বসন্ত কন্যা পর্ব – ৯+১০

#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_৯
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

গায়ে হলুদে আজ সব মেয়েরা পড়েছে হলুদ শাড়ি আর ছেলেরা টিয়া রঙের পাঞ্জাবি। আয়না, কাজল আর নিশা তিনজনই একসাথে শাড়ি পড়ে সেজেগুজে বাইরে বের হয়েছে। তিন বান্ধবীর মুখেই হালকা মেকআপের আবরন। এরা কেউই অতিরিক্ত ভারী মেকআপ পছন্দ করে না। আবসার স্টেজের পাশেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চারদিকের ডেকরেশন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল। সে বরাবরই খুঁতখুঁতে ধাজের মানুষ। কোনো কাজ একদম নিখুঁত না হলে তার মনে ধরে না। সেটা হোক বাড়িতে বা ক্যান্টনমেন্টে। হঠাৎ হাসির ঝংকারে তার কাজের ব্যাঘাত ঘটলো, ভ্রু কুঁচকে এলো আবসারের। একরাশ বিরক্তি নিয়ে পিছন ফিরতেই থ হয়ে গেল, মুহুর্তেই নিজের ভিতরের বিরক্তি পরিবর্তিত হয়ে সেখানে আগমন ঘটলো মুগ্ধতার। সে মুগ্ধ হয়ে তার বসন্ত কন্যাকে দেখছে। কোনো এক বসন্তে এভাবেই হলদে শাড়ি পরিহিত এই নারী তার মন কেড়েছিল। কিন্তু এই মুগ্ধতার মাঝেও আবসারের কপালে ভাঁজ পড়েছে। নিশা তার হাঁটু পর্যন্ত ঢেউ খেলানো চুলগুলোকে বেঁধে রেখেছে। আবসারের আজ খুব করে ইচ্ছে করছে নিশার কাছে গিয়ে বলতে-
– খুলে দেও না তোমার চুলগুলো যে চুল আমার মনে অনেক আগেই ঢেউয়ের সৃষ্টি করেছে।

কিন্তু সাহসের অভাবে বলতে পারছে না। হ্যা আবসারও ভয় পায়, অবশ্য এটাকে ভয় বলে না, সে নিশার সামনে গেলেই কেমন অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। কোথা থেকে কি বলবে সব তালগোল পাকিয়ে যায়। বুকের মধ্যে থাকা ছোট্ট মাংস পিন্ডটাও তখন তার সাথে বেইমানি করে। অসম্ভব গতিতে লাফাতে শুরু করে। কিন্তু এই মুহূর্তে ওর যে নিশাকে খোলা চুলেই দেখতে ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে।

______________________

সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। কেউ হলুদ মাখাচ্ছে, কেউ নাচছে, কেউ হাতে তালি দিয়ে দর্শকদের ভূমিকা করছে আর আবসার নিশার আশে পাশে ঘুরঘুর করছে কিভাবে সুযোগ বুঝে ওর চুলটা খুলে দেওয়া যায়। নিশার চুলগুলো কাঠি দিয়ে উপরে তুলে বাধা ছিল। কোথা থেকে কাজল এসে এক গাদা হলুদ নিশার পুরো মুখে মাখিয়ে ভুত বানিয়ে দিল। নিশা কোনো রকম হাত দিয়ে মুখের হলুদ সরিয়ে এক থাবা হলুদ নিয়ে কাজলকে ধাওয়া শুরু করলো। এই সুযোগ, আবসার এই সুযোগে সবার চোখের আড়ালে নিশার চুলের কাঠিটা ধরে মারলো টান, সাথে সাথে নিশার বিশাল চুলরাশি ছড়িয়ে পড়লো নিশার পিঠ জুড়ে, নিশা চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে রয়েছে। এই সময়েই চুলটা খুলতে হলো? আবসারের ঠোঁটের হাসি প্রসস্ত হলো, সে যেন বিশ্ব জয় করে ফেলেছে। নিশা চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে চুলের কাঠি খুঁজছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কাঠিটা কোথাও নেই। এই টুকু সময় কাঠিটা কি হাওয়া হয়ে গেল? পড়লে তো এখানেই পড়ার কথা, ভেবে পাচ্ছে না নিশা। ওকে কিছু খুঁজতে দেখে কাজলও ওর কাছে এলো।

– কিছু খুঁজছিস নিশা?

এই সুযোগ, নিশা আর সময় নষ্ট না করে হাতে থাকা হলুদ কাজলের পুরো মুখে লেপ্টে দিল। কাজল চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে আর নিশা খিলখিল করে হাসছে। আবসার মুগ্ধ নয়নে নিশার দিকে তাকিয়ে আছে। হাসলে সত্যিই কি কোনো মানুষকে দেখতে এত সুন্দর লাগে? নাকি শুধু তার বসন্ত কন্যাকেই লাগে। আবসারের চোখের পলক যেন পড়ছে না। মনে হচ্ছে কত জনম যেন সে তার বসন্ত কন্যাকে দেখেনি তাই আজ মনের স্বাদ মিটিয়ে তাকে দেখছে। তার তৃষ্ণার্ত চোখ দুটোর তৃষ্ণা নিবারণ করছে। আবসার আর নিশার বিষয়গুলো কেউ খেয়াল না করলেও একজনের চোখ এড়ায়নি আর সে হলো আয়না। সে সন্দিহান দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে, তার ভাই কি তাহলে তার প্রান প্রিয় বান্ধবীর প্রেমে পড়েছে? বিশ্বাস হচ্ছে না তার, তার ঐ নিরামীষ ভাই নাকি প্রেমে পড়েছে। চোখে কি সে ভুল দেখছে? না না সন্দেহ নিয়ে এভাবে বসে থাকলে হবে না। এদের দুজনের উপর নজরদারি বাড়াতে হবে। ব্যাপারটা বুঝতেই হবে তাকে। ইসসসস সত্যি সত্যি যদি তার ভাই তার প্রদান প্রিয় বান্ধবীর প্রেমে পড়ে ভেবেই মনের মধ্যে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে সে।

আবসারের মুগদ্ধতার মধ্যে বক্সে বেজে উঠল

– কু*ত্তা*র বাচ্চা ফুটফুটে সুন্দর।
যদি তারে করো আদর মন খুলে
আসবে ছুটে তোমার কাছে পথ ভুলে
হয় হোক ঝড় বৃষ্টি, হয় হোক রোদ্দুর।

আবসার চোখ মুখ খিচে দাঁড়িয়ে আছে। কি সব গান ছেড়েছে, তার রাগ যেন তরতর করে বাড়ছে। তবুও নিজেকে যথা সম্ভব সংযত রাখার চেষ্টা করছে। সে মোটেই এখানে কোনো ঝামেলা করতে চাইছে না, এখানে সব ছেলে মেয়েরাই মজা করতে এসেছে, কিন্তু এসব কি ধরনের গান আর মজা বোধগম্য হচ্ছে না আবসারের। সে বরাবরই ভদ্র, সুশিল, মার্জিত ছেলে। এসব গান তার কর্নকুহরে সবসময়ই যেন জ্বলন্ত লাভা ছেড়ে দেয়। নাহ গানটা বন্ধ হওয়ার কোনো নাম নিচ্ছে না। এবার আবসার হুংকার দিয়ে উঠলো।

– এসব কি ধরনের গান। কু*ত্তা*র ছিঃ ছিঃ এই সব গান কে ছেড়েছে বক্সে, কে ছেড়েছে তাকে আমার সামনে নিয়ে এসো।

আবসারের হুংকারে সবাই চুপসে গেছে। রাকিব স্টেজের পিছনে লুকিয়ে পড়েছে। গানটা আসলে ও ছেড়েছিল। কিন্তু আবসারের হুংকার শুনে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠছে। ও আগেই শুনেছিল আয়নার ভাই ভীষণ রাগী কিন্তু এত রাগী বুঝতে পারেনি। আবসারের চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে ভীষণ রেগে আছে। এই মুহূর্তে রাকিবকে পেলে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। তাই ভয়ে আগে থেকেই স্টেজের পিছনে লুকিয়ে পড়েছে। আসলেই আবসার ভয়ংকর রেগে গেছে, এইসব গান সে একদম শুনতে পারে না। এসব কি গান নাকি গানের নামে কানের ধ*র্ষ*ন। নিশা তো রীতিমত ভয়ে কাঁপছে, সে এমনিতেই আবসারকে ভীষণ ভয় পায়। তার উপর আবসারের এমন রূপ তার অন্তরাত্মা আরও কাঁপিয়ে দিচ্ছে।

সবার রাগ ঢিলের মধ্যে বাড়িতে প্রবেশ করলো আনসার সাহেব ( আবসার, আয়ান, আয়নার বাবা ) । সে এতদিন ব্যাবসার কাজে ঢাকার বাইরে ছিল। যদিও ব্যাবসার কাজ সম্পূর্ণ আয়নাই সামলায়। কিন্তু আয়ানের বিয়ে উপলক্ষে বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাবসাটা আনসার সাহেবই সামলাচ্ছেন। এই কারনেই হঠাৎ কিছুদিন আগে তাকে ঢাকার বাইরে যেতে হয়েছিল তবে কথা ছিল গায়ে হলুদের আগেই চলে আসবে। যদিও একটু দেরি হয়েছে তবে সে গায়ে হলুদের দিনই এসেছেন। বাবাকে দেখে রাগ একটু ঠান্ডা হয়েছে আবসারের। আনসার সাহেব আবসারের কাছাকাছি গিয়ে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-

– কি হয়েছে মাই সান? রেগে আছো কেন?

– ও কিছু না বাবা, চলো রেস্ট নিবে। মাত্রই তো এসেছো নিশ্চই খুব ক্লান্ত।

আর কথা না বাড়িয়ে আনসার সাহেবকে সাথে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেল আবসার। তবে যাওয়ার আগে নিশার দিকে এক পলক তাকাতে ভুললো না সে, মেয়েটা তার ভয়ে কেমন কাঁপছে। নাহ মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা গেল না, একটু ধমকে এভাবে কাঁপা কাঁপি করলে কিভাবে চলবে। তাও এই ধমক তো তাকে দেওয়া হয় না তবুও কেমন ঠকঠক করে কাঁপছে। এত ভীতু হলে ভবিষ্যতে ক্যাপ্টেন আবসার তাহমিদকে সামলাবে কি করে? শেষে কিনা এমন একটা ভীতু মেয়েকে মনে ধরলো ক্যাপ্টেন আবসারের? সবাই শুনলে হাসাহাসি করবে, তবুও তার যে এই মেয়েকেই চাই।

______________________

আজ আয়ানের বিয়ে। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটা বাড়িতে করা হলেও বিয়ের আয়োজনটা কমিউনিটি সেন্টারে করা হয়েছে। ছেলেরা সবাই আগেই রেডি হয়ে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে। আর মেয়েদের টিকিটটাও দেখা যাচ্ছে না। তারা সেই সকাল থেকে সাজতে বসেছে আর এখন প্রায় দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাদের সাজ শেষ হচ্ছে না। এত সাজের কি আছে ভেবে পাচ্ছে না আবসার। সে তো ১০ মিনিটে রেডি হয়ে গেছে। বারবার হাত ঘড়িতে সময় দেখছে আর বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। তার বিরক্তিতে এক রাশ মুগ্ধতা ছুঁইয়ে দিতে হাজির হলো তার বসন্ত কন্যা। আজ সে লাল শাড়ি পড়েছে, হাতে লাল কাচের চুড়ি, ঠোঁটে লাল টকটকে লিপস্টিক। নিশার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর কিছু করার স্বাদ জাগছে আবসারের। নিজের মনের ভাবনায় নিজেই ঢোক গিলল সে। আজও চুল খোঁপা করে বেঁধে রেখেছে নিশা, আজ যেন এই সাজের সাথে খোঁপাটাই বেশি মানিয়েছে । তবে কিছু একটার অভাব বোধ করছে আবসার, হ্যা খোঁপায় একটা বেলীর মালার ভীষন বোধ করছে সে। একটা বেলীর মালা নিশার খোঁপায় গুঁজে দেওয়ার জন্য হাতটা বড্ড নিসপিস করছে আবসারের। কিন্তু সে হঠাৎ গিয়ে নিশার খোঁপায় একটা বেলীর মালা কিভাবে গুজে দিবে? আর বিষয়টা কিভাবেই বা নিশা নেবে? এসব ভাবনা চিন্তার মাঝেই হঠাৎ পাশ থেকে কেউ আবসারকে বলে উঠলো

– খুব সুন্দর লাগছে না ভাই?

আবসার আনমনেই বলে উঠলো – হুম একদম লাল পরীর মতো। তবে খোঁপায় একটা বেলীর মালার বড্ড অভাব।

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে সাথে থাকুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_১০
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

আবসার আনমনেই বলে উঠলো – হুম একদম লাল পরীর মতো। তবে খোঁপায় একটা বেলীর মালার বড্ড অভাব।

আবসার কথাটা বলেই থতমত খেয়ে গেল। পাশ ফিরেই দেখে আয়না ওর দিকে গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে। আয়না অবাক চোখেই প্রশ্ন আবসারকে করলো-

– ভাই তুমি প্রেমে পড়েছো?

আবসার আমতা আমতা করে উত্তর দিল – কি সব বাজে কথা বলছিস? তোর মাথাটা কি একদম গেছে এক প্রকার পালিয়ে গেল আবসার।

আয়না হতবাক হয়ে আবসারের দিকে তাকিয়ে আছে। এই ২০ বছরের জীবনে আবসারকে এই প্রথম আয়না এতটা অপ্রস্তত হতে দেখেছে। এছাড়া আবসারকে গম্ভীর , রাগচটাই দেখেছে সব সময়। নাহ ওর বান্ধবীটাই পারবে ওর ভাইকে ঠিক করতে, নিরামীষ থেকে আমীষ বানাতে। যেভাবেই হোক আবসারের সাথে নিশার জুটিটা বেঁধে দিতেই হবে। হঠাৎ পাশ থেকে কারো কন্ঠস্বর শুনে পাশ ফিরে তাকালো আয়না।

– হয় ছেড়ি তুই যা ভাবতেছো আমিও হেইডাই ভাবতেছি। ওই মাইয়াই পারবো আমার নাতিডারে ঠিক করতে।

– তা লেবু তুমি কি করতে চাইছো? ( রেবেকা বানুকে আয়না ভালোবেসে লেবু ডাকে)

– আপাতত আমাগো কিছু করন লাগবে না। দেখতে থাক কি হয়।

_________________________

চোখ মুখ কুঁচকে টকটকে লাল চোখ জোড়া নিয়ে আবসার এদিক ওদিক পায়চারি করছে। এই মুহূর্তে তার রাগের কারন একটা ছেলে। সে নিশার জন্য একটা বেলীর মালা কিনতে একটু বাইরে গিয়েছিল এসে দেখে একটা ছেলে তার বসন্তকন্যার আগে পিছে ঘুরঘুর করছে। ছেলেটা মেয়ে পক্ষের তাই কিছু বলতেও পারছে না। কপালে দুই আঙ্গুল দিয়ে ঘষে আবসার মনে মনে বলল –

– এখনও প্রেমই শুরু হলো না এর মধ্যে শত্রুর আনাগোনা শুরু।

ইচ্ছে তো করছে ঠাঁটিয়ে ছেলেটাকে দুটো চড় মারতে কিন্তু তাও পারছে না। নিজেকে নিজে সংযত করার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আবসার। আর নিশাকেও একা পাচ্ছে না। ওকে একা না পেলে এই বেলীর মালাটা দিবে কিভাবে?

মিনিট পাঁচেক পর নিশা পা বাড়ালো ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে। একাই এসেছে, কাজল আর আয়নাকে সাথে আসতে বলতে চাইছিল কিন্তু তারা সেলফি তোলায় খুবই ব্যস্ত তাই আর তাদের বিরক্ত করেনি। গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে নিশা ওয়াশ রুমের দিকে যাচ্ছে। হঠাৎ এক গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠে থমকে দাঁড়ালো নিশা, আপনা আপনি ভ্রু কুঁচকে এলো তার। এই লোক এখানে কেন? একে দেখলে এমনি ভয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়। ভয়ে নিশা আর পিছন ফিরে তাকালো না, যেদিকে তাকানো ছিল ঐ দিকে তাকিয়েই থমকে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক সেকেন্ড পর চুলে আলতোভাবে কারো স্পর্শে কেঁপে উঠলো নিশা, তড়িৎ গতিতে পিছন ফিরে তাকানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। তার আগেই আবসার একহাত দিয়ে শক্ত করে নিশার বাহু আটকে বলল-

– কাজটা শেষ তো করতে দেও। এত ছটফট করছো কেন?

নিশার মাথায় সযত্মে বেশীর মালাটা গুঁজে দিয়ে নিশার থেকে সরে দাঁড়িয়ে বুকে হাত গুজে বলল – নাউ পারফেক্ট।

এতক্ষন নিশা দম নিতে যেন ভুলে গিয়েছিল। আফসারকে এত কাছে অনুভব করে বুকের মধ্যে দ্রিম দ্রিম আওয়াজ হচ্ছিলো। সারা শরীর কাঁপছিল। কিন্তু এ কাঁপা কাঁপি ভয়ের জন্য নয় , অন্য রকম এক অনুভূতি, অজানা এক অনুভূতি।
নিশা যেন কথা বলতে ভুলে গেছে। সে অবাক চোখে আবসারের দিকে তাকিয়ে আছে। আবসারের ঠোঁটের কোনে লেগে আছে মিষ্টি একটা হাসি। নিশার চোখগুলো যেন অবাকে আরও বড় বড় হয়ে গেল, আবসার হাসছে? হোক সেটা মুচকি হাসি, এই প্রথম নিশা আবসারকে হাসতে দেখছে। এই এক সপ্তাহ হয় এবাড়িতে এসে আবসারকে সব সময় গম্ভীরই দেখেছে। নিশা তো ভেবেছিল আবসার হাসতেই জানে না। নিশার ধারনাকে ভুল প্রমানিত করে আবসার হাসছে। নিশার হাজার চিন্তা ভাবনার মধ্যেই আবসার যেভাবে এসেছিল সেভাবেই পা ফেলে চলে গেল।

____________________

ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে আয়না আর কাজলের কাছে যেতেই ওরা নিশাকে চেপে ধরলো এই বেলীর মালা ওর মাথায় কোথা থেকে এলো। নিশা এখন কি বলবে? না না আবসারের কথা এদের কিছুতেই বলা যাবে না তাহলে এরা সারাদিন ক্ষ্যাপাবে। তাই আমতা আমতা করে উত্তর দিল –

– সেন্টারের বাইরেই বিক্রি করছিল দেখে ভালো লেগেছে কিনে এনেছি।

কাজল নিশার কথা বিশ্বাস করলেও আয়নার কেমন যেন বিশ্বাস হচ্ছে না কথাটা। সে সন্দিহান দৃষ্টিতে কতক্ষন আবসারের দিকে কতক্ষন নিশার দিকে তাকাচ্ছে। ব্যাপারটা কেমন যেন খটকা লাগছে।

সেই ছেলেটা এখনও নিশার পিছনে ঘুরঘুর করছে। যদিও নিশা পাত্তা দিচ্ছে না তবুও ছেলেটা পিছন ছাড়ছে না। আয়না কাজল ওরা যে যার মতো ব্যস্ত আছে। রাকিব একের পর এক মেয়েদের পিছনে ঘুরঘুর করছে যেটা পটে রায় আর নিলয় খাওয়ার চিন্তায় আছে, খাবার কখন দিবে সেই আশায় চাতক পাখির মতো বসে আছে। এ জগতের আর কোনো চিন্তা তার মাথায় নেই। রেবেকা বানু এসে নাতনির পিঠে ঠাস করে এক থাপ্পর বসিয়ে দিল। আয়না ” আউচ ” করে উঠে বলল –

– কি গো লেবু মারলে কেন আমারে?

– তুই এই হানে কি করোছ ছেড়ি, ওদিকে আমার নাত বউরে যে আরেক ব্যাডায় লইয়া যাওনের চিন্তা করতেছে হেই খবর কি রাহোছ?

আয়না কপাল কুঁচকে বলল – মানে ?

– ঐ দিকে দেখ বলে আঙ্গুল দিয়ে নিশার পিছনে ঘুরঘুর করা ছেলেটাকে দেখিয়ে দিল রেবেকা বানু।

– এই ছেলেকে এখন কি করা যায় লেবু?

– হুন আমি যা যা কইতেছি তাই কর বলে আয়নার কানে কানে কিছু একটা বলে দিল রেবেকা বানু, তার কথা শুনে আয়নার ঠোঁটে ভেসে উঠলো একটা শয়তানি হাসি।

কিছুক্ষন পর হেলতে দুলতে দুলতে আয়না এগিয়ে গেল ঐ ছেলেটার দিকে। নিজে ইচ্ছাকৃতভাবেই ছেলেটার সাথে একটা ধাক্কা খেয়ে ” স্যরি, স্যরি ” বলে চলে গেল। ছেলেটাও আর পাত্তা দিল না এগিয়ে গেল সামনের দিকে কিন্তু কয়েকটা পাড়া দিতেই থমকে গেল পা জোড়া, শুরু হলো নাচানাচি, কি হচ্ছে সারা শরীর এভাবে চুলকাচ্ছে কেন? নাহ আর পারা যাচ্ছে না। শুরু হয়ে গেছে সারা শরীর চুলকানো। চুলকাতে চুলকাতে গায়ে পড়া নীল রঙের কোর্টটা খুলে ফেলেছে। চারদিকের মানুষ হাসাহাসি করছে। কেমন ব্যাঙের মতো লাফালাফি করছে। একটা মেয়ের পিছনে ঘুরে যান ইজ্জত নিয়ে এখন টানাটানি। ইসসসস কি লজ্জা, কিন্তু না চুলকিয়েও পারছে না। পুরো শরীর অসম্ভবভাবে চুলকাচ্ছে। শার্টের বাটন খোলা শুরু করতেই অন্য একটা ছেলে এসে ওকে ধরে নিয়ে চলে গেল। এদিকে আয়না আর রেবেকা বানু হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। আবসার ভ্রু কুঁচকে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর আর বুঝতে বাকি নেই যে এইখানে এদের কোনো কারসাজি আছে, হাজার হলেও ক্যাপ্টেনের মস্তিষ্ক। কিন্তু ব্যাপারটায় সে বেশ খুশিই হয়েছে এতক্ষন অনেক কষ্টে এই বজ্জাত ছেলেকে নিশার আশেপাশে সহ্য করেছে সে। এখন সেই ছেলের এই অবস্থায় সে কেমন সুখ সুখ অনুভব করছে।

______________________

অনুষ্ঠান শেষে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় ১০ টা। সব নিয়ম কানুন শেষে আয়ন আর মিষ্টিকে ( আয়ানের বউ ) এখন বাসর ঘরে দেওয়া হবে। মিষ্টিকে অবশ্য আগেই বাসর ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে শুধু বাইরে আছে আয়ান আর তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বিচ্ছুর দল, তারা টাকা না পেলে কিছুতেই আজ বাসর ঘরে ঢুকতে দিবে না। আয়ান কাঁদো কাঁদো হয়ে বারবার ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছে। এরা ৫০ হাজার টাকা চাইছে তাও ক্যাশ। আয়ান ১০ হাজার টাকা এখনই দিবে বাকি টাকাটা পরে দিয়ে দিবে বলছে কিন্তু এরা এখনই চায়, কোনো ধার বাকি চলবে না। আয়ানের অবস্থা এই মুহূর্তে নাজেহাল। সবাই মিলে চিল্লাচিল্লি শুরু করেছে। নাহ এখন পরিবেশ আবসারকেই শান্ত করতে হবে। অবশেষে আর উপায় না পেয়ে আবসার দিল তার চিরচেনা আকাশ কাঁপানো ধমক। ধমক শুনে সবাই চুপসে গেল। আয়ানকে ছেড়ে সবাই পাশে দাঁড়ালো। আবসার আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল –

– তোর বউ রুমে তোর জন্য অপেক্ষা করছে ভিতরে যা।

আয়ন যেতে যেতে বাঁকা হেসে বলে গেল – এতক্ষন ১০ হাজার দেব বলেছি নিলি না এখন এক টাকাও ফেলি না।

আবসারের উপর রাগে সবাই ফুঁসছে কিন্তু মুখে কেউই কিছু বলতে পারছে না। নিশা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আয়নাকে বলল

– তোর বড় ভাইয়ের লজ্জা করে না? একে তো উনার আগে উনার ছোট ভাই বিয়ে করে বাসরও করছে তার উপর উনি ছোট ভাইয়ের বাসরে এসে আমাদের হক মারছে।

কথাটা শেষ হতেই গলা খাঁকারির আওয়াজে পিছন ফিরলো আয়না আর নিশা। পিছন ফিরতেই আঁতকে উঠলো দুজনেই। এই লোক ওদের পিছনে এসে কখন দাঁড়ালো? ওর সব কথা কি শুনে নিয়েছে? আব তেরা কেয়া হোগ নিশা, তু তো গায়া?

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে সাথে থাকুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here