#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ০৮
_________________
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আহি আদ্রিয়ানের দিকে। একেই বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। কিন্তু এখন তো সকাল? কি দরকার ছিল এই অফিসেই ইন্টারভিউ দিতে আসতে। ধুর আমার রাশিটাই খারাপ, বার বার এই রাগী হনুমানের সামনেই আসতে হয়।’
আহি সরু চোখে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে পুরো রাগী চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে যেন চোখ দিয়েই খিলে ফেলবে তাকে। আহি এবার তাকালো নিলয়ের দিকে সেও তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। কি জানি কি হয়?’ আহি তার ভয়ার্ত চেহারা নিয়েই যে পথ দিয়ে এসেছিল সেই পথ দিয়েই আবার যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। অন্যদিকে আদ্রিয়ান আহির দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠ নিয়ে ধমক দিয়ে বললো,
‘ তোমার সাহস কি করে হলো এখানে আসার,আমি তোমাকে আমার সামনে আসতে বারন করেছিলাম না?’
আদ্রিয়ানের ধমক শুনে পুরো কেঁপে উঠল আহি!’ আশ্চর্য সে কি করে জানতো এটা ওনার কোম্পানি। আর এতো রেগে যাওয়ার বা কি আছে? বড্ড বারাবারি হঠাৎই আহির মনে পড়লো সেদিন রাতের কথা যখন সে গাড়ি থেকে বেরিয়ে বলেছি আদ্রিয়ানকে ‘লাল চোখওয়ালা হনুমান কোথাকার?’– কথাটা মাথায় আসতেই আরো ভয় হলো আহির। তার ওপর রেগে থাকার যথেষ্ট কারন আছে ভেবেই শুকনো ঢোক গিললো সে। আহিকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরো রেগে বললো আদ্রিয়ান,
‘ এনসার মি, ইডিয়েট?’
আদ্রিয়ানের এবারের ধমক শুনে আহি নীরব গলায় বললো,
‘ এত রেগে যাচ্ছেন কেন?’ আমি এখানে ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলাম কিন্তু ভাবি নি আপনিই বস হবেন?’
‘ কিসের ইন্টারভিউ,গেট আউট অফ মাই অফিস।’
আদ্রিয়ানকে এতো রাগ করতে দেখে নিলয় এগিয়ে গেল আদ্রিয়ান কাছে তারপর বললো,
‘ কুল ডাউন আদ্রিয়ান, এত রাগ করছিস কেন ও তো শুধু ইন্টারভিউই দিতে এসেছে?’
‘ কুল ডাউন কিসের কুল ডাউন ওকে এক্ষুনি আমার সামনে থেকে যেতে বল, নিলয়?’
‘ একটু শান্ত হ এমন করিস না।’
‘ তুই ভুলে গেছিস সেদিন রাতে ও আমায় কি বলেছিল ওকে তাড়াতাড়ি চলে যেতে বল, না হলে আমি যে কি করে বসবো ঠিক নেই।’
আদ্রিয়ানের কথার উওরে আর কিছু বলতে পারলো না নিলয়। সরু চোখে তাকালো সে আহির দিকে। নিলয়কে নিজের দিকে তাকাতে দেখে আহির আর বুঝতে বাকি রইলো না নিলয় কী বলতে চাইছে তাকে। এমনিতেও সে আগেই বুঝতে পেরেছিল এ জবটা তাঁর হবে না। তাই একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
‘ হ্যাঁ ঠিক আছে ঠিক আছে। আপনার অফিসে জব আমি এমনিতেও করতাম না হুহ,এই রকম রাগী লাল হনুমানের সাথে কাজ কেই বা করতো?’…
বলেই ঠোঁটে কামড় দিল আহি। আয় হায় এটা কি বলে ফেললো সে। আহির কথা শুনে নিলয়ের তো অবস্থা খারাপ যাও একটু বাঁচাবে ভেবেছিলো তাও আহির এবারের কথা শুনে হয়ে গেল। নিলয় আহির সামনে এগিয়ে এসে নিচু স্বরে বলে উঠল,
‘ আর ইউ ক্রেজি আহি এটা তুমি কি বলে ফেললে তোমায় কে বাঁচাবে এখন?’
‘ সরি ভাইয়া মুখ ফসকে বলে ফেলেছি, এখন আমি কি..
আহি আর কিছু বলার আগেই বিকট এক শব্দ হলো। বিকট শব্দ কানে আসতেই আহি নিলয় দুজনেই প্রায় ঘাবড়ে গিয়ে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান ভয়ংকর ভাবে রেগে গিয়ে নিজের হাত মুঠো করে টেবিলের উপর বারি দিয়ে উঠে দাঁড়ালো তারপর আহির দিকে তেঁড়ে এসে বললো,
‘ তোমায় তো আমি?’
আদ্রিয়ানের কাজে চরম ভাবে ভয় পেয়ে আহি তার কাগজপত্র সব শক্ত করে চেপে ধরে একপলক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে যেতে যেতে বললো,
‘ সরি সরি আমি বলতে চাই নি মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।’
বলেই সে দৌড় তাকে আর পায় কে? অন্যদিকে আদ্রিয়ান দরজা পর্যন্ত যেতে নিতেই নিলয় গিয়ে ধরলো তাঁকে। আদ্রিয়ান ভয়ংকর ভাবে রেগে গেছে। আদ্রিয়ান রাগী কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ আমায় ছাড় নিলয় এই মেয়েটাকে আজ আমি মেরেই ফেলবো। কত বড় সাহস আমার অফিসে এসে আমাকেই ছাড় তুই আমায়?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে নিলয় আর একটু শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
‘ কুল ডাউন আদ্রিয়ান এটা অফিস সবাই কি ভাববে বলতো যা হয়েছে ভুলে যা।’
‘ ভুলে যাবো তুই শুনোস নি ওই মেয়েটা কি বললো আমায়। ওকে তো আমি?’
‘ বাচ্চা মেয়ে ভুল করে বসেছে মাফ করে দে?’
‘ লাইক সিরিয়াসলি তোর ওকে বাচ্চা মনে হচ্ছে,আর কিছুদিন গেলে বাচ্চার মা হয়ে যাবে।’
উওরে দাঁত কেলানি হাসি দিলো নিলয়। এই কথাটা আদ্রিয়ানকে থামানোর জন্যই বলেছে সে। নিলয় আদ্রিয়ানকে ধরে নিয়ে বসালো চেয়ারে তারপর টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা হাতে দিয়ে বললো,
‘ নে পানি খা আর একটু শান্ত হ।’
নিলয়ের কথা মতো আদ্রিয়ানও পানি গ্লাসটা নিয়ে অর্ধেক পানি খেয়ে বললো,
‘ শুধুমাত্র তুই ধরলি বলে মেয়েটাকে ছেড়ে দিলাম না হলে।’
‘ হুম বুঝছি এখন তো শান্ত হ মেয়েটা তো শুধু ইন্টারভিউই দিতে এসেছিল।’
‘ ইন্টারভিউ ইস মাই ফুট ওর কন্ঠ শুনলেও আমার রাগ উঠে সেখানে ওকে আমি আমার কোম্পানির মেম্বার বানাবো হুস। নেক্সট কে আছে ওকে ডাক?’
উওরে ছোট্ট শ্বাস ফেলে বললো নিলয়,
‘ ওকে।’
আদ্রিয়ান কিছুক্ষন চুপ থেকে জোরে শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে নিলো। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো মীরা দরজায় নক করে বললো সে,
‘ মে আই কাম ইন স্যার?’
উওরে আদ্রিয়ান নিজেই কিছুটা রাগান্বিত কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ ইয়েস কাম।’
উওরে মীরা মুচকি হেঁসে ভিতরে ঢুকে বসলো আদ্রিয়ানের সামনে থাকা চেয়ারে। তারপর নিজের কাগজপত্রগুলো আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে দিল সে। আদ্রিয়ানও কাগজপত্রগুলো হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বললো,
‘ নাম?’
‘ জ্বী মীরা ইসলাম।’
_______
তুমুল বেগে দৌড়ে অফিস থেকে বের হতে গিয়ে দুটো মেয়েকে পাশ কাটতে নিলো আহি। কিন্তু তাদের মধ্যে একটা মেয়ের সাথে বারি খেয়ে তার হাত থেকে ফাইল পড়ে গেল নিচে। কিন্তু সেদিকে তেমন লক্ষ না করে শুধুমাত্র দু’বার ‘সরি সরি’ বলে দৌড়াচ্ছে আহি। এই মুহূর্তে তার একটাই কথা মাথায় ঘুরছে ”বাচঁতে হলে পালা আহি”। আর সেই প্রশ্ন মাথায় নিয়েই দৌড়াচ্ছে সে, এরই মধ্যে হঠাৎই এক চেনা কন্ঠ কানে ভেসে আসলো আহির। কেউ একজন বললো তাঁকে,
‘ আরে আহি আপু তুমি এখানে?’
সঙ্গে সঙ্গে দৌঁড়ানো থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো আহি। পিছন ঘুরে তাকাতেই শুভকে দেখে অবাক হয়ে বললো সে,
‘ তুমি এখানে?’
‘ হুম আমি এই অফিসেই একটা কাজে এসেছিলাম।’
‘ ওহ।’
‘ হুম আর এই অফিসের বস আদ্রিয়ান উনি আম..
শুভ আর কিছু বলার আগেই আহি ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে বললো,
‘ বাকি কথা পড়ে শুনবো এখন অনেক তাঁরায় আছি ভাইয়া।’
বলেই আহি দৌড়ে। আর শুভ কিছু বলতে গিয়েও থেমে গিয়ে জাস্ট অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আহির যাওয়ার পানে। সে বুঝলো না কি এমন হলো যে এইভাবে দৌড়ে পালালো আহি।’
_____
ভয়ে শ্বাস ফেলতে ফেলতে আহি এসে থামলো তাঁর ভার্সিটির সামনে। আহি চটজলদি রিকশা থেকে নেমে ভাড়াটা দিয়ে কতক্ষণ দাঁড়ালো ভার্সিটির গেটের সামনে। পুরো রাস্তাটাই ভয় নিয়ে এসেছে সে। এখন একটু শান্ত লাগছে নিজেকে। না জানি ধরতে পারলে কি করতো তাঁকে।
‘ ওই লোকটার সামনে আর ভুলেও যাওয়া যাবে না আহি। গেলেই কাম ছাঁড়ছে, না জানি তোকে মেরে ওই পোঁচা বুড়ি গঙ্গা নদীতেই না ফেলে দেয়?’
এসব ভেবে জোরে এক নিশ্বাস ফেলে চললো সে ভার্সিটির ভিতরে।’
‘ হুস, ফাস্ট টাইম একটা জবের খোঁজে গিয়েছিলাম তাও কি না সেখান থেকে দৌড়ে পালানো লাগলো।’
আহির ভাবনাগুলোর মাঝেই ওর সামনের দিক থেকে ওর দিকে হেঁটে আসছিল রিনি আর অথৈ। ওকে দেখেই হাসি মুখে বলে উঠল তাঁরা,
‘ কিরে কেমন ছিল তোর ইন্টারভিউ?’
‘ আর ইন্টারভিউ একটুর জন্য নিজের প্রাণটাকে নিয়ে বেঁচে ফিরে এসেছি।’
আহির কথা শুনে অথৈ রিনি দু’জনেই অবাক হয়ে বললো,
‘ মানে?’
‘ আর মানে জানিস অফিসটা কার ছিল?’
আহির কথা শুনে রিনি বেশ বিস্মিত হয়ে বললো,
‘ কার?’
‘ মিস্টার আদ্রিয়ান মাহামুদ।’
আহির কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো রিনি,
‘ কি?’
আর অথৈ অবাক হয়ে বললো,
‘ আদ্রিয়ান মাহামুদ কে?’
অথৈর প্রশ্নের উত্তর দিতে বলে উঠল রিনি,
‘ আরে তোকে তখন বললাম না আহি বিয়ের দিন নীরব ভাইয়ার জায়গায় অন্য আরেকজনকে লাভ লেটার দিয়ে ছিল সেই ছেলেটা। তারই নাম আদ্রিয়ান মাহামুদ দেখতে সুন্দর, হ্যান্ডসাম সাথে একজন সাকসেসফুল বিজনেস ম্যান কিন্তু রাগী বুঝলি শুরু থেকেই আহির উপর প্রচন্ড রেগে।’
‘ ওহ।’
রিনির আর অথৈর কথা শেষ হতেই আহি কিছুটা বিস্ময় আর হতাশা নিয়ে বললো,
‘ জানিস আজ কি হয়েছিল?’
আহির কথা শুনে অথৈ রিনি দুজনেই বেশ অবাক হয়ে বললো,
‘ কি?’
এরপর আহি ওদের কিছুক্ষন আগে হয়ে যাওয়া ঘটনার কথা বললো। সব শুনে ওদের চোখ রসগোল্লার মতো হয়ে গেল। রিনি তো বলে উঠল,
‘ বাপ রে এ তো পুরো রাগী বেগুন দোস্ত।’
রিনির কথা শুনে আহি বিষন্নতা নিয়ে বললো,
‘ শুধু বেগুন না বোইন আলু, পটল, টমেটো, কুমড়ো, গাজর, করলা সব।
আহির কথা শুনে হেঁসে ফেললো অথৈ। অথৈর হাসি দেখে বললো আহি,
‘ তুই হাসছিস,জানিস কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’
‘ হুম বুঝছি সকাল সকাল জমের দুয়ার থেকে ঘুরে আসলি এখন চল।’ (অথৈ)
বলেই অথৈ রিনি দুজনেই আহির গলায় জড়িয়ে ধরে চললো ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে।’
_____
বয়েজ হোস্টেলে চার বন্ধু বসে আছে। নীরব,সোহান, সুজন আর শরীফ। নীরব আর সোহান বই নিয়ে বসে আছে টেবিলে। নীরবকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে বেশ সিরিয়াজভাবে কিছু একটা পড়ছে আর সোহান সে জাস্ট বই নাড়াচ্ছে।
আর দুজনের মধ্যে একজন শুয়ে আছে। আর একজন কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছে। এই বোরিং লাইফ নিয়ে হঠাৎই বইপত্র বন্ধ করে বলে উঠল সোহান,
‘ ধুর এই পড়াশোনা আর ভালো লাগছে আচ্ছা কোথা থেকে একটু ঘুরে আসলে কেমন হয় বলতো?’
উওরে নীরব বইয়ের পাতায় মুখ লুকিয়েই বলে উঠল,
‘ খুব বাজে।’
নীরবের কথা শুনে সোহান বেশ হতাশ হয়ে বললো,
‘ তুই না বড্ড একঘেয়ে বুঝলি?’ চল না সবাই মিলে কোথাও ঘুরে আসি। আমাদের সাথে আহি আর রিনিকেও নিয়ে ওহ ওদের সাথে তো আরও একটা মেয়ে আছে চাইলে ও যাবে আমাদের সাথে। তুই, আমি, মীরা, সুজন, সোহান, আহি, রিনি আর ওই মেয়েটা নামটা ঠিক জানা নেই বেশ হবে। চল না যাই?’
‘ তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে আর কিছুদিন পর ফাইনাল এক্সাম আর তুই কি না এখন ঘোরাঘুরি করার কথা ভাবছিস।’
‘ রাখ তো তোর এক্সাম ঘুরতে যাচ্ছি মানে ঘুরতে যাচ্ছি ফাইনাল।’
বলেই সোহান এগিয়ে গেল সুজন আর শরীফের দিকে তারপর দুটোর মাথায় দুটো চাটি দিয়ে বললো,
‘ কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায় বলতো?’
হঠাৎই ওদের মধ্যে থেকে শরীফ কানের হেডফোন খুলে বললো,
‘ সিলেটের শ্রীমঙ্গল গেলে কেমন হয়?’
‘ হুম গুড আইডিয়া,তাহলে কনফার্ম কাল বাদে পরশু আমরা যাচ্ছি চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল। আগে গিয়েই ওই সাত রঙের চা টা খাবো বুঝলি?’
‘ হুম।’
ওদের কথা শুনে নীরব মাথা নাড়িয়ে বইয়ের পাতায় চোখ রেখেই বলে উঠল,
‘ তোরা গেলে যা আমি যাবো না।’
উওরে নিরাশ চোখে তাকালো সোহান তারপর….
!
!
!#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ০৯
_________________
এক ঠ্যাং উচকিয়ে সাথে এক হাত ধরে পুকুরের কিনারায় নীরবকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সোহান, সুজন আর শরীফ। আর এদের কাজে বেচারি নীরব কাঁদো কাঁদো ফেস আর ভয়ার্ত কন্ঠ নিয়ে বলে উঠল,
‘ এগুলো তোরা কি করছিস পড়ে যামু তো?’
‘ তোকে ফেলার জন্যই তো ধরে আছি।’
‘ প্লিজ এমন করিস না।’
‘ ঠিক আছে করবো না কিন্তু তার আগে বল তুই শ্রীমঙ্গল যেতে রাজি।’
‘ এটা কোন ধরনের কথা।’
‘ শালা তোকে আজ এই পানিতে চুবিয়েই মারবো, সবসময় কোথাও যাওয়ার কথা উঠলেই তুই নানান বাহানা দেখাস।’
বলেই সোহানের হাতটা একটু আলগা করলো। সোহানের কাজে ভয় পেয়ে বলে উঠল নীরব,
‘ এমন করিস না আমি ভিজে যাবো তো।’
‘ তাইলে বল আগে তুই রাজি দোস্ত দু’দিনেরই তো ব্যাপার চল না যাই। আচ্ছা তুই চাইলে তোর সঙ্গে তোর বইপত্রও নিতে পারিস এবারও যদি রাজি না হোস তাইলে কিন্তু।’
বলেই নীরবকে ছেড়ে দিতে লাগলো সোহান,শরীফ আর সুজন। ওদের কাজে প্রচন্ড ঘাবড়ে গিয়ে বলে উঠল নীরব,
‘ ঠিক আছে ঠিক আছে তোরা যা বলবি তাই হবে আমি রাজি।’
নীরবের কথা শুনে সোহান ওরা খুশি হয়ে বললো,
‘ সত্যি দোস্ত তুই যাবি শ্রীমঙ্গল?’
‘ হুম যাবো যাবো এইবার তো ঠিক কর আমায়?’
‘ হুম করছি।
বলেই সোহান,শরীফ আর সুজন নীরবকে ছেড়ে সোজা করে দাঁড় করালো। ওদের কাছ থেকে ছাড়া পেতেই নীরব জোরে শ্বাস ফেলে বললো,
‘ এভাবে কেউ পানিতে ফেলার হুমকি দেয়।’
‘ সরি দোস্ত।’
‘ আচ্ছা ঠিক আছে, আহি ওদের বলেছিস?’
‘ না বলি নি তবে এখনই রিনিকে বলছি ও আহি আর ওই মেয়েটাকে বলবে আনে।’
সোহানের কথা শুনে এইবার নীরব একটু সিরিয়াসভাবে বলে উঠল,
‘ সেই কখন থেকে শুধু শুনছি ওই মেয়েটা ওই মেয়েটা মেয়েটা আসলে কে?’
‘ মেয়েটার নামটা ঠিক মনে নেই পরশুই এসেছে রিনির বান্ধবী রাজশাহীতে বসে আলাপ হয়েছিল। খুব বিলিয়ান্ট ছাত্রী বুঝলি স্কলারশিপ পেয়ে এসেছে ভার্সিটি।’
‘ ওহ।’
‘ হুম।’
_____
লাইব্রেরিতে বসে আছে আহি আর অথৈ। অবশ্য খালি বসে আছে বললে একটু ভুল হবে। আহি বসে মোবাইল দেখছে আর অথৈ বই পড়ছে। আর ওদের দুজনের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে রিনি। হুট করেই সোহানের ফোন আসায় চলে যায় সে সাইডে। হঠাৎই রিনি তার কথা বলা শেষ করে দৌড়ে এসে কিছুটা এক্সাইটিং হয়ে বলে উঠল,
‘ দোস্ত ঘুরতে যাবি?’
হুট করেই রিনির এমন কথা শুনে অথৈ এক পলক ওর দিকে তাকিয়ে আবার বই দেখতে শুরু করলো আর আহি বেশ খানিকটা অবাক হয়ে বললো,
‘ মানে?’
‘ জানিস এইমাত্র সোহান ভাইয়া কেন আমায় ফোন করলো?’
‘ কেন?’
‘ ভাইয়ারা দু’দিনের ট্যুরে যাবে আমাদেরকেও সাথে নিবে?’
‘ সত্যি?’
‘ হুম।’
‘ অথৈর কথাও বললো বুঝলি।’
রিনির মুখে এই মুহূর্তে নিজের নামের কথা শুনে বইয়ের পাতা থেকে চোখ সরিয়ে রিনির দিকে তাকিয়ে বললো অথৈ,
‘ আমার কথা মানে?’
‘ মানে এটাই আমাদের সাথে তুইও যাবি?’
রিনির কথা শুনে আহিও খুব খুশি হয়ে বলে উঠল,
‘ ভালোই হবে তুই, আমি,রিনি তিনজন একসাথে থাকবো।’
আহির কথা শুকনো হেঁসে বললো অথৈ,
‘ আমি যাবো না।’
অথৈর মুখে না যাওয়ার কথা শুনে আহি আর রিনি দুজনেই হতাশ হয়ে বললো,
‘ কেন?’
‘ চল না যাই সবাই মিলে গেলে খুব মজা হবে?’ (আহি)
‘ না তোদের মাথা খারাপ সামনে এক্সাম আর এখন পড়াশোনা রেখে ঘুরতে যাবো।’
‘ এক্সামের এখনো অনেক সময় বাকি অথৈ (রিনি)
‘ ঠিকই তো এখনও অনেক সময় আছে তো অথৈ ( আহি)
‘ না যতই সময় থাকুক আমার এখনও অনেক পড়া বাকি আর তাছাড়া আপু দুলাভাই আমায় যেতে দিবে না।’
‘ আপুকে নিয়ে তুই টেনশন করিস না আমি বলবো ওনাদের।’ (রিনি)
‘ এবার প্লিজ রাজি হয়ে যা দু’দিনেরই তো ব্যাপার মাত্র।’
আহির কথা শুনে রিনিও বলে উঠল,
‘ প্লিজ চল না যাই।’
আহি আর রিনির এত অনুরোধের স্বরের কথা শুনে মুচকি হেঁসে বললো অথৈ,
‘ঠিক আছে ঠিক আছে আর বলতে হবে না আমি রাজি।’
অথৈর কথা শুনে আহি আর রিনি দুজনেই খুশি হয়ে বললো,
‘ থ্যাংক ইউ দোস্ত।’
উওরে মুচকি হাসলো অথৈ এরই মধ্যে সেখানে উপস্থিত হলো নীরব,সোহান,সুজন আর শরীফ। সোহান তো পুরো খুশি মনে বলে উঠল,
‘ শুনেছিস তো পরশু ট্যুরে যাবো তোরাও কিন্তু যাবি আমার সাথে টাকার কোনো প্যারা সব খরচ আমাদের।’
সোহানের কথা শুনে আহি আর রিনি দুজনেই খুশি হয়ে বললো,
‘ হুম শুনেছি আর এতে আমরা সবাই রাজি।’
রিনির কথা শুনে ওঁরাও খুশি হলো। হঠাৎই সোহান অথৈর দিকে একপলক তাকিয়ে রিনিকে বলে উঠল,
‘ ও কি যাবে তোদের সাথে?’
সোহানের কথা শুনে রিনিও খুশি মনে বলে উঠল,
‘ হুম যাবে প্রথমে তো এক্সামের কথা বলে যেতে চাইছিল না কিন্তু পরে রাজি হয়েছে।’
রিনির কথা শুনে ওঁরা তো বেশ অবাক সুজন তো বলেই ফেললো,
‘ লে খোকা এই দুুই চাশমিশদের তো একই অসুখ।’
সুজনের কথা হেঁসে উঠল সবাই,সুজনের কথা শুনে একে অপরের দিকে তাকালো অথৈ আর নীরব। অথৈই অতোটা অবাক না হলেও নীরব বেশ অবাক হয়েছে অথৈকে দেখে। মনে মনে তো ভেবেই ফেললো ‘এই মেয়েটা তো সেই বাসের মেয়েটা। শরীফ, রিনি আর আহির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তা আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবি না ওকে?’
‘ হুম কেন নয়।’
বলেই রিনি একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল অথৈকে, অথৈও মুচকি হেঁসে সবার সাথে পরিচিত হলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই যেন তার সাথে সবার বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্কে চলে গেল। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো মীরা সবার সামনে দৌড়ে এসে বললো সে,
‘ আমাকে ছাড়া সবাই সব প্লানিং করে ফেলছোস নাকি?’
মীরাকে দেখেই কেমন যেন জ্বেলাছি তা শুরু হলো আহির। তবে আপাতত সেটা প্রকাশ করলো না আহি। মীরার কথা শুনে নীরব বলে উঠল,
‘ আরে না তেমন কোনো ব্যাপার নেই, তা তুই যে কাজে গিয়েছিলি তা হয়েছে?’
‘ হুম আমার জবটা কর্নফাম হয়ে গেছে আর বসও বললো দু’দিন পর থেকে জয়েন করতে আর তখনই সোহানের ফোন আসাই আরো দু’দিনের ছুটি নিয়ে এসেছি বুঝলি। কারনটা তো বুঝতেই পারছিস তা কবে যাবি ভাবছিস?’
মীরার কথা শুনে সোহান বলে উঠল,
‘ পরশু।’
‘ খুব ভালো আমার তো ভেবেই এক্সাইটিং লাগছে।’
মীরার কথা শুনে রিনিও বলে উঠল,
‘ আমারও আপু।’
এরপর সবাই মিলে একসাথে বসে শ্রীমঙ্গলে যাওয়ার প্লানিং শুরু করে দিল। সাথে হাসাহাসি আর আড্ডা তো আছেই।’
_____
‘ আমি আসবো ভাইয়া?’
কিছুটা হতভম্ব কন্ঠ নিয়ে কথাটা বলে উঠল শুভ আদ্রিয়ানকে। ফাইল হাতে কিছু কাগজ দেখছিল আদ্রিয়ান হঠাৎই কারো কন্ঠ কানে আসতেই চোখ তুলে তাকালো সে। সামনের ছেলেটির মুখটা দেখতেই মাথা গরম হয়ে গেল তাঁর প্রচন্ড রাগ নিয়ে চেঁচিয়ে ডাকলো সে নিলয়কে। নিলয়ও আদ্রিয়ানের ডাক শুনে দৌড়ে এগিয়ে আসলো তার দিকে। তারপর এক পলক শুভর দিকে তাকিয়ে বললো সে আদ্রিয়ানকে,
‘ কি হয়েছে?’
‘ ও এখানে কি করছে নিলয়, গত মাসে ওর খরচের টাকা পাঠিয়ে দিস নি?’
নিলয় কিছু বলার আগেই ভিতরে ঢুকে আসলো শুভ তারপর বললো,
‘ আমি এখানে টাকা নিতে আসি নি ভাইয়া, তুমি সবসময় আমার সাথে এমন ব্যবহার করো কেন? শুধু মাসে মাসে টাকা পাঠালেই কি ভাইয়ের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় ভাইয়া?’
শুভর কথার মাঝখানে আদ্রিয়ান কিছুটা ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে বললো,
‘ নিলয় ওকে বলে দে ওর যদি কোনো কাজ না থাকে তাহলে ও আসতে পারে?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে ছলছল চোখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো শুভ,
‘ ভাইয়া তুমি এমন কেন সেই ছোট বেলা থেকেই তুমি আমায় অবহেলা করছো। সেই ছোট বেলার ভুলের জন্য আজও তুমি আমায় শাস্তি দিচ্ছো ভাইয়া। আমি তো তখন খুব ছোট ছি..
শুভ আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান রেগে গিয়ে বলে উঠল,
‘ ওকে চলে যেতে বল নিলয়?’
উওরে নিলয় কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সেই ছোট বেলা থেকে এই দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ। অনেকবারই নিলয় চেয়েছিল এদের মধ্যে এই দ্বন্দ শেষ করতে কিন্তু বরাবরই আদ্রিয়ানের রাগের কাছে ব্যর্থ সে। নিলয় কিছুটা হতাশ হয়ে বললো আদ্রিয়ানকে,
‘ আদ্রিয়ান একবার একটু,
‘ আমি কোনো কথা শুনতে চাই না নিলয় তুই জাস্ট ওকে যেতে বল?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে অপরাধী ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ আমায় কি একবার ক্ষমা করা যায় না,প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দেও আমি তোমার সাথে থাকতে চাই ভাইয়া। আমার যে একা একা থাকতে ভালো লাগে না।’
শুভর এবারের কথা শুনে আদ্রিয়ান উঠে দাঁড়ালো তারপর নিলয়কপ উদ্দেশ্যে করে বললো,
‘ আমার আর ভালো লাগছে না বাকি কাজগুলো তুই দেখে নিস নিলয়।’
বলেই চলে যেতে নেয় আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানকে যেতে দেখে শুভ দাঁড়ালো আদ্রিয়ানের মুখোমুখি তারপর হতাশা ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো সে,
‘ ভাইয়া আমায় কি একবার ক্ষমা করা যায় না। প্লিজ আমায় একবার ক্ষমা করে দেও?’
শুভর কাজে আদ্রিয়ান রাগী কন্ঠে নিলয়কে বলে উঠল,
‘ ওকে আমার সামনে থেকে সরতে বল নিলয়?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে শুভ আদ্রিয়ানের হাত ধরে বললো,
‘ প্লিজ ভাইয়া আমায় ক্ষমা করে দেও?’
শুভর এবারের কাজে আরো বেশি রেগে যায় আদ্রিয়ান। শুভকে ধাক্কা মেরে বেরিয়ে যায় সে অফিস থেকে। আর শুভ হতাশা আর মন খারাপ নিয়ে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের যাওয়ার পানে। প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে তাঁর। এমন সময় তার কাঁধে হাত রাখলো নিলয়। নিলয়কে দেখেই বললো সে,
‘ আমায় কি কখনো ক্ষমা করবে না ভাইয়া। আমি তো তখন খুব ছোট ছিলাম বলো?’
উওরে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো নিলয়। সে বুঝতে পারছে না এই মুহূর্তে কি বলে সে স্বান্তনা দিবে শুভকে?’
!
!
!
!
!
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে, এতটা দেরি হওয়ার জন্য সরি সবাইকে,জানি আজকের পার্টটা ছোট আর অগোছালো হয়েছে এর জন্যও সরি]
#TanjiL_Mim♥️
!
!
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️