বর্ষা বিকেলের ঢেউ,পর্ব:৭

#বর্ষা_বিকেলের_ঢেউ
৭.অন্তিম পর্ব
#WriterঃMousumi_Akter

বিয়ের আসরে যখন প্রাক্তণ ফোন করে তখন একটা মেয়ে সিদ্ধান্ত হীনতায় পড়ে যায় আসলে কি করবে।মৌ বুঝতে পারছে না কি করবে। চোখ দিয়ে শুধুই পানি পড়ছে।এতদিন পর আহিনের ফোন।মৌ এর অনেক খারাপ লাগছে আহিন তো মৌ এর জন্যই নিজের পায়ে দাঁড়াবে বলে এত কিছু করেছে।আহিনের তো কোনো দোষ নেই।ভালবাসার এক অদ্ভুত খেলায় পড়ে গিয়েছে মৌ।মৌ এর বুকের মাঝে আহিনের জন্য একটা স্পর্শকাতর জায়গা রয়েছে।দুদিন আগেও মৌ আহিনের জন্য অপেক্ষা করেছে। মৌ এর বিবেকের কাছে খারাপ লাগছে তার প্রথম ভালবাসা আহিন কে সে কিভাবে ভুলে গেলো।বুকের মাঝে এক করূন তোলপাড়।এক মন বলছে আহিনের কাছে চলে যা আবার আরেক মন বলছে না আরস কে তুই ভালবাসিস।

এমন সময় মৌ ওর বাবাকে ডেকে পাঠায়।আর ওর বাবার কাছে জানতে চাই এমন টা কেনো করলো এমন করে কেনো আহিন কে কেড়ে নিলো।মৌ এর বাবা চমকে যায় মৌ এত কিছু কিভাবে জেনে গেলো।মৌ জানতে চাই কেনো মৌ কে তার ভালবাসার মানুষের কাছে অপরাধী করা হলো।সে আজ আহিন কে কি উত্তর দিবে।

মৌ এর বাবা লজ্জা পেয়ে বলেন আজ যদি তুই চলে যেতে চাস যেতে পারিস আমি আটকাবো না।আরস কে কিছু একটা বলে বোঝাব আমি।কিন্তু মা আহিন তোকে কতটা ভালবাসে জানিনা তবে আমি আরস এর ভালবাসা দেখেছি।আরস তোকে আহিনের থেকেও হয়তো বেশী ভালবাসে।আমার মনে হয়েছিলো আরসের থেকে তোকে আর কেউ সুখি রাখতে পারবে না।আজ তুই যেতে পারিস মা আহিনের কাছে।আমি কিছুই বলবো না।

আরস নাম টা শুনেই মৌ এর বুক টা কেঁপে ওঠে।আরস নামের মাঝেই অনেক তৃপ্তি লুকিয়ে আছে।আরস কে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতেই হাহাকার করে উঠলো মৌ এর বুক।মৌ আজ নিজের মনের কাছে ক্লিয়ার সে আরস কে ভালবাসে।আরস ছাড়া থাকতে পারবে না।মৌ তার বাবা কে বলে

না বাবা আমি আর আজ যেতে পারবো না।।আমি আরস কে ভালবাসি।আমি আজ অনেক দূরে চলে এসেছি আহিনের থেকে।

মৌ এর বাবা যেনো একটা মানসিক তৃপ্তি পেলো। মেয়েকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলে মা সব ঠিক হয়ে যাবে।অনেক ভাল থাকবি তুই।

আহিনের ফোন টা কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেই মৌ।

আরসের সাথে সুন্দর ভাবে বিয়েটা হয়ে গেলো মৌ এর।আর‍স আজ অনেক হ্যাপি।তার দীর্ঘদিনের ভালবাসা আজ স্বার্থক।

মৌ কে বিয়ে করে নেওয়ার পর আরো চমকে যায় মৌ। কারণ মৌ এর দেবর হিসাবে পরিচয় করানো হয় আহিন কে।আহিন তার ভাবিকে দেখে যেনো আকাশ থেকে পড়ে।আহিনের বুকের মাঝের ভালবাসার পাখিটা আজ তার প্রাণ প্রিয় ভাই এর বৌ।মৌ আহিন কে সেন্স লেস হয়ে পড়ে যায়।সাথে সাথে আরস ধরে ফেলে।আরস বলে সারাদিনের ক্লান্তিতে ওর খারাপ লাগছে।ওকে রুমে সুইয়ে দেই।আরস মৌ কে রুমে নিয়ে গেলো।

কিছুক্ষণ পরে মৌ এর জ্ঞান ফিরে আসে আর তার পাশে আরস কে দেখতে পাই।মৌ শুধু ভাবছে সে আহিন কে কিভাবে সামলাবে।ভাগ্য তাকে কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে।আরস মৌ এর কপালে চুমু দিয়ে বলে ঘুমিয়ে যাও।মৌ আরস এর বুকে মাথা দিয়ে বলে আমায় কখনো ভুল বুঝবে নাতো।আরস বলে না কখনোই না।তোমার একটা রিলেশন ছিলো আহিন নাম সেটাও জানি।তবে মজার ব্যাপার কি জানো আমার ভাই এর নাম ও আহিন।ও ছয় মাস আগে প্রজেক্ট এর কাজে বিদেশ গিয়েছিল।ওর নাকি নিজের ইনকামের টাকা লাগবে।তাই কারো কথা না শুনে নিজে ইনকাম করতে বেরোলো।

সারারাত সিগারেট টেনে নিজেকে যন্ত্রণা দিয়েছে আহিন।মৌ কিভাবে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারলো।নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা হচ্ছে তার।যার জন্য এত কিছু করলো সে আজ অন্যর হয়ে গেলো।আহিন কেনো পৃথিবীর কারো পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

পরের দিন সানজি এলো মৌ দের বাসায়।

সানজি আহিনকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বলে কতদিন দেখি না তোমাকে।আহিন বলে আরে ছাড়ো সবাই কি ভাববে।

প্রিয়তমার কি খবর তোমার?

মৌ এর দিকে তাকিয়ে আহিন বলে আমাকে ঠকিয়ে ভীষণ কষ্ট দিয়ে চলে গিয়েছে।

মানে

মানে কিছুই না তুমি বুঝবে না।তবে আমাকে কইফত দিতেই হবে বাপ মেয়ে মিলে আমার সাথে কেনো নাটক করলো।আমি বাঁচতে চাই না সানজি।তাকে ছাড়া পারবো না আমি ভাল থাকতে।

তোমাকে বাঁচতে হবে।

কার জন্য বাঁচবো।

যদি বলি আমার জন্য।

মানে?

আমি তোমায় ভালবাসি আহিন?ভীষণ ভালবাসি।তুমি অন্য কাউকে ভালবাসো বলে কখনো বলি নি।তোমাকে ভালবাসার একটা সুযোগ দাও।

আমি পারবো না সানজি।অন্য কাউকে মেনে নিতে।আমায় ভুল বুঝো না।

সানজি চলে গেলে মৌ আহিনের কাছে যায়।

আহিন।ডাকটা শুনেই আহিন মৌ এর দিকে তাকায়।দুজনের চোখ ছলছল করছে।

মৌ তুমি কি সেই।তুমি কিভাবে পারলে আমাকে ঠকাতে।প্লিজ চলো পালিয়ে যায়।

আমায় ক্ষমা করো আহিন তুমি আমার মনের গভীরে আছো কিন্তু আমার হৃদয়ের বন্ধন আজ আমার স্বামি।তুমি চাইলেও সেটা আর হতে পারবে না।আমার বাবার দেওয়া এমন বাজে শর্ত কেনো মেনে নিলে।তুমি একটা বার আমাকে জানাতে। কিছু একটু জানাতে।আমি খুব কেঁদেছি তোমার জন্য কিন্তু তোমাকে পাই নি।সেদিন পাশে পেয়েছিলাম আরস কে।আমাকে প্লিজ প্রেসার দিও না আহিন।ভুলে যাও আমাকে।প্লিজ ভুলে যাও।আমি তোমাকে আর কোনদিন ভালবাসি বলতে পারবো না।তুমি সানজি আপুকে ভালবাসার ট্রাই করো।সানজি আপু খুব ভাল।তোমাকে অনেক ভালবাসে।তোমার ভাইয়ার জন্য অন্তত ভুলে যাও অতীত।

তুমি যাবে না মৌ।

আমি গেলে সবাই বলবে আমি স্বামির ঘর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছি আমি চরিত্রহীনা।সবাই আমাকে খারাপ চোখে দেখবে আহিন।

শুধুমাত্র এটাই কারণ না মৌ।তোমার চোখ অন্য কিছু বলছে।তুমি ভাইয়াকে ভালবাসো।

হ্যা আহিন আমি উনাকে ভালবাসি।ভীষণ ভালবাসি।সেই ভালবাসা আমি তোমাকে বাসতে পারিনি।একদিন তুমি ছাড়া কষ্ট হতো কিন্তু আজ ওকে ঘিরেই আমার বেঁচে থাকা।

আহিনের যেনো বুক ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছিলো।আহিন এটা ক্লিয়ার বুঝতে পারছিলো মৌ আর আজ তার নেই।আহিনের যন্ত্রণা টা ছিলো পৃথিবীর সব থেকে কষ্টের যন্ত্রণা।প্রিয় মানুষ হারানোর কষ্ট বড়ই যন্ত্রণার।কিন্তু সৃষ্টিকর্তা যার সাথে যাকে বেধেছেন।

আহিন মৌ কে বলে…..

“তুমি বায়না করেছিলে ভালোবাসতেই হবে,
আমি ভালোবাসলাম।
সবকিছু উজাড় করে দেয়ার পর
আমি যখন বায়না করলাম থেকে যাও
ঠিক তখনই তুমি আকাশের মত রং বদলালে
থেকে যেতে আর পারলে না।

কোনো কিছু না ভেবেই
অমনি তুমি চলে গেলে চোখের সিমানা ছাড়িয়ে
একবার পিছু ফিরেও দেখলে না।

আমার হাসি আমার কান্না
সবকিছুই যে তোমায় ঘিরে ছিলো
সেই তুমি চলে গেলে আমি কেমন করে থাকবো,
একবারও সে কথা ভাবলে না।

যে তুমি বলেছিলে জীবনে কখনো যদি ঝড় আসে
আমাকে কখনো একা ফেলে যেও না
সেই তুমি কেমন করে পারলে আজ আমায় ছেড়ে যেতে?
একটুও কি মন কাঁদেনি তোমার?।

যে তুমি আমায় হাসতে বায়না করতে
জড়িয়ে ধরতে বায়না করতে
সেই তুমিই আজ কেমন করে
তোমার হাত ধরে রাখার অধিকারটাও কেড়ে নিলে?
আমার চোখের জলও আজ তোমার চোখে পড়লো না!

তাহলে কি সম্পর্ক পুরোনো হলে,
সহস্র আবেগ অনুভূতিতে মিশে থাকা ভালোবাসা
এভাবেই দীর্ঘশ্বাস হয়ে যায়?

না কি তোমার মত মুখোশধারী ভালোবাসার মানুষ
বায়না করে ভালোবাসা পাবার পর আয়না হয়ে যায়?

ⓒ. শাহরিয়ার শরীফ(শাহরিয়ার ভাইয়ের থেকে নেওয়া এটুকু)”

মৌ কোনো উত্তর ই করতে পারে না।

আহিন নিজের ভাইকে খুব ভালবাসে।ও কখনো নিজের ভাইকে কষ্ট দিতে পারবে না।

মান অভিমান নিয়ে কেটে গেলো আরো ছয় টা মাস।পরিবারের জোরাজোরি আর মৌ এর কথা রাখতে
তাই মনের বিরুদ্ধে গিয়ে সানজি কে বিয়ে করে।

আরস না সানজি কেউ কোনদিন জানতে পারে নি মৌ বা আহিনের রিলেশন এর কথা।আহিন কষ্ট বুকে চেপে রেখে সানজি কে বিয়ে করে।কিন্তু এই বিয়ে একদিন ধীরে ধীরে ভালবাসা তে পরিণত হয়।ভালবাসা সত্যি রং বদলায়।

কেটে গেছে ৩ টা বছর।আজ আহিন সানজি কে খুব ভালবাসে।মৌ এর নাম টা ধীরে ধীরে মুছে গিয়েছে।সানজি কে অনেক ভাল আছে।

মৌ আর আরস ও আজ অনেক বেশী ভাল আছে।আরস মৌ কে সব ধরনের খুশি দিয়েছে।মৌ এর জীবনে আরস ই ছিলো সত্যিকারের ভালবাসার মানুষ।মৌ ই ছিলো আরসের বর্ষা বিকেলের ঢেউ।

আহিন এর কি কখনো আর মৌ এর জন্য কষ্ট হয় সেটা আহিন কাউকে বুঝতে দেই নি।তবে সে আজ সানজির ভালবাসায় পরিপূর্ণ।

সমাপ্ত।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here