বর্ষা বিকেলের ঢেউ,পর্ব:৫

#বর্ষা_বিকেলের_ঢেউ
৫.
#WriterঃMousumi_Akter

সোস্যাল মিডিয়াতে মৌ এর একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।আশে পাশে অনেকের ফোনেই ভিডিও টা গিয়েছে।সবাই দেখছে আর সমালোচনা করছে।এমন সাংঘাতিক ঘটনার কিছুই জানে না মৌ।ভোরের আলো মাত্র ফুটেছে ভোরের পাখি কিচিরমিচির করে ডাকছে।সূর্য মামা এখনো উঁকি দেই নি।পূর্ব আকাশ রক্তিম আভাতে ছেয়ে গিয়েছে।মৌ আর সানজি ঘুমিয়ে আছে।এমন সময় মৌ এর আম্মু বাজখাই গলায় চেচামেচি করছে।আম্মুর চেচামেচিতে মৌ আর সানজি লাফিয়ে ওঠে। বুক ধড়ফড় করছে ঘুমের মাঝে হঠাত চিল্লানিতে।মৌ এর আম্মু মৌ কে বিছানা থেকে টেনে নিচে নামিয়ে কয়েক টা চড় থাপ্পড় মেরে দিলো।হঠাত এই মাইর এর কোনো কারণ ই খুজে পেলো না সে।

অসভ্য মেয়ে একদিন কলেজে যেতে পারো নি তার মাঝেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছো।ইন্টারে মহিলা কলেজে পড়িয়েছিলাম না হলে হইতো তখন ই ভাইরাল হয়ে যেতে।এত মানুষ এম এ বি এ পাশ করছে কারো তো এমন রেকর্ড নেই।তুমি একদিন যেতে না যেতেই ভিডিও ভাইরাল।এ সব হয়েছে তোর বাবার জন্য।তোর বাবার আশকরা পেয়ে আজ তোর এই অবনতি।কেনো মেয়েকে এত লাই দিতে হবে কেনো।আদরে বাদরে হয়েছে।আজ বাদে কাল যার বিয়ে তার ভিডিও ভাইরাল।বিয়ে ঠিক হয়েছে তারা এগুলা দেখলে তো সাথে সাথে বিয়ে ভেঙে দিবে।তোর বাবা কি যেমন তেমন ছেলে দেখছে তোর জন্য।ছেলে দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি ভার্সিটি টপার স্টুডেন্ট। তুই তো তার পা ধোয়া পানি খাওয়ার ও যোগ্য না।আমরা না থাকলে এস এস সি পাশ ও হতো না তোমার।লেখাপড়ার দিকে তো কোনো মন কোনদিন ছিলো না তোমার।

সানজি তার কাকিমনি কে থামিয়ে দিয়ে বলে…….কাকি মনি প্লিজ ওকে আর মেরো না।ও কি করেছে সেটাই তো বুঝছি না।

মৌ আর সানজি অবাক কিসের ভিডিও ভাইরাল হলো সেটাই বুঝতে পারছে না।তার তো তেমন কোনো ভিডিও নেই।সানজি বলে কাকি মনি কিসের ভিডিও ভাইরাল হলো।মৌ এর আম্মু তার বাবার ফোন বের করে মৌ এর সেই নাচের ভিডিও দেখালো।নাচতে গিয়ে বিশ্রি ভাবে পেট নাভি সব দেখা যাচ্ছে।ব্লাউজ এ স্পষ্ট সব বোঝা যাচ্ছে।দেখতে আসলেই খারাপ লাগছে।মায়ের কথার কোনো উত্তর দিলো না মৌ কারণ কিছু বললে তার আম্মু বিশ্বাস করবে না।উল্টা আরো বকা ঝকা করবে।মৌ এর আম্মু সোজা বলে দিলো বিয়ের আগে কোনো ভার্সিটি যাওয়া চলবে না।আর আরস হয়তো এত সময় ভিডিও টা দেখেছে।এক্ষুনি হয়তো ফোন করে বলবে তার পক্ষে বিয়েটা করা সম্ভব নয়। এক গাদা বক বক করে বেরিয়ে গেলো।

সানজি বলে মৌ ওই অসভ্য ছেলেগুলার একটা উচিত জবাব না দিলেই নয়।দেখ তুই আমি কি করি।

মৌ ঘরে সুয়ে সুয়ে কাঁদছে।তখন বেলা সাড়ে এগারো টা বাজে।

এমন সময় টুংটাং সাউন্ডে মৌ আম্মুর ফোন বেজে উঠলো।ফোনের ওপাস থেকে নম্র কন্ঠ ভেসে এলো

–আসসালামু আলাইকুম আন্টি। আমি আরস বলছি কেমন আছেন?

—-ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা কেমন আছো?

—-মৌ এর আম্মুর বুক দুরু দুরু করছে এক্ষুণি হয়তো আরস বলবে আন্টি আপনার মেয়ের বাজে ভিডিও দেখলাম আমার পক্ষে এমন মেয়েকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।আমাকে ক্ষমা করূণ।

—এমন সময় আরস বলে আন্টি মৌ আজ ভার্সিটিতে আসেনি কেনো?ক্লাস মিস করলে তো সমস্যা।

—মৌ এর আম্মু যেনো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।কি বলবে বুঝতে পারছে না।

—আরস বলে আন্টি মৌ কে পাওয়া যাবে।

—মৌ এর আম্মু মৌ এর কাছে ফোন নিয়ে গিয়ে বলে শোনো আরস। খুব সুন্দর ভাবে কথা বলবে আরস যেনো কিছু বুঝতে না পারে।

মৌ ফোন টা ধরে বলে জ্বী বলুন।

—খেয়েছেন সকালে।

–হ্যা!আপনি

–আমার তো দুপুরের খাওয়ার টাইম ও হয়ে এসছে।কিন্ত আপনি না খেয়ে কেনো বলছেন খেয়েছেন।

—বললাম তো খেয়েছি।

—মন খারাপ আপনার মৌ

—নাতো

–আপনার নাচের ভিডিও টা দেখলাম।ইউটিউবে বেশ ভালোই ভিউ হয়েছে।

—মৌ ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো।

—না কেঁদে দ্রুত রেডি হয়ে বাসার নিচে আসুন।

—আমি কোথাও যাবো না।

–আপনার আম্মুকে কি জানাবো। আমি কিন্তু অনেক্ষণ ধরে বাসার নিচেই দাঁড়িয়ে আছি।আর শুনুন ভিডিও টা কোথাও নেই সব জায়গা থেকে ডিলিট।এবার হাসুন এবং নিচে আসুন।

আরস কে মৌ এর পছন্দ হলেও প্রিয় মানুষ বা ভালবাসার মানুষ হিসাবে পছন্দ নয়।আহিন ছাড়া কাউকে ওই জায়গা টা মৌ দিতে পারে না।মনের বিরুদ্ধে রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো আরস এর সাথে।আরস ড্রাইভিং করছে পাশে বসে অঝরে চোখের পানি ফেলছে মৌ। আরস মৌ এর কাঁন্নার কারণ টা বুঝেও চুপ আছে।মৌ জানেনা আরস কোথায় যাচ্ছে।জানার আগ্রহ কাজ করছে না।শুধু ভাবছে আজ আহিন থাকলে ওই ছেলে গুলাকে উচিত শিক্ষা দিতো।আবার ভাবছে আহিনের কথা কেনোই বা ভাবছি আহিন তো জীবনের শ্রেষ্ঠ কষ্ট টা দিয়ে চলে গিয়েছে।আহিনের কথা আর কোনদিন ভাববো না।

এমন সময় গাড়িটা হসপিটালে গিয়ে পৌছালো মৌ অবাক হয়ে যায় হসপিটালে গাড়ি দেখে।আরস গাড়ির দরজা খুলে বলে নামুন।

মৌ বলে আমরা কোথায় যাচ্ছি।

আসুন বুঝতে পারবেন।

মৌ অবাক হয়ে যায় সেদিনের ভিডিও করা ছেলে গুলা হসপিটালের বেডে কারো পা ভাঙা কারো হাত ভাঙা একেবারে বিশ্রি নাজেহাল একটা অবস্থা। আরস কে দেখেই ছেলেগুলার কাঁপাকাঁপি শুরু হয়।ছেলে গুলা চোখ নিচু করে রাখে।

—আরস মৌ কে বলে জুতা খুলো আর এদের পিটাও আমি ভিডিও করে ইউটিউবে পোস্ট করে দিবো।

—মৌ অবাক হয়ে যায়।ভাবতেও পারেনি আরস এতটা কেয়ারিং হবে।

—আরস ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে কি হলো মারো মানুষ আজ তোমার নাচের ভিডিও দেখেছে একটু পরে তোমার জুতা দিয়ে পিটুনি ও দেখবে।তোমার ভাইরাল হওয়া নিয়ে ভয় নেই। আমি আছি তোমার পাশে।ডোন্ট ওরি।

—মৌ কিছু না বলে বলে আরস বাবু থাক ওদের লজ্জা থাকলে আর এমন করবে না।

—সেদিন র‍্যাগিং এর জন্য ওদের হাত পা ভেঙেছি।তাও লজ্জা হয় নি।ওদের সাহস কি করে হয় ওরা তোমার সাথে বেয়াদবি করে।তোমার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালে আমি তার চোখ তুলে ফেলবো।

মৌ অবাক হয়ে যায় আরসের এমন অদ্ভুত কথা শুনে।হঠাত আরস যেনো অন্য জগতে ঢুকে গিয়েছে।আরস হয়তো ছেলে গুলাকে এক্ষুণি মারবে আবার।মৌ সাথে সাথে আরস এর হাত টা ধরে ফেলে। আরস অবাক করা নয়নে মৌ এর দিকে তাকিয়ে থাকে।মৌ তার হাত ধরেছে আরস অবাক হয়ে যায় এটা কিভাবে সম্ভব।আরস কে তাকাতে দেখে মৌ হাত টা ছেড়ে দিয়ে বলে খুদা পেয়েছে কিছু খাওয়াবেন।এই কথাটা শুনে আরস যেনো আরো বেশী খুশি হয়।

আরস মৌ কে নিয়ে একটা রেস্টূরেন্ট এ যায়।ভাত,মাংস সব কিছুর অর্ডার করে আরস।

মৌ এর মাঝে আরসের জন্য একটা জায়গা তৈরি হয়েছে সেটা কিসের মৌ তা নিজেও জানে না।কেটে গেছে প্রায় ১৫ দিন।

মৌ আরসের রোজ একটু একটু কথা হচ্ছে দেখা হচ্ছে।বাইরে ঘুরছে।নিজের অজান্তে মৌ আরস এর মায়ায় জড়িয়ে যায়।

হটাত সানজির খুব মন খারাপ।সানজি এমন কাউকে ভালবেসে ফেলেছে যেটা বলতে পারছে না কাউকে।বেশ চুপচাপ হয়ে গিয়েছে কিছুদিন।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here