#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ০৬
_________________
টপ টপ শব্দে পানি পড়ছে ঝর্ণার,আর সেই পানিতে ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে আদ্রিয়ান। চোখে মুখে রাগ বিদ্যমান তার। আদ্রিয়ানের বিশ্বাসই হচ্ছে না একটা মেয়ের জন্য তাকে এই সময়ে গোসল করতে হচ্ছে। আহির ওপর ভিষণ ভাবে রেগে আছে আদ্রিয়ান। নেক্সট টাইম দেখা হলে থাপ্পড়ই না দিয়ে বসে সে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে জোরে নিশ্বাস ফেললো আদ্রিয়ান।’
টানা একঘন্টা সাওয়ার নিয়ে টাওয়াল পড়ে বের হলো আদ্রিয়ান। তারপর ব্লাক রঙের পাজামা সাথে সাদা রঙের ফুলহাতার টিশার্ট পড়ে নিজের চুলগুলো মুছে চার সেকেন্ড আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের রুম থেকে বের হলো আদ্রিয়ান। নিচে নামতেই সোফার ওপর নিলয়কে বসে থাকতে দেখে বললো আদ্রিয়ান,
‘ তুই এখনো যাস নি?’
‘ না তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম,অফিসের ব্যাপারে কিছু কথা ছিল?’
‘ ওহ হুম বল।’
এতটুকু বলে আদ্রিয়ান গিয়ে বসলো নিলয়ের সোজাসুজি সোফাটায়। তারপর নিলয় কিছু পেপার দেখিয়ে কথা বলতে লাগলো আদ্রিয়ানের সাথে,আর আদ্রিয়ান চুপচাপ মনোযোগ সহকারে শুনতে লাগলো সব। হঠাৎই নিলয় বলে উঠল,
‘ তাহলে কালই নিউজ পেপারে আর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনটা দিয়ে দেই, আদ্রিয়ান?’
উওরে আদ্রিয়ানও কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
‘ হুম।’
‘ ওকে তাহলে আমি যাচ্ছি কাল অফিসে কথা হবে।’
‘ হুম।’
উওরে নিলয় আর কিছু না বলে চলে গেল তার গন্তব্যে। আর আদ্রিয়ান সেও কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থেকে টেলিফোনটা হাতে নিয়ে খাবার অর্ডার করে উঠে দাঁড়ালো হঠাৎই তার চোখ গেল নিলয়ের রাখা সেই গোলাপি খামের চিঠিটার দিকে। তবে আপাতত বেশি কিছু না ভেবে চলে গেল সে উপরে। এই মুহূর্তে আহির কথা মাথায় আসতেই রাগে গা জ্বলছে তার।’
_______
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বাসা থেকে বের হলো আহি। এমন সময় উপরের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল নীরব আহিকে দেখেই বললো সে,
‘ ভার্সিটি যাচ্ছিস?’
আচমকা নীরবের কন্ঠ কানে আসতেই হাল্কা চমকে উঠলো আহি। পিছন ফিরে নীরবে দেখেই এক দফা ক্রাশ খেলো সে। আকাশী-সাদা মিশ্রিত শার্ট পড়েছে নীরব, সাথে সাদা রঙের জিন্স, হাতে ব্লাক ওয়াচ, চুলগুলো বরাবরের মতোই সুন্দর করে সাজানো সাথে গোল ফ্রেমের চশমা এক কথায় অসাধারণ লাগছে নীরবকে। আহিকে নিজের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর মাথায় একটা চাটি মেরে বললো নীরব,
‘ কোথায় হারিয়ে গেলি তুই?’
নীরবের কাজে হকচকিয়ে উঠল আহি,তক্ষৎনাত নিজেকে সামলে নিয়ে বললো সে,
‘ হ্যাঁ না মানে হুম ভার্সিটি যাচ্ছি আর তুমি ভাইয়া?’
‘ হুম আমিও যাবো তবে এখন নয় আমার একটা কাজ আছে সেটা সেরে তারপর?’
নীরবের কথা শুনে কিছুটা মন খারাপ নিয়ে বললো আহি,
‘ ওহ!’
‘ হুম তাড়াতাড়ি চল তা না হলে লেট হয়ে যাবি তো?’
‘ হুম।’
বলেই চলে গেল আহি।
‘ ইস চিঠিটা ড্রয়ারে রেখে এসেছি তা না হলে এখন দেওয়া যেত না ধুর ভালো লাগে না।’
বলতে বলতে এগিয়ে গেল আহি। আর নীবর কিছুক্ষন আহির যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে আহির যাওয়ার উল্টো পথ দিয়ে হাঁটা শুরু করলো।’
____
বাস স্টপের সামনে সাদা সেলোয়ার-কামিজ,খোলা চুলে সাথে চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে দাঁড়িয়ে আছে অথৈ। নতুন শহর,নতুন জায়গা তারপরও বিন্দুমাত্র ভয় কাজ করছে না তার ভিতর। চুপচাপ বুকে একটা বই লুকিয়ে রেখে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে সে বাসের জন্য। হঠাৎই একটা বাস আসায় আশেপাশের সবাইকে আগে উঠতে দিয়ে তারপর উঠলো অথৈ। কারন ভিড়ের মধ্যে তারাহুড়ো করে বাসে উঠতে একদম পছন্দ করে না অথৈ লাগলে দাঁড়িয়ে যাবে তারপরও সবার মাঝ দিয়ে বাসে উঠবে না সে। নিজের চশমাটা ঠিক করে ধীরে সুস্থে বাসে উঠলো অথৈ। সে উঠতেই বাস চালক বাস স্টার্ট দিয়ে চলতে শুরু করলো। হঠাৎই ভিতরে ঢুকতে গিয়েই কিছু একটা দেখে বাহিরে তাকালো অথৈই। বাহিরে তাকাতেই দেখলো সে একটা ছেলে বাসের পিছনে দৌড়াচ্ছে আর বাস থামাতে বলছে।’
.
এদিকে নিজের কাজ শেষ করে বাস স্টপ পর্যন্ত আসতে একটু লেট হয় নীরবের। তাই বাস ধরার জন্য দৌড়াচ্ছে নীরব। সে দেখেছে একটা মেয়ে তাকে দৌড়াতে দেখেছে আর এটাও আন্দাজ করতে পারছে যে সে যত জোরে চেঁচিয়েছে সেটাও মেয়েটা শুনেছে। নীরব ভেবেছিল হয়তো মেয়েটা তাকে সেই শারুক খান আর দিপাকা পাদুকারের চেন্না এক্সপ্রেসের মুভিটার মতো হাত বারিয়ে সাহায্য করবে কিন্তু তার সেই ভাবনাকে ভুল প্রমানিত করে মেয়েটা একপলক তার দিকে তাকিয়ে আবার ভিতরে ঢুকে গেল। সাথে নীরবের আশার আলো নিভে গেল হয়তো আজ তার ভার্সিটি যেতে সত্যি সত্যি লেট হবে খুব। ভেবেই বাসের পিছনে আর না দৌড়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সে আর তাকিয়ে রইলো তাকে নিরাশ করে চলে যাওয়া বাসের দিকে। হঠাৎই নীরবকে অবাক করে দিয়ে বাসটা দাঁড়িয়ে পড়লো তাঁর থেকে কিছুটা দূরে। বাসটাকে থামতে দেখে নীরবের আর বুঝতে বাকি রইলো না ওই মেয়েটাই গাড়িটা থামিয়েছে। নীরব প্রচন্ড খুশি হয়ে দৌড়ে গিয়ে উঠলো বাসে। যাক মেয়েটা মুভির মতো না হলেও তার স্ট্যাইলে হেল্প করলো।’
নীরব বাসে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো ঠিক অথৈর পিছনে। কারন সব সিট ভর্তি করে মানুষ বসা। অথৈ নীরব দুজন দুজনের দিকে একপলক তাকিয়ে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো দুজন দু’দিক ফিরে।’
____
তুমুল বেগে এক্সাইটেড হয়ে করিডোর থেকে দৌড়ে নিজের ক্লাসের দিকে যেতে গিয়ে আচমকা একটা ছেলের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যায় রিনি। ঘটনাক্রমে সামনের ছেলেটি কিছু করার বা বোঝার আগেই সবটা হয়ে যায়। হুট করে এমন কিছু হওয়ার জন্য মটেও প্রস্তুত ছিল না রিনি। প্রচন্ড ব্যাথা আর রাগ নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো সে,
‘ চোখে দেখেন না নাকি এইভাবে কেউ হুট করে সামনে চলে আসে নাকি?’
সামনের মেয়েটির কথা শুনে শুভ বেশ অবাক হয়ে বললো,
‘ আশ্চর্য! আমি কি করলাম? আপনি নিজেই তো দৌড়ে এসে পড়লেন আমার সামনে?’
ছেলেটির কথা শুনে রেগে আগুন হয়ে বললো রিনি,
‘ আপনি কি করলেন মানে?’ আপনার জন্যই তো পড়ে গেলাম আমি?’
‘ আমার জন্য পড়েন নি আপু?’
শুভর এবারের কথা শুনে রাগে আরো আগুণ রিনি,প্রচন্ড রেগে শুভর কলার ধরে বললো সে,
‘ ওই মিয়া আমায় কোন এনগেল থেকে আপনার আপু মনে হয় হুহ?’
হুট করে রিনির এমন কান্ডে এক প্রকার চমকে আর ঘাবড়ে গেল শুভ। কিছুটা ঘাবড়ানো মুখ নিয়ে বললো সে,
‘ আরে আরে আপু এটা কি করছেন?’
‘ আবার আপু,তোকে তো আমি এমনিতেই পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাইছি তারপর আবার আপু?’
বলেই আরো শক্ত করে কলার চেপে ধরলো রিনি শুভর। রিনির কাজে তো চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম শুভর। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হয় আহি, রিনিকে দেখে আর ওর কান্ড দেখে এগিয়ে এসে বললো আহি,
‘ আরে আরে এটা তুই কি করছিস রিনি?’
এতটুকু বলে তাকালো আহি সামনের ছেলেটির দিকে, ছেলেটির মুখ দেখেই বললো আহি,
‘ আরে শুভ তুমি এখানে?’
আহির কথা শুনে রিনি অবাক হয়ে বললো,
‘ তুই এই আপু পাগলকে চিনিস আহি?’
‘ কি আপু পাগল মানে?’
আহির কথা শুনে রিনি কিছু বলার আগেই শুভ বলে উঠল,
‘ দেখ না আপু হুট করেই কেমন ব্যবহার করছে?’ নিজেই এসে আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল আর এখন আমার সাথেই বাজে ব্যবহার করছে এই আপু।’
শুভর কথা শুনে শুভর কলার ছেড়ে দিয়ে বললো রিনি,
‘ ওকে আপু বলতে বারন কর আহি তা না হলে আমি যে কি করবো তার ঠিক নেই?’
এতক্ষণ পর আহি বুঝতে পারলো রিনি এত ভয়ংকর ভাবে রেগে কেন গেল। আহি রিনিকে টেনে এক সাইডে এনে বললো,
‘ শান্ত হ এটা ভার্সিটি সবাই কি ভাবছে বলতো?’
‘ তুই আগে ওই পাগলটাকে আমার সামনে থেকে সরা?’
‘ আচ্ছা দেখছি আমি তুই এখানেই দাঁড়া।’
উওরে কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়ালো রিনি। আর আহি শুভর দিকে তাকিয়ে এগিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
‘ ওর কাজের জন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি তোমায় তো কালকেই বলে ছিলাম।’
‘ হুম বুঝতে পারছি আপু,আর ওই মেয়েটার জন্য তোমায় ক্ষমা চাইতে হবে না,এমনিতেও আমি যে কাজের জন্য এসেছিলাম সেটা শেষ তাই এখন চলে যাচ্ছিলাম আর তখনই।’
‘ ওহ।’
‘ হুম ওকে বাই পড়ে কথা হবে।’
‘ঠিক আছে।’
উওরে শুভ আর কিছু না বলে একপলক রিনির দিকে তাকিয়ে চলে গেল। বাবা গো বাবা সামান্য ‘আপু’ ডাকায় কেউ এতটা রেগে যায় যদি ‘আন্টি’ ডাকতাম তাহলে তো মনে হয় খুনই করে ফেললো আমায়।– ভেবেই চলে গেল শুভ।’
আর এদিকে কিছুটা বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো আহি রিনিকে,
‘ এটা তুই কি করলি?’
‘ কি করেছি মানে যা করেছি বেশ করেছি।’
এতটুকু বলে খুব এক্সাইটেড আর উৎসাহের সাথে বললো রিনি,
‘ এখন ওসব বাদ দে আগে বল নীরবভাইয়াকে বলেছিলি? কি বললো সে তোর চিঠি পড়ে। এটা জানার জন্যই তো এক্সাইটেড হয়ে আসতে গিয়ে ওই খাম্বাটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম। যাগ গে আগে বলতো বলতে পেরেছিস?
উওরে আহি মাথা নিচু করে মাথা নাড়িয়ে বললো,
‘না’
আহির কথা শুনে রিনি চেঁচিয়ে বললো,
‘ কালও পারিস নি?’
উওরে মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বোধক মাথা নাড়ালো আহি। আর রিনি আহির মাথা নাড়ানো দেখে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো, যার জন্য সে তার বোনের বউভাতে পোলাও না খেয়ে শুধু মাংস খেয়ে চলে আসলো সেটাই হলো না।’
রিনির রিয়েকশন দেখে আহি কি বলবে বুঝতে পারছে না তাই সেও চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।’
_____
আচমকা বাস ব্রেক কষতেই পড়ে যেতে নিলো অথৈ সাথে সাথে নীরব তাকে ধরে ফেললো। কিছুক্ষনের জন্য হলেও কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিল অথৈ। নীরব অথৈর দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আর ইউ অলরাইট?’
উওরে অথৈ চটজলদি নীরবের কাছ থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে চোখের চশমাটা ঠিক করে বললো,
‘ হুম থ্যাংক ইউ।’
বলেই আর দু’মিনিট দেরি না করে চটজলদি বাস থেকে নেমে পড়লো সে। আর নীরব জাস্ট অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অথৈর দিকে হঠাৎই নীরবের মনে পড়লো তারও তো এখানেই নামতে হবে ভেবেই চটজলদি নেমে পড়লো সে।’….
!
!
!#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ০৭
_________________
প্রচন্ড রাগ নিয়ে ভার্সিটির মাঠ পেরিয়ে এগোচ্ছে রিনি,আর ওর রাগ ভাঙানোর জন্য ওর পিছনে দৌড়াচ্ছে আহি। আহি দ্রুত গতিতে দৌড়ে এসে রিনির পিছনে হাঁটতে হাঁটতে বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ আরে রাগ করিস না বোইন, দাঁড়া আমার জন্য?’
আহির কথা শুনে প্রচন্ড রাগ নিয়ে বললো রিনি,
‘ আজ আর তোর কোনো কথাই শুনবো না। আজ আর এক্ষুনি গিয়ে আমি নীরব ভাইয়াকে সব বলবো।’
‘ প্লিজ বোন এমন করিস না।’
‘ তোর কোনো কথাই শুনছি না আমি।’
বলেই রিনি এগিয়ে গেল নীরবের ক্লাস রুমের দিকে। কিন্তু সেখানে নীরবকে না দেখে কিছুটা নিরাশ হয়ে বেরিয়ে পড়লো সে। আর আহিও নিরুপায় হয়ে রিনির সামনে এসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ দেখ রাগ করিস না আর নীরব ভাইয়াকেও কিছু বলিস না যা বলার আমি বলবো।’
‘ কবে বলবি তুই?’
উওরে কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো আহি,
‘ হুম বলবো বলবো একটু সময় দে তারপর।’
‘ প্রায় ১২ বছর হয়ে গেছে আহি এখনো তোর সময় হয় নি?’
উওরে হাল্কা হেঁসে বললো আহি,
‘ এইবার আর মিস হবে না দেখিস?’
উওরে রিনি কিছু না বলে মুখ গোমড়া করে এগিয়ে চললো। হঠাৎই ভার্সিটির গেটের সামনে চোখ গেল রিনির। একজন চেনা মানুষের মুখ দেখতেই খুশি হয়ে বললো সে,
‘ অথৈ।’
বলেই এগিয়ে গেল সে অথৈর কাছে। ‘অথৈ’ নামটা এর আগেও শুনেছে আহি রিনির মুখে কিন্তু হুট করে এখানে এই নামটা কেন ভেবেই রিনি যাওয়ার পানে তাকালো সে। সামনের একটা মেয়েকে রিনি জড়িয়ে ধরেছে এটা দেখে আহির আর বুঝতে বাকি রইলো না এই অথৈই সেই অথৈ যার কথা রিনি তাকে প্রায় বলে। অথৈ হলো রিনির ফ্রেন্ড, তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে বসে পরিচয় অথৈর সাথে রিনির। আহি চুপচাপ ওদের দিকে এগিয়ে গেল। আহিকে দেখেই রিনি খুশি হয়ে বললো আহিকে,
‘ মিট মাই ফ্রেন্ড না শুধু ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে তোর মতোই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অথৈ!’
রিনির কথা শুনে অথৈও মুচকি হেঁসে নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে বললো আহিকে,
‘ হাই আহি,তোমার কথা রিনির মুখে অনেক শুনেছি।’
অথৈর কথা শুনে আহি হুট করেই অথৈর গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ শুনেছো যখন তাহলে আবার তুমি কিসের উই আর বেস্ট ফ্রেন্ড ওকে। যা কথা হবে সব তুই করে?’
আহির কাজ দেখে অবাকের চেয়েও খুশি বেশি হয়েছে অথৈ সে ভাবতেই পারে নি এত কুইকলি আহি তাকে বেস্ট ফ্রেন্ডের জায়গা দিয়ে দিবে। অথৈই খুশি হয়ে বললো,
‘ থ্যাংক ইউ!’
‘ বন্ধুত্বে নো থ্যাংকস নো সরি।’
‘ হুম।’
‘ তা তুই কোনো গ্রুপের কোন ইয়ারে?’
আহির কথা শুনে অথৈ কিছু বলার আগেই রিনি বলে উঠল,
‘ ইয়ার তো আমাদের সাথেই কিন্তু গ্রুপ ভিন্ন সাইন্সের স্টুডেন্ট,বিলিয়ান্ট ছাত্রী কিনা?’
রিনির কথা শুনে আহি অবাক হয়ে বললো,
‘ ওহ!’
‘ হুম সবসময় টপ হয়ে এসেছে বুঝলি একদম নীরব ভাইয়ার মতো?’
রিনির এবারের কথা শুনে আহি আরো অবাক হয়ে বললো,
‘ তাই নাকি।’
আহির কথা শুনে অথৈই তার চোখের চশমাটা ঠিক করে বললো,
‘ আরে না ও একটু বেশি বেশি বলছে।’
‘ একটু বেশি বলছি না!’
এমন সময়ই সেখানে হেঁটে এগিয়ে আসছিল নীরব। আহি নীরবকে দেখে দৌড়ে এগিয়ে গেল কথা বলতে। আহিকে যেতে দেখে অথৈ কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
‘ ও কোথায় গেল?’
‘ ওই যে নীরব ভাইয়ার কাছে।’
‘ নীরব কে?’
‘ ওই যে পিছনে তাকিয়ে দেখ।’
উওরে অথৈও আর কিছু না বলে পিছন ঘুরে তাকালো। বাসের সেই ছেলেটাকে দেখে অবাক হয়ে বললো সে,
‘ উনি।’
‘ হুম উনিই আহির জীবনের সবচেয়ে স্পেশাল পারসোন ওই যে তোকে বলেছিলাম না।’
‘ ওহ এই তাহলে সেই নীরব যাকে আহি সেই ছোট্ট বেলা থেকে ভালোবাসে।’
‘ হুম,কিন্তু বুঝলি বেচারি আজও বলতে পারি নি?’
এবার যেন অথৈ অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে, চোখ বড় বড় করে বললো সে,
‘ এখনও বলতে পারে নি?’
উওরে রিনি নিরাশ হয়ে বললো,
‘ না।’
উওরে অথৈ আর কিছু বললো না সে আর রিনি দুজনেই অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আহি আর নীরবের দিকে। হঠাৎই অথৈর ফোনটা বেজে উঠতে অথৈ উল্টো দিক ফিরে ফোনটা তুললো।’
আর এদিক আহির সাথে দু’মিনিট কথা বলে নীরবও আর না দাঁড়িয়ে চলে গেল নিজের ক্লাসের দিকে। যাওয়ার সময় রিনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে ছিল সে তবে অথৈকে ওতোটা খেয়াল করে নি নীরব।’
অথৈর কথা বলা শেষ হতে না হতেই হাজির আহি। কিছুটা খুশি হয়ে বললো সে,
‘ এখন তবে ক্লাসে যাওয়া যাক বেস্টুরা?’
আহির খুশি দেখে অথৈ আর রিনি দুজনেই বুকে হাত বেঁধে ডানে বামে মাথা নাড়ালো। যার অর্থ তোর ধারা কিচ্ছু হবে না। এদের রিয়াকশনটা বুঝতে পেরে হাল্কা হাঁসলো আহি। তবে কিছু বললো না।’
_____
অফিসে নিজের রুমে থাইগ্রাস সমৃদ্ধ দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান। মনটা কিছুটা খারাপ, কাল সারারাত ঘুম হয় নি তাঁর। সে বুঝতে পারছে না তার এই রাতের অসুখ কবে ঠিক হবে। কবে সে নিশ্চিতে ঘুমাতে পারবে। কেন যে সেদিন সে তার মা বাবার কথা শুনলো না ভাবতেই দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসছে তাঁর। এমন সময় আদ্রিয়ানের রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো নিলয় আদ্রিয়ানকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গেল সে আদ্রিয়ানের কাছে তারপর ওর টেবিলের উপর মোবাইল আর একটা নিউজপেপার রেখে বললো,
‘ অনলাইন আর নিউজপেপার দুটোতেই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়ে গেছে আদ্রিয়ান কালকেই কিন্তু ইন্টারভিউ নিতে হবে?’
উওরে তেমন কিছু বললো না আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানকে চুপ থাকতে দেখে নিলয় আদ্রিয়ানের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,
‘ কি হয়েছে?’
উওরে আদ্রিয়ান বাহিরের দিকে তাকিয়েই বললো,
‘ না তেমন কিছু নয়।’
‘ কাল রাতেও ঘুম হয় নি তাই না?’
উওরে ‘না’ বোধক মাথায় নাড়ায় আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের মাথা নাড়ানো দেখে বললো নিলয়,
‘ টেনশন নিস না দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।’
উওরে আর কিছু বললো না আদ্রিয়ান। এভাবে কিছুক্ষন দুজন চুপ করে থাকার পর হঠাৎই আদ্রিয়ান বললো,
‘ তারপর বিজ্ঞাপন দিয়েছিলি?’
‘ হুম এই দেখ ( মোবাইল আর নিউজপেপারটা দেখিয়ে)
আদ্রিয়ানও বেশি কিছু না ভেবে হেঁটে গিয়ে বসলো চেয়ারের। তারপর টেবিলের উপর থেকে নিউজপেপার আর মোবাইল দুটোতেই একবার চোখ বুলালো সে।’
_____
ক্যান্টিনে বসে খিলছে আহি। আর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে রিনি আর অথৈ। অথৈ আহির চোখের দিকে তাকিয়ে বিষন্নতা ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ লাইক সিরিয়াসলি আহি, ১২ বছরের ভালোবাসার কথা এখনো বলতে পারিস নি তুই?’
উওরে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো আহি,
‘ না, কি করবো বলতো যখনই বলতে যাই তখনই একটা না একটা প্রবলেম চলে আসে।
‘ এত চিঠি লেখার কি আছে ফট করে যাবি চট করে বলে আসবি ব্যস তাইলেই তো হয়ে যায়।’
‘ বলাটা অনেক সোজা বুঝলি বাট করাটা অনেক কঠিন।’
বলেই ক্যান্টিনের দরজার সামনে তাকাতেই পিন্সিপালকে দেখেই মুখে খাবার নিয়েই ভয়ে টেবিলের তলে লুকালো আহি। আহির কাজ দেখে রিনি অবাক না হলেও অথৈ অবাক হয়ে বললো,
‘ আরে আরে এটা কি করছিস?’
রিনির কথা শুনে আহি টেবিলের নিচ থেকে বললো,
‘ হুস কথা বলিস না আর পিন্সিপাল যদি আমার কথা জিজ্ঞেস করে তবে বলবি আমি আজ ভার্সিটি আসি নি!’
‘ কি?’
এরই মধ্যে ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো পিন্সিপাল। পিন্সিপালকে দেখেই রিনি আর অথৈই দুজনেই সোজা হয়ে দাঁড়ালো তারপর বললো,
‘ আসসালামু আলাইকুম স্যার।’
‘ ওলাইকুম আসসালাম, রিনি আহি নেই এখানে?’
পিন্সিপালের কথা শুনে রিনি বলে উঠল,
‘ না স্যার আজকে ও আসে নি।’
‘ ওহ আহি আসলে ওকে আমার সাথে দেখা করতে বলো?’
‘ ওকে স্যার।’
‘ হুম।’
বলে এদিক ওদিকে একবার চোখ বুলিয়ে চলে গেল পিন্সিপাল। পিন্সিপাল যেতেই বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস ফেলে টেবিলের নিচ থেকে বের হলো আহি। আহি উঠতেই অথৈ অবাক হয়ে বললো,
‘ তুই পিন্সিপালকে দেখে লুকালি কেন?’
অথৈর কথার উওর দেওয়ার আগেই রিনি বলে উঠল,
‘ তুই এখনো পিন্সিপালের বেতন দিস নি, আহি?’
উওরে মাথা নাড়ায় আহি। আহির মাথা নাড়ানো দেখে অথৈ বলে উঠল,
‘ কেন?’
উওরে মাথা নিচু করে হাল্কা মন খারাপ নিয়ে বললো,
‘ ফেমেলি প্রবলেম দোস্ত।’
আহির কথা শুনে রিনি তার ব্যাগ থেকে কিছু টাকা দিয়ে বললো,
‘ নে এই টাকাটা গিয়ে পিন্সিপালকে দিয়ে আয়।’
রিনির হাতের টাকা দেখে বললো আহি,
‘ না বার বার তোর কাছ থেকে টাকা নিতে ভালো লাগে না আমার।’
‘ তুই আমায় পড়ে দিয়েছিস।’
‘ না তুই পড়ে নিতে চাস না। তাই কিছুদিন যাবৎই ভাবছি একটা পার্ট টাইম জব করবো কেমন হবে বল তো?’
‘ হুম খারাপ হবে না। (রিনি)
ফেসবুকে নিউজফিড ঘুরছিল অথৈ হঠাৎই একটা কোম্পানিতে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ নেওয়া হবে এমন পোস্ট দেখে বলে উঠল সে,
‘ এখানে এপ্লাই করতে পারিস আহি,দেখে তো ভালো কোম্পানি বলেই মনে হচ্ছে।’
‘ এটা তো অনেক বড় কোম্পানি, আমার তো পার্ট টাইম অফারের জব লাগবে।’
‘ এখানে অনেক পদের লোক নিয়োগ নিবে ফুল টাইম পার্ট টাইম ট্রাই করে দেখতে পারিস।’
‘ বলছিস।’
‘ হুম।’
_______
পরেরদিন পার্ট টাইম জবের ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য সুন্দর মতো সেজেগুজে তৈরি হচ্ছে আহি। জবটা পেয়ে গেলে তার অনেক লাভ হবে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আহি। কাজটা পেয়ে গেলে নিজের খরচের পাশাপাশি পরিবারেরও হেল্প করতে পারবে সে। এরকম নানান চিন্তা ভাবনা করতে করতে বের হলো আহি তারপর রিকশা করে চললো সে, ইন্টারভিউটা দিয়েই ওখান থেকে ভার্সিটি যাবে আহি।’
বেশ কিছুক্ষন পর একটা বড় কোম্পানির সামনে এসে দাঁড়ালো আহি। বুকের ভিতর দক দক করছে তার, শুরুতেই এত বড় কোম্পানি দেখে হাল্কা ভয় হলো আহির। কিছুক্ষন থেমে আহি জোরে শ্বাস ফেলে ভিতরে চলে গেল।
কোম্পানির ভিতরে চুপচাপ একটা চেয়ারে বসে আছে আহি। হঠাৎই তার নাম ধরে ডাকলো একটি মেয়ে। আহিও উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
‘ আমিই আহি।’
‘ নেক্সট আপনি যাবেন?’
‘ ওকে।’
কিছুক্ষনের মধ্যে মেয়েটি আহিকে চোখের ইশারায় ভিতরে যেতে বললো আহিও আর বেশি না ভেবে কাগজপত্র নিয়ে ভিতরে চলে গেল। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে বললো আহি,
‘ মে আই কাম ইন।’
‘ কাম।’
‘কাম’ কথাটা শুনতেই বুকে শ্বাস ফেলে ভিতরে ঢুকে বললো আহি,
‘ আসসালামু আলাইকুম স্যা…
আর কিছু বলার আগেই সামনের ব্যক্তির মুখটা দেখতেই ভয়ে ঢোক গিললো আহি। মুখ থেকে অটোমেটিক বেরিয়ে আসলো তার,
‘ আপনি?’
!
!
!
!
!
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে,আজকের পার্টটা হয়তো একটু অগোছালো হয়েছে এর জন্য সরি গাইস]
#TanjiL_Mim♥️
!
!
#চলবে…..
[