বর্ষা বিকেলের ঢেউ,পর্ব:৬

#বর্ষা_বিকেলের_ঢেউ
৬.
#WriterঃMousumi_Akter

সানজির ভীষণ মন খারাপের কারণ টা সবার অজানা।হঠাত জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে কোনো কথা নেই।মৌ সানজি কে বলে আপু কি হয়েছে তোমার কিছুই বলছো না যে।এভাবে মন খারাপ করে আছো কেনো?

সানজি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে মৌ আজ আমি বুঝছি আহিন কে হারিয়ে তুই কতটা কষ্ট পেয়েছিস।প্রিয়জন না হারালে বোঝা যায় না তার যন্ত্রণা কতটা ভয়াবহ হতে পারে।আজ আমি বুঝছি মৌ হারানোর যন্ত্রণা কতটা ভয়াবহ হতে পারে।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মৌ খুব বেশী।

মৌ অবাক হয়ে যায় এতদিন তো সানজির মুখে কোনো ভালবাসার মানুষের কথা শুনে নি মৌ।তাহলে আজ হঠাত কাকে হারালো সানজি।

আপু তুমি কাকে হারিয়েছো।

যাকে ভীষণ ভালবেসেছিলাম।

সে কোথায় আপু

সে হারিয়ে গিয়েছে মৌ

কেনো

সে অন্য কাউকে ভালবাসে।

তোমার সাথে রিলেশন হওয়ার পর অন্য কাউকে ভালবেসেছে।

না।আমার ভালবাসা এতদিন একতরফা ছিলো।আমি ভাবতাম হয়তো ও বুঝবে।কিন্তু ও আমাকে আজ ফোন দিয়ে বলেছে ও আমাকে ভালবাসে না।ওর ভালবাসার মানুষ অন্য কেউ।তার সাথে দীর্ঘ দিনের রিলেশন।

আপু!আমি বুঝতে পারছি তোমার কষ্ট। কিন্তু ছেলেটা কে ছিলো।

আমার ফ্রেন্ড ছিলো।আমার বেষ্ট ফ্রেন্ডের ফ্রেন্ড।সেখান থেকে বন্ধুত্ব হয়।দুজনে ফোনে কথা বলতে বলতে আমরা এখন বেষ্ট ফ্রেন্ড।ভেবেছিলাম আমি ওকে জানাবো আমার ভালবাসার কথা।কিন্তু তার আগেই ও আমাকে জানিয়ে দিয়েছে ওর রিলেশন এর কথা।

আপু ভেঙে পড়ো না।বুঝতে পারছি তোমার কষ্ট টা।তবে ভালবাসা সত্যি হলে সে তোমার হবে।

আমার ভালবাসা সত্যি মৌ।কারণ ও আমার প্রথম প্রেম।

প্রথম প্রেম সব সময় সত্যিকারের ভালবাসা হতে পারে না আপু।সত্যিকারের ভালবাসা একজনের সাথেই হয় সেটা প্রথম প্রেম ই হবে এমন টা নয়।

মৌ

হ্যাঁ আপু!তার বাস্তব প্রমাণ আমি আরস আর আহিন।

তুই কি আরস কে ভালবাসিস মৌ।

সেটা জানিনা আপু।তবে আরস এর অনুপস্হিতিতে আমি আরস কে মিস করি।ওর সাথে কথা বলতে ভাল লাগে। তখন আর আহিনের জন্য অতটা কষ্ট হয় না।

যদি আহিন ফিরে আসে।

আহিন কে দেখলে আমি সহ্য করতে পারবো না।কি করবো সেটাও জানিনা।তবে এটা সত্য একদিন আহিন আমাকে পাগলের মতো ভালবাসতো আর আমিও আহিন কে।কেউ কেউকে ভুলতে পারে না আপু। তবে সময়ের সাথে সাথে কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা হয়ে যায়।

হটাত বাড়ির গেটে একটা বাচ্চা ছেলে এসে মৌ কে খুজছে।হাতে এক গুচ্ছ বেলি ফুলের মালা সাথে একটা চিরকুট।মৌ অবাক হয়ে যায় কে এই ছেলেটা প্রায় তাকে চিরকুট আর বেলি ফুলের মালা পাঠায়।

শ্যামলতা শুনছো,

বেলি ফুলের মালা খোপায় পরে ছাদে দাঁড়িও আমি না হয় আকাশ থেকে বর্ষা হয়ে ঝরে তোমায় দেখবো।অসংখ্যবার তোমার সামনে গিয়েছি কখনো বলতে পারিনি ভালবাসি।তোমার সামনে গেলেই জড়তা গুলো আমাকে আকড়ে ধরে।আমি কিছুই বলতে পারি না।হারিয়ে যায় তোমার চোখের নীল নীলাচল এ।তোমাকে ২৫ টা বছর ভালবেসে আজ ও তোমার মুখে ভালবাসি কথাটি শুনতে পারিনি।অথচ কত সহজেই বলে দিলে তুমি অন্য কাউকে ভালবাসো।এই আমি কি কখনো তোমাতে পরিণত হতে পারবো না।

মৌ এর কাছে খুব অবাক লাগে কে এই মানুষ টা যে দূর থেকে সব সময় মৌ কে ফলো করে অদ্ভুত। মৌ অচেনা কারো ডাকে কেনো সাড়া দিবে তাই মৌ ছাদেই গেলো না।

দেখতে দেখতে ছয় মাস ও কেটে গেলো আরস আর মৌ এর বিয়ের দিন ও চলে এলো।আগামি কাল তাদের বিয়ে।আরস আর মৌ দুজনে শপিং এর জন্য বের হয়েছে।এমন সময় মৌ বলে আচ্ছা আপনার প্রেমিকা কেমন আছে।

ভালো?

আমাকে বিয়ে করলে তাকে মিস করবেন না।

হুম খুব করবো।

মৌ কথাটা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।মৌ চেয়েছিলো আরস তাকে বলুক না আমার কোনো প্রেমিকা নেই আমি তোমাকেও ভালবাসি।আমি প্রেমিকা নামক মিথ্যা নাটক করি।কিন্তু আরস মৌ এর সব ইচ্ছাতে পানি ঢেলে দিলো।মৌ হঠাত রেগে গিয়ে আরস এর হাতে সব ব্যাগ গুলা দিয়ে রেগে মেগে বাসায় চলে এলো।মৌ এর এই রাগ টার জন্যই তো আরস এর এত আয়োজন।আরস এর ছয় টা মাসের পরিশ্রম মৌ কে তার ভালবাসা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে।

মৌ বাসায় ফেরার পর আরস ফোন দিয়ে বলে মৌ কাল আমাদের বিয়ে আমি চাইছি আজ বিয়ে টা ভেঙে দেই।এতদিন আমি অনেক জ্বালিয়েছি আপনাকে।এখন আর চাইছি না।আপনি যাকে ভালবাসতেন তার কাছেই ফিরে যান।চাইনা দুজন ভালবাসার মানুষ আলাদা হোক।বা আপনি ইচ্ছার বিরুদ্দে গিয়ে আমাকে বিয়ে করূন।

মৌ চিৎকার দিয়ে বলে কি পেয়েছেন কি আপনারা।ছেলেরা মানেই বেঈমান একটা।আজ বিয়ে করতে চাইবেন কাল ভেঙে দিবেন।এক এক জন আসবেন নিজের ইচ্ছা মতো আবার ইচ্ছা মতো চলে যাবেন আমাকে ভেঙে চুরে গুড়িয়ে দিয়ে।সব সময় আমি কেনো ভালবাসার মানুষ হারাবো বলতে পারেন।আমার জন্যই কি সব হারানো লেখা আছে।

মৌ এর এমন অস্বাভাবিক আচরণ দেখে অবাক হয়ে যায় আরস।মেয়েটা কি সত্যি পাগল।

সানজি মৌ কে বলে আরস কে ভালবেসে ফেলেছিস তাইনা।

মৌ ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিয়ে বলে হ্যা আপু।আমি কিভাবে ভালবেসে ফেলছি জানিনা না।আমি উনাকেই বিয়ে করতে চাই।

তোকে একটা মজার কথা বলি,,

কি কথা…

তোকে চিরকুট দেওয়া মানুষ টা কিন্তু আরস।কলেজে তোকে চিরকুট দিয়েছিলো সেই মানুষ টাও কিন্তু আরস। তুই যে আহিন আহিন করিস।আহিন মাত্র চার বছর তোর জীবনে আর আরস এই ২৫ টা বছর ধরে।

মানে আপু কি বলছো এগুলা….

হ্যাঁ আরস আর তোদের বাসা আগে এক জায়গা তেই ছিলো।পরে আরসের বাবার বদলি হয়ে যায়।দুই পরিবারের কারোর সাথে কারোর যোগাযোগ না থাকলেও আরস সব সময় তোর খোজ খবর নিতো।আরস সেই ছোট্ট বেলায় মন হারিয়েছিলো তোর কাছে।আর সেই ভালবাসা বুকে চেপে নিয়ে ও তোর যোগ্য হয়েই বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।আর বাড়ি থেকেও প্রস্তাব টা মেনে নিয়েছে।

মৌ অবাক হয়ে যায় এমন ও হয় ভালবাসা।তার জন্য ছোট বেলা থেকে কেউ অপেক্ষা করছে।সুখে মৌ এর চোখে পানি চলে আসে।যেনো চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছা হচ্ছে আমিও তোমাকে ভালবাসি আরস।খুব ভালবাসি।আর বাকি জীবন টা তোমাকে নিয়েই কাটাতে চাই।

পরের দিন বিয়ের আসরে বসে আছে মৌ এমন সময় আহিনের নাম্বার থেকে ফোন আসছে।আজ ছয় মাস পর আহিনের নাম্বার দেখে বুক কেঁপে ওঠে মৌ এর।আহিন এতদিন কোথায় ছিলো। আর আজ ই বা কেনো ফোন দিচ্ছে।মৌ এর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।আহিন একটার পর একটা ফোন দিয়েই যাচ্ছে।

মৌ নিজেই বুঝছে না কি করবে।এমন সময় একটা মেসেজ আসে আহিনের…

জানপাখি জানো ভালবাসায় না বড্ড কষ্ট।এই পৃথিবী আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে ভুমিহীনতায়।তোমাকে ছেড়ে থাকার মতো বিষাদ আর কিছুতে নেই।জানো সেদিন তোমার বাবা আমাকে বলেছিলো আমি যেনো ছয় মাস তোমার সাথে যোগাযোগ না রাখি।আমাকে দিয়ে মনের বিরুদ্ধে এমন চিঠি লেখানো হয়।আমাকে ভালবাসার শর্ত দেওয়া হয়।ছয় মাসে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।এবং তোমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখা যাবে না।তাহলে কোনদিন তোমার বাবা মেনে নিবেন না।বলো আমার কি করার ছিলো।আমাকে যে ভালবাসার কসম দেওয়া হয়েছিলো।

চলবে,,,ড়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here