বসন্ত এসে গেছে পর্ব ১৩

#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ১৩
,

,
কাঁপা কাঁপা গলায় অপুর মুখ থেকে বের হয়,

—নোমান খান?

পিহু বলে,

—-তুই চিনিস নাকি?তুইতো কোন নায়ক নায়িকাকেই ঠিক মতো চিনিস না?
যাইহোক লোকটা কি হ্যান্ডসাম না?
তুইও ক্রাশ খাইছিস বল বল?

পাশে বসে রাহুল রোস্ট খাচ্ছিলো।
খাবার চিবাতে চিবাতে গমগম করে বলে,

—হ সবাইরে তো তুই নিজের মতো ভাবিস।অপুকি তোর মতো নাকি যে যারে তারে দেইখা ক্রাশ খাবে?

পিহু ক্ষেপে ওঠে,

—ওই ছেমড়া,যারে তারে কারে কস তুই?

রাহুলও দম বার পাত্র নয়।বলে,

—ওই বেটারে কই।
আসল হ্যান্ডসাম পোলা তো তোর পাশে বইসা আছে।দেখিস নাহ?চোখ নাই?

পিহু মিছেমিছি খোজার ভান করে বলে,

—কই কাউকে তো দেখিনা।
এক মিনিট দাঁড়া দাড়া, বাই এনি চান্স, তুই কি তোর কথা বলছিস?

রাহুল গর্বিত ভঙ্গিতে কলার ঝাকায়।

পিহু শব্দ করে হেসে ওঠে।রাহুল ভেবাচেকা খায়।
পিহু হাসতে হাসতে বলে,

—নিজের চেহারা কোনদিন আয়নায় দেখেছিস?
দেখতে তো মেয়ে মেয়ে দেখায়।তারউপর ঘুরিসও আমাদের সাথে।
মাথার চুল আর জামা কাপড়ের জন্য একটু আধটু ছেলে ছেলে লাগে।নয়তো কেউ তো বুঝতোই না তুই মেয়ে নাকি ছেলে?
আর হ্যান্ডসাম?

কথাটা বলতে বলতে পিহু আবার হাসে।একেবারে ঘর কাঁপানো হাসি হাসে।

রাহুল রেগে ফুলে ফেপে ওঠে।খাবার খাওয়া এটো হাত দিয়েই পিহুর চুল টেনে ধরে।
পিহু ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠে।
অপু এসব দেখেও কিছু বলেনা,হাসে ও না।তার কেমন যেনো মাথা ঘুরছে।হাউ মাউ করে কান্না পাচ্ছে। চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে থাকে।

পিহু রাহুলের এই পাগলামি দেখে আশেপাশের টেবিল থেকে অনেকেই উঁকি দিয়ে দেখে।
কেউ এসব দেখে হাসে আবার কেউ কেউ বিরক্ত হয়।
বিরক্ত হওয়া মানুষের মধ্যে নোমান একজন।
একজন ক্লায়েন্টের সাথে মিটিংয়ে এসেছে সে।
নামীদামী এই রেস্টুরেন্টটা খুব নিরিবিলি থাকে।
সব হাই সোসাইটির লোকজন আসা যাওয়া করে এখানে।
কিন্তু আজ এতো হইচই হচ্ছে কেনো সেটা নোমান বুঝতে পারছেনা।
উঁকি দিয়ে কোলাহলপূর্ণ টেবিলের দিকে তাকায় নোমান।
সেখানে তিনজন ছেলেমেয়েকে দেখে।
দুজনের মুখ দেখা যাচ্ছে কিন্তু আরেকজন পিছন মুখ করে বসে থাকায় তাকে দেখতে পায়না নোমান।
দেখার ইচ্ছে ও জাগেনা।
সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আবার নিজের কাজে মন দেয় সে।

অপু উশখুশ করে।
তার এখানে বসে থাকতে মোটেও ভাল লাগছেনা।
কেমন যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে তার।
মনে হচ্ছে এই বুঝি নোমান তাকে দেখে ফেলবে।আর দেখেই মনে হয় রাগী গলায় চিৎকার চেচামেচি করে অপুকে অপমান করবে।যদিও অপু ওড়না দিয়ে ভালকরে মুখ ঢেকে নোমানের দিকে পেছন ঘুরে বসেছে।
তবুও ভয় লাগছে অপুর।
অসস্তি হচ্ছে খুব।
এসি রেস্টুরেন্টে বসেও দরদর করে ঘামছে।একটু পর পর জামার ওড়না টেনে কপালের ঘাম মুছছে সে।
একেকটা সেকেন্ড অপুর কাছে যুগযুগ মনে হচ্ছে।
হঠাৎ করেই দড়াম করে চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে পরলো অপু।
পিহু আর রাহুল তখন নিজেদের খাওয়া নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো।
একজন খাবার খাচ্ছিলো আরেকজন চোখ দিয়ে তার ক্রাশকে গিলে খাচ্ছিলো।
অপুকে দাড়াতে দেখে দুজনার নজর অপুর উপর পরলো।

রাহুলের মুখ ভর্তি খাবার থাকার কারনে সে তৎক্ষনাৎ কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলোনা।তাড়াতাড়ি মুখের খাবার চিবাতে লাগলো।
পিহু জিজ্ঞেস করলো,

—কি হলো অপু?দাঁড়িয়ে পরলি কেনো?

অপু আমতাআমতা করলো।
সে কি বলবে বুঝে উঠতে পারলোনা।
কি বলবে সে?তার না মানা স্বামীর সামনে রেস্টুরেন্টে বসে থাকতে তার অসস্তি হচ্ছে? নাকি বলবে অপুর এখানে থাকতে দমবন্ধ লাগছে?
পিহু আর রাহুল অপুর জিবনের সব ঘটনা জানলেও তার স্বামীর নামটা জানেনা।
চেনেওনা কে অপুর স্বামী।
এখন পিহু বা রাহুলকে ব্যাপারটা বলা মানে তুমুলযুদ্ধ বাধানো।দুজনেই অপুকে খুউউব ভালবাসে।অপুর স্বামীর সব কথা শুনে তাকে তো তারা দু’চোখে দেখতে পারেনা।এখন তাকে চিনিয়ে দিলে নোমানকে দুজনে আস্ত খেয়ে ফেলবে।
রেস্টুরেন্টে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যাবে।

পিহু অপুর হাত ঝাকায়।বলে,

—কিরে অপু?

অপু ধপ করে আবার চেয়ারে বসে পরে।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে থাকে।
সে কি করবে বুঝতে পারেনা।
কিছু কিছু কঠিন মুহূর্তে অপুর মাথা কাজ করেনা,কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।

পিহু আর রাহুল বুঝতে পারে কোন কারনে অপুর মন ভালো নেই।তারা রেস্টুরেন্টের বিল পরিশোধ করে উঠে দাড়ায়।
অপুর দিকে তাকিয়ে হাসে।
অপু বুঝতে না পেরে বোকার মতো তাকিয়ে থাকে।
রাহুল এগিয়ে এসে অপুর কাধে হাত রেখে বলে,

—তোর এখানে ভাল লাগছেনা বললেই পারতি?

অপু প্রতুত্তর করেনা।বিনিময়ে কৃতজ্ঞতাসূচক হাসে।

————-

বাড়ি ফিরে অপু হাফ ছাড়ে বাঁচে।
নোমানের সম্পর্কে দিনকে দিন অপুর ধারনা খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে।
নোমানের ফিরে আসা নিয়ে যে বিশ্বাস অপুর ছিলো তা আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে যাচ্ছে।
কেন যেনো মনে হচ্ছে নোমানের জন্য অপু মিছেমিছি অপেক্ষায় আছে।
নোমান তো ঠিকই ভালো আছে। অফিস করছে,মিটিং এটেন্ড করছে কিচ্ছু তো বদলায়নি তার জিবনে।
সে তো বোধহয় ভুলেই গেছে তার একটা বউ আছে।
বউ?কথাটা মনে পরতে অপু তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।
নোমান তো বউ হিসেবে মানেই না তাকে।

———-

পরদিন কলেজে যাওয়ার জন্য তরিঘরি করে তৈরি হয় অপু।
তার দেরি হয়ে গেছে আজ।
প্রায় দশটা বেজে গেছে।
রুজি খালা আর নয়না খালার সাথে গল্পে গল্পে কখন যে এতো দেরি হয়ে গেলো অপু একটু বোঝেনি।
যেমন তেমন করে রেডি হয়ে এক পিস ব্রেড হাতে নিয়ে অপু দৌড়ে বাইরে বেরোয়।
ভাগ্য ভালো থাকায় রিকশাও পেয়ে যায়।
রিকশায় উঠে অপু অবাক হয়।
রিকশায় রায়হান ভাই বসে আছে।
অপুকে দেখে একপাশে সরে বসে সে যাতে অপুর শরীরের সাথে স্পর্স না লাগে।
ব্যাপারটা ছোট হলেও অপুর ভালো লাগে।
রায়হান ভাইয়ের জায়গা অন্য কেউ হলে হয়তো আরও এগিয়ে এসে বসতো,বিনা কারনে গায়ে ধাক্কা দিতো।এমন অভিজ্ঞতা অপুর হয়েছে অনেকবার।
কিন্তু রায়হান ভাই অন্যরকম।

রায়হানই প্রথম কথা বললো।

—আজ দেরি হয়ে গেলো?

অপু মাথা নাড়ে।বলে,

—আপনারও দেরি হয়েছে?

—হ্যা।আর বলোনা ঘুম থেকে উঠতে গিয়ে দেরি হলো।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে দেরি হয়ে ভালোই হয়েছে।

—কেনো?

রায়হান থতমত খায়।সে মনের ভুলে কথাটা বলে ফেলেছে।
অপুর দিকে তাকিয়ে দেখে সে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে।
রায়হান বলে,

—আরে ছাড়ো তো ঐসব।সামনে যে ভার্সিটিতে ফাংশন আসছে সে কথা মনে আছে রুপা?

অপু সে কথার উত্তর দেয়না।
বলে,

—আমায় আপনি অপু বলে ডাকবেন প্লিজ।

—কেন?রুপা নামে খারাপ কি?

—না খারাপ না।আমি সেকথা বলিনি আসলে রুপা বলে ডাকলে আমি হঠাৎ করে বুঝতে পারিনা আপনি কাকে ডাকছেন,বা কার সাথে কথা বলছেন।

রায়হানের দিকে তাকিয়ে দেখে সে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে।
অপু মাথা নিচু করে বলে,

—না মানে অপু ডাক শুনে শুনেই অভ্যাস তো।

—রুপা ডাকটা শোনাও অভ্যাস হয়ে যাবে।

গাল ফুলিয়ে আবার বলে,

—-তুমি যাই বলো আমি কিন্তু রুপাই ডাকবো।

অপু ফিক করে হেসে দেয়,রায়হানও হাসে।
রায়হান অন্যমনস্ক হয়ে বলে,

—হাসলে তোমায়,দারুণ লাগে রুপা।

অপু ঠিকমতো শুনতে পায়না কথাটা।বলে,

—কি?

রায়হান থতমত খায়,মাথা চুলকে আমতাআমতা করে বলে,

—কিছুনা,কিছুনা।

,

,

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here