বিবর্ণ নীলাম্বরী পর্ব -১১+১২

#বিবর্ণ_নীলাম্বরী
#মম_সাহা

পর্বঃ একাদশ

আজ বেশ ভালোই আড্ডা দিয়েছে নীলারা।সাথে রঙও ছিলো।অহন একটু পর পর রঙকে পিচ্চি বলেছে আর রঙ মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। আজ শুভ্রমকে দেখে নি নীলা।শুভ্রম তাদের ইকোনমিকস ক্লাস নেই।আজ আসে নি। যাক এক হিসেবে ভালোই হয়েছে ওদের সামনে পড়তে হয় নি।আজ ক্লাশ দেরিতে শুরু হয়েছে সবার, তাই শেষও হয়েছে দেরিতে।

সবাই বের হয়ে যাচ্ছে।রঙ আর নীলা বের হবে এমন সময় নীলার ফোন আসে।সে রঙকে এগিয়ে যেতে বলে পিছে পিছে আসছিলো।

রঙ ফোন স্ক্রোল করে হাঁটছিল এমন সময় সে অনুভব করলো তার ওড়না কেউ টেনে ধরেছে।আৎকে উঠে রঙ।ওড়না টা বুকের মাঝে শক্ত করে চেপে ধরে পিছু ঘুরে তাকায়। তারই ক্লাশমেট বদমাশ ছেলেটা তার ওড়না চেপে ধরেছে।সে আরও ভয় পেয়ে যায়। এই ছেলেটা প্রায়ই তার পিছে পরে থাকে।অসভ্যতা করে।আজ তো লিমিট ক্রস করে ফেলেছে।রঙ শক্ত কন্ঠে চোখ রাঙিয়ে ছেলেটাকে বলল
-‘ওড়না টা ছাড়ো।ভদ্রতা বজায় রেখে ভালোই ভালোই ওড়না টা ছেড়ে দেও।’

ছেলেটা ওড়নার মাথায় আরেকটু টান দেয়। রঙ ঘেমে গেছে।এই ছেলের অসভ্যতামির সীমা নেই।নীলা আপু টাও সাথে নেই।সে একা আরও ভয় পেয়ে যায়।চারপাশে ভার্সিটির ছেলেমেয়ে অনেক আছে কিন্তু কেউই কিছু বলছে না।ছেলেটার সাথে তার বন্ধু বান্ধবও আছে।

রঙ এবার ওড়নার মাথাটা ধরে কাপাঁকাপা কন্ঠে বলল
-‘প্লিজ ওড়না টা ছাড়ো অসভ্যতামো করো না।’

ছেলেটা বেশ মজা পেলো।হেসে বলল
-‘অসভ্যতামোর কি দেখলে রঙিন পাখি।তুমি আমার বুকের মাঝে বড্ড জ্বালাও। সামনাসামনি পাত্তা দেও না।তাই আজ পাত্তা পেতেই এসব করা।’

রঙ ভয় পেয়ে যায় ছেলেটা রঙের ওড়না জোড়ে টান দিবে এমন সময় পিছন থেকে কেউ একজন এসে ছেলেটার বাহু ধরে ঘুরিয়ে ঠাস করে চড় লাগিয়ে দেয়।

উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে যায়। রঙও অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে নীলা আপু।সে তাড়াতাড়ি নীলার পাশে এসে দাঁড়ায়। কলেজে ঝামেলা হচ্ছে শুনে অহনেরাও ছুটে আসে।এসে নীলা আর রঙকে দেখে তাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।

নীলা চড় মারার পর ছেলেটাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। অবাক হয়েই বলে
-‘রাজ তুমি!’

হ্যাঁ রঙের ওড়না ধরেই রাজ টেনেছে।দুর্ভাগ্যবশত রাজ,দিয়া আর রঙ একই ক্লাশের।

রাজের প্রথমত চড় খেয়ে বেশ অবাক আর রাগ হয়েছে আর যখন চড় মারা ব্যাক্তিটা নীলা বের হলো তখন রাগ দশগুণ হলো।রাজ কিছু বলবে তার আগে দিয়াই নীলাকে এক হাতে ধাক্কা দিয়ে বলল
-‘হাউ ডেয়ার ইউ নীলা আপু?তোমার সাহস কি করে হয় রাজকে চড় মারার।ইউ থার্ড ক্লাশ গার্ল।’

নীলা দিয়ার আচরণে বেশ অবাক হলো।একটা মেয়ে হয়ে কিনা আরেকটা মেয়েকে অপমান করছে দেখেও কিছু বলছে না।নীলা ঘৃণা আসলো দিয়ার আচরণে।ঠাস করে দিয়াকেও চড় লাগিয়ে দিলো।

এতক্ষণে কলেজ ক্যাম্পাসে ভীড় জমে গেছে। শুভ্রমও কারো মাধ্যমে শুনেছে তার চাচাতো ভাইবোন বেয়াদবি করতে গিয়ে কারো হাতে চড় খেয়েছে।তাই সেও ছুটে এসেছে।কিন্তু এসে নীলাকে দেখে অবাক।

নীলা রাজের শার্টের কলার ধরে বেশ চিল্লিয়ে বলল
-‘তুমি মানুষ রাজ?তোমার সাথে তোমার নিজের বোনও তো দাঁড়িয়ে ছিলো এই কাজটা করার আগে নিজের বোনের দিকে তাকাতে,তোমার বোনের সাথে এমন করলে তোমার কেমন লাগতো ভাবতে তাহলে কখনোই এই কাজটা করার দুঃসাহস দেখাতে না।সেইম অন ইউ ম্যান। অবশ্য তোমারও বা দোষ কিসে তোমার সাথে তোমারই বোন এসব সাপোর্ট করে মেয়ে হয়ে তুমি তো ছেলেই।’

তারপর দিয়ার হাত শক্ত করে টেনে মাঝখানে এনে দাঁড় করিয়ে বলল
-‘এই যে তুমি,যে মেয়ে হয়েও আরেকটা মেয়েকে অসম্মান করেছিলে, এই তোমাকে চিনে রাখলো সবাই।কখনো উপরওয়ালা না করুক তোমার জামাটা কেও টেনে ধরলেও বাঁচানোর মানুষ পাবে না।কারণ সবাই দেখেছে ভরা ক্যাম্পাসে তুমিই এসব টানাটানি নিয়ে মজা করেছো।তার মানে তোমার কাছে এসব বেশ মজার কাজ।তুমি আমাকে থার্ড ক্লাশ গার্ল বললে না? আসলে থার্ড ক্লাশ গার্ল তো তুমি।থার্ড ক্লাশ মাইন্ড তোমার।ছিঃ।’

রাজ নীলাকে চোখ রাঙিয়ে আঙুল দেখিয়ে কিছু বলতে আসবে এর মাঝেই নীলা রাজের আঙুল টা হাতসহ মুচড়ে ধরলো।রাজ ব্যাথায় আহ্ করে উঠলো।

শুভ্রম রাজের পাশে এসে দাঁড়ালো কিন্তু কিছু বলার ভাষা পাচ্ছে না।কি ই বা বলবে।তার ভাইবোন যা লজ্জাজনক কাজ করেছে।সে মুখ দেখাবে কেমনে।আর তার উপর এই রণচণ্ডী নীলাকে দেখে আরও বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে গেছে।

বর্ণ আজ রঙকে নিতে এসেছিলো।ভেবেছিলো নীলার সান্নিধ্য পাওয়া যাবে। কিন্তু কলেজ ক্যাম্পাসে ঝামেলা হচ্ছে দেখে ছুটে এসে দেখে তারই বোন,প্রেয়সীকে নিয়েই ঝামেলা চলছে।সে এগিয়ে এসে রঙকে জড়িয়ে ধরে।

শুভ্রম নীলাকে উদ্দেশ্য করে মাথা নিচু করে বলে
-‘ওদের হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি নীলাম্বরী। ওদের যথাসাধ্য শাস্তি আমি দিবো তুমি রাজের হাতটা ছেড়ে দেও।’

নীলা রাজের হাতটা দ্বিগুন শক্ত করে মুচড়ে ধরে শুভ্রমের দিকে রক্ত লাল চোখে তাকিয়ে বেশ জোড়ে বলল
-‘নারীর শরীর ছুঁতে বেশ মজা লাগে তাই না রাজ? তোমার ঘরেও তো নারী আছে সেটা ভুলে গেলে হবে? তোমার থেকে উৎসাহিত হয়ে কোনো কুলাঙ্গার যদি তোমার ঘরের নারীকেই ছুঁয়ে দেয় ভালো লাগবে তো?
“পুরুষ মানুষ যদি নারীর শরীর ছুঁয়ার আগে নারীর মন একবার ছুঁয়ে দেখতো,,
তাহলে তারা বুঝতো পৃথিবীতে নারীর শরীরের চেয়েও কোমল কিছু আছে।”একবার মনটাই নাহয় ছুঁয়ে দেখো রাজ।’

কথা গুলো বলে রাজের হাতটা ঝাড়া মেরে ফেলে দিলো নীলা।ততক্ষণে রঙের কাছ থেকে সবটা শুনে বর্ণ রেগে অগ্নিশর্মা। ছুটে এসে রাজের কলার ধরে এলোপাতাড়ি মাইর দেওয়া শুরু করলো।

নীলা তাড়াতাড়ি বর্ণকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।নীলার বন্ধুরাও রঙের পাশে এসে দাঁড়ালো। অহন রঙের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
-‘কিছু হয় নি রঙ।কেঁদো না আমরা আছি।’

এই স্পর্শে রঙের খারাপ অনুভব হয় না বরং ভরসা জাগে।

নীলা বর্ণের হাত ধরে টেনে দূরে সরানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না দেখে বর্নের সামনে গিয়ে দুই বাহু ধরে চিল্লিয়ে বলল
-‘বর্ণ স্টপ।স্টপ নাও বর্ণ।হি ইজ মাই কাজিন বর্ণ।প্লিজ স্টপ।’

বর্ণ থেমে যায়। এই নোংরা ছেলেটা নীলার কাজিন শুনে থমকে যায় বর্ণ।কাজিন হয়েছে তো কি হয়েছে, এই জন্য কি সে তার বোনের সাথে অসভ্যতামি করা জানোয়ারকে ছেড়ে দিবে।অনেক রাগ থাকলেও বর্ণ আর হাত তুলে না রাজের উপর। নীলার দিকে অগ্নি দৃষ্টি বর্ষন করে রাজের দিকে তাকিয়ে বলল
-‘মনে করিস না তোকে আমি ছেড়ে দিয়েছি। তোর সবটুকু ক্যারিয়ার যদি না ধূলোয় মিশাতে পারছি তাহলে বলিস।’

বর্ণ তার বোনের হাত টেনে।হন হন করে নিয়ে চলে গেলো।নীলাকে একবারও বললো না।নীলাও কিছু মনে করে না।তবে কষ্ট হয় বর্ণ তাকে ভুল বুজেছে বলে।

শুভ্রম সবাইকে ভীড় ছাড়তে বলে।সবাই চলে যায়। রাজ আর দিয়াকে গাড়ি করে বাড়ি পাঠাই।এখন কেবল নীলা তার বন্ধুবান্ধব আর শুভ্রম দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রম নীলার দিকে এগিয়ে এসে বলল
-‘সরি নীলাম্বরী, ওদের তরফ থেকে আমি সরি।ওরা এমন করবে ভাবতে পারি নি।’

নীলা নিজের ব্যাগ টা শক্ত করে ধরে শক্ত কন্ঠে বলল
-‘ভাবতে না পারার মতন তো কিছু না এটা।দিন দিন যে ওরা বখে যাচ্ছে সেটা সবাই বুজেছে একমাত্র আপনার পরিবারের মানুষ ছাড়া।এখনও সময় আছে হাল শক্ত করে ধরুন।’

শুভ্রম আরও কিছু বলতো।কিন্তু নীলাম্বরী গটগট পায়ে চলে যায়। হতাশার শ্বাস ছাড়ে শুভ্রম।

অন্যদিকে বেশ রেগে গাড়ি চালাচ্ছে বর্ণ।সে আজ নীলাম্বরীর সাথে বেশ খারাপ আচরণ করে ফেলেছে।রঙ সবটা খুলে বলার পর অপরাধ বোধে কুঁকড়ে খাচ্ছে তাকে।বাসায় গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।মেয়েটা তার বোনের জন্য ভরা ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ করলো আর সে কি না।

________

রাত আটটা।নীলা বাসায় ফিরেছে এক ঘন্টা আগে।কোনো মতে বর্নের মায়ের কাছ থেকে চাবিটা নিয়ে ফ্লাটে এসে দরজা আটকে দেয়।বর্ণ তাকে ফ্লাটে ঢুকার সময় দেখে বেশ কয়েকবার পিছু ডাকে। সে না শোনার ভাব ধরে দরজা আটকিয়ে দেয়।

বাসায় এসে নীলা লম্বা একটা শাওয়ার নিলো।তারপর চুল আঁচড়িয়ে খাবার খেয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো।আজ বেশ ক্লান্ত লাগছে তার।

হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজে চমকে উঠে নীলা।পরক্ষণেই ঐ ফ্লাট থেকে কেউ এসেছে ভেবে শ্বাস ফেলে।অনবরত কলিং বেলের আওয়াজে টিকতে না পেরে উঠে দাঁড়ায় সে।

রাজ্যের ক্লান্তি নিয়ে দরজা খুলতেই কিছু বুঝে উঠার আগেই সশব্দে চড় পরে তার গালে।
#বিবর্ণ_নীলাম্বরী
#মম_সাহা

পর্বঃ দ্বাদশ

নীলা চড় মারা ব্যাক্তিটার দিকে তাকিয়ে বিষ্ময়ে হতবাক।তার খালামনি তাকে চড় মেরেছে।এতদিন কোনো খোঁজখবর নেই হঠাৎ করে এসেই চড় মেরে দিলো কোনো কারণ ছাড়াই।

নীলা এবার ভালো করে লক্ষ্য করলো।শুধু খালামনি না, খালামিন সাথে রাজ,দিয়া ওদের মা মৌ আপু, সোহা সবাই এসেছে।এদের সবার মাঝে শুধু মৌ আপুর চোখ টলমলে ভাব,নীলার জন্য খারাপ লাগা কাজ করছে আর বাকি সবার চোখে অগ্নি বর্ষন হচ্ছে।

নীলা বর্ণদের ফ্লাটের দিকে তাকিয়ে দেখলো বর্ণের পুরো পরিবারও রুমের বাহিরে এসে দাঁড়িয়েছে। শুধু নীলা না তারাও অবাক বুঝাই যাচ্ছে।

নীলা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল
-‘খালামনি!! এসব আচরণের মানে কি?’

রেহেনা বেগম ক্ষুদার্থ বাঘের ন্যায় ঝাঁপিয়ে পড়লো নীলার উপর।আঙুল উঁচিয়ে চিল্লিয়ে বলল
-‘তুই না এত ভালো?তোর বাবা না তোরে নিয়ে এত গর্ব করে? সেই তুই কীভাবে ছেলে ঘুরিয়ে আবার সে ছেলেকে দিয়ে আমার দেবরের ছেলেকে মার খাওয়াস? তোর বাবার নীতি কথা এখন কই রে?মেয়ে যে ছেলে ঘুরাচ্ছে সেটা কি সে দেখে না এবার?’

খালার এমন ধরনের কথায় নীলার জেনো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।খালা যে উল্টাপাল্টা বুঝে এখানে এসেছে সেটা বুঝাই যাচ্ছে।বর্ণের পরিবারও ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।হয়তো তাদের কাছেও কিছু বোধগম্য হচ্ছে না।

নীলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তার খালামনিকে বলল
-‘ভিতরে আসো খালামনি তারপর সব খুলে বলছি।বাহিরে সিনক্রিয়েট করো না।’

এবার সোহা তেঁতে এগিয়ে এসে নীলাকে চড় মারার জন্য হাত উঠালে নীলা হাতটা ধরে ফেলে।এতক্ষণ সবটা মুখ বুজে সহ্য করেছিলো ভেবেছিলো সবটা ধীরে সুস্থে বুঝাবে।কিন্তু এরা তো লিমিন ক্রস করছে।

নীলার সোহার হাতটা ঝাড়া দিয়ে কর্কশ গলায় বলল
-‘একদম এ ভুল করবেন না সোহা আপু। এটা সরকারি গাল না যে খুশি এসে চড় মেরে যাবেন।বড় বলে ছেড়ে দিবো তেমন টা না।যদি ভুল আমার হতো এমন হাজারটা চড় খেতাম।কিন্তু বিনা দোষে একটা টোকা যে দিতে আসবে তার হাত মুচড়ে ভেঙে দিতে আমার এক সেকেন্ড সময়ও লাগবে না।’

এই কথা গুলো জেনো আগুনে ঘি ঢালার মতন কাজ করলো খালার বাড়ির সবার উপর।সোহা ফুলে উঠে বলল
-‘দেখেছো মা এই মেয়ে কত নিমকহারাম। এত না বোনের মেয়ের প্রতি টান।দেখেছো তার আচারণ? একে তো ভুল করেছে তার উপর কেমন বড় গলা।বড়দের সম্মান দেওয়ার লেশমাত্র নেই ওর মাঝে।’

রেহানা বেগমও রেগে উঠে বলল
-‘একদমই ঠিক সোহা।এই মেয়েকে দেখে আমি অবাক হচ্ছি।এতদিন আমার বাড়িতে থেকে আমারই নুন খেয়ে বেইমানী করছে।এতটুকু কৃতজ্ঞতা বোধ নেই এর মাঝে।তোর বাবা না এত বড় বড় কথা বললো সেদিন? আমরা নাকি আমাদের ছেলে মেয়েকে শিক্ষা দিতে পারি নি। তা তোর বাবা তোরে কি শিক্ষা দিলো রে নীলু?সামান্য কৃতজ্ঞতা বোধও তো নেই তোর মাঝে।যাদের নুন খেলি তাদের পিছেই ছোবল মারলি।’

বর্ণ এতক্ষণ দাঁতে দাঁত চেপে সবটা সহ্য করেছিলো।ভেবেছিলো সে কিছু বললে হয়তো জিনিসটা খারাপ দিকে যাবে কিন্তু এখন না বললে না ই হবে।বর্ণ এগিয়ে এসে ওদের উদ্দেশ্যে বলল

-‘এক্সকিউজ মি, আমার মনে হয় পারিবারিক সমস্যা রুমে গিয়ে মিটানো ভালো।আর এক্সাক্টলি আপনারা যেটাকে ইস্যু করে এখানে এসেছেন সেই পুরো ঘটনা না জেনেই এত রিয়েক্ট করছেন।পুরোটা জানলে লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা পাবেন না।’

রেহানা বেগম বর্ণের দিকে তাকিয়ে বলল
-‘তুমি কে এসব বলার হ্যাঁ?’

পিছন থেকে দিয়া বলে উঠলো
-‘এটাই তোমাদের কালা পরীর হিরো।এই হিরোরে দিয়েই রাজকে মার খাইয়েছে তোমাদের নীলু।’

দিয়ার বলার ভঙিতে ঘৃণা লেগে উঠলো বর্ণের।এতটুকু মেয়ের কথা বার্তার ধরন কি বিশ্রি।বর্ণ দিয়াকে কিছু বলতে যাবে তখনই রাজের মা ছিঃ ছিঃ করে উঠে বলল

-‘নীলা এই তোমার বাবার শিক্ষা? মেয়ের নাগরের সাথেই বাসা ঠিক করে এমন একা মেয়েকে রেখে গেছে।ছিঃ ছিঃ। এইজন্যই বুঝি আমাদের বাসা ভালো লাগে নি? তা ছিলে তো এতদিন ঐ বাসায়। লজ্জা লাগলো না ঐ বাসারই ছেলেকে এভাবে সবার সামনে মারতে?’

নীলার জেনো ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।তার শিক্ষা,রূপ সব কিছু নিয়ে বলেছে তা নাহয় মেনে নিবে তাই বলে চরিত্র নিয়ে এসব কথা বলবে।নীলা ঘৃণিত দৃষ্টিতে রাজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
-‘আপনাদের বাড়িতে খেয়েছি,থেকেছি বলে সেই কৃতজ্ঞতা বোধ থেকে এখনো আপনাদের এসব জঘন্য কথা শুনে যাচ্ছি।আর আমার বাবার শিক্ষায় বড় হয়েছি বলেই এখনো আপনারা এসব বলেও অক্ষত আছেন।আর বার বার বলছেন যে আপনাদের বাড়িতে থেকেছি আপনাদের টা খেয়েছি সেই ভুলটা একটু শুধরে নেন।আপনাদের বাড়ি থাকা খাওয়ার খরচ হিসেবে আমার বাবা বেশ মোটা অঙ্কের একটা এমাউন্ট প্রতিমাসে আপনাদের দিতো।সে সূত্রে আমি আমার বাবার টাকায় খেয়েছি আপনাদের টা না।’

রেহানা বেগমের জেনো বেশ অপমানে লাগলো টাকার কথা টা।সোহা তাচ্ছিল্য স্বরে বলল
-‘একে তো বেলেল্লাপনা করেছে এই মেয়ে তার উপর আবার বড় বড় কথা। বাপের টাকার ফুটানি দেখাচ্ছো তুমি?’

নীলা দুহাত বুকের মাঝে গুঁজে হেসে বলল
-‘হ্যাঁ সোহা আপু আমি বাপের টাকায় ফুটানি দেখাচ্ছি।কি বলেন তো আমার বাপের টাকাই কিন্তু আপনার মতন এমন বেলেল্লা একটা মেয়েকে শ্বশুর বাড়ির ভাত খাওয়াতে পেরেছে।টাকার জন্য শ্বশুরবাড়ির লোক লাথি মেরে বের করে দিছিলো আপনাকে তখন আমার বাপই আপনাকে ঐ বাড়ির ভাত খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে।ভুলে গেলেন সেই কথা? কৃতজ্ঞতা বোধ তো আপনারও নেই।’

নীলার কথাতে আচ্ছা জুতোর বাড়ি পড়েছে ওদের গালে।নীলা স্বাভাবিক হয়ে তার খালামনিকে বলল
-‘খালামনি আমার মনে হয় তোমরা পুরো একটা ভুল কাহিনীর উপর ভিত্তি করে এখানে আমাকে অপমান করতে এসেছো।ভিতরে এমে ঠান্ডা মাথায় কথা বলো।’

রেহানা বেগম এবার বেশ জোড়ে নীলাকে ধাক্কা লাগিয়ে দিলো।যার ফলস্বরূপ নীলা লোহার গেটের সাথে বারি খেয়ে মাথা ফেটে রক্ত ঝড়া শুরু করলো।বর্ণ তাড়াতাড়ি ছুটে আসলো সাথে তার মা আর ফুপুও।মৌ এতক্ষণ চুপ থাকলেও আর পারলো না।সোহাকে টেনে সরিয়ে ভেতরে গিয়ে নীলাকে ধরলো।

নীলার ততক্ষণে বেশ রক্তে বের হয়ে গেছে।খালামনির আচারণ বাহ্যিক যতটা না আঘাত করেছে তার থেকে বেশি আঘাত করেছে ফেতরটা।বর্ণের মা, ফুপু,মৌ নীলাকে ধরে নিয়ে সোফায় বসালো।ততক্ষণে শক্ত একটা পুরুষ নালী কণ্ঠ শোনা গেলো। সে পুরুষ বলছে
-‘ছিঃ মা তোমরা কতটা নিচে নেমেছো যে বাড়ি বয়ে এসে একটা মেয়েকে মারতে তোমাদের হাত কাঁপলো না।’

সবাই ফিরে তাকালো সেই দিকে।শুভ্রম ততক্ষণে নীলার ড্রয়িং রুমে হাজির হলো।শুভ্রমের পিছে পিছে রেহানা বেগম, সোহা সবাই আসলো।

শুভ্রম এগিয়ে এসে নীলার মাথাটা ধরতে নিলে বর্ণ আটকিয়ে দেয়। শুভ্রম হাতটা সরিয়ে আনে।

রেহানা বেগম বুঝতে পারে নি এমন কিছু হয়ে যাবে।সে এমন ব্যাথা পাওয়ার জন্য ধাক্কা দেয় নি।

শুভ্রম তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-‘তুমি তোমার দেবরের ছেলেমেয়ের কথা শুনেই একটা মেয়েকে মারতে চলে আসলে? আদৌ ওরা কতটুকি সত্যি বলছে তা যাচাই-বাছাই করে নিতে।সত্যি টা জানলে মুখ লুকানোর জায়গা তো পাবে না আম্মু।এবার বলো তো রাজ আর দিয়া ঠিক কি বলেছে তোমাদের? ফাস্ট টু লাস্ট সবটা বলো।’

রেহানা বেগমের এখন মনে হচ্ছে সে নিশ্চয়ই ভুল বুঝে এখানে এসেছে। তাকে সত্যি টা বলা হয় নি।

রেহানা বেগম কিছু বলছে না দেখে মৌ ই এগিয়ে এসে বলল
-‘আমি বলছি ভাইয়া ওরা কি বলেছে।ওরা যখন বাসায় ফিরেছে ওদের এমন রক্তাক্ত অবস্থা দেখে সবাই জিজ্ঞেস করেছিলো এমন কি করে হলো।তখন দিয়া বলল রাজ নাকি একটা মেয়েকে পছন্দ করে।তাই সে প্রপোজ করেছিলো কিন্তু তখন নাকি নীলা এসে রাজকে চড় মেরেছে সাথে দিয়াকেও।তারপর নীলার প্রেমিককে ফোন করে এনে নাকি মার খাইয়েছে। আমার তখনই মনে হয়েছে ওরা সব মিথ্যা বলছে।কিন্তু ততক্ষণে চাচী মনি খারাপ খারাপ কথা শুনাতে শুরু করে মাকে তারপর মা রেগে বের হয়ে আসে সাথে সবাই। আর নীলাদের নতুন বাড়ির ঠিকানা তো আমরা জানতাম না সেটা দিয়া বলেছে।’
শুভ্রম দিয়ার দিকে ঘুরে গম্ভীর কন্ঠে বলল
-‘ঠিকানা কই পেয়েছিস দিয়া? ভালোই ভালোই বল।’

শুভ্রমের এমন কন্ঠ শুনে ভয়ে গুটিয়ে যায় দিয়া।কাঁপা স্বরে বলে
-‘আমি ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার সময় আমার এক ফ্রেন্ডকে বলে ছিলাম নীলা আপুর পিছে এসে জেনো ঠিকানা জেনে যায়।’

শুভ্রম টিকতে না পেরে ঠাস করে চড় লাগায় দিয়ার গালে।চিল্লিয়ে বলে
-‘ভার্সিটির কথাটা মিথ্যা কেন বললি? বল ইডিয়েট।’

শুভ্রমের চিৎকারে কেঁপে উঠলো পুরো ঘর।শুভ্রম তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
-‘মিথ্যা টা শুনে তো অনেক কান্ড করলে এবার সত্যি টা শুনো।তোমাদের আদরের দুলাল ভার্সিটির ক্যাম্পাসে মেয়েটার উড়না টেনে ধরেছিলো।মেয়েটা ছাড়তে বলায় সে আরও জোড়ে টেনে ধরে।আর তখনই নীলা চড় মারে।আর মেয়েটার ভাই হয়ে ওনার রিয়েক্ট করাটা কি স্বাভাবিক ছিলো না?আর তোমরা ছিঃ।

সবার জেনো লজ্জা করছে।রেহানা বেগম কি বলবেন বুঝতে পারছেন না।নীলার দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই বর্ণ হাত দিয়ে থামিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল
-‘এবার তো সবটা জেনেছেন? এবার চলে যান এখান থেকে আর কোনো নাটক করা ছাড়াই।প্লিজ।’

রেহানা বেগম কিছু বলতে যাবে তার আগেই নীলা ব্যাথাতুর নয়নে শুভ্রমের দিকে তাকিয়ে বলল
-‘আপনি আজ আমার অনেক সাহায্য করেছেন আমি কৃতজ্ঞ।আর একটা সাহায্য করুন প্লিজ ওনাদের নিয়ে চলে যান।আমি জুতা মেরে গরু দানের মতন কিছু চাচ্ছি না এখানে প্লিজ।’

শুভ্রম ধমক দিয়ে সবাইকে বের করে দিলো। মৌ থাকতে চাইলেও নীলা তাকে পাঠিয়ে দিলো।শুভ্রম বর্ণের বাহুতে হাত দিয়ে ‘টেইক কেয়ার’ বলে চলে গেলো।

এত বড় একটা ঘটনা নীলার বাবাকে না জানলে হবে না ভেবে বর্ণের মা আজিজুর রহমানকে কল লাগালেন।

রঙও বর্ণের ছোট ভাইকে কল দিয়ে বাসায় আনালো।নীলার মাথা থেকে রক্ত ঝড়ছে এখনো।কাউকেই সে ধরতে দিচ্ছে না। বর্ণ ডাক্তার হয়েও ধরতে পারছে না।কারণ নীলা তার সাথে কোনো রকমের কথা বলছে না।বর্ণের খারাপ লাগছে।তার বোনকে বাঁচাতে মেয়েটা কত কি সহ্য করলো আর সে কি না মেয়েটাকে ভুল বুঝলো।

#চলবে,
#চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here