বাইজি কন্যা পর্ব ১+২

[১]
রাত দু’টো ছুঁই ছুঁই সদর হাসপাতালের সামনে দু’জন নারী লোক দাঁড়িয়ে আছে। ল্যাম্পপোস্টের আলোতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে নারীদ্বয় অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারিনী। হাসপাতাল কোয়ার্টারের ছাদ থেকে দৃশ্যটি দেখা মাত্রই ডক্টর প্রণয় চৌধুরী’র ওষ্ঠকোণে অসরল হাসির রেখা মিললো। দৃষ্টিজোড়া অজ্ঞাত নারীদ্বয়ের দিকে নিবদ্ধ রেখে ভ্রুজোড়া কুঁচকে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে বিরবির করে বললো,
– ‘আজকাল রাত গভীর হলে হাসপাতালের সামনেও আকাঙ্ক্ষাময়ী রমণীদের দেখা মেলে! ইন্টারেস্টিং।’
মিনিট কয়েক সময় অতিবাহিত হতেই প্রণয়ের কুঁচকানো ভ্রুজোড়া দিগুণ কুঁচকে গেলো। কারণ নারীদ্বয়ের সম্মুখে একটি ভ্যানগাড়ি নিয়ে উপস্থিত হলো সবুর উদ্দিন। যিনি তার পিতার বাইজি গৃহের দাঁড়োয়ানের দায়িত্ব প্রাপ্ত রয়েছে। বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো প্রণয়। ভাবলো,
-‘ বাইজি গৃহে আজকাল রমণীদের অভাব পড়েছে নাকি যে সবুর উদ্দিন নারী দেহ খুঁজতে রাস্তায় নেমেছে? ‘
পরোক্ষণেই আরেক দফা বিস্মিত হলো তার দৃষ্টিজোড়া। বক্ষে বেড়ে গেলো তীব্র উত্তেজনা। যেই উত্তেজনাটুকু দমিয়ে রাখতে না পেরে ছুটে চললো নিচে। সে নিচে যেতে যেতেই অজ্ঞাত নারী দু’জন হাসপাতালের ভিতর থেকে একজন রোগাক্রান্ত নারী’কে নিয়ে পুনরায় গেটের সামনে এলো। ততোক্ষণে প্রণয়ও গেটের সামনে চলে গেলো। প্রণয় সবুর উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– ‘গভীর রাতে রাস্তাঘাটে তোমার দেখা মিলছে,
বহু নারী’র গন্ধও তোমার আশপাশে কিলবিল করছে, ব্যাপারখানা কি সবুর উদ্দিন ধর্ম কর্ম সব গিলে খেলে নাকি? ‘
আঁতকে ওঠলো সবুর উদ্দিন। পা থেকে মাথা অবদি ভয়ংকর কম্পন সৃষ্টি হলো তার। বারকয়েক ঢোক গিলে একবার নারী লোকদের দিকে তো আরেকবার প্রণয়ের দিকে দৃষ্টি বুলাতে শুরু করলো। ভয়ে কুঁকড়ে গেলো নারী লোকগুলোও। কিন্তু পীড়িত নারীটি নিজের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারছিলোনা বিধায় দু’জন মিলে তাকে ভ্যানগাড়িতে শুইয়িয়ে দিলো। তারপর জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো দু’জনই। তাদের একজন অপরজন’কে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এ দৃশ্য দেখে বিরক্তি’তে চোখ মুখ কুঁচকে সবুর উদ্দিনের দিকে কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো প্রণয়। প্রশ্ন করলো,
-‘ এরা কারা সবুর উদ্দিন আমার প্রশ্নের জবাব দাও।’
দু’হাত জোড় করে প্রণয় চৌধুরী’র পায়ে লুটিয়ে পড়লো সবুর উদ্দিন। বললো,
-‘ ক্ষমা করবেন জনাব এরা আপনার গৃহেরই সদস্য।’
-‘ আমার গৃহের? ‘
অবাকান্বিত স্বরে প্রশ্নটি করতেই সবুর উদ্দিন দাঁড়িয়ে থাকা নারীদ্বয়ের মধ্যে মধ্যবয়স্কা নারী এবং ভ্যানগাড়িতে শয্যায়িত নারীকে দেখিয়ে বললো,
-‘ উনি বাইজি গৃহের প্রধান বাইজি শারমিন শায়লা। আর উনি সহকারী বাইজি মান্নাত। ‘
সবুর উদ্দিনের কথা শেষ হওয়া মাত্রই প্রণয়ের মুখ বিকৃত রূপ ধারণ করলো। একরাশ ঘৃণা ছুঁড়ে তাকালো শারমিন বাইজি এবং মান্নাত বাইজির দিকে। শারমিন বাইজি প্রণয়ের অমন দৃষ্টি দেখে বুকে জড়িয়ে রাখা মেয়েটি’কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কারণ ইতিমধ্যেই ভয়ে মেয়েটি কাঁদতে শুরু করেছে। প্রণয় চৌধুরী এসব দৃশ্যে বিন্দু ভ্রুক্ষেপ করলো না কিন্তু ভ্যানগাড়িতে শুয়ে থাকা নারী’টির দিকে আঙুল তুলে প্রশ্ন করলো,
-‘ সর্বক্ষণের জন্য পাঁচফোড়ন গৃহে চিকিৎসক রয়েছে। রয়েছে অগণিত সেবিকারা। যতোদূর জানি বাইজি গৃহের জন্যও আলাদা আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে
তবুও কেন এই নারী’কে এখানে নিয়ে আসা হলো? ‘
প্রণয় চৌধুরী’র এহেন হুংকারে শারমিন বাইজির বক্ষে চেপে রাখা কন্যাটির সর্বাঙ্গ শিউরে ওঠলো কয়েক পল সময় নিয়ে নিজ বোধশক্তিও হারিয়ে ফেললো। পুরোপুরি দেহের ভার ছেড়ে দেওয়ায় শারমিন বাইজি আঁতকে ওঠলো মৃদু আর্তনাদ করে বললো,
-‘ নূর! ‘
সৎবিৎ ফিরে পাওয়ার ভঙ্গিতে ওদের দিকে তাকালো সবুর উদ্দিন। ভ্রুদ্বয় কুঁচকে তাকালো প্রণয়ও। দেখতে পেলো শারমিন বাইজি মাটিতে বসে পড়েছে। কোলে দেহের ভার ছেড়ে পড়ে আছে এতোক্ষণ সময় বক্ষে চেপে রাখা কন্যাটি। এবারে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লো প্রণয়। চোয়ালজোড়া শক্ত করে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
-‘ এই কন্যাটির পরিচয় তুমি আমায় দাওনি সবুর উদ্দিন।’
কম্পিত কণ্ঠে সবুর উদ্দিন বললো,
-‘ ও শারমিন বাইজির কন্যা শাহিনুর শায়লা। ‘
-‘ সে কি বাইজি নয়? যদি বাইজি হয়ে থাকে তার নামের আগে পিছে বাইজি তকমা দেওয়া উচিৎ ছিলো।’
-‘ ওর বয়স ষোল হয়নি জনাব। ‘
নতজানু হয়ে উত্তর সবুর উদ্দিনের। এদিকে শারমিন বাইজি কেঁদে অস্থির। তার ক্রন্দনধ্বনি’তে প্রণয়ের সর্বাঙ্গে অগ্নিজ্বলে যাচ্ছে। অসহ্যের চরম সীমানায় পৌঁছে গিয়ে সবুর উদ্দিন’কে আদেশ করলো,
-‘ সবুর উদ্দিন পীড়িত নারীটিকে এই মূহুর্তে বাইজি গৃহে পৌঁছে দিয়ে আসবে। ‘
স্বস্তির সহিত ওঠে দাঁড়ালো সবুর উদ্দিন। শারমিন বাইজিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-‘ বুবুজান নুরের জ্ঞান কি ফিরছে? ‘
প্রণয় বললো,
-‘ উহুম সবুর উদ্দিন বুঝতে ভুল করেছো। আমি তোমাকে এবং এই নারী’কে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছি। এই দুজন’কে নয়। তোমাকে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছি এইজন্য যে বিশ মিনিটের মাথায় আমি আবার তোমাকে আমার চোখের সামনে দেখতে চাই। ‘
-‘ কিন্তু জনাব ওদের কোন দোষ নাই। ‘
‘দোষ তোমারও নেই সবুর উদ্দিন কিন্তু ভুল তোমাদের প্রত্যেকের রয়েছে। আর সেই ভুল সম্পর্কে অবগত হওয়ার অধিকার আমার রয়েছে। আশা করি বুঝতে পেরেছো। ‘
মান্নাত বাইজি’কে নিয়ে পাঁচফোড়ন গৃহের উদ্দেশ্যে রওনা হলো সবুর উদ্দিন। সবুর উদ্দিন বিদায় হতেই প্রণয় চৌধুরী শারমিন বাইজিকে বললো,
-‘ শারমিন বাইজি নিজ কন্যাটিকে জাগানোর চেষ্টা করো। ‘
শারমিন বাইজি চারপাশে সচেতন দৃষ্টি বুলালো। প্রণয় চৌধুরী তখনও গম্ভীর ভঙ্গিতে বিপরীত দিকে তাকিয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শারমিন বাইজি বললো,
-‘ জনাব আপনি অনুমতি দিলে পানির ব্যবস্থা করতাম।’
প্রণয় চৌধুরী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। তবুও একটিবার পিছু ফিরে চাইলো না। ভূমিতেই দেহ ভাসিয়ে শাহিনূর’কে শুইয়িয়ে দিলো শারমিন বাইজি। হাসপাতালের কোন সাইটে পাবলিক টিউবওয়েল রয়েছে জানেনা শারমিন। তবুও প্রণয় চৌধুরী’কে একটিবার প্রশ্ন করার দুঃসাহস দেখালো না সে। কারণ প্রণয় যে জমিদার পুত্র। জমিদারের পুত্ররা প্রশ্ন করার অধিকার রাখে কিন্তু কারো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনা। শাহিনূরের জ্ঞান ফিরেছে। উপস্থিত হয়েছে সবুর উদ্দিনও। প্রণয় চৌধুরীও আদেশ দিয়েছে তাকে অনুসরণ করার জন্য। তিনটে শঙ্কিত প্রাণ অত্যন্ত সচেতন হয়ে প্রণয়ের পিছু পিছু চলতে লাগলো। শাহিনুর নিচু গলায় ক্রমাগত মা’কে প্রশ্ন করতে থাকলো,
-‘ আম্মা কোথায় যাই আমরা? আম্মা মান্নাত বুবু কই? আম্মা এই মন্দ মানুষ’টা কে? ‘
[২]
দোতালায় আলোকবিশিষ্ট একটি ঘরে প্রবেশ করলো প্রণয়। ঘরের মাঝবরাবর চতুর্ভূজাকৃতির একটি টেবিল এবং একটি চেয়ার ব্যতিত আর কিছু নেই। প্রণয় চৌধুরী তার সুগঠিত ভারবাহক দেহটি দৃঢ় চরণদ্বয় দ্বারা এগিয়ে নিয়ে সিংহাসনের ন্যায় চেয়ারটিতে বসলো। বাম পায়ের ওপর ডান পা তুলে বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে বসে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইলো। সবুর উদ্দিন,শারমিন বাইজি,শাহিনূর তিনটে মাথাই নিচু হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তার সম্মুখে। প্রণয় চৌধুরী কয়েক পল চুপ থেকে আচমকাই টেলিফোন থেকে কাউকে কল করলো। বললো,
-‘ এক কাপ চা পাঠিয়ে দাও তো নিবির। ‘
তারপর টেলিফোন রেখে দৃঢ় চাহনিতে তাকালো সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মানব-মানবীদের দিকে। পুরোপুরি আলোতে স্পষ্ট তিনটা মুখ দেখে দৃষ্টিজোড়া আর দৃঢ় রইলো না প্রণয়ের। গোলাপি রঙের জর্জেট শাড়ি পরিহিত শারমিন বাইজি। গলায়,কানে লাল,নীল পাথরের সংমিশ্রণের গয়না। দু’হাত ভর্তি কাঁচের চুরি। ভ্রুজোড়ার মধ্যবর্তী অংশে গোলাপি রঙের টিপ, ওষ্ঠজোড়া চকচকে গোলাপি আয়নার মতো ফুটে ওঠেছে গাঢ় গোলাপি রঙের লিপস্টিক দেওয়ার জন্য। চেহেরার চাকচিক্য দেখে বোঝাই যাচ্ছে যৌবন এখনো ফুরিয়ে যায়নি তার। যতকাল যৌবন আছে ততোকালই আকাঙ্ক্ষাময়ী নারীদের রাজত্ব চলবে। ভাবা মাত্রই পাশে থাকা পুষ্প মুকুলের দিকে নজর পড়লো তার। মূহর্তেই দৃষ্টিজোড়া সরিয়ে নিলো। বিরবির করে তাচ্ছিল্য সহকারে বললো,
-‘পুষ্পকুঁড়ি এই ছিন্নমূলে পরিণত হলো বলে! ‘
প্রণয় চৌধুরী’র দৃষ্টি’কে পরিচিত ঘৃণাত্মক দৃষ্টিতে মিলিয়ে নিয়ে শারমিন বাইজির অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠলো। শাহিনূরের গা ঘেষে দাঁড়িয়ে উপরওয়ালার নিকট কেবল একটাই প্রার্থনা জানালো,
-‘ হে প্রভু রক্ষা করো, রক্ষা করো। ‘
প্রণয় চৌধুরী বললো,
-‘ সবুর উদ্দিন এবং শারমিন বাইজি সুস্পষ্টভাবে পুরো ঘটনার বিবৃতি করো। ‘
সবুর উদ্দিন, শারমিন বাইজি দু’জনেই ঢোক গিললো। শাহিনূর অবুঝের ন্যায় মা এবং সবুর উদ্দিনের দিকে তাকালো। কিন্তু সম্মুখে তাকানোর সাহস হয়ে ওঠলো না। দুনিয়া জুড়ে মন্দ পুরুষের বাস। কিছু সময় পূর্বে সম্মুখের মন্দ পুরুষটির হুংকারে হৃৎপিণ্ড ছিন্ন হতে নিয়েও হয়নি কিন্তু হুঁশ হারিয়েছে। না জানি এখন সম্মুখে তাকালে কোন প্রলয় ঘটে যায়! তার আম্মা বলেছে মন্দ মানুষ টা ঐ মন্দ বাড়িরই ছেলে। তাই মন্দ নজরে নজর না মেলানোই শ্রেয়।
শাহিনূর মনের সাথে মনের আলোচনাতে ব্যস্ত। এদিকে সবুর উদ্দিন শঙ্কিত কন্ঠে বললো,
-‘ মান্নাত বাইজি গর্ভবতী ছিলো জনাব তাই গোপনভাবে গর্ভপাত করাতে এই হাসপাতালে নিয়া আসছি। জমিদার বাড়ির কোন চিকিৎসক এই খবর জানলে কেলেংকারী ঘটে যাবে। ‘
চোয়ালজোড়া শক্ত হয়ে ওঠলো প্রণয়ের। ক্ষোভে ফেটে পড়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
-‘ বাচ্চা’টা কার? ‘
ভয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো সবুর উদ্দিন। বললো,
-‘ মাফ করুন জনাব এ কথা আমি বলতে পারবো না। ‘
-‘ কাল সকাল দেখার আশা আছে সবুর উদ্দিন? ‘
প্রণয়ের মুখে এহেন বাক্য শুনে কেঁপে ওঠলো শারমিন বাইজি। অনবরত কাঁপতে থাকলো শাহিনূরও। কিন্তু শারমিন নিজেকে যথেষ্ট সামলে নিয়ে অত্যন্ত সাহসীকতার সঙ্গে জবাব দিলো,
-‘ নিজ ঘরের কুকীর্তি শুনে হজম করতে পারবেন তো জনাব? ‘
শারমিনের মুখে এমন অকপট জবাবের সঙ্গে প্রশ্ন শুনে চোখদুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো প্রণয়ের। দু’হাত সর্বচ্চ শক্তি দিয়ে মুঠোবন্দি করে নিয়ে বললো,
-‘ সোজাসাপ্টা জবাব দাও বাইজি কে এই সন্তানের বাবা? ‘
-‘ নামটা না হয় আড়ালেই থাকুক তবে নিশ্চিত থাকুন জনাব অলিওর চৌধুরী’র বংশধরেরই বিনাশ ঘটেছে। ‘
ললাট বেয়ে ঘাম ঝড়তে শুরু করলো প্রণয়ের। আফসোসের সুরে বললো,
-‘ এক বাইজির গর্ভে জমিদারের অংশের শেষ পরিণতি এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে! শারমিন বাইজি নিঃশ্বেষ হয়ে যাওয়া ঐ অংশটুকুর পিতৃ পরিচয় জানিয়ে বিদায় হও। ‘
[৩]
শহরের অভ্যন্তরেই বসবাস জমিদার অলিওর চৌধুরীর। তিনি পাঁচ পুত্রের জনক। তার দ্বিতীয় স্ত্রী প্রেরণার গর্ভের সন্তান পল্লব চৌধুরী, পলাশ চৌধুরী, প্রণয় চৌধুরী, অঙ্গন এবং রঙ্গন চৌধুরী। তার প্রথম স্ত্রী’র নাম অরুণা চৌধুরী। প্রথম স্ত্রী অরুণা সন্তান ধারণে অক্ষম ছিলেন তাই খালাতো বোন প্রেরণার সাথে প্রণয়ের সম্পর্ক পরবর্তী’তে বৈবাহিক সম্পর্কে রূপ নেয়। বিয়ের দশবছরের ব্যবধানেই পাঁচ পুত্রের জনক জননী হয় অলিওর এবং প্রেরণা চৌধুরী। পাঁচ পুত্র’কে নিয়ে গর্ভধারিণী প্রেরণার থেকেও বেশী উল্লসিত ছিলো অরুণা৷ তাই অলিওরের কাছে পঞ্চ পুত্র নিয়ে তার প্রথম আবদার ছিলো তাদের প্রধান এই গৃহটি পঞ্চ ভাই’কে উপহার সরূপ লিখে দিতে এবং জমিদার বাড়িটির নামকরণ করতে হবে – “পাঁচফোড়ন গৃহ” । জমিদারের এই পাঁচ পুত্র ঠিক পাঁচ প্রকার মশলার মতোই। জিরা,কালোজিরা, মেথি,মৌরি ও রাঁধুনির সংমিশ্রণে যেমন তৈরি হয়েছে পাঁচফোড়ন মশলা। ঠিক তেমনি অলিওর চৌধুরী’র পঞ্চ পুত্রের মিশ্রণে তৈরি “পাঁচফোড়ন গৃহ” যারা একই গর্ভ থেকে জন্মানো সত্ত্বেও প্রত্যেকে ভিন্ন স্বভাবের অধিকারী। জমিদার অলিওর চৌধুরী যেমন সম্পদশালী ঠিক তেমনি বদমেজাজি। তার দুই সহধর্মিণী ভীষণ শান্তশিষ্ট এবং ধৈর্য্যশীল। কিন্তু তার পুত্র’রা একেকটা ঠিক একেক ধাচের। মিল কেবল একদিকেই রয়েছে পঞ্চ ভাই’ই ভীষণ রহস্যময় এবং দুর্বৃত্ত চরিত্রের অধিকারী। এই পঞ্চ ভাইদের মধ্যে পাঁচফোড়ন গৃহের বাইরে রয়েছে একজনই সে হলো প্রণয় চৌধুরী। যিনি বাবার বিরাট রাজত্বের তোয়াক্কা না করে পড়াশোনায় সফলতা বয়ে এনে একই শহরের একটি সরকারি হাসপাতালে এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে কর্মরত রয়েছে। কোথায় বাবার রাজত্বের টান কোথায় বাবার বাইজি গৃহে নারী দেহের টান? কোন কিছুরই টান অনুভব করেনা সে কেবল মস্তিষ্কের উপরিভাগে মাতৃ হস্তের স্নেহ,ললাটে মাতৃ ওষ্ঠের চুম্বন ছাড়া।
হাসপাতাল থেকে কোয়াটারে ফিরতেই বিছানায় অঙ্গন’কে দেখতে পেলো প্রণয়। বললো,
-‘ কখন এলি? ‘
শোয়া থেকে ওঠে বসলো অঙ্গন। ওষ্ঠকোণে দুর্বৃত্ত হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো,
-‘ আমি দুপুরে সে এসেছে বিকালে।’
অঙ্গনের চোখের ইশারায় বা দিকে ঘাড় ঘোরালো প্রণয়। রোমানাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,
-‘ রোমানা! কবে এলে? ‘
বারান্দা থেকেই গুটিগুটি পায়ে ঘরে প্রবেশ করলো রোমানা। অভিমানী সুরে বললো,
-‘ দু’দিন আগে এসেছি গতকাল তোমার বাড়ি ফেরার কথা ছিলো প্রণয় কেন তুমি ফেরোনি? ‘
গায়ে জড়ানো কোর্ট খুলতে খুলতে গম্ভীর কন্ঠে প্রণয় বললো,
-‘ এই প্রাপ্তিটুকুর জন্যই। ‘
প্রণয়ের ওষ্ঠকোণে গুরুগম্ভীর বাঁকা হাসি দেখতে পেয়ে বক্ষস্থলে শীতল স্রোত বেয়ে গেলো রোমানার। গায়ে পরিহিত শুভ্র শাড়িটির আঁচলখানা খামচে ধরে দন্ত দ্বারা নিজের অধরে কামড়াতে শুরু করলো ক্রমাগত। প্রণয় অঙ্গনের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ডায়েরি লিখতে ব্যস্ত তাই ধীরপায়ে রোমানার দিকে এগিয়ে গিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস কন্ঠে বললো,
-‘ তোমার দাঁতগুলো আমি তুলে নেবো রোমানা। আমার কাজ এরা কেন করছে বলতে পারো? তোমার কোমল ওষ্ঠজোড়া আমার দাঁত দ্বারাই দংশন হবে এ’কি জানোনা? ‘
#বাইজি_কন্যা
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_সংখ্যা_২

[৪]
বৃহস্পতিবার। তাই সূর্য অস্তমান হতেই জমিদার বাড়ি’র বাইজি গৃহে বাইজিদের নৃত্য পরিশীলন আরম্ভ হলো। শুক্রবার অর্থাৎ আগামীকাল ঢাকা শহর থেকে অলিওর চৌধুরী’র সাহেব বন্ধুগণ আসবে পাঁচফোড়ন গৃহে। তাদের মনোরঞ্জনের জন্য সর্বপ্রকার আয়োজনই সম্পন্ন হয়েছে। এবার শুধু বাইজি গৃহের বাইজিদের প্রস্তুতি চলছে। বলাবাহুল্য অলিওর চৌধুরী’র শহুরে বন্ধুদের আপ্যায়নের ক্ষেত্রে বাইজি গৃহের বাইজিদের আপ্যায়নই মুখ্য ভূমিকা পালন করবে৷ জমিদার অলিওর চৌধুরী’র বিরাট রাজত্বেরই একটি অংশ বাইজি গৃহ। প্রয়াত বিখ্যাত জমিদার আজহার চৌধুরী’র বাইজি গৃহ ছিলো এটি।বংশপরম্পরায় যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। আর এই দায়িত্বটি সুশীলভাবে পালন করছে জমিদার অলিওর চৌধুরী এবং তার জ্যোষ্ঠ পুত্র পল্লব চৌধুরী। ২৩১ শতাংশ অর্থাৎ ৭ বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই জমিদার বাড়িটির ৩ বিঘা জুড়েই “পাঁচফোড়ন গৃহ ” এ গৃহের সম্মুখে রয়েছে রঙ বেরঙের পুষ্পেভরা বিশালাকার বাগান৷ বাগানের মধ্যবরাবর থেকে থেকে সরু ও লম্বা সারি সারিভাবে পথ। যে পথ জমিদার বাড়ির মূল প্রবেশদ্বারে গিয়ে সমাপ্ত হয়েছে। এ বাড়ির পশ্চাতে রয়েছে এক বিঘা জমির ওপর বিশালাকৃতির পুকুর যেটি পাঁচফোড়ন গৃহেরও পশ্চাতে অবস্থিত। পুকুরের ডান পার্শ্বে জমিদার বাড়িরই একাংশ যা “বাইজি গৃহ” হিসেবেই পরিচিত। বাম পার্শ্বে ঘন বিস্তীর্ণ অরণ্য। যে অরণ্য থেকে রোজ প্রাতঃসন্ধ্যায় ভেসে আসে বাঁশির সুর। সেই সুরে মোহিত হয় বাইজি গৃহের এক ছোট্ট কিশোরীর মন! কিন্তু অরণ্যে অবস্থানরত বাঁশিওয়ালাটির সে খবর অজানা। সুরের ছলনায় মোহদান করা কারিগরটি যখন জানবে তার সুরের ঘোরে কারো ছোট্ট হৃদয়ের ছোট্ট প্রাণ পাখিটি উথাল-পাতাল ঢেউয়ের তরে আছড়ে মরছে নিজ অন্তঃকোণে। সে কি অবাক হবে? জানার তীব্র বাসনা নিয়ে ছুটে আসবে বাইজি গৃহে? নাকি বাকি দশটা পুরুষের মতোই সেও আসবে নারী শরীরে মাখামাখি হতে,অসংখ্য নারী গন্ধে মুখরিত হতে!

ছোট্ট কিশোরী’টি বাইজি শারমিন শায়লার কন্যা শাহিনুর শায়লা। বয়স মাত্র পনেরো বছর। বাইজি গৃহের নিয়মানুসারে বয়স ষোল হওয়ার পূর্বে কোনো নারীই বাইজি হতে পারবেনা। তাই শাহিনুর বাইজি গৃহের বাইজি নয় বাইজি কন্যা হিসেবেই পরিচিত।
ঘুঙুরের আওয়াজে মুখরিত চারপাশ। সে আওয়াজে কর্ণপাত করছে না শাহিনুর। করে লাভও নেই। কারণ মনে তীব্র বাসনা থাকা সত্ত্বেও মায়ের কড়াশাসনের জেরে ঐ ঘুঙুরকে নিজ চরণে কখনো ঠাঁই দিতে পারেনি সে। যে সুরের টানে ঘুঙুরের প্রতি তীব্র আকর্ষণ ভুলে যায় শাহিনূর সে সুরের ঘোরেই মোহিত হয়ে চারদেয়ালে আবিষ্ট ঘরটিতে থেকে সে সর্বাঙ্গে,অন্তঃকোণে স্বর্গসুখ অনুভব করছে।

শারমিন বুঝতে পারে ঘুঙুরের প্রতি শাহিনুরের তীব্র আকর্ষণ রয়েছে। ঘুঙুরের আওয়াজে জেগে ওঠে শাহিনুরের সমস্ত ইন্দ্রিয়। তাই এই ঘুঙুর থেকে মেয়ে’কে যথাসম্ভব দূরে রাখার চেষ্টা করে। যদিও অসম্ভব প্রায় বিষয়টিকে সম্ভব করার চেষ্টামাত্র। তবুও শারমিন তার সিদ্ধান্তে অটল। সে বাইজি কিন্তু তার কন্যা’কে কোনক্রমেই বাইজি তকমা পেতে দেবেনা। হয়ে যাক দশটা খুন হোক সে দশটা খুনের আসামী। প্রয়োজনের তাগিদে বরণ করে নেবে মৃত্যু’কে। হয়ে যাবে নিজ কন্যার খুনি তবুও বাইজি’তে রূপান্তরিত হতে দেবেনা শাহিনুরকে। বাইজি গৃহের সর্বোচ্চ গোপন ঘরটিই শাহিনুরের জন্য বরাদ্দ করেছে শারমিন। সে ঘরেই রোজ নির্দিষ্ট সময়ে বন্দী পড়ে থাকে সে। যে ঘরটির গ্রিল বিহীন খোলা জানালা থেকে জমিদার বাড়ির অরণ্য অতি নিকটেই। সে অরণ্য থেকেই রোজ বাঁশির সুর শুনতে পায় শাহিনুর। যে সুর তার কিশোরী মনের ছটফটানিগুলো গাঢ় করে। কিশোরী বয়সের কৌতুহলগুলোকে করে তীব্র। অবুঝ মনে প্রশ্ন জাগিয়ে তুলে,
-‘ কে বাজায় বাঁশি? এতো মধুর সুরে কে ডাকে আমায়? এই সুরে বুক কাঁপে কেন ? আম্মা ঘুঙুরের আওয়াজে আমি নাচতে চাই। কিন্তু বাঁশির সুরে আমার বুক নৃত্য করে এই নৃত্য তুমি ক্যামনে বন্ধ করবা? ‘
[৫]
রাতের খাবার সেরে চা পানে ব্যস্ত প্রণয়, অঙ্গন। বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে আছে প্রণয়,অঙ্গন,রোমানা। তিনজনের মধ্য স্থলে ছোট্ট গোলাকার বেতের টেবিল। প্রণয়, রোমানা পাশাপাশি বসেছে। আর অঙ্গন তাদের সামনে। শহুরে রাত। রাস্তায় মানুষজনে তখনো কিলবিল করছে। চলছে অবিরত বাস,ট্রাকসহ নানান যানবাহন। থেকে থেকে গাড়ির হর্ণের শব্দগুলো বারি খাচ্ছে কানে। মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময় হলেও তীব্র শীত ছুঁতে পারেনি ওদের। একদিকে মানুষের কোলাহল যানবাহনের বিকট শব্দ অপরদিকে বইছে শোঁশোঁ বাতাস। প্রণয়ের একটি হাত নিজ দু’হাতে মুঠোবন্দি করে নিয়ে মাথা নিচু করে আছে রোমানা। কখনো কাউকে ধ্যান করতে দেখলে বোঝা যাবে রোমানার অবস্থা এখন ঠিক কী? দৃষ্টিজোড়া নিবদ্ধ রেখে ওষ্ঠজোড়া চেপে দু’হাতে শক্ত করে প্রণয়ের হাতটি আবদ্ধ করে বসে আছে সে। যেনো সে প্রণয়নের হাত নয় বহু আকাঙ্ক্ষিত কোন জিনিস পেয়ে সার্থকতার এক ধ্যানে মগ্ন হয়ে পড়েছে। হাতে হাত মিলিত হওয়াতে এক উষ্ণ অনুভূতিতে লেপ্টে যাচ্ছে রোমানা। তীব্র উত্তেজনায় কাঁপছে বুক। থেকে থেকে শিউরে ওঠছে দেহের প্রতিটি অঙ্গ। কিন্তু এসব অনুভূতি কি বিপরীত পক্ষের মানুষটাকে আদেও ছুঁয়েছে? নাকি সবটাই একপাক্ষিক!

প্রণয়ের এক হাত যেহেতু রোমানার নিকট বন্দী তাই সে অপরহাতে চা পান করছে। মুখমন্ডলে তার অত্যন্ত গুরুগম্ভীর ভাব। তাদের দেখে অঙ্গনের মুখে দুষ্টু হাসির আভাস পাওয়া গেলেও সে হাসি স্পষ্টতর করলো না৷ কারণ সম্মুখের মানবটি ভীষণ গম্ভীর এবং রসকষহীন আর মানবীটি ভীষণ লাজুক এবং অভিমানী। দুষ্টুমির ছলে যদি এখন সে হেসে ফেলে স্বভাবসুলভ মেয়েটি অভিমানে আরক্ত হয়ে ছলছল নয়নে চেয়ে ঠিক বলবে,
-‘ ইট’স নট ফেয়ার অঙ্গন তুমি আমাকে ক্ষেপাচ্ছো। তুমি জানোনা তোমার ভাইটাকে কতোদিন পর কাছে পেয়েছি? ‘
খালাতো বোনের সঙ্গে মেয়েটি তার বেষ্ট ফ্রেন্ডও। তাই এই মেয়েটির অভিমানে ঘেরা ছলছল নয়নদ্বয় তার পক্ষে সহ্য করা খুব কঠিন।
অঙ্গন বললো,
-‘ ভাই ন’টা বাজে এবার তো ওঠতে হবে। ‘
আতঙ্কিত হয়ে তাকালো রোমানা। প্রণয়ের হাতটি আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। কম্পিত কন্ঠে বললো,
-‘ আমি যাব না। ‘
প্রণয়, অঙ্গন দু’জনই তাকালো রোমানার দিকে। রোমানার করুণ দৃষ্টিজোড়া দেখামাত্রই অঙ্গন বললো,
-‘ ভাই আজ বাড়ি চলো কালতো তোমার ছুটিই। ‘
এ’কথায় কোন জবাব দিলো না প্রণয়। রোমানার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
-‘ তুই গিয়ে গাড়িতে বোস আমি ওকে পাঠাচ্ছি। ‘
নিচে চলে গেলো অঙ্গন বারান্দার রেলিং ঘেষে দাঁড়ালো প্রণয়। দু-হাত পকেটে গুঁজে গম্ভীর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে সে। তার শানিত দৃষ্টিজোড়া প্রগাঢ় ভাবে বুলাতে থাকলো রোমানার সর্বাঙ্গে। তীব্র লজ্জায় বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো রোমানা। প্রণয়ের দৃষ্টিতে নিজ দৃষ্টিজোড়া স্থির রেখে বললো,
-‘ একটুও কি মায়া হয় না তোমার? একটুও কি ইচ্ছে করেনা এই অসহায়িনীকে বুকে জায়গা দিতে? ‘
স্মিথ হাসলো প্রণয় তার দৃঢ় চরণদ্বয় গৃহ তলে ফেলে দুকদম এগুলো। রোমানার একটি হাত ধরে নিজ ওষ্ঠে ছুঁইয়ে বললো,
-‘ এই ওষ্ঠজোড়া তোমারই। ‘
তারপর ওষ্ঠ থেকে রোমানার হাতটি ধীরে ধীরে নিজের বক্ষে চেপে ধরলো বললো,
-‘ এই বুকটাও তোমার সময় হলে ঠিক জায়গা পাবে।’
তারপর রোমানার হাতের আঙুলের ফাঁকে আঙুল গুঁজে দিয়ে ললাটে ললাট ছুঁইয়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বললো,
-‘ এই কপাল, এই ওষ্ঠ,এই বুক, এই হাত সবই তো তোমার রোমানা। ‘
আবেশে আচ্ছন্ন হয়ে মিহি কন্ঠে প্রশ্ন করলো রোমানা,
-‘ এসব নয় প্রণয় তোমার মনটুকুই যথেষ্ট আমার জন্য। তোমার মনটুকু শুধু আমার জন্য বরাদ্দ থাকলেই চলবে। ‘
আচমকাই রোমানার মুখশ্রীতে কড়া দৃষ্টি ফেললো প্রণয়। আচমকা হাতটিও ছেড়ে দিলো। ভ্রুদ্বয় কুঁচকে ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
-‘ এসব প্রসাধনী কেন মেখেছো রোমানা? প্রকৃতগতভাবে তুমি যা আছো তাই যথেষ্ট এসবের কি প্রয়োজন! ‘
-‘ খালামুনিই তো সাজিয়ে দিয়েছে আমাকে তুমি কেন রাগ করছো আমায় কি ভালো লাগছে না? ‘
-‘ একদমই না নকল জিনিসের প্রতি আমার কোন আগ্রহ নেই রোমানা। তোমার গায়ের চাপা রঙ নিয়ে যদি আমি কমফোর্ট ফিল করি তুমি কেন করবেনা? ‘
চোয়ালজোড়া শক্ত হয়ে ওঠলো প্রণয়ের তীব্র ক্ষোভ নিয়ে সরে গেলো রোমানার সামনে থেকে। আতঙ্কিত হয়ে চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো রোমানার। প্রণয় রেগে গেছে, তার প্রতি রেগে গেছে। কেন সে খালামুনির কথায় এতো সাজলো? কেন মাখতে গেলো প্রসাধনীগুলো? এখন কি করে এই কঠিন মানুষটাকে নিয়ন্ত্রণে আনবে সে?

রোমানার ধারণা প্রণয় তার সাজগোজের জন্য রেগে গেছে। প্রণয় তাকে বোঝালোও তাই৷ কিন্তু প্রণয় যদি এটার জন্যই এভাবে রেগে গিয়ে থাকে তাহলে পূর্বেই কেন রাগলো না? নাকি পূর্বে খেয়াল করেনি। এতো সময় পর খেয়াল হয়েছে বলে এভাবে রেগে গিয়ে ছুঁড়ে ফেললো তাকে? নাকি সাংঘাতিক কিছু লুকাতেই এই প্রয়াস!

। ভালোবাসা নিরন্তর। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here