বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি পর্ব ৮+৯+১০

বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি

উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)

পর্ব :৮

ধুলোবালি জমা লাইব্রেরীর শেষ প্রান্তে গুনে খাওয়া কাঠের সেল্ফের আড়ালে সেহের হাত পা গুজে থর থর করে কাঁপছে।ঘামে পুরো শরীর ভিজে।বাহিরে এখনো শোরগোল চলছে।কান্না চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসছে।সেহের মাথা উঁচু করে জানালার ফটক দিয়ে তাকাতে দেখে জায়গা জায়গায় আগুন জ্বলছে।সবার হাতে দাঁ ছুঁড়ি । সাথে সাথে সেহের ভয়ে মাথা নামিয়ে ফেলে।ফোন হাতে নিয়ে মাকে ফোন দিতে নিলে দেখে মায়ের নাম্বার ব্যস্ত ।সেহের দিশাহারা হয়ে কাঁদতে লাগে।এমন সময় লাইব্রেরীতে কয়েকজন ডুকে পরে ভাঙচুর করতে লাগে।তাদের মধ্যে একজন বলে,”মন্ত্রীর দলের যারে সমানে পাবি ,কোপাবি! ছেলে মেয়ে চাকর বাকড় গুনবি না। ”
অন্যজন বলল,”শুনলাম ঐ মাইয়াটা এদিকে আইছে। আরহামের খাস ঐ মাইয়া।খুঁজা বাইর কর ”
সেহের ভয়ে শব্দ করে কেঁদে উঠে।সেহেরের কান্নার আওয়াজ হয়তো তাদের কান অবধি পৌছালো।বাহিরে বের হওয়ার জন্য দরজার দিকে বাড়ন্ত পা পিছিয়ে নেয়।ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে তাকায়।সেহেরকে খুঁজতে লাগে। মুখে কাপড় চেপে ধরে সেহের কান্না আটকানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে। একদম সেল্ফের আড়ালে চলে যায়।যেই সেল্ফের পুছনে খোঁজার জন্য পা বাড়াবে এমন সময় আরহাম তার দলবল নিয়ে লাইব্রেরীতে হাজির। আরহামের সাথে লোকজন লাইব্রেরীতে থাকা ছেলেগুলো এলোমেলো ভাবে মারতে শুরু করে।আরহাম দিশেহারা হয়ে সেহেরকে খুঁজতে লাগে। ফোনের লোকেশন অনুযায়ী সেহের এই রুমেই কোথাও আছে!
লাইব্রেরীর প্রত্যেকটা কোণা আরহাম তন্ন তন্ন করে খুঁজে যাচ্ছে। কোথাও নেই! শেষের সেল্ফের দিকে আসতেই আরহাম থমকে যায়। সেল্ফের আড়ালে সেহেরের উড়নার কোণা দেখা যাচ্ছে। আরহাম দ্রুত সেদিকে ছুটে যায়। দেখে সেহের বাচ্চাদের মত হাঁটুতে মুখ গুজে কান্না করছে। শরীর থর থর কাঁপছে। আরহাম ধরতেই সেহের ছিটকে উঠে। তড়াক করে সরে দাড়ায়। আতঙ্কিত চোখে আরহামের দিকে তাকিয়ে থাকে।পুরো গাঁ কুরবানির রক্ত মাখা পোশাকের মত রক্তে ভরে আছে।মুহূর্তেই সেহেরের চোখে মুখে আরহামের জন্য ঘৃণায় তেতো হয়ে উঠে।আরহাম সেহেরের দিকে হাত বাড়ালে সেহের দূরে সরে যায়।এই মুহূর্তে সেহের প্রচণ্ড ভয় পেয়ে আছে।আরহাম কোনপ্রকার জোর না করে। শান্ত স্বরে বলে,” বাড়ী চলো ”
সেহের আরহাম থেকে দূরত্ব বজায় রেখে ভীতু ভীতু পায়ে সামনের দিকে পা বাড়ায়।আশেপাশে ছেলেগুলোর হাতে লাঠি।লাইব্রেরীর মেঝে রক্তে মাখা ।সেহের ভয়ে চিৎকার করতে গিয়েও থেমে যায়।আরহাম সেহেরের বাহুতে হাত রাখতে সেহের ঘৃণিত দৃষ্টিতে আরহামের দিকে তাকিয়ে বাহু থেকে হাত সরিয়ে দেয়।

গাড়ী বাড়ির সামনে পৌছাতেই সেহের গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পায়ে নিজের রুমের দিকে ছুটে যায়।ওয়াশরুমের শাওয়ারের পানির নিচে দাড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগে।আজকের ঘটনা সেহেরের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে ।এতো দিনের বুঝে থাকা চোখ জোড়া আজ খুলে গেছে।দিন দিন সে একটা ক্রিমিনালের প্রতি দুর্বল হয়ে পরছিলো? খানিকের মোহে পরে, সে কি করে আরহামের বাস্তবরূপ ভুলে গেল? কি করে ভুলে গেল,রেষারেষি রক্ত ঝরানো এসব তাদের নিত্যদিনের খেলা । খানিকের আবেগে গাঁ ভাসিয়ে দিলো! আরহামের সামান্য লোক দেখানো দয়ায় নিজেকে তার কাছে সমর্পণ করতে যাচ্ছিলো।খানিকের আবেগে নিজের বিবেক নষ্ট করছিলো? ছোট থেকে বরাবরই অবহেলা অনাদরে বড় হয়েছে।ভালোবাসা ভালোলাগার অনুভূতি কেমন তা কোনদিন বুঝে উঠতে পারেনি।যেদিন ভার্সিটিতে আরহামের সাথে তার প্রথম ধাক্কা লাগে।সেদিনই মনে ভালোলাগার সৃষ্টি হয়েছিল।সহজ ভাষায় বললে আরহামের প্রতি প্রথম দেখায় ক্রাশ খেয়েছিল।পরে অবশ্য লিয়ার কথায় আরহাম থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিল।কিন্তু সেদিন আরহামের সরি বলার সেই কৌশল সেহেরের মনের মাঝে আরহামের প্রতি খানিক দুর্বলতা সৃষ্টি করেছিলো।আর তারপর বর্ষণের সেই রাতে যখন সেহের জ্বরে ছটফট করছিলো আরহাম পুরো রাত তার পাশে বসে ছিলো।যত্ন করেছে। সেই খারাপ পরিস্থীতিতে তার পাশে ছিলো। যা ভালোবাসা বঞ্চিত সেহেরের জীবনে অনেক বড় পাওয়া ছিলো।উত্তাপ্ত মরুভূমিতে প্রচণ্ড গরমে তৃষ্ণার্ত পথিকের কাছে এক চিলতে পানি যেমন ,ঠিক আরহামের সেহেরের কাছে আসাটাও তেমনি ছিলো।
অভিশপ্ত ছায়ামানবের কারণে কাউকে কোনদিন ভালোবাসার সাহস করেনি।সবসময় নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে ।এখানে আসার পর আরহামের ভালোবাসাপূর্ন বাড়ন্ত হাত সেহেরের ভিতরের বদ্ধ আবেগকে কাবু করে ফেলে।রাক্ষসকে রাজকুমার ভাবতেশুরু করে। চাকচিক্যময় রুপের মোহে পরে।সেহেরের ছেলেমানুষি কনিষ্ঠ মন আরহামের প্রতি অল্পসময়ের জন্য দুর্বল হয়ে পরেছিলো।
সারাজীবন সবার কাছে অবহেলিত মেয়েটা সামান্য ভালোবাসা পাওয়ার লোভে আরহামের পানে বারবার ছুটে চলছিলো ।কিন্তু এখন আর না। অনেক হয়েছে , সেহের নিজের মনকে নিজের উপর কাবু করতে দিবে না।আরহাম নামক মানুষটা থেকে শ’হাত দূরে থাকবে।
এমন ক্রিমিনাল মাইন্ডের মানুষের চরিত্রটাও নিশ্চয় তার বাহিরের রূপের মত নিকৃষ্ট আর জঘন্যতম !
মুছে ফেলবে মনে জেগে উঠা অপূর্ণ আবেগ! মনের মাঝে গড়ে উঠা নামহীন অনুভূতি গুলোকে মাটি চাপা নিয়ে দিবে।এমন বেনামি আগাছা গুলোকে বাঁচিয়ে কি লাভ? আর মুছে ফেললেই বা কি আসে যায়? খানিকের মোহে জড়ানো আবেগই তো! ভালোবাসা তো আর নয় ।

যাকে কেন্দ্র করে এতো ঝনঝট ,তার ব্যক্তিত্ব নিশ্চয় ততটাই নিকৃষ্ট! সেদিনের পর থেকে সেহের আরহামকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে।চোখে ভাজার মত ইগ্নোর করতে শুরু করে।আরহাম বাড়ি থাকলে দিনের বেশিরভাগ সময় লিয়ার রুমে বা আনান আফনানের রুমে কাটাতে লাগে। কারণেঅকারণে নিজের রুমের থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়।যতক্ষণ রুমে থাকে ভেতর থেকে দরজা লক করে বসে থাকে।ভার্সিটিতে আরহামের মুখোমুখি হলে ,দেখেও না দেখার ভঙ্গিতা করে পাশ কাটিয়ে যায়।এমন করে বেশ কয়েকদিন কেটে যায়।সেহের নিজের পড়াশোনা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পরে।অল্পসময়ের মাঝেই আরহামের প্রতি জাগ্রত আবেগ মনের কোন এক কোণায় ধুলাবালির মাঝে দেবে যায়!

বিকালের শেষ প্রহর সেহের বাগানে উপন্যাসের বই খুলে বসেছে।নীলচে আকাশের রক্তিম সূর্যটা ধীরেধীরে পশ্চিমা আকাশে বুকে হেলে পরছে।এমন ওয়েদারে হুমায়ূন স্যারের উপন্যাসের বই আর ধোঁয়া উঠা তপ্ত চায়ের কম্বো মন্দ নয়। বড় বিলাসবহুল বাগানের মধ্যমণি বরাবর সোফায় বসে গভীর মন দিয়ে বই পড়ছে।ঘরের বারান্দা থেকে মেয়েকে একা বসে থাকতে দেখে দিশাও চায়ের আরেকটা মগ হাতে নিয়ে বাগানের দিকে পা বাড়ায়।অনেকদিন হলো মেয়েটার সাথে গল্প করা হয় না।আজ সময় সুযোগ দুটোই আছে!
কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সেহের নড়েচড়ে বসে । কিন্তু চোখ জোড়া তখনো বইয়ের ভেতর মজে।দিশা মেয়ের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।মায়াময় আদুরে মুখ।একদম নিষ্পাপ কলি ফোটা ফুলের মত। নিষ্পাপ মুখখানায় অভিমানের ঝাঁজ স্পষ্ট ফুটে আছে।সেহেরের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে দিশা আগবাড়িয়ে বলল,”কয়েকদিন পর লিয়ার আকদ।তোমার কিছু চাই না ? ড্রেস জুয়েলারি বা অন্য কিছু ..”
“হ্যা চাই,দিতে পারবে ? “বই থেকে মুখ তুলে তীক্ষ্ণ স্বরে বলল।
“তুমি শুধু চেয়ে ত দেখ ঘন্টার ভেতর তোমার সামনে হাজির হবে । “দিশা সুলভ স্বরে বলল ।
“পরিবার চাই। আমার পরিবার । দিতে পারবে? ”
দিশা মেয়ের কথায় থতমত খেয়ে যায়।বিস্মিত চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।সেহের তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
“পারবেনা তো? জানতাম! জন্ম দিয়েছ ,তোমার শ্বশুরবাড়ী তে আশ্রয় দিয়েছ । আমার জন্য তা অনেক। সবকিছুর জন্য তোমার কাছে কৃতজ্ঞ ।”
সেহের অতি অভিমানে কথা গুলো বলে।বই হাতে নিয়ে বাগান থেকে চলে যায়।দিশা মেয়ের যাওয়ার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে।সেহেরের অভিমান জায়েজ । ছোট থেকে অনেক অন্যায় করেছে মেয়েটার উপর ।ইচ্ছা থাকার শর্তেও সুন্দর একটা জীবন উপহার দিতে পারেনি।ছন্নছাড়া যাযাবরের মত মেয়েটা জীবন কাটিয়েছে।কখনো আদর করে মুখে খাবার তুলে দেওয়া হয়নি, বুকে জড়িয়ে ঘুম পাড়ানো হয়নি।শাসন করা হয়নি।দিশা জানে সেহেরের মনে তার প্রতি অনেক অভিমান অভিযোগ জমে। বুঝলেও কোন কিছু করার নেই।বিগত অতীত তো আর ফিরে আনা সম্ভব না! কিন্তু তাই বলে সেহেরের আগামী ভবিষ্যৎ এমন ছন্নছাড়া কাটাতে দিবে না। সুন্দর সোনালি ভবিষ্যৎ গড়বে ।সেহেরেরও পরিবার হবে।এই বাড়ী গাড়ী সব কিছুর উপর তার রাজত্ব চলবে! যেভাবেই হোক সেহেরকে আরহামের বউ করবে!

সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময় সেহের আরহামের মুখোমুখি হলো।আরহাম নিচে নামছে।দুজনের চোখাচোখি হয়।সেহের ভিতু চোখে চোখ নামিয়ে পাশ কাটিয়ে দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে যায়। আরহামের রক্তিম চোখ সেহেরের পানে তাকিয়ে । বেখেয়ালি সেহের কি বুঝলো? এর ফল পরবর্তীতে কতটা ভয়ংকর হতে পারে?

রাতে জেগে পড়া সেহেরের পুরানো অভ্যাস । স্কুল জীবন থেকেই সবাই ঘুমিয়ে গেলে নিরিবিলি শান্ত পরিবেশে বই নিয়ে বসে। তার ভাষ্যমতে রাতের গহিনে শান্ত পরিবেশে পড়লে পড়া যত তাড়াতাড়ি মাথায় ডুকে তা দিনের বেলায় কোথায়? ডিভানটায় হেলান দিয়ে পায়ের উপর কুশন নিয়ে বেশ মন দিয়ে টেক্সট বই পড়ছে।আগামীকাল এক্সাম এখনো অনেক পড়া বাকি।ঘড়িতে রাত বারটা ছুঁই ছুঁই সবাই গভীর ঘুমে মগ্ন ।চারিদিকে নিরিবিলি শান্তিময় পরিবেশ।বাহিরের ঝিঝি পোকার ডাক স্পষ্ট শুনা ভেসে আসছে।এমন সময় রুমে কারো আগমন ঘটলো। সেহেরের মনযোগ ছেদ হলো।কুঞ্চিত ভ্রু করে দরজার দিকে তাকালো।আরহামের রক্তিম চোখ দেখে ভীষণ ভয় পেল সেই সাথে চমকালো।সে তো দরজা ভেতর থেকে লক করেছিলো,আরহাম কি করে খুলল? ডুব্লিকেট চাবি দিয়ে?
আরহার এক পা এক পা করে সেহেরের দিকে এগিয়ে আসছে।ভয়ে ধীরেধীরে সেহের ডিভানের সাথে লেগে যাচ্ছে।আরহাম সেহেরের সামনে এসে হাত টেনে তাকে নিজের সামনে দাড় করায়।সেহের থরথর করে কাঁপছে।হাত মচকে সেহেরকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।নত মাথা ধীর গলায় সেহের জিগ্যেস করে,”এ…এতো রা…তে আপনি এখা..নে কি করছেন? ”
সেহেরের প্রশ্নের কোন জবাব মিলল না।আরহাম রাগে বড়বড় শ্বাস ফেলছে। ভারী ভারী ফোঁস ফোঁস নিশ্বাসের শব্দ ভেসে আসছে।সেহের নিজেকে আরহাম থেকে ছাড়াবার চেষ্টা করলে আরহাম শক্ত হাতে চেপে ধরে।ব্যথাতুর স্বরে সেহের “আহ” করে উঠলো ।শব্দটা হয়তো আরহামের কান অবধি পৌছয় না।আরহামে সেহেরের গাল চেপে মুখ উঁচু করে রাগে ফসফস করতে করতে বলে,”আমার বাড়ী ,আমার রাজত্ব! আমাকেই এড়িয়ে চলা হচ্ছে? ”
“আহ! ছাড়ুন ,আমার লাগছে! “সেহের অস্পষ্ট ব্যথিত স্বরে বলল।
“লাগুক ,আরো লাগবে! যেই পর্যন্ত আমি আমার উত্তর না পাচ্ছি”
“কি ,করছেন কি? কি চাই আপনার? ”
সেহের কান্না জড়িত স্বরে বলল।আরহাম ক্ষান্ত হলো না। দাঁতে দাঁত চেপে বলল ,”এন্সার ,কি সমস্যা তোমার? ”
“আমার আপনাকে ভীষণ অপছন্দ ।ঘৃণা করি ,শুনেছেন? ”
“কাকে পছন্দ? ওই নিতান কে! আজকাল ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে কার সাথে চায়ের আড্ডা দেওয়া হয় কি ভেবেছ আমার জানা নেই ? ”
সেহের আরহামের কথায় ঘাবড়াল।ভিতু ভিতু চোখে একবার আরহামের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলল ।আরহাম বাঁকা হেসে রাগী স্বরে বলল,”কেন শুধু শুধু একটা মায়ের কোল খালি করতে চাইছ? শুনো মেয়ে , ভালোবাসো বা ঘৃণা করো আই ডোন্ট কেয়ার। তোমার সীমানা যেন আমি অবধি সীমিত থাকে।অন্যকোন দিকে চোখ ঘুরলে তুমি আন্দাজও করতে পারবে না,এর ফল কতটা ভয়ানক হবে । ”
সেহেরকে ডিভানের উপর সজোরে ধাক্কা দিয়ে আরহাম রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে যায়।সেহের অশ্রুঝরা থমথমে চোখে আরহামের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি

উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)

পর্ব :৯

তিন ঘন্টা পরিক্ষার হলে বসে থেকে সেহেরের নাজেহাল অবস্থা।কোমর বেঁকে গেছে। গতরাতে ভালো ঘুম হয়নি। প্রথম পরিক্ষার টেনশন দ্বিতীয়ত আরহামের শাসিয়ে যাওয়া।চোখজোড়া ঘুমে বুঝে আসছে।বড় এক হাই তুলে ক্লাস রুমের বাহিরে বের হয়।মেঘলা গুমট আকাশ । আবছা গরম গরম ভাব। আশেপাশে তেমন কোন লোকজন নেই।কেউ পরিক্ষার হলে কেউবা অনেক আগেই চলে গেছে।সেহের দু’কদম সামনে যেতেই নিতানকে দেখতে পায় বত্রিশ দাঁত বের করে হাসি দিয়ে দাড়িয়ে।জোরপূর্বক সেহের ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা টানে।নিতান নিজ থেকে আগবাড়িয়ে সুলভ স্বরে বলল,”এক্সাম কেমন হলো? সব কমন পরেছিলো ত? ”
“জি ভালো! নোট গুলো খুব কাজের ছিলো।আপনি ছেলেটাকে বলেছিলেন বলেই নোট গুলো দিয়েছিলো । ধন্যবাদ”
“ধন্যবাদের কিছু নেই।তাছাড়া তুমি যদি একান্তই ধন্যবাদ জানাতে চাও তাহলে আজ সন্ধ্যায় কফি ডেটে চলো! ”
সেহের নিতানের কথায় অপ্রস্তুত হয়ে পরে।নিতান তা বুঝতে পেরে ঝোপ বুঝে কোপ বসাল।বলল,”তোমার যদি সমস্যা থাকে নো প্রব্লেম এসো না।জোরাজোরির কিছু নেই। আই আন্ডারস্ট্যান্ড নতুন শহর নতুন লোক বিশ্বাস করতে পারছ না।”
সেহের অপ্রস্তুত স্বরে বলল,”না এমন কিছু না।আমি আসবো! ”
সেহেরের কথায় নিতান উল্লাসিত স্বরে বলে,”ঠিক সন্ধ্যা সাতটায় আমি তোমার অপেক্ষা করবো।কেমন? ”
সেহের জোরপূর্বক হেসে ‘হ্যা ‘সূচক মাথা নাড়াল।নিতান আবার বলল,”এড্রেস ফোনে মেসেজ করে দিবো।”
নিতান চলে যায়।সেহের নিতানের যাওয়ার দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কে বলবে এই সহজ সরল চেহারার পিছনে নিকৃষ্ট একটা রূপ লুকিয়ে আছে? সেহের সাথে সাথে ফোন বের করে, লিয়াকে ক্যান্টিনে আসতে বলে।

ক্যান্টিনের শেষ টেবিলটায় লিয়া সেহের পিয়াল বসে আছে।তিন জনই গম্ভীর মুখ করে গভীর চিন্তায় মগ্ন।লিয়া চিন্তিত স্বরে বলে,”সত্যি ই কি তুমি যাবে? আই মিন সে কতটা ডেঞ্জারাস তুমি তো জানো ”
“না যেয়ে উপায় কি? ভিডিও ক্লিপ তো নিতে হবে।তুমি কি নিশ্চিত ভিডিওটা নিতানের ফোনেই আছে? ”
লিয়া মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয়,”হ্যা ভিডিওটা ফোনেই আছে। ”
পিয়াল ভাবনাগ্রস্ত স্বরে বলল ,”তোমার সাথে নিতানের কি করে পরিচয়? আর ভিডিওটাই বা তার কাছে কি করে গেল? ”
লিয়া ভিতু থতমত স্বরে,”যখন ফাস্ট ইয়ারে ছিলাম নিতানের সাথে আমার পরিচয় হয়।আমাদের মাঝে নরমালি সিনিয়র জুনিয়রের সম্পর্ক ।জাস্ট এতোটুকুই।দাদাজানের ইলেকশনের সময় আরহাম ভাইয়ের সাথে তার ঝামেলা হয় এর পর থেকে নিতানকে এড়িয়ে চলি।কিন্তু হ্ঠাৎ সেদিন রাইসার বার্থডে পার্টিতে আবার দেখা হয়।নিতান আগবাড়িয়ে কথা বললে আমি সৌজন্য সুলভ ভাবে কথা বলি।হঠাৎ তার হাত থেকে আমার গায়ে ড্রিংক পরে যায়।আমি ক্লিন করার জন্য ওয়াশরুমে যাই ।এ সুযোগে নিতান আমার পিছু নেয়।রাইসার বেডরুমে পৌছয়।আমার সাথে জোরজবরদস্তির চেষ্টা করে।আমি রেগে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে কোনরকম বেরিয়ে আসি।এরপর আর কোন যোগাযোগ হয়নি।কয়েকদিন আগে এক রাতে নিতান তার ফেসবুক একাউন্ট থেকে রাইসার বার্থডের কয়েকটা ছবি পাঠায়।যেখানে স্পষ্ট মনে হচ্ছে আমি নিজ থেকে নিতানের সাথে এটাচ হয়েছি।হুমকি দিয়েছে আমি যদি ওর শর্তে রাজী না হই তাহলে এই ছবি গুলো ওয়াহিদের পরিবারের কাছে পাঠাবে।”
“নিতান এমন কি শর্ত দিয়েছে? “পিয়াল প্রশ্ন করলো।লিয়া নিচু স্বরে আমতা আমতা উত্তর দিলো ,ওই জানোয়ারটা এক রাতের জন্য সেহেরকে তার বেড পার্টনার হিসাবে চায়।”
পিয়াল রাগে গরগর করতে করতে বলে,”কি জানোয়ার ওকে তো মেরে কুচি কুচি করে ফেলা উচিত! ”
সেহের ছোট নিশ্বাস ছেড়ে শান্ত স্বরে বলে,”যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।আমাদের এখন ঠাণ্ডা মাথায় প্লান অনুযায়ী কাজ সারতে হবে। ”
“যদি বুঝে যায়? তোমার কোন ক্ষতি করে? ”
“বুঝবে না ,আর ওর এতো সাধ্যি নেই যে ও আমার ক্ষতি করবে।যদি করতে পারতো তাহলে এতো দিন অপেক্ষা করতো না। অনেক আগেই করতো । লিয়াকে ব্লাকমেইল করে আমার অবধি পৌছাতে চাইতো নাহ ”
লিয়া ভীতু গলায় বলল,”এবার কি করবে? ”
“কি আর, প্লান অনুযায়ী বাকি কাজ করবো। নিতান জানে আমি ওঁর আসল রূপ সম্পর্কে এখনো জানিনা । নিতানের কথা মত লিয়া ওঁর সাথে আমার বন্ধুত্ব করিয়ে দিয়েছ।আর যা হচ্ছে সবটা নিতানের ইচ্ছামত হচ্ছে।আমি আজ কফি ডেটে যাবো ঠিক সুযোগ বুঝে ওঁর ফোন চুরি করবো ।”
“ফোনে যদি ভিডিও না থাকে? “পিয়াল প্রশ্ন করলো।সেহের কিছু একটা ভেবে উত্তর দিলো ,”ওকে উল্টো ব্লাকমেইল করার মত তথ্য ত ফোনে অবশ্যই থাকবে । তাই না? লিয়ার কথা অনুযায়ী এর আগেও ও আরো অনেক মেয়ের ভিডিও করে তাদের ব্লাকমেইল করে বেড পর্যন্ত নিয়ে গেছে।ঐসব প্রমাণ হাতে পেলেও যথেষ্ট ওঁর বিরুদ্ধে লিগ্যাল স্টেপ নেওয়া যাবে । ”
“তুমি একা এসব করবে? “পিয়াল বলল ।সেহের হ্যা সূচক মাথা নাড়াতেই লিয়া হুংকার দিয়ে বলল,”মোটেও না! আমি তোমাকে একা ওই জানোয়ারের কাছে যেতে দিবো না।আমার জন্য তোমাকে বিপদে পরতে দিবো না। তোমার সাথে আমিও যাবো ”
সেহের লিয়ার হাতে হাত রেখে আশ্বস্ত স্বরে বলল,”আমার উপর ভরসা রাখো ।কিছু হবে না।আর তাছাড়া তুমি গেলে বাড়ীতে কে সামলাবে? তারউপর দুদিন পর তোমার আকদ।সন্ধ্যায় বের হলে নানা প্রশ্ন উঠবে! এরচেয়ে বরং তুমি বাড়ীতে সামাল দিও আমি এদিকটা দেখবো! কেমন? ”
লিয়া অনিচ্ছাকৃত ভাবে মাথা নাড়াল।মন কেমন জানো কু ডাকছে ।মনে হচ্ছে বড় কিছু ঘটবে !

নিতানের পাঠানো এড্রেস অনুযায়ী সেহের পাঁচ তারকা হোটেলের সামনে দাড়িয়ে।ভিতরে ডুকতেই কর্নারে এক টেবিলে নিতানকে দেখতে পায়।হাত উঁচু করে সেহের কে ডাকছে।সেহের মুখে জোরপূর্বক হাসির রেখা টেনে নিতানের দিকে এগিয়ে যায়।বাহিরে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে ।নিতান সেহের মুখোমুখি বসে।নিতান মেনু দেখে কফি অর্ডার করেছে যার মূল্য তিন হাজার টাকা।ওয়েটার কফি নিয়ে আসলে সেহের কুঞ্চিত ভ্রু করে বিচক্ষণ চোখে কফির কাপে স্বর্নের টুকরা খোঁজার চেষ্টা করে।এমন কি আছে এই কফিতে যার মূল্য তিন হাজার টাকা? পাঁচ তারকা হোটেল বলেই কি আকাশ চুম্বী দাম রাখবে?
সেহেরের ভাবনায় ছেদ পরে নিতানের গলার স্বরে,”কি হলো খাচ্ছ না যে? ”
সেহের মুচকি হেসে উত্তর দিলো ,”এই তো নিচ্ছি ”
“বায় দ্যা ওয়ে তোমাকে সাদারঙে অপ্সরী লাগছে ”
“ধন্যবাদ! “সেহের গম্ভীর স্বরে বলল।দুজনের মাঝে পিনপতন নীরবতা । নীরবতা ভেঙে নিতান আবারো বলল,”তুমি কি অস্বচ্ছন্দ বোধ করছ? ”
“জি নাহ ,আমি ঠিক আছি।”
কফি মুখে দিতে কেমন জানো অদ্ভুত ব্যতিক্রম এক স্বাদ অনুভব করে । কয়েক চুমুক খাওয়ার পর মাথা ঝেঁকে উঠে। এমন সময়ই সেহেরের ফোন বেজে উঠে।লিয়া কল করেছে।নিতান সামনে থাকায় সেহের ফোন রিসিভ করল না।ফোন আরো কয়েকবার বাজল।জরুরী কোন তলব হয়তো। শেষ অবধি কোন উপায় না পেয়ে সেহের নিতান থেকে সামান্য দূরে সরে ফোন রিসিভ করলো।হ্যালো বলার পূর্বেই অপরপাশ থেকে লিয়ার অস্থির স্বর ভেসে আসে।লিয়া বলল,”কাজ হয়েছে? ”
“নাহ ,মাত্র পৌছিয়েছি! ”
“আরহাম ভাই সব জেনে গেছে । ভিডিও থেকে শুরু করে সবটা।ভীষণ রেগে বেরিয়েছে তোমার কাছেই হয়তো আসছে । সাবধান! ”
লিয়ার কথা শুনে সেহের কেঁপে উঠে ।কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,”কি করে জানলো ? ”
“তোমাকে বাড়ীতে না দেখে আমার কাছে জিগ্যেস করে ..আর …আমি ”
“আর তুমি সবটা বলে দিলে? ”
“না বলা ছাড়া কোন উপায় ছিলো না।ভাইয়া ভীষণ রেগে ।মনে হচ্ছিল চোখ দিয়ে গিলে ফেলবে ….”
“অকে রিলেক্স ,যা হবার হয়েছে । আমি কাজ শেষ করে এখনি বের হচ্ছি! ”
সেহের কথা শেষ করে নিতানের সামনে বসে।কফির মগে চুমুক দিকে কোণা চোখে নিতানের দিকে তাকায়। নিতানের ফোনটা টেবিলেই আছে।নিতান অন্যমনস্ক হয়ে আশেপাশে দেখছে সেহের সুযোগ বুঝে যেই ফোনটা হাতে নিবে এমন সময়ই ফোনটা বেজে উঠে।সেহের ভয়ে কেঁপে উঠে দ্রুত হাত গুটিয়ে নেয়।নিতান ফোন রিসিভ করে বলে,”মাম্মাহ সব রেডি তো? এই তো মামা আর একটু অপেক্ষা করো । ফাঁদ ফেলাইছি পাখি ধরা দিতে যতক্ষণ ”
বলেই নিতান সেহেরের দিকে তাকিয়ে জঘন্য হাসি দেয়। ততক্ষণে কফিতে মেশানো ড্রাগ সেহেরের উপর কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে।নিতান আগে থেকেই ওয়েটারকে টাকা দিয়ে কফিতে ড্রাগ মিশিয়ে রেখেছে।সেহের চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা দেখছে।সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসছে।শরীর কেমন জানো ছেড়ে দিয়েছে।সেহের মাথায় হাত দিয়ে কোন রকম দাড়াবার চেষ্টা করে।এমন সময়ই ধপাস করে চেয়ারে পরে যায়।নিতান হাত বাড়িয়ে ধরতে নিলে সেহের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে আধো আধো স্বরে বলে,”ছাড়ো আমাকে! কফিতে কি মিশিয়েছ? এমন গোল গোল ঘুরছে কেন সব! ”
“ছেড়ে দেবো? এক রাতের জন্য পুরো এগারো হাজার খরচা করেছি ।কিছু না করেই ছেড়ে দিবো? ”
সেহের নিজের শক্তিহীন শরীর নিয়ে হাত পা ছুড়াছুঁড়ির চেষ্টা করে কিন্তু নিতানের শক্তির সাথে কোন ভাবেই পেরে উঠে না। আশেপাশের লোকজন খুব স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছে। পাঁচ তাড়কা হোটেলে এসব স্বাভাবিক । রোজ প্রায় এমন অনেকেই ড্রিংক করে ড্রাংক অবস্থায় পরে থাকে।

আকাশ ভেঙে বর্ষণ নেমেছে । আরহাম হোটেলের সদর দরজায় দাড়িয়ে । পুরো রেস্টুরেন্টের দিকে চোখ বুলায়।দূর কিনারের একটা টেবিলে নিতানকে দেখা যাচ্ছে।সেহেরের হাত ধরে টানাটানি করছে।আরহাম রাগে কাঁপতে থাকে ।চোয়াল শক্ত হয়ে এসেছে । রাগের জন্য এটা সঠিক জায়গা না। চোখ মুখ বন্ধ করে রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করে । কিন্তু কিছুতেই পারছেনা । বড়বড় পা ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।টেবিলের উপর থেকে কাঁটাচামচ নিয়ে সেহেরের দিকে বাড়ন্ত নিতানের হাতে ঢুকিয়ে দেয়। নিতান চিৎকার করে রক্তাক্ত হাত নিয়ে দূরে ছিটকে পরে।আরহামকে দেখে ভয়ে কাঁপতে লাগে।আরহাম নিতানের ফোন পায়ে নিচে পিষে ফেলে। রেগে সিংহের মত গর্জন করে বলে,”তোর মরণ কাছে এসেছে! কোথায় হাত দিয়েছিস তোর জানা নেই।আগেই ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম শুনিসনি ত?…..তোর কলিজা এতো বড় হয়েগেছে মেয়েদের ব্লাকমেইল করিস? তাও আবার আমার বাড়ীর মেয়েদের! মরণ ভয় নেই? ”
নিতান আহত হাত নিয়ে কোনরকম প্রাণ নিয়ে বেরিয়ে যায়।আরহাম নিতানের যাওয়ার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকে।

বৃষ্টি থামার নাম নিচ্ছে না।তার উপর সেহেরের এই পাগলামো।মাতাল সেহের আরহামের হাত জড়িয়ে নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে। সেহেরের এই অবস্থায় এই বৃষ্টির ভেতর বাড়ীতে যাওয়া অসম্ভব। আরহাম হোটেলে রুম বুক করে।আজ রাতটা এখানেই পাড় করবে।আরহাম সেহেরকে কোলে তুলে নেয়।সেহের আরহামের ব্লেজারের কলার শক্ত করে চেপে ধরে। সেহেরের সাদা গোল্ডেন কারুকাজের ওরনাটা মাটি ছুঁই ছুঁই। আরহাম সেহেরকে কোলে করে রুম অবধি নিয়ে আসে।সেহেরকে বিছানায় বসাতেই, সেহের তড়াক করে বিছানার পাশে সোনালি টেবিলের উপর চড়ে।আরহামের আর ভেজা ব্লেজার ছাড়ানো হলো না।রাগী গোমড়া মুখে সেহেরের দিকে তাকিয়ে থাকে।অন্যদিকে সেহের টেবিলের উপর চড়ে পুরো ঘর মাথায় তুলে নিয়েছে ।উল্টাপাল্টা পাগলের প্রলাপ করছে।আরহাম সেহেরের দিকে পা বাড়ালে ,সেহের হঁশিয়ারি স্বরে বলে,”এই গোমড়া মুখো ছেলে! এই ,হ্যা তোমাকেই বলছি ,একদম আমার দিকে পা বাড়াবে না বলে দিলাম!…আ..আমি কামড়ে দিবো । আমি কিন্তু খুব ভালো কামড় দিতে পারি হুহ! ”
আরহাম বিরবির করে বলল,”চাশমিস বিড়াল ”
আরহামের বিরবিরিয়ে কথা সেহেরের কান অবধি পৌছয়।তেতে বলল,”এই রাগী রাক্ষস কি বললে তুমি? আমি চাসমিস? বিড়াল? তুমি জানো চশমা কারা পরে? যারা বেশি জ্ঞানী মাত্রাধিক কিউট সুন্দরী তারাই চশমা পরে ।”
আরহাম সেহেরের কথায় হেসে ফেলে।মজার স্বরে বলে ,”তুমি কিউট ,সুন্দরী ? কই আমার চোখে ত পরছে না!”
“ব্যাটা ,তুমি কানা! তাই তোমার চোখে পরছে না।মন দিয়ে ,ভালো করে দেখো । চারচোখ ,ওহ সরি ,দুই চোখ দিয়ে দেখো ঠিক দেখতে পাবে। ”
“কানা কে তা ত দেখতেই পাচ্ছি । ”
“কি তুমি আমাকে কানা বললে? আমি কানা? আমি বাঁচবো না মরে যাবো । এখনি এখান থেকে ঝাপ দিয়ে সুইসাইড খাবো! ”
“টেবিল থেকে ঝাপ দিয়ে সুইসাইড খাবে? ”
“হ্যা খাবো এখনি খাবো ! তোমার কোন সমস্যা? কেউ আমাকে ভালোবাসে না । না বাবা, না মা ।সবাই আমাকে শুধু দূরে ঠেলে দেয়। কেউ ভালোবাসে না কেউ না ”
কথাগুলো বলতে বলতে সেহের কান্না করে দেয়।নেশার ঘোরে মানুষের আবেগ নিজে নিজেই জেগে যায়। কোন কিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। সেহেরের সাথেও তাই হচ্ছে। নিজের হাসি কান্না কোন আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে পারছে না।হাত ছড়িয়ে সেহের নিজের ঝোঁক টেবিলের দিকে হেলিয়ে দেয়।আরহাম সাথে সাথে ধরে ফেলে।সেহের হাওয়ায় ভাসছে।আরহাম গভীর চোখে সেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে। সেহের গোল গোল চোখে তাকিয়ে অভিমানী স্বরে বলে,”গোমড়া মুখো রাগী রাক্ষস তুমি ধরেছ কেন? ছাড়ো আমাকে? এক্ষণ ছাড়ো! “আরহাম মুচকি হেসে বলে ,”বাহ জাতে মাতাল তালে ঠিক! ”
আরহাম কোলে তুলে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়।সেহের আস্তে আস্তে বিরবির করে বলে,”তুমি আমার কাছে আসবেনা । ছাড়ো আমাকে! তোমার গায়ের মিষ্টি ঘ্রাণ আমাকে বেকাবু করে দেয়।দূরে যাও….”
না শুনার মত করে আরো অনেক কিছু বলল যা আরহামের কান অবধি পৌছয় না।আরহাম সেহেরের চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে গাঢ় চুমু দিয়ে বলল ,”কে বলেছে কেউ ভালোবাসে না? এই যে আমি ভালোবাসি তো । তাও অনেক বেশি! নিজেকে ভুলিয়ে তোমাকে পাই। একবার শুধু তুমি আমার হও দুনিয়ার সব সুখ তোমার পায়ে এনে ফেলবো । কথা দিলাম ”
বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি

উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)

পর্ব :১০

বাহিরে ঘন বর্ষণ।থামার নাম নিচ্ছে না।বর্ষণের সাথে পাল্লা ধরে বিকট শব্দে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ।অন্ধকার ঘরটায় নিতান ছটফট করছে। হাত পা ভারী চেয়ারের সাথে বাঁধা । মুখে কালো কাপড় বাঁধা।হাতে কাঁটাচামচের ক্ষত থেকে টপটপ রক্ত ঝোরছে।মাঝারি সাইজের টেবিলের অন্যপাশে কেউ একজন বসে।টেবিলের উপর ল্যাম্পটা সরাসরি নিতানের মুখের দিকে ঘুরানো ।কাজেই অপর পাশের মানুষটাকে দেখা যাচ্ছে না।চেয়ারের হাতলের উপর নিতানের হাতটা বাঁধা ক্ষত থেকে চুয়ে চুয়ে রক্ত চেয়ার বেয়ে নিচের দিকে পতিত হচ্ছে।শক্তিহীন জীর্ণশীর্ণ নিতান যন্ত্রণায় ছটফট করছে।চিৎকার করার মত শক্তি তার মাঝে অবশিষ্ট নেই।প্রাণ ভিক্ষা চাইবার জন্য গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না।সামনে মানুষটা ভারী স্বরে বলে,
“মেয়েদের শরীর নিয়ে খেলার খুব শখ ? ভিডিও বানানো? তোর কি মরণ ভয় নেই? ”
নিতান কাঁপতে কাঁপতে ভীতু স্বরে বলে,”ক্ষমা করে দিন আমাকে! আমি আর কোনদিন এমন করবো না। ”
“ক্ষমা? ক্ষমার যোগ্য তুই? এতোগুলো অসহায় নিষ্পাপ মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলেছিস! তুই মানুষ না জানোয়ার ।তোর মত জানোয়ারদের একটাই শাস্তি মৃত্যু । শুধু- ই মৃত্যু! ” বলেই নিতানের হাতের পিঠে ধারালো ছুঁড়ি দিয়ে ফালাফালা করতে লাগলো।নিতান অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে। সামনের মানুষটা চিৎকার করে বলে,”এই হাত দিয়ে আমার সেহেরকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছিস ,তাই না? এই হাতই থাকবে! ”
সাথে সাথে হাত দুটো কব্জি থেকে আলাদা করে ফেলে।নিতান অসহনশীয় যন্ত্রণায় চিৎকার করতে লাগে। মানুষটা অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে।নিতান মানুষটার মুখ দেখতেই কেঁপে উঠে আতংক স্বরে বলে,”আরহামম! ”
আরহাম রাগ চেপে ঠোঁটের কোণায় তীক্ষ্ণ হাসি ফুটিয়ে বলে,”উহু ,তোর যম।”
নিতান কেঁপে উঠে।অগোছালো কেউ।রক্তিম চোখ হিংস্রতায় ভরা।অগোছালো কপাল ছুঁই ছুঁই চুল।ঠোঁটে নিষ্ঠুর হাসি।সামনের মানুষটা আরহাম হয়েও যেন আরহাম না। আরহাম থেকে একদম ভিন্ন কেউ ।আরহাম দাঁতে দাঁত চেপে ভারী স্বরে বলে,”আমার সেহের কে বিছানায় নেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিস? তোকে জান- এ না ,তিলে তিলে মারবো ।”
বলেই নিতানের বুকে ধারালো ছুড়ির আরেকটা প্রহার করলো ।নিতান মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে।তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।বড় বড় চোখ করে থেমে থেমে শ্বাস নিচ্ছে।মৃত্যু থেকে আর কয়েক কদমের দূরত্ব । আর একটু তার পর মৃত্যু চিরকালীন ঘুমে শুয়ে পরবে।আরহাম হয়তো নিতানের কষ্টটা বুঝলো।টেবিলের উপর থেকে সাইলেন্ট পিস্তল্টা নিয়ে নিতানের কপাল বরাবর শুট করলো । সাথে সাথে নিতানের সব যন্ত্রনা ছটফটানির অবসান ঘটলো । মৃত্যুর কোলে চিরনিদ্রায় চোখ বুঝে নিলো ।
আরহাম ঠোঁটের কোণে তৃপ্তিকর হাসি নিয়ে অন্ধকার ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

বিদ্যুৎ চমকানোর বিকট শব্দে পুরো শহর কেঁপে ।ঘড়িতে গভীর রাত।চারদিক বৃষ্টির ঝপঝপ শব্দে মেতে।অন্ধকারে কালো রেইনকোট গাঁয়ে কাঁদা মাখা মাটিতে বড় বড় পা ফেলে কেউ হোটেলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। হোটেলের সদর দরজার লাইটের আলো গায়ে পরতেই ,মুখখানা ভেসে উঠে। আরহাম! ,আরহাম সদর দরজা পেরিয়ে সেহেরের রুমের দিকে যাচ্ছে ।দরজা খুলতেই বাহিরের হলদে আলোর রেখা লম্বালম্বি ভাবে অন্ধকার রুমটার মেঝেতে পরে।সেহেরকে গভীর ঘুমে দেখে। আরহাম স্থির নিশ্বাস ফেলে। শব্দহীন পায়ে রুমের ভেতর প্রবেশ করে।আলো ছায়ার অপরূপ খেলায় পুরো ঘর মজে।গাঁ থেকে রেইন কোট ছাড়িয়ে সেহেরের পাশে আধশোয়া হয়ে শুয়ে পরে। নেশাপ্রবণ গভীর চোখে দেখতে লাগে।চোখবন্ধ করে সেহেরের মেঘবরণ লতানো কেশের ডুব দেয়।বেশ কিছুক্ষণ পর মাথা তুলে মুখের দিকে ঝুঁকে গালে হাত ছুঁয়ে ভারী মাতাল স্বরে বলে,”আরেকটা নর্দমার কীট দুনিয়া ছেড়েছে ।কঠিন শাস্তি দিয়ে মৃত্যুর কোলে শুয়িয়ে দিয়েছি ।তোমাকে ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখেছে ,মৃত্যু তো তার পাওয়ারই ছিলো । তাই না? তুমি আমার,শুধুই আমার! তোমার দিকে বাড়ন্ত প্রত্যেকের পরিণতি এমন ভয়ানক হবে।প্রত্যেককে মরতে হবে! ”

রাত যত গভীর গহীন আঁধার কালো ,দিন ততই সুন্দর হবে।রাতের অন্ধকার কাটিয়ে সূর্য তার চমৎকার রশ্মিজাল চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে। সেহের আড়মোড়া ভেঙে , নিভু নিভু চোখে পাশ ফিরে তাকায়।ঝাপসা চোখে কারো প্রতিচ্ছবি দেখে তড়াক করে চিৎকার দিয়ে উঠে বসে। ভীতু স্বরে বলে,”আ…আপনি আমার রুমে আমার বেডে ক..কি করছেন? ”
আরহাম বিছানায় পুরোপুরি গাঁ এলিয়ে চোখ বুঝে শীতল স্বরে বলে,”এটা তোমার রুম? রাতের নেশার রেশ এখনো কাটেনি? ”
সেহের ভ্রূ কুঁচকে ছোট ছোট চোখ করে চারদিকে চোখ বুলায়।বড় দেয়াল জুড়ে জানালা। সোনালি রঙের দামী ফার্নিচার । বিছানায় মখমলের চাদর ।সিলিং- এ দামী ভারী ঝাড়বাতি লাগানো ।সত্যি ত এটা তো তার রুম না।দেখে মনে হচ্ছে পাঁচ তারকা হোটেলের শৌখিন বিলাসবহুল কোন রুম।রাতের কথা মনে করতে চাইলে চাপ পরায় মাথা চিলিক দিয়ে উঠে।বেশ কিছ সময় সেহের আস্তে আস্তে সব মনে করে।রাতে তার করা পাগলামো গুলোর কথা মনে করে আরহামের দিকে তাকিয়ে ছোট একটা ঢোক গিলে ।বেচারার কি নাজেহালটা- ই না করেছে।কাঁচা খেয়ে ফেলবে না তো আবার?
সারারাত দুজন এক বিছানায় ছিলো ,ভাবতেই রাগে সেহেরের গাঁ জ্বলতে থাকে।আরহামকে কিছু বলতে যাবে এর পূর্বেই আরহামের ভারী স্বর ভেসে আসে। চোখ বুঝেই বলে,” টেবিলের উপর লেমন জুস রাখা আছে খেয়ে নেও,মাথা ব্যথা কেটে যাবে! ”
দ্বিতীয় কোন কথা না বলে সেহের জুসটা মুখে দেয়।গ্লাসের কোণ থেকে আড়চোখে আরহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ভীষণরকম ক্লান্ত । সারারাত কি জেগে ছিলো? হয়তো! সেহেরের মায়া হলো আর কিছু বলল না । জুসটা খাওয়ায় এখন মাথা আগের থেকে কিছুটা হালকা লাগছে।কিছুক্ষণ পর রুমের দরজায় নক পরে। সেহের প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে আরহামের দিকে তাকায়।আরহাম হয়তো বুঝল।চোখ বন্ধ করে আগের ভঙ্গীতে বলল,”ব্রেকফাস্ট নিয়ে এসেছে । দরজা খুলো ”
এমন ভাব নিয়ে বলার কি আছে? একটু সুন্দর ভাবে বললে কি তার মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত? এমন ভাব করলো যেন সে সুলতান আর সেহের তার দাসী বাদী । প্রথমে একবার ভাবলো আরহামের মুখের উপর কড়া স্বরে “না” বলবে।কিন্তু এমন করা অকৃতজ্ঞ দেখায়। তাই পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত চেঞ্জ করলো।বিছানা ছেড়ে বাধ্য মেয়ের মত সেহের দরজা খুলে।দরজায় খাবার ট্রলি নিয়ে হোটেলের একজন স্টাফ দাড়িয়ে।কোন কিছু জিগ্যেস করার পূর্বে- ই লোকটা এক গাল হেসে বলল,”ম্যাম আপনাদের ব্রেকফাস্ট ”
লোকটা খাবার টলিটা ভিতরে রেখে নত মাথায় ভদ্রতার সহিত বেরিয়ে যায়।সেহের দরজা বন্ধ করে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।মিনিট দশেক পর বেরিয়ে দেখে কাঁচের জানালার কাছে মাঝারি সাইজের সোফাটায় আরহাম বসে।সামনের টেবিলটায় ব্রেকফাস্ট সাজানো।কে সাজিয়েছে? আরহাম? হয়তো ।সেহেরকে ওয়াশরুম থেকে বেরোতে দেখে আরহাম বলল,”বস ব্রেকফাস্ট করে নেও ”
সেহের মুখ মুছতে মুছতে ব্যস্ত ভঙ্গীতে বলে,”আমার খিদে নেই। ”
আরহাম কিছুক্ষণ সেহেরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,”নিতানের কফিতে কি জাদু ছিলো ?যে এখনো খিদে লাগেনি! ”
আরহামের ত্যাড়া ত্যাড়া কথায় সেহের ক্ষেপে যায়,”বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন বলে এভাবে কথা বলবেন?আপনাকে এখানে কে আসতে বলেছিল! আমি নিজেরটা নিজে ঠিক হ্যান্ডেল করতে পারছিলাম।”
“হ্যা দেখছিলাম ত কতটুকু পারছিলে! ”
“আপনি আমাকে খামাখা অপমান করছেন ।আ..আমি কিন্তু ,,”
“কি করবে? আবারো সুইসাইড খাবে?”
আরহামের কথায় সেহের লজ্জায় চুপ করে যায়।মুখ দিয়ে টু শব্দ বের করল না।আরহাম জুসের গ্লাসটা মুখে তুলতে তুলতে বলল,”পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করা শেষ হলে ,ব্রেকফাস্ট করতে পারো।”
সেহের বিরবির করে বলল,”আপনার বউ ্যেন তিন বেলা রুটিনবাঁধা আপনার সাথে ঝগড়া করে। চুল নিয়ে খুব ভাব তাই না? খুব তাড়াতাড়ি আপনি টাক হবেন টাক। আপনার বউ আপনার সব চুল ছিড়বে । দুনিয়ার সবচেয়ে ঝগড়াটে ডাইনি পাঁজি মেয়েটা যেন আপনার ঘাড়ে পরে।আমিন! ”
আরহাম খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিয়ে বলল ,”হ্যা সেই মেয়েটা যেন তুমিই হও! ”
“কি বললেন? “সেহের প্রশ্ন করল।আরহাম ভারী স্বরে বলল,”আমাকে অভিশাপ দেওয়া আর নিজের প্রশংসা শেষ হলে ব্রেকফাস্ট করতে পারো।এখান থেকে বেরিয়ে আমাকে একটা মিটিং জয়েন করতে হবে,সো ফাস্ট! ”
সেহের আরহামের কথার আগা মাথা বুঝলো না। এটুকু বুঝলো যে তাকে ব্রেকফাস্ট করতে বলেছে।সেহের আরহাম থেকে বেশ দূরত্ব বজায় রেখে সোফায় বসলো।আরহাম সেহেরকে নিজের কাছে টানল। কানের কাছে মুখ এনে দুষ্টু স্বরে ফিসফিসিয়ে বলল,”দূরে সরে কেন! আমার গায়ের ঘ্রাণ বেকাবু করে বলে? ”
সেহের নড়েচড়ে গলা ঝেরে বলে,”এমন কিছু না! আ…আমি ঠিক আছি”
“হুম দেখতে পারছি ,তাই বলেই এতো কাঁপাকাঁপি ”
সেহের ঢোক গিলে আরহামের দিকে তাকায়।আরহাম তখনো বাঁকা হেসে।
টি- টেবিলে সাজানো ব্রেকফাস্ট দেখে সেহেরের ভীষণ কান্না আসছে।ইংলিশ ব্রেকফাস্ট ।জুস,টোস্ট ,ব্লাক কফি ,সজেস ,ব্রাউনি,হাফ ভয়েল এগ,ফ্রুট’স ,বাটার।সকাল সকাল এই ছাইপাঁশ গিলতে হবে? সেহের নাক মুখ ছিটকে নেয়। কাঁদো কাঁদো চোখে আরহামের দিকে তাকাতে দেখে আরহাম বেশ আয়েশ করে খাচ্ছে যেন কত মজার খাবার- ই না খাচ্ছে। খাবেই তো ইংরেজদের বংশধর কি না! প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে । পেট গুড় গুড় করছে।না খেয়ে উপায় নেই।সেহের ঠোঁট উল্টে খেতে লাগে।

চলবে…❣️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here