। সে আহফিনের চোখে রাগান্বিত হয়ে দাঁত খিঁচে তাকাল। মনে মনে বলল “আপনার প্রতি আমার পিনপিন রাগ টা একদিন দাউদাউ করে জ্বলে উঠবে।”

তূবা ব্যাগ নিতে গেলে আহফিন তার হাত ধরে আটকাল।
“কোথায় যাচ্ছো? এত কষ্ট করে যে আমি তোমার জন্যে ডিম পোচ করে আনলাম সেটা কি তোমার নানি এসে খাবে?”
“আমার নানির এসে খাওয়ার দরকার নেই। আপনার এটা আপনি খান।”
“না হলে তো আহফিন চৌধুরী যেতে দিবে না কাউকে।”
এই মুহূর্ত তূবার মনে হচ্ছিল ‘লোকটাকে যদি চুলে ধরে টেনে উপরে উঠে আচ্ছা মতো কয়েকটা রামধোলাই দিতে পারতাম তবে শান্তি লাগত।’

মুখে কিছু বলল না ফের রাগি চোখের দৃষ্টি দিয়ে সে দ্রুত কোনো ভাবে ডিম টা মুখে দিল। তারপর আহফিনের দিকে তাকাল। লোকটা ঠোঁটে আঙ্গুল ঠেসে বোধহয় হাসছে।
“হেয়েছে? এবার তো যেতে পারব?”
“ঔষধ খাওয়া তো হয় নি।”
“এরপর বইলেন আপনাকে খেতে।”
“হোয়াট?”
“…

তূবা ঔষধটা খেয়ে উঠতে গেল আহফিন তাকে ঠেলে আবার বসিয়ে দিল। তূবা তো এবার আহাম্মক হয়ে গেল। উঁচু স্বরে বলল
“আবার কি?”

লোকটা জবাব দিল না। তার দিকে কেমন নেশাভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। তূবার অন্য কিছু ভেবে ভয় হলো। সে আহফিনের চোখের দিকে তাকাল। আহফিন হঠাৎ হাটু গেড়ে ফ্লোরে বসে পড়ল। তূবা পরিস্থিতি বুঝতে পারছিল না। আহফিন নরম হাতে তার দুই গাল স্পর্শ করল। আহফিনের ওমন চাউনি এই এমন স্পর্শে তূবা কেঁপে উঠল। ভেতরের স্পন্দন অদ্ভুত রকম ভাবে বেড়ে গেল। শরীরটাও কেমন বরফের মতো জমে আসছে। আহফিন তার মুখটা নিজের দিকে এগিয়ে আনল। তার ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা ঘন কুসুম টার দিকে আহফিন ঘোর ভাবে তাকিয়ে আছে। আহফিন মুখ বাড়িয়ে ঠোঁটে লেগে থাকা কুসুম টা শুষে নেয়। তূবা তখনি চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। থেমে থেমে নিশ্বাস নিচ্ছে। আহফিন এভাবেই খুব কাছ থেকে তূবা কে দেখতে লাগল। তূবার গরম নিশ্বাসের স্পর্শ অনুভব করতে লাগল। দুই চোখ এদিক ওদিক করে দেখতে লাগল তূবাকে।

তূবার ফোন বাজলে আহফিন কে সরিয়ে দিল সে। দৌড়ে সোফার কাছে থাকা টিটেবিলের উপর রাখা ব্যাগ থেকে ফোন টা বের করল। তুসি কল করেছে। নিশ্চয় না খেয়ে বসে আছে।
“হ্যালো।”
“আপা তুই আসবি না?”
“আ.আসছি আমি।”
তূবা কল কেটে ব্যাগে ফোন রেখে পিছন ফিরল। আহফিন তখনো এক হাটু গেড়ে বসেছিল ওখানে। ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসছিল। তূবা ব্যাগ নিয়ে দ্রুত বের হয়ে গেল। তার ওভাবে দৌড়ে যাওয়া দেখে আহফিন না হেসে পারল না। বিড়বিড় করে বলল “তোমার প্রতিটা স্পর্শ আমাকে শিউড়ে তুলে তূবা। ভয়ংকর শিহরন জাগে ভেতরে।”

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here