বর্ষা বিকেলের ঢেউ,পর্ব:৩+৪

#বর্ষা_বিকেলের_ঢেউ
৩.
#WriterঃMousumi_Akter

ক্যান্টিনে বসে আছে মৌ এর হবু বর মৌ আর সানজি।মৌ মারাত্মক বিরক্তি নিয়ে বসে আছে।সে যেনো কোনো ভাবেই তার বিয়ে ঠিক হওয়া মানুষ টাকে সহ্য করতে পারছে না।মৌ এর মুখ চোখে প্রচুর ঘাম আর অস্হিরতা তার একমাত্র কারণ কিছুক্ষণ আগের ছেলে গুলো।কোল্ড কফি,নুডুলস,বিরিয়ানি,কোল্ড ড্রিংক্স,পিজা এসে হাজির হলো মৌ এর সামনে।মৌ এর মারাত্মক পছন্দের এগুলা কিন্তু হবু বর দিয়েছে তাই খাবারের প্রতি লোভ টা সামলিয়ে চুপ হয়ে বসে আছে।সানজির দিকে ছেলেটি কফি এগিয়ে দিলো।সানজি ওদের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি না হয়ে চুপচাপ বসে আছে একজন নিরব দর্শক হয়ে।ছেলেটি মৌ কে বলে কি হলো আপনি কিছু নিচ্ছেন না যে।আমি জানি এগুলা সব আপনার ফেভারিট। অনেক টা ক্লান্ত আপনি নাচ করে আমি জানি কফি টা নিন।নাচার সময় শাড়ি টা ভালভাবে সেফটিন দিয়ে ব্লাউজের সাথে লাগিয়ে নিতে হয়।তবে বেশ ভালো নাচেন কিন্তু আপনি।ছেলেটি ফোন স্ক্রল করছে আর নরম গলায় কথা গুলো বলছে।

মৌ সন্দিহান দৃষ্টি নিয়ে বলে আপনি কিভাবে জানলেন আমি নাচ করেছি।মৌ বিয়ে করতে যতই রাজি না থাকুক কিন্তু সে এটা চাই নি যে বাইরের একটা মানুষ তাকে নিয়ে খারাপ কিছু ভাবুক।মনের মাঝে কেমন একটা লাগছে তার ছেলেটি কি তাকে এমন ই ফাউল ভাবছে যে সে যেখানে সেখানে ছেলেদের সামনে নেচে বেড়ায়।এমন পাতলা শাড়ি পরে বাইরে নাচাটাও ঠিক না।

মৌ কোল্ড কফি টা নিয়ে হবু বরের দিকে এক পলক তাকিয়ে খুব নরম কন্ঠে বলে দেখুন আমি এমন মেয়ে না আমি নাচতে চাই নি ওরা বলেছে না নাচলে প্রিন্সিপাল ভার্সিটি থেকে বের করে দিবেন।ভার্সিটি থেকে বের করে দিলে আমার তো আর লেখাপড়া হবে না।কিন্তু আমাকে যে পড়তেই হবে।প্রথম দিন এসেই যদি প্রিন্সিপাল আমাকে বের করে দিন তাহলে আম্মু আমাকে কয়েক টুকরো করে ফেলবে।তাই আমি এই কলেজের টপার স্টুডেন্ট আরস ভাইয়া কে খুজছিলাম।আসলে উনিও আমার বয়ফ্রেন্ড নন ইনফ্যক্ট আমি তাকে চিনিও না।শুনেছি ভার্সিটিতে আরস ভাইয়ার কথায় নাকি সব।উনাকে সবাই খুব মানেন।তাই আমি চাইছিলাম ওই বাজে ছেলে গুলোর ব্যাপার টা উনাকে জানাতে যাতে ভবিষ্যতে আমার আর কোনো অসুবিধা না হয়।

মৌ এর কথা গুলো শুনে মৌ এর হবু বর বলে আরস ভাইয়া তো তাহলে ভেরি ইন্টারেস্টিং পারসন।আমিও তাকে দেখতে চাই।

মৌ বলে ছেলে গুলো খুব অসভ্যতা করেছে আমার সাথে।আর শুনেছি আরস ভাইয়াকে নাকি এখানের সবাই খুব ভয় পাই।তাই উনার কাছে অভিযোগ দিতাম।

তো তার জন্য অন্য একজনের কাছে নালিশ না দিয়ে নিজেই তো ছেলেগুলোর গালে পায়ের জুতা খুলে কয়েকটা মারতে পারতেন।

আপনি কি পাগল তাহলে চারদিকে নিউন নিউজ হয়ে যেতো ১৯ বছরের এক তরুণি নবিন বরণের দিকে রেপ এর স্বীকার।

ভদ্রলোক প্যান্টের পকেটে ফোন গুজে সরাসরি মৌ এর দিকে তাকিয়ে বলেন অনেক গভীর চিন্তাধারা আপনার কোথা থেকে কোথায় চলে গিয়েছেন।আই থিংক আরস তখন ঘাস কাটতো না তাইনা।আপনি যেভাবে আরস এর নাম জপছেন তার প্রতি কি আপনার বিন্দুমাত্র ভরসা নেই আপনাকে কি মলেস্ট হতে দিতো।আমার সিকসেন্স বলছে নিউজ পেপারে এটা উঠে যাবে ১৯ বছরের এক বাচ্চা মেয়েকে র‍্যাগিং এর অপরাধে আরস তাদের উদম ক্যালানি দিয়ে হসপিটালে সরকারি খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।সিরিয়াসলি কি দয়ালু আপনার আরস ভাইয়া তাইনা?

সানজি আর মৌ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে আছে।মৌ ছেলেটিকে যেনো তেনো ভেবেছিলো কিন্তু এখন কথা বলে বুঝছে ছেলেটা একেবারে যা তা নয়।দেখতে যতটা সুন্দর কথাবার্তা ততটাই স্মার্টলি বলে।নিশ্চয়ই অনেক শিক্ষিত হবে।বিয়ে করার আগ্রহ নেই বলে ছেলেটির দিকে ভাল ভাবে তাকিয়ে দেখে নি তার ব্যাক্তিগত ব্যাপারেও কিছু জানা হয় নি।

ছেলেটি মৌ এর দিকে খাবার গুলো এগিয়ে দিয়ে বলে নিন খান এগুলা.. সকালে তো কিছুই খেয়ে আসেন নি।

আবার ও সন্দিহান মৌ উনি কিভাবে জানলেন যে সে না খেয়ে এসছে।এই দিকে খুদা ও লেগেছে প্রচুর।মৌ নিজের মতো খাচ্ছে।

এমন সময় মৌ এর ফোনটা টেবিলের নিচে পড়ে যায় মৌ আর তার হবু বর দুজনই ফোনটা তুলতে যায় ঠিক তখন ই আচমকা মৌ এর হবু বরের ঠোঁটের ছোয়ার মৌ এর কপালে চুমু হয়ে যায়।দুজন ই খুব অসস্তিতে পড়ে।মৌ মারাত্মক লজ্জা পেয়ে যায় এটা কি হলো।টেবিলের নিচে অনকাঙ্ক্ষিত ভাবে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাক্ষি আর কেউ রইলো না।মৌ এর হবু বর হালকা কেশে নিয়ে বলে ঠোঁটে মনে হলো ধাক্কা খেলাম কিছু একটার।আমি এখন উঠি। আরস তো এলো না আমার একটু কাজ আছে আবার দেখা হবে প্রিন্সিপাল স্যার ডাকছেন আমায়।মৌ সানজি কে বলে আপু উনি কি এমন ইমপরটেন্ট ব্যাক্তি বলো তো প্রিন্সিপাল স্যার কেনো উনাকে ডাকবেন।

কিছুক্ষণ পরে স্টেজে উঠে ভাষণ দিবেন আরস ভাইয়া।তার ই এনাউন্সমেন্ট চলছে।এতক্ষণে হয়তো সেই মহান ব্যাক্তিটার দেখা পাওয়া যাবে।স্টেজে যখন আরস ভাইয়া উঠলো মৌ আর সানজি দুজনেই অবাক তার হবু বর ই আরস।সানজি আর মৌ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হতবাক।উনিই আরস।মৌ এর মুখের কথা যেনো সব বিলীন হয়ে গেলো।মৌ বলে আপু আমার না মাথা ঘুরাচ্ছে এটা আমি কি দেখলাম।আর উনি এত ভাল মানুষ। আমার কাছে তো উনাকে আমার লাইফের ভিলেন মনে হচ্ছিলো।পুরা ভার্সিটি জুড়ে যার প্রশংসা আমি তাকেই এত খারাপ ভাবছিলাম।সানজি বলে এই মৌ এই ভার্সিটির হিরো ই তোর হবু বর এটা কি ভাবা যায়।মৌ বলে, আপু আমি তো বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছি এত ফেমাস একজন মানুষ নিজের প্রেমিকা রেখে আমাকেই কেনো বিয়ে করবেন।আমার মাঝে তো বিশেষ কিছুই নেই।সানজি বলে আরে ধূর কোনো প্রেমিকা ফ্রেমিকা কিচ্ছু নেই ইচ্ছা করেই তোকে বলেছে দেখে নিস।এই পুরা ভার্সিটিতে চল খোজ লাগাই কে উনার গফ।

এই নিয়ে দশ পনেরো জনের কাছে জিজ্ঞেস করলো মৌ আর সানজি সবাই বললো উনার গফ আছে কিন্তু কেউ কোনদিন তাকে দেখে নি।তার নাম ঠিকানা কেউ কিচ্ছু জানে না।একটা ছেলে এত সময় আরস এর সাথেই ছিলো মৌ ছেলেটিকে ডাকে এক্সকিউজ মি ভাইয়া শুনুন।

‘ছেলেটি খুব ভদ্র ভাবে এসে বলে জ্বী ভাবি বলুন।’

‘মৌ সন্দিহান দৃষ্টি নিয়ে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলে কাহিনী কি কিসের ভাবি।’

‘ জ্বী ভাবি ভাই বলেছেন আপনি তার হবু বউ। আর বলেছেন তোদের ভাবির কাল এ ভার্সিটির প্রথম দিন। তোদের ভাবি খুব রাগি আর বাচ্চা একটি মেয়ে। কেউ যদি ওর দিকে ভুলেও তাকায় তার চোখ দুটো তুলে ফেলবি।কেউ কোনভাবে যেনো বিরক্ত করে না। কেউ কিছু বললে সোজা ভাইকে জানাতে বলেছেন।কিছুক্ষণ আগে কয়েক টা ছেলে আপনাকে বিরক্ত করছিলো ভাই তাদের প্রচুর মেরেছে।তারা এখন হসপিটালে আছে।’

‘মৌ বলে আচ্ছা আপনাদের ভাই এর কি কোনো প্রেমিকা আছে।’

‘হুম আছে ভাবি।ভাই তাকে প্রচুর ভালবাসে।ভাই এর জীবনে সে ছাড়া আর কারো অস্তিত্ব নেই।আরস ভাইয়া চাইলে সারাদিনে গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করতে পারে।ভার্সিটির মেয়েরা তো সবাই উনি বলতে পাগল কিন্তু উনি তো পাত্তা দেন না।উনার গার্লফ্রেন্ড ছাড়া উনি কাউকে পাত্তা দেন না।’

‘আচ্ছা কে সে প্রেমিকা।’

‘কেনো ভাবি আপনি জানেন না।’

‘নাতো।’

‘সরি ভাবি তাহলে আমি এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারবো না।ভাই শুধু তার এ প্রেমিকার ব্যাপারে কাউকে কিছু বলেন না।এটা নাকি উনার জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ‘

‘আচ্ছা কোনদিন ছবি দেখেছেন।’

‘না তবে ভাই সরাসরি দেখিয়েছেন।’

‘কেমন দেখতে।’

‘যেহেতু আমাদের ভাই এর পছন্দ সেটা কি খারাপ হতে পারে।আচ্ছা ভাবি ভাই ফোন দিচ্ছেন এখন যায়।’

মৌ আর সানজি দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।সিরিয়াসলি ছেলেটা বড্ড অদ্ভুত। প্রেমিকাকে এত টা ভালবাসার পরেও পরিবারের পছন্দে মৌ এর মতো সাধারণ মেয়ে বিয়ে করছে।তাছাড়া মৌ কে এতটা গুরুত্ব ই বা দিচ্ছে কেনো?একদিন বিয়ে ঠিক হওয়ার সাথে সবাই কে জানিয়ে দিয়েছে মৌ উনার বৌ।

মৌ এবার আরো বেশী চিন্তায় পড়ে গেলো।তার মানে উনি বিয়ে নিয়ে সিরিয়াস।বয়ফ্রেন্ড আছে জেনেও বিয়ে করবে।

সবাই অনুষ্ঠানে বসে থাকলেও মৌ এর মন বসছে না। এসব হাসি আনন্দ কোনো কিছুই ভাল ভালছে না তার।

বড্ড বেশী আহিন কে মিস করছে সে।সেই ক্লাস এইটে থাকতে আহিন প্রপোজ করেছিলো মৌ কে।হাজার হাজার চিঠি দিয়ে ইমপ্রেস করেছিলো।পুরা একটা দিন মৌ এর জন্য ঝড় বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে প্রচন্ড ঠান্ডা লাগিয়েছিলো।আহিনের পাগলের মতো ভালবাসা দেখে মৌ তাকে ভালবাসতে বাধ্য হয়েছিলো।আহিনের সাথে তোলা হাজার হাজার সেল্ফি রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া আহিনের সাথে রাত দিন এক করে চ্যাটিং করা কোন কিছুই ভোলার মতো নয়।চোখ দিয়ে অজান্তেই পানি পড়ছে মৌ এর।কাঁন্না আড়াল করতেই মানুষের মাঝ থেকে খানিক টা দূরে চলে আসা তার।চার চার টা বছর কম কথা নয়।

‘এমন সময় আরস এসে পাশে বসে একটা টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলে চোখের পানি টা মুছে নিন কাজলটা বিশ্রি ভাবে লেপ্টে গিয়েছে।’

‘মৌ হঠাত কারো কন্ঠ শুনে চমকে যায়।হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিয়ে নাক টানতে টানতে বলে একি আপনি এখানে।’

‘আকাশের দিকে কলার ঝাড়ি দিয়ে তাকিয়ে বলে খোজ নিতে এলাম আরস কে খুজে পেয়েছেন কিনা।’

‘আমাকে তখন কেনো বললেন না আপনি ই আরস।আসলে ভার্সিটিতে আসার পরে বুঝতে পেরেছি আপনি মানুষ টা অনেক ভালো।কারো কাছে একটা ব্যাড রিপোর্ট পাই নি।’

‘মানুষ ভালো বললে কি হবে মিস মৌ আপনার চোখে তো খারাপ মানুষ তাইনা।’

‘আমাকে প্লিজ আর লজ্জা দিবেন না।আমার হঠাত বিয়ে ঠিক হওয়ায় আমার মাথা কাজ করছিলো না।শুধু চাইছিলাম বিয়ে টা ভেঙে যাক।তাই ইচ্ছা করেই বাজে বিহ্যাব করে ফেলেছি। ‘

‘বিয়েটা করতে না চাওয়ার কারণ টা কি?’

আসলে আমি প্রেগন্যান্ট আরস বাবু বলেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো মৌ।আমার অনাগত সন্তানের কথা ভেবে প্লিজ বিয়ে টা ভেঙে দিন।আমার পেটে আমার ভালবাসার চিহ্ন বেড়ে উঠেছে।অন্য কারো ওরস জাতো সন্তান আমার গর্ভে।আমি কিভাবে এই অবস্থায় আপনাকে বিয়ে করি বলুন।এটা জানাজানি হলে সমাজ আমাকে জারজ সন্তানের মা বলবে আমাকে চরিত্রহীন, কলঙ্কিনী বলবে।আমার চরিত্রনিয়ে কথা তুলবে।এখন আপনি বলুন আমি কিভাবে ফ্যামিলি তে আমার জীবনের এই সমস্যার কথা জানাবো।এটা আমার মা বাবা কিভাবে নিবেন।ওরা এটা সহ্য করতে পারবেন না।প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্টান্ড।আমি হাত জোর করছি এই বিয়ে টা ভেঙে দিন প্লিজ।আমি জানি আপনি একজন ভালো মানুষ আমার সিসুয়েশন টা বুঝবেন।

আরস যেনো আকাশ থেকে পড়লো।

চলবে,,

#বর্ষা_বিকেলের_ঢেউ
৪.
#WriterঃMousumi_Akter

আপনার শাড়ির পেছনে লাল রক্তে লেপ্টে গিয়েছে।আই থিংক এটা পিরিয়ড এর দাগ।একটু কেয়ারফুলি থাকবেন তো।আপনি তো একেবারে বাচ্চা নন।এটা একটা সিরিয়াস ইস্যু একটা মেয়ের ক্ষেত্রে এসব ক্ষেত্রে কেয়ারলেস হলে হবে খুব ই শান্ত কন্ঠে কথা গুলো বললো আরস।

আরস এর এমন কথা শুনে চমকে ওঠে মৌ।পেছনে তাকিয়ে দেখে রক্তের মাখামাখিতে বিশ্রি একটা অবস্থা। যতই আধুনিক যুগ হোক আজও পিরিয়ড একটা মারাত্মক লজ্জার জিনিস প্রতিটি মেয়ের কাছে।মৌ এমন বাজে ধরণের লজ্জায় এর আগে পড়ে নি।তাও আবার হবু বরের সামনে।আরস এর সামনে লজ্জায় মৌ এর মাথা কাটা যাচ্ছে।কিভাবে এমন বাজে অবস্থা হলো মৌ বুঝতেই পারে নি।বিশ্রি ভাবে লেপ্টে আছে রক্তের দাগ।এখন কি করবে সে।এইদিকে আবার তার পেটে পেইন ও শুরু হয়েছে।এই টাইমে তার মারাত্মক পেইন হয়।

মৌ আরস এর দিকে তাকিয়ে দেখে সে দুই প্যান্টের পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে তাকিয়ে।

আরস ভ্রু কুচকে তাকিয়ে মৌ কে বলে আমি ডাক্তার না হলেও এতটুকু জানি যে মেয়েরা প্রেগন্যান্ট হলে তাদের পিরিয়ড হয় না।কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে দেখছি ব্যাপার টা সম্পূর্ণ ভিন্ন।কি কাহিনী কি।বাচ্চাটা কার শুনি।ভূত প্রেতের নাকি। নাকি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করা।নাকি অন লাইনে অর্ডার করেছেন।নাকি এই বাচ্চা অন্য জগতের।বিভিন্ন হরর স্টোরি তে এমন অলৌকিক ঘটনা দেখি আপনিও কি অলৌকিক কিছু ম্যাডাম।

মৌ যে এভাবে ধরা খাবে বুঝতেই পারে নি।প্রথমত বিয়ে ভাঙতে মিথ্যা বলেছে সেটাই বাঁশ গেলো।তারপর আবার এমন লজ্জাজনক একটা ব্যাপার হলো।ওই মুহুর্তে মৌ লজ্জায় আরস এর দিকে চোখ তুলে তাকাতেই পারছে না।কিভাবে আরস কে ফেস করবে বুঝতে পারছে না।চারদিকে তাকিয়ে দেখছে মৌ কেউ কিছু দেখলো কিনা।মানুষের সামনে বা মুখ দেখাবে কিভাবে।মনে হচ্ছে মৌ এখনি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিবে লজ্জায়।সবাই যদি এই বিশ্রি ব্যাপার টা দেখে নেই তাহলে রোজ হাসাহাসি করবে।এই দিকে সানজি ও এখানে নেই।সে অনুষ্টান দেখছে। কাকেই বালবে এই সমস্যার কথা।

আরস ফোন টা হাতে নিয়ে ফোন স্ক্রল করছে আর আর মাঝে মাঝে কপাল কুচকে তাকিয়ে দেখছে মৌ এর মিথ্যা বলার পরের ফিলংস টা।ফোন টা পকেটে রেখে নিজের গায়ের এশ কালারের লং শার্ট টা মৌ এর গায়ে জড়িয়ে দেই আর বলে এটা নিন আপনার সিসুয়েশন টা বুঝতে পারছি।আই থিংক এখন আর অসুবিধা হবে না।আর এতটা লজ্জা পাওয়ার ও কিছু নেই।এটা একটা সিম্পল ইস্যু।

আরস এর হাইট ৬ ফিট সেখানে পিচ্চি মৌ ৫ ফিট ২” হাইট।তাই নরমালি আরস এর শার্ট এ মৌ ঢেকে গেলো।আরস এর শার্ট এ সুন্দর এক পারফিউম এর ঘ্রাণ। মৌ কে আকৃষ্ট করলো সেই পারফিউম এ।শার্ট টা গায়ে জড়িয়ে যেনো প্রথমবার মনে হলো কেউ তাকে লজ্জা থেকে সেফ করলো।কেউ তার বিপদের সঙ্গী হলো।মৌ এর আরসের প্রতি ধারণা টা কিছুটা চেঞ্জ হলো।রাগ খানিক টা পাতলা হলো।নিজের কাছেই যেনো মারাত্মক লজ্জা লাগছে মৌ এর।কি বলবে আরস কে নিজেও জানেনা।ভেবেছিলো আরস বিয়ে টা ভেঙে দিলে পরে একদিন সরি বলে দিবে।কিন্তু তা আর হলো কই।একটা পাতলা গেঞ্জি পরে হ্লুদ ফর্সা শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরস।নাকের আগায় একটা হালকা তিল।চুল এর ভাজ ভেঙে এক গোছা কপালে পড়েছে।চুল একটু বড়ই তার।আরস কে এভাবে দেখতে মৌ এর লজ্জা লাগছে।

মৌ এর নাকে মুখে এমন লজ্জা দেখে আরস মৌ কে বলে জীবনে এই প্রথম কাউকে আমার পারসোনাল জিনিস দিলাম।শার্ট টা আর ফেরত দেওয়ার দরকার নেই ওটা আপনার কাছেই রেখেদিন।মৌ বলে আমি কি করবো এটা দিয়ে।আরস বলে রেখে দিন হয়তো কোনদিন বৃষ্টিতে ভিজে আপনার বাসায় গেলাম আর সেদিন কাজে লেগে গেলো।আর এই প্রথমবার ভার্সিটির মাঝে আপনার সামনে ইজ্জত খুলে দাঁড়িয়ে আছি।জীবনে কেউ কোনদিন আমাকে এভাবে দেখে নি।ভাবতেই পারছি না আরস এভাবে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে।মৌ শান্ত গলায় বলে আরস বাবু আপনি কি এভাবেই থাকবেন।আমাকে উপকার করতে গিয়ে আপনার সমস্যা হলো।আরস মিষ্টি হেসে বলে পাশেই আমার এক ছোট ভাই এর দোকান আছে মেসেজ করেছি এখনি এখানে শার্ট নিয়ে আসবে।

‘মৌ সন্দিহান ভাবে বলে এখানে আসবে।’

‘হ্যাঁ এখানেই আসবে ৫-৭ মিনিটের মাঝে।’

‘আচ্ছা শুনেছি আপনি অনেক মারামারি করেন।আপনার ভয় করে না।’

‘এক ভ্রু উচু করে আরস বলে কিসের ভয়।’

‘মারামারির সময় যদি মার খান সেই ভয়।’

‘হাহাহাহা আজ ও কারো সাহস হয় নি আমার গায়ে হাত তোলার।বরাবর আমার হাতেই মার খেতে হয়েছে সকল কে।তবে মারামারি করতে গিয়ে হাত পা কেটেছে অনেক বার’

‘তাহলে তো বেশ ডেঞ্জারাস মানুষ আপনি।’

‘মোটেও না।আমি পলিটিক্স করি তবে মানুষকে অত্যাচার করার জন্য নয়।মানুষের উপকার করার জন্য।আমার ক্যারিয়ারে এমন রিপোর্ট নেই অহেতুক কাউকে কিছু বলেছি।যতটুক ঝামেলা করেছি সব টা মানুষের জন্য ই।তবে এসব জন্য কিছু শত্রু ও আছে আমার তবে কারো সাহস নেই আমার সামনে কিছু বলার।তবে আমি ডেঞ্জারাস মুডে গেলে সেটা ভিন্ন কথা’

‘যারা মারামারি করে ওরা তো লেখাপড়া করে না।তাহলে আপনি এত টপার হলেন কিভাবে।’

‘আমি সেটাই ভাবছি স্যার রা কি ভেবে খাতায় মার্ক দেন বলেই আরস একটা লং নিঃশ্বাস নিলো।’

মৌ আরস সম্পর্কে যতটুক জেনেছে তাতেই বেশ ইমপ্রেস আরস এর প্রতি।আরস ভাল ছেলে তবে মৌ এর পক্ষে ভালবাসা বা বিয়েটা করা সম্ভব নয়।মৌ এর সাথে জড়িয়ে আছে আহিনের অনেক বড় একটা স্মৃতি। পৃথিবীতে মানুষ সব পারলেও স্মৃতি একদিনে মুছে ফেলতে পারে না।সত্যিকারের ভালবাসার মানুষ গুলোকে ভুলতে পারে না।জোর করে মন থেকে কারো নাম কেটে অন্য কারো নাম বসিয়ে দেওয়া যায় না।তাই চাইলেও মৌ সেটা পারছে না।মৌ এর পুরা জীবন টাই আহিন কে ঘিরে।প্রতিটি সেকেন্ডে আহিনের স্মৃতি ভেসে উঠছে মৌ এর মনে।

‘মৌ ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো।’

‘আরস বলে কি সমস্যা আবার কাঁদছেন কেনো?’

‘আমি কোনো মিথ্যা বলতে চাই নি।কিন্তু আমার যে কিছুই করার ছিলো না।’

‘থাক আপনি কাঁদবেন না।বুঝেছি আপনার একটা বাচ্চার অনেক শখ।টেনশন নিবেন না বিয়ের পর সবার ই বাচ্চা হয় তাই আপনার ও হবে।’

আরস মৌ এর কথা এড়িয়ে যেতেই এমন উদ্ভট কথা বলে উঠলো।

মৌ আবার বলতে শুরু করে।।।

‘দেখুন আমি কিছুতেই বিয়ে টা করতে পারবো না।আপনি আপনার প্রেমিকাকে বিয়েটা করে নিন প্লিজ।’

‘মিস মৌ আরস কে এখনো কিছুই চিনেন নি আপনি।আমার যেটা ভাল লাগে সেটাই করি।আজ অবধি সেটাই করে এসছি।’

‘আপনি আপনার প্রেমিকাকে ঠকাতে পারেন না আরস বাবু।’

‘আপনাকে কে বললো আমি যাকে ভালবাসি তাকে ঠকাবো।’

‘তাহলে তাকে বিয়ে করছেন না কেনো?’

‘কে বলেছে আমি বিয়ে করছি না। আমি আমার প্রেমিকাকেই বিয়ে করবো।’

‘তাহলে আমাকে বিয়ে করছেন না তাইতো।থ্যাংকিউ সো মাস।’

‘আপনাকে বিয়ে করছি না এটা তো বলিনি।’

‘তার মানে?’

‘আপনার এত টুক মাথায় কোনো মানেই ঢুকবে না।’

এমন সময় একটা ছেলে এসে বলে।।

‘ভাই এই নিন শার্ট যেটা লাগে নিন।’

আরস মৌ এর দিকে তাকিয়ে বলে,

‘আপনি একটা পছন্দ করে দিন দেখি কেমন পছন্দ আপনার।’

‘শার্ট গুলো আনার সঙ্গেই মৌ এর ওখানে থাকা ব্লু শার্ট টার দিকে নজর যায়।মৌ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে এটা নিন।আপনি তো আর আমার মতো কালো না।এই শার্ট এ বেশ মানাবে আপনাকে।’

আরস শার্ট টা গায়ে দিয়ে ফোনের ক্যামেরা অন করে নিজেকে ভালো ভাবে দেখে নিলো।নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে আরস ফোনের ক্যামেরায় নিজেকে দেখছে।নাকের ডগার তিলটার জন্য আরস কে যেনো বেশী কিউট লাগছে।মুখে হালকা খোচা খোচা দাঁড়ি।গাল টা একদম ই ফর্সা চুল গুলো একটু লম্বা হওয়াতে সব সময় কপালেই পড়ে থাকে।আরস শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে বলে কে বলে কালো তারে সে তো শ্যামলতা।

মৌ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে এক্সকিউজ মি।

আরস খানিক টা ঝুঁকে মৌ এর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে বলছি আপনার মতো শ্যামলতা আর কজন হয় শুনি।না জানি কজন কে খুন করেছেন এই মায়াবী চোখের মায়ায়।

মৌ এর মাথার উপর দিয়ে গেলো সব টা।

সাইড থেকে গুটি কতক মেয়ে আরস কে দেখাদেখি করছে।অনেক সময় মৌ এটা নোটিস করছে মেয়েগুলা আরস কে। মেয়েগুলোর চোখে মুখে যেনো আরস এর প্রতি মারাত্মক ভাল লাগা কাজ করছে।

আরস বাবু মেয়েগুলা কি আপনার পরিচিত।অনেক্ষণ ধরে আপনাকে দেখছে।কিছু বলবে হয়তো।

দে আর ক্রাশড উইথ মি মেবি।আই এম নট সিওর।তাছাড়া আমি মেয়েদের ফলো করি না।

বলতে বলতে দুজন ছেলে এসে বলে ভাবি আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?

মৌ ডানে বামে ছেলে দুইটা ভাবিকে খুজছে কিন্তু দুঃখের বিষয় মৌ ছাড়া সেখানে কেউ নেই।ছেলে দুইটা কিছু ফুল মৌ এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে এনগেজমেন্ট এর শুভেচ্ছা ভাবি।

মৌ ভদ্রতা রক্ষার্থে ফুলগুলো নিয়ে ছোট্ট করে ধন্যবাদ জানায়।আরস এর দিকে ভাবান্তর চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে মৌ।আমি তো আহিন এলেই পালিয়ে যাবো ছেলেটা শুধু শুধু কেনো মানুষ জন কে বলে বেড়াচ্ছে নিজের বিয়ের কথা।আবার হবু বউ এর সাথে পরিচয় ও করিয়ে দিচ্ছে কি অদ্ভুত।

ছেলে গুলো কিছুক্ষণ কথা বলে ওখান থেকে চলে যাওয়ার পরে মৌ আরস কে বলে আমাকে একটা রিক্সা ডেকে দিবেন প্লিজ বাসায় যেতে চাই।আরস বলে আপত্তি না থাকলে আমার গাড়িতে করেই এগিয়ে দিয়ে আসতে পারি।এমন সময় সানজি ও চলে আসে।মৌ কিছু বলার আগেই সানজি বলে অবশ্যই আপনি এগিয়ে দিলে অনেক ভালো হয়।

সেদিন বাসায় ফেরার পর মৌ এর মন অনেক খারাপ হয়ে যায়।মৌ একদিন ফোন না ধরাতে আহিন কয়েক শত চিঠি লিখে পাঠিয়েছিলো।আহিনের দেওয়া একটা চিঠি মৌ পড়ছে..

“”কোনো কারণে যদি গুরুত্বহীন মনে হয়,
মস্তিষ্কের এপিটাফে আমার নামের সাথে যোগ হয় বিরক্তি। আমায় ভেবেই যদি শান্ত কন্ঠ বদলে যায় নিমিষেই,রাগ করে যদি দূরে সরিয়ে দিতে ইচ্ছা করে,
আমার প্রতি আর যত্নশীলতা না কাজ করে
আমি তোমার দিকে হেঁটে গেলে; তোমার দৌঁড়ে পালতে ইচ্ছে করে!আমায় জানিয়ে দিও।তবুও আমায় নিলামে তুলোনা অজুহাতের, সময়ের,কাজের,রাত কিংবা দিনের।আমায় জানিয়ে দিও কতটা বিরক্ত জমে গেছে মনের নির্জন কোণে কতটা গুরুত্ব হারিয়েছি অবচেতন মনে,পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিও অবহেলার মানে।
অকারণ দুরত্বের মানেও বুঝিয়ে দিও
কত অনুভূতি বিক্রি করেছি সস্তা দামে;তা জানিয়েই দিও দ্বিধাহীন হয়ে দ্বিতীয়বার না ভেবে, কিছু অযুক্তিক যুক্তিই দিও ছুঁড়ে
অথবা ছুঁড়ে দিও পরিষ্কার কোনো বিচ্ছেদনামা,। তবুও আমায় নিলামে তুলোনা অজুহাতের,সময়ের,কাজের,
রাত কিংবা দিনের।আমার জন্য একটা অপ্রয়োজনীয় বিকেল কিংবা তপ্ত দুপুরই রেখো।যেখানে কোনো শব্দের বিনিময় ছাড়াই নিজ হাতে খুলে দিও সম্পর্কের বাঁধন, আশাহত প্রতিটি অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে চলে যেও।ফিরে তাকিও না কোনো বিষাদের ক্ষণে।””

চিঠি টা বুকে নিয়ে মৌ কাঁদছে আর বলছে একদিন না একদিন এই পৃথিবীতেই দেখা হবে আমাদের।সেদিন একটাই কথা জানতে চাইবো কেনো ছেড়ে গেলে আমায়।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here