বিবর্ণ নীলাম্বরী পর্ব -১৫+১৬

#বিবর্ণ_নীলাম্বরী
#মম_সাহা

পর্বঃ পঞ্চদশ

বিকেলের আজানের ধ্বনিতে মুখরিত চারপাশ।সূর্য অস্তায়মান। নীলা তার রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।তার পরিবারের মানুষজন সাথে বর্ণের পরিবারের সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে। বর্ণের বাবাও আজ ফিরেছে।এতদিন শহরের বাহিরে ছিলো।

সবাই নিরুপমা আর রাহাতের বিয়ে নিয়ে কথা বলছে।খুব সম্ভবত শীঘ্রই বিয়েটা ধরা হবে।নীলার এসব শুনতে ভালো লাগছিলো না।প্রথমত রাহাত তার প্রথম ভালোবাসা ছিলো,দ্বিতীয়ত রাহাত তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে আর সব থেকে বড় কথা রাহাত চরিত্রহীন।আর এমন একটা ছেলের সাথে তারই আপন বোনের বিয়ে হচ্ছে আর সেটাও তাকে মানতে হবে।কারণ তার হাত পা বাধাঁ।বিয়েতে কোনো প্রকার বাধাঁ দিলেই সব শেষ হয়ে যাবে।কিন্তু এমন একটা ছেলের সাথে বিয়ে হলে তার বোনের জীবনও শেষ হয়ে যাবে।এতটা চাপ নিতে পারছে না নীলা। তার নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।

হঠাৎ পিছন থেকে বলে উঠলো কেউ
-‘মিস.নীলা এত ছোট মাথায় এত প্রেসার নেওয়া তো উচিত না।যা হচ্ছে হতে দেওয়াই হলো উচিত কাজ।’

চেনা কন্ঠে ফিরে তাকাল নীলা।পিছে ফিরে রাহাতকে দেখে রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়।

রাহাতের জেনো ভালো লাগে নি নীলার আচরণ।সে নীলার কাছে এসে বেশ উচ্চস্বরে বলল
–‘বাহ্ আজকাল ভালোই পাখা গজিয়েছে তোর।আমাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিস? আগে তো আমার পিছেই পরে থাকতি রাস্তার মেয়েদের মতন।’

নীলা জেনো রাগে গাঁ কেঁপে উঠছে।শক্ত চোখে তাকায় রাহাতের দিকে।তাচ্ছিল্য হেসে বলে
-‘চকচক করলেই সোনা হয় না কথা টা শুনেছেন কখনো? আমি শুনেছি আর উদাহরণস্বরূপ আপনাকে দেখেছি।তা ছুটেছি কেনো বুজেছেন নিশ্চয়ই? আসলে আমি হীরা ভেবে কাঁচকে ছুঁয়ে হাত কেটেছি।’

রাহাতের শরীরে জেনো কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। অপমানে শরীর রি রি করছে।সে হাত দিয়ে শক্ত করে নীলার দু গাল চেপে ধরলো।তারপর দাঁত কিরকির করে বলল
-‘বেশ কথা ফুটেছে না?কার আশকারায় এত কথা বলছিস?তোর বাপের আশকারাতে তাই না?তুই কি চাস ভিডিও টা নেটে ভাইরাল হোক?আর তোর শক্ত সামর্থ্য বাপ ভেঙে পরুক? যদি তোর বাবার কিছু হয়ে যায় তাহলে ক্ষমা করতে পারবি তো নিজেকে?’

কমে আসে নীলাম্বরীর তেজ।নিভে আসে তার প্রতিবাদী মনোভাব। ভেঙে যায় তার কঠোরতা।হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে রাহাতের সামনে।তার দুনিয়া বাঁচাতে নাহয় এই নিকৃষ্ট মানবের কাছে নিচু হলো তাতেও যদি তার বাবার পাহাড়ের সমান উচু ব্যাক্তিত্ব উঁচু থাকে।তার বোন সসম্মানে বেঁচে থাকে।

নীলাকে এতদিন পর আবার ভেঙে দিতে পেরে শান্তি লাগছে রাহাতের।পৈচাশিক হাসি হেসে বলল
-‘কিরে শেষ তেজ?হাওয়া ফুঁস হয়ে গেলো?নিজের যোগ্যতা টা কোথায় বুঝতে পারছিস তো?আমার পায়ের নিচে তোর পরিচয়। সেখানেই থাকার চেষ্টা কর।বেশি বাড় বাড়িস না।’

নীলা মাথা নিচু করে রাখলো।রাহাত শিস দিতে দিতে বের হয়ে গেলো। দু’হাতে মুখ ঢেকেঁ কেঁদে দেয় নীলা। তার বোনের সম্মান বাবার সম্মান সব বাঁচাতে এসব তাহলে মেনে নিতেই হবে।

চারদিকে সন্ধ্যা নেমেছে।নীলা ঠাঁই বারান্দায় বসে আছে। আধাঁর নেমেছে চারপাশে সাথে নীলার মন আকাশেও।নীলা উঠে দাঁড়ালো।গোসল করতে হবে।এভাবে বসে থাকলে চলবে না তাকে কিছু করতে হবে।

একটা সাদা রঙের গোল ফ্রক নিয়ে স্নানাগারে চলে গেলো।বেশ খানিকটা সময় নিয়ে আজ গোসল সেড়ে বের হলো।লম্বা লম্বা চুল গুলো বেয়ে পানি ঝড়ছে।

নীলা আকাশী রঙের উড়না টা মাথায় জড়িয়ে নামাজে বসে যায়। এই একটা উপায় আছে তার সব সমস্যার সমাধান হিসেবে।

বর্ণ নীলার মাথার ক্ষতের অবস্থা দেখার জন্য নীলার রুমে এসেছিলো। কিন্তু দরজা অব্দি এসে থেমে যায়। বিবর্ণ নীলাম্বরীর এ কি শুভ্র রূপ! প্রেমিক পুরুষের হার্টবিট মিস করে।শ্বাস নেওয়াটা দুষ্কর হয়ে যায়। মেয়েলী শ্যাম্পু আর সাবানের একটা গন্ধে মিলেমিশে একাকার হয়ে আলাদা একটা জগৎ সৃষ্টি করেছে।বর্ণ শুষে নিচ্ছে সব টুকু ঘ্রাণ।

নীলা নামাজ শেষে উঠে দাঁড়ানোর সময় চোখ গেলো দরজার দিকে।বর্ণ চোখ বন্ধ করে আছে দেখে ভ্রু কুঁচকে উঠে রমনীর।নীলা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে শব্দ করে চিরুনি নেয়।তারপর চুল আঁচড়ানো শুরু করে।

হালকা শব্দে ধ্যান ভাঙে বর্ণের।নিজের কাজেই লজ্জা পায় বর্ণ।তারপর গলা পরিষ্কার করে নীলার উদ্দেশ্যে বলে
-‘আসবো?’

নীলা গম্ভীর কন্ঠে বলল
-‘আসুন।’

বর্ণ রুমের ভিতর এসে দাঁড়ায়। কীভাবে কথা শুরু করবে কথা ভেবে পাচ্ছে না সে।বেশ খানিকক্ষণ সময় নেওয়ার পর নরম স্বরে বর্ণ বলল
-‘আমাকে ক্ষমা করবেন নীলাম্বরী। গতকাল আপনাকে না নিয়েই ভুল বুঝে চলে এসে ছিলাম।’

রমনী তাকায় না মানুষটার দিকে। নিজের মতন করে চুল আঁচড়িয়ে যায়। বর্ণ ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল
-‘সরি।আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আর আমার তখনের ঐ রাগান্বিত আচরণ টাও ভিত্তিহীন। আসলে আপনি তখন ঐ লম্পট টাকে কাজিন বলে পরিচয় দেওয়ায় রাগটা আরও বেড়ে গিয়েছিল।’

নীলা আয়নার মাঝে বর্ণের প্রতিবিম্বের দিকে তাকায়। তারপর কন্ঠে আগের ন্যায় গম্ভীর ভাব বজায় রেখে বলল
-‘এটা বলতেই এসেছেন?’

বর্ণ মাথা তুলে তাকায় রমনীর পানে।তারপর মাথা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে বলে
-‘না আপনার কপাল এখন কী অবস্থা দেখতে আসছি।’

-‘ওহ্,আমার কপাল ঠিকই আছে এখন।’

বর্ণ দ্বিমত পোষণ করলো নীলার কথায়। এগিয়ে এসে বলল
-‘আপনি পুরো ব্যান্ডেজ টা ভিজিয়ে ফেলেছেন।সেটা পাল্টাতে হবে।নাহয় কপালের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।’

নীলা কতক্ষণ তাচ্ছিল্য হাসি হেসে বলে
-‘তাহলে বোধহয় আমার ভাগ্যে ভিজা ব্যান্ডেজ মোড়ানো আছে তাই ভাগ্য খারাপ যাচ্ছে তাই না!’

নীলার কথার আগামাথা বুঝে না বর্ণ।কেবল ড্যাব ড্যাব তাকিয়ে থাকে।নীলা কথা ঘুরাতে বলে
-‘আচ্ছা তাহলে দেন ব্যান্ডেজ টা পাল্টিয়ে।’

বর্ণ নীলাকে খাটে বসতে বলে। তারপর সযত্নে ক্ষতটা পরিষ্কার করে নতুন ব্যান্ডেজ করে দেয়। তারপর বর্ণ উঠে দাঁড়িয়ে বলে
-‘কপালের ভিজে ব্যান্ডেজ খুলে যেহেতু খারাপ হওয়া থেকে বাঁচাতে পেরেছি একবার নাহয় ভাগ্যের টারও দ্বায়িত্ব নিবো।’

নীলা এবার ড্যাবড্যাব করে তাকায়। বর্ণ মুচকি হেসে চলে যেতে নিয়েও দরজা অব্দি গিয়ে দাঁড়ায় তারপর নীলার দিকে ফিরে বলে
-‘শুনেন।’

নীলা প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকায়। জিজ্ঞেসিত স্বরে বলে
-‘বলেন।’

বর্ণ মুচকি হেসে বলে
-‘শুভ্র আর আকাশি রঙে আপনাকে আমার ঠিক আকাশ আকাশ লাগে।’

নীলা বর্ণের এরূপ কথায় অবাক হয়।অন্য কেউ বললে হয়তো বিরক্ত হতো কিন্তু বর্ণের কথায় বিরক্তবোধ হচ্ছে না দেখে নিজের আচরণে অবাক হয় নীলা।তার থেকে বেশি অবাক হয় ঐ কথায় সে মুগ্ধ হয়েছে ভেবে।

বর্ণ মুচকি হাসি দিয়ে আবারও বলে
-‘শুনেন।’

নীলা অবাক কন্ঠে বলে
-‘আবার কি! বলেন।’

বর্ণ হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে
-‘আমার আকাশ বেশ পছন্দ।আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় সব দুঃখের সমাপ্তি জেনো এইখানে।আপনি আমার আকাশ হবেন?বর্ণের বিবর্ণ আকাশ?’

নীলার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব।বিষ্ময় স্বরে বলে
-‘কি বলছেন এসব!’

বর্ণ এবার যেতে যেতে বলে
-‘যখন বুঝার হবে তখন আমি না বললেও বুঝবেন।এখন আপাতত ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আপনার চুল গুলো বেধেঁ বের হবেন।কারণ আমার আকাশ আমার সম্পত্তি। তার সবটাই আমার কাছে বিশেষ। বিশেষ জিনিস বিশেষ মানুষকে দেখাতে হয় সবাইকে না।’

নীলা বর্ণের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আনমনেই চুলটা বেধেঁ ফেলে।তার এই কাজের ব্যাখা সেও জানেনা।তবে এতটুকু জানে সে কারো আকাশ।নীলাম্বরীরা পায়ের নিচে না আকাশ হওয়ার যোগ্যতা রাখে।#বিবর্ণ_নীলাম্বরী
#মম_সাহা

পর্বঃ ষষ্ঠাদশ

সন্ধ্যার নাস্তা দিচ্ছে সবাইকে।আড্ডার সাথে নাস্তাও খাচ্ছে সবাই।কিন্তু একজনের নাস্তার দিকে কোনো হুঁশ নেই।সে নীলাম্বরীর দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ দৃষ্টিতে। এই প্রথম নীলাম্বরীর উপর তার মুগদ্ধতা কাজ করছে।সে মানুষ টা আর কেউ না রাহাত।

নীলাম্বরী যখন সাদা জামার সাথে আকাশী রঙের উড়না মাথায় জড়িয়ে ড্রয়িং রুমে এসেছিলো ঠিক তখন থেকে রাহাতের দৃষ্টি যে আটকালো রমনীর দিকে এখনও দৃষ্টি ফেরানোর ইচ্ছে জাগছে না।

রাহাত মনে মনে নিজেই অবাক হয় নিজের মুগ্ধতা দেখে।তার সাথে এটা ভেবেও অবাক হয় সে কখনো নীলার দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকায় নি বা নীলাকে এত গভীর ভাবে খেয়াল করেও নি।নীলার রূপ নিয়ে এতদিন যা বলতো তা মনের ক্ষোভ থেকে কিন্তু আসলে নীলা একেবারেই তেমন না।মেয়েটার গায়ের রঙ বেশ উজ্জ্বল শ্যামলা বললেও চলে।মুখটা গোলগাল,ছোট।বেশ সুন্দর বা মায়াবী বললেও চলে।

রাহাত এবার নিরুপমার দিকে তাকায়। বরাবরই সে সৌন্দর্যের পূজারী। সুন্দর মেয়েই তার দুর্বলতা। কিন্তু আজ জেনো ফর্সা নিরুপমার সৌন্দর্যও নীলার সৌন্দর্যের কাছে নগন্য মনে হচ্ছে।

রাহাতের এমন দৃষ্টি চোখ এড়ায় না দুজনের। একজন আরেকজনকে ইশারা দিয়ে কিছু একটা বোঝায়।

নীলা চা খাচ্ছিলো।এর মাঝেই নীড় এসে বলল
-‘ছোট আপু তোমার সাথে আমার একটু দরকারী কথা ছিলো।’

নীরা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।তারপর বলে
-‘জ্বি ভাইয়া বলেন।’

নীড় হেসে বলে
-‘এটা সিক্রেট কথা।তুমি একটু এখানে আসো।’

নীলা নীড়ের সাথে ড্রয়িং রুম থেকে একটু কিনারে গিয়ে দাঁড়ায়।নীড় মাথা চুলাকে বলে
-‘ছোট আপুই ভাইয়া তো ঘরে একা আছে।তুমি যদি ভাইয়ার নাস্তাটা আমাদের রুমে নিয়ে দিয়ে আসো ভালো হতো।’

নীলা কতক্ষণ নীড়ের দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে বলল
-‘ওহ্ এই কথা ভাইয়া।এটা বলার জন্য আড়ালে ডাকলেন!আমি ভাবলাম কি না কি।আচ্ছা আমি নিয়ে যাচ্ছি।’

নীড় মুচকি হেসে বলল
-‘ছোট আপু আরেকটা কথা ছিলো।’

নীলা মাথায় ইশারা করে বলল
-‘কি কথা ভাইয়া।’

নীড় মাথা নিচু করে বলল
-‘তুমি রাতের খাবার অব্দি আমাদের রুমে থাকবে প্লিজ।আমি রং আর তোমার আপুকে পাঠিয়ে দিবো আমাদের বাসায়। কেমন?’

নীলা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
-‘কেনো ভাইয়া?’

নীড় শান্ত স্বরে বলল
-‘আসলে আমরা আড্ডা দিবো কেমন।তুমি যাও।’

নীলা মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। নীড় কাউকে মাথা দিয়ে ইশারা করে কিছু একটা আশ্বাস দিলো।

_______

নীলা নাস্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বর্নের রুমের সামনে।ভিতর থেকে দরজা আটকানো।ফ্লাটের গেইট খোলা ছিলো বিধায় চলে আসতে পেরেছে।বর্ণদের বাসার সবাই তাদের বাসায় আড্ডা দিচ্ছে।

নীলার অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। নক দিবে কি না ভাবতে ভাবতে নক দিয়েই দিলো।ভিতর থেকে বর্ন বলল
-‘ইয়েস কামিং।’

নীলা গুটি গুটি পায়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো।তারমানে দরজা ভিরানো ছিলো।বর্ণ মোটা একটা বই নিয়ে পড়ছে।একবারও মুখ তুলে তাকায় নি।হয়তো বুঝতে পারে নি নীলা এসেছে।

নীলা খাবার টা ছোট সেন্টার টেবিলে রেখে দাঁড়াল। তারপর ছোট্ট স্বরে বলল
-‘আপনার বিকালের নাস্তা পাঠিয়েছে। খেয়ে নিন।’

পরিচিত মিষ্টি মেয়েলী স্বরে ভ্রু কুঁচকে তাকায় বর্ণ।সামনে তার বিবর্ন নীলাম্বরীকে দেখে আনন্দের মুচকি হাসি দেয়।বইটা বন্ধ করে বলে
-‘আরে নীলাম্বরী যে।তা কীভাবে এই অধমের উপর এত দয়া হলো?তার ঘরে আপনার পদ ধূলি ফেললেন।’

নীলা হালকা হেসে বলল
-‘অধম তো আর নীলাম্বরীকে আমন্ত্রণ জানায় নি আসার জন্য তাই আসে নি।’

বর্ণ মুচকি হাসে নীলাম্বরী যে তাকে স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছে সেটাই অনেক।বর্ণ খাটে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল
-‘এই অধম আর পুরো ঘর নীলাম্বরীর চরণ তলে রাখলাম।অধমের কি এত সাধ্য আছে যে আমন্ত্রণ করবে নীলাম্বরীকে।সে বরং নিজেকে সমর্পণ করলো নীলাম্বরীর কাছে।’

বর্ণের বলার ভঙিতে হেসে দেয় নীলাম্বর। হাসতে হাসতেই বলে
-‘হয়েছে হয়েছে আর ঢং করতে হবে না।বসে খাবার টা খান।’

বর্ণ মুগ্ধ হয়ে নীলার হাসির দিকে তাকিয়ে আনমনেই বলে
-‘আপনাকে হাসলে কি যে সুন্দর লাগে তবুও আপনি হাসেন না। কেন বলুন তো?’

নীলাম্বরীর হাসি থেমে যায়। মনে পড়ে যায় রাহাতের কথা। তার হাসি তো ঐ ছেলেটাই কেড়ে নিয়েছে।

নীলাম্বরীকে হঠাৎ চুপ হতে দেখে বর্ণ বলে উঠলো
-‘কার কথা মনে পড়ে গেলো আপনার?’

নীলা অবাক হয়।তার যে অন্য কারো কথা মনে পড়ে গেলো সেটা বর্ণ বুঝলো কীভাবে। নীলাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে বর্ণ সোফায় বসতে বসতে বলল
-‘কাউকে ভালোবাসতেন তাই না?’

বর্ণের প্রশ্নে জেনো ঘাবড়ে গেলো নীলা।লোকটা বুঝলো কীভাবে? কোনো মতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না যে সে যা বুজেছে তা ই ঠিক।আমতাআমতা করে নীলা বলল
-‘কি বলছেন এসব!’

-‘আপনাকে বড়াবড়ই আমি সত্যবাদী ভাবি নীলাম্বরী।আশা করি মিথ্যা কিছু আপনার মুখ থেকে শুনবো না।’

নীলা চুপ হয়ে যায়। এখানে আর মিথ্যা বলার কোনো স্কোপ নেই বুঝাই যাচ্ছে।নীলা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। বর্ন হা হা করে হেসে উঠে।নীলা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।বর্ণ নীলার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতেই বলে
-‘আরে এত ঘাবড়ে গেলেন কেনো নীলাম্বরী? আ’ম জাস্ট জোকিং।’

নীলাম্বরী স্বস্তি পেলো।জোড়ে একটা শ্বাস ফেলল।বর্ণ খেতে খেতে বলল
-‘যে ভালোবাসার কথা মাথায় আসলে এক ঝাঁক অস্বস্তি মিলে আর যাই হোক সেটা ভালোবাসা না। জানেন তো নীলাম্বরী মোহ আর ভালোবাসাকে আমরা গুলিয়ে ফেলি।মোহ হলো যা একদিন কেটে যাবে।আর ভালোবাসা হলো যা চিরন্তন।আপনি না থাকলেও আপনার ভালোবাসা ঠিকই থেকে যাবে।আপনাকে এসব বলছি জেনো আপনি ভালোবাসা আর মোহ দুটিকে আলাদা করতে পারেন।’

নীলা জেনো এতটুকু কথায় অনেক কিছু জানতে পারলো।মনে মনে প্রশ্ন করলো তাহলে কি রাহাতের প্রতি যেটা ছিলো সেটা ভালোবাসা ছিলো না!!

____

সকাল বেলা আজিজুর রহমান হাঁটতে বের হন।আজ তার সাথে নীলাও বের হয়েছে।বাবার সাথে সময় কাটানো ও হয়ে যাবে সাথে দরকারি কথাও হয়ে যাবে।

হাঁটতে হাঁটতে তারা একটা পার্কে এসে বসে।আজিজুর রহমানের পাশে নীলা এসে বসে।

তাদের সামনে ছোট্ট একটা মেয়ে তার মাকে হাওয়াই মিঠাই কিনে দেওয়ার বায়না করছে।মা সযত্নে হাওয়াই মিঠাই কিনে মেয়ের হাতে তুলে দিচ্ছে।

নীলার ছোট বেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেছে। সে হাসি মুখে বাবার দিকে ফিরে দেখে বাবা নেই।অবাক হয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখে তার বাবা তার সামনে একটা হাওয়াই মিঠাই ধরে আছে।

নীলা হাসি মুখে বাবার থেকে মিঠাই টা নিলো।আজিজুর রহমান মেয়ের পাশে বসে বললেন
-‘পিচ্চি মেয়েটাকে দেখে আমারও ছোট বেলার নিরু আর নীলুর কথা মনে পড়লো।তারও কত বায়না করতো।এখন মেয়েরা বড় হয়েছে।বায়না করা ভুলে গেছে কিন্তু বাবা মা কি আর সন্তানের পছন্দ ভুলে যায়?’

নীলা হাসে।বাবার হাতটা আলতো করে জড়িয়ে ধরে। তারপর নিবিড় স্বরে বলে
-‘বাবা নিরু আপার বিয়েটা একটু তাড়াতাড়ি দিয়ে ফেলছো না?’

আজিজুর রহমান হাসি মুখেই বলে
-‘কেন মা?তোমার এমন কেন মনে হলো?’

নীলু কথা ঘুরিয়ে বলে
-‘আসলে বাবা আমরা তো তোমার দুটো মেয়ে।আমাদের এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিলে তোমরা কার সাথে থাকবে?’

আজিজুর রহমান হা হা করে হেসে ফেলেন।মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন
-‘সেই জন্যই তো ঘরের মেয়েকে ঘরে রাখছি।রাহাতের সাথে বিয়ে হলে নিরু তো ঘরেই থাকবে।’

নীলু আনমনেই বলে উঠে
-‘বাবা রাহাত ভাইয়ের সম্পর্কে আরেকটু ঘেটে দেখতে।’

আজিজুর রহমান ভ্রু কুঁচকে বলে
-‘মা ও তো আমাদের ঘরের ছেলে।কি আর ঘেটে দেখবো।’

নীলু ধ্যান ভাঙে। বাবাকে কিভাবে বুঝাবে সে রাহাত যে খারাপ।

নীলু কিছু ভেবে না পেয়ে উঠে দাঁড়ায়।বাবাকে বলে বাসায় যাওয়ার কথা।আজিজুর রহমান মেয়ের কথায় সাঁই দিয়ে হাটঁতে শুরু করলেন এবং বললেন
-‘মা একটা গান শুনেছো?’

নীলা মাথা নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে
-‘কি গান বাবা?’

আজিজুর রহমান হাঁটতে হাঁটতে গান ধরলেন
-‘সময় গেলে সাধন হবে না,,
দিন থাকতে দিনের সাধন কেনো করলে না,,
সময় গেলে সাধন হবে না।’

#চলবে

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here